তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও #দশম_পর্ব

0
691

#তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও
#দশম_পর্ব
#লেখনীতে_সুহানা_সুলতানা

ঘুম ভাঙলো তাহলে।

হ্যাঁ। তুমি মাথায় তেল দিয়ে দিলে খুবই আরাম লাগে আর চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে।

ইয়াসির মেঘাকে ওর সামনে নিয়ে এলো। দুই হাত দিয়ে মেঘার কোমড় জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মেঘাও পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।

মেঘার মনে একটা গানই বেজে উঠলো

‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায়’।

বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ আর মাটির সোদা গন্ধ একটা আলাদা জগৎ তৈরী করেছে। আর সেই জগতে ইয়াসির আর মেঘার বিচরণ বিদ্যমান। একটু আগেই ঘুম থেকে ওঠায় মেঘার চোখে ঘুমপরিরা ধরা দিচ্ছে না। ইয়াসির এখন ক্লান্ত। ওর শরীরটা একটু বিশ্রাম চায়।

তোমার চোখ তো লাল হয়ে গেছে। চলো তুমি ঘুমাবে আর আমি তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দেবো।

আমি ঘুমিয়ে পড়লে কি করবে?

তোমার বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়বো।

ইয়াসির মেঘার কথায় ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।

তোমার ঘুম ভাঙাবো না।

মেঘা ইয়াসিরকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল। ইয়াসির বালিশে মাথা রাখতেই মেঘা ওর পাশে বসে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ওর ঘন চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,

আমি তোমায় খুব বিরক্ত করি তাইনা? রাতবিরেতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে তোমায়ও জাগিয়ে তুলি। বাচ্চাদের মতো বায়না করি। তুমি অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরলেও আমি তোমার যত্ন নেওয়া তো দূরে থাক তোমার খোঁজও নিতে পারিনা। তুমি…

ইয়াসির মেঘার ঠোঁটে তর্জনী আঙুল লম্বালম্বি ভাবে ছুঁইয়ে মেঘার কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটালো। মেঘার ছলছল চোখ বেয়ে বিন্দু বিন্দু অশ্রু অবিরাম গড়িয়ে পড়ছে। ইয়াসির দুই হাতের মাঝে মেঘার মুখটা নিয়ে ভেজা পাঁপড়ি গুলোতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মেঘার কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেলো।

চোখ থেকে যদি আর একফোঁটাও জল গড়িয়ে পড়েছে তবে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। আমি তোমাকে কিছু বলেছি এসব নিয়ে।

ন না।

তাহলে এইসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা তোমার মাথায় এলো কিভাবে? শোনো তুমিই আমার সব।আমার প্রেয়সী-ভালোবাসা-অর্ধাঙ্গিনী। তুমিই তো আমার সবকিছু। আমার যা কিছু সবটাই তো তোমাকে ঘিরে। তুমি প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত কত কষ্ট সহ্য করছো আমাদের ভালোবাসার চিন্হকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য। আর কিছুদিন পর আমায় বাবা ডাকটা শোনাবে তুমি। তারপরও যদি এসব কথা বলো তাহলে তো আমি তোমার কাছে ছোটো হয়ে যাবো তাই না। তাই এসব থার্ড ক্লাস চিন্তা ভাবনা যেনো তোমার মাথায় না প্রবেশ করে। মনে থাকবে?

থাকবে।

আচ্ছা বলোতো বাচ্চার নাম কি রাখবে?

‘পটললতা’।

ইয়াসির ওর কথা শুনে হেসে ফেললো।

একদম হাসবে না। ছেলে হলে পটল আর মেয়ে হলে লতা নাম রাখবো। আর তাছাড়া মেয়ের নাম রাখবো ‘ইয়ানা’ আর ছেলের নাম রাখবো ‘মাহির’। সুন্দর না নাম দুটো?

হুম।

এই তুমি শুয়ে পড়ো তো। আর জেগে থাকতে হবে না।

ইয়াসির মেঘার পেটে হাত বুলিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

দেখ, পটল বা লতা যেই থাক না কেন তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমি আর তোর মাম্মাম অপেক্ষায় রয়েছি। লাভ ইউ চ্যাম্প।

মেঘার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,

ভালোবাসি।

বালিশে মাথা এলিয়ে দিল ইয়াসির। মেঘাও ওর চুলের ফাঁকে ফাঁকে আঙুল চালাতে শুরু করলো। ইয়াসিরের চোখে রাজ্যের ঘুম জড়ো হলো। মেঘা ইয়াসিরের মুখের দিকে পলকহীন চেয়ে রইল।

এই মানুষটা এখন একান্তই আমার আপনজন। ইশ প্রথম যেদিন লোকটার ফর্সা-মসৃন-সুঠাম পিঠখানা দেখেছিলাম সেদিনই হয়তো মনে ধরেছিলাম। আচ্ছা এইভাবেও কি কাউকে মনে ধরা যায়? কার মনে ধরে কার ধরেনা তা আমার জানা নেই তবে আমার তো ধরেছে। আর এই মানুষটাকেই আমি ভালোবাসি। ভালোবাসি এই কেয়ারিং-রাগী-প্রেমময় মানুষটাকে। ভালোবাসি ইয়াসির সাহেব।

মনে মনে কথাগুলো আওড়ে নিয়ে মেঘা খুবই সন্তর্পনে ইয়াসিরের মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে সাবধানতার সঙ্গে ইয়াসিরের পুরো মুখ ছোটো ছোটো চুমুর বর্ষণ ঘটালো। ঘুমন্ত ইয়াসির কিছুই টের পেল না। সারারাত জেগে এটা সেটা কল্পনা করার পর ভোরের দিকে চোখ লেগে গেল মেঘার।

সূর্যের একফালি মিষ্টি রোদের স্পর্শে ইয়াসিরের চোখ মুখ বিরক্তিতে কুচকে গেলো। মেঘা ওর বাহুডোরে আবদ্ধ। চোখ খুলে মেঘার ঘুমন্ত মুখখানি দেখে ইয়াসিরের মনটা পরম প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল।

যদি আমি কবি হতাম তবে তোমায় নিয়ে হয়তো সহস্র কবিতা লিখে ফেলতাম। লেখক হলে আমার গল্প-উপন্যাসের ঝুলিয়ে তোমায় বিভিন্নরূপে সাজাতাম। চিত্রকর হলে হয়তো তোমায় নানা রঙের সৌন্দর্যে মন্ডিত করতাম। আরও কতো কিছুই না করতাম।

কথাগুলো মনে মনে বলে মেঘার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মেঘাকে বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো ইয়াসির।

দুপুর বারোটা সূর্য তখন তার রশ্মির তাপে চারিদিক উত্তপ্ত করেছে। মেঘা চোখ খুলে দেখল বারোটা বেজে গেছে।

আজকেও আমাকে না জাগিয়ে অফিসে চলে গেল। ধুর ভালো লাগে না।

বিকৃত মুখে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নীচে গিয়ে দেখলো ইয়াসির ডাইনিংয়ের সোফায় বসে ল্যাপটপ স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধির উদয় হলো। ও পা টিপে টিপে ইয়াসিরের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দুটো এগিয়ে দিতেই ইয়াসির ওর হাত জোড়া ধরে ফেললো।

ধ্যাত একটু চমকে যাওয়ার অ্যাক্টিং করলে কি হতো?

মেঘার বাচ্চামোতে বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো ইয়াসির।

আবার হাসছে। তুমি এখন বাড়িতে কি করছেন? তোমার না অফিসে থাকার কথা।

হুম তাহলে চলে যাই? আমি বাড়ীতে আছি সেটা তো তোমার তো ভালো লাগছে না।

ইয়াসিরের পিঠে আলতো করে কয়েকটা চাপড় মারলো মেঘা।

আপনি খুব খারাপ ইয়াসির সাহেব। আমি কথা বলবো না আপনার সাথে।

ইয়াসির চোখের ইশারায় একটা সার্ভেন্টকে খাবার দিয়ে যেতে বললো। মেঘা ইয়াসিরের থেকে অনেকটা দূরে সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। ইয়াসির ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও ওর কোনো হেলদোল নেই। এর মধ্যেই সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে গেলো। ইয়াসির সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে খাবারের প্লেটটা রেখে মেঘার কাছে এগিয়ে গেলো।

আচ্ছা সরি আর বলবো না। আমি তো জানি তোমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আমি বাড়িতে থাকলে।

মেঘা এখনও অন্য দিকে মুখ করে আছে। ইচ্ছে করেই তাকাচ্ছেনা ইয়াসিরের দিকে কারন তাকালেই ওর রাগ-অভিমান সব গলে জল হয়ে যাবে।

এখনও কিছু বলবে না? খেয়ে নেবে চলো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

মেঘার মধ্যে কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলো না।

আমার বাচ্চাকে আমি অভুক্ত থাকতে দেবো না।

কথাটা বলেই ইয়াসির খাবারের প্লেটটা এনে মেঘার মুখের সামনে খাবার ধরলো।

এখন সব ভালবাসা শুধু বাচ্চার জন্য আমি তো কিছুই না।

ইয়াসির মেঘার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,

তুমিটাই তো সব। তোমার জন্যই তো ওকে পাবো। এখন তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নাও।

মেঘা মুচকি হেসে খাবারটা মুখে নিলো। খাওয়ার পর মেঘা বলে উঠলো,,,

কেক বানাতে ইচ্ছে করছে। চকো চকো ফ্লেভার। চলো না বানাই।

চলো। বাট আমার শর্ত রয়েছে কয়েকটা।

সব শর্ত মেনে নিয়েছি এবার তো চলো।

না শুনেই মেনে নিলে?

হ্যাঁ। এবার চলো তো। দেরী হচ্ছে তো নাকি।

কিচেনে গিয়ে ইয়াসির বলে উঠলো,,,

একটা কাজেও হাত লাগাতে পারবে না চুপচাপ আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে নয়তো বসে থাকবে।

তাহলে পা লাগাতে পারবো।

মেঘ।

আচ্ছা আচ্ছা সব তুমিই করবে।

ইয়াসির কেক বানানোর সমস্ত উপকরণ ময়দা, ডিম, দুধ, চিনি, বেকিং পাউডার, চকোলেট চিপস, কোকো পাউডার একটা বাটিতে মিশিয়ে নিয়ে ব্যাটার তৈরী করে কেক মোল্ডে বাটার পেপার দিয়ে ওর ওপর কেক মিক্সচারটুকু ঢেলে দিয়ে মাইক্রো ওভেনে দিয়ে দিলো। তার আগেই ক্রিম তৈরি করে রেখেছিল। মাইক্রোওভেনে ভেতর কেক মোল্ডটা রাখার পর পেছনে ঘুরতেই মেঘা ওর গালে আর নাকে ক্রিম লাগিয়ে দিল।

মেঘা খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বলল,,,

তোমায় খরগোসের ছানার মতো দেখাচ্ছে।

তবেরে এবার আমিও তোমায় ক্রিম মাখিয়ে সাদা বেড়ালের বাচ্চা বানাচ্ছি।

এই না, একদম না। কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here