তুমি_সূচনায় #পর্ব-৫

0
399

#তুমি_সূচনায়
#পর্ব-৫
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

অন্যদিকে…… নিবিড় তার মায়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনুমতি পেয়ে মিসেস অহনার রুমে প্রবেশ করে।

নিবিড় : আম্মু আব্বু তোমাদের সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিলো!
নেহাল সাহেব : হ্যাঁ বলো।
নিবিড় : আব্বু আমি ঊর্মিকে ভালোবাসি, ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।
নেহাল সাহেব : ঊর্মি মামুনিকে আমাদেরও বেশ পছন্দ, তোমার আম্মু তো সেই কবেই আমাকে বলেছিলো ঊর্মির কথা।
মিসেস অহনা : কালই আমি আপুর সাথে এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো।
নিবিড় : না আম্মু এখনই কিছু বলবে না, আর দু’মাস পর ঊর্মির ফাইনাল ইয়ার এক্সাম। এক্সাম শেষ হলে তখন বলবে আর আমারও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য কানাডা যেতে হবে।
নেহাল : কানাডার সেই পেন্ডিং থাকা ডিলটার জন্য?
নিবিড় : হুম”
মিসেস অহনা : আচ্ছা বাবা তাই হবে।

অন্যদিকে……..রাত ১২টা বাজে ঊর্মি শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে গল্প পড়ছে। এমন সময় অনন্ত ঊর্মির রুমে নক করে। ঊর্মির উঠে দরজা খুলে দেয় আর বলে….

আমি : কিরে এখন এমন সময় ডাকছিস কেনো? কিছু কি হয়েছে?
অনন্ত : আরে আপু আস্তে বলো আব্বু আম্মু জেগে যাবে। (আস্তে করে বললো) আমি মোবাইলে গেম খেলছিলাম, এখন আমার খিদে পেয়েছে। আপু যা না নুডলস রান্না করে দে। প্লিজ (ইনোসেন্ট ফেস করে)

অনন্তর ইনোসেন্ট ফেস দেখে ঊর্মি বেশ হাসি পেলো কিন্তু সে তা প্রকাশ করলো না, মুখে বিরক্তির ছাপ রেখে বললো……

আমি : তোর খিদে পেয়েছে তো আমি কি করবো? যা না নিজে নুডলস রান্না করে খা।
অনন্ত : প্লিজ আপু এমন করিস না।
আমি : হুম চল।

তারপর দুই ভাই-বোন মিলে রান্না ঘরে চলে গেলো। ঊর্মি নুডলস রান্না করে নিজের জন্য এক বাটি আর অনন্তকে এক বাটি দিয়ে বললো…..

আমি : নেন খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন!
অনন্ত : ধন্যবাদ আমার সোনা আপু (বলেই খাওয়া শুরু করলো, সাথে ঊর্মিও)

————————————

রাতে বেলা আহিল রুমে নক করে, সাহিল দরজা খুলে দেখে আহিল দাঁড়িয়ে আছে। কিছু দরকার কি না জিজ্ঞেস করায় আহিল বলে তার সাথে নাকি কিছু কথা আছে।

সাহিল : কি বলবি বল!
আহিল : আসলে হয়েছে কি, আমার না একজনকে খুব ভালো লাগে (লজ্জা পেয়ে)
সাহিল : তোর আবার কাকে ভালো লাগে?
আহিল : ঊর্মি!
সাহিল : কি বলছিস কি তোর মাথা ঠিক আছে? তুই তো নিজের পরিচয়ই মনে করতে পারছিস না, এর পরিনাম কি হবে তুই জানিস? আমি চাই না আমার বেস্টু কখনো কষ্ট পাক।
আহিল : আমি কখনো ওকে কষ্ট দেবো না। আমি ওকে প্রপোজ করতে চাই। প্লিজ আমাকে সাহায্য কর।
সাহিল : হুম।

আহিল চলে যেতেই সাহিল কথা গুলো রিয়াকে জানিয়ে দেয়। পরের দিন সকালে ওরা তিনজন ভার্সিটি বাঙ্ক করে ঘুরতে বের হয় সাথে আহিলও আছে। ওরা সবাই একটা নদীর ধারে এসে বসেছে, চারপাশে সাদা কাশফুলে ভরা। এখানে এসে ওদের সবার মনই ফুরফুরে হয়ে গেছে।
হঠাৎ করে আহিল, রিয়া, আহিল দাঁড়িয়ে যার ওদের দাঁড়াতে দেখে ঊর্মি দাঁড়ায়। ঊর্মি দাঁড়ানোর সাথে সাথেই আহিল হাঁটু গেড়ে বসে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল দিয়ে ঊর্মিকে প্রেম নিবেদন করে। আহিল যে এভাবে প্রপোজ করে বসবে ঊর্মি এটা কল্পনাও করতে পারেনি বিস্মিত হয়ে রিয়া আর সাহিলের দিকে তাকায়। ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে ওরা মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি : ওকে তো আমি পছন্দ করিই ভালোও বাসি কিন্তু ওর নিজের পরিচয় পরিবার কোনো কিছুই মনে নেই। আমার কি করা উচিত? (মনে মনে)
রিয়া : say yes!

ঊর্মি একবার সাহিল আর রিয়ার দিকে তাকায় আবার আহিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনো হাঁটু গেড়ে বসে আছে। ঊর্মি এবার মুচকি হেসে ওর হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে নেয়।

————————————

দু’দিন পর…..ঊর্মি ছাদের ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। এমন সময় অনন্ত ছাদে আসে আর ঊর্মিকে গুনগুন করতে দেখে বলে ওঠে।

অনন্ত : পেত্নী তোর ফাঁটা বাঁশ রেকর্ডার টা বন্ধ কর।
আমি : তুই আবার শুরু করেছিস? তোর কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে থাকিস কেনো বল তো?
অনন্ত : একশো বার লাগবো, হাজার বার লাগবো এটা আমার জন্মগত অধিকার।
আমি : তুই হাওয়ার সাথে লেগে থাক (বলে নিচে চলে গেলো)
অনন্ত : এ যাহ চলে গেলো! ধুর বোরিং লাগছে। (একা একাই বলতে থাকে)

রাতে….ঊর্মি টেবিলে বসে পড়ছিলো সামনেই ফাইনাল ইয়ার এক্সাম শুরু হবে। অনন্ত একটা বই আর খাতা নিয়ে বোনের রুমে নক করে বলে “আপু আমি এই অঙ্কটা পাড়ছি না একটু বুঝি দিবি?” ঊর্মিও তার ভাইকে খুব ভালো করে অঙ্কটা বুঝিয়ে দেয়।

পড়া শেষ করে ঊর্মি তার মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে মিসেস অন্তরা বিছানায় শুয়ে সিরিয়াল দেখছিলেন তখন ঊর্মি তার রুমে নক করে। মিসেস অন্তরা মেয়েকে রুমে ভেতরে আসতে বলে।

আমি : আম্মু তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো! (ঊর্মি তার মায়ের সাথে সব কথাই শেয়ার করে)
মিসেস অন্তরা : হ্যাঁ বল কি বলবি?
আমি : আম্মু আমি আহিলকে পছন্দ করি।
মিসেস অন্তরা : আহিল কে? সাহিলের সাথে থাকে ওই ছেলেটা না?
আমি : হুম!
মিসেস অন্তরা : পরিচয় কি ওই ছেলের? বাড়ি কোথায়?
আমি : আসলে আম্মু ও ওর অতীতের সব স্মৃতি ভুলে গেছে। (মাথা নিচু করে)
মিসেস অন্তরা : তোকে আমরা সবসময় স্বাধীনতা দিয়েছি তাই বলে যখন যা মন চাইবে তাই করতে পারিস না। আহিল হয়তো এখন কিছু মনে করতে পারছে না কিন্তু যখন ওর আগের সব স্মৃতি মনে পড়ে যাবে তখন তুই কি করবি? আমি তো মা আমি কখনই চাইবো না আমার মেয়ে কষ্ট পাক।
আমি : কিন্তু আম্মু!
মিসেস অন্তরা : আমি জানতাম আমার মেয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী কিন্তু আমার মেয়েটা এতোটা বোকা কবে হয়ে গেলো? আচ্ছা এখন এইসব কথা বাদ, সামনে তোমার এক্সাম পড়ায় মনোযোগী হও।
আমি : হুম

————————————

দেখতে দেখতে অনেক দিন পাড় হয়ে যায়, দ’দিন আগেই ঊর্মির ফাইনাল ইয়ার এক্সাম শেষ হয়েছে। এখন কিছুটা রিলেক্সে আছে ওরা। ঊর্মি আর আহিল একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে। দুজন দুজনকে চোখে হারায়। কথায় আছে না বেশি ভালোবাসা ভালো না। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যেমন কুয়াশা গুলো বিলীন হয়ে যায় তেমনি একটা ঝড়ে ঊর্মির মুখের হাসিও বিলীন হয়ে যায়।

আজ ওরা চারজন মিলে ঘুরতে বের হয়েছে। বেশ অনেকটা সময় ঘুরে বাড়ি ফিরে আসায় সময় হঠাৎ করেই একটা গাড়ি ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে গাড়িটা ঊর্মির সামনে আসায় তারা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নেমে আসে। মেয়েটা দেখতে বেশ মর্ডান আর সুন্দরীও। মেয়েটা দৌঁড়ে এসে আহিলকে জড়িয়ে ধরে, আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরায় ঊর্মি, রিয়া আর সাহিল বিস্মিত হয়ে যায় আর আহিল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েটি : তানভীর তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?
আহিল : আপনি কে? আমরা কি দু’জন দু’জনকে চিনি? আর আপনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবেন না।
মেয়েটি : অবশ্যই আমরা একে অপরকে চিনি। আমি তোমার রুহি (আরুহি) ছোট বেলা থেকে আমরা একসাথে বেড়ে উঠেছি। তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

(ঊর্মি দাঁড়িয়ে মেয়েটির কথা গুলো শুনছে। এমনটা একদিন হওয়ারই ছিলো)

আরুহি : এমন একটা দিন যায়নি যে আমি তোমাকে মিস করি নি। তুমি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি। তুমি আমায় কি করে ভুলে গেলে তানভীর? (আহিলের দু হাতের বাহু ধরে)
আহিল : আমি আহিল তানভীর নই। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমার কারো সাথেই বিয়ে ঠিক হয়নি আমি একজনকে ভালোবাসি। (আরুহির থেকে কিছুটা দূরে সরে)
আরুহি : তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো।
আহিল : আমি শুধু ওকে ভালোবাসি (ঊর্মির হাত ধরে)

এমন সময় আরুহির সাথে থাকা ছেলেটা বলে…..

শিহাব : ভাবি মণি! আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি একটা এক্সিডেন্টের জন্য ভাই তার আগে সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। (তানভীর এর কাজিন শিহাব)
আরুহি : তানভীর আমি তোমাকে শরের বেস্ট ডক্টরকে দেখাবো, দেখবে তোমার সব আবার মনে পড়ে যাবে।
আমি : এমনটা হওয়ারই ছিলো। আমি কিভাবে ভুলে যেতে পারি যে আহিলেরও একটা অতীত আছে। কি করবো আমি এখনো? ওকে কি আমি হারিয়ে ফেলবো? (মনে মনে)

(ঊর্মি সাহিলকে ইশারা করে আহিলকে যেনো ওদের থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায়)

আমি : ক্ষমা করবেন! আমরা আপনাকে বিভ্রান্ত করতে চাই না, কিছু কথা বলতে চাই। আহিলকে আমরা রাস্তা পাই আহত অবস্থায়, যখন ওর পরিচয় আর ঠিকানা জানতে চাই তখন ও বলে যে ওর কিছুই মনে নেই। তখন থেকে আহিল আমাদের সাথে আছে।
আরুহি : প্লিজ তানভীর এর থেকে তুমি দূরে সরে যাও, কত টাকা চাই তোমার বলো আমি দেবো তোমাকে। তুমি জানো ওকে না পেয়ে আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে কি গেছে।
আমি : আহিল আর আমি একে অপরকে ভালোবাসি!
আরুহি : ওর নাম তানভীর। ঊর্মি আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো, তানভীর এখানে থাকতে পারে না। তুমি আর তানভীর দু’জন আলাদা দুটো পৃথিবী। তানভীর এর স্মৃতি মনে পড়ে গেলে ও তোমাকে চিরদিনের জন্য ভুলে যাবে, তোমাদের মাঝে যে কোনো সম্পর্ক ছিলো সেটাও ওর মনে থাকবে না। (বলে সেখান থেকে চলে যায়)

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here