তুমি_সূচনায় #পর্ব-৩

0
552

#তুমি_সূচনায়
#পর্ব-৩
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

সন্ধ্যের দিকে ঊর্মি, রিয়া আর সাহিল মিলে লং ড্রাইভে বের হয়, এখনো পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে আসেনি আবছা আলোয় রয়েছে এখনো। ঊর্মি ড্রাইভিং করছে আর সাহিল ঊর্মিকে শিখিয়ে দিচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করেই কেউ গাড়ির সামনে এসে পড়ে যায়। ঘটনা দ্রুত হয়ে যাওয়ার তাড়াতাড়ি ব্রেক নেয়। ওরা গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে দেখে একটা ছেলে পড়ে আছে তা দেখে ওরা তিনজনই ভীষণ ঘাবড়ে যায়। জায়গাটা কিছুটা নিরিবিলি আশেপাশে তেমন মানুষ জনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না।

রিয়া : এ..এখন আমরা কি করবো? ত..তোরা চেক করে দেখ না বেঁচে আছে নাকি?
আমি : সা..সাহিল তুই একটু চেক কর না ভাই।
সাহিল : ভয় করছে। মরে টরে যায়নি তো?
আমি : নায়ায়ায়ায়ায়া এ কথা বলিস না তাহলে যে আমরা ফেসে যাবো। আমার কাছে গাড়ির লাইসেন্সও নেই।
রিয়া : কোন দুঃখে যে এই রাতের বেলায় লং ড্রাইভে এসেছিলাম আল্লাহ মালুম।
আমি : এই সাহিল যা না ইয়ার।
সাহিল : যা..যাচ্ছি!

রিয়া আর ঊর্মি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দোয়া দুরুদ পড়ছে। সাহিল কাপাকাপা হাতে ছেলেটির পালস চেক করে চেচিয়ে ওঠে। সাহিলের চেচানোর শব্দে ঊর্মি আর রিয়া ভয়ে আরও জোরে চেচিয়ে ওঠে আর বলে…

রিয়া : শালা ভয় পাইয়ে দিয়েছিস! বেঁচে আছে তো?
সাহিল : হ্যাঁ বেঁচে আছে।
আমি : ওয়েট ওয়েট! উনাকে আমি কোথায় যেনো দেখেছি।
রিয়া : কি বলছিস কি? কোথায় দেখেছিস?
আমি : মনে করতে পারছি না রে! আচ্ছা এতো কিছু ভাবার সময় নেই উনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
সাহিল : পাগল নাকি? আমরা যদি এখন একে হসপিটালে নিয়ে যাই তাহলে পুলিশ কেস হবে আর আমাদের তিনজনকে কোমড়ে দড়ি দিয়ে থানায় নিয়ে যাবে।
রিয়া : ও আল্লাহ গো! এখন কি করি।
সাহিল : একে আপাতত আমার ফ্লাটে নিয়ে যাই তারপর ভাবছি কি করা যায়।
আমি : সাহিল ঠিক কথাই বলেছে।

তিনজন মিলে ধরাধরি করে ছেলেটিকে গাড়িতে উঠায়। সাহিল ড্রাইভ করছে, রিয়া সাহিলের পাশে বসেছে আর ঊর্মি আলতো করে ছেলেটির মাথা কোলে রেখে পেছনে বসেছে। বাড়িতে নিয়ে এসে সাহিল ছেলেটির হাতের কনুই আর কপালে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়।

————————————

রাত 9:28 PM আহত সেই ছেলেটির কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরেছে তবে সে এখনো দুর্বল। ঊর্মি, রিয়া, সাহিল ছেলেটির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আর ছেলেটি বুঝার চেষ্টা করছে সে এখন কোথায় আছে।

ছেলেটি : আমি কোথায় আছি? (ছেলেটির এমন কথায় ঊর্মি, রিয়া বুকে হাত দিয়ে জোরে একটা শ্বাস নেয় আর সাহিল ভয়ার্ত চেহারায় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকে)
সাহিল : আপনি ঠিক আছেন? মাথা ব্যথা বা শরীরের কোথাও ব্যথা নেই তো?
ছেলেটি : অল্প মাথা ব্যথা! আপনি কে?
আমি : কিছুক্ষণ আগে কি হয়েছিলো, আপনার কি কিছু মনে আছে? (ভয়ে ভয়ে)
ছেলেটি : একদমই না! (ছেলেটির কথা শুনে ঊর্মি, রিয়া, সাহিল জোরে “ইয়েএএএ” বলে ওঠে আর ছেলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে)
সাহিল : এই ভরা সন্ধ্যেবেলা আপনি ওই নির্জন রাস্তায় কি করছিলেন?
ছেলেটি : আমি জানি না।
রিয়া : আপনার নাম কি? (তিনজন মিলে ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে)
ছেলেটি : আমার নাম মনে করতে পারছি না। (মাথায় ধরে)

ঊর্মি, রিয়া আর তানভীর ছেলেটির কথা শুনে অবাক এবং আতঙ্কিত হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে যার অর্থ “এই ছেলের মাথা গেছে, কিছুই মনে নেই” তারপর ঊর্মি রিয়া আর সাহিল ফিসফিস করে বলে…

রিয়া : ছেলেটির তো কিছুই মনে নেই। স্মৃতি শক্তি লোপ পাইনি তো? এখন আমরা কি করবো? আমার তো ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। (ভয়ে ভয়ে)
সাহিল : যাই হোক, ছেলেটিকে বলা যাবে না যে, সে আমাদের গাড়ির সামনেই পড়েছিলো। ভালোই হয়েছে সব ভুলে গেছে। (ফিসফিস করে) (ওদের কথার মাঝে ছেলেটি বলে উঠলো….

ছেলেটি : আচ্ছা এখানে পুলিশ স্টেশন কোথায়?
রিয়া : এই তুমি পু..পুলিশ স্টেশন গিয়ে কি করতে চাও? (ভয়ে ভয়ে)
ছেলেটি : আমি পুলিশ স্টেশন গিয়ে নিজের পরিচয় খুঁজে বের করতে চাই।
আমি : পু..পুলিশ স্টেশন যাওয়ার কি প্রয়োজন? আমরা তো তোমায় আগে থেকেই চিনি (জোর পূর্বক দাঁত কেলিয়ে দেয় আর সাহিলকে ইশারা করে কিছু বলার)
ছেলেটি : তাহলে কে আমি? কি আমার পরিচয়?
সাহিল : তুমি আ..আমার বড় চাচা ছে..ছেলে।
রিয়া : হ্যাঁ হ্যাঁ!
সাহিল : তোমার নাম তো আহিল। আচ্ছা যাই হোক এখন তুমি বিশ্রাম করো তাহলে তোমার স্মৃতি শক্তি আসলে আসতেও পারে।
আমি : good night!

তিনজন রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। ঊর্মি ওদের দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বলে “আমার আর রিয়ার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত। সেই সন্ধ্যা বের হয়েছে, আম্মু আব্বু টেনশন করবে। তুই সাবধানে থাকিস সাহিল, আমরা আসছি” বলেই রিয়া আর ঊর্মি সাহিলের ফ্লাট থেকে বেরিয়ে যায়। (ঊর্মি, রিয়া, সাহিলের একই এলাকাতেই)

————————————

আজ সকাল সকাল ঊর্মি আর রিয়া দু’জনেই সাহিলের ফ্লাটে চলে এসেছে। নিবিড়ের রুমের দরজা আলতো করে খুলে তিনজন উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছে। নিবিড়ের এখনো ঘুম ভাঙেনি। এমন সময় রিয়া বলে ওঠে “এই ছেলে এখনো ঘুমাচ্ছে। সত্যিই কি এর স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে?” ওদের উঁকিঝুকি দেওয়ার মাঝেই নিবিড়ের ঘুম ভেঙে যায় আর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। ঊর্মি, রিয়া আর সাহিল জোর পূর্বক হেসে রুমের ভেতর প্রবেশ করে আর তিনজন একসঙ্গে বলে ওঠে “good morning!”

সাহিল : তুমি এই ড্রেসটা চেঞ্জ করে নিন আমরা তোমার জন্য নাস্তা তৈরি করছি, তোমাকে ঔষধও খেতে হবে।
আহিল : ধন্যবাদ!

খাবার টেবিলে সাহিল আর আহিল খেতে বসেছে, দুই বান্ধুবী মিলে ওদের নাস্তা বেড়ে দিচ্ছে। ঊর্মি আর রিয়া সকল সকাল বাড়ি থেকে নাস্তা করে এসেছে। নাস্তা করতে করতে হঠাৎ আহিলের গলায় খাবার আটকে যায় আর কাঁশতে থাকে।

আমি : আরে আরে আস্থে ধীরে খাও! খাবার তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না তো! (পানি এগিয়ে দিয়ে)
আহিল : আসলে আমার খুব খিদে পেয়েছিলো! (পানিটা খেয়ে) আচ্ছা আমার পরিবারে কে কে আছে?
সাহিল : আ…আ তোমার পরিবারে তো কে..কেউ নেই!
আহিল : কেউ নেই মানে?
সাহিল : কেউ নেই মানে ছোট বেলায় তোমার বাবা-মা তোমাকে অনাথ করে চলে যায়, এরপর থেকে তুমি আমার সাথেই তো থাকো।
(মিথ্যে কথা! সাহিলের কখনো কোনো চাচা ছিলোই না। আসলে সাহিল যখন ইন্টার ১ম বর্ষে ছিলো তখনই ওর বাবা-মা একটা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। ঊর্মির বাবা আনিসুল সাহেবের সাথে সাহিলের বাবার বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। সাহিলের সমস্ত খরচ আনিসুল সাহেব বহন)
আহিল : ওহ আচ্ছা! (মন খারাপ করে)
আমি : আচ্ছা মন খারাপ করতে হবে না, বাকি খাবার টুকু খেয়ে নাও!

————————————

ভার্সিটি ক্যাম্পাসের একটা গাছ তলায় তিন’জন মিলে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন, কিছুটা সামনে আহিল দাঁড়িয়ে গাছে দিকে তাকিয়ে আছে। আহিলের চোট গুলো বেশ কিছুটা সেরে গেছে কিন্তু এখনো কিছু মনে করে উঠতে পারছে না।

আমি : কিছুই ভেবে পাচ্ছি না রে সাহিল! আদও কি কখনো আহিলের পুরনো স্মৃতি ফিরে আসবে কি’না তাও জানি না।
রিয়া : আহিলের কি পরিচয়, কোথা থেকে এসেছে, কিছুই জানি না!
সাহিল : কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না! একে তো বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাখছি কিন্তু কতদিন এমনটা চলবে?
আমি : আহিলকে দেখে মনে হয় না ও কোনো গরীব ঘরের ছেলে। সেদিন সকালেই আমার মনে পড়েছে তোদের বলেছিলাম না ওকে কোথাও যেন দেখেছি আমি?
রিয়া : হুম!
আমি : কিছুদিন আগে গার্লস গ্রুপে একটা মেয়ে আহিলের ছবি দিয়ে পোস্ট করেছিলো কিন্তু ফেসবুক রিফ্রেশের কারণে ওর নামটা আমি দেখতে পারিনি।
আহিল : তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো?
রিয়া : ও কিছু না!
সাহিল : চল ভাই আমরা কোথা থেকে ঘুরে আসি!

ওরা চারজন মিলে একটা লেকের কাছে নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। রিয়া আর সাহিল একে অপরের হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে (ওহ এই কথাটা তো বলাই হয়নি রিয়া আর সাহিল একে অপরকে পছন্দ করে। সারাক্ষণ টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করলেও দু’জন দু’জনের প্রতি প্রচন্ড খেয়াল রাখে) ঊর্মি আর আহিল একসাথেই হাটছে।

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here