#তুমি_তাই,২৬,২৭ অন্তিম পর্ব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ২৬
নিলি গিয়ে রেজোয়ানের বিছানার পাশে বসলো।
আলতো করে কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতেই রেজোয়ান সচেতন হলো। ঘুমঘুম চোখে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো,’এসেছো নিলি?’
নিলির চোখ ভিজে গেলো। দুগাল বেয়ে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল। এত ভালোবাসা তাঁর পাওয়া ছিলো কিনা সে জানে না। রেজোয়ান নির্ঘাত পাগল। নতুবা এমন একটা মেয়েকে কেউ ভালোবাসে?
রেজোয়ান আবার চোখ বন্ধ করলো। নিলি তাঁর জন্য কাঁদছে। স্বপ্নেই সম্ভব। কাঁদুক! বেশ করে কাঁদুক। রেজোয়ান তো চায় নিলি তাঁর জন্যে কাঁদে! ছটফট করে। নইলে তাঁর অহংকারী পুরুষসত্তাটা যে ভীষণভাবে আঘাত পায়।
নিলি নিজের মাথাটা রেজোয়ানের বুকে স্থাপন করলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,’অপরাধিনী হাজির। শাস্তি দেবে না?’
-‘শাস্তি তো দিচ্ছিই।’
-‘নিজেকে কষ্ট দিয়ে এ কেমন শাস্তি?’
-‘এই হলো উপযুক্ত শাস্তি। এমন শাস্তি সবাই দিতে পারে না।’
নিলি ফের ফুঁপিয়ে উঠলো। রেজোয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,’রোজ এত মানুষ মরে আমি কেন মরি না বলতে পারো? কেন আমি বারবার বেঁচে যাই?’
রেজোয়ান তাঁর মাথার একগাছি চুল আঁকড়ে ধরলো। চোখ বন্ধ রেখেই মিটিমিটি হাসলো। এ-তো স্বপ্ন নয়! চোখের পানিতে তাঁর বুক ভিজে যাচ্ছে ! শান্তি! উত্তপ্ত বুকে জল ঢেলে দিয়েছে এই অনুতাপের অশ্রুবিন্দু। পুরুষসত্তা স্বার্থক। এবার হবে প্রতিঘাতের পালা।
নিলি মুখ তুলে চুমু খেলো রেজোয়ানের বন্ধ চোখের পাতায়। ফিসফিস করে বললো,’আমি তোমাকে ভালোবাসি!’
রেজোয়ান মুচকি হাসলো। বললো,’শুনতে পাই নি।’
-‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
-‘হ্যাঁ? কি বললে?’
-‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
-‘সাজা মওকুফ এর ফন্দি করছো? সে হবে না।’
-‘অপরাধী স্বেচ্ছায় সাজা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
-‘বেশ তবে আজ থেকেই শুরু হোক।’
-‘হোক তবে। কিন্তু শাস্তিটা কি?’
ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো রেজোয়ানের। চোখ মেলে উদ্ভ্রান্তের মত এদিক ওদিক চাইলো সে। এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলো ! আশ্চর্য! এমন স্বপ্ন কেন দেখলো? এসব কি হচ্ছে তার? কেন বারবার নিলির চেহারাটাই চোখের সামনে ভেসে ওঠছে? নিলি ভালো নেই বলেই কি? তবে কি রেজোয়ান এখনো কাছে পেতে চায় নিলিকে?
দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে রইলো কিছুক্ষন। বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে। এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে মন চাইছে না। খাটের পাশে ফটোফ্রেম টাতে মেয়েদুটোর ছবি। সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রেজোয়ান। তারপর উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
★
জাহিদের সঙ্গে একটা ব্যবিসায়িক মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করতে হবে রেজোয়ানকে। বিদেশে যাওয়ার আগে যদিও পুরোনো কম্পানীটা সে বেচে দিয়েছিলো কিন্তু সেখানে গিয়ে নতুন করে আবার একটা ব্রাঞ্চ খুলেছে বাংলাদেশে। গত একবছর আগেই ইনোগ্যরেশন হয়েছে ব্রাঞ্চটার।
এটার দায়িত্ব অবশ্য পুরোপুরি জাহিদের ওপরেই। জাহিদই সবকিছু একা হাতে সামাল দেয়। রেজোয়ানকে এদিকটা নিয়ে এত ভাবতে হয় না। কিন্তু আজকে জাহিদ ভীষণ ভাবে জোর করলো অফিসটা দেখে আসার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে মিটিং অ্যাটেন্ড করতে রাজি হয়েছে।
রেডি হচ্ছিলো, এমন সময় শায়লা মুরসালীন এসে ঘরে ঢুকলেন। খাটের ওপর বসতে বসতে বললেন,’কোথাও বেরোবি?’
-‘হ্যাঁ। বনানী যাবো। কেন তোমার কিছু লাগবে?’
-‘না। তুই ফিরবি কখন?’
-‘ফিরতে ফিরতে রাত হবে। তোমরা খেয়ে নিও।’
-‘তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিলো। খুব জরুরি।’
রেজোয়ান টাই বাঁধছিলো। বাঁধা শেষে ড্রেসিংটেবিলের ওপর থেকে ঘড়িটা নিলো। সেটা পরতে পরতে বললো,’বলো। কি বলবে?’
-‘এদিকে আয়। আমার কাছে এসে বস।’
মায়ের আবদার সুলভ কন্ঠস্বর শুনে রেজোয়ান সাবধান হয়ে গেলো। বললো,’তুমি আমার বিয়ে নিয়ে আবার ঝামেলা করতে এসেছো। তাই না?’
-‘মোটেই না। ঝামেলা তো তুই করছিস আমার সঙ্গে। মা হয়ে ছেলের বিয়ে দেওয়ার অধিকার কি আমার নেই? নাকি তোর মা হয়ে পাপ করেছি আমি? সেইজন্য শাস্তি দিচ্ছিস আমাকে?’
-‘এসব তুমি কি বলছো মা?’
-‘একদম ঠিক বলছি। তোর কাছে আগের মত আমার কথার এখন কোন দাম নেই।’
মা খেপে গেছেন বুঝতে পেরে রেজোয়ান খাটে এসে বসলো। হেসে উঠে বললো,’অনেক হয়েছে মা। এবার একটু থামো। কম মেয়ে দেখেছো এই পর্যন্ত? কোন লাভ হয়েছে কি? কোন লাভ হয় নি। প্রতিবারই একটা না একটা ভেজাল লেগেছে। তাই এসব বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে তুমিও শান্তিতে থাকো আমাকেও শান্তিতে থাকতে দাও। বোঝার চেষ্টা করো, এখন আর আমার বিয়ে নিয়ে লাফালাফি করার বয়স নেই। পঁয়ত্রিশ পেরিয়ে অলরেডি ছত্রিশ পা দিয়েছি।’
-‘চুপ কর। এসব বলে তুই আর আমাকে ভুল বোঝাতে পারবি না। বিয়ে কেন হচ্ছে না, সেটা আমি ভালো করেই জানি। তুই সবাইকে গিয়ে বারণ করে দিস।’
-‘কি বলছো তুমি মা?’ রেজোয়ান হেসে ফেললো। বললো,’সেরকম হলেও বা সবাই আমার কথা শুনবে কেন?’
-‘কেন শুনবে তা আমি কি জানি? কিন্তু তুই যে ওদের বারণ করে দিস সেটা আমি ভালো করেই জানি। তাই এবার আর তোর কোন কথা শুনবো না। আমার পছন্দের পাত্রীর সঙ্গেই তোর বিয়ে দেবো।’
-‘কোন লাভ হবে না মা। আমি বিয়ে করবো না।’ অগত্যা সত্যিটা স্বীকার করে নিলো রেজোয়ান। বারবার বিয়ে নিয়ে শায়লা মুরসালীনের চাপাচাপি তাঁর আর ভালো লাগছে না। মায়ের অজান্তে পুরোনো বিয়েগুলো সে নিজেই ভেঙ্গেছিলো। কিন্তু এখন যখন মা সবটা জেনে গেছে তখন আর সত্যিটা লুকিয়ে কোন লাভ নেই। তারচেয়ে বরং তিনি সত্যিটা জানলে আরো বেশি উপকার হবে। একবারেই ঝামেলা মিটে যাবে। আর বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করবেন না।’
রেজোয়ানের জবাব শুনে চমকালেন না শায়লা মুরসালীন। তিনি আগেই জানতেন রেজোয়ান এমন উত্তর দেবে। সামান্য হেসে জিজ্ঞেস করলেন,’নিলিকেও না?’
নিলির নাম শুনতেই থমকে গেলো রেজোয়ান। কয়েকমুহূর্তের জন্য মস্তিষ্ক অনুভূতি শূন্য মনে হলো! তারপর ধীরে ধীরে একটু আগের স্বপ্নটার কথা মনে পড়লো। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রেজোয়ান। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’না। কাউকেই না।’
-‘তবে আমি যে ওকে রাজী করাবো বলে জাহিদকে ঠিকানা জোগাড় করতে বলেছিলাম তার কি হবে?’
-‘তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে ওর?’
-‘না। কি করে দেখা হবে? আমি ওর ঠিকানা জানি মাকি?’, মিথ্যে বললেন শায়লা মুরসালীন। রেজোয়ানের মুখ থেকে বিয়ের জন্য ‘হ্যাঁ’ না শোনা অব্দি তিনি মুখ খুলবেন না।
-‘তাহলে হঠাৎ ওর কথা উঠলো কেন?’
-‘তুই যখন ওকে ভুলতেই পারবি না তখন তো ওর কথা উঠবেই। ওর সঙ্গেই আমি তোর বিয়ে দেবো।’
-‘কি বলছো কি তুমি? আমি তোমাকে একবারও বলেছি আমি ওকে বিয়ে করবো?’
-‘তাহলে আমি অন্য মেয়ে দেখবো?
-‘বললাম তো আমি কাউকেই বিয়ে করবো না। তাছাড়া তোমার সঙ্গে অনেকবারই আমি মেয়ে দেখতে গিয়েছি। কাজের কাজ কিচ্ছু হয় নি। এখন এসব বাদ দাও।’
-‘মায়ের সঙ্গে চালাকি করার চেষ্টা করবি না রেজোয়ান। তুই এড়িয়ে গেলেও কোন লাভ হবে না। আমি তোর বিয়ে দিয়ে তবেই দেশ ছাড়বো।’
-‘এসব কেন করছো মা? নতুন করে আবার মেয়ে দেখতে যেতে হবে তোমার সঙ্গে? সেইজন্যই এত বাহানা করছো? ঠিক আছে যাবো। কিন্তু এখন আমার বেরোতে হবে।’
-‘মেয়ে আমি দেখেই এসেছি। তুই শুধু বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দে।’
-‘পাত্রী কে?’
-‘নিলি।’
-‘তুমি না বললে ওর সঙ্গে তোমার দেখা হয় নি?’
-‘না হয় নি। তো কি হয়েছে? ওকে আমি আগে দেখেছি না?
-‘মা সত্যি করে বলো তো ওর সঙ্গে কি তোমার দেখা হয়েছে?’
-‘না। জাহিদকে বলেছি খুঁজে বের করতে।’
-‘কোন দরকার নেই। এসবের মধ্যে তোমার ঢোকার কোন দরকার নেই। আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি মা তুমি প্লিজ আমাদের দুজনের মধ্যে ঢুকো না। ওর সঙ্গে আমার সারা জীবনের মতন বোঝা পড়া চলছে। আমাকে আমার বোঝাপড়াটা করতে দাও।’
-‘তবে তুই তোর বোঝাপড়া নিয়েই থাক। আমি আর তোর সঙ্গে ফিরবো না। এখানেই থাকবো। ফুয়াদ যদি রাখতে রাজি না হয় তাহলে ওকে বলবো ওর পরিচিত কোন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে। সংসার যখন করবি না তখন আর আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে কি লাভ। নিজের নাতি নাতনী তো আর দেখবো না?’
রেজোয়ান রাগতে গিয়েও রাগলো না। এই একটা কাজই তাঁর মা খুব ভালো মত পারে। সেটা হচ্ছে ব্ল্যাকমেইলিং। ব্ল্যাকমেইল করে করেই একসময় নিলির সঙ্গে দূরত্ব টাও বাড়িয়েছিলেন। এখন আবার তাঁর সঙ্গেই বিয়ে দিতে চাইছেন। অদ্ভুত মহিলা তাঁর মা!
তবুও রেজোয়ান মাকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। মায়ের বয়সও হয়েছে। এই বয়সে ছেলের কাছ থেকে কোন কঠিন কথা তিনি সহ্য করতে পারবেন না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, যার জন্য রেজোয়ান কঠিন কথা বলবে সে নিজেও তো রেজোয়ানের ভালোবাসার মূল্য দেয় নি। তবে দোষটা কাকে দেবে রেজোয়ান?
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। গায়ে কোট জড়িয়ে নিয়ে বললো,’আমি রাতে এসে তোমার সঙ্গে এই ব্যাপারে আলাপ করবো। এখন আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। আসি!’
কথা শেষ করে শায়েলা মুরসালীনের কপালে চুমু খেলো সে। হাত দুটো ধরে তালুতেও চুমু খেলো। মুচকি হেসে বললো,’আসি মা।’
★
শায়লা মুরসালীলের ক্রমাগত ফোন পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই কাজ ফেলে বেরিয়ে পড়লো রেজোয়ান। তথাপি ফিরতে ফিরতে রাত বারোটার মতন বেজে গেলো। কিন্তু বাসায় ঢুকেই হতবম্ভ!
ভেতরে এলাহি আয়োজন চলছে। রান্নাবান্না, সাজগোজ এর বাহার দেখা মনে হচ্ছে বড় কোন অনুষ্ঠান। রেজোয়ান কিছুতেই বুঝতে পারছলো না। তাকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এলেন শায়লা মুরসালীন। অন্যদিকে ফুয়াদ আর তিন্নি কোন কারণ ছাড়াই মুখটিপে হাসছে। রেজোয়ান ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। ওরা কেউ কোন জবাব দিলো না।
-‘মেহমান এসেছে নাকি মা? বাসায় এত ভীড় কেন?’
-তোর বিয়ে। তাই আত্মীয়স্বজন সবাইকে খবর দিয়েছি।’ কথা শেষ বেশ বড়সড় একখানা গর্বিত হাসি উপহার দিলেন শায়লা মুরসালীন। সেইসঙ্গে ফুয়াদও ফোঁড়ন কেটে বললো,’তোর মেয়েরা কিন্তু তাদের নতুন মাকে খুব পছন্দ করেছে। কোলের ওপর উঠে বসে আছে দুজনে।’
রেজোয়ান স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না। মা এত রকেটের গতিতে নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য এগোবেন সে ভাবতেই পারে নি। ভেবেছিলো বাসায় এসে তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠান্ডা করে ফেলবে। কিন্তু এখন তো দেখছে মা ই উল্টো ওকে ঠান্ডা করে দিয়েছে। এমন হবে জানলে রেজোয়ান আজকে বাসাতেই ফিরতো না।
#তুমি_তাই
অরিত্রিকা আহানা
#অন্তিম_পর্ব
বাসর ঘরে নিলিকে বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো তিন্নি। রেজোয়ান নিচে ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো। জোর করে তাকে রুমে নিয়ে এলো ফুয়াদ। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলো।
রেজোয়ান অস্বস্তি এড়াতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। হুট করে নিলির মুখোমুখি হতে সংকোচ লাগছে। তাই কিছুটা সময় নিজেকে ধাতস্থ করে নিতে চাইলো। নিলি চুপচাপ বিছানায় বসে রইলো।
দশমিনিট বাদে রেজোয়ান বেরোলে। ভাবভঙ্গি নির্বিকার। ভেজা টাওয়েল বারান্দায় মেলে দিয়ে বিছানায় বসলো। বললো,’ফ্রেশ হয়ে এসো।’
নিলি ফ্রেশ হতে গেলো। এই ফাঁকে রেজোয়ান জাহিদকে ফোন করে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ সেরে নিলো। নিলি ফিরে এলে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললো,’আমি জানি না মা কি বলে তোমাকে এই বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে। আদৌ এই বিয়েতে তোমার মত ছিলো কি না, তবে একটা কথা তোমাকে বলি আমার কিন্তু এই বিয়েতে একদমই মত ছিলো না। আমাকে রীতিমত জোর করা হয়েছে।’
-‘জানি আমি।’
-‘তাহলে আশাকরি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো না? আর তোমার যদি এই বিষয়ে কোন অবজেকশন থাকে সেটা তুমি মায়ের কাছে বলতে পারো।’
-‘নেই।’
-‘ঠিক আছে। তাহলে তুমি শুয়ে পড়ো।’
-‘তুমি ঘুমাবে না?’
-‘আমার দেরী হবে।’ উঠে বারান্দায় চলে গেলো রেজোয়ান। নিলি নিরবে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে শুয়ে পড়লো। শরীর ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েও পড়লো। কিন্তু ঘুম হলো না রেজোয়ানের। নিলি ঘুমিয়ে পড়ার পর বারান্দা থেকে পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তাঁর ঘুমন্ত মুখটার দিকে। অল্প আলতে ভীষণ মোহনীয় লাগছে নিলিকে। চোখ ফেরানো দায়! রেজোয়ান দৃষ্টি ফেরাতে পারলো না। চেয়ে রইলো। ইচ্ছে হলো আলতো করে একটু জড়িয়ে ধরে নিলিকে। কিন্তু পারলো না।
আজ,এইমুহূর্তে,দাঁড়িয়ে সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এখনো নিলিকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসে সে। কিন্তু বুঝাতে চায় না কেবল!
কেনই বা বোঝাবে? নিলি একবারও নিজের ভুল স্বীকার করেছে? করে নি। করবেও না। সারাজীবন রেজোয়ানকে সে কষ্ট দিয়ে গেছে। হয়ত বাকি জীবনটাও দেবে।
★
একসপ্তাহের মধ্যেই ফুয়াদের বাসা থেকে নতুন ফ্লাটে শিফট হলো রেজোয়ান। এখানে এসে নিলি এবং সে দুজনে আলাদা কামরাতেই থাকছে। শায়লা মুরসালীন অসহায়ের মতন চেয়ে থাকেন শুধু। জোর করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তাদের একসঙ্গে থাকা নিয়ে জোর করতে পারছেন না। তাছাড়া মা হিসেবে এই বিষয়ে ছেলের সঙ্গে কথা বলাটাও লজ্জাজনক।
এদিকে নিলির সঙ্গে মেয়েদুটোর দারুণ সখ্যতা হয়ে গেছে। যদিও নিলিকে নাম ধরেই ডাকে দুজনে তবে তাদের খাওয়াদাওয়া, লেখাপড়া, যাবতীয় সকল আবদার এখন নিলির কাছেই পেশ হয়। নিলিও আদরে অনুশাসনে মাথায় করে রাখে দুজনকে। কিন্তু রেজোয়ানের সঙ্গে সম্পর্কটার কোন উন্নতি হয় নি। পারতপক্ষে দেখাই হয় না দুজনের। নিলি নিজেই রেজোয়ানের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। রেজোয়ানও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায় না। এভাবেই চলছে তাদের সংসার।
★
কয়েকদিন বাদে, একদিন সন্ধ্যায় অফিসের কাজ সেরে সবে বাসায় ফিরেছে রেজোয়ান, হঠাৎ মেয়েদুটো এসে তাঁর গলা জড়িয়ে ধরলো। অনেকদিন বাদে এমনি করে পিতার গলা জড়িয়ে ধরেছে দুজনে। রেজোয়ান ভীষণ খুশি হলো। মেয়েদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’তোমরা এখনো ঘুমাও নি?’
দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো মেয়েরা। রেজোয়ান পালাক্রমে দুজনের গালেই দুটো করে চুমু খেলো। মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’দাদু কি করছে?’
-‘নতুন মায়ের ঘরে। ডাক্তার এসেছেন। নতুন মা অসুস্থ।’
এই প্রথম স্বেচ্ছায় দুজনে নিলিকে মা বলে ডেকেছে। নতুন মায়ের জন্য দুজনেরই কষ্ট হচ্ছে। এত ভালো তাদের নতুন মা। অথচ বাবা তাঁকে ভালোবাসে না। তাই বাবার সঙ্গে মায়ের ভাবভালোবাসা করার জন্য রেজোয়ানকে নিলির অসুস্থতার কথা জানাতে এসেছে দুজনে।
রেজোয়ান অবাক হলো। নিলি অসুস্থ? এইজন্যই কি আজকে ডাইনিং টেবিলে তাঁর দেখা পাওয়া যায় নি?
হ্যাঁ! এই কারণেই মেয়ে দুটো মনমরা। কিন্তু কি হয়েছে নিলির?
-‘কি হয়েছে তোমাদের নতুন মায়ের?’
-‘জ্বর এসেছে। রান্নাঘরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলো। কপাল ফেটে গেছে।’
খুবই আগ্রহের সহিত নিলির অসুস্থতার খবর বর্ণনা করলো মেয়েদুটো। রেজোয়ানের এসব কিছু কানে গেলো না। ডাইনিং থেকে উঠে গিয়ে নিলির ঘরে দিকে গেলো সে। ভেতর ডাক্তার নিলিকে দেখছেন।
শায়লা মুরসালীন নিলির বিছানার পাশে বসে আছেন। ইদানীং মেয়েটার প্রতি অদ্ভুত মায়া হয় তাঁর। অল্প বয়সে মা বাবা, ভাই সবাইকে হারিয়েছে। স্বামীর সংসারেও সুখ পায় নি
সারাজীবন শুধু দুঃখই পেয়ে গেছে। এই বাড়িতে এসেও একই কপাল। শায়লা মুরসালীনও রোজই কথা শোনান তাঁকে। আর রেজোয়ান? সে তো কথাই বলে না। তবুও মুখ বুজে এই বাড়িতে পড়ে আছে নিলি। কখনো কোনকিছু নিয়ে প্রতিউত্তর করে নি।
ডাক্তার বেরিয়ে গেলে শায়লা মুরসালীন নিলির জন্য খাবার রেডি করতে গেলেন। রেজোয়ান একঝলক চাইলো বিছানায় শায়িত অবচেতন নারীমুখটির দিকে। ফ্যাকাসে, জীর্ণশীর্ণ, মলিন চেহারা। দেখলে বোঝারই উপায় নেই মাত্র ছাব্বিশ সাতাশ বছর হয়েছে তাঁর।
বিছানায় বসলো রেজোয়ান। দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ধীরে ধীরে নিলির একটা হাত তুলে নিলো। পাখির পালকের মত হালকা মনে হলো হাতটা। বুকে ব্যথা অনুভব করলো রেজোয়ান। চোখে পানি চলে এলো। নিলিকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টায় সে এতটাই পাথর হয়ে গিয়েছিলো যে এই অসহায় মলিন মুখটা তাঁর একবারও চোখে পড়ে নি। বাকি সবার মতন সেও নিষ্ঠুর আচরণ করেছে নিলির সঙ্গে।
মাঝে মাঝে রেজোয়ান নিজেই নিজেকে বুঝতে পারে না। যাকে সে এত বেশি ভালোবাসে তাকেই কেন এত বেশি কষ্ট দেয় সে?কেন? নিলিকে সে এখনো ভালোবাসে , এখনো কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে, তবে কেন মিথ্যে অবহেলা!
পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে গেলো রেজোয়ানের। সদ্য পরিস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় নজরকাড়া সুন্দরী ছিলো নিলি। কলেজের প্রতিটা যুবকের হৃদয়ের রাণী, হৃদপিন্ডের স্পন্দন! প্রতি মুহূর্তে নতুন করে তাঁর প্রেমে পড়তো রেজোয়ান!
★
শায়লা মুরসালীন খাবার নিয়ে এলেন। বিছানার পাশে বসে বললেন,’ওকে একটু তুলে ধর। খাওয়াতে হবে।’
এইপ্রথম নিলিকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো রেজোয়ান। তাঁর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসালো নিলিকে। নিলি বহু কষ্টে চোখ মেলে সামনে চাইলো। শায়লা মুরসালীন জোর করে তাঁর মুখে খাবার তুলে দিলেন। কিঞ্চিৎ ভয়ে, কিঞ্চিৎ লজ্জায় নিলি অসুস্থ অবস্থাতাতেও দ্রুত খাবার শেষ করার চেষ্টা করলো। তার জন্য রেজোয়ান এবং শায়লা মুরসালীন বসে থাকছে ভেবে মনে মনে একাধিকবার সংকুচিত হয়ে গেলো।
রেজোয়ান সবই দেখলো, বুঝলো। কিন্তু আড়ষ্টতার দরুণ কিছু বলতে পারলো না। কিন্তু শায়লা মুরসালীন বেরিয়ে গেলে আর দেরী করলো না। বাচ্চাদের রুম থেকে বের করে দিলো। যেতে না চাইলে অনুরোধ করে বললো,’তোমাদের নতুন মায়ের সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। কথা শেষ হলেই আমি বেরিয়ে যাবো। এখন তোমরা একটু বাইরে যাও।’
★
নিলি জোরপূর্বক বালিশে হেলান দিয়ে বসেছে। চোখ অবনত। রেজোয়ান গলার টাই ঢিলে করে তাঁর পাশে বসলো। তাঁর পারফিউমের মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে আসছে। মোহনীয় সুবাস, মোহনীয় দেহাবয়ব। এখনো একটুও বদলায় নি রেজোয়ান। তাঁর তুলনায় নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট মনে হলো নিলির। ছলছল চোখে মাথা নিচু করে বসে রইলো সে।
-‘মায়ের কাছে শুনলাম তুমি খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করো না?’
-‘করি।’
-‘তাহলে প্রেশার ফল করলো কেন?’
-‘কি জানি।’
রেজোয়ান চোখ বন্ধ করে ফেললো। নিলিকে সে চেনে। একমাত্র রেজোয়ানের কাছেই নিলি আলাদা। ভাঙ্গবে কিন্তু মচকাবে না। ছোট যদি কাউকে হতে হয়, নরম যদি কাউকে হতে হয় তবে সেটা একমাত্র রেজোয়ানকেই হতে হবে। নিলি মুখবুজে সব সহ্য করে নেবে কিন্তু মুখফুটে কিছু বলবে না।
-‘তোমার সমস্যা টা কি হ্যাঁ? কেন তুমি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছো না? অন্যায় তুমি করেছো, কষ্ট তুমি দিয়েছে। তাহলে আত্মগ্লানিতে আমি কেন ভুগবো?’
-‘তোমার আত্মগ্লানিতে ভোগার মতন কিছু হয় নি। সব মানুষই অসুস্থ হয়। আমিও হয়েছি।এটা খুবই নরমাল একটা বিষয়।’
রেজোয়ান উঠে নিলির মুখোমুখি গিয়ে বসলো। তাঁর বাহুতে আলতো চাপ দিয়ে বললো,’আমার ওপর অভিমান করে তুমি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো না? বলো দিচ্ছো না?’
নিলি চোখের পানি আড়াল করতে মাথা নিচু করে ফেললো। রেজোয়ান সত্যিটা বুঝতে পেরে গেছে এই ভেবে লজ্জায় অস্বস্তিতে একেবারে কুঁকড়ে গেলো সে। নিলি কোনভাবেই চায় নি রেজোয়ান তাঁর অভিমানের কথা জানুক। নিরব অভিমানে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো সে।
-‘কি হলো? কথা বলছো না কেন?’
কাধ থেকে রেজোয়ানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কেঁদে ফেললো নিলি। অসহায়ের মতন আর্তনাদ করে বললো,’আমি কারো ওপর অভিমান করি নি। কাউকে আমার জন্য আত্মগ্লানিতে ভুগতে হবে না। কাউকে সহানুভূতি দেখাতে হবে না। তুমি প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দাও। আমি হাতজোড় করে তোমার কাছে অনুরোধ করছি। আর কিচ্ছু চাই না তোমার কাছে।’
এই সুযোগটারই বোধহয় অপেক্ষা করছিলো রেজোয়ান। সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন করলো সে,’সত্যিই কিছু চাও না?’
-‘না।’
-‘ভালোবাসাও না?’ রেজোয়ানের চোখেমুখে প্রচ্ছন্ন হাসি। অনেকদিন বাদে নিলিকে বাগে পেয়েছে সে। আজকে নিলির মুখ থেকে সত্যিটা বের করেই ছাড়বে। সেজন্যই মুখে মিটিমিটি হাসি।
কিন্তু নিলি ভাবছে অন্য কথা! ভালোবাসার দাবি সে কোনদিনই করতে পারবে না। সেই অধিকারবোধও নেই। সে কেবল মনে মনে চাইতে পারে।
কিন্তু তাঁর এই চাওয়া নিয়েও রেজোয়ানের এমন হাসিমশকরা একেবারে অন্তরে গিয়ে বিঁধলো। সেইজন্যই রেজোয়ানের নিজস্ব অস্থিরতাটুকু তাঁর চোখে পড়লো না। নতুবা বুঝতে পারতো এত কিছুর পরেও, আজও! আজও রেজোয়ান ঠিক কতটা গভীরভাবে তাঁকে ভালোবাসে!
নির্বোধ, বোকা মেয়েটির মতন কাঁদতে কাঁদতেই বললো,’অপমান করো। তোমার যতখুশি অপমান করো। আমি কিচ্ছু বলবো না। অপমান করতে করতেই একদিন দেখবে আমি হারিয়ে গেছি। আর খুঁজে পাবে না। তোমাকে ছেড়ে এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো আমি!’
রেজোয়ানের হাসিমুখ নিমিষেই কালো হয়ে গেলো। হতাশ চোখের নিলির মুখের দিকে চেয়ে রইলো সে। লোকের অপমানের মাঝেও নিলি ভালোবাসা দেখতে পায়,অথচ রেজোয়ানের ভালোবাসাতেও অপমান খুঁজে পায় সে। কি অদ্ভুত পোড়া কপাল রেজোয়ানের! এই নারীটিকে ভালোবেসে নিজের সমস্ত সুখশান্তি ভালোবাসা সব ত্যাগ করেছে। কোনদিন একে ভিন্ন অন্য কোন নারীকে কোন একমুহূর্তের জন্যেও চায় নি। তারপরেও এই নারীটি তাঁর ভালোবাসা বুঝতে পারে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। বললো,’আই অ্যাম সরি। তুমি অসুস্থ। রেস্ট নাও। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।’
রেজোয়ানের হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়াটা অবাক করলো নিলিকে। প্রথমে সে বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে রেজোয়ানের হাসির কারণ টুকু বুঝতে পারলো। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেলো একেবারে। রেজোয়ানের মলিন মুখ হঠাৎ করেই যেন অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলো তাঁকে। অসুস্থ শরীর কোথা থেকে এত শক্তি এনে দিলো কে জানে। তড়িৎগতিতে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, দুহাতে দরজা আগলে করে রেজোয়ানের পথ অবরোধ করে বললো,’এখন বাইরে যাওয়া যাবে না।’
রেজোয়ান হতবাক, বিস্মিত খানিকটা আনন্দিত। ঠোঁটের কোনে সামান্য হাসি ফুটে উঠলো তাঁর। তথাপি সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে বললো,’পথ না ছাড়লে বেরোবো কি করে?’
-‘যেতে দেবো না!’
-‘কেন? অপমানের ভয় নেই বুঝি?’
দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো নিলি। রেজোয়ান হাসলো। হাত দুটো পকেটে ঢুকিয়ে স্থিরভাবে নিলির লাজুক মুখটার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর রসিকতার সুরে বললো,’তা হঠাৎ এই ভয় চলে গেলো কেন শুনি?’
-‘জানি না।’
-‘আমি বলবো?’
দুপা এগিয়ে গেলো রেজোয়ানের। নিলির একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কিছু বলতে যাচ্ছিলো সঙ্গে সঙ্গেই ডানহাতে তার মুখ চেপে ধরলো নিলি।
-‘না। কিচ্ছু বলবে না তুমি।’
-‘তবে আমাকে আটকানোর কারণ?’
-‘আজ তুমি এ ঘরে থাকবে।’
-‘শুধু আজই?’ ফের হাসলো রেজোয়ান।
-‘না এখন থেকে, এখন থেকে এই ঘরেই থাকবে তুমি।আমার সঙ্গে।’
-‘বেরোবো না?’
-‘না। আমি না বললে বেরোতে পারবে না।’
-‘কেন?’
দুহাতে রেজোয়ানকে জড়িয়ে ধরলো নিলি। নিজের মাথাটা রেজোয়ানের বুকে স্থাপন করে বললো,’কারণ আমি বলেছি তাই। কারণ আমি তোমার বউ তাই!’
রেজোয়ান হাসলো। অনেকদিন বাদে এমন মধুর আলিঙ্গন হৃদয়ের সমস্ত উত্তাপকে নিভিয়ে, শান্ত শীতল করে দিয়েছে। প্রশান্তির ঢেউ বইছে সমস্ত শরীরে।
অনেকক্ষণ এভাবে জড়িয়ে থাকলো দুজনে। তারপর ধীরে ধীরে রেজোয়ানকে সালাম করতে চাইলো নিলি। রেজোয়ান সালাম করতে দিলো না। বুকের ভেতর ঘড়ির কাঁটার মত টিকটিক করছে তাঁর হৃদপিন্ডটা। ডানহাতটা নিলির মাথায় রেখে স্নেহার্দ্র কন্ঠে বললো,’আমার প্রিয়তমা চিরসুখী হোক। এই কামনাই করি। সালাম করতে হবে না।’
নিলি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো রেজোয়ানকে। বললো,’তুমি আমার সকল দুঃখের অবসান ঘটিয়ে দাও রেজোয়ান। আমাকে তোমার কাছে টেনে নাও। আমি যে আর থাকতে পারছি না তোমাকে ছাড়া।’
পাঁজকোলা করে তাঁকে কোলে তুলে নিলো রেজোয়ান। কপালে ওষ্ঠাধর ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,’তুমি আমার কাছেই ছিলে, খুব কাছে। শুধু বুঝতে পারো নি। কিন্তু এবার আমি বুঝিয়ে দেবো,এবার তুমি সত্যিই বুঝতে পারবে তুমি আমার ঠিক কতটা কাছের। আর তোমাকে কোন কষ্ট পেতে দেবো না আমি। নতুন করে আবার শুরু করবো আমরা। নতুন করে আবার ভালোবাসাবাসি হবে দুজনের!’
অতঃপর, নতুন করে আবার পুরোনো ভালোবাসায় ফিরে গেলো দুজনে। পুনরায়! পুনরায় ভালোবাসায় রঙ্গিন হয়ে উঠলো একজোড়া সাদাকালো স্বপ্ন!