তুমি আমারই থাকবে,Part: 17
Writer: Zunaisha Mahira
?
তনয়ের ভাবনার মধ্যেই তানহা একটু একটু ঢুলতে শুরু করেছে। তনয় তানহার ড্রিঙ্ক শুকে বুঝলো এর মধ্যে কিছু মিক্স করা আছে তাই ওয়েটারকে ডেকে বলল,
-এই ড্রিঙ্ক কেন দিয়েছেন আমাদের? আমরা কি এটা অর্ডার দিয়েছিলাম? (রেগে)
-স্যরি স্যার। এক্সট্রিমলি স্যরি। ভুলে অন্য এক কাস্টমারের ড্রিঙ্ক আপনাদের দেওয়া হয়েছে।
-এখন তো খেয়ে নিয়েছে আমার ওয়াইফ, স্যরি বলে কি লাভ এখন?
-স্যার টেনশন নিয়েন না, রাতে ঘুমানোর আগে লেবুপানি খাওয়ালেই সকালে উঠে ম্যাডাম একদম ফ্রেশ হয়ে যাবেন।
এদিকে তনয়ের কথার মাঝে তানহা মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়েছে চেয়ার থেকে, তাই ও কোন সিন ক্রিয়েট করার আগে তানহার হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসলো সে!
-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? আমি বাইরেই থাকবো আজকে! (চারদিকে তাকিয়ে)
-এখানে থেকে কি করবে তুমি? (ভ্রু কুচকে)
-দেখুন না চারপাশে সবাই কত্ত মজা করছে! কত্ত সুন্দর রং-বেরঙের ফানুস উড়ছে আকাশে! (গোল হয়ে ঘুরে)
-ওরা মজা করছে কারণ ওরা নিজেদের সেন্স এ আছে, যা তুমি নেই! তাই চলো এখন! (হাত ধরে টেনে)
-আপনি সবসময় এমন করেন আমার সাথে! আমার কোন কথাই শুনেন না! (কেদে)
-উফফ রে, এইটুকুর জন্য কাদা লাগবে? তুমিও পারো বটে!
-শুধু এইটুকু না আরও অনেক সময় আপনি আমার কোন কথা শুনেননি! নিজের যা মন চেয়েছে তাই করেছেন কিন্তু আমি কিচ্ছু বলিনি। (তনয়ের কাছে এসে ওর হাত ধরে)
তনয় খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলো তানহার এই কথায়। আগেও ও তানহাকে কস্ট দিয়েছে? ওর কথা শুনেনি?
-কবেকার কথা বলছো তুমি?
-আপনি যে আমাকে আপনার সাথে বাসায় এনেছেন আবার ছয় মাস পর ডিভোর্স দিতে চেয়েছেন, এর মাঝে একবারও কি শুনতে চেয়েছেন আমি কি চাই? (তনয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে)
তানহার কথা শুনে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে দাড়ালো তনয়।আসলেই তো সে এভাবে কখনো ভেবে দেখেনি। তানহারও যে নিজের ইচ্ছা থাকতে পারে, সে এই বিষয়ে কখনও চিন্তা করেনি। সবসময় নিজের ডিসিশন ওর উপর চাপিয়ে দিয়েছে আর মেয়েটা কখনো কিছু বলেনি ওকে!
-কি হলো বলুন? (তনয়ের কলার ধরে ঝাকিয়ে)
-তুমি কি চাও তানহা? তুমি কি আমার সাথে থাকতে চাও?
এটা জিজ্ঞেস করে তনয় এক মুহুর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলো, সে জানেনা কেন কিন্তু তার মনের গহীনে সে তানহার মুখ থেকে হ্যাঁ শুনতে চাচ্ছিলো। তনয় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তানহার উত্তরের আশায়।
-থাকবো তো! আমি আর আপনি এই বিচ ঘুরে বেড়াবো, রং-বেরং এর ফানুস উড়াবো! তারপর আপনি আমাকে কালকের মতো রুমে কোলে করে নিয়ে যাবেন ঠিকাছে?
তানহার এসব বাচ্চাসুলভ কথায় হেসে ফেললো তনয়। এক মুহুর্তের জন্য সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলো সে তানহার উত্তর শুনার আশায় কিন্তু এই মেয়ে এখন নিজের হুশে নেই সেটা বেশ বুঝতে পারলো সে!
একটা সুন্দর ফানুস এনে তা জ্বালিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেয়ার জন্য মেলে ধরলো তানহা আর পিছন থেকে ওর হাতের দুইপাশে তনয়ের হাত। ফানুস উড়ানোর আগে তানহা বলল,
-এখন কোন উইশ করেন। আল্লাহ চাইলে পুরণ হয়ে যেতে পারে!
-তুমি করো দেখি।
তনয় দেখলো তানহা চোখ বন্ধ করে কিছু বলছে, এত মন থেকে দোয়া চাচ্ছে সে! তনয় মনে মনে দোয়া করলো তানহার ইচ্ছাটা যেন পুরণ হয়!
-কি চাইলেন আপনি?
-তোমারটা আগে বলো।
-উহু, দোয়া পুরণ হলে তখন বলবো! (হেসে)
-আমারটাও তাহলে তখনই শুনো।
তারপর আরও কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে ওরা রুমের উদ্দেশ্যে চললো আর তানহার কথামতো তনয় ওকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসেছে।
তানহাকে বেডে নামানোর সময় তনয় শুনতে পেলো ও তনয়ের গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে কিছু বলছে।তনয় কান পেতে শুনার চেস্টা করল,
-আপনি কি কখনো বুঝবেন না? কতদিন পর বুঝবেন আরও আপনি?
-তুমি কি বলছো? জোরে বলো প্লিজ। আমি বুঝতে পাচ্ছিনা!
তানহা তাও বিড়বিড় করছে দেখে তনয় লেবুপানি আনতে গেলো তানহার জন্য। সে থেকে গেলে হয়তো শুনতে পেতো তানহা বলছে,
-ভালোবাসি তনয়। আমি জানি আপনিও কিছু অনুভব করেন আমার জন্য, কবে বুঝবেন আরও?
তনয় লেবুপানি এনে তানহাকে খাইয়ে দেয় আর সে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে! ওর পাশে শুয়ে তনয় ভাবে না জানি সকালে উঠে তানহার মনে থাকবে কি না সে কি কি বলেছিলো আজকে কিন্তু তনয়ের কাছে আজকের রাতটা ভালোভাবেই মনে থাকবে আজীবন! তানহা যে এই কয়দিনে ওর জীবনে বড়সড় একটা জায়গা দখল করেছে সেটা তনয় বুঝতে শুরু করেছে।
পরেরদিন ওরা বাসায় ফিরে যাচ্ছে। সকালে উঠে তানহার মাথা ভারি ভারি লাগে, তারপর তনয়ের থেকে কালকের সমস্ত কাহিনি শুনে তানহা প্লেনে উঠে৷ বেচারি লজ্জায় তাকাইতে পাচ্ছেনা তনয়ের দিকে! না জানি কি মনে করেছে তনয়! ও কিছু উল্টাপাল্টা বলেনি তো? এসব ভাবতে ভাবতে আর যে ওর ড্রিঙ্ক এ এলকোহল মিশিয়েছে তাকে গালি দিতে দিতে পুরো রাস্তা পার করলো তানহা!
ওরা বাসায় পৌঁছাতেই শ্রেয়া এগিয়ে এসে তানহাকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,
-কি ভাবি?কেমন কাটলো হানিমুন? (চোখ টিপে)
-আহহা, ওরা কেবলি এসেছে আর তুই কি শুরু করেছিস শ্রেয়া? শান্তিমত নিশ্বাস দিতে দে আগে। (মা)
অতঃপর ওরা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। পুরো বিকেল তানহার শ্রেয়ার সাথে গল্প করে কাটলো।শ্রেয়া তো সবকিছু শোনার জন্য খুবই এক্সাইটেড! ওখানে কি কি হয়েছে সব ওর জানা চাই!
মিশার সাথে তনয় যোগাযোগ করবে না শুনে শ্রেয়া প্রচন্ড খুশি হয়ে গিয়েছে। আর তানহাকে বলল,
-কংগ্রাচুলেশনস ভাবী! তোমার লাভস্টোরির ভিলেনকে তুমি সাকসেসফুলি সরাতে পেরেছো।
-মিশা যেয়ে কি হবে শ্রেয়া? তনয় যদি না বুঝেন তাহলে আমাদের স্টোরি এখানেই শেষ!
-উফফো ভাবী, তুমি এত টেনশন কর কেন? ভাইয়ার মনে অবশ্যই তোমার জন্য কিছু আছে। নাহলে তোমার এক কথায় মিশার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখতো?
-কিন্তু উনি তো সেটা বুঝছেন না। (দুঃখী মুখ করে)
-না বুঝলে ওরে বুঝাইতে হবে। আমরা অবশ্যই কিছু বুদ্ধি বের করব যাতে ভাইয়া ওর ফিলিংস বুঝতে পারে!
তারপর রাতে খাওয়া-দাওয়া করে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়।
,
,
,
,
,
কয়েক মাস পর বিকালে তানহা ভার্সিটি থেকে বাসায় আসছিলো। তনয় ওকে নিতে আসবে তাই ভার্সিটির বাইরে ওর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো সে। হঠাৎ করে ওর সামনে একটা গাড়ি থামে আর মিশা বেরিয়ে আসে। তানহা মিশাকে না দেখার ভান করে সাইড কেটে যাচ্ছিলো আর মিশা বলে,
-তানহা দাড়াও, আমি টাইম পাস করতে আসিনি। আমার তোমার সাথে জরুরী কথা আছে!
চলবে…?