তুমি আমারই থাকবে,part:2
writer:zunaisha mahira
ছয় মাস আগে এক বিকেলে তানহার সাথে দেখা হয় তনয়ের..
সবে মাত্র ভার্সিটির ১ম বর্ষে উঠেছে তানহা। নতুন বন্ধু-বান্ধবিদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলো সে। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে রাস্তাটা নিরিবিলি তাই ওইদিক দিয়ে না যেয়ে উল্টো পথে ফিরে যাচ্ছিলো। মনে হলো কেউ ব্যাগ টেনে ধরেছে তার। ভয়ে ঢোক গিলে পিছনে ফিরতেই দেখলো ২ জন ছেলে দাড়িয়ে আছে যাদের একজন তানহার ব্যাগ টেনে ধরেছে,
-তোর কাছে যা কিছু আছে আমাদের দিয়ে দে চুপচাপ, নয়তো ভালো হবেনা।
তানহা বুঝতে পারলো এরা ছিনতাইকারী। তাই ভয়ে ভয়ে বলল,
-দেখুন,আমার কাছে সত্যিই কিছু নেই। যেতে দিন আমাকে
-এত সহজেই ছাড়বো তোকে? মেয়ে তো বড়ই সুন্দরী তুই। কিছু না থাকলেও তোকে আমরা ছাড়ছি না(বিশ্রীভাবে হেসে)
তাদের এইরকম জঘন্য কথা শুনে তানহার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কোনমতে ব্যাগ থেকে হাত ছাড়িয়ে লাগায় এক দৌড় সামনের দিকে। পিছে তাকিয়ে দেখে ছেলেগুলোও ছুটে আসছে তার দিকে।
পিছন দিক তাকিয়ে দৌড়ানোর কারণে হঠাৎ করেই সামনে কোনকিছুর সাথে জোরে বারি খেয়ে পড়ে যায় তানহা। সামনে তাকিয়ে দেখে একটা লম্বা করে ছেলে ওর দিকে কিছুটা ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আছে। মুখে সানগ্লাস থাকার কারণে চেহারাটা ওইভাবে বুঝতে পাচ্ছেনা সে।
ছেলেগুলো সেখানে যেয়ে বলে,
-এই যে হিরো, ভালোই ভালোই মেয়েটাকে দিয়ে দেও আমাদের কাছে।তোমাকে কিচ্ছু করব না আমরা।
তানহা এই কথা শুনে আতংকিত চেহারায় ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি নিজেই তখন তানহাকে হাত ধরে তুলে আর তানহা বলে,
-প্লিজ,এইরকম করবেন না দয়া করে।
ছেলেটি তানহাকে বলে, আপনি এখানেই থাকুন আমি আসছি।
তারপর সেই ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে বলে,
-কি সমস্যা তোদের? এইভাবে মেয়েদের পিছে পড়িস কেন?চলে যা এখান থেকে
-তুই রাস্তার পথিক। তোর ওকে নিয়ে এত চিন্তা না করলেও হবে। বলে তানহার দিকে এগুতে লাগলে তনয় ছেলেটির হাত ধরে ফেলে এবং শুরু হয় মাইর।
তানহা অবাক হয়ে দেখছে চেনেনা জানেনা এমন একটি মেয়ের জন্য মারামারি করছে ছেলেটি আর ওয়ার্নিং দিচ্ছে এরপর আর কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব না করতে।
মাইর খেয়ে বাজে ছেলেগুলো চলে গেলে তানহার দিকে এগিয়ে আসে তনয়। সানগ্লাস খুলে এক গাল হেসে বলে,
-আপনি কি ভেবেছিলেন আমি আপনাকে ওদের কাছে রেখে চলে যাব? এতটাও খারাপ আমি নই ম্যাডাম।
এইবার চেহারা দেখতে পেল তানহা। ছেলেটি বড়ই সুদর্শন বলা চলে। মানসিকতা যেরকম ভালো দেখতেও তেমন মনে মনে ভাবলো তানহা,
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। না চিনেও আমার সাহায্য করলেন আপনি। আজকাল অনেকেই তা করেনা।
-ইটস ওকে।আপনার জায়গায় আমার বোন বা গার্লফ্রেন্ডও থাকতে পারতো সেইটা ভেবে একা ফেলে রেখে যেতে পারলাম না।
-সত্যিই অনেক লাকি আপনার গার্লফ্রেন্ড। আমি আসি তাহলে, ধন্যবাদ আবারও।
-ইটস ওকে। আপনি চাইলে আমি পৌঁছে দিতে পারি
-না না, লাগবে না।ধন্যবাদ
বাসায় যেতে যেতে তানহা ভাবলো ছেলেটির গার্লফ্রেন্ড আসলেই লাকি অনেক হবে। দেখার খুব ইচ্ছা কে সেই লাকি মেয়ে। কিন্তু চেনেনা জানেনা এমন একজনের কাছে তো আর এটা বলা যায়না!! তখনই মনে হলো আরে,সে তো ছেলেটির নামই শুনলো না।পরে ভাবলো, থাক,এরপর তো আর দেখা হবেনা তাই নাম শুনেও কাজ ছিলো না!
বাসায় যেতেই তানহার বাবা বলল, কাল মেহমান আসবে বাসায়। তাই বাড়িঘর ঠিকভাবে গুছিয়ে রাখতে। দুষ্টু হেসে তানহা বলল,
-বাবা, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন মেহমান না বরং তোমার জামাই আসবে কালকে।
তানহার বাবা আকরাম সাহেব কিছুই বললেন না শুধু মুচকি হাসলেন।
পরের দিন সকালে তানহার মা রান্নাঘরে ভালো ভালো খাবার আইটেম বানাচ্ছেন। তানহা এত সব আয়োজন দেখে অবাক হয়ে বলল,
-সত্যি করে বলো তো মা কারা আসছে আজকে?
-তোর বাবার সবচেয়ে পুরাতন আর ভালো বন্ধু ইকবাল সাহেব তার পরিবার নিয়ে আসছে। অনেক বছর পর দেখা হবে তাদের সাথে তাই এই আয়োজন।
তানহাও মায়ের সাহায্য করতে থাকলো রান্নার কাজে। রান্না করতে বড়ই ভালো লাগে তার!
কলিংবেল বাজতেই গেট খুললেন তানহার বাবা আর তার সমবয়সী এক লোককে জড়িয়ে ধরলেন। তানহার বুঝতে বাকি রইলো না এই ভদ্রলোকটিই তার বাবার বন্ধু!
-কেমন আছিস আকরাম? কতদিন পর দেখা হলো তোর সাথে।
-আছি এইতো। তোদের কি খবর? ভাবি আর তোর ছেলেমেয়ে কেমন আছে?
-আমরা ভালো আছি আংকেল বলে আকরাম সাহেবকে জড়িয়ে ধরল এক ছেলে।
-কেমন আছো বাবা তনয়?
ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে তানহা অবাক, “আরেহ! এটা তো সেই ছেলেটি!”
“তনয়” নামটি তানহার মাথায় ঘুরছে তখন শুধু…ভাবছে যে তনয়ের নাম সে ছোট থেকে শুনে আসছে এই ছেলেই কি সেই তনয়??
চলবে..