তুমিময়_প্রেম ❤
PART_28
FABIYAH_MOMO
৮.
সকালটা হলো ঠিকই। কিন্তু আমার জীবনে সূর্যোদয় হলোনা! অস্তমিত আকারে সবকিছু চোখের পানিতে পরিণত হলো। রিমি ঘুম থেকে উঠেই আমাকে শান্ত করার মতো ব্যর্থ চেষ্টায় লেগে আছে, রামিম মুগ্ধকে নানাভাবে বুঝাচ্ছে, কিন্তু ফলাফল শূন্য হিসেবেই রয়ে গেছে। দরজায় ঠক ঠক শব্দ করলো কেউ। রিমি আমার পাশ থেকে উঠে গেল কিন্তু আর ফিরলো না। আমি মাথা তুলে ফোলা ফোলা চোখে ওদিকে তাকাই। দেখি মুগ্ধ মাখন রঙের টিশার্ট পরে দরজায় হেলান দিয়ে হাতভাজ করে দাড়িয়ে আছেন। আমি চার আঙ্গুলে গাল মুছে চোখ আগের জায়গায় আনি। কিছুক্ষণ বাদে মুগ্ধ আমার সামনে এসে চুপচাপ দাড়ালো। আমি শুধুমাত্র ওর পা দুটো দেখছি মাথা তুলে ওর দিকে তাকাচ্ছিনা। মুগ্ধ আমার সামনে ফ্লোরে আটোঁ করে বসে আমার হাতদুটো ওর হাতের ভাজে নিলো। আমার হাতদুটো নিয়ে নিজের গালদুটোতে বসিয়ে আমার কোলে থুতনি রাখলো। চোখ উঁচু করে দেখছেন মুগ্ধ। কিছুক্ষন পর উনার ঠোটের কাছে আমার ডানহাত টেনে ঠোঁট ছোয়ালো। নরম গলায় বলে উঠলো,
— একটা দিন হবে তোমার কাছে? শুধু একটা দিন চাইছি? শেষবারের মতো তোমাকে চাচ্ছি। আর তো পাশে পাবো না। রাখবে শেষ অনুরোধটা?
ওর গলায় কি ছিলো জানিনা। আমি ঢোক গিলে লম্ব আকারে মাথা ঝাকাই। এতেই মুগ্ধের ঠোঁটের কোণে রাজ্যজয়ের হাসিটা ফুটলো! মনোমুগ্ধকর সেই ঠান্ডা হাসি। ফ্লোর থেকে ব্যস্ত হয়ে উঠে আমাকেও সাথে দাড় করালো। পাচঁ আঙ্গুলে আমার হাত আবদ্ধ করে বাইরে নিয়ে এলো। ড্রয়িংরুমে রামিম ও রিমি যাত্রার জন্য রেডি হয়েছে। আমাদের দেখে সোফা ছেড়ে ওরা কাছে আসতেই রিমি বললো,
— মুগ্ধ? তুমি কখনো কঠিন নিষ্ঠুর হয়ে যাবা ভাবতে পারিনি। ফার্স্ট টাইম আমার তোমার জন্য না, মমর জন্য কষ্ট হচ্ছে। ওকে দেখলে নিজেকে এতো অসহায় লাগে!(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)..ভালো থেকো মুগ্ধ।
রামিম পাশ থেকে ম্লান গলায় বললো,
— বস সময় আছে এখনো! ফাতরা ডিসিশনটা চেন্জ করো। আমি জানি তুমি শান্তিতে থাকতে পারবানা। প্লিজ বস, একটাবার বুঝো?
রিমি পেছন থেকে রামিমের কাধে হাত রেখে চুপ থাকতে ইশারা করলো। রামিম রিমির দিকে একবার তাকিয়ে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আসি বস। ভালো থাকবা। দরকার পড়লে একটা ফোন দিও, রামিম যেইখানেই থাকুক। আসবো!
মুগ্ধ মৃদ্যু হেসে বলে উঠলো,
— গাইজ? মম তোদের সাথে যাচ্ছেনা। ও কাল যাবে। তোরা রওনা দে কেমন? বাকিটা আমি দেখবো।
রিমি ও রামিম বেশ অবাক হলেও শেষপর্যন্ত ওরা বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। মুগ্ধ আমাকে নিয়ে রান্নাঘরে এলো। ওর মনটা বেশ ফুরফুরে। একচিলতে বিষন্নতার আভাস নেই মনে। হাস্যোজ্জ্বল গলায় আদেশসূচকে বলে উঠলো ,
— নাস্তা বানাও তো। খিদে পেয়েছে। তোমার হাতের রান্না খাবো। ওয়েট! এক কাজ করো আজ খিচুড়ি রান্না করো। আমি গরমাগরম খিচুরি খেতে চাই। উফ! সাথে টক ঝাল মিষ্টি আচার!! শিট! আমি আচারটা রোদে দিতে ভুলে গেছি।। তুমি শুরু করো তো।।
৯.
‘দুই অনুপাত এক’ হিসেব করে চালের সাথে ডাল মিশিয়ে রেডি করছি। মুগ্ধ চুলার পাশে উচু ঢিপে পা দুলিয়ে বসে আছেন। মরিচ, পেয়াজ, ভাজা মচমচে মাংস, ছোট করে কাটা নতুন আলু, রঙিন সবজি…সব কেটে সুন্দর করে থালা গুছিয়ে চুলায় হাড়ি বসিয়েছি। মৃদ্যু আচেঁ সব উপকরণ দিয়ে খিচুড়ি বসিয়ে দিলে ফ্রিজ থেকে দুধের প্যাকেট নামালাম। মুগ্ধ ছুড়ি দিয়ে সালাদের শশা কাটছে। মাঝেমাঝে মরহুম দাদুর স্মৃতিগুলো বলতে বলতে হুহা করে হাসছেন! দুধটা জ্বাল দিয়ে লেবু চিপে দিলাম। মুগ্ধ হা করে কিছুক্ষণ আমার কর্ম দেখে চুপ থেকে বলে উঠলো,
— এগুলো কি করছো? লেবু চিপলে কেনো?
— ইশ চুপ করো তো। দেখছো না কাজ করছি? করতে দাও। ছানা বানাচ্ছি!
মুগ্ধ ঠোঁটের উপর আঙুল বসিয়ে চুপটি থাকার ইশারা করলো। ইশশ..যেনো একটা বাচ্চা কড়া শাষন পেয়ে মুখে আঙুল বসিয়েছে। আমি মুচকি হাসলাম। ঘন্টা খানিকের মধ্যে সব আইটেম শেষ হলে ছাদের ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে সব সাজাচ্ছি। মুগ্ধ মাথার উপর তেড়পাল টাঙিয়ে সকালের তীর্যক রোদটাকে একটু আটকে দিচ্ছেন। ঠান্ডা শীতল বাতাস, টুকরো টুকরো সাদা মেঘে ভরা নীল আকাশ, রোদের উষ্ণতা। সব মিলিয়ে দিনটাকে যেনো স্মৃতিময় করে দিচ্ছে প্রকৃতি। হয়তো প্রকৃতি ভালোকরেই জানে আজকের এই দিনটার শেষে দুইকূলে বিভক্ত হয়ে যাবে দুই মানব-মানবী। কাব্যের মতে, প্রেমিক-প্রেমিকা? নাকি শরিয়ত মতে, ‘স্বামী-স্ত্রী?
১০.
দুপুরে গোসল শেষে একটা শাড়ি পড়েছি। সাদা শাড়ি, লাল টকটকে পাড়। পুরোনো যুগের মেয়েদের মতো বাঙালী স্টাইলে শাড়ি পড়েছি। চুলের মাঝখানে সিথি গেথে পিঠের উপর সব চুল ছড়িয়ে রেখেছি। হাতভর্তি লাল-সাদার ঝনঝন রেশমি চুড়ি। আয়নার সামনে নিজেকে অন্যরূপে দেখছি। পরিপূর্ণ বাঙালী মেয়ে। আজ মুগ্ধ নিশ্চয়ই পান্জাবী পড়েছে? আচ্ছা ওকে আজ কেমন লাগবে? সবসময়ের মতো মনোমুগ্ধকর? নাকি শুধু আজকের দিনটার জন্য অদ্ভুত মুগ্ধকর? খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে, পুরো বাড়ির আনাচেকানাচে ঝনঝন চুড়ির খিলখিল হাসিতে মেতে উঠতে ইচ্ছে করছে!! আচ্ছা আজ এতো আনন্দের দিন কেন? চোখের মনিতে যাই পড়ছে, তাই এত অদ্ভুত লাগছে কেন? আহ্.. সব কত সুন্দর! কত পরিপাটি! কতো পরিপূর্ণ!
আমার সময় মোতাবেক বিকেল চারটার মধ্যে ছাদে থাকার কথা। আচ্ছা, ঘড়িতে কয়টা বাজে? ইশশরে! চারটা দেখি বেজে গেছে! উনি বারবার বলেছে লেট করতে না। এখন উনি রেগেমেগে বারুদ হয়ে থাকে কিনা, কে জানে?
দু’হাতে শাড়ি ধরে আমি ছাদে পৌছাতেই ছাদের শেষ কোণাটায় নজর পড়লো। হাতভাঁজ করে আকাশে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ। নির্মল বাতাসে মাথার তালুর দিকে কিছু চুল উড়ছে। বাতাসকে দেখে হিংসে হচ্ছে! ওই চুলগুলোতে আমার অধিকার! অন্য কেউ কেন ছুবে? সাদা পান্জাবী, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি, হাতা ফ্লোডেড। একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি। হাটাঁর তালে তালে চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ সবদিকে মুখরিত হচ্ছে। মুগ্ধ সম্পূর্ণ ঘুরে আমার দিকে ভ্রু কুচকে ঠোট শক্ত করে তাকিয়ে আছে। দূর থেকে হাতার ফোল্ডটা এতো আর্কষন করছে! কি মায়া লুকিয়ে আছে হাতার এই গুটানোতে? মুগ্ধ হাতঘড়ির হাতটা তুলে ডানহাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘড়ির উপর ইশারা করলো। মানে বুঝালো, ‘ম্যাডাম লেট করেছেন!’ আমি অপরাধীর মতো মুখ করে ঠিক ওর সামনে দাড়ালে মুগ্ধ আমার না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকায়। উনার মুখে স্পষ্ট অভিমানের ছোপ পরিদৃষ্ট। আমি কাচুমাচু করে বললাম,
— শেষবারের মতো মাফ করা যাবে না সাহেব? ভুল করার জন্য যে আমি আর থাকছিনা মুগ্ধ.. প্লিজ?
এটুকু কথাতে মুগ্ধ আহত হলো যেনো। আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে অনুনয় সুরে বলে উঠলো,
— আজকের দিনটায় এমন বলো না গো, শুধু আজকের দিনটা রেহাই দাও। প্লিজ মাথা থেকে সব ফেলে দাও? সব ভুলে যাও!
আমার হাতদুটো শক্ত করে ধরে বিনীত সুরে বললেন মুগ্ধ। এমন করে আকুতি করলে! কি করতে ইচ্ছে করে বলুন তো! মনটা চায় কলারটা টেনে বলি, ‘এই বদ ছেলে! কিসের শেষদিন বুঝাচ্ছো? আমাকে পাগল করে রেখে তোমায় যাবা? কোত্থাও যেতে দিচ্ছি না! আন্ডারস্টেন্ড!’ কথাগুলো বলা হলোনা। পরিশ্রান্ত চাহনিতে মলিন হাসলাম আমি। মুগ্ধ আচমকা টান মেরে বুকে মিশিয়ে কাধের পেছনে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। আরো চেপে ধরে থুতনিটা আমার কপালে লাগিয়ে তপ্তকর শ্বাস ছেড়ে বললেন,
— রক্তিমশুভ্রতায় সেজেছো কেন শ্যামকণ্যা? তোমায় দেখলে যে এ প্রাণ সহে না। ভালোবাসি বলতে এসে প্রাণঘাতী কেন করছো? আমি তো তোমাতেই মুগ্ধ, আর কতো প্রমাণ চাচ্ছো?
একেকটা বর্ণ, একেকটা শব্দ, একেকটা বাক্য বুক চিড়ে অন্তঃস্থলে দাগ কাটছিলো! বুকের ভেতরে হাতুড়ি পিটছিলো শতবার। অন্যরকম ঘোরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছিলাম। যেনো অন্য জগতের প্রবেশ করতে চলছি। চিবুকে আলতো করে ঠোট ছুয়িয়ে দিলেন উনি। কানের পাশ থেকে চুল সরিয়ে কানেও ছুয়িয়ে দিলেন ঠোটজোড়া। প্রতিটা ছোয়ায় শিরশির করে শিহরণ বয়ে চলছে। সমস্ত শরীরে সেই শিহরন ছড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ মুগ্ধ আমায় ছেড়ে দিলো। আমি তখনো লজ্জায় পুরোপুরি বুদ অবস্থা! উনি আমার গালদুটো টেনে বললেন,
— ইশশ, লজ্জায় লাল হচ্ছোনা কেন? তাড়াতাড়ি লাল হও তো, একটা কামড় দিবো!
আমি চোখ তুলে বললাম,
— আপনি কামড় দিবেন দেখেই হয়তো লাল হয়নি। ঠিকআছে না?
— উহু! একদম ঠিক না!
কথাটুকু শেষ করতেই মুগ্ধ বৃদ্ধা আঙ্গুলটা আমার ঠোটে বসিয়ে আলতো ঘষা দিতেই সামান্য লিপস্টিক উনার আঙ্গুলে এসে পড়লো। আমি অবাক হয়ে উনার কীর্তি দেখছি! মুগ্ধ কি করার চেষ্টা করছে? লিপস্টিক লাগা আঙ্গুল দিয়ে আমার গালের চিবুকে আলতো ডলে মিশিয়ে দিচ্ছে। স্নো বা ক্রিম যেভাবে স্মুথলি মেশায় ঠিক ওভাবে। আমি এখনো ভ্যাবাচেকা হয়ে আছি। মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। হঠাৎ গালে কামড় বসানোর জন্য হা করলে আমি ভীত হয়ে কিছু বলবো! তার আগেই উনি! মুখ স্বাভাবিক করে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
— একটা ডিসেন্ট, ইনোসেন্ট, কমিটমেন্ট টাইপ ছেলে এসব পাগলামি করেনা। এসব কামড় দিয়ে দাতঁ বসিয়ে আমি ভালোবাসা প্রকাশ করিনা। আমার ভালোবাসা টোটালি পিউর! বায় দ্যা ওয়ে! আ’ম টোটালি ডিফারেন্ট ইউ নো না?সো লাভ স্টাইলও ইউনিক হবে রাইট?
ফিক করে হেসে দিলাম। উনার বিচিত্র সব কথার মাঝে বিচিত্র সব রূপ দেখে অভিভূত হলাম। চোখ সরছিলো না একবারো! একটা মানুষ এতো সুন্দর কি করে হয়? কি চমৎকার ভাবে গায়ের সাদা পান্জাবীটা মোহনীয় লাগছে। হাসিটাও কতো মায়াকাড়া। একবার হাসিটা দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে। মন ভরবে না। তৃষ্ণা মিটবেনা।। উনি আমাকে নিয়ে ছাদের একপাশে যেদিকটায় পাটি বিছানো সেখানে বসলেন। আমি বসতেই লক্ষ করলাম পাটির উপর রঙবেঙরের বাটিতে নানাপদের আচার। তেতুল, বড়ই, জলপাই, চালতা, কমরচা…এই পাচঁ থেকে আচারের হরেক দাড়ালো ঠিক পচিঁশটা। মুগ্ধ চোখ ঘুরিয়ে বললো ‘খাও’। আচারের টক-ঝাল-মিস্টিতে বিকেল পেরুলো। এখন সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। চারিদিকে উড়ন্ত পাখিরা ব্যস্ত হয়ে নীড়ে ফিরছে। ছাদের উপর দখিনার ঠান্ডা হাওয়ায় চুল উড়ছে আমার। মুগ্ধ আরেক পসরা সাজানোর জন্য নিচে গিয়েছে। সূর্যটা চোখের সামনে যখন অস্তে ঢলে গেল ভেতর থেকে চাপা কষ্ট কেমন ফুপিয়ে আসতে লাগলো! এই বুঝি সব শেষ! এই বোধহয় আমার একটা দিনের ইতি এখন টেনে নিচ্ছে! কে জানে? জীবনটা কি পরিণতি বয়ে আনছে?
১১.
ঘড়িটা আটটা বাজে। শাড়ি পাল্টে নরমাল বেশভূষায় আছি। বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। কি নির্জন, শান্ত, স্তব্ধ রাত। অদ্ভুত ভাবে কেটে গেলো পুরো একটি দিন। দরজা খুলার শব্দ এলো, আমি জানি উনি মুগ্ধ। কারন, বাড়িতে আজ কাজের লোকদের ছুটি। খুব ধীরেসুস্থে পাশে বসলেন উনি।
— ‘ম্যাডাম কি ঘুমিয়েছেন? উঠুন! আমার দিন এখনো শেষ হয়নি! এখনো পুরো রাত বাকি!ওয়্যাক আপ কুইক!
উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমি ডানকাত হয়ে শুলাম। মুগ্ধ ব্যাপারটা নিতে পারলেন না। ঝটকা মেরে মুখ থেকে কাথা সরিয়ে আচমকা আমার বাহু চেপে উঠালেন। আকষ্মিক কান্ডে আমি অবাক হয়ে আছি। হাতটাও কি প্রচন্ড ব্যথা করছে!! মুগ্ধ ছাড়ছেন না! উনি একদম আমার মুখের কাছে এসে অগ্নিচ্ছটার মতো তাকিয়ে আছেন। এই চোখ দিয়েই আমাকে ভষ্ম করে দিবেন বুঝি! উনি ঠোট কুচঁকে বাহু আরো জোরে চেপে বলে উঠলেন,
— কথা না শুনলে কি করতে ইচ্ছে করে! ভুলে গেছো? স্মরন করাতে হবে?
— ব্যথা পাচ্ছি ছাড়ো! উফফ..ছাড়ো মুগ্ধ! সত্যি ব্যথা পাচ্ছি!
— তোমার চেয়ে হাজারগুণ ব্যথা আমার হচ্ছে! আমি তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করছি! তোমার জন্য নিজের ক্ষতপূর্ণ ব্যথা লুকাচ্ছি! আর তুমি আমাকে ইগনোর করছো?
— ইশ..ছাড়ো না!! কই ইগনোর করলাম? আমিতো এমনেই উঠিনাই।
— চুপ! মিথ্যা কথা বললে একদম গালে থাপ্পর বসিয়ে দেবো!
— হ্যাঁ হ্যাঁ !! দিন! দিন থাপ্পর! সাথে হাতটাও মুচড়ে ভেঙ্গে দিন!
মুগ্ধ রাগে ঠোঁটটা তীব্রভাবে কুচকে আমার বাহুটা কঠিনরূপে ধরলো! কিছুক্ষণের মধ্যে, হাতে পাচঁ আঙ্গুলের দাগ পাবো সিওর! প্রচুর ব্যথা পাচ্ছি! অসহনীয় ব্যথা! ব্যথায় আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হলে চোখের দুইকোণা থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। তবুও একে অপরের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি! একদিকে আমার চোখ অশ্রুতে টলমল, অন্যদিকে মুগ্ধের চোখ জলন্ত অগ্নিকণায় ব্রত! একপর্যায়ে মুগ্ধ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়তে লাগলো। নিরব নির্জন রুমে মুগ্ধের শ্বাসটা প্রচুর ধারালো হয়ে বিধছে! নিজেকে শান্ত করতে ব্যস্ত উনি! আমি বাহুতে ফু দিয়ে হাত ডলছি। ব্যথায় টনটন করছে! রাগে, দুঃখে, অভিমানে আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,
— সারাটা দিন আদর ভালোবাসা দেখিয়ে রাতে আসলেন টর্চার করতে!! ভালোই!পারলে গালে দুইটা চড় মেরে লাঠি দিয়ে পেটান! কি হলো? আসেন পেটান! মেরে শেষ…
আমি কথা শেষ না করতেই মুগ্ধ ঝড়েরবেগে আমাকে জোরে জাপটে ধরলেন! নিশ্বাস আটকে আসছে আমার।তবুও চুপ করে আছি। উনি আমার পিঠের কামিজে খামচে ধরলে আমি ঠোট কুচকে ব্যথায় কুকড়ে উঠি। নিতান্তই রাগের বশে উনি চেপে ধরেছিলেন! রাগ ছাড়া মুগ্ধ কখনোই আমার ক্ষতি করবেন না। উনি হড়হড় করে বলে উঠেন,
— সরি, সরি, মাফ করে দাও প্লিজ… প্লিজ আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি। তোমায় আমি টর্চার করবো? না পাগলী!!তার চেয়ে আমি নিজের মৃত্যু চাই!! প্লিজ মাফ করো!! আমি বুঝতে পারিনি!! তুমি তো আমার কাছে এই রাতটুকুই থাকবে!! আর তো কখনো তোমার সামনে আসবো না!! কাছেও আসতে পারবো না! আমাকে একটাবার বুঝো? তোমার এই মুগ্ধের ভেতরটা কেমন ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে!! একটু বুঝো প্লিজ?? আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি!! মরতেও পারছিনা!! কাল থেকে তুমি আমার কাছে থাকবেনা!! কি হাল হবে আমার, ভাবো!! প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও…আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজজ..
অস্থির হয়ে উঠছে মুগ্ধ। পাগলের মতো অনবরত বলেই যাচ্ছে। আমি পিঠে হাত বুলিয়ে ঠান্ডা হতে বলছি। উনার মধ্যে কি পরিমাণ যন্ত্রণা হচ্ছে তা পরিমাপ করার সাহস আমার নেই। বারবার মুখে একই কথা, তুমি আমার কাছে এই রাতটুকুই আছো, আমার তো কেউ নেই, আমি তো একা, আমি রাগের মাথায় ব্যথা দিয়ে ফেলেছি, আমি তোমাকে আর দেখতে পারবো না…
উনার দু’কানে হাত রেখে নাকে নাক লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। মুগ্ধ ঠোঁট প্রসার করে এখনো হাপানি রোগীর মতো শ্বাস ছাড়ছে। ঘন পাপড়িপূর্ণ মায়াময় চোখদুটোতে ঠোট এগিয়ে উষ্ণ ছোঁয়া বসিয়ে দিলাম। মুগ্ধ আমার কোমরে দুহাত রেখে ঠান্ডা গলায় বলে উঠে,
— আল্লাহর কাছে সবসময় চাইতাম আমার জীবনটায় কেউ আসুক। আমার মতো উন্মাদ ছেলেকে স্বাভাবিক করে তুলবে। ভাঙ্গাচুড়া এই অলুক্ষনে ছেলেকে নিজের পরম ভালোবাসার চাদরে আগলে রাখবে, কান্না পেলে তার কাছে গেলে নিঃশর্তে কাছে টেনে নিবে। আজ তুমি এলেও কেনো কাছে রাখতে পারছিনা? আমার শূন্যতা জীবনে কেনো তোমায় রাখতে পারছিনা? আমি কি পাপ করেছি জীবনে? কোন মহাভুলের শাস্তি পাচ্ছি!! আমি ভালোবাসতাম! ভালোবাসার আগে বিয়েটা ফরজ! বিয়েটাও করলাম!! কিন্তু কেনো সমস্যা হলো বলো? কেন ভাগ্য চাচ্ছেনা তুমি আমার সাথে থাকো? মন মানতেই চাচ্ছেনা তোমাকে দূরে ফেলে দিতে!! বেহায়া মন নিতেই পারছেনা কাল ভোরের সকাল হলে তোমাকে নিজের থেকে আলাদা করে দূরে পাঠাতে হবে। একটা মানুষ কতটা হেল্পলেস হলে নিজের মৃত্যুকামনা করে? ভাগ্য যদি সহায় না হয়, পাশে যদি কেউ না থাকে, অবশিষ্ট পথ হিসেবে সুইসাইডই থাকে পাকনি। আমি সুইসাইড করতে চাইলেও পারছিনা!! জীবন আমার সাথে এমন কেন করলো??
-চলবে
ফাবিয়াহ্_মম ❤