“তৃ-তনয়া” পর্ব- ১০০

0
2316

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১০০
(নূর নাফিসা)
.
.
ইমরান দু’হাতে মাথার চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
– সারাদিনে রান্নাবান্না হয়েছে কিছু?
নাফিসা হাতমুখ মুছতে মুছতে জবাব দিলো,
– সকালের রান্না করা খাবারই আছে।
– নষ্ট হয়ে গেছে না এতোক্ষণে?
– জানি না।
নাফিসা বড়ঘরে এলো। সব নিশ্চুপ। আবিদার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– আম্মা, বুক ব্যাথা কমেছে?
– হু।
– লেবুর শরবত বানিয়ে দিবো?
– না। খাইছি।
নাফিসা কিচেনে এসে দেখলো ভাত ভেজা ভেজা হয়ে গেছে। সে ভাতে পানি ঢেলে তরকারি গরম করতে বসালো। আরমানের রুম থেকে এইমাত্র বড়মা এসেছে এখানে। বড়মার জন্য প্লেটে ভাত তুলে অত:পর নিশাতকে ডাকলো খাওয়ার জন্য। আরমান জেরিন কাউকেই দেখা গেলো না। জিহানেরও কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সে নিজের এবং ইমরানের জন্য খাবার নিয়ে তাদের ঘরে চলে এলো। পান্তাভাত, কাচা মরিচ আর তরকারি। খেতে খেতে নাফিসা বললো,
– ভাইয়া কি আজও বেরিয়ে গেছে বাসা থেকে?
– কেন?
– কারো কথাবার্তা শুনা গেলো না। তাই মনে হলো।
– বড়মা বকেছে তাই নিশ্চুপ সবাই।
– কাকে বকেছে?
– ভাইয়াকে এবং আমাকেও।
– উচিত করেছে। আমি থাকলে লাঠি এগিয়ে দিতাম।
ইমরানের দৃষ্টি প্লেটের দিকেই। ঠোঁটের কোনে একটুখানি হাসির ঝিলিক ভেসে উঠেছে শুধু। নাফিসা আবার বললো,
– ভাইয়া তাহলে শান্ত হয়েছে। আর ডিভোর্স দিবে না। তাই না?
ইমরান তার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার খেতে খেতে বললো,
– ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট হলে আবার ডিভোর্স দেয় কিভাবে!
– বুঝলাম না!
– কুরআন পড়োনি?
– হুম।
– অনুবাদ পড়েছো?
– উহুম। ছোট ছোট কয়েকটা সূরার পড়া হয়েছে।
– সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব এর প্রথম আয়াতেই লক্ষ্য করে দেখবে বলা আছে কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় তবে তাকে অবশ্যই ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। ইদ্দত গণনা করতে হবে। স্ত্রীকে বাড়ি থেকেও বহিষ্কার করা যাবে না। এবং স্ত্রী স্বেচ্ছায়ও যেতে পারবে না, যদি না সে কোনো সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যা লঙ্ঘন করা যাবে না।
– ভাইয়া কি জানে না এসব?
– জানবে না কেন!
– তাহলে ভাইয়া যে পেপার রেডি করতে লাগলো।
– শুনিয়েছে মাত্র। তেমন কিছুই করেনি।
নাফিসা চুপচাপ আবার খেতে লাগলো। ইমরান বললো,
– জেরিন যেমন তেমন থাকুক, তুমি তার কাছ ঘেষবে না। মনে থাকে যেন।
– ওকে।
– বড় মাকে বলবো হয় জেরিনকে আলাদা করে দিতে না হয় আমরা আলাদ হয়ে যাবো। ওর সাথে এক হাড়িতে রান্না চলবে না।
– এটা কি বলছো তুমি! বাবার স্বপ্ন যৌথ পরিবার আর তুমি এখন সেটা ভেঙে একক করে ফেলবে! এমনটা করো না।
– বাবার স্বপ্নে নিশ্চয়ই কোনো খুনী ছিলো না! যদি জানতেন এমন খুনী প্রবেশ করবে সংসারে তো যৌথ পরিবারের স্বপ্ন দেখতেন না।
– তবুও বলবো এমনটা করো না। ভাইয়া তো আর একক হতে চায় না। তুমি এমন প্রস্তাব করলে ভাইয়া কষ্ট পাবে। অত:পর ভাইয়ে ভাইয়ে দন্দ সৃষ্টি হবে।
– তো এখন কি করার! দন্দের ভয়ে সবাই একসাথে থাকি আর একে একে সবাইকে আবার মেরে ফেলুক!
– ভাবিকে রান্নাবান্নায় হাত লাগাতে নিষেধ করেছেন আম্মা। এমনিতেই তো সে হাড়ি থেকে দূরে থাকবে, তাহলে সেখানে হাড়ি আলাদা করার কি প্রয়োজন? প্লিজ এমন কিছু বলো না। যা বুঝার আম্মা আর বড়মা ই বুঝবে।
ইমরান আর কিছু বললো না। তাদের খাওয়া শেষ হলে নাফিসা প্লেট রেখে এলো।
.
বড় মা প্রথমে বকে পরে আবার আরমান আর জেরিনকে একসাথে বুঝিয়ে গেছেন। জিহান ঘুমাচ্ছে, জেরিন গুটিসুটি মেরে খাটের এক কোনে বসে আছে। আর আরমান দু’হাতে জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। তার মাঝে শুধু অনাগত সন্তানের ভাবনাই আছে এখন। কিছুক্ষণ আগেই বড়মার মুখে শুনলো। কিন্তু জেরিনের উপর জেদটা এখনো রয়ে গেছে।
সেই বিকেলে এসেছে, এখনো পোশাকাশাক চেঞ্জ করেনি সে। জেরিন চোখ মুছতে মুছতে ওয়ারড্রব থেকে টিশার্ট, লুঙ্গি বের করে বললো,
– পোশাক পাল্টাইবা না?
আরমানের কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। জেরিন সেগুলো খাটে রেখে পিঠে মাথা রেখে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,
– আর কোনোদিন এমন কিছু করবো না। বিশ্বাস করো।
আরমান কিছু না বলে পেটের উপর থেকে তার হাত ছাড়িয়ে দিতে চাইলো কিন্তু জেরিন শার্ট আঁকড়ে ধরে রেখেছে! আর কান্নার সাথে ক্ষমা চেয়েই যাচ্ছে! সে এবার আচমকা ঝাড়ি দিয়েই ছুটিয়ে নিতে গেলে তার কনুই গিয়ে লাগলো জেরিনের নাকে! ফলশ্রুতিতে জেরিনে নাকের পিন ভেঙে গেছে এবং পিনের আঁচড়ে নাক একটু কেটে গেছে! জেরিন ব্যাথা পেয়ে “আহ!” শব্দ করে উঠলো। আরমান তার দিকে না তাকিয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। গোসল সেড়ে রুমে এসে দেখতে পেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হাতে তুলা নিয়ে নাক মুছছে জেরিন। আর একটু পরপর হাতে চোখ ও গাল মুছছে। আরমানকে দেখে সে সরে এলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে। আরমান মাথা মুছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দেখতে পেল ভাঙা নোজ পিন! তখন কি তাহলে নাকে লেগেছে! সে তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে জানালার সামনে জেরিনের কাছে এলো। জেরিন নাকে তুলা চেপে রেখেছে। আরমান তার দিকে ঘুরিয়ে জেরিনের হাত সরিয়ে দেখলো নাক লাল হয়ে আছে। সে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতেই জেরিন ব্যাথায় কেপে উঠলো! আরমান ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে নিজেই লাগিয়ে দিলো। জেরিন তার চোখে তাকিয়ে থাকলেও আরমানের দৃষ্টি নাকের দিকেই ছিলো। এখন হঠাৎই চোখে তাকালো। আর পলকহীনই তাকিয়ে রইলো। এই দৃষ্টি যেন চরম ব্যাথা প্রকাশ করছে! ব্যথিত দৃষ্টি যেন জেরিনকে বলছে,
“বারবার সাবধান করার পরেও কেন করতে গেলি এমন? এমনটা না করলে তো আজ খুব ভালো থাকতো সবকিছু! কোনো ঘৃণার সৃষ্টি হতো না কারো মনে!”
জেরিন যেন এই ভাষাগুলোই স্পষ্ট পড়ে নিয়েছে তার চোখে! তাই আবারও জড়িয়ে ধরে কান্নার সাথে বললো, “সরি। সরি দুইটা বাবুর আব্বু। মাফ করো একবার…”
জেরিন কাদছে আর আরমান কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বললো,
“আর কখনো যদি কোনো খারাপ হতে দেখি, জানে মেরে ফেলবো একদম।”
“আচ্ছা।”
নিশাত বাইরে থেকে ডেকে বললো,
“ভাইয়া, এখন ভাত খাবে?”
“আসছি।”
“পান্তা ভাত খেতে হবে কিন্তু। আর গরম ভাত খেলে একটু পরে।”
“আসছি।”
নিশাত বাইরে থেকে ডাকলে জেরিন তাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে নিশাতকে পিছন থেকে ডেকে বললো,
– নিশাত, তুই একটু এনে দিবি এখানে?
নিশাত পেছনে ফিরে বললো,
– আনছি।
অত:পর নিশাত খাবারের প্লেট ও বাটি এনে জেরিনের হাতে দিলো। নাকের দিকে চোখ পড়তেই বললো,
– তোমার নাকে কি হয়েছে?
– কিছু না। হাত লেগে ব্যাথা পেয়েছি একটু।
নিশাত আরমানের জন্য পান্তা ভাত এনে আবার জেরিনের জন্য বাটিতে মুড়ি এনে বললো,
– তোমার পান্তা ভাত খাওয়া নিষেধ। তুমি মুড়ি খাও এখন, একটু পর ভাত খেয়ো।
খাওয়াদাওয়ার পর জেরিন অন্য একটা নাকফুল পরে নিলো আরমানের সাহায্যে। আরমান নিষেধ করেছিলো এখন পড়তে কিন্তু আঘাতের চিহ্ন অন্যদের চোখে লুকিয়ে রাখতে সে পরে নিয়েছে। অন্যদিন হলে হয়তো ব্যাথার কারণে চিৎকার করে সারাবাড়ি জানাতো। আজ সে অপরাধী বলে কোনো আহ্লাদও নেই, সব দিক থেকেই নিশ্চুপ!
.
রমজান মাস শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় রমজানে আরমান সন্ধ্যায় বাজারের দিক থেকে আশিককে রাস্তায় পেয়ে জোর করেই সাথে নিয়ে এসেছে ইফতার করার জন্য। আশিক তার ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে এসেছিলো বিকেলে। সবাই যার যার বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথেই আরমানের সাথে দেখা হলো আশিকের।
ইফতারের পর কথাবার্তা বলে, জিহানের সাথে দুষ্টুমি করে যখন বাড়ি ফেরার জন্য উঠুনে বেরিয়ে এসেছে তখন নিশাত গেইটের কাছে এসে পেছন থেকে ডাকলো,
– ভাইয়া…
আশিক পিছু ফিরে বললো,
– কি?
– এক মিনিট দাড়াও।
নিশাত আবার ঘরে এসে ছোট ঘরের চাবি নিয়ে আবার দ্রুত পায়ে তার রুমে এলো। আশিকও দৃঢ় পায়ে এগিয়ে এসেছে পিছু পিছু। আশিক যখন হাটতে হাটতে তাদের বারান্দা পর্যন্ত এলো ততক্ষণে নিশাত রুম থেকে বইটা নিয়ে এসেছে। আশিকের সামনে এগিয়ে ধরে বললো,
– এটা নিয়ে যাও।
– তোকে না এক্সামের পর পড়তে বললাম!
নিশাত নিচু স্বরে বললো,
– পড়ে ফেলেছি।
আশিক বইটা হাতে নিয়ে একটু বড় ঘরের দিকে তাকালো কেউ আসে কি-না দেখার জন্য! অত:পর নিশাতকে বললো,
– পড়েছিস, কিছু বুঝেছিস?
– কি বুঝবো!
– এই রাজকুমারটা অনেকটা আমি। যদিও আমার অবস্থান রাজপ্রাসাদে না আর তার অবস্থানও পরিচারিকার ঘরে না, কিন্তু লাইফ স্টাইলটা এমন ধারায়ই চলেছে অনেকটা।
আশিক কথা শেষ না করতেই নিশাত বললো,
– এতো ঘুরেফিরে বলার কি আছে। বই দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো না তো। বুঝতে যেহেতু পেরেছো সরাসরি বললেই পারতে। আমি তো আর তোমাকে ফোর্স করিনি কোনো ব্যাপারে।
– অনেক কথা সহজে হজম করা যায় না। ধীরে ধীরে আঘাত আর হঠাৎ পাওয়া আঘাতে বেশ পার্থক্য আছে। ভেবেছি প্রত্যক্ষ ভাবে ইগনোর করলে কষ্ট বেশি পাবি তাই বলিনি। এখন যেহেতু বুঝতে পেরেছিস, আই হোপ লাইফ থেকে এমন সব পাগলামি রিমোভ করবি। আর অভিজ্ঞতা থেকে একটা উপদেশ দিতে চাই, সেটা হলো কারো ক্ষেত্রেই এভাবে এগিয়ে যাস না। যে ভাগ্যে আছে সে যেকোনো অজুহাতে চলে আসবে। অহেতু নিজের পছন্দে অন্যকে এভাবে চেয়ে ব্যর্থ হোস না। আসি…
আশিক এক কদম এগিয়ে এলেই নিশাত ধাধানো স্বরে বললো,
– তো তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো? সারাজীবন এমন অনন্ত রাজকুমারই থেকে যাবে?
– সে তো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে আমার ইচ্ছেটা এমনই হয়ে গেছে।
– ভাইয়া ওটা গল্প আর লাইফটা বাস্তব। সে গল্পে থেকেছে বিধায় পেরেছে, যেটা তুমি এই সমাজে অবস্থান করে পারবে না। আমার এইটুকু বিবেক থেকে এটা নিশ্চিত বলতে পারি, জীবনকে কারো না কারো সাথে জড়াবেই।
– জড়াবো না।
– পারবে তো? দেখে নিবো কিন্তু আমিও।
– বসে থাকবি আমাকে দেখার জন্য?
– তা কি আর আমার মতো মেয়েদের কাছে সম্ভব! পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ তো। তোমার জন্য বসে না থাকলেও অন্যের ঘরে থেকেই দেখে নিবো। আর হ্যাঁ, তোমার উপদেশটাও ধারণ করলাম। আর কাউকে চাইবো না। সবকিছুর পেছনে এটা তো মানতেই হবে, যাহা চাই তাহা পাইনা, আর যাহা পাই তাহা চাই না! অথচ নিজেও জানিনা এমন করে করে লাইফটাকেই শেষ করে দিচ্ছি। যখন সময় চলে যায় তখন উপলব্ধি করি যা পেয়েও ছুড়ে ফেলে দিয়েছি তা-ই ভালো ছিলো। আর যার জন্য তুমি এমন অনন্ত রাজকুমার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছো মনে, সে তো নিশ্চয়ই সেই পরিচারিকার মেয়ের মতো সংসার সাজিয়ে নিয়েছে তাই না?
– হুম।
– ছোট মুখে আমারও একটা অনুরোধ, আমি না হয় তোমার অযোগ্য বিধায় উপেক্ষাতেই থেকে গেলাম। তুমি তোমার যোগ্যকেই খুঁজে নির্বাচন করে নাও। তবুও শরীয়তের বাইরে, সমাজের বাইরে অনন্ত রাজকুমার হয়ে বসে থেকো না। যাও তোমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
আশিক বারান্দা থেকে বের হতে হতে বললো,
– এখন এটা পড়ে এক্সামের সময় নষ্ট না করলেও পারতি।
নিশাত বেরিয়ে গেইটে তালা লাগাতে লাগাতে বললো,
– ঝামেলা থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে আসা যায় ততই ভালো।
আশিক আবার পেছনে এসে পকেট থেকে একটা সেন্টারফ্রেশ বের করে নিশাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– রোজা থাকায় পকেটেই রয়ে গেছে। আর এখনই মনে পড়ে গেলো! এটা তোর ভাগ্যেই ছিলো মনে হয়।
নিশাত তার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললো,
– আশেপাশের সবাই বলে আমি আর ছোট রয়ে যাইনি। আমি নাকি যথেষ্ট বড় হয়ে গেছি। তাই এগুলো থেকেও রুচি উঠে গেছে।
এই মুহূর্তে নিশাতের ইগনোরে আশিকের ব্রু সামান্য কুচকে গেলো! যেখানে তারা ভাইবোনরা একটা চকলেট, একটা চিপস নিয়ে যেই কাড়াকাড়ি করতো, সেখানে এই মেয়েটা আসলেই কি বড় হয়ে গেছে! এমনি ইমরান বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে।
– কিরে তুই যাসনি! যেই তাড়া দেখাচ্ছিলি, মনে হয়েছে কোটি টাকা জলে ভেসে যাচ্ছে!
আশিক মুখে হাসি ফুটিয়ে তার দিকে এগিয়ে বললো,
– সব কিছু এতো টাকা দিয়ে পরিমাপ কেন ভাই?
– দুনিয়াটাই তো টাকার খেলামেলা!
– হাহাহা.. নিশাত নাকি বড় হয়ে গেছে তাই সেন্টারফ্রেশ খায় না। বিয়ে দিয়ে দাও তাকে। একটা বিয়ে খাওয়া যাবে।
– কোথায় সেন্টারফ্রেশ, দেখি?
আশিক প্যাকেট ছিড়তে ছিড়তে বললো,
– এইতো আমার মুখে যাচ্ছে।
কথা বলে সারতে পারেনি ইমরান ছো মেরে নিয়ে নিয়েছে। এতো হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত ইমরানের মুখে সেন্টারফ্রেশ! তারা কথা বলতে বলতে রাস্তায় বেরিয়ে গেছে আর নিশাত আশিকের মুখে তার বিয়ের কথা শুনে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলো কিন্তু কেউই দেখেনি সেই দৃষ্টি। সে গেইট লাগিয়ে চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে তারপর ভেতরে এলো।
.
বাসায় ফিরে আশিক বারবার ভাবছে সন্ধ্যায় বলা নিশাত ও তার কথা গুলো। সেখান থেকে তো কাটিয়ে এসে পড়লো কিন্তু নিশাতের কথাগুলো তো যুক্তিহীন নয়। নাহিদার জন্য সে এমন হয়ে গেছে। কিন্তু নাহিদা তো ঠিকই সংসার সাজিয়ে নিয়েছে। তাহলে সে কেন এমন বিরহে অগোছালো থাকবে। তার জীবনেরও তো একটা গতি হওয়া দরকার। জীবনটাকে কেন এভাবে উপেক্ষা করবে! তাছাড়া সে তো এখন আর নাহিদাকে নিয়ে ভাবেও না। শুধু নিজের লাইফটাই যেন মজে গেছে! সত্যিই কি সে হারিয়ে ফেলছে কিছু! আচ্ছা, তার মাঝে ফিলিংস না থাকলেও তো নিশাত তাকে চায়! তাহলে নিশাত তার বউ হলে কেমন হয়! বয়স, শ্রেনী, সামাজিক মর্যাদা সবদিক থেকেই তো মোটামুটি ঠিকই আছে। তাহলে আকৃষ্ট না কেন? নিশাত কি দেখতে খারাপ? নাহ, দেখতেও খারাপ না। তাহলে? নাহ, মন্দ হয় না তো নিশাত বউ হলে! কিন্তু দুই পরিবারের মধ্যে কি আদৌ সম্ভব! অবশ্যই সম্ভব! কেননা মা, খালা, মামা তো নিজেদের মধ্যে আত্মীয় করতে বেশ পছন্দ করে! তাহলে অবশ্যই সম্ভব। নাহ, যা হারানোর তা হারিয়েছে। এখন যা পাওয়ার মতো কিছুটা নিশ্চয়তা আছে সেটা কেন অযথা হারাতে বসবে!
রাতের কিছুটা সময় শুধু এ নিয়েই ভাবলো। ভোরে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আটটার দিকে ঘুম ভেঙেছে তার। সে বাইরে এসে দেখলো আয়েশা বেগম উঠুন ঝাড়ু দিচ্ছে। উঠুনের এক কোনে বসে নাজিয়া হাড়িপাতিল মেজে নিচ্ছে। আশিক তার মায়ের সামনে এসে বললো,
– মা, আমি নিশাতকে বিয়ে করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here