তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও #চতুর্থ_পর্ব

0
834

#তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও
#চতুর্থ_পর্ব
#লেখনীতে_সুহানা_সুলতানা

মেঘা কে-ড্রামা আর সি-ড্রামা শর্টস ভিডিও দেখছিল ইউ টিউবে আর ওর দেখার কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে ওর হাত কেউ ছোঁ মেরে মোবাইল ছিনিয়ে নিল। সামনে তাকিয়ে দেখলো ইয়াসির।

মেঘা তুমি রোমান্টিক ভিডিও দেখছো। মা বাবা বাড়িতে নেই আর সুযোগ পেয়ে এসব দেখছো।

ইয়াসির সাহেব আই অ্যাম এইটটিন প্লাস নাউ। আর আমার ব্যাপারে নাক গলানোর অধিকার নেই আপনার।

অধিকার কার কতটা আছে সেটা সময় বলবে। আর এখন চুপচাপ ঘুমাও।

কথাগুলো বলেই আর একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে মেঘার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরাফাত। আজকে কারোর উপস্থিতি অনুভব করলো না মেঘা। সকাল বেলা ইয়াসির ওর বাড়ি চলে গেল আর ওর সার্ভেন্টকে দিয়ে মেঘার জন্য ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিল। নয়টার সময় যথারীতি ইয়াসিরের কথামত দুটো মেয়ে এলো। মেঘাকে শাড়ী পরিয়ে দিয়ে হালকা মেকআপ করিয়ে দিল। সাড়ে নয়টায় ইয়াসির ওর বাড়ির সামনে এসে অনবরত হর্ন বাজাচ্ছিল। মেঘা বাড়ী লক করে ইয়াসিরের গাড়িতে উঠে বসলো। ইয়াসির ওকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। মেঘা ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো মানালী হাত নেড়ে ওকে ডাকছে। তাই ও মানালীর কাছে গেলো।

ইশ তোমাকে কি সুন্দর লাগছে রে। কারোর নজর যেনো না লাগে।

কথাটা বলে মানালী ওর কানের পাশে কাজল ছুঁইয়ে দিলো।

তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে।

ওরা দুজন নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পড়লো। মেঘা সামনে তাকিয়ে দেখলো ইয়াসির স্পেশাল গেস্টেদের জন্য সংগৃহীত চেয়ারে বসে আছে। তখনই পাশ থেকে মানালীকে বলতে শুনলো,,,

হি ইজ সো হ্যান্ডসাম ইয়ার।

উনি তো বিজনেসম্যান তাহলে এখানে কি করছেন?

উনি কলেজ ফান্ড-এ প্রতি বছর টাকা দেন। তাই তো ওনাকে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে ইনভাইট করা হয়েছে।

উনিও যে আসবেন আমাকে ঘুণাক্ষরেও তা জানালেন না।

নিজের মনেই বিরবিরিয়ে কথাগুলো বললো মেঘা। মাঝে অতিবাহিত হয়ে গেছে তিন ঘণ্টার মতো।

এই মানালী আমি না একটু ওয়াশরুম যাচ্ছি চোখে মুখে জল দেবো। সেই যে বরণ করলো তার পর থেকে বসে আছি।

আমি কি যাবো তোমার সঙ্গে?

না না আমি একাই যেতে পারবো।

মেঘা ওয়াশরুমের দিকে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে চলেছে। আজ এই জায়গাটা একেবারেই নিশ্চুপ- নিস্তব্ধ। হঠাৎই পেছন থেকে কেউ মেঘার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। প্রতিরোধের সময়টুকুও পেলো না মেঘা ঘুমের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল।

হ্যাঁ স্যার কাজ হয়ে গেছে। গাড়িতে তুলে নিয়েছি।

যেখানে বলেছি সেখানেই যেনো কোনো ঝামেলা ছাড়া পৌঁছে যায়।

হ্যাঁ স্যার চিন্তা করবেন না। প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।

আধঘন্টা পেরিয়ে গেল আর মেঘা এখনও আসছে না। বাড়ি চলে গেল নাকি? থাক আমিই একবার চেক করে আসি ওয়াশরুমে আছে নাকি।

মানালী ওয়াশরুম চেক করে মেঘাকে পেলো না তাই ভাবলো হয়তো বাড়ী চলে গেছে। মেঘার ফোন নম্বরটাও নেই ওর কাছে।

অনুষ্ঠান শেষে বিকেলবেলা সবাই নিজের নিজের বাড়ি চলে গেল। সন্ধ্যা বেলা মেঘার মা বাবা ফিরে এলো কিন্তু গোটা বাড়িটায় মেঘাকে খুঁজে পেলো না। কলেজে ফোন করে খোঁজ নিলো। আরও নানা জায়গায় খুঁজলো। চব্বিশ ঘণ্টা না হওয়ায় পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করতে পারলো না।

রাত্রি আটটায় ইয়াসিরের গাড়ি এসে থামলো ওর বাড়ির সামনে। কলেজের অনুষ্ঠান শেষে ও অফিসে গিয়েছিল। মেঘার বাড়ির সামনে বাইরে ওর বাবা মাকে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ইয়াসির।

আংকেল আন্টি কিছু হয়েছে? আপনাদের খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।

আরাফাত আমার মেয়েটা এখনও বাড়ি ফেরেনি। চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো খোঁজ পায়নি।

আন্টি এতো টেনশন করছেন কেনো হয়তো কোনো ফ্রেন্ডের বাড়ীতে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

ওর কোনো ফ্রেন্ড নেই। ও খুব চাপা স্বভাবের।

আংকেল ওর মোবাইলের লোকেশন ট্রেস করেছেন?

হ্যাঁ। লাস্ট লোকেশন এখান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে যে জঙ্গলটা আছে ওই জায়গাটা দেখাচ্ছে। ওখানে ওর ভাঙা মোবাইলটা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় নি। চব্বিশ ঘন্টা না হওয়ায় পুলিশ স্টেশনে রিপোর্টও করতে পারিনি। কালকে মেয়েটার জন্মদিন ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ পার্টি রাখবো কিন্তু যাকে নিয়ে এতো প্ল্যানিং তাকেই তো পাওয়া যাচ্ছে না।

আংকেল বেশি টেনশন করবেন না। আমিও কিছু লোক লাগিয়ে দিচ্ছি মেঘাকে খোঁজার জন্য। আপনারা বাড়ির ভেতরে গিয়ে রেস্ট করুন।

মিস্টার আর মিসেস চৌধুরী বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। ইয়াসির গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর মেঘার জ্ঞান ফিরলো। ক্লোরোফর্মের ডোজটা হয়তো একটু বেশিই ছিলো। ওর মাথাটা ভার ভার লাগছে। দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে ধীরে ধীরে উঠে বসলো মেঘা। দীর্ঘক্ষণ চেতনাহীন থাকায় অতিরিক্ত আলোতে কিছুক্ষণের জন্য কিছুই ঠিকভাবে দেখতে পেলো না। বেশ খানিক্ষণ পরে দেখলো ওর সামনে ইয়াসির বসে আছে আর ঘরটা ওর কাছে অপরিচিত।

ইয়াসির সাহেব প্লীজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন। কারা যেনো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।

ইয়াসির ওর কথার কোনো জবাব দিলো না। ওর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো। মেঘা মুখ ঘুরিয়ে নিল।

ভালোয় ভালোয় খাবারটা খেয়ে নাও। এখন শুধু হাতদুটো বাঁধা আছে। কথা না শুনলে পুরো শরীরটাকেই বেঁধে রাখবো।

ইয়াসিরের রাগী গম্ভীর আওয়াজে মেঘা দমে গেল। অতঃপর ভদ্র মেয়ের মতো হাঁ করে খাবারটা খেয়ে নিলো।

হাত ধুয়ে এসে মেঘার সামনে দুটো ডকুমেন্টস এগিয়ে দিলো। মেঘার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে হাতে পেন ধরিয়ে দিল।

সাইন করো।

কিসের পেপার্স।

সাইন করতে বলেছি তো। একমিনিট সময় দিলাম তারাতারি সাইন করবে।

ইয়াসিরের রাগী আওয়াজ শুনে মেঘা না দেখেই পেপার্সগুলোতে সাইন করে দিলো। সাইন করা হয়ে যেতেই ইয়াসির ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর ডকুমেন্টসগুলো নিয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে কাউকে দিয়ে এলো।

ইশ এই ছেলেটার হাসিটা এতো কিউট কেনো? এতো হ্যান্ডসাম কেনো সে। প্রথম দিনই তো ফর্সা -মসৃণ উন্মুক্ত পিঠ দেখিয়ে আমার মনটা চুরি করে নিয়েছে। আর কতভাবে পাগল করবে আমায়?

কথাগুলো বলেই মেঘা দুইহাতে নিজের মুখটা ঢেকে নিলো। ইয়াসির ঘরে ঢুকে দেখলো মেঘা দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে রেখেছে। ঘরের মধ্যে কারোর উপস্থিতি অনুভব করে মেঘা মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিলো।

ইয়াসির সাহেব আমি বাড়ী যেতে চাই।

পরশুদিন দশটায় পৌঁছে দেবো।

আমি এক্ষুনি যেতে চাই। মা বাবা আমাকে খুঁজছে। হয়তো অনেক টেনশনও করছে।

তোমাকে উত্তরটা জানিয়ে দিয়েছি। আমার কথার একবিন্দুও নড়চড় হবে না। এই পাকেটগুলোতে তোমার ড্রেস আছে। ফ্রেশ হয়ে এসো। আর এই যে তোমার জন্য একটা নতুন ডায়েরি এসেছি। যা খুশি করবে তবে যেনো এই বাড়ীর বাইরে এক পাও না পড়ে। নইলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর সেটা তোমার জন্য দুর্ভাগ্য জনক। আমি বাড়ী যাচ্ছি। গার্ডগুলোকে পাহারায় রেখেছি।

কথাগুলো বলেই ইয়াসির বেরিয়ে গেলো। মেঘা পাল্টা কিছু বলতে পারলো না।

আমার সঙ্গে কেনো এমন করছেন ইয়াসির সাহেব? যেদিন থেকে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে সেদিন থেকেই আপনি আমার ওপর জোর খাটাচ্ছেন। কোন অধিকারে আমার সঙ্গে এমন করছেন?

কথাগুলো বলে মেঘা অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর মেঘা চোখ মুছে ঘরটার কোনায় কোনায় নিজের মোবাইলটা খুঁজতে শুরু করলো। আধ ঘন্টা খোঁজার পড়েও মোবাইলের ‘ম’ এরও হদিশ পেলো না। তাই ক্লান্ত হয়ে বেডে বসে পড়লো। তারপর নিজেই নিজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,,

আরে মেঘা ওই ইয়াসির বজ্জতটা তোকে কিডন্যাপ করে এনেছে। তোর কাছে কি সে মোবাইল রেখে যাবে? অবশ্যই না।

নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে মেঘা আবারও বলে উঠলো,,,

তুই খুব বোকা মেঘা, খুব বোকা।

কথাগুলো বলেই মেঘা, ইয়াসিরের দেওয়া ড্রেস নিজে রুমের সঙ্গে অ্যাটাচ ওয়াশরুমে ঢুকলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here