তুমি কে?,পর্বঃ ০৫

0
2537

তুমি কে?,পর্বঃ ০৫
লেখকঃ আবির খান

রোহান অন্য সার্ভেন্টদের ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে তুবাকে দেখেছে কিনা৷ কিন্তু সবার উত্তর একটাই, না। রোহান ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। তুবা তাহলে কোথায় গেল! ও কি ওকে ছেড়ে চলে গেল? রোহানের খুব অস্থির লাগছে আর চিন্তা হচ্ছে। ওর মাথা একদম কাজ করছে না। হঠাৎই পিছন থেকে মানে রান্নাঘর থেকে পরিচিত সেই মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে আসে।

~ একি! আপনারা সবাই একসাথে? কি হয়েছে?

রোহানসহ সবাই পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তুবা ট্রে’তে দুটো মগ নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে। রোহান এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত তুবার সামনে গিয়ে ওর হাতের বাহু দুটো ধরে অস্থির কণ্ঠে বলে,

— তুমি কোথায় গিয়েছিলে এভাবে না বলে? আমরা খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে গিয়েছি।

তুবা পুরো স্তব্ধ হয়ে যায় রোহানকে দেখে। কারণ ওর কথা আর ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছে, ও খুব ভয় পেয়েছে ওকে না পেয়ে। তুবা সেটা খুব বুঝতে পারছে। ও ইশারায় হাতের ট্রে টা দেখায়। রোহান বলে,

— কি?
~ আপনার জন্য কফি বানাচ্ছিলাম। এ বাসায় আসার পর থেকে শুধু খেয়েই যাচ্ছি। কোন কাজ কর্ম তো কিছুই করছি না। তাই ভাবলাম, আপনাকে আমার হাতের কফি বানিয়ে খাওয়াই।

রোহান নিলু আর অন্য সার্ভেন্টদের দিকে তাকিয়ে বলে,

— তোমরা কেউ দেখো নি ওকে কিচেনে যেতে?

সবাই মাথা নাড়িয়ে না বলে। তুবা হেসে বলে,

~ কিভাবে দেখবে! আমি তো চুপিচুপি গিয়েছি। আর আমি জানি যে, নিলু ছাড়া কিচেনে কেউ যায় না৷ তাই আমাকে কেউ দেখেও নি।
— তুবা জানো তোমাকে তোমার রুমে না পেয়ে আমি কতটা ভয় পেয়েছি আর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। উফফ! এরকম কেউ করে?
~ আচ্ছা সরি৷ আমি তো আপনার জন্য কফি বানাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিব৷ কিন্তু… (অসহায় মুখ করে)

রোহান দ্রুত কফির মগটা নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— আচ্ছা দেখি কেমন হয়েছে তোমার হাতের কফিটা।
~ এই না না। থামুন।
— ওমা! খাবো না? আমার জন্য না বানিয়েছো? (অবাক হয়ে)
~ না মানে আসলে…যদি কিছু মনে না করেন, আমি চাচ্ছিলাম আপনার বাগানটায় বসে আমরা একসাথে কফিটা খাবো।

রোহান হাসতে হাসতে বলে,

— হাহা। এই কথা, তাহলে দেরি কেন চলো বাগানের দিকে যাওয়া যাক।
~ সত্যিই? (খুব খুশি হয়ে)
— হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।
~ আপুমনি ট্রে’টা আমাকে দিন৷
~ হুম নেও।

এরপর তুবা আর রোহান কফি হাতে বাগানের দিকে যাচ্ছে। রোহান সামনে আর তুবা পিছনে ছিল। ও রোহানের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে,

~ উনি আমাকে নিয়ে এত ভয় আর এত চিন্তা কেন করছিলেন? ওনার চোখে আমি স্পষ্ট আমাকে হারানোর ভয় দেখেছি। কিন্তু কেন? আমি কি ওনার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে গেলাম? নাকি উনি আমাকে…যাহ! এটা সম্ভবই না৷ আমি যে কিসব ভাবছি! ধুর..

ওরা দুজন হাঁটতে হাঁটতে বাগানে চলে আসে। খুব সুন্দর একটা ফুলের বাগান। বাগানের মাঝে হাঁটার জন্য সুন্দর রাস্তা আছে। রোহান তুবাকে নিয়ে সেই রাস্তা ধরেই হাঁটছে। এদিকে তুবা তো মুগ্ধ হতে হতে হাপিয়ে যাচ্ছে। এত সুন্দর সুন্দর ফুলের সুবাসে ওর মন বারবার পুলকিত হয়ে যাচ্ছে। ওর যে কি ভালো লাগছে তা বোঝানো মুশকিল। এক সময় ও খেয়াল করে বাগানের ঠিক মাঝে অনেক সুন্দর একটা বসার জায়গা আছে। রোহান তুবাকে নিয়ে সেখানে বসিয়ে নিজেও বসে পড়ে। আর তারপর দ্রুত কফির মগে চুমুক দেয়৷ ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষায় ছিল তুবার হাতের কফিটা খাওয়ার জন্য। রোহান কফিতে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে তার স্বাদ নিচ্ছে। তুবাও চুমুক দিয়ে লজ্জাসিক্ত দৃষ্টিতে রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও অপেক্ষায় আছে রোহান কি বলবে তা শোনার৷ রোহান আরও এক চুমুক কফি খেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে তুবাকে বলে,

— আমার খাওয়া বেস্ট অ্যান্ড বেস্ট কফি ছিল এটা। ওয়াও! দাঁড়াও পুরোটা খেয়ে নি। নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

তুবা যেমন লজ্জা পাচ্ছে তেমনি ওর খুব ভালোও লাগছে। ও কফির মগে চুমুক দিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আড় চোখে রোহানকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে,

~ এই প্রথম কেউ আমার রান্নার প্রশংসা করলো। তাও আবার এতটা। সত্যিই উনি অনেক ভালো মনের একটা মানুষ। আমি যতক্ষণ ওনার কাছে কাছে থাকি নিজেকে কেন জানি খুব সেইফ আর হ্যাপি মনে হয়৷ কি এমন আছে ওনার মাঝে যে আমাকে এতটা আকৃষ্ট করছে তার দিকে। ওনাকে এখন একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে৷ একদম কিউট কিউট। উফফ! মন চাচ্ছে ওনার গালটা টেনে দি। হিহি।

রোহানও কফি খেতে খেতে আড় চোখে তুবার দিকে তাকায়। ওদের আবার চোখাচোখি হয়। তুবা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলেও রোহান এবার সরায় না। ও তুবাকে দেখতে থাকে। প্রাণ ভরে দেখতে থাকে। সত্যি বলতে ও চায়, তুবা যতক্ষণ ওর কাছে আছে ঠিক ততক্ষণ প্রতিটি মুহূর্ত ও তুবাকে অনুভব করতে এবং ওর সাথে কাটাতে চায়। কারণ তুবার সঙ্গ ওকে অজানা একটা ভালো লাগা দেয়। যেটা রোহান আগে কখনো পায় নি। তুবা আসার আগে ওর নিজেকে খুব একা মনে হতো। একাকিত্বের চাদরে ও এতটাই ঢেকে গিয়েছিল যে ও হাসতেই ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ও তুবার দিকে তাকালেই ও হাসে। মন থেকে হাসে, খুশি হয়ে হাসে, মেয়েটার পাগলামি দেখে হাসে। রোহান এসব ভাবতে ভাবতে ওর মনে হয় ও কিছু একটা ভুলে গিয়েছে। ওহ! হ্যাঁ তুবাকে তো ও ধন্যবাদই দিল না এত সুন্দর একটা কফি বানিয়েছে। রোহান কফিটা শেষ করে মগটা রেখে বলে,

— অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে এত সুন্দর কফি বানিয়ে খাওয়ানোর জন্য৷ সত্যিই আমি এত মজার কফি আগে খাইনি।
~ কি বলছেন আপনার এত ভালো লেগেছে?
— হ্যাঁ। শোনো, তুমি যতদিন এখানে থাকবে তোমার কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে।
~ জি জি বলুন৷
— তুমি প্রতিদিন সকালে আমাকে এই কফিটা বানিয়ে খাওয়াবে৷ আমি চাই আমার দিনের শুরুটা তোমার মিষ্টি হাতের মিষ্টি কফি খেয়ে শুরু হোক।

তুবা খুব লজ্জা পেয়ে বলে,

~ আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়াবো।

রোহান হাসি দিয়ে তুবার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর লজ্জাসিক্ত মুখখানা দেখে রোহানের আরও বেশি ওকে ভালো লাগছে। ও মুগ্ধ হয়ে শুধু তুবাকে দেখছে। গোধূলি বিকেলে বাগানের মাঝে ঠান্ডা বাতাস আর মিষ্টি ফুলের সুবাস সাথে ওদের দুজনের নিস্তব্ধ আলাপন। বেশ অন্যরকম একটা অনুভূতি দিচ্ছে ওদের দুজনকে। ওরা দুজন দুজনকে আড় চোখে দেখছে। যেন চোখে চোখে অনেক কথা হচ্ছে ওদের। তবে এই পিন পত নিস্তব্ধতা তুবাকে বেশ লজ্জাসিক্ত করছিল। তাই ও আস্তে করে বলে উঠে,

~ কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?
— হ্যাঁ অবশ্যই।
~ আপনার পরিবারের কাউকে দেখছি না যে? তারা কোথায়?
— কেউই নেই। আমার মা, আমার যখন দশ বছর বয়স তখন তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারপর বাবাই আমাকে বড়ো করেন৷ তার এই বিশাল সম্পত্তি আর ব্যবসা বাণিজ্য সব আমার কাঁধে দিয়ে একদিন সেও মায়ের কাছে চলে যান৷ আমার বাবা আমার মাকে খুব ভালবাসতেন৷ বাবা কখনো জানতো না যে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তার কান্না দেখতাম। আমাকে ঘুম পারিয়ে বাবা মায়ের কথা মনে করে কান্না করতেন। এতটাই মাকে ভালবাসতেন যে কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করার বিন্দুমাত্র চিন্তা করেন নি। বাবা মারা গিয়েছেন দু’বছর হলো। এরপর থেকে আমি একদম একা।

রোহান বাগানের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিল। কথা শেষে তুবার দিকে তাকালে দেখে ওর চোখে অশ্রু। রোহান অস্থির হয়ে বলে উঠে,

— আরে কাঁদছো কেন? একদিন না একদিন আমাদের সবাইকেই তো এই সুন্দর পৃথিবীটা ছেড়ে যেতে হবে তাই না? তাহলে কষ্ট পেয়ে লাভ আছে বলো?
~ আপনি অনেক শক্ত মনের মানুষ। কিন্তু আমি না৷ জানেন, আমার বাবা একমাত্র আমাকে খুব ভালবাসতেন৷ তিনি যতদিন ছিলেন আমার একটুও কষ্ট হয় নি। কিন্তু আমার বয়স যখন পনেরো তখন একদিন রাতে বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন৷ অনেক কিছু করেও তাকে আর বাঁচাতে পারে নি। এরপর আমার বড়ো ভাইয়া তার কাঁধে সব দায়িত্ব তুলে নেন৷ আর আমি হয়ে যাই তাদের কাছে বোঝা। তারা শুধু এটাই ভাবে, ও তো একটা মেয়ে। আমরা এত কষ্ট করে সব কিছু দেখে রাখবো আর ও এমনি এমনি সম্পত্তি নিয়ে চলে যাবে৷ এটা হবে না৷ আমরা অনেক ধনী হলেও আমাকে বাসার কাজের মেয়ের মতো রাখা হতো। আমি বুঝি না আমার মা একটা মেয়ে হয়েও কিভাবে তার আপন মেয়ের সাথে এরকম জুলুম করতে পারে! মেয়েরা কি আসলেই সমাজের বোঝা?

রোহান ওর হাতটা খুব শক্ত করে মুঠ করে আছে তুবার কথাগুলো শুনে। ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তুবার মা আর ভাইয়ের উপর। ও কেন জানি নিজেকে ধরে রাখতে পারে না তুবার চোখে অশ্রু দেখে৷ ও কোন কিছু না ভেবেই হঠাৎ করে তুবার চোখ দুটো মুছে দেয়। তুবা একদম অবাক হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত কেউ ওর চোখের পানি মুছে দেয় নি। অনেক অনেক কেঁদেছে ও। ওর ভাই আর মা দেখেছে সেই কান্না। কিন্তু কখনো তারা মুছে দেয় নি। রোহানই প্রথম। রোহান তুবার চোখ মুছে দিয়ে বলে,

— মেয়েদের তারাই বোঝা ভাবে যাদের ভিতরটা পাষাণ আর যারা মনুষ্যত্বহীন৷ মেয়েরা হলো আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। অন্তত আমার মতে। মেয়েদের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ একটা সংসার বলো কিংবা একটা ছেলের জীবন কখনোই একটা মেয়েকে ছাড়া পরিপূর্ণতা পায় না। শূন্য শূন্য থাকে। একটা মেয়েই পারে স্বামী, সন্তান এবং তার সংসারকে দেখে রাখতে। কোন ছেলে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে কখনোই পারে না। শুধু তাই না আজকাল মেয়েরাও জব করছে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বড়ো অবদান মেয়েদের। আর এই সবকিছুর থেকেও সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, একটা মেয়ে একজন মা। তাহলে সে কিভাবে সমাজের বোঝা হয় বলো?

তুবা স্তব্ধ হয়ে অবাক পানে রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের সমাজে খুব কম ছেলেই আছে যারা একটা মেয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জানে। রোহান নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে একজন। যে সত্যিই জানে একটা মেয়ে সমাজের বোঝা না৷ আজ তুবার চোখে রোহানের প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ও অজান্তেই হাসি দিয়ে বলে ফেলে,

~ আপনার মতো একজনকে সব মেয়েই তার লাইফ পার্টানার হিসেবে চায়।

কথাটা বলেই ও ভীষণ লজ্জা পায়। রোহানও হাসি দিয়ে বলে,

— তাই তো এখনো অপেক্ষায় আছি সেই মেয়েটার। কবে যে আসবে? নাকি এসেই পড়েছে কে জানে! হাহা।

তুবা রোহানের লাস্ট কথাটায় বেশ অবাক হয়। ও বুঝতে পারছে না রোহান কি বুঝাতে চেয়েছে ওকে। কিন্তু ও বেশি ভাবে না৷ রোহানের হাসির সাথে হাসি মিলিয়ে ও হাসে৷ সেদিনের গোধূলি বিকেলটা ওদের দুজনের মিষ্টি হাসি আর মিষ্টি অনুভূতি আদান প্রদান দিয়ে সমাপ্তি হয়৷

এরপর ওরা বাসার ভিতরে চলে আসে। নিলু ওদের জন্য অনেক মজার মজার নাস্তা বানায়। তুবা সেগুলো দেখে তো খুশিতে আটখানা। রোহান শুধু মুগ্ধ হয়ে ওকেই দেখছে। অনেক হাসি মজা করে সন্ধ্যার নাস্তা করে ওরা। হঠাৎ রোহানের অফিসিয়াল কল আসলে ও উপরে চলে যায়। তুবা নিলুর সাথে এটা ওটা নিয়ে গল্প করতে থাকে। ওদের ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। রোহান একদম রাতের খাবারের সময় নিচে আসে। তুবা ওকে দেখে ওর কাছে এসে দুষ্টামির স্বরে বলে,

~ কি গার্লফ্রেন্ড কল দিয়েছিল বুঝি? এতক্ষণ পর ছাড়লো? হুম?
— হাহা। তুমি আসলেই একটা পাগলি। আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। অফিসিয়াল কল এসেছিল। তারপর কিছু কাজও করতে হলো অফিসের৷ তাই লেইট হলো। কেন তুমি কি মিস করেছো নাকি আমাকে হুম?

তুবা থতমত খেয়ে যায়৷ কারণ রোহান হঠাৎ করেই সত্যিটা বলে ফেলেছে। তুবা কোন রকম নিজেকে সামলে বলে,

~ এহহ! আপনার মতো মানুষকে আমি করবো মিস? অসম্ভব। একটুও করি নি।
— তাই নাকি! তাহলে আমাকে দেখা মাত্রই আমার কাছে আসলে কেন? হুম?

এবার তুবা তো ধরা খেয়েছে। ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ও বিরক্তি নিয়ে ভ্রুকুচকে বলে,

~ বেশি বুঝেন আপনি। হুহ। খেতে আসেন তো।

বলেই ও হনহন করে চলে যায়। রোহান খুব খুশি হয়ে হাসতে হাসতে ওর পিছনে পিছনে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। তারপর ওরা খাওয়া দাওয়া করে। খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে এগারোটার মতো বেজে যায়। এখন ঘুমানোর পালা। রোহান তুবাকে নিয়ে উপরে আসে। তুবাকে দেওয়া রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রোহান বলে,

— তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো সকালে কথা হবে কেমন? (হাস দিয়ে)
~ আচ্ছা।

এদিকে তুবার অবস্থা খারাপ। ও এত বড়ো বাসায় এত কম লোকজনের মাঝে কখনো থাকে নি। ওদের বাসায় অনেক লোকজন ছিল। আর ও থাকতো ওদের বাসার সার্ভেন্টদের সাথে। কিন্তু এখানে তো পুরোই একা। একদম নিস্তব্ধ পরিবেশ চারিদিকে। কেন জানি তুবার অনেক ভয় করছে। তাও ও সেই ভয়টা রোহানকে দেখায় না। ও খুব কষ্টে একটা হাসি দিয়ে বলে,

~ শুভ রাত্রি।
— শুভ রাত্রি। আর শোন কোন সমস্যা হলে আমাকে ডাক দিও। আমার রুমের দরজা খুলে রাখছি তোমার জন্য।
~ জি ধন্যবাদ। তবে আশা করি কোন সমস্যা হবে না। চাইলে লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন।
— আচ্ছা।

এরপর রোহান ওর রুমে চলে যায় আর তুবা ওর রুমে। তুবা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এতটা নিস্তব্ধতা চারদিকে কি বলবো। ওর গা শিরশির করে উঠে ভয়ে। তার উপর রুমটাও অনেক বড়ো। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই ভয় করছে ওর। তুবা আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু এত বড়ো রুমে একা একা ওর খুব ভয় করছে। তাই ঘুমও আসছিল না। কিন্তু ও অনেক চেষ্টা করছে ঘুমানোর। অন্যদিকে রোহান শোয়া মাত্রই গভীর ঘুমে হারিয়ে যায়।

রাত ১ঃ১২ মিনিট,

রোহান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু হঠাৎ ও ফিল করে ওর পিছনে ওর পিঠে কে যেন গুতো দিচ্ছে। প্রথম প্রথম ও স্বপ্ন ভাবে৷ কিন্তু একের পর এক গুতো খেয়ে রোহানও ভয় পায়। কোন সাড়া শব্দ নেই, শুধু গুতো দিচ্ছে। একি অবস্থা! কে হতে পারে এই রহস্যময় গুতো দেওয়া ব্যক্তি? রোহান সবসময় ওর বালিশের নিচে ওর পিস্তলটা রাখে। ও ঠিক করে যদি ভূত হয় তাহলে আজ তাকেও ও গুলি করবে৷ তাই দেরি না করে ও পিস্তলটা নিয়ে যেই ঘুরে আচমকা তাক করে আর সাথে সাথে তুবা চিৎকার দিয়ে উঠে।

~ আয়ায়ায়ায়ায়ায়া……

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here