তুমি_সূচনায় #পর্ব-৪

0
434

#তুমি_সূচনায়
#পর্ব-৪
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

ওরা চারজন মিলে একটা লেকের কাছে নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। রিয়া আর সাহিল একে অপরের হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে (ওহ এই কথাটা তো বলাই হয়নি রিয়া আর সাহিল একে অপরকে পছন্দ করে। সারাক্ষণ টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করলেও দু’জন দু’জনের প্রতি প্রচন্ড খেয়াল রাখে) ঊর্মি আর আহিল একসাথেই হাটছে। লেকটা দেখতে বিশাল বড় চারপাশে গাছগাছালি রয়েছে, মানুষ জন খুব একটা নেই তবে এখানে যারাই আছে বেশির ভাগ মানুষ গুলো জোড়ায় জোড়ায়। আহিল সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে একটা ইটের সাথে লেগে পড়ে যাচ্ছিলো এমন সময় তৎক্ষনাৎ ঊর্মি আহিলকে ধরে ফেলে।

আমি : তুমি ঠিক আছো? এক্ষুনি তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে।
আহিল : পড়ে তো যাইনি তাই না! (মন মাতানো হাসি দিয়ে)
আমি : এই ছেলের হাসিটা খুব সুন্দর একদম মন মাতানো। ঊর্মি তুই এইসব কি ভাবছিস? ভুলেও কোনো মায়ায় জড়াস না (মনে মনে)
আহিল : কি ভাবছো ঊর্মি?
আমি : হুম! কিছু না। আচ্ছা যখন তোমার সব মনে পড়বে তখন তো তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে তাই না?
আহিল : পরিবারের কারো কথা আমার মনে নেই তবে আমার স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়ার পর থেকে তোমরাই আমার পরিবার। যদি কোনোদিন আমার সবকিছু মনে পড়ে যায় তবুও আমি তোমাদের আর তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না!
আমি : তুমি নিশ্চিত?
আহিল : হুম!

অন্যদিকে রিয়া আর সাহিল একটা ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছে। রিয়া সাহিলকে বলছে ফুল কিনে দিতে কিন্তু সাহিল বলছে ও কিনে দিতে পারবে না, ওর কাছে টাকা নেই (আসলে সাহিলের কাছে টাকা আছে কিন্তু রিয়াকে রাগানোর জন্য মিথ্যে বলছে)

আকাশে মেঘ করেছে, আশপাশটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঠি সন্ধ্যে নামার আগ মুহুর্তের মতো, মনে হচ্ছে যে কোনো সময় বৃষ্টি নেমে পড়তে পারে। কিছুদূর যেতেই বৃষ্টি নামা শুরু হয়ে যায় আর এরা চার’জনই ভিজে যায়। হঠাৎ করে ঊর্মি রাস্তায় পিছলে পড়ে যায়, যার ফলে পায়ে মোচড় লাগে। রিয়া আর সাহিল একত্রে বলে ওঠে “তুই ঠিক আছিস?”

আহিল : ঠিক আছো তুমি?
আমি : মনে হচ্ছে পায়ে মোচড় লেগেছে, ব্যথা করছে।
আহিল : পা নাড়িয়ো না! আমরা তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি (ঊর্মির দিকে ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

রিয়া আর আহিল ঊর্মির দু’হাত ধরে ঊর্মি দাঁড় করায়। এরপর সাহিল, রিয়া, আহিলে তিনজনে ঊর্মিকে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়।

————————————

ঊর্মি তার রুমের বিছানায় বসে আছে, কিছুক্ষণ আগেই রিয়া, আহিল, সাহিল তিনজনে মিলে ঊর্মিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে। মিসেস অন্তরা মেয়ের কাছেই বসে আছে, এমন সময় নিবিড় বেশ তাড়াহুড়ো করে ঊর্মির রুমে প্রবেশ করে।

নিবিড় : খালামণি আম্মুর কাছে শুনলাম ঊর্মি নাকি পায়ে ব্যথা পেয়েছে!
মিসেস অন্তরা : হ্যাঁ রে বাবা! বাসায় আসার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে পায়ে মোচড় লেগেছে। আচ্ছা তুমি বস আমি তোদের দু’জনের জন্য কফি করে নিয়ে আসি। (বলেই মিসেস অন্তরা ঊর্মির রুম থেকে চলে যায়)
নিবিড় : এখনো কি ব্যথা আছে? (বিছানায় বসে)
আমি : হুম! (কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঊর্মি পা নিজের কোলে নিয়ে নেয় নিবিড়)
আমি : এ কি করছেন ভাইয়া?
নিবিড় : চুপ কথা বলবে না! (ঊর্মির পায়ে হাল্কা মাসাজ করে দিতে থাকে) ব্যথা করছে?
আমি : হাল্কা হাল্কা!
নিবিড় : এখন কেমন লাগছে, ব্যথা কি এখনো আগের মতোই?
আমি : উনি কি ম্যাজিক জানেন নাকি, ব্যথা আগের থেকে বেশ অনেকটাই কমে গেছে (মনে মনে) অনেকটাই কমেছে।

এমন সময় অনন্ত বোনের রুমে দৌঁড়ে আসে।

অনন্ত : আপু তুই নাকি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিস? কোথায় ব্যথা পেয়েছিস? খুব বেশি ব্যথা করছে? একটু দেখে শুনে হাঁটবি তো নাকি?
আমি : আরে ভাই থেমে থেমে বল, এখনই তো শ্বাস আটকে যাবে আর আজ আমাকে নিয়ে এতো ভাবছিস? বেশি ব্যথা নেই এখন।
অনন্ত : হুহ তোকে নিয়ে কে ভাবছে? পা মোচকে এলি এখন আম্মু বেশিরভাগ কাজ আমাকে দিয়েই করাবে। (বলেই নিজের রুমে চলে গেলো)
আমি : পাগল একটা (হাসতে হাসতে)
নিবিড় : তবে যাই বলো অনন্ত কিন্তু তোমার কথা অনেক ভাবে একদম বড় ভাইয়ের মতো।
আমি : হ্যাঁ ও সবসময় আমাকে বড় ভাইয়ের মতো আগলে রাখে।

নিবিড় ঊর্মিকে দেখেই অফিসে চলে যায়, একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং পেন্ডিং এ রেখে ঊর্মিকে দেখতে এসেছিলো। রাতে খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে। ঊর্মি পায়ে এখন তেমন ব্যথা নেই।

আনিসুল সাহেব : মামুনি তুমি না পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছো, এখনো কি ব্যথা আছে?
আমি : না আব্বু এখন আর ব্যথা নেই আমি ঠিক আছি।

————————————

এভাবেই এক সপ্তাহ কেটে গেছে, আহিলের সাথে ঊর্মি, রিয়া আর সাহিলে বেশ ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ঊর্মির সাথে আহিলের বেশ ভাব জমেছে এ’কদিনে।
পরপর দুটি ক্লাস করে ঊর্মি, রিয়া আর সাহিল মিলে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছে এমন সময় ইতু (ওদের আরেকটা বান্ধুবী) এসে দাঁড়ায়।

সাহিল : দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? বসে পড়!
ইতু : তোদের একটা জিনিস দিতে এসেছি (বসে ঊর্মির হাত একটা কার্ড এগিয়ে দেয়)
আমি : এটা কি? দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়ের কার্ড! (কার্ডটা উল্টে পাল্টে দেখছে)
ইতু : আমার বিয়ের কার্ড (লজ্জা মাখানো মুখ করে) তোদের কিন্তু আসতেই হবে।
রিয়া : কিরে তোর বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে? দুলাভাই কেমন দেখতে আর কি করেন?
ইতু : ওকে না’হয় বিয়ের দিনই দেখিস আর সে পেশায় ডক্টর। আচ্ছা আমার এখন বাসায় যেতে হবে তোদের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।

————————————

আজ ইতুর বিয়ে। ঊর্মি কালো রঙের কাতান শাড়ি পড়েছে, শাড়িটা মিসেস অন্তরার, উনিই মেয়ে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন আর সাথে চুলে খোপা করে গাজরাও লাগিয়ে দিয়েছেন। রিয়াও আজ শাড়ি পড়েছে, সাহিলের সাথে আহিলও এসেছে, ওরা দু’জন পাঞ্জাবি পড়েছে।
আশেপাশের অনেক মেয়েই আহিলের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। মেয়ে গুলোর এমন কান্ড দেখে ঊর্মি ভেতরে ভেতরে বেশ ঈর্ষান্বিত হচ্ছে।

আমি : ইচ্ছে করছে মেয়ে গুলো চুল ছিড়ে দিই। লুচু মেয়ে গুলো কিভাবে আহিলের দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা আমি এতো ঈর্ষান্বিত হচ্ছি কেনো? (মনে মনে)

মেয়ে গুলো দূরে থাকায় ওদের মধ্যে কি কথাবার্তা হচ্ছে ঊর্মি শুনতে পারছে না।

— আরে দেখ ছেলেটা কি সুন্দর দেখতে। আমি তো এক দেখায় ক্রাশ খেলাম। (একটা মেয়ে বললো)
— আমি তো আরও আগে ক্রাশ খেলাম রে বোন। কালো পাঞ্জাবিতে যা লাগছে না, মনে হচ্ছে পাঞ্জাবিটা শুধুমাত্র ওর জন্যই বানানো হয়েছে (আরেকটা মেয়ে বললো)
— এতো যে ক্রাশ খাচ্ছিস এই ছেলের পরিচয় জানিস? এ হচ্ছে আহমেদ গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক তিয়াশ আহমেদের একমাত্র ছেলে তানভীর আহমেদ। ওর গার্লফ্রেন্ডও আছে, মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর, ৪ বছরের রিলেশনশিপ ওদের। (পাশে থেকে অন্য আরেকটা মেয়ে এগিয়ে এসে বললো)
— তুমি এতো খবর জানো কিভাবে? (প্রথম মেয়েটা)
— সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি।
— তাহলে এতো ধনী ব্যক্তি এখানে কি করছেন? (দ্বিতীয় মেয়েটা)
— জানি না।

কিছুক্ষণ আগে ওরা ইতুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ওদের পৌঁছে দিতে ঊর্মির বাড়ি গাড়িটা ড্রাইভার সাথে করে নিয়ে যা, এখন চারজন মিলে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছে। কাছাকাছিই চলে এসেছে প্রায়। ওদের এলাকার সামনে একটা ব্রিজ আছে সেখানে তিনটে বখাটে ছেলে বসে আছে। সাহিল, রিয়া সামনে আর ঊর্মি, আহিল পেছনে। হঠাৎ করে বখাটে ছেলে গুলো বলতে শুরু করে…..

— কি চিজ মাইরি! (সিটি মেরে একটা ছেলে বলে উঠলো)
— তা ভাই মধু কি একা একা খাবি আমাদেরও একটু ভাগ দিস! (আরেকজন বললো)
আহিল : মুখ সামলে কথা বলুন।
আমি : ওদের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। চলো বাড়ি ফিরে যাই।
— একটা নয় দুটো মাল পেয়েছি আজ (অন্য আরেকজন কথা বলে এগিয়ে আসছিলো)
রিয়া : ঊর্মি না ভীষণ ভয় করছে।
সাহিল : ভয় পাস না আমরা আছি তো।

এমন সময় ওদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। আহিল, সাহিল মিলে তিনটে ছেলেকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। ছেলে গুলো যাওয়ার আগে বলে যায় “তোদের দেখে নেবো”

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here