তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী,পর্ব-০৩,০৪
লাবিবা_ওয়াহিদ
পর্ব-০৩
আধঘন্টা ধরে দুই হাত মুঠিবদ্ধ করে রোবটের মতো বসে আছে সানাম। তার সামনে পায়ের উপর পা তুলে, পান চিবুতে চিবুতে সানামের পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করে চলেছে ফারিশের নানী। ইকরাম ফরিদ দূরে দাঁড়িয়ে সবটা লক্ষ্য করলেও শ্বাশুড়ির ভয়ে সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। এমনও হতে পারে বাইরের মেয়েটার সামনে তার ইজ্জতহরণ করে দিবে। নানী পান ফেলে কিছু বলার প্রস্তুতি নিতেই ফারিশ এসে হাজির হলো গায়ে জ্যাকেট জড়াতে জড়াতে।
-“সানাম, রেডি হয়ে নাও। মা নাকি তোমায় এডমিশনের কথা বলেছিলো! কাল আমি যেতে পারবো না, আমার অফিস আছে। তাই আজ চলো।”
-“এডমিশান! কিয়ের এডমিশান? এই মাইয়া ঘাড়ের উপ্রে বইয়া খাইবো আবার পড়ালেহার ট্যাকাও উষুল করবো! ফারিশ তোরে আমি সাবধান কইরা দিতাসি এইসব মাইয়ার থেইকা দূরে থাক!”
-“তোমারে কে বললো নানী যে আমরা তার খরচ বহন করবো? সব তো আঙ্কেলের টাকাতেই, আমরা শুধু ব্যবস্থা করছি, এ-ই তো! তুমি না বুঝে বেশি বলো কিন্তু নানী! মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখো, স্বার্থপর আর ঈর্ষান্বিত হয়ে দুনিয়া চলে না। আর সানাম, তোমাকে কী বলেছি শুনতে পাওনি? যাও গিয়ে রেডি হও।” কিছুটা ধমকের সুরে বললো ফারিশ। ফারিশের ধমক খেয়ে সানাম চলে গেলো নিজের ঘরে।
নানী ফারিশের কথায় রেগে গেলেও শেষে ফারিশ ধমক দেয়ায় নানী দমে গেলো। সে চায় এতিম মেয়েটাকে এভাবে ধমকের উপর রাখতে। নানী নিজের পানের ডাব্বা নিয়ে আস্তেধীরে নিজের ঘরে চলে গেলো। নানী চলে যেতেই ফারিশ জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। ফারিশের পানি খাওয়া শেষ হতেই ইকরাম ফরিদ এগিয়ে আসলো ফারিশের দিকে।
-“একেবারে ঠিক সময়ে এসেছিস ফারিশ। নয়তো প্রথমদিনেই তোর নানী মেয়েটাকে বদহজম করে দিতো।”
-“তুমি চিন্তা করিও না বাবা। ইনশাল্লাহ সবটা সামলে নিতে পারবো। সকালের মেডিসিন নিয়েছো?”
-“মেডিসিন না নিলে বুঝি তোর মা আমাকে ফেলে তার অফিসে যেতো? না খেলেও জোর করে খাইয়ে তারপর অফিস যায়!” মায়ের কান্ড শুনে ফারিশ মুচকি হাসলো। অতঃপর সানাম আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
সানাম নিজের ব্যাগ খুলে একটা জামা নিতে গিয়েই দেখলো তার বাটন ফোনটা। ১০ মাস টাকা জমিয়ে ১২০০ টাকা দামের এই মোবাইলটি কিনেছিলো সানাম। ফোনটা আপাতত তার প্রয়োজন না তাই সে আবার ব্যাগেই রেখে দিলো। ভোরেই অন্তরা তার কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলো। সানাম সুন্দরভাবে রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। ফারিশ সানামের কাগজপত্রের ফাইলটা সানামকে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-“তো যাওয়া যাক। বাবা আসছি!”
-“হু। বাইক সাবধানে চালাবি!”
ফারিশ মাথা নাড়িয়ে সানামকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সানাম ফারিশের সাথে ভয়ে ভয়ে লিফটে উঠলো। ফারিশ ১ চাপতেই ডোর অফ হয়ে গেলো। এদিকে সানাম চোখ বুজে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। লিফট নামতেই সানাম গিয়ে ফারিশের উপর পরলো। ফারিশ সানামের বাহু অপ্রস্তুতভাবে ধরে ফেললো।
-“এতোটুকুতেই মাথা ঘুরায় তোমার?”
-“তো কি করবো! আমি কখনো এই লিফতে উঠেছি নাকি। আল্লাহ কী ভয়ংকর লাগছে!”
ফারিশ উত্তরে কিছুই বললো না। সানাম যেন আবার না পরে তার জন্য ফারিশ সানামের একহাত ধরে আছে। আর সানাম আরেক হাত দিয়ে ফারিশের জ্যাকেট খামচে ধরেছে। সানাম এবার ফারিশের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো। ভীষণ সুদর্শন ফারিশ। ফারিশকে দেখে সানামের মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো। এমন সুদর্শন আগে কখনো দেখেছে বলে তার মনে হয় না। হ্যাঁ দেখেছিলো এক স্টুডেন্টের বাসায়। তবে সেই ছেলের সাথে ফারিশের আকাশ পাতাল তফাৎ। কই ফারিশ আর কই ওই ছেলে। লিফট খোলার শব্দ কানে আসতেই সানামের ধ্যান ভাঙলো এবং সে সাথে সাথেই সানাম চোখ নামিয়ে ফেললো। ভাগ্যিস ফারিশ লক্ষ্য করেনি নয়তো ভীষণ লজ্জায় পরতে হতো তাকে। ফারিশ অনেক আগেই সানামকে ছেড়ে দিয়েছে। সানামকে ছেড়ে সে লম্বা লম্বা পা ফেলে গ্যারেজের দিকে যেতে লাগলো। সানাম তো একপ্রকার ছুটছে ফারিশের সাথে। এতো জলদি কেউ হাঁটে নাকি? বাইকের কাছে আসতেই ফারিশ তার হ্যালমেট হাতে নিতে নিতে বলে,
-“বাইকে উঠো। বসতে পারবা নাকি উল্টে পড়বা? তোমার তো আবার সবকিছুতেই সমস্যা!”
ফারিশের খোঁচা মারা কথায় সানাম কিছুটা চটে গেলো। অতঃপর রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-“আপনার কী ত্যাড়া কথা ছাড়া আর কিছু মুখে আসে না!”
-“যাক বাবা। আমি কখন ত্যাড়া কথা বললাম?”
-“তাহলে এভাবে ত্যাড়া করে খোঁচালেন কেন?”
-“তাহলে কী সোজাসুজি খোঁচাবো? আমি মেয়েদের গায়ে হাত দেই না!”
-“হুহ ঢং! কাল থেকে তো টানাটানির উপরেই আছেন আপনি! যত্তোসব!”
-“কিছু বললে?”
-“না বললাম, বাইকে কতো উঠেছি!” দাঁতে দাঁত চেপে বললো সানাম। সানামের কথায় ফারিশ সানামের দিকে ফিরে ভ্রু কুচকে বললো,
-“কার সাথে বাইকে উঠেছো?”
-“আপনাকে কেন বলবো?”
বলেই সানাম ফারিশের পিছের সিটে বসে পরলো। ফারিশ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চাবি দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। জোরে টান দিতেই সানাম অপ্রস্তুত হয়ে পরতে পরতে বেঁচে যায়। তাও সে এখন অবধি ফারিশকে ধরে বসেনি। ফারিশ লুকিং গ্লাসে সানামের অবস্থা দেখে বাইক থামিয়ে পিছে ফিরলো।
-“এতো ঢং করো কেন তুমি? এই না বাইকে কতো উঠসো এখন তো আরেকটু হলেই মুখ থুবড়ে পরতে। ধরে বসতে পারো না?”
-“আপনাকে ধরে বসবো আমি? আপনাকে ধরলে তো আপনার ছ্যাঁকা লাগে, তিলকে তাল বানাতে সময় নেন না!”
-“মেয়ে তুমি আসলেই একটা বাচাল! তোমার সাথে কথা বলে ফালতু সময় ওয়েস্ট করার মতো সময় আমার নেই! ধরে বসতে হলে বসো নয়তো ধাক্কা দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দিবো, স্টুপিড!” অত্যন্ত রেগে কথাগুলো বললো ফারিশ। অতঃপর আবার বাইক টান দিতেই সানাম নিজের অজান্তেই ফারিশের জ্যাকেট হালকাভাবে খামচে ধরলো। পুরো রাস্তায় কারো কথা হলো না। তবে ভার্সিটির রাস্তায় ঢুকতেই সানাম বলে উঠলো,
-“আমার মনে হচ্ছে আপনার বাসায় থাকা ঠিক হবে না!” সানামের কথা শুনে ফারিশ সাথে সাথে বাইক থামিয়ে সানামের দিকে ফিরলো!
-“কেন? আমার বাসায় কী এমন সমস্যা তোমার?”
-“আপনার নানু মনে হয় আমাকে পছন্দ করে না।” সানামের কথায় ফারিশ একটা লম্বা শ্বাস ফেললো।
-“তোমাকে আমি কীভাবে বুঝাবো জানি না। তবে আমার নানী খিটখিটে মেজাজের। আমার মায়ের নানার বিগড়ে যাওয়া মেয়েও বলতে পারো, তাই তার ব্যবহারও তেমন। তাই নানীকে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। মা আছেন, বাবা আছেন। তারা আমার অনুপস্থিতিতে তোমায় প্রটেক্ট করবে। তাই আপাতত নানীর চ্যাপ্টার বাদ দাও। এখন শুধু আগামী দিন গুলো সম্পর্কে ভাবো!”
বলেই ফারিশ বাইক চালানোয় মনোযোগ দিলো। ভার্সিটি পৌঁছাতেই ফারিশ সানামকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ক্যাম্পাসে যেতেই প্রায় মেয়েরাই তাদের আড়চোখে দেখছে। তাদের বললে ভুল হবে, ফারিশকে দেখছে। সেসব ফারিশ লক্ষ্য না করলেও সানাম ঠিকই লক্ষ্য করছে।
-“আজব। ওনাকে এভাবে দেখার কী আছে? ওনার রূপ কী বেয়ে বেয়ে পরছে নাকি উনি কোনো ফিল্মের হিরো? এই মেয়েদের দিকে তো এই বদরাগীটার নজরই নাই। যাক, মেয়েদের দিকে নজর দেয় না এমন ছেলেও তাহলে দুনিয়ায় আছে।” আপনমনে বিড়বিড় করে বললো সানাম। ফারিশ সানামকে নিয়ে একেবারে প্রিন্সিপালের কেবিনে চলে গেলো।
চলবে।
#তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৪ ||
এডমিশনের সকল ফর্মালিটি করার পর ফারিশ সানামকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। এদিকে সানাম টাকার চিন্তা করতে করতে ফারিশের থেকে কিছুটা পিছে আসছে যার ফলে কারো সাথে সানাম ধাক্কা খেলো। পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখলো অচেনা কয়েকটা ছেলে। ছেলেটা ক্রোধ দেখিয়ে বললো,
-“সমস্যা কী! চোখে দেখে চলতে পারো না?”
সানাম সরি বললো কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। বারংবার ছেলেটি তাকে আজেবাজে কথা শুনিয়েই চলেছে, ছেলেটি একা নয় তার বন্ধুরাও তার সাথে তাল মিলিয়েছে। ফারিশ কি ভেবে পাশে তাকাতেই দেখলো সানাম নেই। অতি দ্রুত পিছে ফিরে দেখলো কয়েকটা ছেলে সানামকে ঘিরে ধরেছে। ফারিশ চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে আবার পরলো। অতঃপর সেও এগিয়ে গেলো। ছেলেগুলোর অতিমাত্রায় বকবকানিতে সানামের এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তার ভেতর কতো বড় তুফান চলছে সেটা একমাত্র সে-ই জানে। তাও যে সরি বলেছে এতেই তো ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু না, তিল কে তাল তাদের বানাতেই হবে। সানাম নিজেকে দমাতে না পেরে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-“এই মিস্টার, আপনার কোনো রাইট নেই আমার সম্পর্কে এতকিছু বলার। আমি নাহয় দেখতে পাইনি, কিন্তু আপনি কী? আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন? আমার পাশ কেটে চলে যেতে পারলেন না? দোষ আমার না আপনার। তাও আমি সরি বলেছি বাট আপনি আজাইরা পকপক করেই চলেছেন! নিজেকে আগে আয়নায় দেখেন অতঃপর অন্যজনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে নিয়েন! যত্তোসব!”
বলেই সানাম পাশ কেটে চলে আসলো। ফারিশের আর সেদিকে যাওয়া লাগলো না, তার আগেই সানাম তার কাছে চলে এসেছে। ফারিশকে দেখলে সানাম বলে উঠে,
-“আপনি কী আমার সাথে আসবেন, নাকি এই কাঠফাটা রোদে শুঁটকি করবেন?”
-“তুমি তো এমনিতেই শুঁটকি। আর কতো শুঁটকি হবা? বাই দ্যা ওয়ে, ওখানে কি হচ্ছিলো? কিছু বলেছে?”
-“আমি শুঁটকি হলে আপনার কী? আর ওরা আমাকে আর কি বলবে, প্রেমপত্র দিচ্ছিলো!” অনেকটা রেগেই বললো সানাম। সানামের রাগের৷ কারণ ফারিশ ধরতে পারলো না। বলা যায় কারণ জানার ইচ্ছাও তার নেই। তাই ফারিশ সানামকে নিয়ে গ্যারেজের দিকে গেলো। গ্যারেজ থেকে বাইক নিয়ে চলে আসলো বাড়িতে। ফারিশকে দেখে ছেলেগুলা চিনতে পারলো। তাদের মধ্যে সিনিয়র সন্ধি ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,
-“ফারিশ ভাই না?”
-“হ মাম্মা! কিন্তু ওর সাথে এই মেয়ে কি করে? আজকাল মেয়েবাজি শুরু করসে নাকি?”
-“সে জেনে আমার কোনো কাজ নাই। মেয়েটার এতো বড় সাহস এই সন্ধিরে কথা শুনিয়ে দিয়ে গেছে! নতুন হয়ে এতো সাহস কই পায়, সিনিয়রদের সাথে এভাবে কথা বলার!”
-“আরে সমস্যা না ব্রো! তুমিও ফর্মালিন দিয়ে দিও, যাকে বলে ঠিকসময়ে কোপ। এখন চলো ওদিকে আমাদের র্যাগিংও বাকি।”
-“ঠিক আছে চল।”
সানামকে বাসায় দিয়ে ফারিশ বাইক নিয়ে কোথায় যেন চলে গেলো। এদিকে সানামের এখন আরেক ভয়, লিফটে সে এখনো অভ্যস্ত নয়, ফারিশও নাই যে তার হেল্প নিবে। এখন কিভাবে লিফটে উঠবে? দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো সানাম। বামপাশে নজর দিতেই দেখলো সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে তো সানাম ভর্তা হয়ে যাবে। সানাম একবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো আবার লিফটের দিকে। ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কীভাবে যাবে। অতঃপর সিঁড়ির দিকেই পা বাড়ালো।
.
ফারিশের বাইক নিয়ে গলি থেকে বের হতেই মনে পরলো সানাম তো লিফটে চড়তে পারে না। “শিট” বলে জোরে বাইকের ব্রেক কষলো। মিনমিন করে আবারো বললো, “সামি, সেজান। তোদের হাতের নাগালে পাই, তখন ঠ্যালা তোদের বুঝায় দিবো। নিজে বাঁচি না এক জ্বালায় এখন আবার আরেকটা জ্বালা গলায় ঝুলায় দিছে! ধ্যাত!”
বলেই এক চাপড় মারলো বাইকে। অতঃপর বাইক স্টার্ট দিয়ে বাইক ঘুরিয়ে বাসার দিকে চলে গেলো। বাড়িতে এসে দেখে লিফট অফ, ফারিশের কিছুটা চিন্তা হলো। তখনই দারোয়ান ফারিশকে পিছু ডাকলো।
-“আরে ফারিশ বাবা যে। কোথাও কী গেছিলা?”
দারোয়ান চাচার কথায় ফারিশের ধ্যান ভাঙলো। ফারিশ পিছে ফিরে ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“হ্যাঁ চাচা। তা কেমন আছেন?”
-“এইতো বাবা, তোমাদের দোয়ায় ভালো আছি।”
-“আচ্ছা চাচা, এখানে কী কিছুক্ষণ আগে কোনো মেয়েকে দেখেছিলেন?”
-“না বাবা। আমি তো মাত্রই টঙ হয়ে চা খেয়ে আসলাম। কেন বাবা কিছু কি করেছে?”
ফারিশ যেন আরও চিন্তায় পরলো। ফারিশকে চিন্তিত দেখে দারোয়ান চাচা বলে উঠে,
-“তুমি চাইলে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পারো!”
ফারিশ যেন আশার আলো পেলো। মুহূর্তের জন্য সিসিটিভি ফুটেজের কথা তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস দারোয়ান চাচা বললো। ফারিশ দারোয়ানের সাথে দারোয়ানের ঘরে চলে গেলো। সেখানেই ফুটেজ দেখতে পারবে। ফারিশ সময় সেট করে ফুটেজ দেখে নিলো। সানাম সিঁড়ির দিকে গেছে দ্যাট মিন, সে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে। ফারিশ দারোয়ানকে “ধন্যবাদ” দিয়ে জলদি করে লিফটের দিকে ছুটলো। একটা অনুমান করে সে ৬ ফ্লোরের বাটন চাপলো। সশব্দে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। ৬ ফ্লোরে আসতেই দরজা খুলতেই দেখলো সানাম সিঁড়িতে বসে হাঁপাচ্ছে এবং কিছুক্ষণ পরপর ওড়না দিয়ে কপাল এবং গলার ঘাম মুছছে। সানামের অবস্থা দেখে ফারিশের রাগ উধাও হয়ে গেলো এবং ফিক করে হেসে দিলো। অট্টহাসির শব্দে সানাম পিছে ফিরে দেখে ফারিশ বুকে হাত দিয়ে হেসেই চলেছে। ফারিশকে দেখে সানাম সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলো। ফারিশ ব্যঙ্গ করে বললো,
-“কী সখ মিটেছে তো সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার? ৬ ফ্লোর উঠেই তোমার জোর ফুস হয়ে গেছে! কথার বেলায় তো দুনিয়া উল্টায় ফেলো, এখন ওইসব এনার্জি কই পালালো?”
-“দেখেন একদম খোচা দিয়ে কথা বলবেন না! আমি আপনার দোষে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বাধ্য হইসি!”
-“আমি কী করলাম যে আমাকে দোষারোপ করছো? যত দোষ নন্দঘোষ, বাহ!”
-“আপনারই দোষ। আপনি জানেন না আমি লিফটে চড়তে পারি না, তাও আপনি আমাকে ফেলে উধাও হয়ে গেছেন।”
-“আমি ভুলে গেছি বুঝলাম, তোমার কী জরুরি ছিলো না আমাকে মনে করিয়ে দেয়ার?”
সানাম প্রতিত্তরে কিছুই বললো না।সে নিজেও জানে সে ভুল করেছে ফারিশকে না জানিয়ে। সানামকে এমন থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ কথা ঘুরিয়ে বললো,
-“এখন লিফটে আসবা নাকি এখানেই খাম্বার মতো দাঁড়ায় থাকবা?”
সানাম ভেঙচি কেটে ফারিশের সাথে লিফটে উঠে আসলো। এবার সানামের তেমন খারাপ লাগলো না। সানামকে ৮ম ফ্লোরে দিয়ে ফারিশ আবার নিচে চলে গেলো। সানাম ফাইলগুলা নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে দেখলো ইকরাম ফরিদ চা খাচ্ছে আর টিভিতে নিউজ দেখছে। ইকরাম ফরিদ ব্যাংকে কাজ করতো, গত ১০মাস আগেই তিনি রিটায়ার হয়েছেন। সেই থেকেই উনি ঘরে বসা। এদিকে বুয়া রান্নাঘরে কাজ করছে। নানী নিজের ঘরে কি করছে, না করছে সে-ই জানে। সানাম দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। একটা বেজে ছয় মিনিট। ইকরাম ফরিদ সানামকে দেখে মুচকি হেসে বলে,
-“এডমিশনের সব ফর্মালিটি সব হয়েছে তো মা?”
-“জ্বী আঙ্কেল। আগামী পরশু মানে শনিবার থেকে
ক্লাস শুরু হবে।”
-“যাক তাহলে তো ভালোই। এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, ভালো থাকবে।”
উত্তরে সানাম মুচকি হেসে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। যেতে যেতে মিনমিন করে বললো,
-“ওই ফানুস থুক্কু ফারিশটার কথা জিজ্ঞেস করলো না কেন? যাক গে, জিজ্ঞেস করেনি ভালোই হয়েছে।”
বলেই সানাম হাতের ফাইলগুলো জায়গামতো রেখে বোরকা হিজাব খুলে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে সানাম ভাবছে অন্তু আন্টি লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় ফেরে কিনা! এদিকে খুদাও পেয়েছে প্রচন্ড! কীভাবে লিভিংরুমে যাবে আর খাবার চাইবে ঠিক বুঝতে পারছে না। অস্বস্তিবোধ যেন তাকে চেপে ধরেছে। খুদার জ্বালা ভুলতে সানাম তার ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে রেকে গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। দুপুর দু’টায় অন্তু ফিরলেন ফারিশের সাথে। ফারিশই তার মাকে পিক করতে গিয়েছিলো। অন্তু বাইক আগে ভয় পেলেও, ছেলের সাথে আসতে আসতে সেই ভয় আর নেই, রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অন্তু ফারিশকে ফ্রেশ হতে বলে নিজের ঘরে চলে গেলো। অতঃপর সানামকে ডেকে খেয়ে নেয় সবার সাথে। অন্তু আন্টিকে পেয়ে সানাম যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দুপুরে সকলেই যে যার মতো ঘুমাতে চলে যায়। খাওয়ার পর সানামেরও বেশ ঘুম পাচ্ছে কারণ সে গতরাতে এক মিনিটের জন্যেও ঘুমাতে পারেনি। তাই সে দেরী না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। অতঃপর ঘুমিয়ে গেলো।
চলবে।