তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও #তৃতীয়_পর্ব

0
703

#তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও
#তৃতীয়_পর্ব
#লেখনীতে_সুহানা_সুলতানা

মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে চোখ খুলে তাকালো মেঘা কিন্তু হালকা নীলচে ডিম লাইটের আলোয় কাউকে দেখতে পেল না। তাই মনের ভুল ভেবে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।

আজকেও সারাটা দিন বন্দী অবস্থায় কাটলো মেঘার তবে রাত আটটার আগে দরজা বন্ধ করতে ভোলেনি ও। আরাফাত আজকেও মেঘার ঘরের দরজা বরাবরের মতোই বন্ধ পেলো।

এই মেয়ে কি আমায় ইগনোর করতে চাইছে? সেটা ও চাইলেও সম্ভব নয়।

আজ সন্ধ্যা থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। চারিদিকে একটু ভেজা ভেজা ভাবের সঙ্গে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। মেঘা পাতলা একটা ব্ল্যাকেট গায়ে দিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। গতরাতের মতো আজকেও ওর মুখের ওপর কারও গরম নিশ্বাস আঁছড়ে পড়ছে। একদিকে এতো সুন্দর আবহাওয়া আবার তার ওপর এই মিষ্টি ঘুম সবমিলিয়ে মেঘা চোখ খুলতে পারলো না। এতে যেনো সেই অজ্ঞাত ব্যাক্তির সুবিধাই হলো। সে মেঘার সারা মুখে ছোটো ছোটো চুমু এঁকে দিলো। ঠোঁট দুটোতে স্পর্শ করল না। কিছুক্ষন মেঘার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে গেল।

খুব ভোরে ভোরেই মেঘার ঘুম ভাঙলো। তাই ভাবলো একটু মর্নিং ওয়াক করে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ। তাই আর সময় নষ্ট না করে জগিং সুট পড়ে, স্পোর্ট শু পায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

সারারাত বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি যেন আরও স্নিগ্ধ শুভ্রতায় নিজেকে উস্থাপন করেছে। মিষ্টি সূর্য রশ্মি যেনো পরিবেশটাকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। একঘন্টা পরে বাড়ি ফিরে শাওয়ার নিলো মেঘা তারপর নিজের ব্রেকফাস্ট নিজে বানিয়ে খেয়ে নিয়ে রুমে গেলো। তখন ওর মা ঘুম থেকে উঠলো। রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসলো। ঠিক সময়ে রেডি হয়ে কলেজের জন্য রওনা হলো।

কলেজে,,,

হাই, আমি মানালী।

হাই, আমি মেঘা।

তোমার কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে?

না।

ক্যান উই বি ফ্রেন্ডস?

ইয়েস, অফ কোর্স।

মেঘা আর মানালী পাশাপাশি বসলো।

এই মেঘা কালকে নবীন বরণ অনুষ্ঠান শাড়ী পরে আসবে কিন্তু।

তোমায় কে বলেছে?

তুমিতো দুই দিন আসনি। গতকাল প্রফেসর বলেছেন। কালকে সকাল সাড়ে দশটায় চলে আসবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই শাড়ী পরে আসবে।

আচ্ছা। চেষ্টা করবো।

কলেজ থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মেঘা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎই একটা পার্সোনাল কার ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।

আপনি?

হ্যাঁ আমি। বাড়ীতে ফাইল নিতে যাচ্ছি। ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে। তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম ভাবলাম লিফট দিই।

দয়ার দরকার নেই মিষ্টার খুনি।

ভালোয় ভালোয় গাড়িতে উঠে এসো। আমাকে রাগিও না। আমার রাগ সম্পর্কে তুমি অবগত নও। তাড়াতাড়ি উঠে এসো।

আরাফাতের গম্ভীর আওয়াজ শুনে আর কথা বাড়ালো না মেঘা। চুপচাপ সামনের দরজা খুলে সিটে বসে পড়লো। আরফাতও গাড়ি স্টার্ট দিলো।

ইয়াসিরকে চকচকে ধারালো ছুরি বের করতে দেখে মেঘা কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে বললো,,,

ইয়াসির সাহেব আমি ওই লোকটার কথা কাউকে বলবো না। আপনাকেও খুনি বলে সম্বোধন করবো না। আমাকে মারবেন না।

কান্নার জন্য ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না।

আমার সিক্রেট তুমি জেনে গেছো। আমি কি এতোটাই বোকা যে তোমায় বাঁচিয়ে রাখবো।

ইয়াসির ওর দিকে ছুরি তাক করলো। ভয়ের চোটে মেঘা চিৎকার করে উঠলো,,,

না না না।

ইয়াসির ওর হঠাৎ চিৎকারে তাড়াহুড়ো করে ব্রেক করলো। সিট বেল্ট আটকানো থাকায় মেঘা চোট পেলো না।

স্টুপিড। এই ভাবে চিৎকার করলে কেনো? আমি কি তোমাকে মেরে ফেলছিলাম।

কথাগুলো বলেই ওর টিস্যু এগিয়ে দিলো ইয়াসির।

বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেন? চোখদুটো মোছো।

মেঘা হাত বাড়িয়ে টিস্যু পেপারটা নিয়ে চোখ মুখ মুছে নিলো। ইয়াসির ওর দিকে জলের বোতল এগিয়ে দিলো। মেঘা বোতলের সব জলটুকু খেয়ে নিলো।

তুমি যতো চিৎকারই করো না কেনো এই গাড়ির বাইরে তোমার আওয়াজের কোনো শব্দই পৌঁছবে না। এইবার বলো কেনো চিৎকার করলে?

আমি দেখলাম আপনি ছুরি দিয়ে আমাকে মারতে চাইছিলেন। মানে আমি ডে ড্রিমিং করছিলাম। আমার আপনাকে ভয় লাগে। তাই তো আমি আপনার সামনে না পড়ার জন্য দুটো দিন ঘরের জানালা বন্ধ করে রেখেছিলাম। কিন্তু দেখুন শেষমেশ সেই আপনার গাড়িতে আপনার পাশে বসে যেতে হচ্ছে।

ড্যাম ইট। স্টুপিড গার্ল।

ইয়াসির গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাকি রাস্তাটুকুতে কারোর মধ্যে বাক বিনিময় হলো না। মেঘাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো,,,

আজকে রাত্রি সাড়ে আটটায় আমার রুমে যেনো দেখি তুমি উপস্থিত আছো।

আমার পড়া আছে। আর আপনার চাকর নই আমি যে আপনার কথা গুলো আদেশ হিসেবে মানতে হবে।

তুমি মানবে কি মানবে না সেটা তোমার ব্যাপার। তবে ব্যাপারটা আমার হয়ে গেলে তোমার জন্য সেটা কষ্টদায়ক হবে।

কথাগুলো বলেই ইয়াসির ওর সামনে দিয়ে একরাশ ধূলো উড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। মেঘা রেগে গিয়ে ডান পা উঁচু করে লাথি দেখালো ওর গাড়ির দিকে।

ইউ ব্লাডি বি*চ। আমি যাবো না তোর রুমে। কি করবি তুই সেটাও আমি দেখতে চাই। বাড়িতে ঢুকে দেখলো ওর মা ঘুমোচ্ছে। তাই রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলো। আবারও রুমে গিয়ে চেয়ার টেবিলে বসে বই বের করলো। পড়তে পড়তে কখন যে ওর চোখ লেগে গেছে তা বুঝতে পারে নি।

এই মেয়ে উঠো।

কারোর গম্ভীর আওয়াজে মেঘার চোখ খুললো। দেখলো ওর পাশে ইয়াসির দাঁড়িয়ে আছে। মেঘা ভাবলো হয়তো আবারও ও স্বপ্ন দেখছে। তাই হাত দিয়ে চোখদুটো ঘষে নিলো। ওর কান্ডকারখানা দেখে ইয়াসির ওর বেডের ওপর টানটান করে শুয়ে পড়লো। তারপর একটা কাগজের টুকরো হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো,,,

মেঘা আমি আর তোর বাবা একটা বিজনেস মিটিং অ্যাটেন্ড করতে যাচ্ছি। ওখান থেকে তোর ছোটো খালাম্মার বাড়ীতে যাবো। কালকে রাত্রি বেলা বাড়ি পৌঁছাবো। তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই আর ডাকিনি। বাড়ীতে কিছুই রান্না করা নেই। তুই যা পারবি তাই রান্না করে খেয়ে নিস।

এরা কি আদৌ আমার মা-বাবা? কি ভাবে আমাকে একা রেখে চলে গেল? ওরা তো জানে আমি রান্না করতে পারি না। তবুও….

মনে মনে কথাগুলো আওড়ে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেঘা। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় আবারও চিৎকার করে উঠলো,,,

কে আমাকে শাড়ী পরিয়ে দেবে? কালকে নবীন বরণ অনুষ্ঠান আছে। আমার তো যাওয়াই হবে না।

ওর সামনে বেডে শুয়ে থাকা ইয়াসিরের ভাবভঙ্গীর কোনো পরিবর্তন হলো না।

রান্না করতে পারো?

নাহ্।

ইয়াসির ওর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল।

খেয়ে নাও। তাড়াতাড়ি খাবে। আই অ্যাম ওয়েটিং ফর ইউ।

আপনি কি করে আমার রুমে আসলেন?

আমার রুমের ব্যালকনি টপকে তোমার রুমে আসা কোনো ব্যাপার না আমার জন্য। যাও তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। হোম মেড ফ্রেশ খাবার।

আমি খাবো না।

সাড়ে আটটায় আমার রুমে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি আসোনি। এবার যদি আমার কথা না শোনো তাহলে কিন্তু তোমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

মেঘা, ইয়াসিরকে আর ঘাটালো না। চুপচাপ প্যাকেটটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। প্যাকেটটা খুলে দেখলো ব্রাউন রাইস, চিলি চিকেন, মিক্সড ভেজিটেবল আর রসমালাই আছে। যতটা পারলো ততটুকু খেয়ে বাকিটা ফ্রিজে রেখে দিল। রুমে এসে দেখলো ইয়াসির ওর জিনিসপত্রগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মেঘা ঘরে ঢুকতেই ও বলে উঠলো,,,

কালকে সকাল নয়টায় তোমাকে শাড়ী পড়াতে আসবে।

আপনাকে বলেছিলাম এসব করতে?

তাহলে কি তুমি আমার কাছ থেকে শাড়ী পড়তে চেয়েছিলে?

ইউ…

ইয়েহ আই নো আই অ্যাম হ্যান্ডসাম। তবে শাড়ী পড়াতে পারি না।

আপনি কি যাবেন আমার রুম থেকে?

যাওয়ার জন্য তো আসিনি। তোমায় ডেকেছিলাম তুমি আসোনি তাই আমিই এসেছি।
আজকের রাতটা আমি এখানেই থাকবো।

আপনি কি জানেন আপনি কি বলছেন? আমরা হাসব্যান্ড-ওয়াইফ না যে একসাথে থাকবো।

তুমি তোমার এইটুকু মাথায় এসব চিন্তা ভাবনা করো। ছিঃ মেঘা। আমি তো এই বাড়ীতে থাকবো ভেবেছি তোমার রুমে না।

মেঘা নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।

চলুন আপনাকে ঘরটা দেখিয়ে দিই।

হুম চলো।

ইয়াসিরকে রুম দেখিয়ে দিয়ে এসে নিজের মোবাইল নিয়ে বসলো মেঘা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here