তুমিময়_প্রেম ♥
PART_27
FABIYAH_MOMO?
৭.
‘আঘাত না দিলে মন কাদেঁ না, মন না কাদঁলে ব্যাথা যায়না’ — মেয়েটা কাদঁছে কাদুক! মনটা হালকা করে কাদুকঁ! সবাই মন হালকা করার সুযোগ পায়না! সবার কান্না করার সুযোগ হয়না! আমার বুকে মাথা গুজে ফুপিয়ে কেদেঁ চলছে! আমি শান্ত হতে বললে আরো কেদেঁ উঠে। জানি কষ্টের দাগটা কতো গভীরভাবে কেটেছে! কিন্তু আমি কি করবো? আমি যে নিরুপায়! বেশ খানিকক্ষন পর কিছুটা শান্ত হলে বুক থেকে তুললাম। চোখ মুছে দিলাম। চোখদুটোতে হাত রেখে দেখি কি গরম! কাদতে কাদতে চোখ গরম করে ফেলেছে! নিজের উপর চরম রাগ লাগছে! কি করলাম ধ্যাত? শান্ত হলেও কান্না থামেনি। চোখ থেকে পানি এখনো ঝরছে। চুলে ডানহাত ডুবিয়ে চোখদুটোতে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলাম। কাদঁলে মেয়েদের এতো অদ্ভুত লাগে কেনো? এইযে ফোলা ফোলা চোখ, লাল লাল নাক, চকচক গাল সবকিছুতে যেনো অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে! কপালে চুলগুলো ঘেমে লেপ্টে গেছে ওর। চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে পেছনে ঠেলে দিলাম। ফ্যান অফ ছিলো, ছেড়ে দিলাম। গালে, কপালে, থুতনি ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলাম। ও গুটিশুটি হয়ে বাচ্চার মতো করে আমার বুকে মুখ গুজালো। ওর কপালে ঠোট বসিয়ে দিতেই হাতের বাধন শক্ত করে ধরলো। কিছুদিন আগে আমার সামান্য টিশার্ট ছাড়া গা দেখতে পারতো না, লজ্জায় রক্তগোলাপ হয়ে যেতো সেই মেয়েটা আমার বুকে! ভাবতেই বড্ড অদ্ভুত লাগে! মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলাম,
— এই মেয়ে আমার ইজ্জত হরন করে ফেলছো তো! ছেলেদেরও লজ্জা হয়! শরম লাগে! উঠো!
আরো ঘন করে ধরলো। মানে আমাকে আচ্ছা করে ধরেছে কোনোমতেই ছাড়বে না। আমি আবারো সুর টেনে বললাম,
— উফফ! ছাড়ো তো! মেয়েদের খালি গা দেখাতে নেই! সমস্যা!
শিট! কেদেঁ দিছে! এতোক্ষন চুপ ছিলো এখন ফুপিয়ে কাদঁছে। আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম,
— আরে কেদোনা। আমি মজা করছি। প্লিজ চুপ।। চুপ কর। কান্না করো না প্লিজ।
আমি মাথাটা চেপে ধরলাম বুকের সাথে। আমার ভেতরের দহনক্রিয়া কিছুটা শান্ত হোক, আমাকে কিছুটা মুক্তি দিক! আর পারছিনা! চাপা কষ্টের আড়ালে আমি ধুকেধুকে মরছি! প্রচুর যন্ত্রণায় ভুগেছি কেউ পাশে ছিলোনা! কেউ না! দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। খানিকটা পর জিজ্ঞেস করলাম,
— আমার ঠিকানা কোথায় পেলে? তাছাড়া তুমি ভেতরে কিভাবে আসলে পাকনি? নিমেষদা কে পাওনি? নিমেষদা কোথায়?
বুকে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে চাপা গলায় উত্তর দিলো,
— আপনার ঠিকানা আপনার বন্ধু রামিম জোগাড় করে দিয়েছে। আমি নিমেষ নামে কাউকে চিনিনা। আসার সময় একজন পুরুষ রাস্তা আটকে দিয়েছিলো তাকে ওভারটেক করে এসেছি।
— ওহ্ মাই গড! নিমেষদাকে তো তুমি কিছু করেছো?
— কিছু করিনি।
— শরীরের কি হাল করেছো? হাড্ডি গুনা যাচ্ছে! কতদিন ধরে খাওয়াদাওয়ার সাথে সম্পর্ক নেই? কি হলো জবাব দিচ্ছোনা কেন? দাও?
কোনো উত্তর নেই। শরীরের সাদা কঙ্কালটা বের হওয়া বাকি শুধু! বুকে যে একটা জ্যান্ত মানুষ চেপে ধরেছি তা মনেই হচ্ছেনা! মনেহচ্ছে বুকে একটা আস্তো কঙ্কাল ধরে আছি! কড়া গলায় বললাম,
— থাপ্পর চিনো? গুণেগুণে দশটা করে টোটাল বিশটা থাপ্পর গালে বসানো দরকার! আমি হৃদয়বান মানুষ! ছেড়ে দিচ্ছি!
এদিক-ওদিক হাতড়ে মোবাইলটা কাছে পেলাম। কিপেডে ডায়াল করে কল দিলাম একটা!
— হ্যালো, মজিদ আঙ্কেল? আপনাদের হোটেল বয়কে দিয়ে কিছু খাবার পাঠিয়ে দিন। না না, তেমন কেউ না। ওইতো রিলেটিভ। আচ্ছা, আচ্ছা ঠিকআছে তাহলে রাখি।
ফোন কাটতেই চেচিয়ে বললাম,
— সত্যি বলো কার সাথে এসেছো? যদি শুনি একা..
আমাকে থামিয়ে ও বলে উঠলো,
— রামিম, রিমি, জেনি আছে। আমি একা আসিনি।
স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। এটলিস্ট একা আসেনি। পাকনি অভিমানভরা কন্ঠে বললো,
— আপনি আমাকে একা ফেলে এসেছেন কেনো? কোন প্রয়োজনে এখানে এসে লুকিয়ে আছেন? আমাকে ভোগ করতে পারেননি বলে মূল্য শেষ?
— থাপ্পর দিবো বাজে কথা বললে! ওরা কোথায়? বাইরে?
উত্তর দিলোনা। মুগ্ধ ওদের নাম ধরে ডাকতেই উপস্থিত হলো দুজন। রিমি ও রামিম ধীর কদমে মুগ্ধের বেডে এসে বসেছে। মুগ্ধ গায়ের পাতলা কাথা দিয়ে গা ঢেকে মমকে চুপ করে পাশে বসতে বলল। সর্বপ্রথম রিমি জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি নিজেকে কি ভাবো মুগ্ধ? কাউকে না বলে, না জানিয়ে এভাবে হুট করে চলে আসবা ? প্লিজ! জবাবটা দিও।
রামিম মুগ্ধের গম্ভীর মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটোতে কেমন কাঠিন্যভাব! রামিম ডানেবামে না ভেবে বলে উঠলো,
— বস জবাবটা দিও! তোমার পাশে যে বসে আছে অন্তত তার দোহাই!
মুগ্ধ ঘাড় বাকিয়ে মমর দিকে তাকালো। মেয়েটা মাঝেমাঝে কেপে উঠছে। মুগ্ধ রামিমের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— দোহাইটা ভালো দিছিস রামিম! মাথায় তাহলে বুদ্ধি হচ্ছে!একটা কাজ তুই ঠিক করিসনি ব্যাটা! আমার বউকে দেখেশুনে রাখবি, চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া সব দেখবি! তুই তা না করে এক সপ্তাহের মধ্যে একটা কঙ্কাল এনে হাজির করেছিস! কি করা উচিত তোকে? শাস্তি দিবো?
রামিম মলিন হেসে বলে উঠলো,
— হসপিটালে ছিলাম বস। ভাবীকে দেখে রাখবো!সেই সুযোগ ভাবী নিজেই দেয়নি। ক্যাম্পাসেই আসতো না উনি। বাসায় যেয়ে খোঁজ নিতে গেলেও বকাবকি করে তাড়িয়ে দিতো। কেসটা আউট অফ ছিলো বস!
পাশ থেকে একটা সুর মুগ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— কিসের বউ? আমি কারো বউ না! যেই বান্দা আমাকে ফেলে এখানে এসে শান্তিপূর্ণ দিন যাপন করছে! এটলিস্ট তার লাইফের কোনো তুচ্ছ বস্তুও না!
মুগ্ধ ঝাঝালো গলায় বললো,
— থাপ্পর মারতে ইচ্ছে করেনা, এগুলা শুনলে? কেমন ভাষা! এই তুমি বস্তু? তোমাকে আমি বস্তু ভেবে কান্না থামাইছি? কি ভাবো তুমি নিজেকে? যত্তসব ফালতু কথা শিখে নিছে! খবরদার অশ্রাব্য ওয়ার্ড আর বলবা না!
রামিমের দিকে তাকিয়ে, ‘রামিম? তুই ব্যাটা অজুহাত কম দিস! তোর হাতভাঙ্গা পা ভাঙ্গার খবর বলে আমার সাথে ফাজলামো করিস না! মানুষ ইচ্ছা করলে এভারেস্টে পৌঁছে যায়! তুই গাধা একটা মেয়েমানুষকে দেখে রাখতে পারিসনা! তোর জীবনে হবেটা কি!
‘চোরের উপর বাটপারি’ — কথাটা মুগ্ধের উপর পুরোপুরি খাটে! নিজেই সবাইকে না জানিয়ে গাজীপুর লুকিয়ে থাকে। কিন্তু নিজের দোষের সাফাই বাদ দিয়ে বন্ধুদের দোষের হিসাব টুকছে!
রাত এখন সোয়া এগারোটার ঘরে। সবাই রাতের খাবারটা খেয়ে ক্লান্ত শরীরে কেয়ারটেকার নিমেষের দেখানো রুমে শুয়ে পড়েছে। নিমেষ নিজেও কয়েকঘন্টা জিম্মিদশা কাটিয়ে মাত্র বিছানায় এলিয়ে শুয়েছে। মম মুগ্ধের পাশের রুমটায় শুয়ে আছে। চোখে একফোঁটা ঘুম নেই। ঘূর্ণায়মান ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। ওর মনে মুগ্ধের ব্যবহারগুলো নিয়ে প্রচুর খটকা লাগছে। মুগ্ধ যদি সুস্থ থাকে তাহলে কেনো সব ছেড়ে এখানে এসেছে? মুগ্ধের জীবনে কি অন্য কোনো মেয়ের আগমন ঘটেছে নাকি ব্যাপারটা আসলে অন্যকিছু? কি কারন হতে পারে মুগ্ধের এমন রহস্যময় পদক্ষেপে পেছনে? আচ্ছা মুগ্ধ কি ইন্টার্নাল ভাবে সিক? মনে তো হয়না। এক মিনিট! মুগ্ধ যেটাই করুক সবসময় বসে বসে অর্ডার দেয়! ব্যাপারটা অদ্ভুত না? একবারো কি দুপায়ে দাড়াবে না? ঝট করে বিছানা থেকে নামলো মম। মাথায় এখন মুগ্ধের পা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে! ইশ..বিষয়টা একবারো চোখে পড়লো না? ও কি …? ছিহ্! না! কিছুই হয়নি শিউর! ও ঠিক আছে! ওর কিচ্ছু হয়নি, ঠিক আছে!
মুগ্ধের রুমে ঢুকে মম রীতিমতো একটা শক খেলো! দরজায় খাম্বার মতো দাড়িয়ে পড়লো দেখে! মুগ্ধ এখনো জেগে আছে এবং বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। কোলের উপর ট্যাবলেট। অন্ধকার রুমে ট্যাবলেট পিসির আলোতে মুগ্ধের মুখটুকু কেবল আলোকিত হয়ে আছে। মম দুঠোট চেপে ধীরেধীরে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগাতে নিলে পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
— ‘শ্বশুড় মশাইকে কি বলে এতোদূর এসেছো? টেনশন করছে না?’
মম চমকে উঠে দরজা লাগিয়ে পেছন ঘুরে তাকায়। লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে, ধুর!মুগ্ধ টের পেয়ে গেলো ইশশ!মম রুমের লাইট জ্বালাতে সুইচবোর্ডে হাত দিলে মুগ্ধ বলে উঠে,
— লাইট অফ! জ্বালাবা না! রুম অন্ধকার থাকুক! চুপচাপ এসে বসো!
গুটিগুটি পায়ে পাশে যেয়ে বসলো। মুগ্ধ ওর দিকে না তাকিয়ে বললো,
— কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম।
— আব্বু জানে আমি রিমির সাথে হোস্টেলে আছি।
— রিমি কে চিনে? না চিনলে কিন্তু সমস্যা! পরে হোস্টেলে খোঁজ করতে গিয়ে দেখবে তুমি নেই।বিরাট ঝামেলায় ফাসবে!
— ফাসলে ফাসবো! আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন! কেন হুট…
— আমি কেন এসেছি জানতে চাও,তাইতো? তাহলে শুনো,
মুগ্ধ ট্যাবটা পাশে রেখে কথা বলার জন্য উদ্যত হলো। শুরু করলো তার অব্যক্ত কথা,
— ‘তন্ময়, নাসিফ এবং আহাদ’ আমি ওদের কলিজার বন্ধু বলতাম। আমার সবকিছুতে ওরা থাকতো, ভালোবাসতাম ওদের। কিন্তু কখনো মুখ ফূটে বলিনি, ‘বন্ধু তোদের খুব ভালোবাসি! তোরা আমার সব!’ কখনো বলিনি। আমি চুপ থাকতাম। বন্ধুত্ব তো এমনই তাইনা পাকনি? কিছু বলা লাগেনা, বুঝাতে হয়না ওরা কেমন করে যেনো চট করে সব ধরে ফেলে। ওরা আমাকে হাসিখুশি হলরুমে নিয়ে গেলো। আমি রামিমের ব্যাপারটা আলোচনা করে জিজ্ঞেস করলাম। ওরা অস্বীকার করে বললো তুমি যা যা বলেছো সব মিথ্যে। আমি একমূহূর্তের জন্যে ওদের হ্যাঁতে হ্যাঁ বললাম। তন্ময় শান্ত হয়ে আমার কাছে আবদার করলো। তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওদের হাতে তোমায় তুলে দিতে। তুমি বেশরম, বেলাজা ব্লা ব্লা গালিগালাজ করে তোমার ইনসাল্ট করলো! বিশ্বাস করো ওই মূহুর্তে আমার ইচ্ছা করছিলো জিহবা কেটে সবকয়টার গলায় ছুড়ি চালিয়ে দেই! নিজেকে কন্ট্রোল করলাম। ওদের ভালোভাবে বুঝালাম কাজ হলোনা। হকিস্টিক তুলে পেটাতে লাগলো। হয়তো সেদিন মরে যেতাম..রূহ কবজের উছিলায় না, ওদের ধোকাবাজির কর্মে মরে যেতাম।
মুগ্ধ মাথাটা উপরে তুলে জোরে নিশ্বাস ছাড়লো। ভেতরের দুঃখগুলোকে ঝেড়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করলো। আমার পাচ্ছিলো ওর কথা শুনে। একটা মানুষ পদে পদে ধোকার সম্মুখীন হয়ে স্বাভাবিক থাকে কিভাবে? মুগ্ধ মাথা নামিয়ে বলা শুরু করলো,
— আমি তোমাকে ভালোবাসি। ঠিক কেমন ভালোবাসি ব্যখ্যা জানা নেই। আমি নিজেকে সবচেয়ে দুঃখী এবং একা মানুষ ভাবতাম, কিন্তু তোমার পাশে যখন থাকতাম আমার উপর কিসের ইফেক্ট পড়তো জানিনা, আমি রাতে ঘুমাতে গেলেও তোমার আজগুবি কথা মনে করে হাসতাম। প্রচুর হাসতাম। শাওয়ার ছেড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নিরবে তোমার কথা ভাবতাম। একটা সত্যি কথা বলি? ফাইজাকে পড়ানো একটা উছিলা ছিলো। উল্টো আমি ওইসব মেয়ে টিউটরকে বকাঝকা করে বিদায় করতাম। ফাইজাকে পড়াতে আর আমি চুপিচুপি দেখতাম। ততোদিনে আমি বুঝে গেছি আমার মন পিন্জরা অন্য কারোর জন্য বাসা বুনে ফেলেছে। উদাস হয়ে ক্লাস বাঙ্ক মেরে তোমাকে দূর থেকে ফলো করতাম। তুমি কখনো খুজে পেতে না। তোমায় জোর করে হুমকি দিয়ে বিয়ে করলাম। তুমি আমার মনটা বুঝলে না, উল্টো অযৌক্তিক শর্ত জুড়ে দূরে ঠেলে দিলে। চুপচাপ সব মেনে নিচ্ছিলাম কিন্তু কোথাও যেনো ক্ষতটা বড় হচ্ছিলো। জ্বলতো, পুড়তো, কষ্ট দিতো। সমাজের কাছে তোমাকে পরিচয় দিলাম না তুমি আমার বউ বা তোমায় আমি বিয়ে করেছি! সব আমি চুপচাপ সহ্য করলাম। কিন্তু আমার কি কারনে কষ্ট হয়েছে জানো? যখন আমি তোমার জন্য তোমার পরিবারের কাছে হালালটা চাইলাম! আমি তোমাকে তিন কবুল বলেই বিয়ে করেছি! জাস্ট ওই সময় তোমার ফ্যামিলির কেউ ছিলো না বলে ব্যাপারটা সুন্দর ও গোছালো করার জন্য একটা স্টেপ নেই। ভাবি তোমার আব্বুকে জানিয়ে আবার আমরা বিয়ে করবো। ঘরোয়াভাবেই সিধাসাদায় বিয়ে করবো! তুমি চাইলে তখন তোমাকে পড়াশোনা শেষ করার আগ পযর্ন্ত পরিবারের সাথে থাকতে দিতাম। আমার আপত্তি থাকতো না! তবুও বুকভরা অধিকার খাটিয়ে বলতে পারতাম তুমি আমার বউ! সেদিন তোমার বাসায় গেলাম। তুমি ছিলেনা, অসুস্থ মামীকে তোমার আম্মুর দেখতে ঢাকায় গিয়েছিলে। বাসায় কেবল তোমার বাবা ছিলো। আমি আমার অসুস্থ মারখাওয়া ব্যান্ডেজে মোরা শরীরটা নিয়েই তোমার আব্বুর সামনে নত হয়ে সম্পূর্ণ কথা পেশ করলাম। উনি বিশ্বাস করলেন না। বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার দেখালাম উনি রেগে গেলেন। আমি উনাকে বুঝিয়ে বললাম, আঙ্কেল আমার তো কেউ নেই। আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি। আপনি পাগলামি ভাবেন বা অন্যকিছু আমি বিয়েটা করে ফেলেছি। তোমার আব্বু শর্ত দিলেন। শর্তটা কি জানো? আচ্ছা পাকনি আমার একটা প্রশ্নের জবাব দাও, ধরো তোমার আব্বুআম্মু কেউ নেই। তোমার ভাইটা বেশ ছোট। তোমার জন্য বিয়ের ঘর আসলো, তারা রাজিও হলো এবং বললো, তুমি বিয়ের পর ছোটভাইকে সাথে রাখতে পারবে না। তুমি কি এতিমখানায় ফেলে রাখবে? দূরে পাঠিয়ে দিবে?
আমি ভ্রুকুচকে আৎকে উঠলাম! ঝাঝ মাখানো গলায় বললাম, ‘অসম্ভব! দরকার পরলে আমি বিয়েই করবো না! তবুও ভাইকে কোত্থাও পাঠাবো না!’
— এ্যাকজেক্টলি মাই পয়েন্ট! আমিও ফাইজাকে দূর করতে পারবো না। তোমার বাবার কাছে উনার মেয়ের খুশি যদি একটা নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চার জন্য আটকে থাকে! তাহলে আটকে থাকুক! আমি তোমাকে চাইনা! দরকার পড়লে তোমার কাছ থেকে আজীবন দূরে থাকবো তবুও ফাইজার জন্য নিজের খুশি চাইবো না! তুমি আমাকে স্বার্থপরও বলতে পারো আবার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বোকা! ভাইয়ের মেয়ের জন্য নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিবে… এমন গাধা মেবি দ্বিতীয়টা জন্মায়নি।তোমাকে আমি দূর থেকেই ভালোবাসবো পাকনি। অনেক বেশি ভালোবাসবো। হয়তো তুমি রিখটার স্কেলে মাপতে তোমার জন্য কতটুকু ভালোবাসা নিজের মধ্যে রাখি। কিছু ভালোবাসা পাওয়া না হলেও কোনোদিন সেটার জায়গা পূর্ণ হবেনা। ভুলা যাবেনা। তুমি তো আমার প্রথম প্রেম! শেষ নিশ্বাসটা ফেলার আগ পযর্ন্ত তোমায় স্মরন করবো। ভুলবো না।আমার মন কখনো তোমার স্মৃতি মিটাবেনা। শূন্যময় জায়গাটার কাছে, পুরোটা জুড়ে তুমি, তুমি এবং তুমি হয়েই থাকবে! মৃত্যুর পরও যদি চাওয়ার উপায় থাকে আমি তোমাকে চাইবো! কিন্তু ফাইজার বদৌলতে আমি তোমাকে চাইনা পাকনি। তুমি আমার #তুমিময়_প্রেম হয়েই থাকো। এই প্রেমে শুধু দূর থেকে ভালোবাসা যায়, কাছে এসে মেবি থাকা যায় না।
মুগ্ধ চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে। চোখ ঝাপসা ট্যাবের স্ক্রিন ভিজে গেছে। চোখের দু’কোণা থেকে একের পর এক পানি পড়ছে তার। দাত দিয়ে নিচের ঠোটটা শক্ত করে চেপে আছে। মাথা নিচু করে আছে। হয়তো আড়ালে থাকার জন্যই রুমটা অন্ধকার রাখা হয়েছিলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার।
আমি পাচঁ আঙ্গুলে বিছানার চাদর আকড়ে মাথা নুয়ে আছি। চোখ থেকে টপটপ করে বিছানায় পানি পড়ছে। আমার শরীরের একটা অংশ কিরূপ অকার্যকর লাগছে তা বলে বুঝাতে পারছিনা। বারবার মুগ্ধের কথাগুলো কানের পর্দায় ভনভন করছে। ‘এই প্রেমে শুধু ভালোবাসা যায়, কাছে এসে মেবি থাকা যায় না’….ভয়ঙ্কর শব্দগুলো কিভাবে উচ্চারণ করলো? কিভাবে! কতো ভয়ঙ্কর শব্দ! রাতের নিস্তব্ধ প্রহরে এই শব্দগুলো ভয়ানকের চেয়েও ভয়াবহ লাগছে। বুকে চিড়ে কান্না চলে আসছে আমার! শব্দ করেও কাদার শক্তি পাচ্ছিনা। কেমন অকেজো লাগছে স্নায়ুবিক ভরে। মানুষ কতোটা সাহসী হলে ভালোবাসা ভুলানোর মতো ভয়াবহ পদক্ষেপ নিতে পারে! জানা নেই, জানা নেই…
-চলবে