তুমি কে?,পর্বঃ ০৬

0
2791

তুমি কে?,পর্বঃ ০৬
লেখকঃ আবির খান

রোহান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু হঠাৎ ও ফিল করে ওর পিছনে ওর পিঠে কে যেন গুতো দিচ্ছে। প্রথম প্রথম ও স্বপ্ন ভাবে৷ কিন্তু একের পর এক গুতো খেয়ে রোহানও ভয় পেয়ে যায়। কোন সাড়া শব্দ নেই, শুধু গুতো দিচ্ছে। একি অবস্থা! কে হতে পারে এই রহস্যময় গুতো দেওয়া ব্যক্তি? রোহান সবসময় ওর বালিশের নিচে ওর পিস্তলটা রাখে। ও ঠিক করে যদি ভূত হয় তাহলে আজ তাকেও ও গুলি করবে৷ তাই দেরি না করে ও পিস্তলটা নিয়ে যেই ঘুরে আচমকা তাক করে আর সাথে সাথে তুবা চিৎকার দিয়ে উঠে।

~ আয়ায়ায়ায়ায়ায়া……

রোহান দ্রুত পিস্তলটা সরিয়ে অবাক কণ্ঠে বলে উঠে,

— তুবা তুমি! এত রাতে? কোন সমস্যা?
~ আপনি তো আমাকে গুলিই করতে নিয়েছিলেন। আর একটু হলে তো আমি…
— আহ! শান্ত হও৷ আর তুমি আমাকে ডাক না দিয়ে এরকম গুতাগুতি করছিলে কেন? আমি নিজেই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
~ আপনি গভীর ঘুমে ছিলেন। তাই গুতো দিয়ে আপনার ঘুম ভাঙার চেষ্টা করছিলাম। সরি…
— আরে পাগলিটা সরি বলছো কেন? আচ্ছা আগে বলো কি হয়েছে? কোন সমস্যা?

তুবা রোহানের বেডে বসে অস্থির কণ্ঠে বলে,

~ হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক অনেক সমস্যা। আমার একা ঘুমাতে খুব ভয় করছে৷ মনে হচ্ছে কে যেন রুমে হাঁটছে। আবার মনে হচ্ছে কে যেন আমার উপর অ্যাটাকা করবে৷ আমি কখনো একা থাকি নি। খুব ভয় করছে। (অসহায় মুখ করে)
— ওহ হ। আমাকে আগে বলবে না৷ তাহলে এতক্ষণ জেগে থাকতে হতো না। ঘুমাও নি নিশ্চয়ই এতক্ষণ তাই না?

তুবা অসহায় মুখ করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। রোহানও ব্যথিত হয়ে বলে,

— সরি আমার আসলে ভাবা উচিত ছিল। আচ্ছা চলো তোমাকে নিলুর কাছে দিয়ে আসি। তাহলে আর ভয় করবে না।

রোহান কথা শেষ করে বেড ছেড়ে উঠতে নিয়ে দেখে তুবার মুখখানা আরও মলিন হয়ে গিয়েছে। তারমানে ও চায় না নিলুর কাছে যেতে। তাহলে কি চায়? রোহান তুবাকে একটু বুঝার চেষ্টা করে আবার বেডে বসে বলে,

— নাহ! নিলু তো এখন ঘুমাচ্ছে। ওর আছে গেলে মেয়েটারও ঘুম ভেঙে যাবে৷ এমনিতেই সারাদিন অনেক কষ্ট করে। ওর ঘুমটা ভাঙা ঠিক হবে না কি বলো?

তুবা খুব খুশি হয়ে জোর জোরে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে। রোহান এবার স্পষ্ট বুঝে যায় তুবা আসলে কি চাচ্ছে। তাই ও বলে,

— তাহলে তো একটাই রাস্তাই আছে। তোমাকে আমার রুমেই ঘুমাতে হবে। পারবে ঘুমাতে?
~ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই পারবো। আপনি অনেক ভালো। জানি কোন দুষ্টামি করবেন না৷ তাহলে আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। আপনিও ঘুমান। আর সরি ডিস্টার্ব করার জন্য।

বলেই তুবা সোফার দিকে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু রোহান খপ করে ওর হাত ধরে জোরে একটা টান মারে। তুবা নিজেকে সামলাতে না পেরে রোহানের উপর এসে পড়ে। রোহান ওকে ধরে ওর কোলের মাঝে নিয়ে নেয়। তুবা অসম্ভব লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জাসিক্ত নয়নে রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। রোহান ওর নাকে একটা টোকা দিয়ে বলে,

— আমি এতটা অধম না যে তোমাকে সোফায় ঘুমাতে দিব। তুমি আমার বেডেই ঘুমাবে৷

তুবার চোখ দুটো সাথে সাথে বড়ো হয়ে যায়। লজ্জায় ওর হার্টবিট অনেক বেড়ে যায়। ও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

~ কি বলছেন, আমি আর আপনি এক বেডে ঘুমাবো?( ভীষণ অবাক হয়ে)

রোহান কিছুক্ষণ তুবার দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— হ্যাঁ। শুধু ঘুমাবো না আরও অনেক কিছু করবো। হাহা৷
~ এই এই কি বলছেন এসব! আর কি কি করবেন হ্যাঁ? (লজ্জায় একদম লাল হয়ে গিয়েছে)
— দেখবে কি কি করবো আমি?

তুবা ভয়ে আর লজ্জায় মাথা নাড়িয়ে না না বলে। কিন্তু আসলে মনে মনে ও ঠিকই দেখতে চায়। ওর মাথার ভিতর এখন অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। সেসব চিন্তা করে ও লজ্জায় শেষ। রোহান আস্তে আস্তে বেড থেকে নেমে হঠাৎই তুবাকে ওর কোলে তুলে নেয়৷ তুবা তো পুরো স্তব্ধ। ও বলে উঠে,

~ কি করছেন? আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন? ছাড়েন বলছি।
— কেন তুমি না জানতে চাইলে আমি কি কি করবো? সেগুলোই তো করছি।
~ আরে না আমি তো মানে আসলে…

তুবার হার্টবিট এতই বেড়ে গিয়েছে যে এ ঠিক মতো কথাই বলতে পারছে না৷ তার উপর রোহান ওর এত কাছে। ওর শরীরের উষ্ণতা তুবা স্পষ্ট অনুভব করছে। রোহান ওকে কোলে করে বেডে সুন্দর করে শুইয়ে দেয়৷ তুবার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়৷ রোহান ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর পাশে এসে বসে। আস্তে আস্তে ওর মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তুবার কেমন জানি লাগছে। ও নিজেকে সামলাতে পারছে না৷ একসময় রোহানের গরম নিঃশ্বাস ওর চোখে মুখে পড়ে। তুবা দেখে রোহান ওর মিষ্টি ঠোঁটটার দিকে তাকিয়ে আছে আর ওর কাছে আসছে। এই দৃশ্য দেখে তুবার ঠোঁটটা থরথর করে কাঁপছে। অজানা অনুভূতিতে ও চোখ বন্ধ করে ফেলে। ওর পুরো শরীর নিথর হয়ে গিয়েছে। ওর মাথাও কাজ করছে না। ও শুধু অপেক্ষা করছে কখন রোহানের স্পর্শ পাবে৷ কিন্তু অনেকটা সময় পাড় হলেও ও আর কিছু অনুভব করে না৷ তাই ও আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রোহান একটা বালিশ হাতে নিয়ে মুচকি হাসছে৷ তুবা পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। রোহান হাসতে হাসতে বলে,

— এই যে বালিশটা নিলাম এটা নিয়ে আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়বো। আর তুমি এখানে আরামে ঘুমাবে৷ বুঝলে?

তুবা যে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রোহানের উপর কঠিন রাগ হচ্ছে ওর। মন চাচ্ছে পিটানি দিক কতক্ষণ। রোহান সুযোগ পেলেই ওর সাথে এমন করে৷ ওকে পাগল করে দিয়ে মজা নেয়৷ তুবা আর কিছুই বলে না৷ ও আস্তে করে অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে৷ আহরে! মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে। কত কিছুই না ভেবেছিল। কিন্তু তা কিছুই হলো না। রোহান উঠে দাঁড়ায়। তারপর তুবার গায়ে ব্ল্যাংকেট’টা দিয়ে ওর মাথার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

— এবার আরাম করে ঘুমান। সকালে আবার আপনাকে জ্ব্বালাবো। শুভ রাত্রি।

বলেই রোহান হাসতে হাসতে চুপচাপ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। তুবাও মুচকি হেসে দেয়। রোহানের রসিকতা দেখে ওর অভিমান মুহূর্তেই চলে যায়। ও কোলবালিশটাকে রোহান মনে করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। আর এদিকে রোহান সোফায় শুয়ে পিছন থেকে তুবাকে দেখছিল। ওকে জ্বালাতে খুব ভালোই লাগছে রোহানের৷ রোহান মনে মনে বলে,

— আগে মন ভরে জ্বালাবো। আর তারপর তোমাকে অনেক সুখ দিব৷ তাহলেই না প্রকৃত সুখ অনুভব করবে তুমি। হাহা।

রোহান কখনোই এত দুষ্ট ছিল না। ওর পছন্দের লেখক, আবির খানের রোমান্টিক গল্প পড়ে পড়ে এত দুষ্টু হয়েছে ও। ওর খুব ইচ্ছা ছিল ও যাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিবে তার সাথে ও এরকম অনেক দুষ্টামি করবে। ও তাই করছে। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই সেটা লিমিটে। রোহান তুবাকে সারাজীবনের জন্য ওর করতে চায় বলেই এমন করছে। যদি না চাইতো তাহলে কখনোই ওকে ওর রুমে আসতেই দিত না। তুবাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রোহানও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে,

আরেকটি নতুন সকাল নতুন দিন ওদের দুজনের জীবনে এলো। স্বভাবতই তুবার ঘুম আগে আগে ভেঙে গেল। কারণ ওর বাসার সার্ভেন্টদের সাথেই ও উঠে যেত। তুবা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। পাশের জানালা দিয়ে স্নিগ্ধ সকালের মিষ্টি রোদ এসে রোহানের ঘরে পড়ছে। তুবা আস্তে আস্তে উঠে বসে। বসেই বাম পাশে তাকিয়ে দেখে রোহান ঘুমিয়ে আছে৷ তুবা এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত বেড ছেড়ে রোহানের কাছে গিয়ে মাটিতে হাটুতে ভর দিয়ে ওর কাছে বসে। প্রথম চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে, চুটকি বাজিয়ে চেইক করে যে রোহান জাগনা নাকি ঘুমানো। দেখে বেশ গভীর ঘুমেই আছে ও। তুবা তো খুব খুশি। কারণ ও এটাই চাচ্ছিল। ও এবার মন ভরে ঘুমন্ত রোহানকে দেখছে৷ কি সুন্দর হ্যান্ডসাম রোহান। তুবা খেয়াল করে রোহানের চুলগুলো অনেক সিল্কি আর বড়ো বড়ো। ঘন ঘন আই ব্রু, গালে হালকা চাপ দাড়ি। আর রোহানের ঠোঁটটাও গোলাপি। তুবা মিটমিট করে হাসছে আর মনে মনে বলছে,

~ এহহ! আসছে আমাকে জ্বালাবে৷ তুবাকে জ্বালানো এত সহজ না। হুহ।

বলেই ও রোহানের মাথায় হাত রেখে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

~ আচ্ছা আপনি এত ভালো কেন? আমার মতো অভাগীর জন্য কত্তো কিচ্ছু করছেন। অন্যকেউ হলে এতক্ষণে হয়তো আমাকে ভোগ করা হয়ে যেত। আর তারপর রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিত। কিন্তু আপনি তা করেন নি। আমাকে অনেক সম্মান আর ভালো ভালো মুহূর্ত উপহার দিচ্ছেন। আমি যে আপনার কাছে কতটা কৃতজ্ঞ তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার অন্ধকার জীবনে আলো হয়ে এসেছেন আপনি। ইসস! আমার ভাগ্যে যদি আপনি সারাজীবনের জন্য থাকতেন তাহলে আমি দাসী হয়ে হলেও থাকতাম। কিন্তু আমার মতো এরকম পালিয়ে আসা মেয়েকে আপনি কখনোই আপনার করে নিবেন না তা আমি জানি৷ তাই যত দিন আপনার কাছে আছি শুধু আপনার হয়েই থাকবো। আমার লুচ্চা শয়তান আপনি৷ হিহি।

বলেই তুবা রোহানের কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে উঠে খুব খুশি মনে ফ্রেশ হতে চলে যায়। তুবা ভেবেছিল রোহান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু ও গেলে রোহান আস্তে করে একটা হাসি দেয়৷ কারণ ও এতক্ষণ ঘুমানো ছিল না। তুবা ওর কাছে আসা মাত্রই ওর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। রোহান মনে মনে বলে,

— তোমাকে আমি কোথাও যেত দিব না। তুমি আমার কাছেই থাকবে।

এরপর রোহান আবার ঘুমিয়ে পড়ে। তুবা ফ্রেশ হয়ে নিচে কিচেন এ যায়। গিয়ে দেখে নিলু নাস্তা বানাছে। ও পিছন থেকে নিলুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ শুভ সকাল নিলু। কেমন আছো?
~ আরে আপুমনি যে। শুভ সকাল। আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
~ আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
~ আপুমনি আপনাকে পেয়ে আমার যে কি খুশি লাগছে। আমি একা একটা মেয়ে সারাদিন কাজ করতাম। কথা বলা গল্প করার মতোও কেউ ছিল না। ভাইয়া তো সারাদিন কাজ আর কাজ নিয়ে বিজি থাকে। আমাকে পুরো বাসা দেখে রাখতে হয়। কিন্তু এখন আপনি আছেন৷ আপনার সাথে গল্প করে অনেক অনেক ভালো লাগে আমার।
~ হ্যাঁ এখন থেকে শুধু আমার সাথে গল্প করবে। যা মন চায় বলবে। কোন সমস্যা নেই।
~ হ্যাঁ অবশ্যই। বলেন আপনার জন্য স্পেশাল কি বানাবো? যা খেয়ে চাইবেন তাই বানিয়ে দিব৷
~ না না কিছু না৷ আমি ওনার জন্য কফি বানাতে এসেছি।
~ ও। আচ্ছা বানান। আমিও নাস্তা বানাই তাহলে।
~ আচ্ছা।

নিলু নাস্তা বানাচ্ছে আর তুবা রোহানের জন্য কফি। ও কফি বানাতে বানাতে নিলুকে জিজ্ঞেস করে,

~ আচ্ছা নিলু আমি খেয়াল করেছি উনি তোমাকে একদম বোনের মতো ট্রিট করে৷ তুমি কি ওনার কোন আত্নীয়র মেয়ে?
~ না না আপুমনি একদম না৷ ভাইয়া আমাকে একটা অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলেন। আজ ৩/৪ বছর হবে আমি এই বাসায় এসেছি। আসলে আমি দেখতে নাকি একটু বেশি সুন্দরী। তাই ভাইয়ার নাকি আমাকে দেখে চিন্তা হয়েছে যে আমার ওখানে থাকলে কোন ক্ষতি হতে পারে। তাই তিনি আমাকে তার বাসায় নিয়ে আসেন৷ একদম বোনের মতো করে আমাকে লালন পালন করেন৷ শুধু ভাইয়া না ভাইয়ার আব্বুও অনেক ভালো ছিলেন। তিনিও আমাকে একদম নিজের মেয়ের মতো ভাবতেন। আমি জীবনে আর কিছু না পেলেও বাবার আদর আর ভাইয়ের আদর পেয়েছি। আমাকে তারা কখনো এ বাসার সার্ভেন্টই মনে করে নি৷ উল্টো এখানে যারা কাজ করে তারা সবাই জানে আমি ভাইয়ার বোন৷ রোহান ভাইয়া যে কত্তো ভালো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনাকে একটা গোপন কথা বলি। ভাইয়া তার সিন্দুকের একটা ডুব্লিকেট চাবি সবসময় আমার কাছে রাখেন৷ তাহলে একবার ভাবেন আমাকে কতটা বিশ্বাস করেন তিনি।

তুবা পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে নিলুর কথা শুনে৷ রোহান যে এতটা ভালো হতে পারে ও কল্পনাও করে নি। তুবা খুব খুশি হয়ে বলে,

~ আমার এই বিশ বছরের জীবনে ওনার মতো একজন ভালো মানুষ কখনো দেখি নি। আমাকেই দেখো, রাস্তা থেকে নিয়ে এসে এখন কতটা যত্ন করছেন৷ কেউ এরকম করে বলো।

নিলু তুবার কাছে এসে বলে,

~ ভাইয়া কিন্তু এমন না৷ উনি অনেক রাগী আর গম্ভীর। খুব সহজে কাউকে বিশ্বাসও করেন না আর কাউকে এত তাড়াতাড়ি আপনও করেন। কিন্তু আপনি আসার পর থেকে উনি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছেন৷ আমার মনে হয় ভাইয়ার আপনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। গতকাল বিকেলে আপনাকে না পেয়ে ভাইয়া যে কি পরিমাণ অস্থির হয়েছিল তা যদি একবার দেখতেন। আমি নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়ার অবস্থা দেখে৷
~ আমিও দেখেছি। কিন্তু তোমার ভাইয়ার সাথে আমাকে কখনো মানায় না৷ আমি পালিয়ে আসা একটা মেয়ে৷ যার কোন ভবিষ্যৎ নেই নিলু। কিভাবে ওনার মতো একজন ভালো মনের মানুষ আমার মতো অনিশ্চিত জীবনের একটা মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন থাকবে বলো? তার বন্ধুবান্ধব আত্নীয় স্বজন কি বলবে? আমার তো পরিবারই ঠিক নেই। (অসহায় কণ্ঠে)
~ একদম মন খারাপ করবেন না৷ আপনি আমার ভাইয়াকে চিনেনই না৷ সে এসব কখনো ভাববে না৷ দেইখেন৷
~ অনেক পাকনা হয়ে গেছো তুমি। কাজ করো তো। (লজ্জা পেয়ে)
~ হাহা। আপুমনি আপনি লজ্জা পেলে আপনাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে৷ হিহি।

তুবা খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ এরপর ওদের কথা শেষ হলে তুবার কফি বানানোও শেষ হয়ে যায়। ও কফি নিয়ে ট্রেতে করে উপরে রোহানের কাছে যায়। কিন্তু রুমে ঢুকে দেখে রোহান কোথাও নেই। তুবার নজর যায় বারান্দার দিকে। ও ভাবে রোহান হয়তো বারান্দায় আছে। তুবা কফি হাতে আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে যেতেই ও যা দেখে তা দেখার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তুবা পুরো হা করে তাকিয়ে আছে। কারণ ও দেখে রোহান…

চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here