তুমি আমারই থাকবে,Part:19

0
4650

তুমি আমারই থাকবে,Part:19
Writer:Zunaisha Mahira

?

সকালবেলা তানহা বাসায় চলে যাচ্ছিলো। সারা রাস্তা তনয় ওর সাথে একটা কথা বলেনি। তানহা বেশ অবাক হলো যে এর কি হলো আবার? কিন্তু জিজ্ঞেস করলো না কিছু।

তানহার বাসায় পৌঁছাতেই সে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে। তনয়ও বের হলো। তানহা ভেবেছিলো এবার তনয় কিছু বলবে হয়তো কিন্তু সে কিছু বলল না, ওর দিকে তাকালোও না। তাই তানহা চলে যাচ্ছিলো ভিতরে। হঠাৎ করে তনয় বলে উঠলো,

-এই শুনো

-জি বলেন (পিছনে ফিরে খুশি হয়ে)

-কয়দিন থাকবে তুমি? (কাতর কণ্ঠে)

-কি যে। এতদিন পর আসলাম তিন-চারদিন থাকতে পারি!

-কিহ। এতদিন? (আহত গলায়)

-হ্যা, ভিতরে আসবেন না আপনি?

-না, যেতে চাচ্ছিনা এখন। অফিসে যেতে হবে কাজ আছে।

-ওহ আসি তাহলে।

বলে তানহা চলে গেলো। হঠাৎ করে তনয় যেয়ে ওর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো আর তানহা কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-নিজের খেয়াল রেখো।

-আপনিও। (জড়িয়ে ধরে হেসে)

তারপর তানহা বাসার ভেতরে চলে গেলো আর তনয় অফিসে।

-কি রে? তুই একা কেন? জামাই আসেনি সাথে? (তানহার মা)

-না মা। উনি এসেছিলেন কিন্তু অফিসে জরুরি কাজ আছে তাই ভিতরে আসলেন না!

-ওহ তাই বল। কাজ না থাকলে ভিতরে আসলে খুশি হতাম।

-কেন মা? আমাকে দেখে তুমি খুশি হউনি? এখন সব ভালোবাসা জামাইয়ের জন্য শুধু? (মুখ ফুলিয়ে)

-না রে পাগলী আমার। তোকে কতদিন পর দেখলাম, খুশি হবোনা আবার! (জড়িয়ে ধরে)

তারপর ওর মায়ের সাথে গল্পে লেগে গেলো। এতদিন পর একসাথে হয়ে মা-মেয়ে যেন সব ভুলে আড্ডায় মেতে উঠলো!
,
,
,
এদিকে তানহার সময় মজায় কাটলেও তনয়ের অবস্থা খারাপ। অফিসে কাজের চাপে তানহার কথা মনে না হলেও বাসায় আসার পর থেকে ওকে অনেক বেশি মিস করছে সে।

তনয় ভাবছে তানহা কি করছে এখন? সেও কি তাকে ওর মতই মিস করছে? ও কি কল দিবে তানহাকে? ফোন হাতে নিয়ে এসব ভাবছে তনয়।
আর তানহা ভেবেছিলো তনয় বাসায় এসে ওকে ফোন দিবে কিন্তু সে দিলোনা তাই ফোনের অপেক্ষা করতে করতে তানহা ঘুমিয়ে পড়লো! হঠাৎ করে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তানহার। ঘুমু ঘুমু চোখে কল রিসিভ করে সে বলে,

-হ্যালো। (ঘুমের ঘোরে)

-তুমি কি ঘুমাচ্ছো? (শান্ত গলায়)

তনয়ের গলা শুনে তানহার ঘুম উড়ে গেলো চোখ থেকে!

-আপনি? না না বলুন। একটু চোখ লেগে গিয়েছিল!

-কি কি করেছো সারাদিন?

-তেমন কিছুই না। এইতো গল্প করলাম মায়ের সাথে আর সন্ধ্যায় বাবার সাথে আড্ডা হলো। এগুলোই আর কি। আপনি?

-আমিও তেমন কিছুই না। অফিস থেকে এসেছি, গল্প-গুজব করে খেয়ে রুমে আসলাম।

-মা আপনার কথা জিজ্ঞেস করলো যে কেন ভিতরে আসলেন না। আসলে খুশি হতেন মা।

-তাই? এরপর দেখা করবনি মার সাথে।

এভাবে কথা বলতে বলতে কখন যে গভীর রাত হয়ে গেছে ওরা বুঝতে পারেনি। যেন নতুন নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা কথা বলছে! তনয় ফোনের ওপাড় থেকে সাড়া না পাওয়ায় বুঝতে পারলো তানহা ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই সেও ফোন রেখে ঘুমালো। তবে সে বুঝতে পারলো যে এতক্ষণ ওর বুকের মধ্যে যে খালি খালি অনুভবটা হচ্ছিলো এখন সেই অনুভব চলে গিয়েছে, ওর রৌদ্রতপ্ত বুকে যেন এক পশলা বৃষ্টি নেমেছে তানহার সাথে কথা বলে!
,
,
,
পরেরদিন সকালে বেশ হাসিমুখে আছে তনয়। সে ঠিক করেছে আজ বিকেলে তানহার সাথে দেখা করতে যাবে এবং রাতে থেকে সকালে ওকে নিয়ে বাসায় আসবে।

রুম থেকে বের হতেই শ্রেয়ার সামনে পড়লো সে।

-কি ব্যাপার ভাই? তুই এত খুশি মুডে কই যাস?

-অফিসে। কেন?

-না মানে। আজ একটু বেশি হাসছিস যে। মনে লাড্ডু ফুটতেছে? (বাকা হেসে)

-কিসের লাড্ডু? (ভ্রু কুচকে)

-কিছুনা। তুই তো গাধা। বুঝবি না এগুলো।

-ওই কিসের গাধা আমি? কি বুঝিনি আমি হ্যাঁ?

-কিচ্ছুনা।বলছিলাম যে ভাবী তো কাল/পরশু আসবে তাইনা?

-হ্যা। কাল আসবে। আজ আমি যাব আর কাল নিয়ে আসবো ওকে। (হেসে)

-কি বলিস? তুই যাবি কেন ওখানে?

-আশ্চর্য তো! আমার শ্বশুরবাড়ি আমি যেতে পারিনা? (বিরক্ত হয়ে)

-হ্যা আমার ভাই। পারিস। কিন্তু কিছুদিন পর তো ভাবী ওখানেই চলে যাবে পারমানেন্টলি তাই বলছিলাম আর কি।

-তুই কিভাবে জানিস? ও তোকে বলেছে? (অবাক হয়ে)

-হ্যা। আমি এটাও জানি যে তুই ওকে ভালোবাসিস না। তাই আমি ভাবীকে বলেছি ওখানে থাকতে। কয়দিন পর তো এমনিতেও তোদের ডিভোর্স হয়ে যাবে আর তখন ভাবি অন্য কাউকে বিয়ে…

-শ্রেয়ায়ায়ায়া (চিল্লিয়ে)

তনয়ের চিল্লানোতে শ্রেয়া মোটেও ভড়কে গেলোনা। আর বলল,

-ক্ষেপছিস কেন? আমি কি মিথ্যা বলছি বল?তোরা তো আলাদাই হবি কয়দিন পর। তখন তো ভাবীকে অন্য কারও সাথে দেখতে হবে।

-না, এটা হবেনা। তানহা অন্য কারও সাথে বিয়ে করবেনা।

-কেন করবেনা?

-আমি করতে দিবোনা।

-কেন? কোন অধিকারে আটকাবি তুই ওকে?

-স্বামীর অধিকারে।

-কিসের স্বামী? ডিভোর্স এর পর কোন অধিকার থাকবে তোর ওর উপর। তখন ভাবীর আরেক জায়গায় বিয়ে হয়েই যাবে!

-হবেনা কারণ আমি ওকে ছাড়বো না। (চিল্লিয়ে)

-কেন ছাড়বিনা তুই? কি জন্য রাখবি ওকে তোর কাছে? যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে থাকার কোন মানে হয়না। আমি থাকতে দিব না ভাবীকে।

-আমি ওকে ছাড়তে পারব না কারণ (থেমে যেয়ে)

-বল। কি কারণ?

-কারণ আমি ওকে ভালোবাসি (ফিসফিসিয়ে) আর তুই খবরদার ওকে আমার থেকে আলাদা করার কথা বলবিনা (চিল্লিয়ে)

-আমাকে যেটা ফিসফিসিয়ে বললি ভাবীকে গিয়ে সেটা জোরে বল। দেখবি ও নিজেও ছেড়ে যাবেনা তোকে! (হেসে)

-তার মানে? তুই এতক্ষণ নাটক করলি আমার সাথে? (অবাক হয়ে)

-তা নয়ত কি! এত সুইট ভাবীকে আমি ছাড়তে বলব? পাগল হয়েছিস!

-ওরে শয়তানি!(শ্রেয়ার কান টেনে)
কার বউ দেখতে হবেনা! (চোখ টিপ মেরে)
কিন্তু তুই আমাকে প্রমিস কর, আমি বলার আগে তুই ওকে বলবিনা যে আমি ওকে ভালোবাসি! তোর তো আবার পেটে কিছু থাকেনা।

-ওকে ভাইয়া প্রমিস। তুই যা এখন!

তারপর তনয় অফিস চলে গেলো আর ড্রাইভ করতে করতে ভাবলো আজকে ও তানহাকে ওর মনের কথা বলবে।

-এতদিন বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন বুঝেছি তুমি আমার জন্য কি! তোমাকে তো আমার মনের কথা বলেই ছাড়বো আজকে তানহু বেবি! ওয়েট ফর মি! (বাকা হেসে)

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here