“তৃ-তনয়া” পর্ব- ১৭

0
3041

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১৭
(নূর নাফিসা)
.
.
কচ্ছপ গতিতে প্রহর কাটলেও বিয়ে বাড়ির লোকজন কাজে ব্যস্ত থাকায় মনে হয়েছে যেন অশ্ব গতিতে সময় পাড় হয়ে গেছে! দেখতে দেখতে চলে এসেছে বিয়ের দিন। দুদিন আগে থেকেই মানুষের আনাগোনা। নানা বাড়ির লোকজনসহ নাজিয়াও এসেছে দুদিন আগেই। এই প্রথম তার বাবার বাড়িতে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ হলো। অন্যান্য দিন কেউ নিষেধ না করলেও পরিস্থিতির স্বীকারে তাকে অল্প সময় বাবামায়ের সাথে কাটিয়ে চলে যেতে হতো।
গায়ে হলুদের দিন সকালে নাস্তার পর আরাফ নাফিসাকে বললো,
– নাফিসা, লগনের সব আসবাব ঠিক করে রেখেছো? নাকি কিছুর টান আছে?
নাফিসা তার সাথে আগে থেকেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে তাই কোনো উত্তর না দিয়ে এখানেও ইগনোর করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো ঘর থেকে। যেটা নিয়াজ উদ্দিনের চোখে পড়ে গেছে! তিনি পেছন থেকে নাফিসাকে ডাকলেন। নাফিসাও খেয়াল করেনি অন্য রুম থেকে তার বাবা এই রুমে আসছে! সে তার বাবার কাছে এসে বললো,
– জ্বি বাবা?
– আরাফ কিছু বলেছে, তুমি শুনতে পাওনি? নাকি শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাচ্ছো!
– শুনতে চাইছি না কিছু। সব কিছু ঠিকঠাকই আছে বাবা।
– আমি তোমাকে এমন কিছু জিজ্ঞেস করিনি। আরাফ জিজ্ঞেস করেছে। তুমি এমন ধাচের কথা বললে কেন? আরাফের সাথে এমন ব্যবহারই বা কেন করলে?
– বাবা, আমি কেমন ব্যবহার করলাম!
– তুমি তার কথা এড়িয়ে গেলে কেন? গতকালও দেখেছি নাহিদা আরাফকে খাবার এনে দিতে বলেছিলো আর তুমি সরাসরি নিষেধ করে দিয়েছো! তোমার মা বলেছে আমাকে, সেদিনও আরাফ ভালোমন্দ কিছু বললে তুমি কোনো জবাব দাওনি! এসব কি! কেমন ব্যবহার এগুলো!
– বাবা, উনারা এমন ব্যবহারই প্রাপ্য!
নাফিসা নিচু স্বরে বললো কথাটা কিন্তু নিয়াজ উদ্দিন ধমকে উঠলেন,
– আবার এমন কথা বলে বেয়াদব মেয়ে! ও তোমার বড় ভাই হয়। আর বড় ভাইয়ের সাথে কেমন আচরণ করা প্রয়োজন সেটা তুমি জানো না! ক্ষমা চাও আরাফের কাছে।
ধমকের সুর উচ্চ না হলেও তার বাবার দৃষ্টিতেই নাফিসা ভয় পেয়ে গেছে! সাথে সাথেই চোখ জলে টইটম্বুর! আরাফের কাছে ক্ষমা চাইতে বলায় নাফিসা একবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে আবার আরাফের দিকে তাকাচ্ছে। আরাফ বুঝতে পারছে তিনি রেগে গেছেন। তাই সে থামানোর চেষ্টা করতে বললো,
– বাবা, থাক না। ও ছোট, বুঝে আর না বুঝে একটু রেগে আছে আমার উপর। এমন হতেই পারে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
– না, থাকবে কেন! এখনো কি বুঝার বয়স হয়নি! ভার্সিটিতে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে আর কবে বুঝবে! কি হলো! এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন! ক্ষমা চাও! কানে যাচ্ছে না কথা!
নাফিসার শরীর কাপিয়ে কান্না আসছে! মাথা নত করে রেখেছে সে। চোখ থেকে টুপটাপ পানি পড়ছে। বাবার রাগ দেখে মন চাইছে না তবুও মুখে অনেক কষ্টে উচ্চারিত হলো, “সরি, ভাইয়া।”
আরাফ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তারও কোনো ইচ্ছে ছিলো না নাফিসার মনটা এখন এভাবে খারাপ করার। সে তার আচরণ স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতো। কিন্তু নিয়াজ উদ্দিনের কথার উপর তো কথা বলতে পারবে না সে! নাফিসা আরাফকে সরি বলার পর এখানে দাড়িয়েই মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কাদছে! নিয়াজ উদ্দিন বললেন,
– এর পর যেন কখনো কারো সাথে দুর্ব্যবহার করতে না দেখি। আর এটাও ভুলে যেও না, আরাফ তোমার বড় ভাই। নাজিয়ার আগে তাকে বড় ভাইয়ের মর্যাদা দিবে। আরাফসহ মেহমানদের যত্নাদিতেও যেন কোনো ত্রুটি না থাকে। লোকজন সারাজীবন তোমার বাড়িতে থাকতে আসবে না। যে কোন প্রয়োজনে আরাফকে জানাবে, মনে থাকে যেন। যাও।
নাফিসা যাওয়ার অনুমতি পেয়ে মুখ চেপে ধরে দৌড়ে তার মায়ের রুমে চলে এলো। দরজাটা ধপাস করে লাগিয়ে দিলো। খুব কান্না আসছে তার কিন্তু বাড়িতে মেহমান আছে কয়েকজন তাই প্রাণ ভরে কাদতেও পারছে না। মুখ চেপেই কান্না করে যাচ্ছে। এদিকে নিয়াজ উদ্দিন আরাফকে বললো, নাফিসাকে এমন আচরণ করার সুযোগ যেন দ্বিতীয়বার না দেয়। নাফিসা উল্টাপাল্টা কিছু বললে যেন উনাকে জানায়। নিয়াজ উদ্দিন বেরিয়ে গেলে আরাফ দ্রুত কিচেনের পাশে এলো। বাইরে থেকে নাজিয়াকে ডাকলে নাজিয়া তার কাছে এসে বললো,
– কি?
– নাফিসার কাছে যাও একটু। বাবা একটু বকাঝকা করেছে তাকে, কান্না করছে বোধহয়।
– বাবা বকাঝকা করেছে! কেন?
– আরে আমারই ভুল হয়েছে। মনে ছিলো না সে যে আমার উপর রেগে আছে! আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম লগনের সব আসবাব ঠিক আছে কিনা, সে কোনো জবাব দেয়নি। সেটা বাবা লক্ষ্য করেছে, তাই এমন ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছে।
– তাহলে তো ঠিকই হয়েছে। একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে নাফিসা।
– এখন কি তুমিও বাড়াবাড়ি বলে চুপচাপ বসে থাকবে, নাকি যাবে তার কাছে!
নাজিয়া পাশে থাকা ড্রাম থেকে পানি নিয়ে হাত ধুতে ধুতে ব্যঙ্গ করে বললো,
– ইশ! দরদ কতো! উনার সাথে রূঢ় ব্যবহার করে অথচ উনারই দরদ উতলে পড়ে!
– হবে না! ছোট ভাইবোনের জন্য মায়া একটু বেশিই হয়৷ তুমিই কি কম রিয়েক্ট করো ছোটদের নিয়ে! তাছাড়া, বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান, সেখানে কান্নাকাটি করে একজন মুড অফ থাকবে সেটা কেমন দেখায়! কারো ভালো লাগবে সেটা!
– হয়েছে, যাচ্ছি আমি। তাছাড়া বাবা এমন মুড অফ থাকতেও দিবে না। এখন বকেছে তো কি হয়েছে, একটু পরেই দেখো মন ভালো করে দিয়েছে।
নাজিয়া নাফিসার কাছে এলো। প্রথমে দরজা খুলেনি, কিন্তু কয়েকবার ডাকার পর খুলে দিয়েছে। নাজিয়া ভেতরে আসতেই তাকে ধরে কান্না করতে লাগলো।
– নাফিসা! কি শুরু করেছিস এসব! বাসায় মেহমান আছে।
– আপু, বাবা আমাকে বকেছে কেন! আমার খুব কান্না পাচ্ছে! আমি কাদতেও পারছি না!
এই বলে নাফিসা হুহু করে কেদে উঠলো! নাজিয়া তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– আরে, এ কি শুরু করেছে পিচ্চিটা! চুপ। একদম কাদবি না। বেশ করেছে বাবা বকেছে। মাকে বললে তো মাইর লাগাতো! তুই এমন কেন করছিস তোর ভাইয়ার সাথে! দোষটা কি তার!
– তোমাকে বিয়ে করেছে সেটাই তো সবচেয়ে বড় দোষ! চোখের সামনে দেখছি তোমার দিনকাল কেমন কাটছে! দজ্জাল একটা শ্বাশুড়ি পড়েছে তোমার কপালে! উঠতে খোটা বসতে খোটা! সেদিনও শুনলে না কি বললো আমাদের পরিবার নিয়ে!
– চুপ! আস্তে! সেজন্য তোর ভাইয়ার সাথে এমন করবি! পরিবারে দুএকজন এমন থাকেই। তাই বলে কি কেউ সংসার ত্যাগ করে! এখানে তো তোর ভাইয়ার কোনো দোষ নেই। তাকে কি কখনো দেখেছিস আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে! এই বোকা মেয়ে, আমাকে নিয়ে এতো ভাবছিস কেন! আমি ভালো আছি, সুখেই আছি। শ্বাশুড়ি যেমন তেমন হোক, স্বামী ঠিক থাকলেই সেই মেয়ে সুখী। পৃথিবীতে বড় ভাগ্যবতী। তোর ভাইয়া আমার কাছে সবসময়ই ঠিক আছে। সে সবসময় আমার সাপোর্টার হয়ে, আমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করে। আমি বেশ ভালো আছি তার কাছে। তুই ই দেখ না, ও কতটা ভালো ও ধৈর্যশীল ব্যক্তি! কতভাবে তুই ইগনোর করেছিস অথচ কিছু বলেছে তোকে আজ পর্যন্ত? একটুও মন খারাপ করেনি সে, এমনকি আমাকে বলেওনি কখনো যে, “তোমার বোনটা এমন কেন!” বরং আমার খুব রাগ হয় তোর উপর। লোকটা এতো কিছু করে আমাদের পরিবারের জন্য তবুও তুই এমন করছিস তার সাথে! দেখেছিস, বাবা যখন ডাকে তখনই চলে আসে। যখন আমি একটু কান্না করি বা মন খারাপ করি এ পরিবারের জন্য, তখনই আমাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও বেড়াতে নিয়ে আসে। বাবা সঠিক লোকটাকেই পছন্দ করেছে আমার জন্য। নাফিসা, এভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। ও কিছু প্রকাশ না করলেই কি, তোর আচরণে মনে ঠিকই কষ্ট পায়। দেখতো, নাহিদা কতো কেয়ার করে আর তোর কাছে সে একটু ভালো কথাও পায় না! ভালো ব্যবহারটা সবাই প্রত্যাশা করে নাফিসা। তুই ও করেছিস আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে। কিন্তু সেটা যথাযথ না পেয়ে তোর কত অভিমান। এখন আরাফও তো পাচ্ছে না তোর কাছে, তাহলে সে কি পারতো না অভিমান নিয়ে দূরে থাকতে, আমাকে সবসময় বাড়িতে আটকে রাখতে!
নাফিসা মনযোগ দিয়েই শুনছিলো তার কথা। নাজিয়া চোখে পানি মুছে দিয়ে বললো,
– আমি জানি, আমার কলিজা দুইটা খুব ভালো বুঝে। কাউকে কষ্ট দেয় না কখনো। পরবর্তীতেও দিবে না সেটাও আমার বিশ্বাস। আরাফ বাবার কাছে ছেলের মর্যাদা পেয়েছে বিধায় খুব আনন্দিত। তুই একটু ফ্রী হয়ে যা, দেখবি তোর ভাইয়া আরও আনন্দিত হবে। তার ছোট ছোট বোন গুলো তাকে ভাইয়া বলে মানবে, পরামর্শ চাইবে। ছোটখাটো আবদার রাখবে। বোনেরা সবসময় হাসিখুশি থাকবে। একজন ভাইয়ের আর কি চাওয়ার থাকে, তুই বল! মানবি না আমার কথা?
নাফিসা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো। নাজিয়া মুচকি হেসে তার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
– যা এবার, কান্না করে বিয়ে বাড়িতে বন্যা সৃষ্টি করেছিস! নাহিদা তোকে আস্ত রাখবে না। গোসল হয়ে গেছে বোধহয়। পার্লারে যাবে তোকে নিয়ে।
নাফিসা চোখমুখ ভালোভাবে মুছে নাজিয়ার সাথে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। নিয়াজ উদ্দিন বাড়িতে এসেছেন। নাফিসাকে দেখে পকেট থেকে পাচটি সেন্টারফ্রুট বের করে নাজিয়ার দিকে ধরে বললো,
– নাজিয়া, রাখো এগুলো। বাচ্চারা কান্না করলে দিয়ে দিও।
নাফিসা ব্রু কুচকে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে খপ করে হাত থেকে সবগুলো নিয়ে বললো,
– হুহ্! ঢং! বাচ্চারা কান্না করলে দিবে আর আমি বসে বসে দেখবো! যেন আমার দাত নেই! জেনে রাখা দরকার, বাচ্চাদের এগুলো দিলে গিলে ফেলবে।
আরাফ বাসায় আনা বাজার দেখছিলো। নাফিসা কথা বলতে বলতে আরাফের কাছে এসে একটা সেন্টারফ্রুট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাইয়া সরি। আর সেন্টারফ্রুট খেতে না জানলে রেখে দিন। নাফিসা আছে খাওয়ার জন্য।
আরাফ অবাকও হলো আবার মুচকি হাসলোও! নাফিসার ফ্রেশ মাইন্ড দেখে অত:পর বললো,
– রাখারাখি নেই! দাত আমারও আছে।
কথাটা বলে সে প্যাকেট ছিড়ে মুখে দিয়ে ফেললো। নাজিয়া মুচকি হাসলো তাদের কান্ড দেখে। নিয়াজ উদ্দিনও মেয়ের মন ভালো দেখে মৃদু হেসে আবার কাজকর্ম দেখতে চলে গেলেন। নাফিসা আবার নাজিয়াকে একটা দিলো। ঘর থেকে নাহিদা দেখে ডাকাডাকি শুরু করে দিলো তাকে একটা দেওয়ার জন্য! তা দেখে নাফিসার নানান উক্তি! “নাহিদা হুলোবেড়াল! একটু পর তার বিয়ের লগন আর সে এখন সেন্টারফ্রুট চায়! লজ্জা করে না ছোট বোনের কাছে দুই টাকা দামের সেন্টারফ্রুট চাইতে!”
এতো উক্তি শুনে নাহিদা তাকে ধরে জোরপূর্বক সেন্টারফ্রুট নিয়েই ছাড়লো। অবশ্য নাফিসাই সেক্রিফাইস করেছে, তা না হলে একটু পারতো না তার সাথে!
সুষ্ঠুভাবে কেটে গেছে লগন। আরাফের বাড়ি থেকে আশিক ও তার মা বাদে বাকিরা উপস্থিত হয়েছে বিয়েতে। ঘরে ছেলে সন্তান না থাকায় আরাফকেই ছেলে বলে গ্রহণ করেছে নিয়াজ উদ্দিন। আরাফও কোনো দিকে ছেলের চেয়ে কম করে না এ পরিবারের জন্য। নাহিদার বিয়ের সব আয়োজন নিজ দায়িত্বে সম্পাদন করেছে আরাফ। কেননা শ্বশুর বাড়িতে ছেলের মর্যাদা পেয়েছে। যে কোনো বিষয়ে নিয়াজ উদ্দিন আরাফের পরামর্শ নিয়ে কাজ করে। বিয়ের পর আজ থেকে হয়তো মেহেদীও ছেলের মর্যাদা পেতে শুরু করবে। সেটা নিয়াজ উদ্দিনের বিশ্বাস।
.
পুষ্পে পুষ্পিত কক্ষ চারিধার। যেন কক্ষ নয়, এক পুষ্পিত কানন! সুবাসে সুবাসিত কক্ষে অন্তর্ভুক্ত বায়ুমন্ডল। সুবাসিত বায়ু অক্সিজেনের সাথে মিশ্রিত হয়ে গৃহীত হচ্ছে শ্বাসে আবার কার্বন ডাই অক্সাইড হয়ে ত্যাজ্য হচ্ছে প্রশ্বাসে! পুষ্প সুবাসে আচ্ছাদিত হয়ে কাননের মাঝামাঝিতে বসে আছে সুবাসিনী। অঙ্গে তার লাল বেনারসি, মনে তার আঁকাবাঁকা তরঙ্গ! লাল দোপাট্টা মাথায়, দেহ ঢাকা সোনার গহনায়। প্রকৃত রূপকে ঢেকে রেখে তার রূপে ফুটে উঠেছে এক কৃত্রিম সৌন্দর্য! বাইরে হৈ-হুল্লোড়, অন্দরে নীরবতা। ঘনীভূত হয়েছে নিশি, তা দূরীভূত করতে হয়তো জেগেছে বিশাল আকাশে এক টুকরো শশী। কাটছে না, কাটছে না তবুও কেটে যাচ্ছে প্রহর! রাজ্য আছে রানী আছে অপেক্ষা শুধু কানন রাজার!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here