তুমি আমারই থাকবে,Part: 22
Writer: Zunaisha Mahira
?
তনয় বাসায় ফিরে দেখে তানহা কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়েছে ফ্লোরে। সে ঢুলতে ঢুলতে এলো ওর কাছে তারপর আস্তে করে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো ওকে। তারপর ওর পাশে বসে বলল,
-কেন করলে তুমি এমন আমার সাথে? আমাকে কি ভালোবাসা যেতো না? আমি তো এতদিন তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছিলাম। কিন্তু কাল সন্ধ্যায় যা দেখলাম তার সাথে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পাচ্ছিনা। কেন হলো এরকম আমার সাথে?
এগুলো বলতে বলতে তনয় তানহার পাশে ঘুমিয়ে গেলো।
সকালে তানহা উঠে দেখে তনয় ওকে ধরে ঘুমাচ্ছে আর সে বেডে। তানহা বুঝে তনয় ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিলো কারণ ও তো ফ্লোরে ঘুমিয়েছিল। তনয়ের ঘুমন্ত মুখ দেখে তানহার মায়া হলেও তার কালকের কথাগুলো মনে হতেই ওর রাগ হয় আর তনয়ের যে হাত ওর পেটের উপর ছিলো সেটাতে চিমটি কাটে সে! ঘুমের মধ্যে হাতে চিনচিনে ব্যাথা হওয়ায় চমকে জেগে উঠে তনয়। তানহার নিজেকে আর তানহাকে দেখে মুহুর্তেই সরে যায় সে!
-কি সমস্যা তোমার?
-আমার সমস্যা নাকি আপনার সমস্যা বলুন তো। আমাকে ধরে ঘুমাচ্ছিলেন কোন অধিকারে? কালকের কথা ভুলে গেছেন? (রেগে)
-আমি ভুলে যাইনি। তোমার এটাই সমস্যা। আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা তুমি। বুঝেছি আমি। একটু শান্তিমত যে ঘুমাবো তাও সহ্য হচ্ছেনা তোমার।
-ঠিক আছে। বেশিদিন নেই। সহ্য করতে হবেনা আর আমাকে আপনার। চলেই যাব আমি!
-হ্যা যাও না। কে আটকিয়েছে তোমায়? আমার বয়েই গেছে তোমাকে আটকাতে।
,
,
,
তানহা সকালে ভার্সিটি চলে যাওয়ার পর তনয় অফিস যাচ্ছিলো। রাস্তায় শ্রেয়া কল দেয় ওকে।
-হ্যালো ভাই, কাল রাত কেমন কাটলো হুম?
-কি ধরনের কথা এগুলো? বড় ভাই আমি তোর। (রেগে)
-রিল্যাক্স ভাইয়া, সব ঠিক আছে তো? তুই রেগে আছিস মনে হচ্ছে।
-কিচ্ছু ঠিক নেই বোন। আমার কপালে নেই তানহা।
-মানে? পাগল হয়ে গেছিস? কি বলছিস তুই এগুলো? (চিল্লিয়ে)
-যা সত্যি তাই বলছি।
তারপর তনয় ওকে সেদিন সন্ধ্যায় দেখা ঘটনার কথা বলে। সব শুনে শ্রেয়া বলে,
-তুই তোর জায়গায় ঠিক আছিস। অন্য কেউ হলেও এটাই মনে করতো। কিন্তু ভাইয়া ভাবীর দিক থেকে ভেবে দেখ একবার। ও কি তোকে বলেছে কে ওই ছেলে?
-ওটা বলতে হবে আমাকে? যা দেখেছি তারপর কিছু বুঝা বাকি নেই আর আমার।
-কিন্তু ওটা অন্য কেউও তো হতে পারে তাইনা? ভাবীর প্রেমিক হলে নিশ্চয়ই ওর বাসায় যেয়ে কথা বলবেনা।
-এটা তো আমি ভাবিনি। কিন্তু কাজিনও তো হতে পারে, মেইবি আগে থেকে পছন্দ..বাদ দে প্লিজ শ্রেয়া আমি এই বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা।
-তুই আসলেই একটা গাধা। নাকে রাগ নিয়ে চলিস ঠিকি কিন্তু রেগে গেলে বুদ্ধি হাওয়ায় উড়ে যায় তোর।
-কি বলতে চাইছিস তুই? তুই নিজের ভাইয়ের সাপোর্ট না করে ভাবীর সাপোর্ট করছিস?(রেগে)
-ভাইয়া, প্লিজ। ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা কর। আমি থাকলে তো ভাবীর থেকে শুনে নিতাম কিন্তু আমি যেহেতু নাই এখন সব তোকেই খোঁজ নিতে হবে।
-আমার দরকার নেই। তানহা যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে নিজে থেকেই বলতো সব। আমি কিছু খোজ নিবনা।
-ভাইয়া প্লিজ। সবসময় ইগো দেখালে হয়না। একবার ইগোটাকে সাইডে রেখে ভাব। যদি তোর ধারণা ভুল হয় তাহলে তোর এক ভুলের জন্য তুই ভাবীকে সারাজীবনের জন্য হারাবি।
তানহাকে হারানোর কথা শুনে বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো তনয়ের। সে ভেবে দেখলো শ্রেয়ার কথায় পয়েন্ট আছে। সবসময়ই যে চোখে দেখা সবকিছু সত্য হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। ওর কোন ভুলের জন্য যদি সে তানহাকে হারায় তাহলে তনয় নিজেকে কখনও মাফ করতে পারবেনা। সারাজীবন আফসোস করে কাটাতে হবে! তাই সত্য মিথ্যা যাচাই করতে তানহার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো তনয়।
বাসায় পৌঁছাতেই তানহার মা গেইট খুললেন। তনয়কে দেখে অনেক খুশি হয়ে গেলেন তিনি।
-আসো বাবা, তুমি একাই এলে। তানহা আসেনি?
-না মা। ও তো ভার্সিটি গেছে তাই আমি এসেছি।
তনয়কে বসতে দিয়ে তানহার মা বলে,
-খুব ভালো করেছো। আমি সেদিনই দেখা করতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে।
-মা…আসলে একটা কথা শুনতে এসেছিলাম। কালকে কে এসেছিল এখা…
-মা….কে এসেছে বাসায়?
আওয়াজ শুনে তনয় তাকিয়ে দেখে কালকের ওই ছেলে যাকে তানহা জড়িয়ে ধরে ছিল। কাল সন্ধ্যার কথা মনে হতেই মুড বিগড়ে গেল আবার ওর। কিন্তু ছেলেটিকে মা বলতে শুনে বেশ অবাক হলো সে। কি হচ্ছে এখানে কিছুই বুঝতে পাচ্ছেনা সে।
-আপনি কে? (থাকতে না পেরে প্রশ্ন করেই ফেললো তনয়)
-আমি কে সেটা না হয় পরে বলি। আপনি কে তা বলুন আগে। (ভ্রু কুচকে)
-আমি এই বাড়ির একমাত্র মেয়ের একমাত্র জামাই (দাতে দাত চেপে)
-এ সব কি মা, তাহলে আমি কই থেকে এসেছি? (অবাক হয়ে)
-মানে? (কিছু বুঝতে না পেরে তনয় বলল)
-কিছুনা বাবা। আমি বলছি তোমায়। এটা তোমার শালা হয়। তানহার ভাই। আদিব।
তনয় এই মাত্র মুখে পানি নিয়েছিল আর ছেলেটা তানহার ভাই শুনে ওর মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। বিষম খেলো সে!
-আরে আরে রিল্যাক্স জামাইবাবু। শালাকে দেখে বেশি শক খেলেন মনে হচ্ছে। (আদিব)
-আমি যা খাইলাম এটাকে শক বলেনা রে শালা, এটাকে ঝাটকা বলে ঝাটকা! (মনে মনে)
-তুমি ঠিক আছো বাবা? (মা)
-জি আমি ঠিক আছি। কিন্তু তানহার ভাই ছিলো সেটা তো কেউ বলেনি আমায়। তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? (আদিবকে উদ্দেশ্য করে)
-আমি দেশে থাকিনা বেশ কয়েক বছর হলো। তানহার বিয়ের মধ্যে আসতে পারিনি এজন্য। কয়েক মাস পর দেশে সেটেল হবো তাই সময় পেতেই চলে এসেছি দেখা করার জন্য! নিজের বোনের বিয়েতেই থাকতে পারলাম না কি কপাল আমার!
-ব্যাপার না। ওটা তো আমার বোনও থাকতে পারেনি।
-এখন তো দুইজনই আছিস তোরা। বেশ কয়মাস হয়ে গেছে, এখন অনুষ্ঠান করা যাবে। (মা)
তানহার মায়ের কথা শুনে তনয়ের মনে হলো সে তো তানহাকে কিসব বলেছে কালকে। ছিঃ এটা ওর নিজের ভাই ছিল। হায় কপাল! কি মনে করলো ও আমাকে? কেন ওর কথা শুনলিনা তুই তনয়?
নিজের মনে এসব ভাবতে ভাবতে নিজের উপর প্রচন্ড রাগ আর লজ্জা হচ্ছে তনয়ের। ওর ২৬ বছরের জীবনে এত বড় ভুল কারও ক্ষেত্রেই বুঝেনি সে। এই প্রথম এইরকম বড় ভুল বুঝলো, তাও তানহাকে! (নিজের মনে এসব ভাবতে ভাবতে তানহার সাথে কথা বলতে যেতে চাইলো সে। এখন ওর তানহার সাথে কথা বলা খুব জরুরি। না হয় অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে)
-মা, আমি আসছি এখন। আমার অনেক ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে যেতে হবে।
-একটু আগেই তো এলে বাবা। না খেয়েই যাবে?
-আমার এখন যাওয়া প্রচন্ড জরুরি মা। এখন না গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, আপনি প্লিজ তানহাকে বলবেন না যে আমি এখানে এসেছিলাম।
বলে তনয় দৌড়ে বের হয়ে গেল তানহার উদ্দেশ্যে।
-শ্রেয়া ঠিকি বলে, আমি আসলেই গাধা। কি হতো তানহার কথা শুনলে (এগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রাইভ করে তানহার ভার্সিটিতে গেলো তনয়)
অনেকক্ষণ ধরে ভার্সিটির বাইরে দাড়িয়ে আছে তনয় কিন্তু তানহা বেরই হচ্ছেনা। আজকে সবই উলটাপালটা হচ্ছে ভাবছে তনয়। যা করতে যাচ্ছে সেখানেই ঝামেলা হচ্ছে ওর। এরই মধ্যে ওর বাবার কল আসে ওর ফোনে।
-হ্যা বাবা বলো।
-তুমি অফিস বাদ দিয়ে কোথায় ঘুরে বেরাচ্ছো তনয়? অনেকক্ষন ধরে খুজছি তোমাকে, তোমার কোন ধারণাও আছে? (রেগে)
-আম স্যরি বাবা। একটা জরুরী কাজ এ বাইরে এসেছি।
-তোমার যেই কাজ-ই থাকুক না কেন তুমি এই মাত্র অফিসে চলে আসবে। অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে এখানে।
তনয় ভাবলো তানহাকে বাসায় যেয়ে বুঝাবে সে তাই বাবার কথানুযায়ী অফিসে চলে গেলো সে। কিন্তু কপালে না থাকলে যা হয়! অফিসে গিয়ে জানতে পারে ক্লায়েন্টের সাথে বনাবনি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে এক সপ্তাহের জন্য সুইজারল্যান্ড যেতে হবে তনয়কে। সব রেডি আছে,আজ বিকালের ফ্লাইটে যেতে হবে তাকে। তাই শ্রেয়াকে মেসেজ দিয়ে এয়ারপোর্টে চলে গেলো সে।
-শ্রেয়া, আমার খুব আর্জেন্ট কাজে সুইজারল্যান্ড যেতে হচ্ছে। আমি না আসা পর্যন্ত তানহাকে বাসায় আটকিয়ে রাখার দায়িত্ব তোর। যেকোন প্রবলেম হলে আমাকে জানাবি।
কিন্তু তাও যেন পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হতে পাচ্ছেনা তনয় ৷ তানহা যেন কোথাও না যায় এটা দোয়া করতে করতে সুইজারল্যান্ড চলে গেলো সে!
চলবে…?