তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০৭

0
5883

তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০৭
লেখকঃ আবির খান

– না দোস্ত এখনো বলি নি। ও জানলে খুব কষ্ট পাবে৷ কিন্তু আমি ওকে কষ্টে রেখে যাবো না। আমি আরেকটা সিদ্ধান্ত নিছি দোস্ত। খুব বড়ো একটা সিদ্ধান্ত। তোকে পরে আমি জানাবো নে৷ জান্নাত শুনে ফেললে সমস্যা হবে৷ রাখি ভালো থাকিস৷

জান্নাত চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে খুব ভয়ে ভাবছে,

~ আবির ওর কাছে থেকে কি এমন লুকাচ্ছে যা ও জানলে ও অনেক কষ্ট পাবে? আর কি এমন সিদ্ধান্তই বা নিয়েছে আবির?

জান্নাতের খুব ভয় হচ্ছে। হঠাৎই আবির বারান্দা থেকে এসে দেখে জান্নাত অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আবির ঘাবড়ে গিয়ে বলে,

– তুমি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিলে লুকিয়ে লুকিয়ে?

জান্নাত যে অস্বীকার করবে তার কোন উপায় নেই। তাই ও মাথা নিচু করে ফেলে। আবির হাসতে হাসতে বলে,

– আচ্ছা কি শুনেছো তুমি?
~ সব৷
– ওহহ।
~ এগুলো কি বলতে ছিলেন আপনি ফোনে? আমাকে সব খুলে বলেন। আমার খুব ভয় করছে। প্লিজ বলেন।

আবির জান্নাতের কাছে এসে হাসি দিয়ে বলে,

– আরে শান্ত হও। আচ্ছা বলছি সব শোনো। আমাকে কিছু দিনের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে হতে পারে। তখন তো তোমাকে একা থাকতে হবে৷ তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাবো না। যাতে তুমি কষ্ট না পাও।
~ আল্লাহ এই কথা! উফফ! আমি কি ভয়টাই না পাইছিইইই। দেখেন আমার হার্টবিট কত বেড়ে গিয়েছে।
– কই কই দেখি।

আবির জান্নাতের বুকে কান পেতে ওর হার্টবিট শোনার চেষ্টা করে। জান্নাত খুব লজ্জা পায়৷ আবির বলে,

– আহরে আমার বউটা ভয় পেয়েছে। আসো তোমার ভয় দূর করে দি।

বলেই আবির ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। জান্নাতও ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। ও সত্যিই অনেক ভয় পেয়েছিল। এখন সত্যটা জেনে ও মনে শান্তি পায়৷ আবির বলে উঠে,

– আমাকে নিয়ে এত ভয় পেলে হবে। বোকা।
~ ভালবেসে ফেলেছি যে তাই ভয় পাই। আচ্ছা আপনি অস্ট্রেলিয়া না গেলে কোন ক্ষতি হবে না?
– না না হবে না। সমস্যা নেই আমি এখানে বসেই কাজ করে নিব৷ আর যদি যাই তোমাকে নিয়েই যাবো। আমাদের হানিমুনটাও তাহলে হয়ে যাবে৷ হাহা। (জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল)

জান্নাত লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লুকায়। ও কিছু একটা বলতে যাবে তখনই আবিরের ফোন আসে। আবির জান্নাতকে ছেড়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে হাসপাতাল থেকে কল এসেছে। আবির বলে,

– জান্নাত হাসপাতাল থেকে কল এসেছে।

বলেই আবির ফোন রিসিভ করে। আর জান্নাত অজানা ভয়ে আঁতকে ওঠে। আবির ফোন রিসিভ করতেই অন্যপাশ থেকে,

– হ্যালো স্যার।
– হ্যাঁ রনি বলো।
– স্যার, ম্যামের ভাইয়ের মাত্র জ্ঞান ফিরেছে। আপনারা কি আসবেন?
– কি! সত্যি? আলহামদুলিল্লাহ। হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা এখনিই আসছি।

জান্নাতের হৃদস্পন্দন বেড়েই যাচ্ছে৷ আবিরকে এভাবে খুশি হতে দেখে জান্নাত আরও অস্থির হয়ে যাচ্ছে৷ আবির ফোন রেখে জান্নাতকে বলে,

– অনেক বড়ো একটা খুশির খবর আছে।
~ কি কি প্লিজ বলেন।(লাফাতে লাফাতে)
– বলবো। কিন্তু আমাকে যে কিছু দিতে হবে?
~ এ! কি দিব তাড়াতাড়ি বলেন?

আবির ওর ঠোঁটটা দেখিয়ে জান্নাতকে ইশারা করে। জান্নাত খুব লজ্জা পায়। আবির হাসি দিয়ে বলে,

– দেও দেও। নয়তো বলবো না৷
~ আচ্ছা দিচ্ছি। তবে চোখ বন্ধ করেন৷ আমার যে অনেক লজ্জা করে।
– আচ্ছা এই যে করেছি।

আবির চোখ বন্ধ করলে জান্নাত ওকে একটা আদর দিয়ে দেয়৷ তারপর বলে,

~ নেন এখন বলেন কি সুখবর?
– এহ! মাত্র একটা! আরও অনেকগুলা চাই।
~ রাতে মন ভরে দিব৷ এখন বলেন না প্লিজ।
– সত্যিইইই তো?
~ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। তিন সত্যি। এবার বলেন ত প্লিজজজ…
– আচ্ছা বলছিইইই…সুখবরটা হলো তোমার ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে। আর এখন আমরা ওকে দেখতে যাবো চলো।

জান্নাত মুহূর্তেই অসম্ভব খুশি হয়ে যায়৷ ও খুশিতে আত্নহারা হয়ে বলে,

~ কি! আপনি সত্যি বলছেন? আমার ভাইয়ের জ্ঞান এসেছে? ও আবার আমার সাথে কথা বলবে?
– হ্যাঁ। চলো এখন।
~ আমি দুই মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
– আচ্ছা যাও।

এরপর জান্নাত আর আবির রেডি হয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে যায়। জান্নাতের ভাইয়কে আইসিইউ থেকে ভি আই পি কেবিনে শিফট করে দিয়েছে। ওরা সেখানেই চলে যায়। জান্নাত আর আবির আস্তে করে কেবিনে ঢুকে। দেখে একজন নার্স বসে আছে। ওদের দেখে সালাম দেয়। আবির সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

– কি অবস্থা পেসেন্ট এর?
~ জি অনেকটা ভালো। জ্ঞান এসেছে।

জান্নাত আস্তে আস্তে ওর ভাইয়ের কাছে গিয়ে দেখে ও চোখ বন্ধ করে আছে। জান্নাত ওর ভাই মানে পলাশের মাথায় হাত রাখতেই ও চোখ মেলে তাকায়। মুখে অক্সিজেন লাগানো পলাশের। জান্নাত ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয়৷ আর পলাশ এতদিন পর ওর বোনকে দেখে ও চোখের পানি ছেড়ে দেয়৷ জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে পলাশকে বলে,

~ কেমন আছিস ভাই আমার? এখন আর কোন ব্যথা আছে?

পলাশ অশ্রুসিক্ত নয়নে ইশারায় না বলে। জান্নাত হেসে বলে,

~ খুব চিন্তায় ছিলাম ভাই। তোকে সুস্থ হতে দেখে এখন শান্তি পাচ্ছি। দাঁড়া তোকে একজনের সাথে পরিচিত করিয়ে দি। এইই এদিকে আসেন।

আবির জান্নাতের কাছে যায়। জান্নাত আবিরকে দেখিয়ে পলাশকে বলে,

~ তোর দুলাভাই। উনিই আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন, তোর চিকিৎসার সব খরচ দিয়েছে। শুধু তাই না তোর অসহায় বোনটাকে বিয়ে করে একদম নিজের করে নিয়েছেন। উনি অনেক অনেক বেশি ভালো। তোর মতো আমার খেয়াল রাখে।
– আহ! এসব ওকে বলতে হবে না। এখন ভালো লাগছে তো? কোন সমস্যা হচ্ছে?

পলাশ হাসি দিয়ে ইশারায় না বলে। আবিরও হাসি দিয়ে বলে,

– তুমি কোন চিন্তা করো না। তোমার এবং তোমার বোনের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তা পালন করবো ইনশাআল্লাহ। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো। আমরা সবাই একসাথে ঘুরতে যাবো।

পলাশ খুব খুশি হয় নিজের বোনকে এত ভালো দেখে। আর মনের মতো একটা দুলাভাইকে দেখেও। এরপর ওরা আর কিছুক্ষণ পলাশের কাছে থেকে চলে আসে। কারণ ওকে ঘুমাতে হবে ঔষধ খেয়ে৷ জান্নাত ভাইকে সুস্থ হতে দেখে মনের মধ্যে সত্যিকারের শান্তি অনুভব করে। ও বাইরে এসে আবিরের হাত ধরে বলে,

– সত্যি আপনার মতো কেউ হয় না। আজ আপনি না থাকলে আমরা দুজন হয়তো মরেই যেতাম।
– আমি কিছু না জান্নাত। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তোমার আর আমার ভাগ্য একসাথে লিখা ছিল বলেই আমি এত কিছু করেছি।
~ তাও আপনি ভালো বলেই এত কিছু করেছেন। সবাই ত সব কিছু করে না। আপনি করেছেন। তাই অনেক অনেক বেশি ভালবাসি আপনাকে।
– আমিও বউজান। এবার মন খারাপ না করে বলো, কোথায় যাবে? চলো আজ আমার পছন্দের একটা রেস্টুরেন্টে যাই৷ এখন তো দুপুর হয়ে গিয়েছে। লাঞ্চ করে ফেললাম।
~ আচ্ছা চলেন। (খুশি হয়ে)

জান্নাত আর আবির গাড়ি নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে যায়। আধা ঘণ্টা ড্রাইভ করে ঢাকার জ্যাম ঠেলে সবচেয়ে বড়ো এবং ভি আই পি রেস্টুরেন্টে আবির ওকে নিয়ে যায়৷ আবিরকে দেখে সবাই সালাম দেয়৷ ওর জন্য স্পেশাল একটা জায়গা রেডি করে দেয়৷ জান্নাত তো হা করে তাকিয়ে আছে। ওর জীবনে ও এমন রেস্টুরেন্ট দেখে নি। এত সুন্দর আর ঝাকঝমক। আবির বলে,

– আমি আগে মাঝে মাঝেই এখানে আসতাম আমার ফ্রেন্ডদের সাথে। এখন কাজের চাপে আর আসা হয় না। আজ অনেক দিন পর তোমাকে নিয়ে আসলাম। এখানের খাবার টপ ক্লাস। তুমি খেলে শুধু খেতেই চাইবে।
~ হুম আমারও তাই মনে হচ্ছে। অনেক ধনী ব্যক্তিরা এখানে আসেন তাই না? (আশে পাশে তাকিয়ে)
– হুম। তুমি চিন্তা করো। নিজের মতো করে ইঞ্জয় করো। এখানে কেউ কিছু বলার ক্ষমতা রাখে না আমার উপর।
~ যাহ! কি যে বলেন না৷ আমি ঠিকই আছি।
– আচ্ছা তাহলে খাবার অর্ডার দি কি বলো। ক্ষুধা লেগেছে অনেক।
~ হুম দিন।

আবির বেল চাপ দিতেই ওয়েটার এসে উপস্থিত। ও জান্নাতের জন্য বেস্ট বেস্ট আইটেম অর্ডার করে। জান্নাত না করলেও আবির শোনে না। অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে যায়৷ আবির হাসি দিয়ে জান্নাতকে বলে,

– তোমাকে খুব নার্ভাস লাগছে। কারণ কি?
~ কত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে আশেপাশে বসে আছে। সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি সামান্য একটা মেয়ে আপনার সাথে বসে খাবো। অনেকটা বেমানান লাগছে।
– একটা মাইর দিয়ে একদম মেরে ফেলবো। তুমি সামান্য কই? তুমি এখন আবির হাসানের একমাত্র বউ। আর ওরা যতই সুন্দর হোক ওদের চেয়ে তুমি অনেক গুণ বেশি সুন্দরী। কারণ কি জানো? কারণ তোমার মনটা অনেক সুন্দর। আর মজার কথা হলো, ওরা মেকাপ দিয়ে এত সুন্দর হইছে। আর আমার বউটা তো বিনা মেকাপেই অনেক সুন্দর। হাহা।

জান্নাত হেসে দেয় আবিরের কথা শুনে। আবির পারেও বটে৷ জান্নাত হাজার চাইলেও আবিরের কাছে ওকে ছোট করতে পারে না। আবির ঠিকই বুঝিয়ে দেয় জান্নাত ওর কাছে কতটা মূল্যবান৷ জান্নাত হাসি দিয়ে আবিরকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই একটা সুন্দরী, রিচ, দামী ড্রেস পরা মেয়ে ওদের মাঝে এন্ট্রি মারে। আর বলে,

~ আরে আবির! কেমন আছো?

জান্নাত মেয়েটাকে দেখে সাথে সাথে আবিরের দিকে তাকায়। ও দেখে আবির অনেক অবাক হয়েছে। আবির জান্নাতের দিকে একবার তাকিয়ে মেয়েটাকে অবাক স্বরে বলে,

– নিশিতা তুমি! বাংলাদেশে কবে আসলে?

নিশিতা আবিরের পাশে গা ঘেষে বসে বলে,

~ এই তো এক সপ্তাহ হলো। তা তুমি এখানে? ও…গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছো?

জান্নাত ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর যে কি পরিমাণ রাগ আর খারাপ লাগছে তা বলার বাইরে। জান্নাত ভেবেছে আবির নিশিতাকে বলবে ও ওর স্ত্রী। কিন্তু আবির জান্নাতকে অবাক করে দিয়ে বলে,

– না না ও আমার গার্লফ্রেন্ড না। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড। আর কিছু না।
~ ও জাস্ট ফ্রেন্ড? ভালো তো। আমাকে ছাড়া বেশ ভালোই আছো দেখা যাচ্ছে। কতগুলো জাস্ট ফ্রেন্ড তোমার আবির? আমিও হতে চাই।
– নিশিতা ফান করো না৷ তুমি অন্য কোথাও যাও৷
~ হাউ রুড আবির, আগে তো এমন বলতে না৷ আমাকে নিয়ে কত ঘুরতে, কত রেস্টুরেন্টে আমরা টাইম স্পেন্ড করেছি। সব ভুলে গিয়েছো?
– নিশিতা আমাকে রাগীও না, খারাপ হবে কিন্তু। সবাই দেখছে অন্যদিকে যাও।
~ আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি। তুমি থাকো তোমার জাস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে। বাই।

নিশিতা উঠে চলে যায়। আবির টিস্যু দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছে ফেলে। তারপর ভয়ে ভয়ে জান্নাতের দিকে তাকায়। আবির দেখে, জান্নাতের পুরো মুখে ঘোর অমাবস্যা নেমে এসেছে। ও মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। আবির কিছু বলতে যাবে, ওমনি জান্নাত বলে উঠে,

~ আমি আপনার জাস্ট ফ্রেন্ড?
– প্লিজ রাগ করো না আগে আমার কথা শুনো।
~ শুনছি বলুন।
– আমি যদি ওকে বলতাম আমি বিয়ে করছি তাহলে মিডিয়ায় ঝড় উঠতো কাল। কারণ নিশিতা নিশ্চিত সবাইকে বলে দিত। আমি চাইনা এখন কেউ জানুক। তোমার ভাইটা সুস্থ হলে আমার ইচ্ছা আছে আমরা অফিশিয়ালি আবার সবার সামনে বিয়ে করবো।
~ সবই বুঝলাম, কিন্তু মেয়েটা কে? আপনার অনেক কাছের মনে হলো।
– আসলে একটা বিজনেস ট্রিপে গিয়ে আমাদের পরিচয় হয়। বিজনেস এর স্বার্থে ওর সাথে কয়েকদিন ঘুরাঘুরি কথা হয়েছিল। তারপর ও যখন সীমালঙ্ঘন করতে চেয়েছিল আমার সাথে আমি তখনই ওর সাথে সব কন্টাক অফ করে দি। এরপর ও দেশের বাইরে চলে যায়। আর আমি আমার লাইফ নিয়ে বিজি। এই আর কিছু না। বিশ্বাস করো।
~ ওর সাথে খারাপ কিছু করেন নি তো?
– আরে না না। ছিঃ কি বলো তুমি। আমার লাইফের প্রথম এবং শেষ নারী তুমি।
~ সত্যি তো? (অসহায় কণ্ঠে)
– হাজার না কোটি কোটি সত্যি।
~ আচ্ছা বিশ্বাস করলাম।
– তুমি প্লিজ ওর এভাবে কথা বলায় রাগ করো না। ও এমনই। উলটা পালটা বলে। খারাপ কাজ করে করে বিজনেস গ্রো করে। ও ভালো মেয়ে না।
~ বাদ দিন৷
– আচ্ছা।

ওদের কথা শেষ হলে ওয়েটার খাবার নিয়ে আসে। সব রেখে গেলে আবির জান্নাতকে বলে,

– তুমি একটু বসো আমি ওয়াশরুম থেকে আসি।
~ তাড়াতাড়ি আসবেন।
– ওকে।

আবির ওয়াশরুমে চলে যায়। নিশিতার হঠাৎ আগমনে আবির অনেকটা ঘাবড়ে যায়। তাই একটু ফ্রেশ হতে ও ওয়াশরুমে এসেছে। আবির ফ্রেশ হয়ে যেই বের হয় দেখে নিশিতা দাঁড়িয়ে আছে। মুহূর্তেই আবিরের কপালের রগ দুটো খাড়া হয়ে যায়। ও নিশিতাকে টেনে আড়ালে নিয়ে গিয়ে ওর গালটা চেপে ধরে বলে,

– তুই যদি আমার লাইফটায় আবার কোন ঝামেলা করেছিস তোকে কিন্তু আমি মেরেই ফেলবো। আমি কতটা ডেঞ্জারাস তুই কিন্তু জানিস।
~ ভয় নাই আমি কিছুই করবো না।
– আমার লাইফটা আমি সাজিয়েছি নিশিতা। আমি কোন প্রকার ঝামেলা চাই না।
~ আবির একটা রাত শুধু আমাকে দেও। দিলে এমন কি হয়?
– ছিঃ লজ্জা করে না এভাবে বলতে? এর জন্যই তো তোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি।
~ আমি তো তোমাকে ভালবেসেছিলাম।
– এই নোংরা ভালবাসা আমি চাইনি। তোর সব কিছুর খবর আমার কাছে আছে। তুই কার সাথে কি করিস আমি সব জানি। তুই সবসময় আমাকে ফাসাতে চেয়েছিলি, তুই আমাকে না আমার টাকাকে ভালবাসিস। আর যদি তুই আমাদের মাঝে কখনো এসেছিস সত্যি বলছি খুব খারাপ হবে।

আবির নিশিতাকে রেখে জান্নাতের কাছে যায়। কিন্তু একি! টেবিল ফাঁকা। জান্নাত নেই৷ আবির ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করে,

– এখানে যে মেয়েটা বসেছিল আমার সাথে সে কই?
~ স্যার ম্যামকে দেখলাম ওয়াশরুমের দিকে থেকে কান্না করতে করতে এসে চলে গেলেন।

আবির স্তব্ধ হয়ে যায়। আর রাগী ভাবে ওয়েটারকে বলে,

– আপনারা থামান নি কেন তাকে?
– স্যার আপনার সাথে এসেছিল তাই যেতে দিয়েছি কিছু বলিনি। সরি স্যার।
– সিট! এখন কই খুঁজবো আমি ওকে? দ্রুত বিল নিয়ে আসেন। (অস্থির হয়ে)
– ওকে স্যার।

আবিরের মাথা পুরো খারাপ হয়ে গিয়েছে। জান্নাত ওকে নিশ্চিত নিশিতার সাথে দেখেছে। এখন কোথায় খুঁজবে জান্নাতকে আবির! ওর কাছে তো টাকা ফোন কিছুই নেই। কোথায় খুঁজবে আবির? আবিরের খুব চিন্তা হচ্ছে। ও দ্রুত বিল দিয়ে জান্নাতকে খুঁজতে বের হয়। আবির কিচ্ছু জানে না জান্নাত কোথায় যাবে৷….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here