তুমি আমারই থাকবে,Part: 13
Writer: Zunaisha Mahira
?
পরেরদিন কক্সবাজার পৌঁছে গেছে মিশা। এখন তার কাজ হচ্ছে তানহা আর তনয়কে খোঁজা!
কিন্তু এখানে ওদের কিভাবে খুজবে তা ভাবছে সে। তারপর ঠিক করলো বিকালে সমুদ্রের কিনারে তো সবাই আসে। ওরাও অবশ্যই আসবে! তখন খুজে পেলেই ও দেখা করবে তনয়ের সাথে। এখন সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা করছে সে!
এদিকে কামিজ পড়ে তানহা রেডি হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তনয়ের জন্য। সেই কখন থেকে রেডি হচ্ছে সে! তানহা মেয়ে হয়ে রেডি হয়ে বসে আছে আর তনয় এত টাইম লাগাচ্ছে। শেষে তানহা বিরক্ত হয়ে রুমে যেতেই হা হয়ে গেলো সে!
নেভি ব্লু রঙের একটি পাতলা শার্ট পড়েছে তনয়, যার ভিতর দিয়ে ওর জিম করা বডি খুব ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে। তানহা ভাবলো তনয়কে দেখে ওরই যদি এই অবস্থা হয়, বিচের মেয়েগুলোর কি হবে। ওরা তো নিশ্চিত ক্রাশ খাবে ওর তনয়ের উপর! এসব ভেবে খুব কস্ট হচ্ছে ওর।
তানহাকে ভাবতে দেখে ওর সামনে তুড়ি মেরে তনয় বলে,
-এই যে ম্যাডাম, কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি?
-কোথাও না। (বাস্তবে ফিরে)
-ওহ আচ্ছা। আমি তো ভাবলাম ক্রাশ খেলে আমার উপর! (ভাব নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে)
তানহার খুব বলতে ইচ্ছা করল যে হ্যাঁ খেয়েছি আমি ক্রাশ আর আমি চাইনা বিচের অন্যকেউ আপনার উপর ক্রাশ খাক কিন্তু এই কথা তনয়কে বলতে পারবেনা সে.!!
-তেমন কিছুই না চলুন।
বলে তানহা রুমের দরজা খুলে বের হলো আর তনয়ও ওর পিছনে চলল বিচের উদ্দেশ্যে।
,
,
,
মিশা এইদিকে অনেকক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে খুজছে তনয় আর তানহাকে কিন্তু কোথাও দেখছে না তাদের।
-তুমি কোথায় তনয় বেইবি? আমি শিওর তুমি আমাকে এখানে দেখে খুশি হয়ে যাবে!! আই কান্ট ওয়েট টু সারপ্রাইজ ইউ..!!
অপরদিকে তানহা আর তনয় ঘুরছে বিচে। বেশি মানুষের ভীর ছিলো দেখে তানহার হাত ধরে রেখেছে তনয় আজ। তানহা তাই খুব খুশি মনে মনে। ওরা বিচে আসতেই কিছু মেয়ে হা করে তাকিয়ে ছিল তনয়ের দিকে তাই ওর মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়েছিল। এখন ওর হাত ধরে আছে দেখে মেয়েগুলো আর তাকাবেনা ভেবে মনে মনে হাসছে তানহা!
-এই যে পার্ট-টাইম পাগল, এইদিকে তাকাও একটু।
-কি বললেন আপনি আমায়? (রেগে)
-মানুষ যেরকম পার্ট টাইম জব করে, তুমি ওইরকম পার্ট টাইম পাগল হয়ে যাও তাই বললাম আর কি। (বাকা হেসে)
তানহা কিছু বলবে তার আগে তনয় তানহাকে ফোন দিয়ে হাতের ইশারায় সামনে দেখিয়ে বলে,
-এই দেখো ওখানে অনেক সুন্দর স্পট। সবাই ছবি তুলছে। আমাকে একটা ছবি তুলে দেও তো!
তানহা ভাবলো কোথায় ওর ছবি তুলে দিবে উল্টো ওর থেকেই তুলে নিতে চাইছে এই ছেলে। কি কপাল ওর!
-কি হলো চলো।
বলে তানহাকে টেনে ওখানে নিয়ে যায় তনয়।
মিশা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় দেখে তনয় তানহার হাত ধরে সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে। আজকে তনয়কে দেখে মিশাও ক্রাশ খায়। তারপর দেখে তনয় ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছে।
-ওহ আমার তনয় বেইবি পিক তুলবে? দাড়াও আমিও তুলছি তোমার পিক।
তাই বলে মিশাও ফোন বের করলো তনয়ের ছবি তোলার জন্য!
এদিকে তানহা ফোন অন করতেই ফ্রন্ট ক্যামেরা আসে শুরুতে, তাই সে ক্যামেরা চেঞ্জ করবে তার আগে ক্যামেরায় দেখে তার থেকে বেশ কিছুদুর পিছনে মিশার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে! তানহা জুম করে দেখে ওটা আসলেই মিশা আর সে ফোন বের করে কিসের যেন ছবি তুলছে।
তানহার মেজাজ সেই খারাপ হয়ে গেলো! একেতো ওর জ্বালায় এখানে এসেছিলো তনয়ের সাথে একা সময় কাটাবে বলে আর এই বজ্জাত মেয়ে এখানেও চলে এসেছে! ভাবা যায়?
তানহা খেয়াল করে দেখে তনয় যেদিকে দাঁড়িয়ে আছে মিশা ওইদিকেই ছবি তুলছে। এটা দেখে সে ভাবলো,
-আমার তনয়ের ছবি তুলছে? এই মেয়ে তো ভীষণ খারাপ!
বলে তানহা ভাবতে লাগলো কি করা যায়।
তনয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে সমুদ্রের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। আর ওর এক পাশে একটা লোক পোজ দিচ্ছে যার বউ তার সাথে ঝগড়া করছে একটু পর পর।
ওটা দেখে তানহার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো!
সে তনয়ের কয়টা ছবি তুলে ওর কাছে গিয়ে ফোন দিলো ছবি কেমন এসেছে দেখার জন্য আর ওই মহিলার কাছে গিয়ে বলল,
-ভাবী, কোন সমস্যা? তখন থেকে দেখছি খালি ঝগড়া করছেন আপনারা!
-আর বইলেন না ভাবী। এই লোকের সাথে আসার এক জ্বালা। কই আমার সাথে ছবি তুলবে তা না নিজের ছবি বাদ দিয়ে আমার ওকে ছবি তুলে দেওয়া লাগবে আগে। ঢং যত্তসব!
তানহা বুঝলো লোহা গরম আছে, এখনি হাতুড়ি মারা লাগবে। তাই ফিসফিসিয়ে বলল,
-আচ্ছা ভাবী, দেখেন তো পিছনের ওই মেয়েটিকে চিনেন নাকি? (মিশার দিকে ইশারা করে)
-কই না তো? ওই ধলা মাইয়াটা আবার কে? আগে তো দেখিনি! (ভ্রু কুচকে)
-কি বলেন ভাবী, আমি তো ভাবলাম আপনাদের পরিচিত। তখন থেকে দেখছি মেয়েটা ভাই এর ছবি তুলে যাচ্ছে তাই মনে করলাম আপনি চিনেন।
তানহার কথা শুনে মহিলাটি চোখ বড় বড় করে মিশার দিকে তাকালো আর দেখলো মিশা ওইদিকেই ছবি তুলছে। তনয় আর লোকটা অনেকটা কাছাকাছি থাকায় মহিলা তানহার কথা বিশ্বাস করল আর মনে করলো মিশা তার স্বামীর ছবি তুলছে। তাই তানহাকে বলল,
-ঠিকি বলেছেন তো আপনি, ভাবী। এইজন্যই মনে হয় আমার স্বামী ওখান থেকে সরছে না। ওরে দাড়াও আজকে খবর নিচ্ছি তোমার বলে মহিলা তার স্বামীর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে তানহা বলে,
-ভাবী, দোষটা কিন্তু ওই মেয়েরই। বিবাহিত জানার পরেও যে মানুষের পিছু ছাড়ছে না এইরকম মেয়ের মাঝে ভেজাল আছে। তাই ওই মেয়েকে শায়েস্তা করুন আগে! (চোখ টিপে)
তানহার কথা শুনে মহিলাটি খুব খুশি হলো এবং তার যুক্তি বুঝতে পারলো। তাই বলল,
-থ্যাংকিউ ভাবী, আমার হেল্প করলেন আপনি। এখন দেখেন ওই মেয়েকে আমি কিভাবে শায়েস্তা করি!
তাই বলে মিশার দিকে এগিয়ে গেলো ওই মহিলা।
তনয় তানহার কাছে এসে বলল,
-কি ছবি তুলেছো এগুলো? কয়েকটা ছাড়া বাকিগুলো ভালো আসেনি তেমন। (বিরক্ত হয়ে)
-আরে আপনাকে তো বলছিলামই যে এইদিকে ছবি ভালো উঠছে না। অন্যদিকে যাই চলুন। কাজ হয়ে গিয়েছে! (দাত কেলিয়ে হেসে)
-কি কাজ? (অবাক হয়ে)
-কিছুইনা চলুন তো।
বলে তনয়ের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তানহা আর তনয় ভাবার চেস্টা করছে ওর মাথায় চলছে টা কি?
এদিকে মিশা ফোনে দেখছিলো তনয়ের ছবি কেমন এসেছে। কিন্তু দূর থেকে তোলার জন্য বুঝা যাচ্ছে না ভালোভাবে।
কাধে টোকা পড়তেই সামনে তাকিয়ে দেখে এক মহিলা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। মিশা ভ্রু কুচকে চলে যেতে নিলেই মহিলাটি ওর হাত ধরে বলে,
-কই যাস? আমার স্বামীর ছবি তুলে এখন কই পালাচ্ছিস?
-হোয়াট ননসেন্স! আমি আপনাকে চিনিই না আর আপনার স্বামীর ছবি তুলব আমি?
-মিথ্যা কথা বলে লাভ নাই। আমি দেখেছি তুই আমার স্বামীর ছবি তুলতেছিলি। আর এখন ধরা খায়ে মিছা কথা কস!
-ইউ আর ম্যাড। আমাকে এইসব বলছেন? পাগল কোথাকার!
ব্যস, মহিলাটি এবার রেগে মিশার চুল টানা শুরু করলো। মিশা তো চিল্লাচ্ছে আর মহিলাটিকে ছাড়তে বলছে।
এইদিকে তানহা পিছনে উকি মেরে দেখে মিশা মহিলার হাতে জব্দ হচ্ছে তখন ওই আর হাসি আটকে রাখতে পারেনা।
-ঠিক হয়েছে। আরও তুলো অন্যের স্বামীর ছবি! হুহ (মনে মনে)
এদিকে তনয় ওকে জিজ্ঞেস করছে যে কি হয়েছে কিন্তু সে কিছু বলতে পাচ্ছেনা শুধু হেসেই যাচ্ছে।
আর তনয় মনে মনে ভাবছে, এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আল্লাহ?!
চলবে…?