তুমি আমারই থাকবে,Part: 26
Writer: Zunaisha Mahira
?
ছেলেটা ওর দিক হাত এগিয়ে নিয়ে আসতেই ভয়ে চোখ বন্ধ করলো তানহা। একটু পর কোন সাড়া না পাওয়ায় চোখ খুলে দেখে ছেলেটির হাত ধরে আছে তনয়। তনয়কে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেল তানহা।একটু আগের মান-অভিমান সব ভুলে তনয়ের এক হাত চেপে ধরলো সে। এখন সে জানে ওর ভয় নেই।
এদিকে তনয় তানহাকে ওর পিছনে নিয়ে ছেলেটাকে বলল,
–আগেরবারের মাইরটা কি কম হয়ে গিয়েছিলো নাকি? এইবার হাতের জায়গায় পুরো শরীর ভেঙে দিই? (চিল্লিয়ে)
তনয়ের চিল্লানি শুনে ওই ছেলেটি ভয়ে সরে যায় আর বলে,
–মামা, মাফ কইরা দেন ভুল হয়ে গেছে। আর কিছু ভাংগা লাগবো না।
বলেই ছেলেটি দৌড় দেয়।
তনয় বলে,
–তোরা কেউ আসবি? তোদের সাথি তো চলে গেলো।
ওর কথা শুনে বাকি ছেলেগুলোও দৌড় লাগায়। এবার তনয় তানহার দিকে তেড়ে আসে। রাগে ফোসফোস করছে সে। তানহা ভয় পেয়ে পিছাতে নিলেই তনয় ওর বাহু চেপে ধরে বলে,
–খুব রাগ দেখাতে শিখেছো তুমি তাইনা? আমি ঠিক সময়ে না আসলে কি হতো ধারণা আছে তোমার?? (চিল্লিয়ে)
–ছাড়ুন আমার হাত। যেয়ে মিশা আপুর হাত ধরুন আপনি।
–আরে বাবা, আমার কথাটা তো শুনো।
–শুনবো না আমি কিছু। যাবো আমি।
–আচ্ছা যাও। সামনে ছেলেগুলো আসছে ওদের বলি? ওরা তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবে।
এটা শুনে তানহা ভয় পেয়ে তনয়ের পিছে এসে লুকায়। একটু পর উকি দিয়ে কাউকে আসতে না দেখে বুঝলো যে তনয় ওকে বোকা বানিয়েছে তাই সে রেগে তনয়ের দিকে তাকায় আর তনয় হাসতে শুরু করে। তানহা তখন বলে,
–আপনি আসলেই খারাপ লোক। একটা লুচু লোক।
–এই তুমি আমাকে এগুলা বলছো? তখন আমি কেন মিশাকে ধরে ছিলাম জানো?
–নাহ। শুনতে হবেনা থাক। আবার গিয়ে ধরুন পারলে।
–আরে বাবা, ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তানহা এটা শুনে অবাক হয়ে গেলো। বলল,
–কি বললেন আপনি? বিয়ে ঠিক হয়েছে তার?
–হ্যা এই দেখো কার্ড।
তানহা কার্ডটা দেখলো।তারপর তনয় আবার বলে,
–হ্যা,রেস্টুরেন্টে হঠাৎ করেই দেখা হলো ওর সাথে। আমি তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পাশের টেবিলে ওকে দেখি কয়েকটা বান্ধবীর সাথে তখন ও আমাকে ওর বিয়ের খবর দেয়। আমি ওকে কংগ্রেটস বলেছিলাম তখন খুশিতে ধরেছিল আমায়। এবার বলো আমার কি দোষ আছে এখানে?
তানহা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর বলে,
–জড়িয়ে ধরলে মানুষ অন্যকিছু মনে করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
–আরে, তানহু বেবি জেলাস ফিল করছো নাকি?(কাছে এসে)
–এমন কিচ্ছুনা। (বলে চলে যেতে নেয়)
তনয় তানহার হাত চেপে ধরে আর বলে,
–আমি আমার সব ভুলের জন্য মাফ চাই তানহা। প্রথমে তোমার থেকে বিয়ের জন্য না শুনেই রাজি হতে বলেছিলাম সেইজন্য, তারপর তোমার প্রতি আমার ফিলিংসগুলোকে বারবার দায়িত্ব বলে অবহেলা করার জন্য, আর মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি তোমার প্রতি অনেকবার অকারণে রাগ দেখানোর জন্য! শেষ একবার সুযোগ দিবে আমায়?
তানহা কিছু বলছেনা। শুধু চুপ করে শুনছে তনয়ের কথাগুলো। তানহাকে চুপ থাকতে দেখে তনয় বলে,
–সত্যি ভালোবাসি তানহা। বিশ্বাস কর। হয়তো বলে বুঝাতে পারব না তুমি আমার জীবনে কি কিন্তু যেদিন থেকে তুমি দূরে গিয়েছো আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছো। তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকব না। তাই ছুটে গিয়েছিলাম ওইদিন সন্ধ্যায় তোমাকে আমার মনের কথা বলতে। কিন্তু যেয়ে দেখি আদিবকে তুমি ভালোবাসি বলছো। বিশ্বাস কর তানহা, ওই সময় আমার মনে হয়েছিল আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মন চাচ্ছিলো তোমার কাছে গিয়ে বলি যে তুমি শুধু আমার কিন্তু তোমার ওইদিনের কথা যে আমি তোমার ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিইনা সেই কথা আমাকে বাধা দিচ্ছিলো। বাসায় যেয়ে ওইদিন যে আমার কি অবস্থা হয়েছিল আমি তোমাকে বুঝাতে পারব না। তাই তোমাকে ওইদিন ওই কথাগুলো বলেছিলাম যাতে তুমি আমাকে নিজেই ছেড়ে চলে যাও।
তানহা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তনয়ের দিকে। ওর মুখে যেন কোন কথা আসছেনা। এবারও কিছু বলল না দেখে তনয় বলে,
–রিয়াল লাইফে কেউ পারফেক্ট হয়না তানহা। দুইজনকে মানিয়ে পারফেক্টলি চলতে হয়। কিছু ভুল তুমি করবে, কিছু ভুল আমি করব কিন্তু দিনশেষে সব ভুলে আবার দুইজনে এক হবো। কখনো ছেড়ে যাবোনা। আমি ভালোবাসতে পারিনা, কিন্তু তুমি পারবেনা আমাকে ভালোবাসতে শিখাতে?
এবার তানহা মুখ খুললো। তনয় আজ ওই সব কথা বলেছে যা ও সারাজীবন ওর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছে! তানহা বলল,
–আপনি ভালোবাসতে পারেন তনয়। অনেক ভালোবাসেন আমাকে। আমি জানি সেটা কিন্তু এরপর থেকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আপনি জানেন ভালোবাসার মানুষ ভুল বুঝলে কত খারাপ লাগে?
–আজ বুঝেছি। তুমি যখন ভুল বুঝে চলে গেলে তখন আমি বুঝতে পেরেছি কত খারাপ লাগে ভালোবাসার মানুষ ভুল বুঝে দূরে চলে গেলে। আর কখনও এই ভুল করব না প্রমিজ।
–সত্যি তো? কথা দেন।
–সত্যি। কিন্তু তুমিও একটা কথা দেও আমাকে।
–কি কথা?
–কথা দেও #তুমি_আমারই_থাকবে। আমাদের মধ্যে যতই ভুল বুঝাবুঝি,রাগ,অভিমান হোক না কেন সারাজীবন একসাথে থাকব। সময় নিয়ে কথা বলব,ভুল ভাংগাবো তবুও কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যাবোনা।
তানহা এবার খুশিতে জড়িয়ে ধরে তনয়কে! এই তনয়কেই তো চেয়েছিলো সে আজীবন! এই মুহুর্তটার জন্যই তো ও অপেক্ষা করছিলো এতদিন!
আর তনয়ের মনে হলো এই কয়দিন যে কস্টে ছটফট করেছিলো ওর বুকের ভিতর, আজ সেই জায়গায় সুখের বন্যা বেয়ে যাচ্ছে..!!
দুটি হৃদয় পুর্নতা পেলো আজ ভালোবাসার স্রোতে ভেসে! আজ তাদের চেয়ে সুখী আর কেউ নেই!
চলবে…?