তুমিময়_প্রেম ❤ PART_29

0
1853

তুমিময়_প্রেম ❤
PART_29
FABIYAH_MOMO

১২.
কোনো ছেলের কান্নার দৃশ্য কতটা ভয়ঙ্কর!কতটা হৃদয় কাপানো হুল্কার মতো! কতটা ধ্বংসাত্মক অবস্থার মতো! পরিস্থিতিতে পরলে কঠিন কঠিন অক্ষরে টের পাবেন। মুগ্ধ আমাকে জড়িয়ে ধরেই কেদেঁ দিয়েছেন। টুপটুপ করে গাল বেয়ে পড়া পানি আমার কাধের অংশে ভিজিয়ে দিচ্ছেন। আমি উনাকে থামাবো? উল্টো আমার অবস্থা নাজেহাল। আমি নিজেকে সামলাতে পারছিনা আর। আমি জানিনা, ছেলেদের কান্না থামানোর মতো যন্ত্র বা পন্থা আছে নাকি, জানিনা তাদের ভেতরটা কতখানি পুড়তে থাকলে কাদতে পারে। ছেলেরা কখনো কাঁদেনা বলে, ওদের উপর যুগের পর যুগ যেই জুলুম করা হচ্ছে! জানা নেই কারো! ওরাও মানুষ, ব্যথা হয়, কষ্ট হয়, অসহিষ্ণু মাত্রায় সব ভেতরে আড়াল করে…কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দেয়না। নিজের নাড়ী ছেড়া টান মাকেও না।
— মুগ্ধ সাহেব? কান্না থামান না..আমার যে কষ্টদায়ক যন্ত্রণা হচ্ছে! বুঝেন না কেন? প্লিজ শান্ত হন..
— শেষ একটা প্রমিস করি, আমি..আমি আর কোনোদিন বিয়ে করবো না। বিয়ে নামক উপকণ্ঠায় কখনো নিজেকে ধাবিত করবো না। তুমি প্রথম! তুমি শেষ!

ছেড়ে দিলেন। মুগ্ধ নাক টেনে হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছলেন। আমার দিকে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
— আমি ঠিক আছি। কিচ্ছু হয়নি, তুমি ঘুমাও। আমি যাই কেমন? কাল সকালে রেডি থেকো। ঘুমাও,
নিজেকে স্বাভাবিক করে এমনভাবে কথাগুলো বললো যেনো কিছুই হয়নি। দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আমি হাত ধরে আটকে ফেলি। মুগ্ধ আমার দিকে ড্যাবড্যাবে তাকিয়ে আছেন। কি মায়াবী চোখদুটোতে গভীর কষ্ট লুকিয়ে আছে! এ যেনো কষ্টের গহীন মহল। কেন কষ্ট লুকাচ্ছেন মুগ্ধ? নিজেকে হালকা করুন! ভেতরের জমা কালোঘনীভূত কষ্টগুলো উপড়ে ফেলুন! গালদুটোতে হাত রেখে আমি উনার দিকে ঘন হয়ে আসি। মুগ্ধ এখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। উনার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতেই আচমকা উনি আমার ঠোটে হাত রেখে থামিয়ে দিলেন। আমি কিছুটা আশ্চর্য নয়নে ভ্রু কুচকালে উনি দুইপাশে মাথা নাড়ান। অর্থ মানা করছেন।
— আমি জানি আমার উপর তোমার অধিকার আছে। সেটা আজীবন থাকবে। কিন্তু প্লিজ আমি কন্ট্রোল করতে পারবো না মমপাকনি। এই কন্ট্রোলটা হারিয়ে ফেললে বিরাট কিছু ঘটিয়ে ফেলবো! আমি চাইনা তোমার কোনো কষ্ট হোক! তোমার এই মিষ্টিছোঁয়াটা তোলা থাকুক। নাহ্ আর পারছিনা! আমাকে যেতে হবে! আমি থাকতে পারছিনা। কন্ট্রোল হারাচ্ছি!!
মুগ্ধ দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। যাওয়ার পথে দরজার সাথে ব্যথাও পেলেন। একটা উফ শব্দ করলেন না উনি। সোজা পাশের রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগালেন। আকাশের দিকে তাকাতেই আমার চাপা কষ্টগুলো হু হু করে কান্নাযোগে বেরিয়ে আসলো। হাটুতে মাথা লাগিয়ে ফুপিয়ে কাদঁছি। বুকের ভেতরটা ফাপা শূন্যতার মতো খা খা করছে। কিচ্ছু নেই, ছোট্ট বুকের সিন্দুকটাতে কিচ্ছু নেই। যার বিচরণ চাচ্ছি, তার পদচারন নেই। ভালোবাসি তাকে!অথচ সময়টা আর আগের মতো নেই! কি অদ্ভুত মানুষের জীবনকোঠা!

১৩.
রাতের আকাশ ফেটে ভোরের সূর্য উঠছে। সোনালী বর্ণের অসীম আলো নিয়ে পূবের দিকে প্রহর টানছে। একটু আগে মুখহাত ধুয়ে আবার বিছানায় শুয়েছি। রাতটা ভয়ঙ্কর ভাবে নির্ঘুমে কাটিয়েছি। দুচোখের পাতা একটা সেকেন্ডের জন্য লাগাতে পারিনি মন ও মস্তিষ্ক শুধু অস্থির অবস্থায় ভুগছে। সকালের সূর্যোদয় বেঁচে থাকার আশা নিয়ে উদয় হয়, কিন্তু আমার জীবনে ভাগ্যরেখা আদৌ সদয় নয়। ‘মুগ্ধকে হারাতে যাচ্ছি’ – পুরোটা রাত এই একটি কথাই মানলো। দরজায় দু তিনটা কড়া পড়লো। আমি উঠে চোখে ওড়না চোপে দরজা খুললাম। মুগ্ধ একগাল মিস্টি হাসি উপহার দিয়ে বললেন,
— কি ব্যাপার? নক না করতেই দরজা খুলে সাবাড়? দরজায় দাড়িয়ে ছিলে নাকি?
আমি না সূচকে মাথা নাড়লাম।
— চোখে ওড়না ঘষছো কেন? তুমি কি….প্লিজ ডোন্ট স্যা! তুমি এখনো কাদছো!
— চোখ চুলকাচ্ছে।
— সত্যি? আচ্ছা খাবে চলো। সাতটায় ট্রেন। তোমাকে ড্রাইভার ট্রেনে তুলে দিবে। বাকিটা রামিমকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তোমার সমস্যা হবেনা। হাত ধরো, আসো।
— ট্রেনে যাবো না।
কথাটুকু বলে আমি মুগ্ধের এগিয়ে দেওয়া হাতটা ধরে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। রুটি, সবজি, দুধ, কলা, আপেল, মালটা সব টেবিলে গুছিয়ে সাজানো। মুগ্ধ ব্যস্ত হয়ে আমার প্লেটে তিনটা রুটি তুলে দিলেন, সাথে দিলেন সবজি। একটা চকচকে কাঁচের গ্লাসে দুধ ঢেলে আপেল, মালটার পিরিচটা এগিয়ে দিলেন। পানির লম্বা গ্লাসটা পাশে রেখে উনি আমার কাছাকাছি চেয়ার টেনে বসলেন।
— নাস্তাগুলো আপনি বানিয়েছেন?
— উফ তুমি খাও তো। খাওয়ার সময় কথা বললে গুনাহ হয়!
— আমি সকালে এতো নাস্তা খেতে পারিনা। বমি হয়। এখন তো জার্নি করবো, রাস্তায় আরো আগে বমি হবে। প্লিজ এগুলো রেখে দিন।
— কানের নিচে লাগাবো! খালি পেটে কিসের জার্নি? নো এক্সকিউজ! খাও!
— তুমি কি চাও আমি শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ি? রাস্তাতেই বেহুঁশ হয়ে মরে থাকি? প্লিজ জোর করো না। মনের বিরুদ্ধে আর কষ্ট পোহাতে চাইনা। মাফ করো।
মুগ্ধ রুটি ছিড়ে ভাজি তুলে আমার মুখের সামনে ধরতেই বললেন,
— আমাকে ‘আপনি’ বলে ডাকলে অন্যরকম ফিল হয় পাকনি। আমাকে তুমি করে ডেকোনা। তোমার নামটা যেমন বাচ্চাদের মতো আদর করে দেওয়া, তুমিও একচিমটি আদর মিশিয়ে আপনি ডেকো। হু, এখন হা করো।
ভাজিযুক্ত রুটি মুখে নিলাম। সকাল সকাল পেটটা খুব ভরা ভরা লাগে। এইযে একটুকরো রুটি মুখে নিলাম! মন চাচ্ছে ওয়াক করে ফেলে দেই। মুগ্ধ শান্ত মনে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। মাঝেমাঝে পানির পরিবর্তে দুধের গ্লাসটাও ঠোঁটে ধরছেন। মুগ্ধের জায়গায় আম্মু থাকলে সিউর এতোক্ষনে তুলকালাম বাজিয়ে ফেলতাম। দুধ যতোই উপাদেয় পর্দাথ হোক না কেন! আমার কাছে অন্যতম জঘন্য একটা পানীয়!

১৩.
— হ্যালো ড্রাইভায সাহেব? জ্বি আঙ্কেল কতক্ষন লাগবে? ওহ্! আর দশমিনিট? আচ্ছা থ্যাংকস।
কল কেটে ফোন পকেটে ঢুকালেন মুগ্ধ। বাসা থেকে আধঘন্টা আগেই রওনা দিতে হবে আমার। স্টেশন এখান থেকে পনের বিশ মিনিটের দূরে। মুগ্ধ জানালার কাছ থেকে এসে আমার ঠিক সামনে টি-টেবিলে বসলেন। আমি সোফায় বসেছি। মুগ্ধ মাথা নিচু করে আছেন।

— আপনি একটা সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিয়েন মুগ্ধ। আপনার জীবনে কাউকে দরকার। ফাইজাকে দেখাশুনার জন্য হলেও কাউকে দরকার। বিদেশের মাটিতে দেশীয় মেয়ে পাবেন না জানি, তবুও দোয়া করি আপনার লাইফে কেউ আসুক।
মুগ্ধ চট করে মাথাটা তুলে কপালে কয়েকরেখা ভাঁজ ফেললেন। আমার কথায় উনি ক্রদ্ধ হয়েছেন বোঝা যাচ্ছে।
— আমার দ্বিতীয় বিয়ে করার ইচ্ছা মোটেও নেই! দয়াকরে এমন ফালতু উপদেশ দেবেনা! আর ফাইজাকে দেখাশোনার জন্য আমিই এনাফ! আমার কোনো বিয়ের প্রয়োজন নেই! তোমার যদি বিয়ে করার আহ্লাদ থাকে! তুমি নির্দ্বিধায় করো! আমার আপত্তি নেই!
— আমার বিয়ে নিয়ে সত্যিই আপত্তি থাকবেনা?
— না। আমি উল্টো বলবো বিয়ে করো! স্বামী নিয়ে, সংসার নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখো, এতে আর কক্ষনো আমার মতো অলুক্ষনেকে মনে পড়বেনা। আর পড়লেও লাভ হবেনা।
— নিজেকে নিকৃষ্ট হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা করেনা? আপনি আমাকে আহত করছেন, জানেন? বারবার আপনি বুঝাচ্ছেন আপনি আমার পায়ের আঙ্গুলের নখের সমানও না! ছি! মুখ দিয়ে কথাগুলো আসে কিভাবে?
— আমার মতো হতভাগার কপাল আরো কলুষিত হোক!তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি সুখ চাইনা! আমি ভুগতে চাই! শাস্তি পেতে চাই! ধুকে ধুকে তিলেতিলে দিনেদিনে নিজেকে শেষ করতে চাই!

দরজায় বেল বাজলো। মুগ্ধ তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে চলে গেলেন। দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লাম। ভার্সিটির সেই মুগ্ধ ! আর আজকের মুগ্ধর মধ্যে বিশাল তফাত! পুরোনো রাগচটা মুগ্ধটা আর নেই। হারিয়ে গেছে।

নাকের ডগা বেয়ে দুচোখের কোণা থেকে দুফোটা জল গড়ালো। মুগ্ধ নিচের ঠোট কামড়ে ভেজা চোখে দরজার নব ধরে দাড়িয়ে আছেন। চোখের পানি মুছলে আবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে উনার। মুখ আড়াল করে কতবার শার্টের হাতায় চোখ ডলছেন, হিসাব নেই। হঠাৎ দরজার বাইরে এক পা ফেলবো ওমনেই হাতে টান অনুভব করলাম। আকষ্মিক টানশক্তির কাছে আমি চোখমুখ খিচে শক্ত কিছুতে পিঠে ব্যথা পেলাম। শ্বাস তীব্রগতিতে উপর-নিচ হচ্ছে! শরীরের উপর ভারী কিছুর অনুভব হচ্ছে! কিন্তু সেটা কি? হাত এদিক ওদিক নাড়াচ্ছি। আমার পেছনে কাঠের দরজা। হাত আরেকটু নাড়িয়ে বুঝতে পারি মুগ্ধ আমার উপর ভর ছেড়ে দিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরেছেন। আমার গালের উপর কোথা থেকে যেন টুপটুপ করে পানি পড়ছে। আমার চোখ শুস্ক! পানি আসছে কোত্থেকে? বামহাত চাপা পড়ে আছে বিধায় ডানহাত উঠিয়ে মুগ্ধের মুখটা বুঝার প্রয়াস করছি। মুগ্ধের বাহু ছুয়ে ছুয়ে গলা পযর্ন্ত উঠিয়ে গালের উপর আঙ্গুল পৌছাতেই বুঝতে পারি মুগ্ধের চোখ থেকে পানি পড়ছে। বুকটা ধক করে উঠলো আমার! মুগ্ধ আমার হাত সরিয়ে দরজায় আরো চেপে ধরলেন! কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন হুট করে। ভেতরের সব ঝাঝঁ উনি ঠোটেঁর উপর ঢেলে দিচ্ছেন জোরপূর্বক! কিছুক্ষণ পর উনি ছেড়ে দিয়ে নাক টানতেই ঠোঁট মুছলেন। দরজা খুলে আমাকে এক ধাক্কা মেরে বাইরে বের করে দরজা ধাম করে লাগিয়ে দিলেন। আমি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য বেকুবের মতো ঠাঁই দাড়িয়ে আছি। মুগ্ধ আমাকে ধাক্কা দিলেন? পেছন থেকে কেউ বলে উঠলেন,
— ম্যাম আপনি যাবেন না? দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আমি কিন্ঞ্চিত চমকে উঠে পা ঘুরালাম। গাড়িতে বসতে বসতে চোখজোড়া আরেকবার বন্ধ দরজার দিকে দেখলাম। ভালো থাকবেন মুগ্ধ। ভালোবাসি! অনেক বেশি ভালোবাসি! হয়তো আপনার মতো করে ভালোবাসতে পারিনি, তবুও প্রতিটি নিশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আপনাকে জড়িয়ে অনুভব করি। ধীরে ধীরে বাড়িটা পেছনের দিকে যেতে লাগল। জানালায় একহাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। গাড়ি সরু রাস্তা ছেড়ে মেইন রাস্তায় উঠলো। কিছুদূর যেতেই মনে হলো ড্রাইভার ফ্রন্ট মিররে বারবার তাকাচ্ছেন। কয়েকবার চোখে চোখ পড়তেই উনি বিষম খেয়ে চোখ সরিয়ে ফেলেন। ব্যাপারটা খটকা লাগছে। ড্রাইভার আমার দিকে কেনো তাকাচ্ছে? আমি বায়পাস না ভেবে বলে উঠি,
— ‘এইযে? আপনি বারবার পেছনে তাকাচ্ছেন কেন? গাড়ি সামনে তাকিয়ে চালান! আরেকবার যদি মিররে তাকাতে দেখি! ফলাফল খুব বাজে হবে বলে দিলাম!’

ড্রাইভার খুব বিব্রত ফিল করছেন আমার ধমক খেয়ে। ভ্রুকুচকে আছে আমার, ড্রাইভারের অপ্রস্তুত চাহনি দেখে। আমি বামদিকে চেপে জানালা খুলে ঘেঁষে বসলাম। হাইওয়েতে উঠতেই মনে হলো ড্রাইভারের অঙ্গীভঙ্গি বেশ একটা সুবিধার না। উনি পা নাড়াচাড়া করছেন অশ্লীল ভঙ্গিতে। সুযোগ পেলে থাই বুলাচ্ছেন অতি সাবধানে। মিররটা নজর গেলো! কি আশ্চর্য! মিরর আমার দিকে ঘুরানো কেন? একটু আগে এরকম ছিলো না! আমি সতর্ক হলাম। আড়চোখে ড্রাইভারের ক্রিয়াকলাপ দেখায় নিজেকে প্রস্তুত করলাম। উনি জ্যামের মধ্যে মাঝেসাঝে মিররে তাকান, বুকপকেটের ফোনে কিছু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন। মন সাড়া দিচ্ছে, লোকটা নিশ্চয়ই খারাপ কিছু দেখছেন। আমি আরেকটু কোণায় চেপে ড্রাইভারের ফোনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়তেই চোখ আমার কপালে উঠলো! এই ফালতু লোকটা ফোনের স্ক্রিনে নোংরা ভিডিও দেখছেন। মাথা নষ্ট হয়ে গেল আমার ড্রাইভারের উদ্দেশ্য বুঝে! এই মূহুর্তে কি করবো? কি করা উচিত একজেক্টলি? মুগ্ধকে কল করবো? আমার ফোন! ধ্যাত! ধ্যাত! আমার তো হাতে ফোনই নেই! হারিয়ে গেছে! গাড়ি থেকে হেল্প চাওয়া! আর নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা একই কাজ! তার চেয়ে বরং চুপ থাকি! শেষে দেখাচ্ছি মজা!

১৪.

— তুমি মুগ্ধকে কোন অধিকারে অপমান করেছো আব্বু! চুপ থাকবেনা! খবরদার তুমি চুপ থাকবেনা!
— তুই ওই কুলাঙ্গার জন্য আমার সাথে এই আচরন করছিস!
— সাবধান আব্বু! কোনো খারাপ কথা উচ্চারন করবেনা! মুগ্ধকে বাজে কথা বলার আগে তুমি নিজের ভুলে আঙ্গুল দাও!
— একটা থাপ্পর মারবো মুখে মুখে কথা বললে! তুই ওই ছেলের জন্য আমাকে যা তা বকে যাচ্ছিস?
— হ্যাঁ বলছি! উনার মতো ছেলেকে তুমি অশ্রাব্য ভাষায় কটুক্তি করবে! লজ্জা করছে আব্বু! তোমার ব্যবহার দেখে ধিক্কার হচ্ছে!
— সত্যি করে বলতো তুই কাল কোথায় ছিলি! তুই হোস্টেল থেকে এসে ওই বজ্জাতের কথা তুলছিস কেন!
— বজ্জাত বলবেনা আব্বু! উনাকে ভুলেও বজ্জাত বলবেনা! তুমি নিষ্পাপ বাচ্চা ফাইজার জন্য মুগ্ধকে কেন তাড়িয়েছো! বলো!
— নিষ্পাপ বলিস না! তোর জামাইর অবৈধ সন্তান ওই মেয়ে! বড়ভাবির সাথে নোংরামি করে এখন ভাতিজি বলে পরিচয় দিচ্ছে! তুই ওই নোংরা ছেলের কাছ থেকে সরে আয়! আমি তোকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিবো! সব ভুলে যা! সামনে পরীক্ষা দে! তারপর বিয়ের ব্যাপার স্যাপার দেখবো!

আমি আব্বুর কথায় ছিটকে গিয়ে সোফায় বসলাম। আব্বু এতো বড় জঘণ্য মিথ্যা কিভাবে বললেন? মুগ্ধের চরিত্র নিয়ে মিথ্যা ! আমার পিঠ পেছনে কে ছুড়িটা মারলো? কে মুগ্ধের ব্যাপারে আব্বুর নিকট কুৎসা রটালো! কে করছে মুখোশের আড়ালে এসব!

— তোমাকে কে ব্রেনওয়াশ করেছে আব্বু? কে তোমাকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেছে?
— তুই এখনো আমার কথায় বিশ্বাস করতে পারছিস না? কি জাদু করেছে ওই ছেলে! কি পট্টি পড়িয়েছে!
— সত্য বলো আব্বু! কে বলেছে! কে বলেছে এই কথাগুলো!
— তোর শুভাকাঙ্খী বলেছে। আমাকে নাম বলতে বারন করেছে।
— তোমাকে আল্লাহর কসম! নাম বলো আব্বু! নয়তো ভয়ানক কিছু করে ফেলবো! আমি ট্রেনের নিচে লাফ দিবো বলে দিচ্ছি!
— তুই আমাকে কসম দিয়ে সত্য ঢাকার চেষ্টা করবিনা! আমি ওই বেহায়া ছেলের জন্য তোর সম্পর্ক কোনোদিন মানবো না!
— তুমি নাম বলবে না তাইনা? বলবে না?

আমি রান্নাঘরের দিকে দৌড়ে গিয়ে কিছু হাতে নিয়ে ফিরলাম! আব্বু ভীতশঙ্কিত হয়ে কপাল কুচকে অবস্থা দেখছেন! আমি পেছন থেকে হাতটা বের করতেই আব্বু তেড়ে আসতে নিলেন! আমি থামিয়ে দিলাম! উনি অস্থির কন্ঠে বলে উঠলেন,
— এই এই তুই ছুড়ি নিয়েছিস কেন! ছুড়ি ফেলে দে! ছুড়ি ফেল মম! নিজেকে ঘা বসাবি না!

মাথা ডানেবামে ঘোরালাম। বামহাতে কবজির উপর একটু দূরত্ব রেখে ছুড়ি ধরেছি! আব্বু আমাকে নাম না বললে ধারালো ছুড়ি চালিয়ে দিবো! আব্বু ভয় ভয় কন্ঠে বলে উঠলেন,
— মা আমার! ছুড়ি ফেলে দে বলছি! কথা শোন!! ছুড়ি অনেক ধার মা!
— তুমি বলবে! নাকি বলবেনা!
— আমি বলবো!! বলবো!! তুই ছুড়িটা ফেলে দে!!
— নাম বলো!
— ‘তন্ময়’

-চলবে❤

ফাবিয়াহ্_মম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here