তুমি আমারই থাকবে,Part:18

0
4200

তুমি আমারই থাকবে,Part:18
Writer:Zunaisha Mahira

?

মিশার কথা শুনে থেমে গেলো তানহা।
-এত মাস পর কি কথা?

-আজকে আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি। আমি তনয়কে ফোন দিয়েছিলাম দেখা করার জন্য কিন্তু সারপ্রাইজিংলি ও আমার সাথে দেখা করতে চায়নি।

-তো? এটা আমাকে কেন বলছেন?

-তোমাকেই তো বলবো অবশ্যই। তনয় এরকম কখনও করেনি আমার সাথে কিন্তু তুমি যেদিন থেকে মানা করেছো ও আমার সাথে সত্যিই যোগাযোগ করেনি। কি এমন জাদু করেছো তুমি ওর উপর?

-আমি কিছুই করিনি। আমি উনার কথা শুনে বাসায় এসেছি তাই উনি আমার কথা শুনেছেন।

-বাট আই থিংক বিষয়টা আলাদা। ও অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে তানহা।এখন আমার মনে হচ্ছে ও আমার হবেনা। কয়দিন পর যখন তোমাদের ডিভোর্স হবে তখনও তনয় আমার কাছে আসবেনা।

-আপনার বলা শেষ? দেখুন তনয় আমাকে নিতে আসবে এখন। আপনি চলে যান। আমি বাসায় যাব।

-সে না হয় আসুক। আই নিড আ আন্সার। টেল মি কি আছে তোমার মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই? টেল মি স্টুপিড গার্ল (তানহার বাহু ধরে ঝাকিয়ে)
বলতেই তানহা হঠাৎ মিশার পিছনে দেখে আতকে উঠে আর মিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে টান দেয়। আচমকা জোরে টেনে নেওয়ার ফলে মিশা টাল সামলাতে পারেনা আর তানহা সহ দুইজন রাস্তার পাশে পড়ে যায়।

তখন মিশা তাকিয়ে দেখে একটা ট্রাক খুব স্পিডে আসছিলো ওর দিকে। সে কতক্ষণ থম মেরে বসে থাকে তানহার দিকে তাকিয়ে, তারপর আস্তে করে উঠে। তানহাও উঠে গিয়েছে ততক্ষণে। এবার মিশা আস্তে করে বলে,

-থ্যাংক ইউ ফর সেভিং মাই লাইফ।
তারপর সে চলে যেতে নেয়। হঠাৎ কি মনে করে আবার ফিরে আসে। তারপর তানহার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমি আমার জবাব পেয়ে গিয়েছি। (হেসে)

-মানে? বুঝলাম না আপু।

-তুমি অনেক ভালো মেয়ে তানহা। তোমার মন ভালো। আমি তনয়ের সাথে এতদিন ভালোবাসার একপ্রকার অভিনয় করতাম কিন্তু সেটা ছিলো ওর টাকার জন্য আর তুমি ওকে মন থেকে ভালোবাসো। তাই হয়তো সে বাধ্য হয়েছে তোমার আচলে বাধা পড়তে।

-কিন্তু উনি আমাকে ভালোবাসেন না মিশা আপু। (অন্যদিক হয়ে)

-পাগলী মেয়ে।ও ভালো বাসে ঠিকি কিন্তু বুঝে না।

-এতদিন কাছে থেকেও যদি না বুঝেন তাহলে আর বুঝবেন কবে? (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

-দূরে গিয়ে!

-মানে? (অবাক হয়ে)

-দেখো, তুমি ওর কাছে আছো তাই ও বুঝতে পাচ্ছেনা তুমি ওর লাইফে কতটা ইম্পরট্যান্ট। তুমি কয়দিন ওর থেকে দূরে থাকো তাহলে দেখবে ঠিকি তোমার মর্ম বুঝবে সে।

তানহা অবাক হয়ে গেলো মিশার কথা শুনে। এ কোন মিশাকে দেখছে সে? যার জন্য ওর আর তনয়ের লাইফে এতদিন বাধা ছিলো সেই এখন তাকে তনয়কে ভালোবাসার পরামর্শ দিচ্ছে!

-কি ভাবছো আমি এত চেঞ্জ কিভাবে হয়ে গিয়েছি?

-হুম (মাথা নাড়িয়ে)

-তাহলে বলি। দেখো তানহা, লাইফ কারও জন্য থেমে থাকেনা। আমি যেদিন কক্সবাজার থেকে ফিরে আসি ওইদিন ড্যাড আমাকে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে তখন আমি তাকে সব খুলে বলি। তারপর ড্যাড আমাকে তোমার কথাটাই বলে যে হয়তো নিয়তি তোমাকে আর তনয়কে একসাথে চায়। ভাগ্যই যদি তোমাদের একসাথে রাখতে চায় তাহলে আমি যতই চেস্টা করিনা কেন তনয় কখনই আমার হবেনা। আর হলোও তাই। তুমি বলার পর থেকে তনয় একবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেনি! যে ছেলে আমার মিথ্যা এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে তোমাকে রেখে আমাকে নিতে ছুটে গিয়েছিলো সে এখন আমার কল পর্যন্তও রিসিভ করেনা। এটা কি স্বাভাবিক বিষয় বলো? আমি শিউর তনয় তোমাকে ভালোবাসে। আর আজ যাওয়ার আগে ও কেন তোমার প্রেমে পড়লো সেটার উত্তর জানতেই আমি এসেছিলাম তোমার কাছে আর আমি জবাব পেয়েও গেলাম!

তানহা শুধু স্বব্ধ হয়ে শুনছে মিশার কথাগুলো। এটা ঠিক যে এই কয়মাসে তনয় আর ওর মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক গাঢ় হয়েছে। কিন্তু তনয় সবসময় নিজের কথামত চলে, সেই ছেলে ওর কথাকে এতটা সিরিয়াসলি মেনে চলেছে ও ভাবতেও পারেনি। তানহার মনে আজ থেকে তনয়ের জন্য ভালোবাসাটা আরও বেড়ে গেলো!

-আসি তাহলে। দেখি এখন লন্ডনে যেয়ে কাউকে পাই নাকি আমি। (হেসে)

-আল্লাহ আপনার জন্যেও অনেক ভালো কাউকে রেখেছেন দেখবেন। (মিশাকে জড়িয়ে)

-এখন ছাড়ো। আর হ্যা,প্ল্যানটা কাজে লাগাও। তোমাদের আলাদা করার প্ল্যানে তো ফ্লপ খেয়েছি বারবার কিন্তু এক হওয়ার প্ল্যান হিট হলে ওটা আমাকে বাচানোর জন্য গিফট তোমার! বলে সে চলে গেলো।

মিশা চলে যেতেই তানহা ভাবছিলো কয় মাসে কত পরিবর্তন হয়েছে সবার। মিশা এইরকম চেঞ্জ হয়ে যাবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। আর তনয় যে ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছে এটা শুধু তানহার মনে হতো।কিন্তু এখন দেখলো সবাই তা বুঝতে পারে! এবার তো তনয়কে বলতেই হবে যে সে ওকে ভালোবাসে। সবাই বুঝে তাও ও বুঝেনা, হাদারাম একটা। এগুলা ভাবতে ভাবতে একা একা হাসছিলো তানহা। গাড়ির হর্নে ধ্যান ভাঙে ওর!

-মিস পাগলি, আবার একা একা হাসছো কেন?

-আপনি কখন এলেন? (হেসে)

-কি ব্যাপার আজকে এত খুশি কেন আমাকে দেখে? (ভ্রু কুচকে)

-আমি দেখে খুশি হইনি তো! (ভেংচি কেটে)

-তাহলে কাকে দেখে হয়েছো? (তীক্ষ্ণ চোখে)

তনয়কে জ্বালানোর একটা সুযোগ পেয়ে গেলো তানহা। এটাকে কাজে লাগালো সে!

-আপনি আসার আগে একজন এসেছিলো তো তাকে দেখে হাসছিলাম। (হাসি চেপে ধরে)

-কিহ? কে এসেছিলো? কোন ছেলে? (নাক ফুলিয়ে)

-আপনাকে বলব কেন? আপনার কি? (ভ্রু তুলে)

-দেখো এবার কিন্তু রাগাচ্ছো তুমি আমায়। কে সে বলো। (রাগে গাড়িতে বাড়ি মেরে)

তানহা বুঝলো এখন থামা উচিত। না হয় তনয়ের রাগের স্বীকার হবে সে! তাই বলল,

-আরে আমি তো মজা করছিলাম। আপনি সিরিয়াস হয়ে গেলেন কেন? (ভয় পেয়ে)

-তোমার সবকিছুকে আমি সিরিয়াসলি নেই তুমি জানোনা? (চোখে চোখ রেখে)

তানহার বুকের মধ্যে ধুক করে উঠলো তনয়ের এমন কথা শুনে। তনয় বুঝলোও না সে কত দামী একটা কথা বলেছে তানহার জন্যে!

-হয়েছে এখন বাসায় চলুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে!

তারপর ওরা বাসায় চলে গেল আর তানহা সন্ধ্যায় শ্রেয়াকে সব বল্ল। শ্রেয়া মিশার কথা শুনে অবাক হওয়ার সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে বল্ল,

-ওএমজি!!! ভাবী এটা কি বলছো তুমি? পৃথিবীর কত বড় উপকার হলো তুমি ভাবতে পাচ্ছো? একটা শাকচুন্নি মানুষে রুপান্তরিত হলো আজকে!!
তানহা শ্রেয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বল্ল,

-পাগলী একটা!

-কিন্তু সিরিয়াসলি ভাবী তোমার আমার মাথায় যে বুদ্ধি আসেনি ওই সাবেক শাকচুন্নির মাথায় ঠিকি এসেছে। তুমি কালকেই বাসায় যাবে, এটা ফুল।এন্ড ফাইনাল!!

-কে বাসায় যাবে? (তনয়)

-আমি যাব। কেন কি হয়েছে? (তানহা)

-কেন যাবে তুমি? ওখানে গিয়ে কি করবে?

-আজব তো। বাপের বাড়ি গিয়ে কি করে মানুষ? আমার কি যেতে মন চায়না? (অবাক হওয়ার ভান করে)

-না, তুমি যাবেনা। আচ্ছা গেলে সকালে যেয়ো আমি বিকেলে গিয়ে নিয়ে আসবোনি।

-কেন ভাই? তুই বিকেলে নিয়ে এসে কি হাডুডু খেলবি ভাবীর সাথে? থাকতে দে না ওকে সমস্যা কই।

-তুই বেশি কথা বলছিস কেন? তোর ভাবী থাকতে চেয়েছে? তুই পাঠাইতে চাচ্ছিস কেন ওকে?

-ওমা! ভাবীর মন চাইলো দেখেই তো আমি বললাম! আমাকে দোষ দিস কেন? কার রাগ কার উপর ঝারছিস?(রেগে)

তনয় কিছু বলবে তার আগেই মা এসে বললেন,

-কি হচ্ছে এখানে? তোরা ঝগড়া করছিস কেন?

তারপর তানহা মাকে সব বল্ল আর মা শুনে তানহাকে যেতে বল্লেন আর থাকার কথাও বললেন। তনয় মানা করলেও এবার মায়ের কথাই ফাইনাল হয়ে গেলো!

রাতে তানহা যখন ব্যাগ প্যাক করছিলো তখন তনয় এসে ওকে বলল,
-আচ্ছা, তোমার যাওয়া কি খুব দরকার?

-জি। এই পাঁচ মাসে কি একবারও গিয়েছি?

-না ঠিক আছে। যাও। (এবার তনয় আর কিছু বলতে পারেনা)

-হ্যা। অভ্যাস করে নেন। আর কয়দিন পর এমনিও চলেই যাব একবারে। (তনয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে)

তানহার এ কথা শুনে তনয়ের মুখ শুকিয়ে গেলো। বেচারার মনে কি চলছে সেটা তানহা বেশ ভালোই বুঝতে পাচ্ছে!

এদিকে তনয়ের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে তানহা মনে মনে বলল, আর কতদিন মনের কথা মুখে না এনে পারো আমিও দেখবো তনয় বাবু!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here