তুমি যদি চাও,পর্ব-১৬,১৭ ( শেষ পর্ব )

0
5668

তুমি যদি চাও,পর্ব-১৬,১৭ ( শেষ পর্ব )
রাজেশ্বরী দাস ( রাজী )
পর্ব-১৬

সকালে সূর্যের হালকা কিরণ চোখে এসে পড়ায় আমার ঘুম ভাঙলো , আমি পিটপিট করে চোখ মেলে পাশে তাকাতে বুঝলাম উনি আমার পাশে নেই কিন্তু রাতে তো আমি ওনার বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়েছিলাম তাহলে উনি এখন কোথায় গেলেন ? নিজ মনে এইসব ভাবতে ভাবতেই আমি ধীরে ধীরে শোয়া থেকে দিয়ে উঠে বসলাম , বুঝতে বেশি দেরি হল না যে উনি ঘরের কোথাও নেই , হটাৎ কোন এক অজানা বিপদের আশঙ্খে মনটা ধক করে উঠল আমি উঠে দাঁড়ালাম । তখনই ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে সেদিকে তাকালাম আমি । উনি আমাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন তারপর এগিয়ে এসে তার হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা পাশে টেবিলে এবং আমার কাছে এসে মুচকি হেঁসে বললেন….” কী হয়েছে ? ”

আমি কোন উত্তর দিলাম না দেখে উনি আবারও কিছু বলবেন তার আগেই আমি ওনাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলাম । উনি কিছুটা অবাক হলেন , তবে পরমুহুর্তেই বুঝলেন কারণটা তাই কিছুসময় চুপ থাকলেন । উনি আমার মাথায় হালকা হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন….” ভয় পেয়েছো ? যায়নি তো আমি কোথাও , কিছু হয়নি তো আমি ঠিক আছি একদম । সঙ্গীপাখি ঈশ্বর আছেন তো আমাদের সাথে ভয় পেও না একদম , কিছু হবেনা । ”

আমি আবারও কোন উত্তর দিলাম না , উনি আমার মুখ তার সামনে আনলেন তারপর দুই গালে হাত রেখে কপালে নিজের ওষ্ঠ হালকাভাবে ছোঁয়ালেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে বললেন….” শুনো তুমি ফ্রেশ হয়ে খাবারটা খেয়ে নাও কেমন ? আমি এখন একটু বাইরে বেরোবো । নিজের খেয়াল রেখো যদিও সিকিউরিটি রয়েছে তাই সমস্যা তেমন হবেনা । সারাদিন ঘরে একা বসে হইতো বিরক্ত হবে তুমি , তাই চাইলে ফ্ল্যাটের ভেতরটা ঘুরে দেখতে পারো সমস্যা নেই , তবে হ্যাঁ ফ্ল্যাটের মধ্যেই থাকবে একা একা বাইরে কোথাও যাবে না । ”

আমি একটু মন খারাপ করে উদাস চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম , উনি কিছুক্ষন থেমে আবারও বললেন….” প্রয়োজন না হলে আমি তোমাকে একা ফেলে কোথাও যেতাম না , কিন্তু কিছু করার নেই যেতেই হবে । তবে চিন্তা কোরো না কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবো । মন খারাপ কোরো না কেমন ? ”

আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম আর মাথা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালাম । উনি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন , আমি নিষ্পলকভাবে কিছুমুহূর্ত ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম তারপর ওয়াড্রপ থেকে টাওয়েল আর বাকিসব জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম ।
.
.
.

চেয়ারে মুখ হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে তিনজন , তাদের অবস্থা ইতিমধ্যেই করুন তিনজনের চোখেই ভয়ের ছাপ । তাদের তিনজনের সামনে হাতে বন্ধুকে নিয়ে মাথা নামিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে শুভ্রাংশু । শুভ্রাংশু কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রেখে চোখ মেলে সামনে ওদের দিকে তাকালো তারপর পাশে তাকিয়ে সৌম্যকে কিছু একটা ইশারা করলো , সৌম্য সেটা বুঝে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোককে ওদের মুখগুলো খুলে দিতে বলল । লোকগুলো ওই তিনজনের মুখ খুলে দিতেই ওরা অনুনয়ের সুরে বলতে লাগলো….” আমরা সত্যিই কিছু জানি না , প্লীজ আমাদের ছেরে দিন । ”

শুভ্রাংশু কিছুসময় চুপ থেকে শান্ত কণ্ঠে বলল….” উম.. প্রায় মাসখানেক সময় থেকে তোরা আমাকে ফলো করছিস , আর তোরা ভাবলি কীভাবে যে আমি টেরও পাবো না । আমার জানের দিকে হাত বাড়াতে চেয়েছিলি তাই না ?? তার জন্য ফল ভোগ তো তোদের করতেই হবে । ”

বলে শুভ্রাংশু বাঁকা হাসলো , ওরা আবারও ভয় পেয়ে চিল্লিয়ে বলল…” প্লীজ আমাদের ক্ষমা করে দিন , আর এই ভুল হবেনা । ”

শুভ্রাংশু উঠে দাঁড়িয়ে জোরকণ্ঠে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো…” হাজারো মেয়ের জীবন নষ্ট , খুন , ডাকাতি , ড্রাগস পাচার কোন কিছুই বাকি পরেনি তোদের করতে আর তোরা বলছিস তোদের ক্ষমা করবো ? উহু না , আরে তোদের মত নর্দমার কীটদের কোনো ক্ষমা নেই আছে শুধু শাস্তি , বুঝেছিস ? আর সেই শাস্তি তোরা ভোগ করবিই । ”

শুভ্রাংশু এটা বলে ঘুরে সামনের দিকে এক পা বাড়ালো তখনই সৌম্য বলে উঠলো…” আরে স্যার ওদের সাথে কী করবো ?? ”

শুভ্রাংশু কথাটা শুনে রাগী দৃষ্টিতে সৌম্যর দিকে তাকালো , সৌম্য কিছুটা ভরকে গিয়ে মেকি হাসার চেষ্টা করে বলল….” হেহে.. না না বলতে হবে না থাক স্যার বুঝে গেছি । ”

শুভ্রাংশু আর কথা না বাড়িয়ে সৌম্যর দিক থেকে চোখ সরিয়ে দ্রুতপায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল ।
.
.

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি , আজ আবারও আকাশে ঘন কালো মেঘ করেছে চারদিকে হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে । হালকা শীতল আবহাওয়া , হইতো এখনই বৃষ্টি পরবে ।

ভাবতে না ভাবতেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি , আমি চোখ বুজে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম , বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমার চোখে মুখে এসে পড়ছে । এরই মাঝে হটাৎ অনুভব করলাম কেও এসে পেছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো আমি চোখ মেলে তাকালাম , বুঝতে যদিও বেশি দেরি হয়নি এই ব্যক্তি ঠিক কে । আমি ঘুরে ওনার দিকে তাকালাম , উনি হালকা টান দিয়ে আমাকে ওনার একেবারে কাছে টেনে নিলেন । উনি আমার দিকে চেয়ে আছেন নিষ্পলকভাবে , তার গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আমার মুখের ওপর যার ফলস্বরূপ আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি , বৃষ্টির জলের ফোঁটাগুলো এখন আমাদের দুজনকেই এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে অত্যন্ত ধীর এবং শীতল কণ্ঠে বলে উঠলেন….” সঙ্গীপাখি তুমি কি জানো এই মুহুর্তে এই বৃষ্টির জলের ফোঁটাগুলোকেও বড্ড হিংসে হচ্ছে আমার । কেমন দেখো তোমার কপাল এবং গাল বেয়ে তোমার ঐ ওষ্ঠ স্পর্শ করছে বারম্বার । কেন করবে ? সেই অধিকার তো শুধু আমার আছে । ”

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম , উনি মাদক হাসলেন আর আমার কপালে লেপ্টে থাকা ছোটো চুলগুলোকে কানের পাশে গুঁজে দিলেন । আমি মাথা নুইয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে রইলাম উনি ধীরে ধীরে নিজের মুখটা আমার মুখের দিকে এগিয়ে আনলেন , আমি চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলাম , উনি আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন….” ভয় পেও না এখন এইমুহুর্তে আমি কিছু করছি না । ভিজে গেছো তো , যাও গিয়ে চেঞ্জ করে নাও আর অর্ঘ্য আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে ওর কিছু বলার আছে আমাদেরকে , যদিও ঠিক বলা না দেখা করানোর আছে । ”

উনি এটা বলে আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালেন আমি চোখ মেলে ওনার দিকে তাকালাম , উনি এবার মুখে দুষ্টু একটা হাঁসি টেনে আবারও বললেন….” আরে এভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না আমার মায়াবতী , এখন কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না । তখন কিছু করে ফেললে পরে কিন্তু আমাকে দোষ দেবে না । ”

আমি কথাটা শুনে চোখদুটো বড় বড় করে ওনার দিকে তাকালাম , উনি ঘাড়ের এক সাইডে হাত দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাঁসলেন তারপর আমার দিকে তাকালেন । আমি মুখ ভেংচি দিয়ে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলাম । উনি বুঝলেন আমি লজ্জা পেয়েছি তাই সেটা দেখে হুহা করে হেসে উঠলেন ।
.
.

চেঞ্জ করে রুমে আসতেই দেখলাম উনি দরজা ঠেলে রুমে আসছেন , উনিও ইতিমধ্যে চেঞ্জ করে এসেছেন । উনি আমাকে দেখতেই বললেন….” এসো অর্ঘ্যরা এইমাত্র এসেছে , বাইরে ড্রয়িং রুমে বসে আছে ওরা । ”

আমি অবাক হয়ে বললাম….” আচ্ছা আসছি কিন্তু কার সাথে দেখা করাবেন অর্ঘ্যদা ? ”

” চলো তো আগে , গেলেই সবটা জানতে পারবে । ”

উনি আমার এক হাত ধরে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন , সেখানে যেতেই দেখতে পেলাম অর্ঘ্যদা এবং একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মেয়েটা দেখতে বেশ মিষ্টি । কিন্তু মেয়েটাকে আগে কখনও দেখেছি বলে মনে হচ্ছেনা আমার । আমি ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন….” ও হচ্ছে অর্ঘ্যর ওয়াইফ , পূজা । কিছুক্ষণ আগেই ওদের বিয়ে হয়েছে , কোর্ট ম্যারেজ । ”

আমি তার কথা শুনে অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম ।

অর্ঘ্যদা বললেন…” পূজা আগে কলেজে আমাদের ওয়ান ইয়ারের জুনিয়র ছিল ও আমাকে পছন্দ করতো তখন থেকেই , ও সেই কথা আগেও জানিয়েছিল আমাকে কিন্তু আমি তখন না করে দিয়েছিলাম তাই ও জোর করেনি । আজকে সকালে মিটিংয়ে একটা ক্যাফেতে গিয়ে ওর সাথে আবার আমার দেখা হয় । ”

পূজা বলে উঠলো…” তখন কিছু কথার পর আমি আবারও অর্ঘ্যকে সেই একই প্রস্তাব দিলে ও আমাকে ঘুরিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে । আমি প্রথমে অবাক হয়েছিলাম , তবে শেষে এই সুযোগ আর হাতছাড়া করতে চায়নি তাই রাজি হয়ে গেলাম । বাড়ির সবাইকে জানানোতে তারাও অবাক হয়েছে কিন্তু অবশেষে রাজি হয়েছে । ”

শুভ্রাংশু আবারও বলল…” হুমম আর তাই কিছুক্ষন আগে কোর্ট ম্যারেজ সেরে এসেছে দুজনে । ”

অর্ঘ্যদা মুচকি হেঁসে বললেন….” বলেছিলাম না একদিন হটাৎ করে সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনে চমকে দেবো , দেখ আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি । ”

বলে অর্ঘ্যদা আর শুভ্রাংশুদা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন , পূজাদি আমার কাছে এসে আমার থুতনিতে হাত রেখে বললেন….” সঙ্গীতা… অর্ঘ্যর মুখে নাম শুনেছি তোমাদের সবার , ও আমাকে সবই বলেছে প্রায় । তুমি সত্যিই খুব মিষ্টি একটা মেয়ে ।”

আমি মৃদু হাঁসলাম আর বললাম….” তুমিও খুব মিষ্টি পূজাদি , আচ্ছা তোমাকে বৌদি বলবো নাকি দি কোনটা ? ”

” তুমি আমাকে দিদি বলেই ডাকো বেশি মিষ্টি লাগছে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে । ”

আমি আর পূজাদি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাঁসলাম তারপর উনি এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন আর পূজাদি অর্ঘ্যদার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো । উনি আমাকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলেন , আমি ওনার দিকে তাকালাম আর তারপর আবার আমরা দুজন সামনে তাকালাম । অন্যদিকে , অর্ঘ্যদা পূজাদিকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলেন তারপর পূজাদি ওনার দিকে তাকালে অর্ঘ্যদা মিষ্টি করে মুচকি হাসলেন ।

কিছু কথোপকথন আর খাওয়া দাওয়া শেষ করে পূজাদি আর অর্ঘ্যদা চলে গেলেন নিজেদের বাড়ি ।
.
.
.
.
.

রাতে উনি বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছিলেন আর আমি চুপচাপ এক গালে হাত দিয়ে বসে থেকে একমনে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম , ইশ…!! এই সুন্দর ছেলেটা শুধুই আমার । ভাবতেই মনের মাঝে কেমন যেন একটা আলাদা অনুভূতি হলো , তাই নিজের মনেই মুচকি হাঁসলাম আমি । উনি আমার দিকে সরুচোখে তাকিয়ে আছেন , আমাকে এভাবে হাঁসতে দেখে এবার উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন….” কী ব্যাপার বলো তো ? ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন ? ”

আমি ভাব নিয়ে বললাম….” আমার বর আমি তাকাবো নাকি আদর করবো সেটা আমার ব্যাপার । ”

উনি চুপচাপ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা ঝাকিয়ে হাঁসলেন , তারপর উঠে দাঁড়ালেন আমি তাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে কিছুটা ভরকে গেলাম । উনি আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই কোলে তুলে নিলেন , আমি চোখদুটো বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম…..” এটা কী করছেন আপনি ? আরে নামান আমাকে….”

” উফ..!! চুপ থাকো তো একটু একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি তো তোমায় । চুপ থাকো নাহলে কিন্তু ভালো হবেনা । ”

” কিন্তু……”

” চুপ । ”

আমি কিছু বললাম না উনি আমাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে একতলায় নেমে এলেন , তারপর গাড়ির কাছে এনে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন । তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলেন , আর গাড়ি চালু করলেন । আমি আবারও বললাম….” আমরা যাচ্ছিটা কোথায় ? ”

” গেলেই বুঝতে পারবে । ”

বুঝলাম জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই তাই আমি আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম ।

কিছুসময় পর উনি একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামালেন , নিজে নেমে গিয়ে আমার পাশের গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে হাত ধরে আমাকে নামালেন । আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম জায়গাটা খুব সুন্দর সামনে বেশ বড় একটা মন্দির আছে আর আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে মন্দিরের পেছনে কিছুটা খোলামেলা জায়গা ও পাশে গঙ্গা নদী ।

আমি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম , উনি আমার এক হাত ধরে বললেন….” চলো । ”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম , আমরা দুজন মন্দিরে গিয়ে প্রণাম করে সেই গঙ্গার ধারে এসে দাঁড়ালাম । জায়গাটা নিঃসন্দেহে সুন্দর , মন্দিরে জনগণের কোলাহল এবং বেশ ভিড় থাকলেও , গঙ্গার পাড়ের এই দিকটা কিছুটা নির্জন । মন্দির থেকে এই জায়গাটা কিছুটা দূরেও অবশ্য । আমরা দুজন অনেকক্ষণ সময় সামনে নদীর দিকে তাকিয়ে রইলাম , এরপর হটাৎই উনি আমার এক হাত ধরে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলেন এবং আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন….” ভালোবাসি সঙ্গীপাখি , আই লাভ ইউ । ”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম , আর দুই হাত দিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম ঠিক তখনই সেখানে কিছুজন লোক উপস্থিত হলেন । আমরা দুজন কিছুটা চমকে হয়ে সেদিকে তাকালাম , সামনে কিছুজন দাঁড়িয়ে আছে , সকলে কালো রঙের পোশাক পরে আছে আর তাদের মাঝে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে । তার পরনে কালো লম্বা কোর্ট , প্যান্ট , চোখে চশমা আর মুখে শয়তানি হাঁসি । আমি মুখ তুলে অংশুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ওই লোকটির দিকেই তাকিয়ে আছেন, উনি ওই লোকটির দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন….” মিস্টার এস. আর..

চলবে ,……

তুমি যদি চাও
রাজেশ্বরী দাস ( রাজী )
পর্ব – ১৭ ( শেষ পর্ব )

আমি মুখ তুলে অংশুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ওই লোকটির দিকেই তাকিয়ে আছেন, উনি ওই লোকটির দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন….” মিস্টার এস. আর… ”

ওই লোকটি একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল….” ইশ…! কী সুন্দর তোরা মিয়া বিবি দুজন একসাথে সময় কাটাচ্ছিলিস মাঝে এসে ডিস্টার্ব করে ফেললাম তাই না ? ”

মুহূর্তেই অংশুর চেহারায় রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো , তার চোখ রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে । অন্যদিকে মিস্টার এস.আর আবারও বলল….” তুই তাহলে সত্যিই বেচেঁ আছিস , ঠিক আছে কোন ব্যাপার না সেদিন যে কাজটা সম্পূর্ন হয়নি সেটা না হয় আজ হবে । আর শুধু তুই না তোর সাথে তোর বউও…”

মিস্টার এস.আর বাঁকা হাঁসলো , ও নিজের লোককে ইশারা করতেই তাদের মধ্যে দুজন এগিয়ে গেল শুভ্রাংশু আর সঙ্গীতার দিকে । ওই লোকদুটো ওদের কাছে পৌঁছনোর আগের মুহূর্তেই শুভ্রাংশু এগিয়ে গিয়ে একজনের নাক বরাবর দিল জোড়ে একটা ঘুষি সে কিছুটা চাপা আর্তনাদ করে দূরে ছিটকে পড়লো , আর আরেকজন শুভ্রাংশুর দিকে ছুরি দিয়ে হামলা করতে এলো , শুভ্রাংশুর হাতে ছুরিটা এসে লাগার আগেই শুভ্রাংশু সরে গিয়ে ওর হাত ধরে ফেলল তারপর তার হাত দুমড়ে পিঠের সাথে ঠেকালো যার ফলে তার হাত থেকে ছুরিটা পড়ে গেল , তারপর শুভ্রাংশু তার কোমর বরাবর দিল একটা কিক সে মাটিতে পড়ে আর্তনাদ করে গড়াগড়ি খেতে লাগলো , শুভ্রাংশু এবার নিজের শার্টটা একটু উঁচু করে তার নীচে লুকিয়ে রাখা বন্ধুকটা বের করে হাতে নিল । বাকি আরো কিছু লোক ওর দিকে এগিয়ে এলে ও তাদের দুজনের পা বরাবর গুলি করলো , আর একজনের হাত বরাবর । একজন ছুরি হাতে সঙ্গীতার কাছে এসে ওকে আঘাত করতে গেলে , শুভ্রাংশু সাথে সাথে সঙ্গীতাকে সরিয়ে নিলো তবে শুভ্রাংশুর পিঠের এক পাশে ছুরি লেগে কিছুটা অংশ কেটে যায় , কিন্তু শুভ্রাংশুর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । ও ঘুরে সেই লোকটার হাত ধরে মুচড়ে পেট বরাবর একটা জোরে কিক মারলো , ফল স্বরূপ লোকটা হালকা আর্তনাদ করে দূরে ছিটকে পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো । তখনই শুভ্রাংশুর চোখ গেল এস.আর এর দিকে ও বন্দুক হাতে নিয়ে এদিকেই তাক করে আছে , শুভ্রাংশু সাথে সাথে সঙ্গীতাকে নিয়ে সেখান থেকে সরে গেল গুলিটা তাদের পাশ ঘেঁষে চলে গেল আর শুভ্রাংশু ঘুরে মিস্টার এস.আর এর হাত বরাবর গুলি করলো । গুলিটা গিয়ে লাগলো এস.আর -এর বাহুতে , এস.আর -এর হাত থেকে বন্দুকটা পরে গেল , আর ঠিক তখনই সেখানে মিস্টার দত্ত , সৌম্য , অর্ঘ্য এবং কিছুজন পুলিশ উপস্থিত হলেন । দুইজন পুলিশ মিস্টার এস.আর এর কপালে রিভলভার ঠেকিয়ে দাঁড়ালো , মিস্টার এস.আর অবাক হয়ে সকলের দিকে তাকালো । শুভ্রাংশু এগিয়ে এসে মিস্টার এস.আর -এর মুখোমুখি দাঁড়ালো , মিস্টার এস.আর ওর দিকে তাকিয়ে বলল…” ওরা…. তারমানে তুই….”

শুভ্রাংশু বলল….” তোর খেলা শেষ মিস্টার এস.আর ওরফে মিস্টার সমীর রয় , তোর কর্মের ফল এবার তুই ঠিক ভোগ করবি । ”

মিস্টার এস.আর কথাটা শুনে বাঁকা হাসলো , তারপর বলল….” আমাকে না হয় শাস্তি পরে দিবি কিন্তু এখন এই মন্দির আর মন্দিরে উপস্থিত শত হাজারো মানুষদের কীভাবে বাঁচাবি তুই অফিসার শুভ্রাংশু চ্যাটার্জী ? ”

শুভ্রাংশু অবাক কণ্ঠে বলল…” মানে ? ” বাকিরাও এস.আর -এর কথা শুনে অবাক । এস.আর বলল…” এখানে মন্দিরে একটা জায়গাতে টাইমবম রাখা আছে , আর কিছু মিনিট পরেই সেটা…ব্যুম….আর সাথে মন্দিরে উপস্থিত সবাই ” বলে মিস্টার এস.আর হুহা করে হাসতে লাগলো । সকলের মুখের মাঝে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো , মন্দির থেকে শঙ্খের আওয়াজ ভেসে এলো , শুভ্রাংশু মন্দিরের দিকে তাকালো । মিস্টার এস.আর আবারও বলল…” আর শুধু কয়েকটা মিনিটের অপেক্ষা , কাঁটায় কাঁটায় ছয়টা বাজলেই….ব্যুম…আজকে প্রভুর পায়ে শুধু ফুলই অর্পিত হবে না তার সাথে….” মিস্টার এস.আর আবারও জোরে জোরে হেসে উঠলো ।

শুভ্রাংশু ঘড়ির দিকে তাকালেন ছয়টা বাজতে বেশি দেরি নেই কয়েক মিনিট বাকি মাত্র , উনি ঘুরে একবার আমার দিকে তাকালেন , তারপর মন্দিরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন । উনি পাশে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললেন….” বেশি সময় নেই আর আমাদের হাতে যা করার এই মুহূর্তেই করতে হবে এতগুলো নিষ্পাপ মানুষকে আমি কিছুতেই এভাবে মরতে দিতে পারবো না , স্যার আপনি বাকিদের সামলান । ”

শুভ্রাংশু মন্দিরের দিকে দৌড় দিলেন , বাকিরা ওর দিকে তাকালো । মিস্টার এস.আর শয়তানি হাসি হেসে বলল…” দেখ তোর সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিলো না , কিন্তু ঐযে তোর দেশপ্রেম এবার বাকিদের সাথে নিজের প্রাণটাও খোয়াবি তুই । ” সঙ্গীতা এস.আর -এর দিকে তাকিয়ে বলল…” আপনার মত জানোয়ারদের ঘৃনা হয় আমার , আপনি আপনার কর্মের শাস্তি ঠিকই পাবেন , প্রভুও আপনাকে কখনও ক্ষমা করবে না আর বাকি রইলো ওনার কথা , ওনার কিছু হবেনা , আমার প্রভুর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে , প্রভু ঠিক রক্ষা করবেন কিছু হবেনা ওনার , কিছু হবেনা । ”

সঙ্গীতা গেল মন্দিরের দিকে , অর্ঘ্য সৌম্যও ওর পিছু পিছু মন্দিরের দিকেই গেল । মিস্টার দত্ত পুলিশ টিমকে মিস্টার এস.আর আর বাকিদের সামলাতে বলে সেদিকে গেলেন ওদের সাথে ।

শুভ্রাংশু মন্দিরের কাছে পৌঁছে আশেপাশে তাকালো , অনেক মানুষ এখানে উপস্থিত আছে । ও বুঝতে পারছে না টাইমবমটা আসলে লুকোনো হয়েছে কোথায় , তখন এদিক ওদিক দেখতে দেখতে ওর নজর পড়লো সামনে । দুজন লোক গেরুয়া বস্ত্র পরে একটা বড় ফুলের ঝুড়ি নিয়ে যাচ্ছে মন্দিরের ভেতরে , তখনই ওর মাথায় এলো মিস্টার এস.আর -এর বলা কথাটা যে ” আজকে প্রভুর পায়ে শুধু ফুলই অর্পিত হবে না তার সাথে….” শুভ্রাংশু কিছু একটা ভেবে সেই দিকেই দৌড়ে গেল আর ফুলের ঝুড়িটা ধাক্কা দিয়ে উল্টে ফেলে দিল । ঝুড়ি উল্টে সমস্ত ফুল মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল আর তার মাঝে থাকা টাইমবমটাও নীচে পড়ে শুভ্রাংশু সেটার দিকে তাকালো । শুভ্রাংশু ওদিকে এগোতে গেলে ওই দুজন লোক শুভ্রাংশুকে আটকানোর চেষ্টা করলে শুভ্রাংশু কোনমতে ওদের জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এগিয়ে গিয়ে বমটা হাতে নিল । ও দেখলো সময় অতিবাহিত হচ্ছে আর মাত্র এক মিনিট পনেরো সেকেন্ড মত সময় বাকি আছে । ও আর কিছু না ভেবেই ওই বমটা নিয়ে সোজা পাশে যে নদীর পাশে ফাঁকা মাঠের মত জায়গাটা আছে সেদিকে দৌড় দেই । সেদিকে কোন মানুষ নেই , সঙ্গীতা অর্ঘ্য সৌম্য আর মিস্টার দত্ত কিছুটা দূর থেকেই ওকে দেখতে পায় সেদিকে যেতে ।
.
.
আমরা তার দিকে কিছুটা এগিয়ে যায় , তবে কিছুটা এগিয়ে যেতেই হটাৎ বিকট একটা শব্দ কানে পৌঁছতেই আমি…” অংশু “…বলে চিল্লিয়ে সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় । বাকিরাও সেখানেই দাঁড়িয়ে পরে ।
.
.
.
.

পাঁচ বছর পর :-
………………..

আমি ঘরে এসে দরজার কাছ থেকেই সামনে তাকাতেই মুচকি হাঁসি ফুটে উঠলো আমার মুখে । শুভ্রতা দুই পা ছড়িয়ে বসে আছে বিছানার ওপর আর ওর চুলে দুদিকে ঝুঁটি বেধে দিচ্ছেন তার পাপা অর্থাৎ অংশু । শুভ্রতা আমার এবং অংশুর একমাত্র আদরের মেয়ে , ওর বয়স মাত্র আড়াই বছর । শুভ্রতার পরণে লাল রঙের ঘেরওয়ালা ফ্রক জামা , অংশুর পরণে আজকে লাল রঙের একটা পাঞ্জাবি , বাবা – মেয়ে দুজনকেই নিঃসন্দেহে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে । চুল বাঁধা শেষ হতেই শুভ্রতা উঠে দাঁড়ালো । উনি শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিতেই শুভ্রতা ওনার গলা জড়িয়ে ধরে ওনার দুই গালে চুমু দিলো , আমি হালকা হেসে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম , আর ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম ওরা দুজনই আমার দিকে তাকালো । অংশু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন । আমার পরণে আজ লাল সাদা সংমিশ্রণের একটা ঢাকায় জামদানি শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরা , চুলগুলো ছাড়া , সাথে হালকা কিছু গহনা আর হালকা সাজ সাথে সিঁথিতে সিঁদুর আর কপালে লাল টিপ । উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকালেন তারপর আমার এক গাল টেনে বললেন….” খুব বেশি মিষ্টি লাগছে , ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি ” শুভ্রতা চোখ পিটপিট করে কিছুক্ষন একবার আমার দিকে আবার কিছুক্ষন ওনার দিকে তাকালো তারপর ওনাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে তার ছোটো ছোটো দুই হাত দিয়ে আলতোভাবে আমার দুই গাল টেনে বলল…” খুব বেতি মিত্তি লাগতে , ইত্তে করতে তুপ করে খেয়ে ফেলি ” কথাটা শুনে আমি আর উনি ওর দিকে তাকিয়ে একে অপরের দিকে তাকালাম , তারপর হেসে ফেললাম । আমি শুভ্রতার দুই গালে হাত রেখে ওর দুই গালে আর কপালে চুমু খেলাম । ঔ আমার দুই গালে চুমু খেলো তখনই ঘরে শ্রেয়ান এলো , ও এসে আমাদেরকে বলল….” মামনি , বাবাই… তোমাদেরকে তো বাইরে সবাই ডাকছে । ” শ্রেয়ান অর্ঘ্যদা আর পূজাদির একমাত্র ছেলে , ওর বয়স সাড়ে তিন বছর । আমি ছোট শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম…” আমরা আসছি তো বাবু ” শুভ্রতা ওনার কোল থেকে নীচে নেমে গেল , আর শ্রেয়ানের সামনে দাড়িয়ে টুকুর টুকুর চোখে ওর দিকে তাকালো । শ্রেয়ান চোখ সরু করে ওর দিকে তাকালো । উনি বললেন…” আচ্ছা শুভ্রতা শ্রেয়ান চলো আমরা নীচে যায় , আর দৌড়াদৌড়ি করবে না একদম , সাবধানে চলো । ” উনি আমার দিকে তাকিয়ে যেতে বলে শ্রেয়ান আর শুভ্রতার হাত ধরে বাইরে উঠোনে বাকি সকলে যেখানে আছে সেদিকে চলে গেলেন । আমিও ওদের সাথেই গেলাম বাইরে উঠোনে পূজাদি , অর্ঘ্যদা , সুরভি , আদি দা , ওদের ছোট্ট তিন বছরের মেয়ে প্রীতি , আমার মা-বাবা, মামনি-বাবাই , দাভাই সকলে উপস্থিত আছেন । আমরা তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম । শ্রেয়ান , শুভ্রতা , প্রীতি একসাথে দাঁড়ালো । আজকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে গ্রামের বাড়িতে ছোটো একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে , তাই আমরা সকলে একসাথে এখানে রয়েছি । দাভাইয়ের হবু শ্বশুরবাড়ির সকলেও কিছু সময়ের মধ্যেই এসে পৌঁছবেন এখানে ।

সকলে কথা বলছে , আমি উঠোনের সামনের বারান্দার একপাশে দাঁড়িয়ে সকলের আনন্দে পরিপূর্ন মুখের দিকে তাকালাম হটাৎ এই খুশির মাঝেও পাঁচ বছর আগের সেই দিনের কথাটা আমার মনে পড়ে গেল , সেই দিনের কথাগুলো আমি কখনই ভুলতে পারি না সেই দিনের কথা ভাবলে এখনও ভয়ে আমার বুকটা কেঁপে ওঠে ।
.
.
সেদিন , শুভ্রাংশু বমটা নিয়ে দৌড় দেয় মাঠের দিকে , সময় একদমই বেশি ছিল না । ও নদীর কিছুটা কাছে ফাঁকা মাঠে পৌঁছয় , আর যখন শুধুমাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় বাকি ছিল ঠিক সেই সময়ে বমটাকে নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে দূরে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেয় । কিছুটা উপরে গিয়েই বোমটা বিকট শব্দ করে ফেঁটে যায় , আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের ফুলকি , শুভ্রাংশু কানে হাত দিয়ে সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে যায় । সকলে ওর দিকে তাকায় , কিছু সময় যেতেই আবার সকলে ওর কাছে ছুটে যায় । উনি উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকান সকলের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে তারপর উনি এগিয়ে আসেন আমাদের দিকে আর আমি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি ওনাকে । সেদিন অংশু সামান্য কিছু ক্ষত পেলেও , ও বেচেঁ যায় । আমরা সকলে বাড়ি ফিরে আসি , মিস্টার এস.আর -কে তার প্রাপ্য শাস্তি দেওয়া হয় । ধীরে ধীরে অংশু সম্পূর্নভাবে সুস্থ্য হয়ে যায় , এবং তার কিছু মাস পরেই আমাদের আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেওয়া হয় । আর তার কিছুমাস পরে বিয়ে হয় সুরসুরি আর আদি দার ।

আমি দাঁড়িয়ে নিজের মনে এইসব ভাবছিলাম , তখনই অংশু এসে আমার গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে পাশে দাঁড়ালেন । আমি চোখ বড়বড় করে একবার ওনার দিকে আর একবার বাড়ির বাকি সকলের দিকে তাকালাম । ভাগ্যিস কেউ দেখেনি , আমি ওনার দিকে তাকালাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিভেবে হাসলেন , ওনার মুখের এই হাসি দেখে আমি মৃদু হেসে ফেললাম । উনি আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে তার কাছে টেনে নিলেন তারপর আমার দিকে ঝুঁকে ধীরকণ্ঠে বললেন….” সঙ্গীপাখি , আমার মায়াবতী , আমার প্রিন্সেসের মাম্মা..ভালোবাসি তোমাকে খুব । আই লাভ ইউ । নিজের পুরো জীবন তোমার সাথে কাটাতে চায় #তুমি যদি চাও , নিজের কাছে তোমাকে আগলে রাখতে চায় , সর্বদা তোমার পাশে থাকতে চায় , তোমাকে অনেক ভালোবাসতে চায় , বিশ্বাস করো যতই বিপদ আসুক তাও শুধু তোমাকেই আমি আমার পাশে চায় , সব বিপদের সাথে লড়াই করে হলেও তোমার সাথে জীবনের বাকিটা পথ অতিক্রান্ত করতে চায় #তুমি যদি চাও , নিজের জীবনের শেষ নববর্ষটাও তোমার সাথেই কাটাতে চায়…” আমি ওনার মুখে হাত দিলাম । তারপর কিছু না ভেবেই ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম । উনিও আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । তারপর বললেন…” অনুমতি আছে ? ” আমি ওনার বুকে মাথা রেখেই বলে উঠলাম…” উহু , অধিকার আছে আপনার । অংশু ভালোবাসি ” উনি শক্তভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । আমরা আর কিছু বলবো তার আগেই শুভ্রতা মাম্মা পাপা বলে এদিকে এলো উনি চমকে উঠে সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দিলেন , আমরা একে ওপরের থেকে দূরে সরে গেলাম । শুভ্রতা , শ্রেয়ান আর প্রীতি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো । আমরা আড়চোখে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ওদের দিকে তাকালাম । শুভ্রতা আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল…” মাম্মা… পাপা…. দেকো না শ্রেয় দাদা বকতে ”

শ্রেয়ান বলল….” এই আমি কি তোকে এমনি এমনি বকেছি নাকি হ্যাঁ ? আর তুই কি ঠিকভাবে হাঁটতে পারিস না । সবসময় চলতে গেলেই হোচট খাস একটু হলেই তো আবার পরে যেতি । আবার তর্ক করছিস ”

শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে বলল…” আমি পলতাম তো তোমাল কী হ্যাঁ ? ”

প্রীতি বলল…” উফ…তোরা ঝগড়া কেন করছিস ?” শুভ্রতা বলল..” আমি মোতেও ঝগলা করছি না , এই শ্রেয়দা ঝগড়া করছে ” শ্রেয়ান বলল…” জ্বি না , আমি না তুই ঝগড়া করছিস ” ছোটো প্রীতি গালে হাত দিয়ে একবার ওদের দিকে তো আরেকবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে । শুভ্রাংশু আর আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি , আমি শুভ্রাংশুর কানের কাছে গিয়ে বললাম…” কিছু মনে পড়ছে ? ” শুভ্রাংশু আমর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন । তারপর আমরা আবারও ওদের দিকে তাকালাম , আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম….” আরে আরে ঝগড়া কেন করছো তোমরা বলো তো ? ” অংশু বললেন….” হুমম তোমরা না গুড বয় অ্যান্ড গার্লস , ঝগড়া করবে না একদম । এবার হ্যান্ডশেক করো দেখি দুজনে । ”

ওরা দুজন আমাদের দিকে তাকিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো , আমি বললাম…” কী হলো হ্যান্ডশেক করো । ” ওরা এবার হ্যান্ডশেক করলো , অংশু বললেন…” এইতো গুড বয় অ্যান্ড গার্লস , যাও এবার তিনজন খেলো গিয়ে ঝগড়া করবে না আর একদম কেমন ? ” ওরা মাথা নেরে হ্যাঁ বলে সেখান থেকে চলে গেল ।

আমি ওদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম , উনিও ওদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমার নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কপাল হালকা চুলকে আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন । তারপর আমাদের দুজনের ডাক পরাই আমরা উঠোনের দিকে তাকালাম , উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমি তার হাতে হাত রাখতেই উনি আমাকে নিয়ে উঠোনের দিকে পা বাড়ালেন ।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here