#তুমি_তাই,পর্বঃ১৩
অরিত্রিকা আহানা
রেজোয়ানের বাসার ছাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি এবং রেজোয়ান। রেজোয়ান উদাস দৃষ্টি মেকে আকাশ পানে চেয়ে আছে। তাঁর খানিকটা পেছনে হাতের মুঠোয় ওড়না পাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি।
শায়েলা মুরসালীনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর থেকেই বেশ গম্ভীর হয়ে আছে রেজোয়ান। কথা বলতে ভয় হচ্ছে। তবুও ইতস্তত করে বললো,’রেজোয়ান ভাই? কি হয়েছে আপনার?’
রেজোয়ান সামনে ঘুরলো। ইশারায় পাশে দাঁড়াতে বললো তিন্নিকে। বিনা প্রতিবাদে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো তিন্নি। রেজোয়ান আলতো করে তাঁর মাথায় হাত রেখে বললো,’ভালোবাসা মানে বুঝিস??
তিন্নি উপরে নিচে মাথা নাড়ালো। এরমানে সে বোঝে। কতটা বোঝে সেটা রেজোয়ানের অজানা। ম্লান হাসলো সে। বললো,’একটা গল্প বলি তোকে। মনোযোগ দিয়ে শুনবি কিন্তু? ঠিক আছে?
তিন্নি তাঁর কথার জবাবে মলিন মুখ করে বললো,
-‘আপনার কি বেশি মন খারাপ রেজোয়ান ভাই? কফি বানিয়ে আনবো?’
-‘কিচ্ছু লাগবে না। তুই চুপচাপ গল্পটা শোন। ‘
-‘আচ্ছা। ঠিক আছে।’
-‘শুরু করছি তাহলে?’
তিন্নি ঘাড় কাত করে সায় জানালো। বলতে শুরু করলো রেজোয়ান,
-‘একদেশে ছিলো এক অহংকারী রাজা। রাজার ছিলো এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটি মানে রাজকন্যাটি ছিলো ভীষণ সুন্দরী। চারদিক থেকে রাজপুত্ররা তাঁকে বিয়ে করার জন্য দিশেহারা। কিন্তু রাজার কাউকে পছন্দ হয় না। একদিন হঠাৎ এক নবাবের ছেলে রাজকন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। নবাবের ছিলো সীমাহীন ধনসম্পদ। রাজার চাইতেও অনেক বেশি। রাজা জানতো নবাবের ছেলে অসৎ দুশ্চরিত্র, লম্পট, কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে রাজকন্যাকে নবাবের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়ে যান। কিন্তু ততদিন রাজকন্যা অন্য একজনকে ভালোবেসে ফেলেছে। নিতান্ত সাধারণ ঘরের ছেলে সে। রাজকন্যাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু রাজা তাঁকে মেনে নিলেন না। ছেলেটা অনেক অনুনয় বিনয় করলো। তবুও না। উলটে রাজকন্যাকে হুমকি দিলেন সে যদি নবাবের ছেলেকে বিয়ে না করতে রাজী না হয় তবে ছেলেটাকে মেরে ফেলবে। তুই শুনছিস তো?’
-‘হ্যাঁ। শুনছি। তারপর কি হলো? রাজকন্যা নিশ্চয়ই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেলো?’
-‘না রাজকন্যা পালায় নি। পালনোর কোন পথ ছিলো না। নবাবের অনেক ক্ষমতা। পালিয়ে যাবে কোথায়? নবাব একনিমিষেই ধরে ফেলবে!’
-‘তবে কি রাজকন্যা নবাবের ছেলেকে বিয়ে করে নিলো?’
-‘হ্যাঁ। ভালোবাসার মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজকন্যা নবাবের ছেলেকে বিয়ে করে নিলো।’
-‘আর ছেলেটা?’
-‘সে এসবের কিছুই জানতো না। রাজকন্যাকে ভুল বুঝে অভিমানে দূরে সরে যায়। অনেক দূরে।’
-‘তারপর তাদের আর কখনো দেখা হয় নি?’, এক এক করে প্রশ্ন করতে থাকে তিন্নি।
-‘হয়। নবাবের লম্পট ছেলে রাজকন্যাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাবার বাড়িতে ফিরে আসে রাজকন্যা। কিন্তু সেখানেও দুর্দশার শেষ রইলো না। হঠাৎ করে রাজকন্যার ভাই এবং নবাবের ছেলে দুজনেই মারা যায়। রাজার রাজ্যও ততদিনে ছারখার। সব হারিয়ে রাজা শয্যাশায়ী। অসুস্থ পিতার দায়িত্ব রাজকন্যা নিজের কাধে তুলে নিলো।’
এইটুকু বলে রেজয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তিন্নি চুপ করে শুনছে। তাঁর ভীষণ খারাপ লাগছে। রাজকন্যা এবং ছেলেটার শেষ পরিনতি জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
-‘তোকে এই গল্পটা কেন বলছি বুঝতে পারছিস?’
-‘না।’
-‘পারবি। একটু ধৈর্য ধর।’
আবার বলতে শুরু করলো রেজোয়ান,
-‘রাজকন্যা এবং সেই ছেলেটা দুজনেই তাদের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে। অসহ্য বেদনা নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তারা কখনো মরার কথা ভাবে নি। নিজের মত করে বাঁচতে চেষ্টা করেছে। ছেলেটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, রাজকন্যা নিজের দৈন্যদশার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করছে।’
তিন্নি এখনো বুঝতে পারে নি রেজোয়ান কি বুঝাতে চাইছে। বললো,’রাজকন্যার সাথে কি আমার কোনভাবে সম্পর্ক আছে রেজোয়ান ভাই?’
-‘আছে।’
-‘কি?’
-‘বলছি। তার আগে গল্পটা শেষ করি। গল্প কিন্তু এখনো শেষ হয় নি।’
-‘ঠিক আছে।’
-‘অনেক দিন বাদে হঠাৎ আবার রাজকন্যার সঙ্গে ছেলেটার দেখা হয়। রাজকন্যাকে দেখে ছেলেটা খুশি হয় না। মাথায় প্রতিশোধের ভুত চাপে। নানাভাবে সে রাজকন্যাকে কষ্ট দিয়ে চায়। কিন্তু দিনশেষে তার সকল চেষ্টা বিফল হয়। কারণ রাজকন্যাকে কষ্ট দিয়ে সে শান্তিতে থাকতে পারে না।’
-‘অনেক ভালোবাসে যে তাই!’
-‘হ্যাঁ। ছেলেটা রাজকন্যাকে খুব ভালোবাসে। জানতে পারে রাজকন্যার আত্মত্যাগের কথা। তখন সে রাজকন্যাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের এক অবুঝ রাজকন্যাও ছেলেটিকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলে। সে অবশ্য জানে না, ছেলেটা এখনো আগের তার পুরোনো প্রেমিকাকেই ভালোবাসে। ছেলেটাও ভয়ে বলতে পারে না। কারণ জানতে পারলে যদি সে নিজের ক্ষতি করে?’
-‘ছেলেটা তো জানিয়ে রেজোয়ান ভাই?’
-‘হ্যাঁ। জানিয়ে দিলো। অনেক ভেবে দেখেছে ছেলেটা না জানালে অবুঝ রাজকন্যাকে ঠকানো হবে। জটিলতা বাড়বে। তাই শেষমেষ জানিয়ে দেওয়াটা ঠিক মনে করলো।’
এটুকু বলে পুনরায় থামলো রেজোয়ান। আড়চোখে তিন্নির দিকে চাইলো। তিন্নি মাথা নিচু করে কাঁদছে। রেজোয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আমার গল্প শেষ তিন্নি। এখন তুই বল ঐ অবুঝ রাজকন্যাটা কি করবে? সে কি মরবে?’
তিন্নি জবাব দিলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। তাঁর বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। কেন সে রেজোয়ানের ভালোবাসার রাজকন্যাটি হলো না! এমন কেন হলো!
-‘আমার মনে হয় কি জানিস? আমার মনে হয়, সেই অবুঝ রাজকন্যাটি মরবে না। সে বেঁচে থাকবে। জীবনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শিখবে। ছেলেটাকে দেখিয়ে দেবে জীবন কারো জন্য থেকে থাকে না। তারপর একদিন তার জীবনেও অন্য কোন রাজপুত্র আসবে যে রাজকন্যার পুরোনো সব দুঃখ ভুলিয়ে দিবে। যাকে পেয়ে রাজকন্যা নিজেকে পৃথিবীর সব চাইতে সুখি মানুষ মনে করবে।’
তিন্নি চোখ মুছে ম্লান হাসলো। ধরে আসা কন্ঠে বললো,’আপনি ভয় পাবেন না রেজোয়ান ভাই আমি মরবো না। আমি বেঁচে থাকবো। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার রাজকন্যার কাছে ফিরে যেতে পারেন।’
কথা শেষ করে আর একমুহূর্তও দাড়ালো না সে। ছুটে বেরিয়ে গেলো। রেজোয়ান ছলছল দৃষ্টি নিয়ে তাঁর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। তিন্নিকে সে ভালোবাসে, স্নেহ করে। সবসময় চায় তিন্নি ভালো থাকুক। তিন্নির জন্য সে নিজের গোটা পৃথিবী ছেড়ে দিতে পারে। শুধু পারে না তিন্নিকে নিলির মতন করে ভালোবাসতে। নিলি যে তাঁর প্রেয়সী! তাঁর প্রিয়তমা! তাঁর হৃদযন্ত্রের স্পন্দন! যেই স্পন্দন থেমে গেলে মানুষ আর বাঁচে না।
★
বেশ কয়েকদিন পরের কথা,
মন মেজাজ ভালো না থাকায় জাহিদকে নিয়ে একটা ব্যবিসায়িক পার্টিতে এসেছে রেজোয়ান। ঢাকা শহরের বড় বড় বিজনেসম্যানরা সবাই এই পার্টিতে আমন্ত্রিত। ভদ্রতার খাতিরে হলেও অ্যাটেন্ড করা প্রয়োজন।
কিন্তু এখানে এসে এমন কিছু দেখবে একথা রেজোয়ান স্বপ্নেও ভাবে নি। স্বামী স্ত্রীর মতন পাশাপাশি হাত ধরে ভেতরে ঢুকছে রেজা এবং নিলি। হাসিহাসি মুখ নিলি। সাজসজ্জার বহর! রেজোয়ানের বুকের রক্ত ছলকে উঠলো। পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো নিলির হাস্যজ্জ্বল মুখখানা দিকে। কতদিন বাদে এমন করে হাসছে নিলি। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিকে। রেজার হাত ধরে হাসছে তাঁর প্রিয়তমা! জাহিদ তাঁর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,’চলুন ঐদিকটাতে গিয়ে বসি স্যার।’
-‘চলো।’, সামনে এগোলো রেজোয়ান। ভেতরের অস্থিরতা কাটানোর জন্য বেশকিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলো। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। জ্বালা বাড়লো বইকি কমলো না!
★
অনেকক্ষণ যাবত নিলিকে খুঁজছে রেজোয়ান। রেজা এখানেই আছে কিন্তু নিলি নেই। খুঁজতে খুঁজতে অন্যদিকে চলে গেলো সে। আরেকটু সামনে এগোতেই দেখলো,
একপাশে দাঁড়িয়ে মধ্যবয়সী একটা লোকের সঙ্গে কথা বলছে নিলি। প্রথম দেখাতেই লোকটার মতিগতি ভালো ঠেকলো না রেজোয়ানের। তাঁর অশ্লীল দৃষ্টি বারবার নিলির সরু কটিতে গিয়েই ঠেকছে। সম্ভবত নিলিকে একসঙ্গে নাচ করার প্রস্তাবও দিয়েছে। এবং জবাবের অপেক্ষা না করেই নিলির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকটা নিলির কোমর স্পর্শ করার আগেই রেজোয়ান একজন ওকে টেনে সরিয়ে নিয়ে গেলো।
কোমরে টান পড়ায় নিলি চমকে উঠে সামনের মানুষটার দিকে চাইলো। মুহূর্তেই অগ্নিবর্ণ ধারণ করলো চেহারা।
-‘হাউ ডেয়ার ইউ মি. রেজোয়ান?… হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?’
লোকটা সঙ্গে সঙ্গেই কেটে পড়লো। রেজোয়ান বিষন্ন মুখেও কিঞ্চিৎ হাসলো। বললো,’ডোন্ট বি সিরিয়াস। আই ডোন্ট হ্যাভ এন্যি ইন্টেনশন টু টাচ ইউ!’
-‘ডোন্ট ইউ?’
-‘নো। আই ওয়াজ জাস্ট হেল্পিং ইউ! লোকটা তোমার কোমরে হাত দিতে যাচ্ছিলো।’
তৎক্ষণাৎ নিজের কোমরের দিকে চাইলো নিলি। শাড়ি সরে কোমরের একাংশ দেখা যাচ্ছে। বিব্রত মুখে দ্রুত টেনে ঠিক করে নিলো। নিচে নামার জন্য পা বাড়াতেই রেজোয়ান তাঁকে টেনে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে গেলো। একটা বন্ধ রুমের তালা খুলে তড়িৎ গতিতে ভেতরে ঢুকে পড়লো। নিলি ঝাপিয়ে পড়লো দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দরজা খুললো না। রেজোয়ান বাধা না দিয়ে শান্তভাবে বিছানায় গিয়ে বসলো।
-‘এই দরজা খুলছে না কেন?’, আতংকে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো নিলির।
-‘বন্ধ দরজা খুলবে কি করে?’
-‘মানে?’
-‘মানে,আমি লক করে দিতে বলেছি। বাইরে জাহিদ অপেক্ষা করছে। আমি না বলা পর্যন্ত খুলবে না।’
-‘এসবের মানে কি?’ তেঁতে উঠলো নিলি।
-‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
-‘আমি আপনার কোন কথা শুনতে আগ্রহী নই। দরজা খুলতে বলুন নইলে আমি চিৎকার করবো।’
রেজোয়ান ফের হাসলো। হাত দিয়ে মাথার চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,’ইউ ক্যান ট্রাই। তোমার যত খুশি চিৎকার করো। কোন লাভ হবে না। রুম সাউন্ড প্রুফ!’
আকস্মিক ভয়ে নিলি চোখ বড়বড় করে ফেললো। রেজোয়ান কি করতে চাইছে তাঁর সঙ্গে? দরজা বন্ধ করেছে কেন?
গায়ের ব্লেজার টা খুলে খাটের পাশে ছুঁড়ে মারলো রেজোয়ান। বডি ফিটিং শার্টে তাঁর সুন্দর পেশিবহুল ফিগার নিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে। নিলিকে অবাক হয়ে তাঁর দিকে চেয়ে ঠোঁট কামড়াল। নিলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে তাঁর মুখের দিকে। এই মানুষটার সঙ্গে একঘরে থাকতে তাঁর যথেষ্ট আত্মসম্মানে বাঁধছে। কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায় নেই। রেজোয়ান কি চায় সেটা ওকে জানতে হবে।
-‘রেজার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক?…আমি যতদূর জানি তুমি তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী। তাহলে হাত ধরে এত হাসাহাসি কিসের?’ কোনরকম ভনিতা না করে সরাসরি প্রশ্ন করলো রেজোয়ান।
-‘দ্যাট’স নান অফ ইউর বিজনেস!’
-‘অফকোর্স ইট ইজ। আমার হবু বউয়ের সঙ্গে তাঁর কিসের এত হাসাহাসি!’
-‘এক্সকিউজমি? হবু বউ? কার? তোমার? নো মি.রেজোয়ান। পাত্রী যদিও ঠিক আছে কিন্তু পাত্রটা বদল হবে। আই অ্যাম গোয়িং টু ম্যারি মি.রেজা! ভেরি সুন ইউ উইল গেট দ্যা ইনভাইটেশন কার্ড।’
রেজোয়ানের হাসি মিলিয়ে গেলো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে হাঁ করে চেয়ে রইলো নিলির মুখের দিকে।
-‘আর ইউ কিডিং মি?’
-‘উই ডোন্ট হ্যাভ দ্যাট কাইন্ড অফ রিলেশনশীপ।’
-‘হাউ কুড ইউ মেরি হিম?’
-‘হাউ কুড আই মেরি হিম? ডু ইউ হ্যাভ দ্যা রাইট টু আস্ক মি দ্যা কোয়েশ্চেন?’
-‘কথা ঘুরিরো না নিলি। আমার প্রশ্নের জবাব দাও।’
-‘আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই!’
-‘না দিলে কিন্তু তুমি এখান থেকে বেরোতে পারবে না। সারারাত আমার সঙ্গে একঘরে কাটাতে হবে।’
গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে দিলো রেজোয়ান। নিলি ঝাঁঝালো চোখে চেয়ে রইলো সেদিকে। ছুঁড়ে মদের গ্লাসটা ফেলে দিতে মন চাইছে তাঁর। রাগ সংযত করে বললো,’হি প্রপোজ্ড মি!’
-‘এন্ড ইউ এক্সেপ্ট দ্যাট?’
-‘ইয়েস।’
-‘ডু ইউ লাভ হিম?’
-‘ইয়েস! এবার জাহিদ সাহেবকে বলুন দরজা খুলে দিতে। আমার ফিউন্সে আমার জন্য ওয়েট করছে!’
রেজোয়ানের মুখ ইতোমধ্যে লাল হয়ে গেছে। হাতের গ্লাসটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো সে। নেশায় টলমল অবস্থা। যার জন্য সে প্রতিনিয়ত মায়ের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে, যার জন্য তিন্নিকে ফিরিয়ে দিয়েছে সে কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করবে? অসম্ভব! রেজোয়ান কিছুতেই তা হতে দেবে না।
নিলির সামনে এগোতেই দুপা পিছিয়ে গেলো নিলি। এভাবে যেতে যেতে একেবারে দেওয়ালের সঙ্গে মিশে গেলো।
-‘হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?’
-‘আই ওয়ান্ট ব্যাক মাই লাভ! ‘
-‘সেটা সম্ভব নয়।’
-‘কেন সম্ভব নয়।’
নিলির চোখে পানি! এইমুহূর্তে রেজোয়ানকে ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে তাঁর। এই মানুষটা কখনোই তাঁর সুখ সহ্য করতে পারে না। এত কষ্ট দেওয়ার পরেও শখ মেটে নি। এখন নতুন করে আবার কষ্ট দিতে চাইছে। যেই শুনেছে রেজা ওকে বিয়ে করতে চায় অমনি মিথ্যে ভালোবাসার বুলি ছোটাচ্ছে। কেন এমন করছে সে?
রেজা যদি এসব জানতে পারে নিলিকে আর কোনদিন বিশ্বাস করবে না। যেই মানুষটা বিপদে আপদে নিলির পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁকে নিলি ঠকাতে চায় না।
ঠেলে রেজোয়ানকে সামনে থেকে সরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু শরীরের সমস্ত ভর তাঁর গায়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছে রেজোয়ান। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বললো,’আমি তোমাকে ভালোবাসি নিলি।’
লজ্জায় অপমানে কেঁদে ফেললো নিলি। বললো,’প্লিজ, স্টপ দিজ! আই বেগ ইউ! আমাকে যেতে দাও!’
তাঁর চোখে পানি দেখে হুশ ফিরলো রেজোয়ানের। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো নিলিকে। জাহিদকে ফোন করে দরজা খুলে দিতে বললো। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো নিলি। সে বেরিয়ে গেলে বুকভর্তি বেদনা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রেজোয়ান। নিজের ওপর অসম্ভব করুণা হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলছে।