তুমি_সূচনায় #ঊর্মি_আক্তার_ঊষা #পর্ব-১১

0
646

#তুমি_সূচনায়
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা
#পর্ব-১১

পরের দিনই মিসেস অহনা পুরো পরিবার নিয়ে ঊর্মিদের বাড়িতে এসেছে। ঊর্মির সিদ্ধান্তে সবাই ভীষণ খুশি, বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে আর এক মাস পর। রিয়া আর নাজিফা ঊর্মির সাথেই ওর রুমে বসে আছে। দু’জনে প্ল্যান করছে ঊর্মির বিয়েতে কি পড়বে কি করবে আর ঊর্মি চুপচাপ ওদের কথা শুনছে। নাজিফা তো এখন থেকে ভাবীমণি ডাকা শুরু করে দিয়েছে। বিয়েটা নিয়ে সবাই খুব এক্সাইটেড।
বিকেলের দিকে সবাই চলে যায়, ঊর্মি ওর বাবা মানের রুমে এসেছে। মিসেস অন্তরা বসে ছিলেন, হুট করে ঊর্মি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আনিসুল সাহেব তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

আনিসুল সাহেব : বুঝলে অন্তু আমাদের মেয়েটা এখনো সেই ছোট মেয়েটিই আছে।
আমি : হ্যাঁ! আমি কোনো দিন তোমাদের কাছে ছোট হতে চাই না। বাবা মায়ের কাছে তার সন্তান কখনো বড় হয় নাকি?
মিসেস অন্তরা : কে বলেছে আমাদের মেয়ে বড় হয়নি দু’দিন পরই তো তার বিয়ে।
আমি : তাহলে বিয়ে দিচ্ছো কেনো?
মিসেস অন্তরা : সব মেয়েকে একদিন বাবা মাকে ছেড়ে শশুর বাড়ি চলে যেতে হয়। তবে আমি জানি আমার মেয়ে সেখানে খুব সুখে থাকবে।
আমি : আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না আম্মু।

মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই ঊর্মি মিসেস অন্তরার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে। কয়েকদিন আগেই অনন্তর পরিক্ষা শেষ হয়েছে। বোনের বিয়ে হয়ে যাবে শুনে তার বেশ মন খারাপ তবে সে কাউকে তা বুঝতে দিচ্ছে না। ঊর্মির ঘুম ভাঙে সন্ধ্যে সাতটায়, ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে নেয় সে। ড্রইং রুমের সোফায় বসে মোবাইল টিপছিলো হঠাৎ কি মনে করে যেনো অনন্তকে ডাক দেয়। অনন্ত নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

আমি : আমার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে সামনের দোকান থেকে এনে দিবি?
অনন্ত : পারবো না। আমি কি তোর চাকর নাকি?
আমি : এখনো আমার সাথে তর্ক করবি?

কিছু একটা ভেবে কোনো কথা না বলেই অনন্ত নিজের রুমে চলে গেলো আবার একটু পর ফিরেও এলো তারপর বাড়ি বাইরে কোথাও চলে গেলো। ঊর্মি মনে মনে ভাবছে ‘কি হলো ব্যপারটা?’ মোবাইল টিপতেই বোর ফিল হচ্ছিলো তাই টিভি অন করে “khatroon ke khiladi” দেখছিলো বসে বসে, শো টা ঊর্মি বেশ পছন্দের। প্রায় বিশ মিনিট পর অনন্ত বাসায় আসে আর হাতে করে একটা প্যাকেট ঊর্মির সামনে দিয়ে বলে….

অনন্ত : খেয়ে নে।
আমি : তুই টাকা কোথায় পেলি?
অনন্ত : তোর গোপন টাকা গুলো আমি চুরি করেছি। বেশি কথা না বলে খেয়ে নে।
আমি : হুম! ধন্যবাদ ভাইয়্যু।
অনন্ত : হয়েছে ভালোবাসা দেখাতে হবে না।

পরের দিন সকালে….

ঘড়িতে প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে, রিয়া বার বার কল দিচ্ছে আর ঊর্মি কল কেটে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রিয়া নিজেই এসে ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি এনে ঊর্মির শরীরে ঢেলে দেয়। হঠাৎ করে শরীরে পানি পড়ায় ঊর্মি তাড়াতাড়ি উঠে বসে আশপাশ পর্যবেক্ষণ না করেই বলে ওঠে?…..

আমি : আম্মু আমাদের বাড়ির ছাদ ফুটো হয়ে গেছে গো। আব্বুকে বলো তাড়াতাড়ি মিস্ত্রি ডেকে এনে ঠিক করাতে। (চোখ বন্ধ করে)
রিয়া : একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ তোর বাড়ির ছাদ ফুটো হয়নি, পানিটা তোর শরীরে ইচ্ছাকৃত ভাবে দিয়েছি। সেই কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছি বার বার কল কেটে দিচ্ছিলি কেনো?
আমি : একদম মিথ্যে বলবি না। তুই কখন কল দিয়েছিস?
রিয়া : দেখ (ওর ফোনটা দেখিয়ে)
আমি : এতো সকালে ফোন দিয়েছিলি কেনো?
রিয়া : সামনে তোর বিয়ে আমাকে ফিট্ থাকতে হবে না? তাই এক্সারসাইজ করবো, সামনে লেকটা তে প্রতিদিন হাঁটতে বের হবো। উঠ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমি : বিয়ে আমার আর তুই ফিট্ হবি মোটি। আমি এতো হাঁটতে পারবো না।
রিয়া : উঠতে বলেছি উঠ। আন্টিকে ডাকবো?
আমি : উঠছি! ধুর ভাল্লাগে না। (বিরক্ত হয়ে)

————————————-

নিবিড় ঊর্মিকে নিয়ে আজ বাইরে বেরিয়েছে কিন্তু সাথে করে গাড়ি নিয়ে আসেনি। আজ নিবিড় ঊর্মিকে নিয়ে রিকশা নিয়ে ঘুরবে। রিকশায় ঊর্মি নিবিড়ের থেকে কিছুটা সরে বসেছে, পাশাপাশি বসতে ঊর্মির কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে। দু’জনেই রিকশা করে একটা পার্কের সামনে আসে। জাগয়া কিছুটা নিরিবিলি কোনো হৈ-হুল্লোড় নেই তবে মানুষের আনাগোনা বেশ ভালোই আছে। নিবিড় ঊর্মি পাশাপাশি হাঁটছিলো তবে দু’জনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে। নিবিড় ঊর্মিকে বসিয়ে রেখে কোথাও একটা যায়, আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসে সাথে হাতে করে বেলী ফুলের মালাও নিয়ে আসে এবং নিজেই প্রেয়সীর হাতে পড়িয়ে দেয়।

নিবিড় : আজ বহু পুরোনো একটা ইচ্ছে পূরণ হলো আমার।
আমি : কি ইচ্ছে?
নিবিড় : শহরের কোলাহল থেকে দূরে নিরিবিলি কোথাও প্রিয় মানুষটার হাতে হাত রেখে হেঁটে বেরাবো। আচ্ছা তুমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা কি মন থেকে মেনে নিয়েছো?
আমি : হুম!
নিবিড় : পড়ালেখার জন্য হোস্টেলে থাকতে হয়েছে, আমি বাড়িতে খুব কম সময়ই থাকতাম যার কারণে তোমাদের বাড়িতে তেমন একটা যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আর বাকিদের মতো তুমি আমার সাথে কমফোর্টেবল নও তবে আমি চাই আমাকে নিয়ে যেনো তোমার মনে কোনো প্রকার জড়তা বা দোটানা থাকুক। বাড়ির সবাই চাইছে তুমি যাতে আমার সাথে একটু স্বাভাবিক হতে পারো।

ঊর্মি কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে আছে। ওদের সামনে দিয়ে এক লোক হাওয়াই মিঠাই নিয়ে যাচ্ছিলো নিবিড় লোকটাকে দাঁড় করিয়ে দুটো হাওয়াই মিঠাই কিনে ঊর্মির জন্য কারণ সে জানে তার প্রেয়সী হাওয়াই মিঠাই খুবই পছন্দের।


দু’দিন পর……

আজ মিসেস অন্তরা, ঊর্মি, রিয়া, মিসেস অহনা, নাজিফা আর নিবিড় শপিং এ এসেছে। সবাই শপিং মলের ভেতর আগেই ঢুকে পড়েছে, নিবিড় গাড়ি পার্কিং করে ঊর্মিকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করার সময় বেশি ভীড় থাকায় নিবিড় ঊর্মির হাত ধরে, আচমকা হাত ধরায় সে কিছুটা চমকে ওঠে। ঊর্মির হাত ধরেই শাড়ির দোকানটায় প্রবেশ করে দু’জনে। ওদের দু’জনের দেরি হওয়ার কথা মিসেস অহনা জিজ্ঞেস করলে নিবিড় বলে বাইরে ভীড় ছিলো।

টানা পাঁচ ঘন্টা, বেশ অনেক গুলো দোকান ঘুরে সব কেনাকাটা শেষ করে ওরা। জুয়েলারির দোকান গহনার অর্ডার দেওয়া হয়ে গেলে, নিবিড়কে বলে মিসেস অন্তরা সহ রিয়া, নাজিফা আর মিসেস অহনা গাড়ি করে চলে যায়। মিসেস অহনা চাইছেন ওরা দু’জন একটু আলাদা ভাবে সময় কাটায়। দুপুর দু’টোর সময় এসে এখন প্রায় সাড়ে ছ’টা বাজতে চললো। একটানা এতোক্ষণ শপিং করার পর ঊর্মি ক্লান্ত হয়ে গেছে সাথে ক্ষিদেও পেয়েছে তার কিন্তু নিবিড়কে সে কিছুতেই বলতে পারছে, বলতে গিয়ে দ্বিধাবোধ করছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হবার পথে গাড়ি করে কিছু দূর যাওয়ার পর নিবিড় ঊর্মিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায় এবং ঊর্মির পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার করে। ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার পর ঊর্মি কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করে আর নিবিড়কেও বলে খেয়ে নিতে। তারপর দু’জনে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য বের হয়। নিবিড় ঊর্মিকে ওদের বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দেয়। ঊর্মি বাড়ির দিকে কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে আবার নিবিড়ের গড়ির সামনে আসে আর বলে….

আমি : বাড়ির ভেতরে আসুন!
নিবিড় : না আজ খুব ক্লান্ত লাগছে অন্য সময় আসবো। তুমি যাও আর গিয়ে রেস্ট নেবে কেমন?
আমি : লোকটা আমার কথা এতোটা ভাবে, তখন না বলতেই বুঝে গেলো যে আমার ক্ষিদে পেয়েছে (নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছিলো)
নিবিড় : ঊর্মি শুনতে পারছো আমার কথা?
আমি : হু..হুম!

কথাটা বলেই ঊর্মি আবার বাসার গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো, একটু পেছন ফিরে তাকিয়ে বাসায় চলে গেলো আর নিবিড়ও ঊর্মির যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ি ড্রাইভ করে সেখান থেকে চলে গেলো। ঊর্মি বাড়িতে আসতেই মিসেস অন্তরা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে…..

মিসেস অন্তরা : নিবিড় আসলো না?
আমি : বলছিলাম! উনি নাকি খুব ক্লান্ত তাই বাড়ি চলে গেছে।

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here