তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০২
লেখকঃ আবির খান
আবির একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বেডের উপর। ওদের দুজনের মাঝে এখন আর কোন দূরত্ব নেই। জান্নাত আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। আবির ভারি গলায় বলে উঠে,
– এই আমার দিকে তাকাও। একদম চোখ বন্ধ করবা না। না হলে জান নিয়ে আজকে বাসায় যেতে পারবানা।
জান্নাত আঁতকে উঠে। এটা ত আবির না। আবিরের রূপ মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেল! ওর কথার স্বর এমন হলো কেন? জান্নাত ভীষণ ভীতু ভাবে আবিরের দিকে তাকায়। ও দেখে আবিরের চোখগুলো লাল হয়ে আছে৷ যেন রক্ত এসে জমেছে। আবিরকে এখন হিংস্র পশুর মতো লাগছে৷ জান্নাতের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ আবির হঠাৎ জান্নাতের মিষ্টি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– তোমার এই অপরূপ শরীরটার মূল্য কি মাত্র দশ হাজার টাকাই! এতটা মূল্যহীন তুমি? মাত্র দশ হাজার টাকার বিনিময়ে এই সুন্দর শরীরটা একটা ছেলের কাছে সপে দিলে? একবার বিবেককে প্রশ্ন করো নি, তোমার মূল্য কি এতটাই কম?
জান্নাত ওর অশ্রুর বিশাল ঢেউকে আর আটকে রাখতে পারে না। টপটপ করে অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। আবিরের এই প্রশ্নের উত্তর ওর জানা নেই। জান্নাত লজ্জায় আর ক্ষোভে অন্যদিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
~ আপনি যা করার জন্য আমাকে এনেছেন তা করে দয়া করে আমার টাকাটা আমাকে দিয়ে দিন। আমি আর কিছু জানি না আর কিছু চাই না।
এবার আবিরের প্রচন্ড রাগ উঠে। ও জান্নাতের গালটা চেপে ধরে ওর দিকে মুখ করিয়ে রাগী ভাবে বলে,
– তুই কি ভেবেছিস? আবির বোকা? তোর এই অভিনয় আবির বুঝবে না? বাংলাদেশের টপ বিজনেস আমি। আমার চোখ ফাঁকি দিবি তুই? তোর কি মনে হয়? আমি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে রাস্তার মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করি? কখনো না৷ আবির এত নিচু না৷ তোর দেহের প্রতি আমার লোভ থাকলে এতক্ষণ অপেক্ষা করতাম না। ভেবেছিলাম তুই নিজে থেকেই সবটা বলবি কিন্তু তুই তো শরীর সপে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছিস। লজ্জা করে না?
জান্নাত আবিরকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে পাশে ফেলে দিয়ে ওর উপর উঠে ওর কলার চেপে ধরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ আপনি লজ্জার কথা বলেন? লজ্জা করে কি হবে? ওইদিকে হাসপাতালে আমার আপন ছোট ভাইটা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে। আপনারা কেউ সাহায্য করেছেন? করেন নাই। কত জনের কাছে হাত পেতেছি সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি বোন হয়ে আমার ভাইটাকে মরে যেতে দিব? কি হবে এই লজ্জা করে? আমার শরীর দিয়ে যদি আমার ভাইটা বেঁচে যায় তাহলে তাই ভালো। এই দুনিয়ায় ফ্রীতে কিছু পাওয়া যায় না৷ কোন কিছুর বিনিময়ে কেউ কিছু দেয়৷ যেমন আপনি আমার শরীরের বিনিময়ে টাকা দিবেন। নিন এবার আমাকে ভোগ করে আমার টাকা দিন। আমার ভাইটার খুব কষ্ট হচ্ছে। দয়া করুন৷
জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে মাথা নিচু করে ফেলে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ওর৷ কত জনের কাছে হাত পেতেছে ও। আত্নীয় স্বজন কেউ টাকা দেয় নি। টিউশন করিয়ে যে কয় টাকা জমিয়েছিল সব শেষ। শেষমেশ রক্তের ভাইটাকে বাঁচাতে জান্নাত এই পথে নামে। খুব লজ্জা আর ঘৃণা হচ্ছে নিজের উপর ওর। মন চাচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেক। হঠাৎই আবির জান্নাতকে টান মেরে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে৷ জান্নাতকে ভয় পেয়ে যায়। আবির কিছু বলে না। চুপচাপ ওকে শক্ত করে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকে। জান্নাত কান্না কমালে আবির আস্তে করে ওর কানের কাছে বলে,
– আমিই কি তোমার জীবনে প্রথম পুরুষ?
~ জি।
– ঠিক আছে। আমি একটা ডিল করবো তোমার সাথে। এতে তোমারই লাভ হবে।
~ কিসের ডিল?(আস্তে করে)
– তোমার ভাইয়ের চিকিৎসার সব খরচ আমি দিব৷ বিনিময়ে তোমার জীবনটা আমাকে দিতে হবে। মানে আজ থেকে প্রতিটা রাত প্রতিটা দিন সবসময় তুমি আমার কাছে থাকবে৷ অন্য কারো কাছে যেতে পারবে না। আমি যা বলবো, যা করাবো সব মানতে হবে। রাজি থাকলে বলো।
জান্নাত উঠে বসে আবিরের দিকে তাকায়। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
~ আমার ভাইয়ার সব চিকিৎসার টাকা দিবেন? অনেক টাকা লাগবে কিন্তু।
– কত টাকা লাগবে? ১ কোটি ২ কোটি নাকি ১০০ কোটি? কত লাগবে?
~ ৫ লক্ষ টাকা। হার্টের অপারেশন করতে হবে৷
– এখন যে রুমটায় আছি এটার ভাড়া কত জানো? ১ লক্ষ টাকা। আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা ৫ টাকার সমান৷ এবার বলো তুমি কি রাজি?
~ রাজি না হয়ে উপায় নেই আমার কাছে। যান আমার জীবনটা আপনাকে দিয়ে দিলাম। আমার সব কিছু আপনার। তাও আমার ভাইটাকে বাঁচান। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
আবির জান্নাতকে পাশে রেখে উঠে বসে। ওর চোখ দুটো মুছে দিয়ে বলে,
– চলো।
~ কোথায়?
– তোমার ভাইয়ের কাছে আর কোথায়?
~ কেন আমার সাথে কিছু করবেন না?
আবির ঘুরে জান্নাতের দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে বলে,
– থাপ্পড় খাবা তুমি? আর একবার এভাবে বললে তোমাকে মেরে ফেলবো আমি। তোমার সাথে কখন কি করবো সেটা আমার ব্যাপার। এখন থেকে আমি যা বলবো ঠিক তাই তাই করবা৷ কোন প্রশ্ন করবা না৷ মনে থাকবে?
আবিরের ধমক খেয়ে জান্নাত চুপসে যায়। আর ভীতু কণ্ঠে বলে,
~ জি থাকবে৷
– এবার যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমরা এখনি রওনা হবো।
~ আচ্ছা।
জান্নাত দ্রুত বেড ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আয়নায় নিজের দিকে তাকাতেও পারছে না৷ ঘৃণা লাগছে নিজেকে দেখতে। ও এখন আবিরের কেনা গোলামের মতো। নিজের সবটুকু সপে দিয়েছে আবিরের কাছে৷ ওর জীবনের আর কোন স্বপ্ন, আশা, ভরসা কোন কিছুই নেই। সব কিছু শূন্য। আজ এখন থেকে আবির যা বলবে ওকে তাই মানতে হবে। হয়তো আবির ওকে চিড়ে চিড়ে খাবে৷ দিন পর দিন রাতের পর রাত। জান্নাতকে এসবটা মেনে নিতে হবে। শুধুমাত্র ওর ভাইটাকে বাঁচানোর জন্য। জান্নাত এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়ে। বাইরে এসে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে। জান্নাত তোয়ালে নিয়ে ঢুকে নি ওয়াশরুমে। ও বাইরে আসতেই আবির তোয়ালেটা নিয়ে ওর কাছে এসে ওকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে ওর পুরো হাত মুখ খুব যত্ন করে মুছে দেয়। তারপর ওড়নাটা সুন্দর করে পরিয়ে দিয়ে ওকে দেখে বলে,
– হুম এখন একদম পার্ফেক্ট লাগছে। চলো।
জান্নাত কিছুই বুঝলো না। পুতুল যেভাবে সাজায় আবির ঠিক সেভাবেই ওকে সাজিয়েছে। জান্নাত মনে মনে ভাবে, তাহলে কি আবিরের কাছে ও এখন একটা পুতুল? হয়তো। জান্নাতের ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আবির ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা লিফটের কাছে চলে যায়। একটু পর লিফট আসলে ওরা উঠে নিচে চলে আসে। আবির এখনো জান্নাতের হাত ধরে আছে। ওকে নিয়ে রিসেপশনে গিয়ে কার্ড জমা দিয়ে বলে,
– চেক আউট করে দিন। চলে যাবো।
বলে জান্নাতকে ওর সাথে মিশিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জান্নাত কিছুই বুঝতে পারছে না। রিসেপশনিস্ট মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে ওদের চেক আউট করে দেয়। আবির সেই আগের ন্যায় জান্নাতের হাত ধরে বাইরে বের হয়ে আসে। ওর হাত ছাড়ে না। দারোয়ান গাড়ি নিয়ে আসছে। আবির জান্নাতকে ওর সাথে মিশিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। জান্নাত মনে মনে বলে,
~ ওনার মনে আসলে কি যে চলছে আমি বুঝতেই পারছি না। উনি আসলে কি চান আমার কাছ থেকে?
জান্নাত কোন উত্তর খুঁজে পায় না। এরমধ্যে গাড়ি চলে আসলে আবির ওকে নিয়ে গাড়ির কাছে চলে আসে। এসে জিজ্ঞেস করে,
– কোন হাসপাতালে তোমার ভাই?
~ এম আর হাসপাতালে।
– ওকে।
আবির ওর ফোনটা বের করে কাকে যেন কল দেয়।
– এম আর হাসপাতালে দ্রুত চলে আসো।…হ্যাঁ… ৩/৪ জন আসো। না লাগবে না আমার সাথেই আছে।.. আচ্ছা।
জান্নাত পাশে দাঁড়িয়ে আবিরকে এগুলো বলতে শুনে। ওর খুব ভয় করছে৷ আবিরের কথা শেষ হলে, জান্নাত আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
~ আপনি কি করতে যাচ্ছেন আমাকে একটু বলবেন?
– এইইই কি বলেছিলাম একটু আগে মনে নেই? নো প্রশ্ন।
~ আচ্ছা আচ্ছা।
– হুম গুড। এবার দ্রুত গাড়িতে উঠো।
জান্নাতকে গাড়িতে বসিয়ে আবিরও গাড়িতে উঠে রওনা হয় হাসপাতালে। আবির কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাতে থাকে। জান্নাত আড় চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ এতক্ষণ ও আবিরকে ঠিক ভালো করে মানে মনের চোখ দিয়ে দেখে নি৷ এখন একটু দেখার চেষ্টা করছে৷ ফরসা একটা মুখ, গালে চাপ দাঁড়ি, চোখ গুলো তীক্ষ্ণ আর পাপড়ি গুলো বড়ো বড়ো। খাড়া নাক, বলিষ্ঠ উচা লম্বা দেহ৷ অনেক হ্যান্ডসাম দেখতে আবির। জান্নাত বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না৷ কারণ আবিরের সাথে চোখাচোখি হয়। লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে। আবিরের বলা সেই বিষাক্ত কথা গুলো এখনো জান্নাতের কানে বাজছে। সেগুলো মনে করে নিজের প্রতি ঘৃণা আরও অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে ওর। দেখতে দেখতে ৪৫ মিনিট ড্রাইভ করে ওরা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। আবির গাড়ি পার্ক করার সাথে সাথেই কয়েকজন লোক এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে,
– স্যার আসুন।
জান্নাত তাকিয়ে দেখে কালো কোর্ট পরা কয়েকজন লোক। আবির জান্নাতের কাছে এসে ওকে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে। জান্নার ওর ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। আবির ওর লোকদের সাথে নিয়ে জান্নাতের সাথে গিয়ে দেখে জান্নাতের ভাইটা করিডরে ফ্লোরে শুয়ে আছে৷ আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে৷ আপাতত সে অজ্ঞান। আবির এই করুন দৃশ্য দেখে হাত দুটো মুঠ করে ফেলে। জান্নাত ভাইয়ের কাছে গিয়ে কান্না করছে। আবির ওর লোকদের সব বুঝিয়ে বলে। আর তারা সাথে সাথে কাজ শুরু করে। আবির জান্নাতের কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,
– আমার সাথে আসো।
~ কোথায়?
– আসতে বলেছি।
~ আমার ভাইটা?
– বাইরে চলো।
আবির জান্নাতের হাত ধরে ওকে নিয়ে বাইরে এসে গাড়ি সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জান্নাত আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আবির কিছু বলছে না। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব শক্ত হয়ে আছে। হাত দুটো দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত অস্থির হয়ে আছে৷ ও কিছুই বুঝতে পারছে না৷ হঠাৎই একটা এম্বুলেন্স আসে। তারা সাথে সাথে জান্নাতের ভাইকে নিয়ে আসে ভিতর থেকে। জান্নাত দেখে আবিরের লোকেরা সবাই ওর ভাইকে নিয়ে এম্বুলেন্সে ওঠে। জান্নাত আবিরকে জিজ্ঞেস করে আমার ভাইকে নিয়ে কই যাচ্ছেন?
– যেখানে তোমার ভাইয়ের ভালো এবং সঠিক চিকিৎসা হবে সেখানে৷ আসো।
আবির ইশারা দিলে এম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়। ও জান্নাতকে গাড়িতে বসিয়ে এম্বুলেন্সের পিছনে নতুন হাসপাতালে যেতে থাকে৷ জান্নাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও আবিরকে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। আধা ঘণ্টা পর ওরা ঢাকার সবচেয়ে বড়ো হাসপাতালে চলে আসে। জান্নাত জানে এটা। ও শুধু স্তব্ধ হয়ে আছে আর আবিরের কান্ড দেখছে। জান্নাতের ভাইকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়৷ আবির আর জান্নাত বাইরে বসে আছে৷ জান্নাত দেখে ৫/৬ জন ডাক্তার আইসিইউতে প্রবেশ করে। আবিরের লোকেরা ওকে এসে বলে,
– স্যার আপনি যেমনটা বলেছিলেন, হাসপাতালে সবচেয়ে বড়ো বড়ো নামকরা ডাক্তাররা ম্যাডামের ভাইকে এখন দেখছেন।
– আচ্ছা। গুড জব৷ তোমরা এবার রেস্ট নেও।
– থ্যাঙ্কিউ স্যার।
জান্নাত হা করে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবির কোন কথা না বলে জান্নাতের কাছে গিয়ে বসে। ওর পিছনে হাত দিয়ে ওকে ওর সাথে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত নিঃশব্দে কাঁদছে। আবির সেটা জানে। ও জান্নাতের চোখ মুছি দিয়ে বলে,
– তোমার ভাইয়ের কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ ভরসা।
~ আপনি সত্যি অনেক ভালো। জানি না কিভাবে এই ঋণ আমি শোধ করবো?
– কেন ডিলের কথা ভুলে গিয়েছো?
~ না না মনে আছে।
– তাহলে সেটা মানলেই হবে৷ আর কিছু লাগবে না। সময় হলে অনেক কিছুই কেড়ে নিব আমি তোমার কাছ থেকে।
জান্নাত কিছু বলেনা। আবিরের স্পর্শ কিংবা এই অজানা সঙ্গ ওকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। আবির জান্নাতকে ছাড়ে নি৷ ওকে জড়িয়ে ধরেই বসে আছে। জান্নাত কখন যেন আবিরকে বুকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির পুরোটা সময় জেগে ছিল। একটুও নড়ে নি। যদি জান্নাতের ঘুম ভেঙে যায়। ও নিজেও জানে ও কি করছে? কেন করছে? ও শুধু জানে ওকে গুলা করতেই হবে৷ কোন একটা বিশেষ কারণে। এরপর টানা ৩/৪ ঘন্টা চলে যায়। সিনিয়র ডক্টর বের হয়ে আবিরের কাছে আসেন। আবির জান্নাতকে ডাক দিয়ে তুলে। জান্নাত হকচকিয়ে উঠে দেখে ও ঘুমিয়ে গিয়েছিল আবিরের বুকে। অসম্ভব লজ্জা পায় ও। আবির বলে,
– ডক্টর আসছে। দেখি কি বলে।
আবির জান্নাতকে রেখে উঠে ডক্টরের কাছে যায়৷ আর বলে,
– স্যার রোগীর অবস্থা কি?
এরমধ্যে জান্নাতও আবিরের পাশে এসে দাঁড়ায়। ডক্টর ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– সত্যি বলতে অবস্থা খুব খারাপ। খুব দ্রুত অপারেশন করতে হবে৷ হাতে বেশি সময় নেই।
ডক্টর এর কথা শুনে এদিকে জান্নাত অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আবির কোন মতে ওকে সামলানোর চেষ্টা করে আর বলে,
– জান্নাত কেঁদো না। এখনো দেরি হয় নি। ডক্টর আপনি অপারেশন শুরু করেন।
– করতাম কিন্তু ডক্টর মাইকেলকে লাগবে। একমাত্র তিনিই এই অপারেশন করতে পারবেন। কারণ রোগী অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল।
– তো বসে আছেন কেন খবর দেন তাকে।
– অনেক টাকা দিতে হবে তাকে আনতে গেলে।
– টাকা যত লাগে আমি দিব আপনি কালকে তাকে আসতে বলেন৷ লাগলে আমি কথা বলবো।
– তাহলে ভালো হয়। আসুন আমার সাথে।
জান্নাত কান্না করছে। আবির ওর চোখ মুছে দিয়ে বলে,
– আমি বলছি তো কিচ্ছু হবে না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
~ আমার ভাইটা…
আবির জান্নাতকে বসিয়ে ওর লোকদের ইশারা করে জান্নাতের খেয়াল রাখতে বলে। তারপর ও দ্রুত ডক্টর এর সাথে গিয়ে ডাক্তার মাইকেলের সাথে গিয়ে কথা বলে। অনেক টাকার বিনিময়ে সে আসতে রাজি হয়৷ আবির হাপ ছেড়ে বাঁচে৷ জান্নাতের কাছে দ্রুত ফিরে এসে বলে,
– ডক্টর মাইকেল কালকে আসছেন। কোন চিন্তা নেই৷ তোমার ভাইকে এখন অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কিছুটা হলেও ও এখন ভালো আছে। খুব শিগগিরই ওর সাথে কথা হবে তোমার।
জান্নাত খুব খুশি হয়ে বলে,
~ সত্যিই বলছেন আপনি?
– হ্যাঁ। সত্যি বলছি।
~ আজ আপনি না থাকলে আমাদের যে কি হতো।
আবির জান্নাতের একদম কাছে এসে বলে,
– চলো।
~ কোথায়?
– আমার বাসায়।
~ ভাইয়ের কাছে থাকি প্লিজ?
– এখানে আমার লোক আছে চিন্তা নেই৷ আর তুমি এখানে থাকলে আমাকে খুশি করবে কে? ডিলের কথা ভুলে গিয়েছো?
~ ওহ! ঠিক আছে চলুন৷
– হুম আসো৷
আবির জান্নাতের হাত ধরে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে গাড়ির কাছে আসে। জান্নাত গাড়িতে ঢুকতে নিলে আবির ওকে টান মেরে কাছে এনে দু’হাত দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– একদম চিন্তা করবে না। আমি থাকতে তোমার ভাইয়ের কিছু হবে না৷
জান্নাত আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আবির মুচকি হাসছে। জান্নাত লজ্জায় চোখ নামায়৷ আবির কানে কানে বলে,
– বাসায় চলো আমাদের কাজ তো এখনো বাকি।
বলেই জান্নাতকে গাড়িতে বসিয়ে আবিরও বসে পড়ে।তারপর রওনা হয় বাসার দিকে। জান্নাত মাথা নিচু করে আছে৷ এখন সকাল ৫ টার মতো বেজে গিয়েছে। আবির জান্নাতকে নিয়ে ওর বিজের বাসায় যাচ্ছে…
চলবে…