তুমি আমারই থাকবে,Part:7

0
4122

তুমি আমারই থাকবে,Part:7
Writer:Zunaisha Mahira

তনয় রুম থেকে বের হয়ে বাসার সামনের গার্ডেনে গেলো। ওখানে বেঞ্চে বসে তাতে হাত দিয়ে দুই-তিনটা বারি দিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেস্টা করছে সে। অল্পতেই না রাগা মানুষদের এটাই এক সমস্যা, একবার রেগে গেলে তারা সহজে রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনা। তনয়েরও হয়েছে ঠিক তেমন..!!

রাগ কমে আসতেই তনয় ভাবতে লাগলো সে কেন তানহাকে আশিকের সাথে দেখে এত রাগ করলো? তানহার সাথেই বা ওইরকম ব্যবহার করলো কেন সে..বেচারি নিশ্চয়ই অনেক ভয় পেয়েছে কারণ সে আগে কখনও তনয়ের রাগ দেখেনি। অবশ্য ভয় পেয়ে যদি আশিকের থেকে দূরে থাকে তাহলেই ভালো। এগুলো ভেবে একা একাই হাসলো তনয় তারপর নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হচ্ছে! এসব কি ভাবছে সে? কেন তানহাকে সহ্য হচ্ছেনা অন্য কারও সাথে গল্প করতে দেখলে? তারপর ভাবলো আশিক একটা মেয়েবাজ ছেলে, যেখানে সেখানে মেয়েদের সাথে লাইন মারে তাই তানহাকে ওর থেকে দূরে রাখছে সে! তানহাকে ভালো না বাসলেও যতদিন সে ওর বউ ততদিন ওকে রক্ষা করা তনয়ের কর্তব্য! এগুলো ভেবে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলো সে..!!

এদিকে তানহা রুম গুছিয়ে বিছানায় বসে আছে গুটিশুটি মেরে। আর ভাবছে তনয় কখন আসবে? এসে যদি আবারও রাগ দেখায় ওকে তখন কি করবে সে? তানহার এইসব ভাবনার মাঝেই তনয় রুমে প্রবেশ করলো। তানহা ওকে দেখে আরেকটু গুটিশুটি হয়ে বসলো। তনয় বুঝতে পারলো যে তানহা ভয় পেয়েছে তাই ওর কাছে এসে বসলো তারপর কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থেকে বললো,
-ভয় পেয়েছিলে খুব তখন?
-না রে, ভয় কেন পাব? খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছিলো তো আমার।(মনে মনে)
-কি??কথা বলবে না?
-ইশশ,,তখন রাগ দেখিয়ে আহ্লাদ যেন উপচে পড়ছে এখন।(মনে মনে)
-ঠিক আছে। তুমি কথা না বললে, আমি যাচ্ছি।
(বলে তনয় উঠতে ধরলো)
-আপনি কেন রাগ করেছিলেন তখন? (শান্ত গলায়)
এবার তনয় বসলো এবং বল্লো,
-স্যরি তখন ওইরকম করার জন্য। তুমি হয়তো জানোনা যে আশিকের ক্যারেক্টার তেমন একটা ভালো না। অফিসের কাজের চাপে মাথা এমনিই হ্যাং ছিলো তার মধ্যে তোমাকে ওর সাথে কথা বলতে দেখে রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারিনি।(অন্যদিক মুখ করে)
-আমাকে আশিকের সাথে কথা বলতে দেখে আপনার কেন রাগ লেগেছে? (ভ্রু কুচকে)
-ওহ হ্যালো, তোমার সাথে কথা বলায় রাগ হয়নি আমার। আশিক কেমন স্বভাবের তা তো বললামই তোমাকে? তাই তোমার যদি কোন ক্ষতি করে তখন দোষ আমার উপর আসবে যে আমি তোমাকে প্রোটেক্ট করিনি। তাই আগে থেকেই বলে রাখছি ওর থেকে ১০ হাত দূরে থাকবে সবসময়।

তনয়ের কথাগুলো শুনে তানহার একটু খারাপ লাগলো, যদিও সে জানে তনয় ওকে ভালোবাসেনা। তাও বেহায়া মন ভেবেছিলো হয়তো ওর মনের কোন এক কোণে তার জন্য কিছু আছে।এখন তনয়ের কথা শুনে তার আশা ভেংগে গেলো!
তানহাকে অন্যমনস্ক দেখে তনয় বললো,
-চলো, এখন বাইরে যাই। সবাই বসে আছে!
বলে তানহার হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলো। তানহার হাতের যেখানে লেগেছে তনয় ঠিক ওখানেই ধরেছে ফলে ওর মুখ দিয়ে বের হলো,
-আহ্!
-কি হয়েছে? (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)
-জানিনা। হাতে লাগলো একটু। (মাথা নিচু করে)
-কই দেখি।
বলে তানহার হাত উঠিয়ে দেখে ওইখানটায় লাল হয়ে আছে!
-ইশশ কিরকম লাল হয়ে আছে হাতটা! কিভাবে লাগলো? দেখে কাজ করতে পারোনা? (ধমক দিয়ে)
-এটা আমি ইচ্ছা করে লাগাইনি। আপনি যখন চলে গেলেন তখন লেগেছিলো।(অন্যদিক তাকিয়ে)
তনয়ের এইবার খারাপ লাগলো ওইভাবে ধাক্কা দেওয়া ঠিক হয়নি ওর। তাই বললো,
-তখন না হয় আমি রাগের বশে চলে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো রুমেই ছিলে নাকি? ওয়েন্টমেন্ট লাগাতে পারোনি? (রাগী আওয়াজে)
-মনে ছিলোনা। (গাল ফুলিয়ে)

এবার তানহাকে বসিয়ে দিয়ে বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে মলম বের করে লাগায় দিতে থাকে তনয়,

-তা কেন মনে থাকবে? মন তো ছিলো আশিকের সাথে যখন গল্প করছিলে তখন!
-কি শুরু করেছেন আপনি হ্যাঁ? আমি ওর সাথে কথা বলতে চাইনি কিন্তু মা-ফুপির সামনে কথা না বললে বিষয়টা কেমন দেখাতো তাই বলেছি। (চোখ ছোট করে)
-হ্যা হ্যা বুঝেছি। এরপর থেকে বেশি কথা বলবেনা, বরং কথাই বলবেনা খুব দরকার না হলে।বুঝেছো?
-ঠিক আছে। চলুন এবার যাই, সবাই বসে আছে।
-হ্যা চলো।
,
,
,
রাতে খাবার টেবিলে সবাই বসেছিলো, তানহা সবাইকে সার্ভ করছিলো খাবার। আশিক তানহার দিকে একটু পরপর তাকাচ্ছে কিন্তু সে জানেনা একটি চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হঠাৎ করেই তনয় টেবিলে বারি মেরে বললো,
-নজর সরলো, দুর্ঘটনা ঘটলো!
তনয়ের বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-মানে? এগুলো কি বলছো তুমি খাওয়ার সময়? কিসের দুর্ঘটনা কিসের কি?
-ও তুমি বুঝবেনা বাবা। আশিক তুই তো ঠিকমতো খাচ্ছিসই না, প্লেটের দিকে নজর দে। খাবারের জায়গায় তেলাপোকা খেলেও তো বুঝবিনা এভাবে অন্যমনস্ক থাকলে!
এদিকে আশিক কেবলই খাবার মুখে দিয়েছিলো কিন্তু তনয়ের কাছে থেকে তেলাপোকা শুনে মুখ থেকে খাবার ফেলে দেয় সে আর ভয়ে ভয়ে বলে,
-ভাইয়া, আসলে মিস্টি খেতে মন চাচ্ছিলো তো তাই মিস্টি দেখছিলাম। ভাবি আমাকে মিস্টি দেও তো একটা।
তানহা এগিয়ে যাবে আর তনয় ওকে থামিয়ে দিয়ে বলছে,
-মিস্টি খেলে বডি ফিট রাখবি কি করে? এভাবেই চলতে থাকলে ভুরি ঝুলে পড়বে কয়দিন পরে। কন্ট্রোল করা শিখ। শেষে মিস্টি খাওয়ার লোভে ডায়বেটিস হবে তোর।(দাতে দাত চেপে)
তনয়ের বাবা বললেন,
-এসব কি বলছো তুমি তনয়? মেহমান ও আমাদের। মিস্টি খেতে চাচ্ছে আর তুমি মানা করছো? এ কেমন কথা।
-আরে বাবা। ভাই হয় ও আমার। ওর খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে নাকি? এই বয়সেই যদি কন্ট্রোল করা না শিখাই ভবিষ্যতে কি হবে? তাই না আশিক?(মুখে জোর করে হাসি টেনে)
যদিও আশিক তনয়ের এইরকম ব্যবহারের কোন কারণ খুজে পেলোনা তবুও মাথা না ঘামিয়ে বললো,
-হ্যা ভাইয়া ঠিকি বলেছো। আমার লাগবে না।
তারপর তানহাও বসে তনয়ের পাশে আর রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যায় সবাই।
,
,
,
পরেরদিন সকালে তনয় অফিস যাওয়ার আগে সোফায় বসে গল্প করছিলো আশিকের সাথে। তানহা তাদের চা দিতে আসলেই আশিক বলে,
-ভাবি আজকে অনেক হিট একটা মুভি ডাউনলোড দিয়েছি, সেইরকম একটা মুভি। তুমি ফ্রি হইলে আমরা দেখবোনি ঠিকাছে?
তানহা কিছু বলবে তার আগে তনয় চোখ দিয়ে ওকে থামিয়ে দেয় আর বলে,
-কিরে আশিক,বাবা কালকে বলছিলো তুই নাকি চাকরির জন্য এপ্লাই করেছিস?
-হ্যাঁ ভাইয়া।
-তাহলে চল তোর হাতেখড়ি হবে আজকে।
-মানে? (অবাক হয়ে)
-মানে আজকে তুই আমার সাথে অফিস যাবি। আর আমার সাথে থেকে শিখবি কাজ কিভাবে করতে হয়! (দাত কেলিয়ে হেসে)
-কিন্তু ভাইয়া, আমার মুভির প্ল্যান…
-আরে বোকা তুই মুভির চিন্তা করছিস কেন? আমরা বিকেলে অফিস থেকে আসার পর একসাথে দেখবোনি সবাই!

তনয়ের এইসব যুক্তির সামনে আশিক কিছু বলতে পারলো না এবং তনয় ওকে এক প্রকার টেনে অফিসে নিয়ে গেলো।
,
,
,
তনয় যাওয়ার পর তানহা ভাবছে তার কালকের আর আজকের আচরণ নিয়ে। তানহার মন বলছে কোথাও না কোথাও তনয় জেলাস ফিল করছে ওর জন্য। তাহলে কি তনয়ের মনে তানহার জন্য কিছু আছে? তনয়ের মনে তার জন্য ফিলিংস থাকতে পারে এটা ভাবতেই তানহার মন খুশিতে নেচে উঠছে কিন্তু যে বিষয়ের নিশ্চয়তা নেই তা ভেবে সে কেন এত খুশি হচ্ছে নিজেও জানেনা।

রুমে আসতেই দেখে ফোন বাজছে।কিন্তু এটা তো তানহার ফোন না। তনয় আজকে ফোন রেখে গেছে বাসায়। তনয় অফিস থেকে ফোন দিয়েছে মনে করে তানহা ফোনটা তুলতেই তার চেহারার রঙ পাল্টে গেলো। একটু আগেই যে খুশির স্রোতে ভাসছিলো সে তা যেন নিমিষেই মিশে গেলো স্ক্রিনে উঠা নাম দেখে!

তানহার চোখে এখন একটাই নাম ভাসছে- মিশা…!!!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here