তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী,পর্ব ১০
লাবিবা_ওয়াহিদ
কয়েক মাস কেটে গেলো। এর মাঝে সানাম নিজেকে অনেকটাই গুছিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তবে দুইটা টিউশনি দিয়ে আর কতোই বা চলবে? তাই সানাম ঠিক করলো সে আরও কয়েকটা টিউশনি যোগাড় করবে। কিন্তু কী করে? এসব ভাবতে ভাবতেই সে ব্যাগ গুছাচ্ছিলো। ক্লাস শেষ তো এখন বাসায় যাওয়ার পালা। সানামের পাশে ইতিকে অনেকটা তাড়াহুড়ো করতে দেখলো। হঠাৎ সানামের ইতির ব্যাগের ভেতর চোখ গেলো। নেভিব্লু রঙের একটা ড্রেস। এটা ইতির ব্যাগে প্রায়ই দেখেছে সানাম, তবে প্রশ্ন করার মতো সুযোগ হয়ে উঠেনি। সানাম প্রশ্ন করলো,
-“ইতি! এই ড্রেসটা আমি প্রায়ই তোর ব্যাগে দেখেছি। এটা কিসের ড্রেস বলবি?”
-“আরে বলবো না কেন? আমি তো পার্ট টাইম জব করি, হাফবেলা। ভার্সিটি থেকে আমি সেখানেই ডাইরেক্ট চলে যাই! তাই ব্যাগে করেই ড্রেসটা নিয়ে আসি।”
-“কীসের জব রে?”
-“একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির রিসিপশনে বসতে হয়, আর কিছু কাজ করতে হয়!”
-“মাল্টিন্যাশনাল মানে তো অনেক বড়। তুই বড়ো ডিগ্রি ছাড়া কীভাবে চান্স পেলি?”
-“সবই আমাদের দয়ালু বসের কামাল বেইব। জানিস মানুষটা আমাদের মতো স্টুডেন্টদের জন্য অনেক ভালো ভালো ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমাদেরও কাজের উপযোগী করছে।”
-“সত্যি? আচ্ছা আমিও কী জয়েন হতে পারবো? না মানে এখন মাসের শেষ, যদি কাউকে নেয়।”
-“উম… আচ্ছা তাহলে আজ তুই আমার সাথে চল, যেতে যেতে ওদের কাজ বুঝিয়ে দিবো এন্ড বসের সাথেও কথা বলে নেবো। এখন যেতে তোর কোনো সমস্যা হবে না তো?”
-“আরে না। চল যাই, আমার জবটা লাগবে রে।”
-“ঠিকাছে চল!”
বলেই ইতি সানামকে সাথে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার পথে হঠাৎ সন্ধি এসে ইতিদের পথ আটকালো। সন্ধি মুগ্ধ চোখে ইতিকে দেখে বললো,
-“কোথায় যাচ্ছো ইতি?”
সন্ধির ঘোরলাগা কন্ঠ শুনে ইতি কিছুটা লজ্জা পেলো এবং আমতা আমতা করে বলে,
-“অঅফিস..”
সানাম ওদের বিষয়টা বুঝতে পেরে কিছুটা সরে আসলো। ইতি এবং সন্ধির রিলেশন করছে তা ভার্সিটির এমন কেউ নেই যে জানে না। সন্ধি নিজেই ভার্সিটির সবার সামনে ইতিকে প্রপোজ করেছিলো। ইতি যেহেতু আগে থেকেই সন্ধিকে পছন্দ করতো তাই সেও আর রিজেক্ট করেনি। পছন্দ থেকে ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। সানাম দূর থেকে দুজনকে দেখে ফারিশের কথা ভাবছে। ফারিশ সেদিনের কিছুদিন তার সাথে কিছুটা দুর্ব্যবহার করলেও পরে থেকে আবার নরমাল বিহেভ করছিলো। কারণ জানতে চাইলে সানামকে ফারিশ কিছুই জানায়নি। তাই সানামও বেশি জোর করেনি, তবে সেই ব্যবহারের উত্তর অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। তবে সানামের আজও অজানা, সেদিন ফারিশ সানামকে বয়ফ্রেন্ডের কথা কেন বললো? সানাম আনমনে ছিলো এমন সময়ই ইতি এসে সানামের ধ্যান ভাঙালো।
-“কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
-“কই? আ.. তোর সন্ধি ভাইয়ের সাথে কথা বলা হলো?”
ইতি লাজুক সুরে বলে, “হুম”
সানাম হাসলো। তারপর দুজন মিলে চলে গেলো। রাস্তায় সানামকে ইতি সবটাই বুঝিয়ে দিলো। অতঃপর ইতি তার বসকে ফোন করে সানামের বিষয়টা বললো। বস জানালো সানামকে যেন নিয়ে আসে। বসের সম্মতি শুনে সানাম বেশ খুশি হলো। ইতির ভাষ্যমতে কাজের সময় মেইনটেইনটা সানামের মনে ধরেছে। প্রায় ৪০ মিনিট পরপর রিক্সা অফিসের সামনে এসে থামলো। ইতি ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সানামকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। রিসিপশনের দিকে যেতেই দেখলো একজনই মেয়ে বসে আছে, আরেকজনের সিট খালি। একটা মেয়ে ইতিকে হাত নাড়িয়ে হাই জানালো। ইতিও হাই দিলো মুচকি হাসি দিয়ে। সেই মেয়েটা নেভিব্লু কালারেরই ড্রেস পরে আছে। ইতি সানামকে লিফটে করে স্যারের ফ্লোরে চলে গেলো৷ লিফট থেকে নেমে চলে গেলো একটা বড় দরজার সামনে। দরজায় নক করতেই বস বলে উঠলো,
-“কামিং!”
★
ফারিশ তার কয়েক মাসের পরিশ্রমে বেশ ভালো একটা অবস্থায় এসেছে। বস ভিষণ খুশি ফারিশের মতো একজন স্টাফ পেয়ে। তাই ফারিশকে বেশ ভালো পদ দেয়৷ ফারিশের এখন নিজের কেবিন আছে, কিছুদিন পর হয়তো তার একজন এসিস্ট্যান্টও হবে। সেদিন ফারিশ ঘুম থেকে উঠে তার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে ভাবে হয়তো তার মা-ই তার হাতে ব্যান্ডেজ করেছে। কিন্তু এখানে যে আরেক গল্প আছে যা ফারিশের অজানা। তার এও অজানা সে ঘুমিয়ে গেলে প্রতিরাতে তাকে দেখতে তার কক্ষে কে আসে?(পাঠকদের কাছেও সিক্রেট?) সেদিনের কিছুদিন পরই ফারিশ সন্ধিকে দিয়ে খবর নেয় যে সানামের সাথের ছেলেটা কে ছিলো। সন্ধি তাকে জানায় সে সানামের ব্যাচমেট, শুধুই বন্ধু। এ-কথা শুনে ফারিশ বেশ অনুতপ্ত হয়েছে। বাই চান্স যদি সেদিন রাতে সে ঠিকসময়ে না পৌঁছাতো তাহলে ওই বখাটে গুলো সানামের কী হাল করতো? ভাবতেই তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতো। তবে সে সেদিন থেকেই সানামকে নিয়ে অল্প অল্প ভাবতে শুরু করেছে।
★
দুপুর প্রায় ৩টা বেজে গেছে, এখনো সানামের বাসায় ফেরার খবর নেই। ইকরাম ফরিদ বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে। এদিকে সানামের ফোন নাম্বারও নেই যে ফোন করে খবর নিবে। অন্তু নেই, তার অফিসে গিয়েছে। নানীকে অন্তু সেদিনই তার ভাইয়ের বাসায় রেখে এসেছে। নানী তো এখন তার ছেলে, বউমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। শাস্তির কারণ, তার ছেলে তাকে মিথ্যা বলে তার আদরের মেয়ের বাড়িতে রেখে এসেছে। তাই নানীও প্রতিজ্ঞা করেছে, এদের উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে। ইকরাম ফরিদ আর উপায় না পেয়ে ফারিশকে ফোন করলো। ফারিশ তখন অফিসিয়াল কিছু প্রজেক্ট রেডি করছিলো। হঠাৎ বাবার অসময়ে কল দেখে ফারিশ রিসিভ করতে দেরী করলো না,
-“হ্যাঁ বাবা, বলো। এই অসময়ে কল করলে যে?”
-“কাজের সময় ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত বাপ আমার। কিন্তু উপায় না পেয়েই কল করেছি!”
ইকরাম ফরিদের কথায় ফারিশ নড়েচড়ে বসলো। অতঃপর কিছুটা অস্ফুট সুরে বললো,
-“উত্তেজিত হয়ো না বাবা। কী ব্যাপার সেটা তো আগে বলো।”
-“সানাম এখনো বাড়ি ফিরেনি, নাম্বারও নেই তাই তোকে বললাম। তুই কল করে জেনে নিস তো কোথায় আছে? মেয়ে মানুষ, তাও আবার পরের। বুঝিসই তো চিন্তা হয় আর কী!”
ইকরাম ফরিদের কথায় ফারিশ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকালো। অতঃপর বাবাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-“তুমি চিন্তা করিও না বাবা, আমি কল করছি।”
-“ঠিক আছে।”
বলেই ইকরাম ফরিদ কল কাটলেন। এদিকে ফারিশ সানামকে কল করলো কিন্তু সানামের নাম্বার বন্ধ। কয়েকবার ট্রাই করলো কিন্তু রেসপন্স পেলো না। সানামকে খুঁজতে বের হবে এমন সময়েই
ফারিশের কল এলো। ফারিশ সানাম ভেবে জলদি ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো বস কল করেছে। আশার আলো ফুঁস করে নিভে গেলো। ফারিশ অফিস থেকে বের হতে হতে কল রিসিভ করলো,
-“হ্যাঁ স্যার বলেন!”
-“হেই ইয়াংম্যান তোমার জন্য গুড নিউজ আছে, তোমার এসিস্ট্যান্ট ঠিক করেছি। আমার কেবিনে এসে তার সাথে কথা বলো।”
-“একচুয়ালি স্যার, আমার বাড়ি থেকে একটা আর্জেন্ট কল এসেছে তাই বেরিয়ে গেছি। সরি স্যার আপনার পারমিশন নিতে পারিনি।”
-“ইট’স ওকে ইয়াং ম্যান! টেক ইওর টাইম!”
-“থ্যাংকিউ স্যার।”
বলেই ফারিশ সানামের ভার্সিটির দিকে চলে গেলো। বস কল কেটে সামনে তাকালো সানামদের দিকে। হ্যাঁ ইতি ফারিশের কোম্পানিতেই জব করে এবং সানামও এখানে জব নিচ্ছে। বস সানামের পাশের মেয়ে রিক্তাকে বললো,
-“সরি রিক্তা, এখন কিছু কাজে গিয়েছে সো তুমি কাল দেখা করে নিও!”
-“ইট’স ওকে স্যার। আমি কী এখন যেতে পারি?” খুব খুশি হয়ে বলে রিক্তা।
-“ইয়েস!” মেয়েটা যেন নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো। রিক্তা আজ ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। ইতি সানামের সকল কাগজপত্র তার ফোনে দেখালো। বস মনোযোগ দিয়ে সবটা দেখে বলে,
-“ওয়াও! তোমার রেজাল্ট তো বেশ ভালো মিস সানাম। এখন বলো এই অধম তোমায় কী সাহায্য করতে পারি?” মুচকি হেসে বললো বস। সানাম কিছুটা ইততস্ত হয়ে বললো,
-“স্যার, আপনি আমার বাবার বয়সী তাই প্লিজ এভাবে বলবেন না।”
-“আচ্ছা বেশ। তাহলে তো আমি তোমার ২য় বাবা হয়ে গেলাম, তা তোমার ১ম বাবা কোথায় হু? সে কী জানে তার মেয়ে আমাকে ২য় বাবা বানিয়েছে?” হেসেই বললো বস। ইতি হাসতে গিয়েও থেমে গেলো এবং করুণ চোখে সানামের দিকে তাকালো। সানামের চোখের কোণ ভিঁজে আছে।
সানাম ভাঙ্গা গলায় বললো,
-“আমার বাবা নেই, স্যার। আমি এতিম। এতিমখানায় বড় হয়েছি!”
বস একথা মোটেই আশা করেননি। তিনি বুঝলেন এই ছোট মেয়েটাকে সে নিজের অজান্তেই বেশ কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন। তাই বস নিজেকে সামলে কিছু কৌতুক বললো, যার ফলে সানাম খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। বস এবং ইতিও হাসলো। বস সানামের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে,
-“আর যেন কোনোদিন না শুনি নিজেকে এতিম বলেছো। তুমি এতিম নও, আমি তোমায় বাবা ঠিক আছে?”
সানাম জানে এটা তার জন্য সান্ত্বনা বাণী, তাও সে মুচকি হেসে মাথা নাড়লো। ইতি শেষে বলে,
-“স্যার তাহলে আমরা উঠি?”
-“আরে কোথায় যাচ্ছো? ওকে কী তার কাজ বুঝিয়ে দিবো না?”
সানাম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কাঁপা গলায় বলে,
-“মা..নে?”
-“বারে, আমার মেয়ে আমার কাছে জব চেয়েছে আমি কী করে তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেই? তুমি এখন থেকে যে আমাদের অফিসেরই মেম্বার!!” হেসেই বললেন বস। অতঃপর বস ম্যানেজারকে ডেকে পাঠালেন। সানাম এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ম্যানেজার হাতে একটা ফরম নিয়ে আসলো এবং বসের নির্দেশে সানামকে সেই ফরমটা দিয়ে বললো,
-“এটা পূরণ করো!”
ইতি সানামের বদলে ফরমটা নিয়ে সানামকে নিয়ে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো। বস দুজনের ছেলেমানুষী দেখে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে আপনমনে বললো,
-“আমারও যদি একটা মেয়ে থাকতো? আফসোস!!” বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে এবং রিসিপশনের ইউনিফর্ম নিয়েই সানাম বের হলো অফিস থেকে। আজ সে ভিষণ খুশি, আগামী ১ তারিখ থেকে তার জয়েন। সানাম কোনো রিকশা না পাওয়ায় সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। সন্ধ্যা নেমে গেছে, পাখিরা তাদের নিজ নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে সোজা দাঁড়ানো ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো একটা, একটা করে জ্বলছে। চারপাশে ঠান্ডা, স্নিগ্ধ বাতাস। এমন শান্তির বাতাসে চোখ বুজে কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো সানাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার ফোনটার কথা মনে হলো। তাই সে ব্যাগ থেকে ফোনটা নিলো। ফারিশকে কল দেয়ার জন্যই সানাম নিজের সাথে ফোনটা রাখে। ক্লাসে ফোন অফ করে রাখে কিন্তু আজ ক্লাস শেষ হওয়ার পর অন করতে ভুলে গেছে তাই ফোন বন্ধই ছিলো। ফোন অন করে সানাম তো অবাক। ফারিশের ৪৩+ মিসডকল, যা সানামকে হুঁমড়ি খাওয়ালো। এতোবার কেন কল করলো তার মানে বুঝলো না সানাম তাই সে দ্রুত ফারিশকে কল ব্যাক করলো। ফারিশ যেন সানামের কলের অপেক্ষাতেই ছিল। সাথে সাথে রিসিভ করে ঠান্ডা স্বরে বলে,
-“কোথায় আছো?”
ফারিশের এমন প্রশ্নে সানাম ভ্রু কুচকালো। আশেপাশে তাকিয়ে সানাম তার লোকেশন বলতেই তিন শব্দই বললো।
-“দাঁড়াও আমি আসছি।” বলেই কল কেটে দিলো। সানাম ফোনের দিকে একপলক তাকালো। ফারিশের এমন ঠান্ডা কন্ঠ সানামকে কেমন শিউরে তুলছে যেন ঝড়ের পূর্বাভাস। ফারিশের কথা ভাবতে ভাবতেই দেখলো ফারিশ এসে হাজির। ফারিশ বাইক থেকে নেমে ধপাধপ পা ফেলে সানামের সামনে এসে দাঁড়ালো। সানাম বেশ ঘাবড়ে গেলো ফারিশের চেহারা দেখে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে ফারিশ। সানাম কিছু বলার আগেই ফারিশ বিনা বাক্যে সানামকে কষিয়ে এক চড় মারলো। সানাম পূর্বের ন্যায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশ রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে।
-“আমাদের কী তোমার চামচা পাইসো? তোমার এতোই ডানা মেলেছে যে আমাদের তোমার অবস্থান জানানোর মতো প্রয়োজনবোধ করো না? আমাদের কী কাজ নাই? আমাকে কী মনে করো তুমি? তোমার জন্য কাজ ফেলে তোমার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরঘুর করবো? একটা ফোন বা ছোট মেসেজ করে দিলে তো দুপুরের থেকে এদিক সেদিক দৌড়াতাম না! চিন্তায় ফেলতে খুব ভালো লাগে, না? কোনো না ঘটালে তো দেখছি তোমার ভিতর শান্তি নাই, তাই কিছুদিন পরপরই ঝামেলা বাজাও আর আমাকে সবসময় সেই ঝামেলায় জ্বালের মতো ফাঁসতে হয়। আমার কথা তো বাদই দিলাম কিন্তু আমার বাবা? দুপুর থেকে তোমার চিন্তায় না খেয়ে বসে আছে। তুমি কই গেছো, কোথায় গেছো কিছুই বলোনি। তুমি কী আসছো আমাদের বরবাদ করতে? সব কিছুর একটা লিমিট থাকে সানাম, ম্যাচিউর না হয়ে আবার আসো বড় বড় কথা বলতে আসো। মুখটা তো চলে বেশিই তাও এটা বুঝো না তোমার জন্য বাসার মানুষ কতোটা চিন্তিত থাকে? ইউ আর এ ফুল স্টুডিপ!”
সানাম ছলছল নয়নে ফারিশের দিকে তাকিয়ে সব কথা গিললো। কোনোদিন কল্পনাও করেনি ফারিশ তার গায়ে হাত তুলবে। হ্যাঁ মানছে তার ভুল, তাই বলে চড় মারবে, এমন রুড বিহেভ করবে? সে কী জানে, তার এমন ব্যবহার সানামের বুকে গিয়ে সুঁইয়ের মতো লাগে। ফারিশ সানামকে অনেকক্ষণ বকে অতঃপর তাকে নিয়ে বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরে সানাম অন্তু এবং ইকরাম ফরিদের কাছেক্ষমা চেয়ে ফারিশের দিকে না তাকিয়েই মনমরা হয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। ফারিশও কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেলো। বেচারার রাগ এখনো কাটছে না।
চলবে।