তুমি আমারই থাকবে,part:4
writer: zunaisha mahira
তানহার পিছে তনয়ও নিচে চলে আসে।
-তারপর বল,কি ঠিক করলে তোমরা?(দুইজনের দিকে তাকিয়ে)
-বাবা আমরা আসলে..
তনয়কে বলতে না দিয়ে তানহা বল্লো,
– আংকেল আমার কিছু সময় লাগবে।আমি তারপর আপনাদের জানাচ্ছি।
-ঠিক আছে মা। তুমি ভেবেচিন্তে ডিসিশন নেও।আমরা আসি তাহলে।
তনয় তানহার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।
তানহা ভাবছে যে তনয়ের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিলো সে রাস্তায়, সেই ছেলের এইরকম চিন্তাভাবনা আশা করেনি সে। তারপর ভাবলো হয়ত হুট করে জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না এইজন্য তাকে মেনে নিতে পারছেনা।
তানহার বাবা এসে তাকে বুঝালো যে তনয় ভালো ছেলে।ওই বাসায় যেয়ে থাকতে,ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
প্রথম দেখায় তনয়ের ব্যবহার নি:সন্দেহে মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো তার, আবার সে যখন তার স্বামীই তাই বিষয়টিকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে বাবার কথা মেনে তাদের বাড়ি যেতে রাজি হয় তানহা। এখন তানহার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে যে সে কিভাবে তনয়ের মাথা থেকে ওই অদ্ভুত বুদ্ধিটা সরাবে। তনয় তো বুঝছে না যে এখন সে বিষয়টাকে হালকাভাবে নিচ্ছে কিন্তু পরে যখন মা-বাবা জানতে পারবে তখন তাদের খুব খারাপ লাগবে।
ঐদিকে তানহার বাবা তনয়ের বাবাকে ফোন করে জানালেন যে তানহা রাজি হয়েছে। যা শুনে তারা খুব খুশি হলেন এবং পরেরদিন তানহাকে নিয়ে আসার জন্য আসতে চাইলেন।
পরেরদিন সকালে তানহা উঠে দেখে সবাই বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত। তার মায়ের থেকে জানতে পারে আজকে তাকে নিতে আসছে তনয়ের বাড়ি থেকে। তনয়ের বাবা যখন আসলেন তখন তারা একবারে কাজিসহ আসলেন। তার কথা এইবার পারিবারিকভাবে বিয়েটা হোক,পরে সবাইকে অনুষ্ঠান করে জানানো যাবে।অগত্যা তানহা আর তনয়ের এবার নিজের ইচ্ছায় বিয়ে হলো।
রাতের বেলা সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে উঠে যখন তানহা কান্না থামাতে পাচ্ছিলো না তখন তনয় বলল,
-এত কেদোনা তো, ইশশ কেদেকেটে কি অবস্থাটাই না করেছে। ছয় মাস পর দিয়ে যাব তো তোমায়। তখন যত ইচ্ছা এখানেই থেকো, এখন কান্না থামাও।
তনয়ের কথা শুনে তানহার কান্নার স্পিড আরও বেড়ে গেলো। সে ভাবছে,
-এ কেমন বর কপালে জুটলো আল্লাহ, বিয়ের গাড়িতে বসে বলছে ছয় মাস পর রেখে আসবে? এই কথা কি এখন বলা জরুরি ছিলো? দিলো তো মুডটা আরও খারাপ করে।
তারপর তনয়ের দিক রাগী চোখে তাকাতেই সে টিস্যু নিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো তার।তারপর তানহার মাথাটা ধরে নিজের কাধে রেখে বলল,
-চোখ বন্ধ করে রাখো একটু। মাথা ব্যাথা করবে তাছাড়া।
তানহা বোকার মত চেয়ে আছে আর ভাবছে একবার নিজেই মুড খারাপ করে দেয় আবার নিজেই যত্ন নেয়।এই ছেলেকে বুঝা দায়!
,
,
,
বাসরঘরে বসে আছে তানহা।যদিও সে জানে কিছু হবেনা তবুও অপেক্ষা করছে তনয়ের। আর ভাবছে আজকেই বলে দিবে তনয়কে যে সে কোন অভিনয় করতে পারবেনা, সে সত্যিই তাদের সম্পর্ককে একটি সুজোগ দিতে চায়, তারপর তনয় যা মনে করার করুক।স্বামী-স্ত্রী ওরা। নিজেদের সম্পর্ককে ঠিক করার চেস্টা করা কর্তব্য ওর!
তানহার ভাবনার মধ্যেই তনয় রুমে ঢুকে। তানহাকে দেখে হালকা হেসে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যায়,কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফিরে আসে। তানহা চেয়ে দেখছে শুধু,
-তুমিও চেঞ্জ করে আসো যাও, নিশ্চয়ই অস্বস্তি বোধ করছো শাড়ি পড়ে থাকতে। তনয়ের কথাটা ঠিক তাই তানহাও লাগেজ থেকে ড্রেস বের করে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।
,
,
তানহা এসে দেখলো তনয় হেলান দিয়ে বসে আছে বিছানায় আর একটা বই পড়ছে।তানহা চুল মুছে বারান্দায় কাপড় নেড়ে দিয়ে এসে চুপচাপ তনয়ের পাশে বসলো বিছানায়। তানহা কিছু বলবে তার আগে তনয় বললো,
-ঘুম ধরেছে? রাত তো অনেক হলো।
-হ্যাঁ ধরেছে।
-তাহলে ঘুমাও তুমি? আমি একটু বই পড়ে তারপর ঘুমাবো।
-কিসের বই পড়বেন আপনি এখন?
-এইতো বিজনেস রিলেটেড কিছু আর কি।নতুন প্রোজেক্ট শুরু করছি তো তাই আইডিয়া নিচ্ছি।লাইটে তোমার সমস্যা হলে বলো অফ করছি?
-না না, সমস্যা নেই। আপনি পড়েন। আমি ঘুমাতে পারব।
কিন্তু তনয়ের সাথে একি বিছানায় ঘুমাবে কি না এটি নিয়ে দ্বিধায় পড়লো তানহা। তানহাকে কিছু ভাবতে দেখে তনয় বললো,
-কি হলো? শুয়ে পড়ো তাহলে
-না মানে ভাবছিলাম যে আমি কোথায় ঘুমাব?
-কেন? আমার বিছানা কি এতই ছোট মনে হচ্ছে তোমার কাছে যে তুমি এখানে ঘুমোতে পারবেনা? নাকি আমাকে তোমার কাছে জাপানি সুমো রেসলারদের মতো লাগে যে আমি একাই খাট দখল করে থাকবো? (ভ্রু উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো তনয়)
-আজব তো! আমি কি সেটা বলেছি নাকি? কি যা-তা বলছেন আপনি!(দাতে দাত চেপে)
-তাও ভালো..আমি ভাবলাম তুমি চোখে বেশি দেখো মনে হয় সবকিছু তাই আমাকেও মোটা ভাবছিলে! (বাকা হেসে)
-আমি চোখে বেশি দেখিনা বরং আপনিই একটু বেশি বুঝেন (রেগে)
-উফফ আল্লাহ,তুমি তো এটুকুতেই রেগে গিয়েছো। বাবা তো দেখি আস্ত একটা ঝালমরিচ এর সাথে বিয়ে দিয়েছে আমার! (করুন ভাবে তাকিয়ে)
-কি? আমি ঝালমরিচ?? আপনি খুব খারাপ।হুহ
-হয়েছে এখন থামো তো। সারারাত কি ঝগড়া করেই কাটাবে? ঘুমাবে না?
-ওহ হ্যাঁ। কিন্তু আমি বিছানায় ঘুমালে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?(অবাক হয়ে)
-এখন কি তুমি নিজেকে সুমো রেসলার ভাবছো?(ভ্রু কুচকে)
-মানে???(অবাক হয়ে)
-তো ম্যাডাম, আমিও আপনার পাশে বেড এই ঘুমাবো। আমাদের দুইজনের ধারণক্ষমতা আছে বিছানার।
তানহা হা করে চেয়ে আছে তনয়ের দিকে। এ কি বললো সে? সেও তানহার সাথে একি বিছানায় থাকবে?
তানহাকে হা করে থাকতে দেখে তনয় সিরিয়াস হয়ে বললো,
-দেখো তানহা, আমি মানছি যে আমরা দুইজনের কেউই বিয়ের ব্যাপারটি মেনে নিতে পারিনি এখনও। কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা অপরিচিতের মত থাকব। আমরা তো বন্ধু হতেই পারি তাইনা?বন্ধুত্ব কিন্তু অনেক ভালো একটি সম্পর্ক!
-(মাথা নাড়লো)
-তাহলে বলো, বন্ধু হবে আমার? (হাত বাড়িয়ে)
-হবো (হাত ধরে,মুচকি হেসে)
-এইতো গুড গার্ল! চলো এখন ঘুমাই।না হয় তোমার সাথে গল্প করতে করতে রাত পার হয়ে যাবে আর সকালে লেট করে উঠলে মানুষ অন্যকিছু মনে করবে! (চোখ টিপ মেরে)
এটা শুনে তানহা বালিশ দিয়ে মারে তনয়কে আর তনয় হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ে।
,
,
অতঃপর তানহা এক পাশে তনয় আরেকপাশে শুয়ে পড়লো। তানহা ভাবছে তনয়কে বুঝানো যতটা কঠিন ভাবছিলো সে এখন অতটাও কঠিন মনে হচ্ছেনা। ঠান্ডা মাথায় বুঝালে সে বুঝতে পারবে বলে তানহার বিশ্বাস। আপাতত তারা বন্ধু হয়েছে এই ব্যাপারটিতেই সে খুশি! ভালো জীবনসংগী হওয়ার আগে ভালো বন্ধু হওয়া জরুরী।
পাশে তাকিয়ে দেখে তনয় ঘুমিয়ে কাদা। এত তাড়াতাড়ি সে কিভাবে ঘুমাতে পারে সেটা দেখে হাসলো তানহা।
এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় সে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো।
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের উপর ভারি কিছু অনুভব করে তানহা…
চলবে..