তুমি আমারই থাকবে,Part:12

0
3431

তুমি আমারই থাকবে,Part:12
Writer:Zunaisha Mahira

?

তানহা আর তনয় পৌঁছালো এয়ারপোর্টে। প্লেনে বসার পর তা উড়তে শুরু করতেই তানহা ভয়ে চোখ-মুখ কুচকে ফেললো। তনয় তা দেখে হেসে বলে,
-এই যে ম্যাডাম, এখানে এত ভয়ের কিছুই নেই। চোখ খুলতে পারো!
-না আমার ভয় লাগছে।
-আচ্ছে নেও আমার হাত ধরো, আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকাও দেখো কত সুন্দর!
তনয়ের কথা শুনে তানহা চোখ খুললো আর বাইরে চেয়ে দেখে প্রচন্ড সুন্দর আকাশ। ওর মনে হলো সে যেন মেঘের দেশে আছে! তানহার সমস্ত ভয় যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো আর সে তনয়ের হাত ধরে বাইরে আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো!
,
,
,
হোটেলে পৌঁছে ওরা রিসেপশনে গেলো রুমের চাবি নেওয়ার জন্য। ওরা যে রুম নিলো সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যায় বেশ ভালোভাবে!

তনয় রুমে এসে শাওয়ার নিয়েই শুয়ে পড়লো। আর তানহা ব্যাগ থেকে কাপড় বের করছিলো। এরই মধ্যে শ্রেয়ার ফোন দেয় ওকে,

-হ্যালো ভাবী, তোমরা পৌঁছে গেছো?
-এইতো একটু আগেই আসলাম হোটেলে। এখন রুমে আছি।
-আর আমার ভাই কি করে? নিশ্চয়ই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে? (হেসে)
-ঠিক ধরেছো। উনি তো এসেই ঘুম দিয়েছেন।
-ভাইয়ার তাই হয় ভাবী। যেকোন জার্নি করার পর ওর ঘুমানো লাগবেই!
-আচ্ছা, আমি এখন শাওয়ার নিতে যাব। এসে কথা বলি?
-আচ্ছা যাও। তার আগে তোমার ব্যাগের ডান সাইডের চেইনটা খুলে দেখো তো।
-কেন? ওটা খুলে কি হবে? (অবাক হয়ে)
-আরে খুলো তো আগে!
তানহা ওই চেইন খুলে দেখে ভিতরে একটা স্কার্ট-টপস রাখা। ওটা দেখে তানহা অবাক হয়ে গেলো। সে বলল,
-ওমা, এটা আবার কার? আমার ব্যাগে কেন?
-এটা তোমার জন্য মাই ডিয়ার ভাবী। কাল রাতে যখন তুমি প্যাক করা শেষ করে রুমের বাইরে গিয়েছিলে তখন আমি গিয়ে এটা রেখে এসেছি! প্রথমে ভেবেছিলাম নাইটি রাখবো কিন্তু পরে ভাবলাম তুমি তাহলে লজ্জায় ভাইয়ার সামনেই যেতে পারবেনা তাই দেইনি!
-তুমি প্রচুর দুষ্ট শ্রেয়া। কিন্তু আমি তো শাড়ি আর কামিজ এনেছি। আমার এটার কি দরকার ছিলো?
-সবসময় তো ওগুলো পড়েই থাকো। এবার না হয় অন্যকিছু পড়িও সুযোগ দেখে।
-আচ্ছা থ্যাংকিউ।রাখছি এখন পরে কথা হবে।

তানহা শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে তনয় তখনো ঘুমাচ্ছে আর এদিকে বিকেল হয়ে গিয়েছে। সবাই সমুদ্রের কিনারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই সে বেডের পাশে দাঁড়িয়ে তনয়কে ডাকলো। কিন্তু সে ঘুমের মধ্যে হুম হুম করছে। তানহা বুঝলো একে এইভাবে উঠানো যাবেনা। তাই শাড়ির আঁচল পেচিয়ে তনয়ের কানের কাছে সুড়সুড়ি দিতেই তনয় লাফিয়ে উঠলো আর তানহা জোরে হেসে উঠলো!

তনয়ের এক মিনিট লাগলো বুঝতে যে সে কোথায় আছে এবং কি হলো তার সাথে। যখন বুঝতে পারলো তখন রাগী লুক নিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলল,

-কি হচ্ছে এসব? (রেগে)
-কি আবার? কখন থেকে ডাকছিলাম আপনি তো উঠছিলেন না। তাই উঠালাম ঘুম থেকে আপনাকে! (হাসি চেপে রেখে)
-এইভাবে কেউ ঘুম থেকে উঠায়? (চিল্লিয়ে)
-আরে, চিল্লাচ্ছেন কেন? দেখুন ৫ টা বাজে। সবাই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আপনি ঘোড়ার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন!
-কি বললে তুমি? আমি ঘোড়া? (প্রচন্ড রেগে)
-না তো, আমি কখন সেটা বললাম! (অবাক হয়ে)
-তুমি,,,উফফ অসহ্য। তোমাকে দেখে আমি ভোলা-ভালা ভেবেছিলাম কিন্তু এখন দেখছি তুমি অন্য জিনিস! (চোখ পাকিয়ে)
-হয়েছে এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি হাটবো বাইরে!
তারপর তনয় ফ্রেশ হয়ে এলে ওরা বাইরে গেলো হাটার জন্য!

সমুদ্রের কিনারায় অনেক ভালোবাসার মানুষ হাত ধরে হাটছে। তানহা তাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে শুধু। কারণ ওর ভালোবাসার মানুষ ওর পাশেই হাটছে কিন্তু পাশাপাশি হাটলেও, একসাথে চললেও তাদের মধ্যে কিসের যেন একটা দূরত্ব রয়েই গিয়েছে।

সমুদ্রে ডুবন্ত অপরুপ সূর্যাস্ত দেখে তানহা তনয়কে পিছনে রেখেই ওইদিকে দৌড়ে গেলো! এত সুন্দর মন জুড়ানো দৃশ্য দেখে ওর মন খুশিতে ভরে গেলো..!!
এই মুহুর্ত ওর জীবনে দেখা অন্যতম সুন্দর একটি মুহুর্ত। ইশশ ও যদি তনয়ের কাধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখতে পারতো! কতটা সুখের মুহুর্ত হতো সেটা ভাবতে ভাবতেই তানহার চোখ দিয়ে ওর অজান্তেই এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে! সে যে সমুদ্রের কাছে চলে এসেছে তার খেয়ালই নেই। হঠাৎ করেই এক ঢেউ এসে ওর উপর আছড়ে পড়ায় তানহার ভাবনায় ছেদ ঘটে!

তানহা ভাবলো এই বুঝি সে পড়ে গেলো! কিন্তু না, সে তো পড়েনি। তানহা বুঝতে পারলো দুটো হাত পিছন থেকে ওর কোমর বেয়ে ওর পেটের দুইপাশে জড়িয়ে ধরেছে। তানহা মাথা পিছনে ঘুরিয়ে দেখে তনয় সামনের সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে বলছে,
-আমি থাকতে তোমাকে পড়ে যেতে দিব?এইটুক বিশ্বাস নেই আমার উপর?

প্রতিটি মেয়ের জীবনে একটা ভরসার হাত পেলে তার আর কিছুই চাইনা। তনয়ের কথা শুনে তাই তানহার চোখ দিয়ে আবার এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।কিন্তু এটা সুখের জল।একটু আগে যা ছিলো দুঃখের, এখন তা সুখে পরিণত হয়েছে!

তনয় এক হাত দিয়ে তানহার গাল থেকে পানি মুছে দিয়ে বলে,
-আমার সামনে যেন আর কখনও কাদতে দেখিনা তোমাকে। খুশির মুহুর্তকে হেসে উপভোগ কর, কেদে নয়!
বলে তাকে সামনে তাকাতে ইশারা করে।

তনয়ের কথা শুনে তানহা মুচকি হেসে সামনে তাকায় আর ভাবে, মন থেকে কিছু চাইলে সৃষ্টিকর্তা কখনোই নিরাশ করেন না! বরং যা চাওয়া হয়, তার চেয়েও বহুগুণে বেশি দেন!

সে তো চেয়েছিলো তনয়ের কাধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখতে কিন্তু এখন সে ওর প্রশস্ত দুই হাতে আবদ্ধ হয়ে সূর্যোদয় দেখছে। সে তো কখনও ভাবেওনি তনয় ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে কখনো!
এই হাতের মধ্যে যে সে সবচেয়ে নিরাপদ।

তানহা সামনে তাকিয়ে ভাবছে সে যা চেয়েছিলো তার চেয়েও বেশি সুখের মুহুর্ত এখন সে পেয়েছে, এটাই বা মন্দ কিসে?

পড়ন্ত সন্ধ্যার ডুবন্ত সূর্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করছে দুটি হৃদয়! সূর্য মামা অস্ত যেতে যেতে দুটি হৃদয়ে ভালোবাসার সূচনা করে দিয়ে গেলো! একজন খুশি তার ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়ে, আরেকজন খুশি তার বন্ধুকে খুশি দেখে। একজন জানে নিজের অনুভুতিগুলো কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা, আরেকজন অনেকসময় নিজের অজান্তেই অনুভুতিগুলো প্রকাশ করে ঠিকি কিন্তু বুঝতে পারেনা!

প্রকৃতিও চায় দুটি হৃদয় ভালোবাসায় স্রোতে ভেসে যাক, কিন্তু তা কি কখনও হবে?
,
,
,

এদিকে মিশা শুনেছে যে তনয় কক্সবাজার গিয়েছে। তখন ও ঠিক করেছে কালকে ওই ও কক্সবাজার আসবে তনয় আর তানহার উপর নজর রাখার জন্য!

দেখা যাক সে আদৌ কিছু করতে পারে কি না?

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here