তুমি_আমার?Part_08
#Written_By_Samia_Islam
নিরা:: সবাইকে এক মনে করিস??
রিধি;: জানিনা,,, আমি উনার ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাইনা,, আমি মনে করি যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে,,,☹️
নিরা::ok Fine,,,, আর কিছু বলতেও হবেনা,,, যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারবি তখন শুধরানোর সময় থাকবেনা,,,??
নিরা উঠে চলে গেলো,,, রিধি এখনো একি জায়গায় বসে আছে,,,,
এইদিকে শান্ত বাসায় এসে ড্রেস চেন্জ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়,,,শান্তর ফেইসটা দেখলে এখন যেকেউই ভয় পাবে,,, এমনিতেও অনেকটা রাগী আর এখন তো রাগের পরিমান সহ্য সীমার বাহিরে,,,, শান্তর আব্বু আম্মুও মন খারাপ করে বসে আছে,,,কারণ রিধিকে তারাও শান্তর বউ হিসাবে খুব পছন্দ হয়েছিল,,,,, অনেক রাত হয়ে গেছে কিন্তুু শান্ত বাসায় আসেনি,,, নাহিদ যেই শান্তকে খুঁজে বাসা থেকে বেরুবে,,, তখনি শান্ত গাড়ি নিয়ে গেইট দিয়ে ডুকলো,,, শান্ত কাউকে কিছু না বলে বাসায় ডুকে নিজের রুমে চলে গেল,,, ডিনার করার জন্য ডাকলেও শান্ত খাবেনা বলে দেয়,,, কেউ আর জোর করে ডাকতে যায়নি কারণ শান্তর রাগ সম্পর্কে সবাই জানে,,, একটা কথা একবারের বেশি বলেনা,,,
পরেরদিন,,,,,,
রিধি একা একা বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগছি লো না,,,তাই ভাবলো কলেজ থেকে ঘুড়ে আসবে,,, রিধি নিরাকে ফোন দিলো না, কারণ সবাই এখন রিধির উপর রেগে আছে,,, রিধি একা একা রাস্তার পাশে রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে,,, ঐ দিনের রিকশাচালক টা রিধির সামনে আসলো,,, রিধি প্রথমে তেমন খেয়াল করেনি,,, লোকটা কথা শুনে রিধির ওর মুখের দিকে তাকালো,,
লোকটা::: কেমন আছেন আপামনি???
রিধি:: জ্বী ভালো,,, আপনি কেমন আছেন???
লোকটা::: আপনাগো দোয়ায় ভালোই আছি,,,, কোথাও যাচ্ছেন??
রিধি:: জ্বী কলেজের দিকে যাবো,,,,
লোকটা::: তাইলে চলেন আমি দিয়া আসি,,,
রিধি রিকশায় উঠে বসলো,,, লোকটাও হাসিমুখে রিকশা চালাতে লাগলো,,,
লোকটা::: আপামনি জানেন আপনি ঐ দিন যে টাকা গুলা দিছিলেন, ঐ গুলা দিয়ে আমি আমার মাইয়ার জন্য একটা জামা কিনছিলাম,,, মাইয়িডা বহু দিন ধইরা কইতাছিলো কিন্তুু আমরাতো গরীব তিনবেলা ভাতই খাইতে পারিনা,,, কিন্তুু আপনি টাকা গুলা দেওয়ার পর আমার মাইয়াডার কথা মনে পইড়া গেল,,, আমার মাইয়াডা জামাটা দেইখা খুব খুশি হইছে,,,
রিধি:: তাই!!!! আচ্ছা আপনার আর কে কে আছে???
লোকটা::: আমার মা বাপ তো ছোট থাকতেই মারা গেছে,,, আপন বলতে কেউই নাই,,,, এখন আমার বউ আর একটা মাইয়া ছাড়া আর কেউ নাই,,,
রিধি:: ও,,, তো আপনার মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে??
লোকটা::: আপামনি আমার মাইয়াডা কথা কইতে পারেনা,,তাই স্কুলে ভর্তি করাই নাই,,, আর টাকা দিয়া যে ভর্তি করামু এমন সামর্থ্য তো আমাদের নাই,,, ওর ঔষুধ খরচ ও চালাইতে পারিনা,,, স্যার প্রতিমাসে আমার মাইয়াডারে টাকা দিয়া যায়,,,
রিধি:: স্যার!!!!! কোন স্যার??
লোকটা::: আপনেরে স্যার এইডা কয় নাই???? আরে আমাদের ওসি সাহেব মানে শান্ত স্যার আমার মাইডার ঔষুধের টাকা প্রতিমাসে দিয়া যায়,,, আর সপ্তাহে একদিন দেইখাও যায়,,,
রিধি:: শান্ত!!!! ?
লোকটা::: জ্বী আপা,,,, স্যার অনেক ভালা মানুষ,,, স্যারের মতো এত ভালা মানুষ হয়না,,
রিধি:: একটা কথা জিঙ্গাস করবো???
লোকটা:: জ্বী করেন আপামনি,,,
রিধি:: মানে আপনার মেয়ের ব্যাপারে শান্ত কি করে জানতে পারলো??
লোকটা:: আপামনি একদিন আমার মাইয়াডা অনেক জ্বর হইছিল,,, ওরে আমি হাসপাতালে নিয়া গেছিলাম কিন্না ডাক্তার কইছিল নিয়মিত ঔষুধ খাওয়াই তে,,, আমার কাছে তো তখন টাকা ছিলনা তাই কিনতে পারি নাই,,,ঔষুধ দোকানে গিয়া বললাম কিন্তুু টাকা ছাড়াতো দেয়না,,, দোকানদারের হাত পায়েও ধরছি তখন ঐ সময় স্যার কি জন্য ঐ দোকানে আইছিলো আমারে দেইখা কি হইছে জিঙ্গাস করলো,,, আমি সবকিছু কওয়াতে আমার সাথে স্যার আমার মেয়েরে দেখতে গেল,,,তারপর থেকেই প্রতি সপ্তাহে স্যার আমার মেয়েরে দেখতে যায়,,,আর যাওয়ার সময় যা যা লাগবে সব নিয়া যায়,,, আপামনি একটা কথা কই???
রিধি:: হ্যাঁ বলেন,,,,
লোকটা:: আপনি আমার মেয়েরে দেখতে যাইবেন??
রিধি:: এখন!!!
লোকটা:: না,,,আপনি যখন সময় পাইবেন,,,
রিধি:: আচ্ছা এখন যাবো,,, আপনার কোনো প্রবলেম হবে না তো??
লোকটা:: কি যে কন আপামনি,,, আপনি যাইবেন এটা তো আমাদের সৌভাগ্য,,,,,,, ?
রিধি:: আচ্ছা আপনি ঐ দোকানটার পাশে দাড়ান আমি আসছি,,,,
এরপর রিধি রিকশা দাড় করিয়ে দোকানের ভিতরে গেল,,, একটা চকলেট বক্স আর অনেকগুলা আইস্ক্রিম নিল,,,, তারপর রিকশায় এসে বসলো,,
রিধি:: এখন চলেন,,,
এরপর রিধিকে নিয়ে লোকটা ওদের বাসায় গেল,,, লোকটা একটা বস্তিতে থাকে,,, রিধির এমন পরিবেশে কখনো আসেনি তাই অসস্তি লাগছে,,,, রিধি লোকটার ঘরে গেল,,, ঘরটা অনেক ছোট ২ টা থাকার রুম আর একটা রান্নাঘর,,, ছোট হলেও ঘরটা অনেক পরিষ্কার যেটা দেখে রিধির খুব ভালো লাগলো,,,, রিধি ঘরে ডুকলে লোকটা রিধির জন্য দৌড়ে একটা চেয়ার নিয়ে আসে আর সেটা তার গলায় থাকা গামছা টা দিয়ে পরিষ্কার করতে থাকে,,,
রিধি:: আরে এটা কি করছেন??
লোকটা:: আসলে আপামনি আপনারে যে কোথায় বসতে দিই,,,
রিধি:: লাগবেনা আমি এখানেই ঠিক আছি,,,,
লোকটা:: বসেন আপা,,,
রিধি:: আপনার মেয়ে কোথায়??
লোকটা:: আছে আপামনি,,,আমি ডেকে আনছি,,,
রিধি:: ok…
এরপর লোকটা তার মেয়েকে নিয়ে আসলো,,, মেয়েটার বয়স খুব বেশি হলে ৪/৬ বছর হবে,,, হাতে একটা পুতুল নিয়ে রিধির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,,, রিধি মুচকি হেসে মেয়েটার হাত ধরে তার সামনে হাটু গেড়ে বসলো,,,
রিধি::: তোমার নাম কি??
লোকটা:: আপামনি,,, আমার মাইয়াডা কথা কইতে পারেনা,,, ?
কথাটা শুনার পর রিধি এক মুহুর্তের জন্য চুপ হয়ে যায়,,,
রিধি::: ওহহ,,,
লোকটা:: জবা মা,,, ইনি তোকে জামা কিনে দেওয়ার জন্য টাকাটা দিছিলেন,,,( মেয়েটার কাঁধে হাত রেখে বললো)
রিধি মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে মেয়েটার কপালে অনেকগুলা চুমু দিলেন,, মেয়েটাো রিধির কপালে চুমু দিল,, রিধি মেয়েটার কান্ড দেখে হেঁসে উঠে,,, এরপর জবার আম্মু এসে রিধির সাথে অনেক্ষণ কথা বললো,,, সবাই এতটাই ফ্রী হয়ে গেল যে যেন অনেক দিন ধরে রিধিকে সবাই চিনে,,, রিধি আর জবা পুতুল নিয়ে খেলা করছিল,,, রিধি বাচ্চাদের সাথে বাচ্চামি করতে এক্সপার্ট,,, রিধি আর জবা পুতুল ছুঁড়া ছুঁড়ি খেলছিল,,,,, এর মধ্যে হঠাৎ জবা দৌড়ে কোথাও যাচ্ছিল,,,
রিধি:: আরে জবা তুমি কো….
আর কিছু বলার আগে দরজায় শান্তকে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে,,, জবা দৌড়ে গিয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরে,,, শান্তও জবাকে কোলে তুলে নেয়,,, জবা শান্তর গলা জড়িয়ে ধরে,,, রিধি হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,
শান্ত প্রথমে রিধিকে দেখেনি,,, পরে হঠাৎ রিধিকে দেখে অনেকটা অভাক হয়ে যায়,,, শান্ত এক মুহুর্ত দেরি না করে রিধির থেকে চোখ সরিয়ে ফেলে,,, শান্ত জবার সাথে ইশারায় নানা রকম কথা বলছে জবাও ইশারায় অনেক কিছু বলছে,,, কিন্তুু রিধির অভাক লাগছে যে একবারও শান্ত রিধির দিকে তাকালো না,,,,
কিছুক্ষণ পর জবার আব্বু আসলো,,,
জবার আব্বু:: আরে স্যার আপনি কখন আসলেন?? ?
শান্ত:: একটু আগে,,, এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম জবাকে দেখে যাই,,
জবার আব্বু:: খুব ভালো করছেন স্যার,,, বসেন স্যার আর দেখেন আপামনিও জবারে দেখতে আইছে,,,আপনাদের দুইজনরে এক লগে দেইখা আমার খুব ভালো লাগছে,,, আপনারা আজ না খাইয়া যাইতে পারবেন না,,,
শান্ত:: আরেকদিন আসবো,, আজ অনেক কাজ আছে,,,( রিধির দিকে না তাকিয়ে)
জবার আব্বু:: স্যার তাইলে কথা দেন,,, আপামনিরে নিয়া আসবেন??
শান্ত:: আচ্ছা আগে এটা বলো জবা এখন আগের থেকে ভালো আছে তো,,,,
জবার আব্বু:: হ্যাঁ স্যার আগে থেইকা অনেক ভালা আছে,,, আপনার আমার মাইয়াডার জন্য যা করছেন এইটা কোনো দিন ভুলার নয়,,,
শান্ত:: এসব কিছুই না,,, শুধু এটা মনে রেখো মানুষ মানুষের জন্য,,,
জবার আব্বু:: জ্বী স্যার,,,
শান্ত:: এখন আমি আসছি,,,,,
জবার আব্বু:: আচ্ছা স্যার,,,
শান্ত:: জবা মামুনি এখন যাচ্ছি পরে আবার আসবো,,,?
জবা;:????
শান্ত বুঝতে পেরেছে যে জবা কি বলতে চাইছে,,, শান্ত জবার কপালে চুমু দিল,,, জবা শান্তর হলা জড়িয়ে ধরলো,,,
তারপর শান্ত টাটা দিয়ে চলে গেলো,,, রিধি এখনো দাড়িয়ে আছে,,,,,কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,
শান্ত চলে গেলে জবা দৌড়ে আবার রিধির কাছে চলে আসে,,, জবা ইশারায় রিধিকে নিচু হতে বলে,, রিধি জবার সামনে বসলে জবা রিধির ও গলা জড়িয়ে ধরে,,,
রিধি নিয়ে আসা চকলেট বক্স আর আইস্ক্রিম জবাকে দেয়,,,জবাতো এসব দেখে অনেক খুশি হয়,,,,
এরপর রিধিও সবাইকে টাটা দিয়ে চলে আসে,,রিধি আসার সময় জবা রিধির ওরনাটা টেনে ধরেছিলো,,, হয়তো যেতে দিতে চাইছিলা না তাই,,, রিধি জবার কাছে গিয়ে জবাকে অনেক আদর করে তারপর আবার আসবে বলে কথা দিয়ে আসে,,,,,
বিকালে,,,,রিধি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সকালের সবকিছু ভাবছে,,,
রিধি::শান্ত একদিনে এতটা চেন্জ কি করে হলো,,, হবে নাই বা কেন,, শুনেছি ছেলেদের মনটা পাথরের চাইতেও বেশি শক্ত,,, কিন্তুু শান্তকি সত্যি সবকিছু মেনে নিয়েছে,,, ধুরর আমি এসব কি ভাবছি,,, শান্ত যা ইচ্ছা তাই করুক তাতে আমার কি,,,
৩ দিন পর,,,,
এই ৩ দিন রিধি বাসা থেকে কোথাও বের হয়নি,, নিরাও আসেনি,,, সকালে রিধি ভাবলো জবাকে দেখতে যাবে তাই বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার একপাশ দিয়ে হাটছিলো,,,, হঠাৎ রিধির চোখ একটা জায়গায় আটকে গেল,,, রিধি প্রথমে ভাবলো হয়তো স্বপ্ন নিজেকে নিজেই চিমটি কাটলো,, না এটা তো বাস্তব,,,, রিধি নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না,,,
চলবে,,,,,,,,,