তুমি আমারই থাকবে,part:9

0
3382

তুমি আমারই থাকবে,part:9
Writer:zunaisha mahira

তনয় রাস্তায় ড্রাইভ করছে আর ভাবছে বাসায় আসার আগে সন্ধ্যায় তার সাথে যা ঘটেছিলো-
তানহাকে নিতে ওর ভার্সিটি যাচ্ছিলো তনয়। রাস্তার মধ্যে মিশার ফোন আসে। এই সময় এতদিন পর মিশা কেন ফোন দিয়েছে তাই ভাবতে ভাবতেই ফোন ধরে তনয়,
-হ্যালো আপনি কি তনয় বলছেন?
-জি। কিন্তু আপনি কে বলছেন?
-এটা যার ফোন তার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তিনি এখন এলিফ্যান্ট রোডে আছেন। আপনি জলদি আসুন।
মিশার এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনে তনয় তাড়াতাড়ি এলিফ্যান্ট রোডে চলে যায় এবং এর মাঝে সে ভুলে যায় তার তানহাকে নিতে যাওয়ার কথা ছিলো।
তনয় ওখানে পৌঁছে দেখে সব ঠিকঠাক আছে। কোন এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা। তনয়ের এইসব ভাবনার মাঝেই কেউ পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে। তনয় চমকে উঠে পিছে তাকায় আর পিছের ব্যক্তিটি ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে দাঁড়ায়। তনয় দেখে হাই হিলস, জিন্স আর টপস পড়ে মিশা দাঁড়িয়ে আছে আর হাসছে। তনয়ের বুঝতে বাকি রইলো না যে মিশা এক্সিডেন্ট এর মজা করেছে তার সাথে।ওর জন্য সে তানহাকে না নিয়ে এখানে এসেছে আর সে মিথ্যা কথা বলে তাকে ডাকলো দেখে প্রচন্ড রেগে উঠে তনয় বলল,
-এগুলো কোন ধরনের মজা মিশা? তুমি কি বাচ্চা যে এইধরনের তামাশা করছো আমার সাথে? (চিল্লিয়ে)
-ওহ রিল্যাক্স তনয় বেইবি। তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন?
-তো কি করব আমি?আমি আমার কাজ রেখে এখানে এসেছি জানো তুমি?এইরকম ফালতু মজা যেন আর জীবনেও করোনা আমার সাথে বলে দিচ্ছি।
তনয়ের রাগ দেখে মিশা একটু ঘাবরে যায় আর বলে,
– ওকে ওকে। কুল ডাউন। আমি আজকে লন্ডন থেকে এসেছি তাই ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেই। কালকে কল করেছিলাম তোমায়, তুমি তো ধরলেও না আবার কল ব্যাকও করলে না।(নাকি সুরে)
কাল তানহার সাথে মুভি দেখতে দেখতে মিশার কথা একবারও মাথায় আসেনি তনয়ের তাই সে বলল,
-কাল বাসায় ফোন রেখে গিয়েছিলাম আর অফিস থেকে এসে টায়ার্ড ছিলাম তাই ফোন চেক করিনি।
বাসার কথা মনে পড়তেই তনয়ের তানহার কথা মনে পড়ে আর সে বলে,
-উফ শিট! কত লেট হয়ে গেলো। ও মেবি ওয়েট করছে আমার..!!
-ও টা কে তনয় বেইবি? (ভ্রু কুচকে)
-উফ মিশা। কতোবার বলেছি আমাকে বেইবি ডাকবে না। ছোট বাচ্চা না আমি (বিরক্ত হয়ে)
-এখন তো তুমি তাই ই বলবে। তোমার আমাকে আর ভালো লাগেনা তাইনা?(ঢং করে কেদে)
-লিসেন মিশা, আমার আজকে একটু কাজ আছে। অন্যদিন কথা বলব তোমার সাথে বাই।
বলে তনয় যেতে ধরে তানহাকে নিতে যাওয়ার জন্য।
আর মিশা ওর হাত ধরে বলে,
-এত তাড়া কিসের তোমার? তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে বউকে অপেক্ষা করিয়ে রেখে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো। (রাগী ভয়েজে)
মিশা ওর উপর রাগ দেখানোয় তনয়ের মেজাজও খারাপ হয়ে যায় আর সে বলে,
-হ্যা।আমার বউ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। তাকেই নিতে যাচ্ছি। (চিল্লিয়ে)
-হোয়াট ননসেন্স? আর ইউ ম্যাড? কি বলছো তুমি এসব তনয়?? (জোরে)
-ইয়েস। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে বাসায় জানাবো কিন্তু তুমি তো আমাকে না বলে লন্ডন চলে গিয়েছিলে আর এর মাঝে বাবা আমায় বিয়ে করিয়েছেন। (শান্ত গলায়)
-এটা হতে পারেনা তনয়। তুমি আমার সাথে এইরকম করতে পারোনা। কে ওই মেয়ে?অনেক সুন্দর দেখতে? আমার চেয়েও বেশি?
মিশার এইসব কথা শুনে তনয় খুব বিরক্ত হলেও স্বাভাবিকভাবে বলল,
-আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বিয়ে ফিক্সড করা ছিলো যা আমরা দুইজন জানতাম না। মেয়েটা অনেক ভালো। আমার কথাতে রাজি হয়ে ছয় মাসের জন্য আমাদের বাসায় এসেছে। ডিভোর্স এর আগে পর্যন্ত এখানেই থাকবে।
-ওয়াও। এক সপ্তাহ হলো বিয়ে হয়েছে আর এখনি বউয়ের গুনগান গাওয়া শুরু করেছো তুমি তনয়। বাহ!ভালোই জাদু করেছে দেখছি তোমার উপর! এইরকম মেয়েদের আমার জানা আছে।(তালি দিয়ে)
-জাস্ট শাট আপ মিশা। ও আমার ফ্রেন্ডের মতো। আমরা দুইজনই পরিস্থিতির স্বীকার। তুমি তানহাকে এভাবে দোষ দিতে পারোনা। (রেগে উঠে)
-ওর জন্য তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো? আমিও দেখে নিবো ওকে। কি এমন আছে ওর মধ্যে যে তুমি আমাকে কথা শুনাচ্ছো ওর জন্য।
তাই বলে মিশা রেগে চলে যায় ওখান থেকে আর তনয় ওকে ডাকে কিন্তু সে শুনেনা।
তনয় এখন টেনশনে আছে যে মিশা রাগের বশে তানহার সাথে কিছু করবে না তো?মিশার কোন ভরসা নেই!

তাই মিশার কথা শুনে রাগে টেনশনে ফুসতে ফুসতে বাসায় আসে আর মিশার উপরের রাগগুলো বেচারি তানহার উপর ঝাড়ে..!!
(এবার আসুন তনয়-মিশার সম্পর্কের কথা বলি। তনয়ের জীবনে এখনো সত্যিকার ভালোবাসা আসেনি। সে কখনো কাউকে ওইভাবে ভালোবাসেনি। মিশা আর তনয় একসাথে ভার্সিটিতে পড়তো আর মিশা ওর জন্য পাগল ছিলো,অবশ্য সেটা তনয়ের জন্য না ওর টাকার জন্য তা মিশাই ভালো জানে। মিশা তনয়কে অনেকবার প্রপোজ করে কিন্তু তনয় মিশাকে বলেছিলো সে এসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখেনা তাই মিশা যদি ওকে ভালোবাসে তবে তনয় ওর বাবার সাথে কথা বলে বিয়ে করবে মিশাকে। মিশাও রাজি হয় তাই তখন থেকেই সেই হিসেবে ওদের রিলেশন। যেখানে তনয় ওকে নামেমাত্র পছন্দ করে।বিয়ে-রিলেশন এগুলো তার কাছে শুধুই দায়িত্ব মাত্র।তাই মিশার দায়িত্ব যেহেতু নিতে চেয়েছে এইজন্য সেখান থেকে পিছপা হতে পাচ্ছেনা সে।তারপর তনয় ওর বাবাকে মিশার কথা বলে তখন উনি তানহাদের বাসায় যান আর বাকি কাহিনি আপনারা জানেন) মিশা লন্ডনে থাকাকালীন তনয়ের সাথে কথা না হওয়ায় সে ওর বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানতোনা।
,
,
,
রাত ১০ টার দিকে বাসায় ফিরে তনয়। মায়ের ডাকে থেমে যায় সে।
-কি রে, কোথায় ছিলি তুই? বউমা একা এসেছে কেন আজকে? তোদের মধ্যে কোন ঝগড়া হয়েছে নাকি? (কাধে হাত রেখে)
-আরে মা আমার! এত কথা একসাথে জিজ্ঞেস করলে উত্তর কিভাবে দিব বলো তো?
-ঠিকাছে।তাহলে এখন যা জিজ্ঞেস করব সত্যি সত্যি বলবি কিন্তু।
-বলো,কি হয়েছে?
-বউমার কি হয়েছে বাবা? তুই কি ওকে কিছু বলেছিস?
তানহার কিছু হয়েছে শুনে তনয় চিন্তায় পড়লো।
-কি হয়েছে তানহার? আমি কিছু জানিনা মা।
-কি জানি বাবা। তুই আসার আগে থেকেই দেখি ওর মন খারাপ।রাতে কত করে খাওয়ার কথা বললাম কিন্তু বললো ওর ক্ষুধা নেই,না খেয়ে বসে আছে তোর জন্য! তুই যেয়ে দেখ তো বাবা!

একেতো তনয় এমনিতেই অপরাধবোধে ভুগছিলো তানহার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য তার মধ্যে মায়ের কথা শুনে ওর ভীষণ রাগ হলো নিজের উপর!

তানহা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিক চেয়ে। চাঁদটাও যেন ওর মতোই একা।তনয় পাশে এসে দাড়ালো বুঝেও ওর দিক তাকালো না সে। কেন তাকাবে? যখন ইচ্ছা ভালো ব্যবহার করে যখন ইচ্ছা রাগ দেখায়। রাগ কি ওর একারই আছে নাকি?আমারও আছে, এসব ভাবলো তানহা।
-মন ভালো হয়নি?
-আমার খবর আপনার নিতে হবেনা।স্বামীর মতো বিহেভ করার প্রয়োজন নেই,ছয় মাস পর ডিভোর্স আমাদের ভুলে গিয়েছেন?
তনয় বুঝতে পারল তানহা বেশ রেগে আছে। থাকারই কথা বেচারির উপর এমনি এমনিই এত্তগুলা রাগ ঝেড়েছে সে..!!
-এই শুনোনা
-(চুপ)
-আম স্যরি। আর কখনও এভাবে হুট করে রাগ দেখাবোনা! প্রমিস।
-তার মানে রাগ দেখাবেন তাও?
-(কি বলবে বুঝতে পাচ্ছেনা)
তানহা চলে যেতে নিলে তনয় ওর শাড়ির আচল ধরে আটকায় আর বলে,
-এইদিকে একবার তাকাও প্লিজ। দেখো কান ধরেছি, বন্ধু ভেবে মাফ করে দেও আমায়।
তানহা তাকিয়ে দেখলো তনয় একহাতে ওর আঁচল ধরে রেখেছে আর এক হাতে নিজের কান। চাঁদের আলোয় তনয়কে দেখতে খুবই কিউট লাগছিলো তখন। আর ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারা খুব গিলটি ফিল করেছে তাই তানহাও আর তনয়ের কিউট ফেস দেখে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারলোনা।
-কি রে,কিছু বলো!
-হয়েছে ছাড়ুন কান এখন।
-তার মানে তুমি মাফ করে দিয়েছো? (খুশি হয়ে)
-হ্যা জনাব। (হেসে) এখন বলুন কি হয়েছিলো যার জন্য রেগে ছিলেন তখন?
-বলবো তো। তার আগে ভিতরে চলো।

তারপর ওরা রুমের ভিতর আসে। তনয় তানহাকে বসতে বলে বাইরে যায় আর আসার সময় এক প্লেট খাবার নিয়ে আসে। তানহা খাবার দেখে বলে,
-আপনি কিভাবে জানলেন?(অবাক হয়ে)
-সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এই বাসায় অনেকেই তোমাকে খুব ভালোবাসে। মা খেতে বলেছিলো যখন খাওনি কেন হ্যা?
-ভালো লাগছিলো না তাই। (মাথা নিচু করে)
-মাইর দিতে হবে তোমাকে। আমার উপরের রাগ খাবারের উপর ঝাড়বেনা আর কখনও বুঝেছো? (ধমক দিয়ে)
তানহা মুচকি হাসে আর মনে মনে ভাবে বন্ধু হিসেবে হলেও আপনি আমার কেয়ার করেন তনয়। কিন্তু সেটা বুঝতে চান না।
-কি ব্যাপার? একা একা হাসছো কেন? একবেলা না খেয়ে পাগল হয়ে গেলে নাকি? (ভ্রু কুচকে,বাকা হেসে)
-ধুর সবসময় এইরকম করেন আপনি! আচ্ছা আমার একার জন্য প্লেট আনলেন যে?আপনিও নিশ্চয়ই খাননি তাইনা? চলুন একসাথে খাই।

তানহার খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো যে তনয় ওকে তুলে খাওয়াবে আর ও তনয়কে। কিন্তু এখন ওটা চাইলে একটু বেশি হয়ে যাবে। তনয় শুধু বন্ধুই ভাবে ওকে এখনো।তাই বেশিকিছু ভাবলো না সে। পরে না হয় একদিন খাওয়াবে..!!

-হ্যা, খেতে দেও।ক্ষুধা লেগেছে আমার।
তারপর ওরা দুইজন একসাথে খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে আসে।তনয়ও তানহাকে মিশার কথা বলতে ভুলে গেলো..!!

এদিকে তানহা চিন্তাছাড়া ঘুমালেও তনয়ের হঠাৎ করেই মিশার কথা মনে পরে যে আরে,সে তো তানহাকে বললোনা মিশার সাথে দেখা করেছিলো সে কথা,তানহা তো আগেই ঘুমিয়ে গেলো.!!
একই সাথে তার মাথায় ঘুরছে না জানি মিশা রাগের বশে তানহার সাথে কি করে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here