তুমি আমারই থাকবে,Part: 21

0
3987

তুমি আমারই থাকবে,Part: 21
Writer: Zunaisha Mahira

?

-ডিভোর্স?

-হুম (গম্ভীর গলায়)

-কিন্তু কেন? (ভাঙা গলায়)

-কেন আবার? তুমি এমন বিহেভ করছো যেন আজকে নতুন শুনছো?

-না মানে, আপনি হঠাৎ করে আজকে কাগজ দিচ্ছেন যে? সেইদিন যখন চলে গেলাম তখন তো কিছু বলেন নি?

-সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। (জোর করে মুখে হাসি টেনে)

তানহা যেন বিশ্বাস করতে পাচ্ছেনা কিছু! এ কিভাবে সম্ভব? এক রাতের মধ্যে যেন অন্য এক তনয়কে আবিষ্কার করছে সে! এত তাড়াতাড়ি মানুষ কিভাবে বদলে যেতে পারে মাথায় আসছেনা তানহার! তানহাকে চুপ করে থাকতে দেখে তনয় বলে,

-কি হলো? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ বলো?

-আমি ভেবেছিলাম আপনি…(চুপ থেকে)

-কি ভেবেছিলে তুমি? আমি কি? (ভ্রু কুচকে)

-আপনি…নাহ কিছুনা। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

-তুমি ভেবেছিলে আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি, তাইনা?

তানহা চমকে উঠে তাকালো তনয়ের চোখের দিকে। সে খুব করে চাইছিলো যে তনয় শুধু একবার বলুক যে সে ওকে ভালোবাসে তাহলে তানহা সব ভুলে নিজেও বলে দিবে সেও ওকে কতটা ভালোবাসে!

-আম স্যরি তানহা।

-কেন?

-আমি তোমাকে ভালোবাসিনা। আসলে আমি এসব প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখিনা তো তাই। তুমি ডিভোর্স দিয়ে খুশি থাকবে!

-ওহ তাই? আপনি খুব জানেন দেখি আমি খুশি থাকব কি না?

-জানবোই তো। এতদিন সাথে থাকলাম না?

-হুম। খুব জানেন আপনি আমায়। ঠিকি ধরেছেন আপনি।আমি ভেবেছিলাম যে আপনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু না, আমি ভুল। আমি সত্যিই ভালো অভিনয় জানেন তনয়!

এবার তনয়ের মেজাজ বিগড়ে গেল। সে রেগে তানহার বাহু চেপে ধরে বলল,

-তাইনা? আমি অভিনয় করেছি? তাহলে তুমি কি করেছো? সেটা বলো একবার।

-আমি আবার কি করেছি? আপনি কি বলছেন আমি নিজেও বুঝতে পাচ্ছিনা।

-বাহ তানহা বাহ। ভালোই তো খেলতে পারো তুমি। এত ইনোসেন্ট ফেস বানিয়েছো যে আমি নিজের চোখে না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করতাম না।

-মানে? আমি কিচ্ছু বুঝতে পাচ্ছিনা আপনি কি বলছেন।

-এখন তো কিছু বুঝবেই না। ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেছো যে। সারাদিন সে মাথায় ঘুরলে আমার কথা কি মনে থাকবে (তানহাকে দূরে সরে দিয়ে)

-আপনি জানেন আমি কাকে ভালোবাসি? আমি তো আপনাকে…

-ওহ প্লিজ। এখন তুমি এটা বলোনা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।

-আমি আপনাকেই ভালোবাসি তনয় (কেদে)

-অন্য কাউকে আই লাভ ইউ বলে আবার আমাকে ভালোবাসো এটা বলতে লজ্জা লাগছেনা?? (জোরে ধমক দিয়ে)

তনয়ের এত জোরে ধমকে তানহা কেপে উঠে। কাপা কাপা গলায় সে বলে,

-মানে?(অবাক হয়ে)

-তুমি কাল সন্ধ্যায় কি করেছো আমি দেখিনি ভেবেছো? নাকি ভেবেছো তুমি আরেকজনকে ভালোবাসবে কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি দেখে তোমাকে জোর করে বেধে রাখবো আমার সাথে? আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাচ্ছি না তানহা। চুপচাপ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে চলে যাও এখান থেকে!

-আপনি ছিলেন ওখানে? আপনি কিসব মনে করছেন এগুলো?

-আমি যা মনে করছি ঠিকি মনে করছি। তুমি যখন ড্রাংক ছিলে কক্সবাজারে তখন নিজেই তো বলেছিলে যে আমি সবসময় নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেই তোমার উপর, তোমার ইচ্ছাকে কোন গুরুত্ব দিইনা। তাহলে নেও, আজ দিচ্ছি তোমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য। (উল্টো দিক ঘুরে)

তানহা এদিক ফিরে থাকলে দেখতে পারতো কতটা কস্টের সাথে কথাগুলো বলছে তনয়। ওর যেন গলা ধরে আসছে এগুলো বলার সময়!

-জানো তানহা। আমি ভেবেছিলাম তুমিও হয়তো দুর্বল আমার প্রতি। কিন্তু না আমি ভুল।

-আপনি সত্যিই ভুল করছেন তনয়। একবার আমার কথা শুনুন। আমি বলেছিলাম না যে একটা সারপ্রাইজ আছে আপনার জন্য, এটাই সেই সারপ্রাইজ। ও আমার…

-জাস্ট শাট আপ। আমি শুনতে চাইনা ও তোমার কে। আমি বুঝেছি তোমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসো।

-এরকম কিছুই না তনয়। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই। পুরো কথাটা তো শুনুন, আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু…

প্রচন্ড রেগে এবার তানহার দিকে তেড়ে আসে তনয়। আর বলে,

-তোর খারাপ লাগছে না এগুলো বলতে? আরেকজনকে ভালোবেসেও আমার সাথে থাকতে চাস? কি জন্যে আমার সাথে থাকতে চাস? আমার টাকা আছে দেখে? (বাহু ধরে ঝাকিয়ে)

তানহাকে কাদতে দেখে ওকে ছেড়ে দিয়ে তনয় বলে,

-বারবার বলছিলাম আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাচ্ছিনা, চুপচাপ চলে যাও এখান থেকে। কিন্তু না..তুমি আমাকে ভালো থাকতে দিলা না। এখন চলে যাও এখান থেকে আর হ্যা দুই সপ্তাহ পর তো ডিভোর্স। তখন বিয়েও করে নিতে পারো।

এবার তানহা রেগে যায়। সে বলে,

-আমার কোন প্রয়োজন নেই আপনার লাইফে তাইনা? ভালোবাসেন না আপনি আমাকে?

-না, বাসিনা। এখন সরো সামনে থেকে। জাস্ট গো (চিল্লিয়ে)

-ঠিক আছে। চলে যাবো আমি। আর বিয়েও করব আবার। দাওয়াত রইলো আপনার। (রেগে)

তানহার কথা শুনে তনয় রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিক তাকিয়ে থাকে যা দেখে ভয়ে তানহার গলা শুকিয়ে যায়। তনয় টেবিলে থাকা কাচের ফুলদানিগুলো সজোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারে আর বলে,

-আমি যদি রাগ কন্ট্রোল না করতাম না, তাহলে খুন করতাম তোকে আজকে।

বলে প্রচন্ড গতিতে বের হয়ে যায় রুম থেকে।

তনয় বের হওয়ার পর তানহা মাটিতে বসে কাদতে থাকে। সে ভাবে কত সহজেই অবিশ্বাস করলো তনয় ওকে। ও যার সম্পর্কে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলো তনয়কে তনয় ওকে নিয়েই সন্দেহ করলো তানহাকে! ছিঃ! তানহা ভাবতেও পাচ্ছেনা তনয় কিভাবে এত বড় একটা ভুল ভাবতে পারলো! ওর কথা একবার শুনলেও তো পারতো সে। কিন্তু না। প্রতিবারের মত এইবারও নিজের যা মন চায় করলো আর অবিশ্বাস করে চলে গেলো! তাহলে তানহাও কেন রাগ ভাংগাবে ওর? যেকোন সম্পর্কের ভিত্তিই হলো বিশ্বাস। যে বিশ্বাস করেনা ওর উপর, তার সাথে থাকবে না সে!!

একগাদা কস্ট আর রাগের বশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো তানহা!
,
,
,
,
,
,

কাল সন্ধ্যায় তানহা বসে বসে তনয়ের অপেক্ষা করছিলো। সে ভাবছিলো শ্রেয়ার কথার মানে কি। তবে কি তনয় আজ ওকে প্রপোজ করবে? তাহলে সেও বলে দিবে ওকে কত ভালোবাসে! তনয়ের কথা ভাবতে ভাবতেই তানহার মুখে হাসি ফুটে উঠে! তানহা আনমনে বলে, ভালোবাসি তনয়।
হঠাৎ কেউ তার সামনে বলে উঠে,
-বাট আই হেইট ইউ!

তানহা চমকে সামনে তাকায় আর দেখে একটা ছেলে ওর সামনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে! তাকে দেখে খুশিতে তানহার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে আর সে দৌড়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-বাট আই লাভ ইউ এন্ড আই মিসড ইউ সো মাচ!!

ব্যস, তনয় তখন তানহার রুমের জানালা দিয়ে আসতে ধরছিলো তানহাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কিন্তু উল্টো নিজেই বড়সড় ধাক্কা খেলো তানহার কথা শুনে! তনয়ের মনে হলো কেউ যেন ওর হৃদয়ে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। রাগে, দুঃখে নিজের অজান্তেই এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে তনয়ের চোখ দিয়ে।

সে ভাবলো হয়তো তানহা আগে থেকেই ভালোবাসতো ওই ছেলেকে। ও বোধহয় ওদের দুইজনের মধ্যে এসেছে। হয়তো বাবা-মার সিদ্ধােন্তর আর তনয়ের সাথে বন্ধুত্বের খাতিরে তার সাথে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তানহা। কিন্তু জোর করে তো আর ভালোবাসা হয়না। এজন্য তনয় মুক্তি দিবে তাকে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসায় ফিরে অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে মাথা ঠান্ডা করে এই সিদ্ধান্ত নেয় তনয় কাল রাতে।
,
,
,
,

আজ প্রচুর কস্ট হচ্ছে তনয়ের বুকে। জীবনে প্রথম কাউকে ভালোবাসলো আর সেও অন্য কাউকে ভালোবাসে! এখানে তানহার দোষ নেই তনয় মনে করে কিন্তু তাও ওর উপর রাগ হচ্ছে তার। প্রচন্ড রাগ! কেন বাসবে সে অন্য কাউকে ভালো? কি কমতি ছিলো ওর মধ্যে? কি হতো ওকে ভালোবাসলে? ও কি খারাপ রেখেছিলো তানহাকে? আজকের তানহার বলা শেষ কথাটা ওর মন ভেংগে দিয়েছে! কি করে পারলো সে বলতে ওর বিয়ের কথা! বাসায় থেকে বের হয়ে বারে এসেছে সে। এসব ভাবতে ভাবতে ড্রিঙ্ক করছে তনয়। আজ ওর দরকার এটার। নিজেকে কিছুতেই সামলাতেই পাচ্ছেনা সে!!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here