তুমি আমারই থাকবে,Part: 27
Writer: Zunaisha Mahira
?
তনয় তানহাকে জড়িয়ে ধরে আছে এমন সময় তানহার ফোন বেজে উঠায় তানহা ওকে ছেড়ে দেয়। দেখে আদিব ফোন দিয়েছে!
–উফফ এই শালাবাবু সবসময় আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়!
–এই আমার ভাইকে নিয়ে কিছু বলবেন না আপনি বুঝেছেন! (তনয়ের হাতে মেরে)
–ঠিক আছে বাবা, কিছু বলব না। ফোন ধরো এখন।
–হ্যালো ভাইয়া বলো।
–তুই ফোন দিয়েছিলি তখন? স্যরি বোন তখন মার্কেটে ছিলাম তাই ভীড়ের মধ্যে সাউন্ড শুনতে পাইনি।
–তুমি আর মার্কেট?? এটা কিভাবে হলো ভাইয়া?? আমি বললেই তো বলো ওইসব ফালতু জায়গায় যাবেনা তুমি আর আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো যে তুমি মার্কেট গেলে? (অবাক হয়ে)
–হয়েছে অত ঢং করতে হবেনা। মানুষ কি মার্কেট যায়না নাকি?আর তোদের মধ্যে সব ঠিক হলো নাকি সেটা বল এখন।
–আমি কথা বলব দেন।(শ্রেয়া)
–শ্রেয়া, তুমি ভাইয়ার সাথে আছো মার্কেটে?
–হ্যা ভাবী। ও সব বাদ দেও। তোমাদের মধ্যে মিটমাট হয়ে গেছে সব তাই বলো এখন।
–হ্যা ননদিনী, সব ঠিক হয়েছে আমাদের মধ্যে।
–ওয়াও! ফাইনালি আমার ভাই একটা কাজের কাজ করলো!
এবার তানহার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে তনয় বলে,
–এই তুই নিজের ভাইকে কি মনে করিস পেত্নী? ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট দা পাওয়ার অফ তনয়। (ভাব নিয়ে)
–ভাইয়া তুই নিজেকে শাহরুখ খান ভাবা শুরু করিস নি তো আবার? (হাসিতে ফেটে পড়ে)
–তুই চাপ থাক আর আদিবকে ফোন দে।
–হ্যা তনয় বলো।
–আদিব, তুমি আমার বোনটাকে একটু বাসায় রেখে আসবে প্লিজ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো।
–এটা আবার বলা লাগবে? অবশ্যই এত রাতে কোন মেয়েকে আমি একা যেতে দিতে পারিনা। তুমি চিন্তা করোনা আমি পৌঁছে দিব শ্রেয়াকে!
–থ্যাংকস ম্যান। রাখি তাহলে।
ফোন রেখে তনয় বলে,
–চলো তাহলে,আমরা বাসায় যাই।
–কিন্তু রিকশা তো দেখছি না। গাড়িও নেই। যাবো কিভাবে?
–এই সন্ধ্যারাতে দুইজন ভালোবাসার মানুষ একসাথে থাকলে পাশাপাশি হাটার চেয়ে রোমান্টিক আর কিছু হতে পারে? (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
–চলুন তাহলে। (হেসে,হাত ধরে)
.
.
এদিকে আদিব শ্রেয়াকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলতেই ও বলল,
–আপনার কস্ট করতে হবেনা। আমি যেতে পারব সমস্যা নেই।
–আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি মিস পাটকাঠি, তুমি আমার সাথেই যাবে সেটা বলেছি। এখন চলো।
আদিব একটা রিকশা ডাকলো আর সেখানে উঠে বসে শ্রেয়াকে উঠতে বলল। শ্রেয়া উঠে ওর থেকে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে বসলো। আদিব ওটা দেখে বলল,
–আরে একেবারে রিকশার প্রান্তে গিয়ে বসছো কেন? পড়ে যাবে তো। এদিকে এসে বসো।
–না ঠিক আছে, কিছু হবেনা।
বলতেই রিকশা ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিয়েছিল সে আর আদিব ওকে ধরে বলল,
–পাটকাঠি এমনি বলি। একটু ধাক্কা লাগলেই পড়ে যাও। (বাকা হেসে)
–ছিঃ আপনি সত্যিই খুব ফালতু কথা বলেন। (রেগে)
–বাহ, তুমি পড়লে দোষ নেই আর আমি বললেই দোষ?
–(চুপ)
শ্রেয়া আড়চোখে দেখছে আদিব একটু পরপর হাসছে। আর ও খুব বিরক্ত হচ্ছে এই বিষয়টায়।
,
.
,
তানহাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তনয় বলল,
–রুমে ঢুকে জানালা খুলে রেখো তো একটু।
— কিন্তু কেন? (অবাক হয়ে)
–যা বললাম তাই করো তো। অত প্রশ্ন করতে হবেনা।
তানহা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে জানালা খুলে দিলো। সেই দিক দিয়ে তনয় ঢুকে বলে,
–এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি, কোথায় ছিলে তুমি? এত দেরি হলো কেন খুলতে?
–আপনি এখানে দাড়িয়ে থাকবেন এতক্ষণ সেটা আমার মাথায় আসেনি। আমি তো ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম!
–ওহ এখন সরো। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসি।
বলে তনয় ওয়াশরুমে যায়।একটু পর সে বের হলে তানহা বলে,
–আপনি বাসায় যাবেন না?
–এত প্রশ্ন করছো কেন তুমি এখন? হেটে এসে টায়ার্ড হয়ে গেছি তো। রেস্ট নিতে দেও।
–বাবা যদি হঠাৎ রুমে চলে আসে? বাবার সাথে কথা না বলেই আসলেন যে।
–ওহ হো তানহু বেবি, এত ভয় পেলে হবে? এক কাজ করো, দরজা লাগিয়ে দেও। বউ তুমি আমার, তোমার বাবা কেন কেউ আটকাতে পারবেনা আমাকে তোমার কাছে আসা থেকে, বুঝেছো?
–হুম। তো আজ এখানেই থাকবেন নাকি?
–এই তো বুঝে গেছো। হ্যাঁ, এতদিন আলাদা থেকে আমি আর থাকতে পাচ্ছিনা। তোমার সাথেই থাকবো আজ আমি!
— কিন্তু…
–কোন কিন্তু নাহ, এখন আসো তুমিও রেস্ট নিবে আমার সাথে।
বলে তানহাকে বেডে টেনে নেয় ওর পাশে। তানহা এরপর কিছু বলতে ধরবে তার আগেই ওর ঠোঁটে ঠোট চেপে ধরে চুপ করায় সে। ঠোঁট ছাড়তেই তানহা লজ্জায় চুপসে যায়। তনয় বলে,
–ভালো না চুপ করানোর টেকনিক টা? এরপর বেশি কথা বললে আরেকবার হবে।
বলে তনয় এগিয়ে আসতে ধরলে তানহা লজ্জায় মুখ লুকায় ওর বুকে। ওকে জড়িয়ে ধরে হাসতে থাকে তনয়!
.
.
.
পরেরদিন সকালে তনয় চলে যাওয়ার আগে বলে যায় যে আজ সন্ধ্যায় তানহার বাবার সাথে কথা বলতে আসবে ওর বাবাকে নিয়ে। তানহাও খুশিমনে থাকে সন্ধ্যায়।
তানহা একটা বিষয় খেয়াল করেছে, কাল সন্ধ্যায় আদিব শ্রেয়ার সাথে ঘুরে আসার পর থেকে কেমন খুশি খুশি হয়ে আছে। তানহা শিউর যে ওর ভাইয়ের মনে কিছু চলছে। তাই সে আদিবের কাছে গিয়ে বলল,
–ভাইয়া, কি খবর তোমার?
–আমার আবার কি খবর হবে? এইতো দেখছিস যেমন তেমনি।
–আমার তো তা মনে হচ্ছেনা। তুমি আজ সকাল থেকে দেখছি খুব খুশি মুডে আছো। ব্যাপার কি হুম??
–আরে এমন কিছুই না বোন। কাজের কথা মনে করছিলাম আর কি।
–কাজটা কি কাল সন্ধ্যায় করেছিলে?? (ভ্রু তুলে)
–মা..মানে? কি বলছিস?
–আমি তো শ্রেয়ার কথা বলছিলাম। ওর সাথে মার্কেট করলে না কালকে?
–হুম। পাটকাঠি একটা। খালি পড়ে যায় জানিস! (হেসে)
–হুম। বাট ওটারও সমস্যা নেই। সমাধান পাওয়া গিয়েছে।
–মানে? (ভ্রু কুচকে)
–শ্রেয়ার বয়ফ্রেন্ড আছে তো! ও পড়ে গেলে ওকে ধরবে সে।
–কিহ। এটা কিভাবে সম্ভব!
–কেন সম্ভব না ভাইয়া? ননদ আমার সুন্দরী। ওর বফ থাকা কি স্বাভাবিক নয়?
–জানিনা আমি। বলে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সে চলে গেলো।
আর আদিব যেতেই তানহা হাসিতে ফেটে পড়লো।
–আমি যা ভেবেছিলাম তাই ঠিক ভাইয়া। তুমি আমার ননদের প্রেমজালে ফেসে গিয়েছো! এইজন্যই জ্বলেছো ওর বয়ফ্রেন্ড আছে শুনে! কিন্তু শ্রেয়ার মনেও কি একি জিনিস চলে? আমার খোজ নিতে হবে।
এদিকে বিকেলে তানহার বাবার সাথে কথা বলতে এসেছে তনয় আর ওর পরিবার। উনি এবার রাজি হলেই হলো।
–তানহার রাগ তো ভেংগেছে, এবার শ্বশুরমশাই মেনে নিলেই হলো! ভাবছে তনয়।
চলবে…?