#তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও
#ষষ্ঠ_পর্ব
#লেখনীতে_সুহানা_সুলতানা
আমায় বিশ্বাস করো তো?
যদি বিশ্বাস নাই করতাম এখানে বন্দি হয়ে থাকতাম নাকি? এমনিতেও আজকে মা বাবা হয় মিটিং নয়তো পার্টি নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে। এমনিতেও আমার অনুপস্থিতির প্রভাব ওদের ওপর পড়বে না।
মেঘা উই আর ম্যারিড।
হোয়াট!!
আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তাই সব আগে বিয়ে করেছি। তোমার কোনো আপত্তি আছে?
আর থাকলেও কিছু করার নেই আমার বউকে আমি ছাড়ছি না।
ইয়াসিরের মুখে বউ ডাকটা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেল মেঘা।
কি হলো বলো?
মা বাবা যদি
আমি আমাদের মাঝখানে অন্য কোন থার্ড পারসন অ্যালাও করবো না।
কিন্তু
নো ইফ নো বাট। বায় দা ওয়ে হিসাবমত আজকে কিন্তু আমাদের ফুলসজ্জা।
ফুলসজ্জার কথা শুনে লজ্জায় মেঘার গালদুটো দিয়েও যেনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
তো চলো তোমাকে ওই রোমান্টিক ভিডিওগুলোর ট্রু এক্সপেরিয়েন্স দেখিয়ে দিই।
মেঘার এখান থেকেই ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ইয়াসিরের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ থাকায় ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারছে না। ইয়াসির ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে এলো। বেডে বসিয়ে দিয়ে ওদের বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার দেখালো মেঘাকে। মেঘা রেজিষ্ট্রি পেপার হাতে নিয়ে বসে আছে। ওর মনের মধ্যে একটা অনুসুচনা কাজ করছে। যতোই অবহেলা করুক মা বাবা তো। তাদেরও একটা ইচ্ছে আছে মেঘার বিয়ে দেওয়া নিয়ে। আবার যতোই তার অগোচরে হোক বিয়েটা তো হয়েছে। এখন ও ইয়াসিরের বিয়ে করা বউ কেউ চাইলেও এই সত্যিটা বদলাতে পারবে না।
আচ্ছা উনি কি ভালোবেসেই আমাকে বিয়ে করেছেন? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে ওনার?
মেঘা যখন নিজের চিন্তার জগতে বিচরণ করছিলো তখন ইয়াসির ওর কোলে মাথা রেখে বেডে শরীরটা এলিয়ে দিল। আচমকা ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটায় মেঘা কেঁপে উঠলো।
মেঘ মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো।
মেঘা ওর ঘন চুলের ফাঁকে ফাঁকে আঙুল চালাতে শুরু করলো। পুরো ঘরজুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দুজনের নিশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
মেঘ আমায় যেতে হবে। আর কালকের দিনটা আসতে পারবো না। পরশুদিন আটটায় এসে তোমায় নিয়ে যাবো। তোমার প্রয়োজনীয় সব জিনিস রাখা আছে। আশা করি অসুবিধা হবে না।
কিন্তু এখন তো রাত্রি আড়াইটে বাজছে। এতো রাতে বেরোনো ঠিক হবে না।
আমার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। উপায় না থাকলেও যেতে হবে। নইলে কি সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কে একা ফেলে রেখে যেতাম।
ইয়াসির উঠে বসে মেঘাকে কাছে টেনে নিয়ে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে বসে গাড়ী স্টার্ট দিলো। নির্জন রাস্তায় ফুল স্পীডে গাড়ি চলছে।
বাড়ি পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালবেলা,,,
ইয়াসির সাতটায় ঘুম থেকে উঠেছে। প্রতিদিনের নিয়মমাফিক কাজকর্ম করতে করতেই সাড়ে সাতটা বেজে গেল। তখনই বাইরে থেকে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ এলো। ইয়াসির একটা টিশার্ট গায়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
রোহান চৌধুরী আর মেহের চৌধুরীকে পুলিশ গাড়িতে তুলছিলো। আর ওরা নিজেদের অপরাধ কি সেটা জানতে চাইছিলো।
পরশু কোর্টে যাবেন ওখানেই আপনাদের অপরাধ কি তাই জানানো হবে।
অফিসার কথাগুলো বলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে গাড়িতে ঢুকে বসলেন। গাড়িটা আপনগতিতে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলো। ইয়াসির রহস্যময় হাসি দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল।
আজকেই কি মেঘাকে নিয়ে আসব? ভেবেছিলাম এরা কাজটা করতে দেরী হবে কিন্তু না বরং অনেকটাই তাড়াতাড়ি করেছে। থাক একদম কালকেই নিয়ে আসবো।
ইয়াসির রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
স্যার, ওনার বিরুদ্ধ প্রমাণগুলোর সব ডকুমেন্টস অ্যারেঞ্জ করা হয়ে গেছে। ওগুলোর কপি করাও হয়ে গেছে আর লইয়ারের কাছেও পৌঁছে দিয়েছি।
এই জন্যই তো তোমায় আমি এতোটা বিশ্বাস করি সায়ন। কালকে আমার বাড়িতে যেও ফাইলগুলো নিয়ে আসতে। কালকে আমার অফিসে আসা হবে না। ম্যাডামকে সামলাতে সামলাতেই পুরো দিন চলে যাবে।
ওকে স্যার।
ইয়াসির রাত আটটায় বাড়ি ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে শুয়ে পড়লো।
আজকে তো উনি আসবেন না। ধুর এভাবে একা একা থাকতে ভালো লাগে। আচ্ছা বাবা মা কি আমার জন্য টেনশন করছে না? হয়তো করছে আবার হয়তো বা করছে না। ইয়াসির সাহেবকে আমার ভালো লাগে হয়তো বা ভালোও বাসি। তবুও একটা ‘কিন্তু’ থেকেই যাচ্ছে। আমার জন্য ওনার করা ছোটো ছোটো কেয়ার গুলোর জন্যই হয়তো ওনাকে ভালবেসে ফেলেছি। ওনাকে খুব মিস করছি আমি। আই মিস ইউ ইয়াসির সাহেব।
নিজের সঙ্গেই কথাগুলো বলে মেঘা ব্রেসলেট পড়া হাতটা ওপরে তুলে ব্রেসলেটটাতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর ইয়াসিরের দেওয়া ডাইরিতে নিজের অনুভুতি ব্যাক্ত করলো। লিখতে লিখতেই ওর চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে এলো।
কথামত ইয়াসির সকাল আটটায় বাগানবাড়িতে এসে পৌঁছলো। ঘরে ঢুকে দেখলো মেঘা এখনও ঘুমোচ্ছে। ও মেঘার পাশে বসে মেঘার ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মেঘাকে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য ডাকতে শুরু করলো।
ইয়াসির সাহেব, আগে তো আপনার উন্মুক্ত উজ্জ্বল পিঠটা আমার স্বপ্নে আসতো আর এখন আপনার আওয়াজও আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। আপনি খুব বাজে। আমায় ঘুমোতে দিন।
কথাগুলো বলেই মেঘা ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
ইয়াসির ওর চমকিত ভাবটা কাটিয়ে উঠে আবারও মেঘাকে ডাকতে শুরু করলো।
মেঘ আমি সত্যিই এসেছি স্বপ্নে নয়। চোখ খোল।
মেঘা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই ইয়াসির ওর পাশে বসে আছে। হারানো কোনো প্রিয় জিনিস হঠাৎ খুঁজে পেলে কেউ যতটা খুশি হয় মেঘা তার থেকে দ্বিগুণ খুশি হয়ে পাশে বসে থাকা ইয়াসিরকে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আই মিস ইউ ইয়াসির সাহেব। আই মিস ইউ সো মাচ।
আই লাভ ইউ মেঘ।
বলেই মেঘার মাথায় ঠোঁটের স্পর্শ দিলো ইয়াসির।
মেঘা মুচকি হেসে ইয়াসিরকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ইয়াসির পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রোল করতে শুরু করলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর মেঘা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। চুল থেকে টাওয়েলটা খুলে দিলো। ইয়াসির ফোনটা অফ করে মেঘার দিকে তাকালো। চুল থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে ড্রেসটা পেছনের দিকে ভিজে গেছে। ইয়াসির বেড থেকে উঠে গিয়ে টাওয়েলটা হাতে নিয়ে মেঘার পেছনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে দিতে দিতে গম্ভীর আওয়াজে বলে উঠলো,,,
মেঘ চুল মোছনি কেনো? দ্বিতীয় দিন যেনো এমন না দেখি।
মেঘা কোনো উত্তর দিলো না। থাক না কিছু না বলা কথা হৃদয়গহীনে।
ওরা দুজন বেরিয়ে পড়লো আসল ঠিকানার উদ্দেশ্যে।
মাঝরাস্তায় ইয়াসির জিজ্ঞেস করল,,,
কিছু খাবে মেঘ?
মেঘা মাথা নাড়িয়ে না করে দিলো। ও সেই তখন থেকেই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছে। একটাও কথা বলেনি। এমনকি ইয়াসিরের কথার জবাবও ইশারায় দিয়েছে।
তুমি কি মৌন ব্রত পালন করছো?
এবারও মেঘা মাথা নাড়িয়ে না জবাব দিলো। ইয়াসিরও আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে গেলো আর মিউজিক প্লেয়ারে গান চালিয়ে দিলো,,,
“বারিষকি ও মাহিনা ভুল পায়েঙ্গে কাভিনা
যুলফসে যাব পানি ঝাটকা তুনে ঝুমকে
হায়ে এইসি খুবসুরাত ভূল বৈঠে হাম সারাফাত
লট আয়ি পাগাল আঁখে তুঝকো চুমকে ”
ইয়াসির ড্রাইভ করতে করতেই মেঘার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে আবারও ড্রাইভে মনোযোগ দিলো। মেঘা ওর দিকে তাকালো। মেঘার মনে হলো লোকটা এমন ভাব করে আছে যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না।
আহা মেঘ এমন করে তাকিয়ে থেকো না প্লীজ অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।
#চলবে