“তৃ-তনয়া” পর্ব- ১০৭

0
2350

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১০৭
(নূর নাফিসা)
.
.
মেহেদী অফিস শেষে বাড়ি থেকে ফ্রেশ হয়েই এসেছে নাহিদাকে নিয়ে যেতে। এখানে আসবে বলে আগেই অফিস ত্যাগ করেছে আজ। খাওয়াদাওয়ার পর আর অপেক্ষা করেনি। সন্ধ্যার আগেই রওনা দিয়েছে। মেহেদী ড্রাইভ করছে আর নাহিদা পাশের সিটে বসে আছে। দুজনের কেউই তেমন কথা বলছে না! কেননা নাহিদা একটু গোমড়া মুখু হয়ে আছে! মেহেদী টুকটাক জিজ্ঞাসা করলে গোমড়া মুখু হয়েই জবাব দেয়! আর বেশি কথা বলে না তাই মেহেদীও বেশি কিছু বলে না। কথা না বলার কারণ, মেহেদী তার পড়াশোনা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্সিটি যাওয়া তো আরও কয়েক মাস আগেই বন্ধ করেছে! এরপর যা-ই মাঝে মাঝে কোচিং-এ যেতো, সেটাও কিছুদিন পর অফ করে দিয়েছে! তার যেন বাসা থেকে বের হওয়াটাই একেবারে নিষিদ্ধ! তবুও নাহিদা ঘরে বসে পড়াশোনা করতো। কিন্তু যে সময়ে তার এক্সাম, সে সময়ে তার অসুস্থতা ও ব্যস্ততার সময়! তাই মেহেদী বলেছে এ বছর এক্সাম না দেওয়ার জন্য। যদিও নাহিদা ইচ্ছা পোষণ করেছিলো। কিন্তু মেহেদী না তো না ই। বেশি প্রেশার পড়বে ভেবে তাকে আর বই ই পড়তে দিলো না! নাহিদাও তার অবাধ্য হলো না কিন্তু একটু গম্ভীর হয়ে আছে। আশায় আছে মেহেদী তাকে পড়ার জন্য বলে কি-না! কিন্তু না! একবারও বললো না পাষাণ ছেলেটা! নাহিদা রাগ করে থাকুক, তবুও বলবে না। যদিও মেহেরুন ভার্সিটি যাওয়া আসার ব্যাপারটা মেহেদীর সাথে একমত ছিলো কিন্তু বাসায় পড়তে নিষেধ করেনি। এক্সামের সময় যদি সে ফ্রী থাকে তো দিবে। কিন্তু হাসব্যান্ডের কথা যে সে অমান্য করতে পারছে না! এটা করতে গেলে অন্যায় হয়ে যাবে। তাই রাগ করেই বসে আছে মেহেদীর সিদ্ধান্ত বদলানোর প্রত্যাশায়।
বাবার বাসায় যাওয়ার দুদিন আগেই এমনটা ঘটেছে। সেখানে যাওয়ার পর প্রতিদিনই মেহেদী কল করে এটা সেটা জিজ্ঞেস করতো, সে-ও একটু ভাব নিয়ে গম্ভীরমুখে স্বল্প জবাব দিতো।
বাসায় ফিরে এসেছে তারা। খুব সাবধানে সিড়ির ধাপগুলি অতিক্রম করতে হয়েছে নাহিদাকে! সে নিজে যতটা না ভয় পায়, তার চেয়েও বেশি ভয় পায় মেহেদী! নাহিদা ইজিলি হাটতে প্রস্তুত অথচ মেহেদী তাকে যেন পিপড়া গতিতে নিয়ে যাচ্ছে! মেহেদী তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। বাড়িতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তাই নাহিদা বললো,
– বাবা-মা বাড়িতে নেই?
– না।
– কোথায় গেছে?
মেহেদী ঠোঁটের এক কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– হানিমুনে গেছে। আর আমাদের হানিমুন করার সুযোগ দিয়ে বাসায় রেখে গেছে! কেননা আমরা তো আর অন্যত্র যেতে পারবো না এখন! বুঝোনি ব্যাপারটা?
মেহেদীর দুষ্টুমিতে নাহিদা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে নিজের কাজে মনযোগ দিলো। বোরকা হিজাব খুলে হাত মুখ ধুয়ে এলো সে। মেহেদী তার অতি নিকটে এসে আহ্লাদী সুরে বললো,
– কেমন করে থাকো তুমি! একেবারে পঁচা পঁচা লাগে! এতো পড়াশোনা করে করবে টা কি শুনি? আর এখন এতো পড়তে হবে! এ অবস্থায় এতো পড়লে বাবু তো পেট থেকেই গ্রেজুয়েট হয়ে আসবে!
মাঝে মাঝে মেহেদীর কথা বলার ভঙ্গি চরম লজ্জায় ফেলে দেয় তাকে! নাহিদার লজ্জা এবং হাসি একসাথে উঁকি দিয়েছে মনে। কিন্তু গম্ভীরভাবটা ধরে রাখতে প্রকাশ করলো না সেটা। এমনি কলিং বেল বেজে উঠলো! মেহেদী গিয়ে দরজা খুলে দিলো। নাহিদাও এগিয়ে এলো দেখার জন্য। দরজা খুলতেই আয়াশ “ইয়ে…” শব্দে চিৎকার করে এক মুহুর্তের জন্য মেহেদীকে ঝাপটে ধরলো। মেহতাজ এসেছে তাহলে! আয়াশ পরক্ষণে দৌড়ে সেই ফাঁকা রুমে চলে গেলো। সেখানে তার সাইকেল রাখা আছে। মেহতাজকে দেখে মেহেদী বললো,
– ধুর! তোমার আবার আসতে হবে! আম্মুকে না নিষেধ করে দিলাম!
– আম্মুকে নিষেধ করে দিয়েছো? আম্মু কি তোমার উপর নির্ভর করে পুত্রবধূকে রেখে যাবে? রান্নাবান্না করে খাওয়াবে কে, শুনি?
– রেস্টুরেন্টের অভাব পড়েছিলো দুনিয়ায়!
– ওই, চুপ থাক। তোর এতো শত পন্ডিতি না করলেও চলবে। মায়ের বুঝেই মা বলেছে আর আমার বুঝেই আমি এসেছি। তোর বুঝ তোর কাছেই রাখ। হুহ্! এতোদিন ডাকতো, আপু এসো, আপু আয়াশ আরিশাকে নিয়ে এসে পড়! আমি নিয়ে যেতে আসি? আর এখন নিজের বাচ্চা আসছে তো আয়াশ আরিশা দূরে থাক, আমার যেন বাপের বাড়ি আসাটাই নিষিদ্ধ!
নাহিদা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের ভাইবোনের ঝগড়া দেখছে! মেহেদী চেহারায় বিরক্ত ভাব এনে আরিশাকে কোলে নিয়ে চলে গেলো আয়াশের কাছে। যদিও সে মোটেও বিরক্ত না, শুধু মেহতাজকে দেখানোর জন্যই তার এমন ভঙ্গি।
মেহেদী চলে গেলে এবার তারা দুজন কথা বলার সুযোগ পেল। মেহতাজের কাছে জানতে পারলো জহিরুল ইসলাম ও মেহেরুন মেহেদীর নানা বাড়ি গেছে জমিজমার ব্যাপারে। আজ তারা থাকবে সেখানেই। আর নাহিদা আজ চলে আসবে বলে মেহেরুন মেহতাজকে কল করে বলে দিয়েছে বাসায় আসতে। হঠাৎই তাদের ডাক পড়ায় নাহিদাকে আগে কিছু জানায়নি মেহেরুন। তবে সন্ধ্যায় কথা হয়েছে তার সাথে।
মেহতাজ আসায় নাহিদার জন্য ভালোই হয়েছে। নতুবা একা একা সময় কাটতো না। আর মেহেদীর ফাজলামো সহ্য করতে হতো শুধু! আর এখন তারা বাকিটা সময় কাজকর্ম ও গল্প করতে করতেই কাটিয়ে দিয়েছে। তাদের খাওয়া দাওয়া শেষ। আরিশা সন্ধ্যার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলো৷ এখন মেহতাজ তাকে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে খাওয়াচ্ছে। নাহিদা ডাইনিং টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে আছে। মেহেদী হাই তুলতে তুলতে এসে টেবিলের উপর বসে পড়লো এবং বললো,
– ঘুম পেয়েছে প্রচুর।
নাহিদা গম্ভীরমুখে জবাব দিলো,
– ঘুম পেলে ঘুমিয়ে থাকুক গিয়ে। না করেছে কে!
– তুমিই তো না করছো! এখনে বসে আছো কেন শুধু শুধু! ঘুমাবে না?
– আপুর সাথে ঘুমাবো।
– এমনিতেই আপু হানিমুনের বারোটা বাজিয়ে দিলো, তুমি আবার বলছো এখন আপুর সাথে ঘুমাবে!
– তো আমার ইচ্ছে করলে আমি ঘুমাবো না!
মেহেদী চুপ করে আছে। নাহিদা আড়চোখে এক পলক তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আবার সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। মেহেদীর চেহারায় কেমন একটা বিষন্ন ভাব চলে এসেছে! যা দেখে নাহিদার কিছুটা হলেও খুশি লাগছে৷ হোক সে বিষন্ন, তাহলেই বুঝবে অন্যের বিষন্নতার মর্যাদা। সব বিষয়ে কেন তার এমন জেদ থাকবে! সব কেন তার কথামতো চলতে হবে! একটু বিষন্নতা অনুভব করা দরকার। যদি এতে একটু তার মাঝে পরিবর্তন আসে।
এদিকে মেহেদী পলকহীন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এবার হনহন করে রুমে চলে গেলো। দরজাটা ঠাস করে চাপিয়ে দিলো! মেহতাজ বিপরীত পাশ থেকে কিচেনের দিকে আসতে আসতে বললো,
– কিরে, ভেঙে ফেলবি নাকি সব!
নাহিদা মৃদু হাসলো। মেহতাজ তার উদ্দেশ্যে বললো,
– বসে আছো কেন? ঘুমিয়ে থাকো গিয়ে।
মেহতাজ কিচেন থেকে আসা পর্যন্ত নাহিদা বসেই রইলো। পরক্ষণে মেহতাজ আয়াশ আরিশাকে ঘুমানোর জন্য নিজের রুমে পাঠাতে লাগলে নাহিদা উঠে চেয়ার ঠিক করে রেখে রুমে চলে গেলো। লাইট অফ করে মেহেদী খাটের মাঝামাঝি শুয়ে আছে। লাইট অন করে দেখলো মাথার নিচে একত্রে দুই বালিশ। নাহিদা দরজা লক করতে করতে বললো,
– এমন মাঝামাঝিতে শুয়ে থাকলে কোনো পাশেই আমার এটুকু জায়গাতে হবে না।
মেহেদী চোখ খুলে জবাব দিলো,
– এই খাটে আমি ছাড়া কারো জায়গাও হবে না। আপুর সাথে ঘুমাবে তো আপুর কাছেই যাক।
নাহিদা বেশ বুঝতে পারছে মেহেদী রাগ করেছে। সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুল খোপা করতে করতে বললো,
– আপুর রুমে আয়াশ আরিশা আছে। তাই আমার জায়গা হবে না। আপাতত আমার ডিসিশন চেঞ্জ আর এটাতেই আমি ফিক্সড।
– তবুও খাটে জায়গা হবে না।
– ওকে, তাহলে আর কি! মেঝেতেই থাকবো। আমার বালিশটা তো অন্য কারো দখলে আটকে গেছে! রিটার্ন করছে না কেন!
নাহিদার কথাবার্তায় যেন মেহেদীর আরও রাগ বেড়ে গেছে! সে একটা বালিশ সরিয়ে নাহিদার দিকে ছুড়ে মারলো। নাহিদা মাত্রই খাটের দিকে দুকদম এগিয়ে এসেছে! আর অসাবধানতা বশত বালিশ ছুড়ে মারায় তা এসে লেগেছে তার পেটে! ব্যাথা পেয়ে সাথে সাথেই নাহিদা ছোটখাটো চিৎকার করে উঠলো! মেহেদী চমকে তাকালো তার দিকে! নাহিদা পেটে হাত রেখে বসে পড়ছে! চেহারা তার বিকৃত আকার ধারণ করেছে! বালিশ তার কাছ ঘেঁষে পড়ে আছে! মেহেদী বুঝতে পারেনি বালিশটা তার গায়ে লাগবে! সে তো ফ্লোরে ছুড়ে ফেলেছিলো! নাহিদা যে এগিয়ে এসেছে তা সে লক্ষ্য করেনি! আর নাহিদাও ভাবতে পারেনি মেহেদী এখনই বালিশটা ছুড়ে মারবে!
বিছানা ছেড়ে মেহেদী দ্রুত নেমে এলো তার কাছে! নাহিদার পাশে বসে ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,
– কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছো? বালিশ কি তোমার পেটে লেগেছে?
একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে! কিন্তু নাহিদা কোনো জবাব দিচ্ছে না। সে কাঁঁদছে! চাপা কান্না চলছে তার মাঝে! কাঁদতেও যেন তার কষ্ট হচ্ছে! মিনিটের মধ্যেই যেন মেহেদীর শরীরে কম্পন ধরে গেছে! হাতপা কাপছে তার! এটা কি হয়ে গেলো তার দ্বারা! “আপু…” বলে মেহতাজের উদ্দেশ্যে সে খুব জোরে চিৎকার দিলো। এক বন্ধ রুমে থেকে কি অন্য বন্ধ রুমে শুনতে পাবে হাক! মেহেদী দ্রুত পায়ে দরজা খুলে এসে আবারও জোরে ডাকলো মেহতাজকে। মেহতাজ চমকে উঠে ছুটে এলো। নাহিদাকে ফ্লোরে বসে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে?
মেহেদী ভয়ার্ত কণ্ঠে জবাব দিলো,
– আমি বালিশ ছুড়ে ফ্লোরে ফেলেছিলাম। নাহিদার শরীরে লেগে গেছে!
মেহতাজ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে! পরক্ষণে নাহিদাকে উঠাতে চেষ্টা করলো। নড়াচড়ায় ব্যাথা যেন আরও বেশি লাগছে! তাই কান্নাও আরও বেড়ে গেছে! দুজন তাকে ধরে এনে খাটে বসালো। নাহিদার ব্যাথাও বাড়ছে কান্নাও বাড়ছে! নাহিদা কেবল কান্নার সাথে একটা কথা বলেছিলো, “আপু মরে যাচ্ছি আমি! আর পারছি না!”
মেহতাজ ও মেহেদী উভয়েরই ভেতরটা কাপছে! মেহতাজ মেহেদীকে এই মুহূর্তে হসপিটাল নিয়ে যেতে বললো। মেহেদী দ্রুত শার্ট পড়তে পড়তে আলমারি খুললো টাকা নেওয়ার জন্য। আর মেহতাজ তার রুমে এসে আয়াশ আরিশাকে তৈরি করে পার্সটা সাথে নিলো। মেহেদী ড্রাইভারকে কল করলো। কেননা তার মাঝে এখন ড্রাইভ করার এনার্জি নেই! ড্রাইভার নিচ তলায় থাকে, তারা ফ্ল্যাট ছেড়ে নিচে আসতে আসতে ড্রাইভার প্রস্তুত। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নিকটবর্তী হসপিটালে চলে এসেছে। গাড়িতে থেকে মেহতাজ আসিফকে কল করে ডেকেছে। কেননা মেহেদীরই যেই অবস্থা দেখছে, মনে হচ্ছে না সে কোনো ব্যবস্থা ঠিকমতো করতে পারবে! আর মেহেদীর মাঝে এই অবস্থাটা দেখা যেতো না, যদি না তার হাতে এই অঘটনটা ঘটতো!তাছাড়া বাচ্চাদের নিয়ে মেহতাজও কোনোদিক সামলে নিতে পারবে না!
ভাগ্যক্রমে হসপিটালে এসে ডা. ফারহানাকে পেয়েছে। আজ তার ডিউটি ছিলো। নাহিদাকে চেক-আপ এর জন্য তার কাছে নিয়ে আসতো। তবে কল করে সময় জেনে আসতে হতো। মেহতাজের সার্জারি হয়েছিলো তার হাতেই।
ডাক্তার চেক-আপ করছে। ব্যাথা যেন সেকেন্ডের কাটার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম যেমন ছিলো এখন তার চেয়েও বহুগুণ বেড়ে গেছে! অত:পর ডাক্তার মেহতাজকে বললো, “এই পেইন এখন ঠিক হওয়ার মতো না। সময় লাগবে কিন্তু পেশেন্ট পারবে না সাফার করতে। তাছাড়া বেবিরও ক্ষতি হতে পারে। সিজার করে ফেলুন।”
ডাক্তারের কথা শুনে মেহেদী বললো,
– আপু, কি করবে এখন?
মেহেতাজ চিন্তার মাঝেও বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। তাকে কোনো জবাব না দিয়ে অত:পর মেহেরুনের কাছে কল করলো। ফোনে বিস্তারিত সম্পূর্ণ ঘটনা না জানিয়ে এতটুকু জানিয়েছে যে, নাহিদার পেটে ব্যাথা করছে তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার বলছে সিজার করতে। ওদিকে মেহেরুনও চিন্তিত হয়ে পড়লেন কেননা ডাক্তারের দেওয়া ডেট অনুযায়ী আরও তিন সপ্তাহের মতো বাকি আছে। জহিরুল ইসলাম বলে দিলো সিজার করতে, তারা শীঘ্রই হসপিটাল আসছে। বাবামায়ের সাথে কথা বলার পরপরই আসিফ হাজির হয়েছে। তারা অপারেশন করার জন্য ডাক্তারের কাছে মত পোষণ করলো। ব্যাবস্থা যা করার আসিফই করছে! আর মেহেদীর অবস্থা প্রায় এলোমেলো! নাহিদাকে যখন থিয়েটারে নেওয়া হলো, তখন মেহেদী প্রায় কান্নার সাথে মেহতাজের কাছে অনুরোধ করছিলো যেন উক্ত ঘটনা তার বাবা-মা কে না জানায়। এমনিতেই একবার তাকে পরিবার থেকে প্রায় ছাটাই করতে যাচ্ছিলো! এখন যদি আবার এমন কিছু হয় সেই দুশ্চিন্তায় সে অনুরোধ করলো। তাছাড়া বারবার একই কথা বলে যাচ্ছে সে বুঝতে পারেনি এমন কিছু হয়ে যাবে! মেহতাজ তবুও তাকে বকেছে সবসময় সে এমন জেদ করে বলে! বাবা-মায়ের কাছে বিষয়টি গোপন রাখতে বলা হলে মেহতাজ তার সামনে এক শর্তমূলক প্রশ্ন ছুড়লো, “আমি না হয় চুপ করে থাকলাম৷ তাই বলে কি ঘটনা লুকিয়ে থাকবে? যদি নাহিদা বলে দেয়?”
মেহেদী উত্তরে বলেছিলো,
“নাহিদা চাইলে বলে দেক। তাতে আপত্তি নেই।”
জীবনে আজ দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদী ভয়ঙ্কর ভয় পাচ্ছে! প্রথমবার ভয় পেয়েছিলো তার বাবা যখন স্ট্রোক করেন। আর আজ নাহিদার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ভয়! নানান খারাপ মুহূর্তগুলোই যেন তার চোখে ভাসছে। বাবাকে নিয়ে যখন হসপিটালে থেকেছিলো, তখন দেখেছিলো এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে! আর তার হাসব্যান্ড পুরুষ মানুষ হয়ে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো! আজ তারও মন কাঁদছে! বড্ড বেশি ভয় পাচ্ছে! বেঞ্চিতে বসে মনে মনে এতোবার আল্লাহকে ডাকছে মেহেদী, তবুও তার মনে সেই ঘটনাটাই হানা দিচ্ছে বারবার!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here