তুমি আমারই থাকবে,Part:15
Writer: Zunaisha Mahira
?
রাতে তনয় রুমে এসে দেখে তানহা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। সে তানহার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে তোমার?
-কিছু হয়নি তো!
-তাহলে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছো কেন?
-ঠান্ডা লাগছিলো একটু আর কি তাই!
-কি বলো? (বলে তানহার কপালে হাত দিয়ে চেক করলো তনয়)
-জ্বর তো নেই তাহলে ঠান্ডা লাগছে কেন?
-কিছুনা আপনি ঘুমাবেন না?
-দেরি আছে, তুমি ঘুমাও। আমার ল্যাপটপে একটু কাজ আছে।
তারপর তানহা শুয়ে পড়লো আর কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো। তনয় ল্যাপটপে কাজ শেষ করে এসে তানহার গায়ের কাথা সরে গিয়েছে তাই ঠিক করে দিতে যেয়ে দেখে তানহার হাতে লাল লাল র্যাশ উঠেছে। তনয় অবাক হয়ে গেলো তারপর কাথা সরিয়ে দেখে অন্য হাতেও ওইরকম র্যাশ। দুই হাতের এই অবস্থা আর তানহা ওকে সেটা বলেনি তাই তনয়ের মেজাজ বেশ খারাপ হয়ে গেলো তাই তানহাকে ঘুম থেকে এক প্রকার টেনে তুললো সে!
-কি হয়েছে? ডাকছেন কেন? (চোখ ডলতে ডলতে)
-তোমার হাতে কি হয়েছে? (গম্ভীর গলায়)
এটা শুনে তানহার ঘুম উড়ে গেলো!
-কই কিছুনা তো। (কাথা দিয়ে হাত ঢেকে)
-আমার রাগ বাড়িয়োনা তানহা। হাতের এই অবস্থা হলো কিভাবে? আর তুমি আমাকে বলোনি কেন? (ধমকে)
-স্যরি। আসলে আমার চিংড়িতে এলার্জি তাই একটু র্যাশ উঠেছে।
-দুই হাতেই উঠেছে আর তোমার কাছে একটু মনে হচ্ছে? (তীক্ষ্ণ চোখে)
-স্যরি।সমস্যা নেই। আমার আগেও হয়েছিল এমন। ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
-আগে যদি এইরকম হয়ে থাকে তাহলে তখন চিংড়ি খেলে কেন তুমি? ফেলে দিতে পারলে না? (রেগে)
এবার তানহা কোন উত্তর দিতে পারেনা। কিভাবে বলবে সে যে কেন সে ফেলে দিতে পারেনি ওই সময়!
তানহাকে চুপ থাকতে দেখে তনয় ওর বাহু ধরে বলে,
-তুমি কেন বুঝোনা? তুমি আমার দায়িত্ব। তুমি যতদিন আমার কাছে আছো তোমার খেয়াল রাখতে হবে আমার। তোমাকে এভাবে দেখলে আমার গিলটি ফিল হয় বুঝোনা তুমি?? (চিল্লিয়ে)
তানহার চোখ দিয়ে এবার পানি পড়লো। কিন্তু সেটা তনয়ের ধমকে নয়, ওকে এখনো শুধু দায়িত্ব মনে করে তাই! তানহাকে কাদতে দেখে তনয় নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে দরজা লক করে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তানহা ভাবলো রাগ কমানোর জন্য বাইরে গিয়েছে তাই সে বেডে বসে রইলো চুপ করে। কিছু সময় পর তনয় রুমে আসে আর গ্লাসে পানি ঢেলে তানহার পাশে বসে। তানহা চুপচাপ ওর কাজ দেখছিলো। তনয় বলে,
-এখন ওষুধ কি নিজে খাবে? না এটাও আমাকে খাইয়ে দিতে হবে?
তানহা তাকিয়ে দেখে তনয়ের হাতে ওষুধ। সে ওষুধ নিতে গেলো তখন তনয় বলল,
-দেখো তানহা,এরপর থেকে কোন সমস্যা হলে আমাকে বলো প্লিজ। আমরা তো বন্ধুই তাইনা? তুমি আমাকে বলতে পারো যেকোন কিছু!
তানহাও মাথা নেড়ে ওষুধ খেয়ে নিলো।
পরেরদিন বিকেলে হাটতে বের হওয়ার আগে তনয় বারান্দায় ফোনে কথা বলছিলো সে রুমে এসে দেখে তানহা লং স্কার্ট আর টপস পড়ে রেডি হয়ে আছে। তনয় ওর সামনে এসে ভ্রু কুচকে বলল,
-এত সেজেগুজে কোথায় যেতে চাচ্ছো তুমি?
-কোথায় মানে? বিচে যাবোনা আমরা?
-কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছো।(দাতে দাত চেপে)
-ঠিক ধরেছেন আপনি!
-মানে? (অবাক হয়ে)
-আরে জানেন না, আজকে একটা কন্সার্ট হবে এখানে! সবাই রেডি হয়েই আসবে।চলুন তাড়াতাড়ি!
বলে তানহা দরজা খুলে যেতে নিলেই তনয় ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসে আর দরজা লেগে দেয়। তানহা অবাক হয়ে যায় ওর এমন কাজে। সে বলে,
-কি হয়েছে আপনার? যাবেন না নাকি আজকে?
-যাব তো, দাড়াও এক মিনিট।
বলে সে ব্যাগ খুজতে শুরু করে। তানহা বোকার মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে ওর কাজ-কর্ম। একটু পর তনয় ব্যাগের চেইন লাগিয়ে উঠে আসে আর তানহার গায়ে একটা স্কার্ফ পেচিয়ে দেয় ওড়নার মতো করে। তানহা অবাক হয়ে বলল,
-এটা এই ড্রেসের সাথে নয়। এটা কেন আনলেন?
-যতগুলো ছিলো ব্যাগের ভিতর তার মধ্যে এটাই ম্যাচিং লেগেছে আমার কাছে!
-তো কি হয়েছে? এটার কোন দরকার নেই।
বলে খুলে রাখতে ধরলো স্কার্ফটা আর তনয় ওর হাত ধরে বলল,
-তুমি কি ঘুরতে বের হওয়ার আগে আমাকে রাগাতে চাচ্ছো? ভালো লাগছে তো তোমাকে দেখতে দেখো!
বলে তানহাকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে গেলো।
তানহা কিছু বলবে তার আগেই ওকে বলার সুযোগ না দিয়ে তনয় ওর হাত ধরে বের হয়ে গেলো রুম থেকে!
,
,
,
সন্ধ্যায় মুখোরিত বিচের পরিবেশ। মানুষের কোলাহলে চারদিক পরিপুর্ন! একটু পর গান, বাজনা শুরু হবে। তানহা খুব এক্সাইটেড! এই প্রথম তনয়ের সাথে কোন অনুষ্ঠান উপভোগ করবে সে! কিন্তু ওর মুডের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ওদের সামনে উপস্থিত হয় মিশা।
তানহা ভাবলো তনয়কে ওর থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু মেয়েটা কালকের ঘটনার পরেও এখানে পড়ে আছে৷ মিশা বলে,
-সারপ্রাইজ তনয় বেইবি।
তানহার সামনে বেইবি বলায় তনয়ের কেন জানি একটুও ভালো লাগেনা। তাই সে বলে,
-আবার বেইবি? মানা করেছিলাম না এইসব ডাকতে? কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে? (অবাক হয়ে)
-তুমি যেখানে আমিও সেখানে। ভাবলাম তোমাকে এসে সারপ্রাইজ দিব। (চোখ টিপে)
এদিকে তানহার তনয় আর মিশার এসব কথা শুনতে একটুও ভালো লাগছিলো না তাই সে চলে যেতে নিলে তনয় ওর হাত ধরে আটকায় আর বলে,
-কোথায় যাচ্ছো তুমি?
-আমার ভালো লাগছে না, আমি চলে যাব।
-তুমি না খুব এক্সাইটেড ছিলে এই অনুষ্ঠানের জন্য? কি হলো হঠাৎ?
তানহা কিছু না বলেই তনয়ের হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো আর তনয় ওর পিছে গেলো। মিশা ডাকলো তনয়কে কিন্তু সে ওকে অপেক্ষা করতে বলে তানহার পিছনে গেলো।
-কেন এলেন এখানে? যান মিশা আপু অপেক্ষা করছে আপনার।
-তুমি চলে এলে কেন? হোয়াটস রং উইথ ইউ?
-আপনি জানেনা না? নাকি জেনেও না জানার ভান করছেন তনয়? (জোরে)
তানহা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। এবার সে বলবে তনয়কে।
-আপনার সাথে বিয়ে করে আমি বাসায় এসেছি। ততদিন এট লিস্ট আমার সাথে থাকুন। আমি ওইরকম না যে আপনি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলবেন আর আমি সহ্য করব চুপচাপ।
-কি বললে তুমি? আমি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলি? তুমি জানো তুমি আসার পর থেকে আমি মিশাকে যথাসম্ভব এভোয়েড করেছি। আর তুমি আমাকে এসব বলছো? (চিল্লিয়ে)
-তাহলে মিশা আপু এখানে কেন? আপনি তাকে বলুন এই ছয় মাস আপনার সাথে যোগাযোগ না রাখতে। নাহলে আমি আপনার সাথে থাকবো না।
-কিন্তু তানহা আমি..
-ঠিকাছে, না শুনলেন আপনি। দরকার নেই।
বলে তানহা তাকিয়ে দেখে তনয় ওখান থেকে চলে গেলো। তানহা এবার কান্নায় ভেঙে পড়লো। ওর সব শেষ! তনয় যদি ওর একটুও চিন্তা করতো তাহলে এখানে ওকে একা রেখে মিশার কাছে যেতে পারতো না!
একটু দূর হেটে বালুর মধ্যে বসে পড়ে সে। আর কিছুই ভালো লাগছে না তার। একটু পর দেখলো বিকালের ওই ছেলেটা আবার এসেছে আর তানহাকে জিজ্ঞেস করছে সে একা বসে আছে কেন?
তানহার এবার ভয় লাগলো। একা বসে আছে সে সন্ধ্যায়, এদিকে কেউ নেইও তেমন! সবাই কন্সার্টের ওইদিকে আছে।
তানহা ভয়ে কোন উত্তর দিলোনা। ছেলেটি তানহার পাশে বসতে যাবে এমন সময় কোথায় থেকে তনয় চলে এসে তানহাকে কোলে তুলে নিলো! আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওকে নিয়ে হেটে যেতে লাগলো!
চলবে…?