তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি,পর্ব_২১
লেখিকা_রিয়া_খান
অনেক্ষণ সময় ধরে খুঁজাখুঁজি করেও মিলছে না জিনিসটা।প্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজনের সময় না পেলে মেজাজ অত্যন্ত হাই হয়ে যায়। এমনিতেই তীব্রর হার্টে সমস্যা,রাতের পর রাত জেগে জেগে সমস্যাটা বেড়ে যাচ্ছে,তারওপর এরকম করে যদি চাপ নিতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বড় রকমের মাশুল দিতে হবে।
টেনশন আর নিতে না পেরে স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়ে পড়ে । বুঝতে পারছিলো এখন চাপ নিলে সকালের সূর্য্য টা নাও দেখতে পারে।
মেমোরি টাতে তীব্র কিছু ডকুমেন্ট রেখেছে।যেটা অফিস থেকে রাতে বাড়িতে ফিরতে পারেনি বলে একটা প্লাস্টিক র্যাপ দিয়ে পেঁচিয়ে মিশানের কাছে রেখেছিলো,যেনো পরে দেখা হলে দিয়ে দেয়।
পরদিন সকালে মিশান বাজার করে ফেরার সময় তীব্রকে দেখতে পেয়ে মেমোরিটা একটা শসার ভেতর ভরে তীব্রকে কৌশলে দেয়।
পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে রিফাতের চোখের আড়ালে তীব্র মেমোরিটা বের করে ওয়ালেটে রাখে, যতদূর মনে পড়ে বাড়ি ফিরে তীব্র মেমোরিটা একটা বক্সে রেখে দেয়।
কিন্তু আজ কাজের সময় জিনিসটা পাচ্ছে না।
তীব্রর রহস্য জানার জন্য ওর সব আমানত ই মিশান খিয়ানত করে।
মেমোরিতে কি আছে সেটা একবারও না দেখে সবটা কপি করে একটা পেনড্রাইভে রেখে দেয়,পরে সময় করে জিনিসটা দেখবে বলে।
প্রতিটা জিনিসের কপি মিশানের কাছে থাকলেও ওগুলোতে কি আছে সেটা মিশানের অজানা।
কারণ এসব ঘেঁটে মাথা অযথা আউলিয়ে লাভ নেই, বরং নিজের কাজ শেষ হলেই তখন ফ্রি মাইন্ডে তীব্রর রহস্য ভাঙা যাবে বলে মনে করে।
এখনো কয়েকজন বাকি আছে মিশানের শিকারি। যাদের খুঁজতে গেলেও অনেক পরিশ্রম। তাদের কোনো পরিচয় জানা নেই, কারা তাঁরা সেটাও জানা নেই, মিশানের পাশে তীব্র না থাকলে এদের একজনকেও বের করা সম্ভব হতো না।
তাই তীব্রর সাথে এই মুহুর্তে তাতলামো না করে যদি ওর দশটা কাজ করে নিজের একটা কাজ সিদ্ধি হয় সেটাই লাভ।
দ্বীপের ভাষ্যমতে আরো তিনজন বাকি আছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যত দিন যাচ্ছে দ্বীপ তাদের চেহারা আকৃতি ভুলে যাচ্ছে।
এতোগুলো ছেলেকে অই অবস্থায় তাও আবার রাত করে দেখেছে সেই দৃশ্য কি এতোদিন মনে থাকে? তখন শুধু মাথায় ঘুরছিলো নিশানকে নিয়ে কি করে পালাবে, ছেলেগুলোর চেহারা নোট করার সময় বা পরিস্থিতি কোনোটাই ছিলো না।
ভোর বেলা তীব্র তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের হবে তখন ওর বাবা ওকে ডাক দিলো পেছন থেকে,
-তীব্র!
তীব্র পিছু ফিরে তাকালো,
-এই মেমোরি কার্ড টা কি তোমার?
তীব্র অপ্রত্যাশিত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো, উনি মেমোরিটা নিয়ে তীব্রর দিকে এগিয়ে এলো। তীব্র মেমোরিটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো এটাই সেই মেমোরি যেটা রাতে থেকে খুঁজছে।
-তুমি এটা কোথায় পেলে?
-কাল সন্ধ্যায় মাশুক, মম নানাভাইরা খেলা করছিলো, তখন দেখলাম ওদের খেলনার সাথে এই মেমোরিটাও, ভেবেছি তৃপ্তির বাচ্চারা মোবাইল থেকে বের করে খেলছে হয়তো,কিন্তু তৃপ্তি বললো এটা ওর না,পরে মনে হলো হতে পারে তোমার, ভুলে ঘরের কোথাও পড়েছিলো।
-মাশুক-মম কখন এসেছিলো?
– কাল দুপুরে এসেছে,থাকবে কিছুদিন।
তোমার সাথে দেখা করার জন্য ওরা অনেক রাত অব্ধি জেগে ছিলো,তোমার তো কোনো খবর ই ছিলো না।
তীব্র মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে মেমোরিটা নিয়ে উল্টো ঘুরে ঘরের দিকে যেতে নিলো।
তীব্র বাবা তীব্রকে পিছু ডাক না দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো হাঁটাহাটি করার জন্য।
তীব্রর মা একটু অবাক হলো আজ এতো সকাল সকাল উঠেছে তীব্র, প্রতিদিন মিনিমাম দশটাই ঘুম থেকে উঠে, আর আজ ভোর বেলা!
তীব্র হয়তো মেমোরিটার খুঁজতেই বের হচ্ছিলো বাড়ি থেকে।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় তীব্রর মা বলে উঠলো,
-তীব্র, চা কফি কিছু পাঠাবো?
-দুটোই পাঠাও।
ঘরে ঢুকে কার্ড রিডারে মেমোরিটা ভরে ল্যাপটপে কানেক্ট করলো।
ভেতরের যেসব ডকুমেন্ট গুলো রাখাছিলো সেগুলো আছে কিনা দেখার জন্য।মেমোরিটাতে তেমন কিছু ছিলো না, কয়েকটা ভয়েস রেকর্ড । তীব্র কানে হেডফোন লাগিয়ে মন দিয়ে শুনছে সবটা।
এদিকে তীব্রর মা চা কফি দুটোই নিজের হাতে করে তীব্রর ঘরের দিকে আনতে নিলে তীব্রর বোন তৃপ্তি মায়ের হাত থেকে ট্রে নিয়ে ভাইয়ের ঘরের দিকে যায়।
তীব্রর ঘরতো রহস্যময় ঘর যেখানে তীব্র ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারে না, এইঘরে ঢুকতে গেলে হয় তীব্রর ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগবে নয়তো সিকিউরিটি কোড।
বাইরে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে অনবরত নক করে যাচ্ছে, একটা ভাইব্রেট করা বেল আছে, রুমের বাইরে থেকে সুইচ চাপলে তীব্রর রুমে ভাইব্রেশন শব্দ হয় একটা।
যেহেতু তীব্র কানে হেইফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে রেকর্ডিং শুনছে সেহেতু বাইরের কোনো শব্দ ওর কানে পৌঁছাচ্ছে না।
প্রায় আধা ঘন্টা সময় ধরে তৃপ্তি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তীব্রর জন্য,মনে মনে জেদ চেপেছে এই ঠান্ডা চা কফিই ওকে খাইয়ে এখান থেকে যাবে।
এদিকে ত্রিশ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর তীব্র চা কফির শুন্যতা অনুভব করলো, মনে পড়লো মাকে চা কফি দিয়ে যেতে বলেছিলো, এখনো চা কফি আসে নি।
নিজের কফি নিজে বানানোর জন্য সব কিছু রেখে ঘর থেকে বের হতেই দেখে তৃপ্তি গাল ফুলিয়ে হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ট্রে তে চা কফি দুটোই সাথে বিস্কুট।তীব্র তৃপ্তির হাতের দিকে না তাকিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেমন আছো তুমি?
-কেমন আছি সেটা পরে জানলেও হবে,তোমার অই রহস্য গুহাতে কি আছে আমি আজ দেখবো! পাক্কা পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি তোমার চা -কফি নিয়ে।
জিনিসটা লক করা বুঝলাম , কিন্তু এতোক্ষণ ধরে যে নক করছি কানে পৌঁছায় না?
-এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েছিলে কেনো তুমি?মোবাইলে কল দিতে তাহলে।ঘরে কাজে ব্যস্ত থাকতেই পারে একটা মানুষ।
তৃপ্তির হাত থেকে ঠান্ডা চা কফি চুমুক দিয়ে খেয়ে বিস্কুট হাতে নিয়ে কচ্ছপের মতো আবার ঘরের ভেতর ঢুকে লক করে দিলো।
তৃপ্তিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মুখের উপর গেট লক করে দিলো।
তৃপ্তি ঘুরে গিয়ে মায়ের সামনে গিয়ে রাগী মেজাজে বলে উঠলো,
-তোমার ছেলে এটা এমন কেনো?
কতদিন পর এসেছি, কয় মাস পর দেখা হলো ওর সাথে, কোথায় একটু হাসি মুখে ভালোমতো কথা বলবে, শুধু জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো? উত্তর টা দেয়ার
সময় ই দিলো না,তার আগেই সে ভেতরে ঢুকে গেলো!
তীব্র ভাইয়া এমন কেনো মা?
নাকি আমি আসাতে ও একটুও খুশি হয় নি?
-কি বলছিস মা! তীব্র হয়তো ব্যস্ত। আর জানিস ই তো ও একটু অন্যরকম স্বভাবের কথা কম বলাই ওর ধর্ম। মাঝে মাঝেই তোর কথা জিজ্ঞেস করে তৃপ্তি কবে আসবে, ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-সাত সকালে মিথ্যে একটা বললে মা! আর যাই হোক তীব্রর কখনো আমার কথা মনে পড়ে না । আমার আশেপাশের মানুষদের দেখি ভাইয়েরা বোনদের কত আদর করে।এই তো আমার পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর ভাইটা প্রায় প্রতিমাসে তাকে দেখতে আসে, সব সময় ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেয়।
আমার ভাইটাকে দেখো, অনিচ্ছা করেও কখনো আমাকে দেখতে যায় না, এমনকি ভুল করেও একটা মিসডকল আমার বা আমার জামাইয়ের ফোনে যায় না।আমাদের কথা বাদ ই দিলাম আমার ছেলে মেয়ের কথা তো একটু মনে করবে ? হ্যাঁ এটা ঠিক যে ওর ড্রাইভার দিয়ে মাঝে মধ্যে ভাগ্নেভাগ্নির জন্য খেলনা চকলেট কিনে পাঠায়, কিন্তু একটাবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস তো করবে জিনিসগুলো ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা।
-অনেক অভিযোগ দেখছি ভাইকে নিয়ে
এগুলো ভাইয়ের সামনেই বলিস,আমার সামনে বলে কোনো লাভ নেই।
-বলার মত সুযোগ তো দিতে হবে তাই না?একটা বাক্য উচ্চারণ করতে নির্দিষ্ট পরিমাণে সময় লাগে,তোমার ছেলে সেটা দেয় না।
মেয়ের রাগ দেখে তীবর মা মৃদু হেসে কথা ঘুরালেন। যদি এই কথাগুলো তীব্র শুনে, বলা যায় না আবার রাগ করে উঠতে পারে।
দশটার দিকে রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়, বাড়ির বাইরে আব্দুর রহমান ও তীব্রর নতুন বডি গার্ড জুয়েল তালুকদার দাঁড়িয়ে আছে।
-তীব্র খেয়ে যাও বাবা।
মায়ের ডাক শুনে তীব্র দাঁড়িয়ে পড়লো,ভাবলো খেয়ে যাবে কি না।
ঘড়ির দিকে সময় দেখলো খাওয়ার সময় আছে কিনা আবার ওষুধও খাওয়া হয় নি,রাতে বুক ব্যাথা করছিলো।
ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখে দুই ভাগ্নেভাগ্নি ব্রেকফাস্ট করছে,তৃপ্তি ওদের খাইয়ে দিচ্ছে।মাশুক আর মম তীব্রকে দেখে জোরে বলে উঠলো,
-মামাহ!
তীব্র ফরমাল হাসি দিয়ে ওদের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে মাশুকের গাল টেনে বললো,
-মামা!
মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-ওষুধের বক্সটা দাও তো।
তীব্রর মা ওষুধের বক্স এনে ওষুধ বের করে তীব্রকে দিলো,
যেসব ওষুধ খাওয়ার আগে খেতে বলেছিলো সেগুলো খেয়ে নিলো,মা সামনে খাবার প্লেট দিলো।
-মামা খাওয়া হলে তুমি আমাদের সাথে খেলবে?
খাবার খেতে খেতে তীব্র উত্তর দিলো,
– মামার কাজ আছে বাইরে, এসে খেলবো।
তৃপ্তি অভিমান রাগ দুটোই মিশিয়ে তীব্রকে ইংগিত করে বললো,
-আমার কথা বাদ ই দিলাম,মানুষ ভাগ্নেভাগ্নিকে দেখলে কত আদর করে কত খুশি হয়, আর আমার ছেলে মেয়ে গুলোর ভাগ্য দেখো!কতোদিন পর এসেছি কোনো কদর নেই।
-তো কি করা উচিৎ? মাথায় নিয়ে নাচবো?
মাশুক-মমর দিকে তাকিয়ে বললো,
-এই মামা তোদের মাথায় নিয়ে নাচবো?
ওরা একসাথে উত্তর দিলো।
-না না মাথায় নিয়ে নাচলে পড়ে যাবো!
তৃপ্তি তীব্রকে ঝাড়ি মেরে বললো
-হ্যাঁ এসব ই শেখাবে, ভালো করে ধরলে পড়ে কিভাবে?
-তৃপ্তি তুমি কবে চলে যাবে?
-………………!
-বেশি দিন থেকো না, বাপের বাড়ি বেশি থাকলে কদর কমে যায়।
তৃপ্তি বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-মা তোমার ছেলেকে একটা বিয়ে করিয়ে দাও, কথার খুব খই ফুটেছে।
-তোমার মত দজ্জাল ননদ যেখানে আছে সেখানে আমার বউ টিকবে না।
-বউ টিকবে তুমি টিকবে না ভাইয়া। তোমার বউয়ের কানে তোমার নামে বিষ ঢালতে ঢালতে এমন পর্যায় নিয়ে যাবো যে তুমি এবাড়িতে টিকতে পারবে না।
-আচ্ছা তৃপ্তি সুমন তোমার জ্বালায় টিকতে পারে না বলেই বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তোমাকে তাই না?
-কি বললে তুমি?
-ভেবে দেখো বিয়ের আগে কখনো তোমাকে আমরা কি বলেছি জামাই বাড়ি চলে যাও,বা ঘুরে আসো?এইযে বছরের পর বছর আমাদের বাড়িতে থেকেছো আমরা একটাবারও যেতে বলেছি?
-তো?
-তাহলে বিয়ের পর কেনো তোমাকে জামাই বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসতে হয়?
-আশ্চর্য এটা আমার বাপের বাড়ি আমি আসবো না?
-সেটাই তো মাথায় রাখতে হবে,ওটা তোমার জামাই বাড়ি , তুমি সেখানে থেকে গেলেই তো পারো আসো কেনো?
তীব্রর কথাটাতে তৃপ্তি এবার সত্যি সত্যি রাগ করে উঠলো, কষ্টও পেলো ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে, চোখ ভরা পানি টইটুম্বুর করছে, এখানে বসে থাকলে কেঁদেই দেবে।
তাই রাগ চেপে হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে
চলে যাবে তার আগেই তীব্র তৃপ্তির হাত ধরে টান দিয়ে কাছে এনে নিজের কোলে বসালো।
-ছাড়ো,ভালোমতো কথা বলতে পারো না তুমি, শুধু অপমান করো। আর আসবো না তোমাদের বাড়িতে, চলে যাবো এখন।
-এতো দেমাগ হয়েছে কেনো তোমার?
-আমি আবার কি করলাম?
-একই শহরে থেকেও আসো বছরে একবার দুবার, এতোগুলো দিন ঝগড়া না করতে করতে ভেতর জমা হয়ে থাকে,তুমি এতোদিন পর এসেছো শান্তিমতো একবেলা ঝগড়াও করতে দেবে না? তার আগেই তুমি হার মেনে চলে যাবে?
-……………
-বাবারে বাবা কি দেমাগ হয়েছে, ইগোতে লাগে সব কিছু।সুমন সহ্য করে কিভাবে?ওর সাথেও কি এরকম করো?
-সবাই তোমার মতো নাকি?ছেলেদের জন্মই মেয়েদের অত্যাচার সহ্য করার জন্য।
-আমার বউ যদি এমন হয়, মেরে ওখানেই ফেলে রাখবো। সব সহ্য করবো তেজ দেখানো চলবে না। যখন ঝগড়া করবো তখন ঝগড়াই করতে হবে, উল্টো তেজ দেখালে সহ্য করবো না তো!
-তোমার দ্বারা সব ই সম্ভব, তুমি একটা খাটাশ।অপমান করো শুধু।
-অপমান কোথায় করলাম?জাস্ট একটু ঝগড়া করার হাল্কা চেষ্টা করেছি।
তৃপ্তি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
-ওটা ঝগড়া না অপমান ই। ছাড়ো আমাকে,চলে যাবো আমি।
তীব্র তৃপ্তির মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো,
-খাবো না।
-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
-ছাড়ো আমাকে,
তীব্র ছেড়ে দিয়ে বললো,
-যাও, ওঠো।
তৃপ্তি উঠে না গিয়ে তীব্র কান ধরে টান দিলো।
তীব্রর হাত থেকে খাবার টা মুখে নিয়ে উঠে গেলো।
তৃপ্তির সাথে তীব্রর সম্পর্ক আগে থেকেই এমন, তীব্র হাসি মুখে কথা বলার থেকে ঝগড়া করে আনন্দ পায়, তৃপ্তিকে এমন এমন কথা বলে যেনো তৃপ্তিও রেগে গিয়ে ওর সাথে ঝগড়াই শামিল হয়।
তীব্রর সাথে ঝগড়া হওয়াটা তেমন কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার না, এটা একদম স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক।দিন শেষে এরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে, তীব্র প্রকাশ না করলেও তৃপ্তি বুঝে যায়।
এতোক্ষণ তীব্রর মা পাশে দাঁড়িয়ে ওদের ঝগড়া দেখে মিটিমিটি হাসছিলো,কারণ জানা কথায় ঝগড়া যতোই হোক শেষে এসে মিল হবেই।
তীব্র খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেয়েই বাইরে দৌড়।তৃপ্তির সাথে ঝগড়া করতে গিয়েই সময় নষ্ট হলো।
এদিকে মিশান সকাল বেলা উঠে মামার সাথে বেরিয়ে সকালের ব্যায়াম শেষ করে বাড়ি ফিরে ব্রেকফাস্ট করে নিজের ঘরে।আজকে তাপসিনের বাজার করার ডেট ছিলো , তাপসিনের সামনে পরীক্ষা বলে এখন আর বাজারে যেতে হয় না, ওর বদলে কেয়ার টেকার দিয়ে বাজার করায়।
ব্রেকফাস্ট শেষে দ্বীপ আর ওর বাবা এক সময়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়,
যার যার গন্তব্যপথে।
মিশান নিজের ঘরেই চুপচাপ মাথা ঠান্ডা করে ভাবছে বাকি ক্রিমিনাল গুলোকে কিভাবে খুঁজে বের করা যায় , নিশানের রেকর্ড করা প্রতিটা ভিডিও বার বার রিভিউ করে দেখছে, প্লাস এতোদিনে যা যা এভিডেন্স পেয়েছিলো সব কিছু ঘেঁটে দেখছে।
এমন সময় মিশানের ঘরে খালার আগমন,
-মিশান ।
মিশান ল্যাপটপ অফ করে সমস্ত ডকুমেন্ট এক করে সরিয়ে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে দ্বীপের খালা দাঁড়িয়ে আছে,
-হ্যাঁ খালামণি?
-দেখো তো এটা কিসের বোতল, ছাদে পড়ে ছিলো।
খালা একটা বোতল মিশানের দিকে বাড়িয়ে দিলো , মিশান বোতলটার দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো,
-এই লেঙরীটা আবার ছাদে কখন গেলো!(মনে মনে)
বোতলটা হাতে নিয়ে মিশান কনফিডেন্টের সাথে বললো,
-খালামণি এটা মনে হয় দ্বীপের কোম্পানির কোনো ওষুধের বোতল হবে।
মুখ কুঁচকে খালা উত্তর দিলো,
-ওষুধের বোতল?কিন্তু এটার ভেতর থেকে কেমন যেনো গন্ধ্য আসছে মনে হচ্ছে পঁচা দই বা ফলের রসের, কেমন বিশ্রী গন্ধ্য!
-মানুষের নাক না কুকুরের নাক!সারাজীবন জানতাম কুকুরের নাক অনেক প্রখর কার্যগুণসম্পন্ন,এখানে তো দেখছি কুকুরের বদলে এর নাকও ব্যবহার করা যাবে!(মনে মনে)
মিশান বোতল নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখলো,
-বিশ্রী গন্ধ্য কোথায়?সব ঠিকঠাক ই তো আছে। কুকুরের পেটে কি আর ঘি হজম হবে!(মনে মনে)
-খালামণি এটা ওষুধের ই ফ্লেভার,হয়তো অনেক দিন ধরে ছাদে পড়ে ছিলো , ভেতরে ময়লা পোকামাকড় গিয়ে হয়তো এটার ফ্লেভারের বিকৃতি ঘটিয়েছে।
-তাহলে তো এটার উপর ময়লা পড়ার কথা!
-খালামণি ভুলে গেলেন, এটা শীত কাল।রাতে কুয়াশা পড়ে ভিজে গেছে সকালে রোদ উঠে শুকিয়ে গেছে, সেই জন্য পরিষ্কার লাগছে।সিম্পল!
– সেটা না হয় মানলাম,কিন্তু এটা দেখতে কেমন মদের বোতলের মত লাগছে।
-আপনি কি কখনো মদ খেয়েছেন?
-না তো!
-বাস্তবে দেখেছেন?
-নাহ, তবে টিভিতে দেখেছি।
-মদের বোতল আরো বড় হয়, আমি বাস্তবে দেখেছি। আর টিভিতে ওগুলো অর্ডার দিয়ে ডিজাইন করে বানায় সিনেমার শ্যুট করার জন্য এমনকি ওগুলো কাঁচের বোতলও না, চিনির বোতল, চিনি দিয়ে বানায় ওসব বোতল।
খালামণি বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তাই নাকি?
-হুম।
-তাহলে তাই ই হবে, দাও বোতলটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে আসি।
-দরকার নেই খালামণি, আপনি এতো কষ্ট করে ছাদে গিয়েছিলেন, আপনি বরং রেস্ট নিন। আমি এটা ফেলে দিয়ে আসি।
-ঠিক আছে ফেলে আসো তাহলে, আমি যাই তাহলে।
খালামণি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মিশান মনে মনে একশো একটা বকা দিলো তাকে।
অফিসের কাছাকাছি যেতেই দ্বীপ হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো, পকেট থেকে মোবাইল বের করে কৌশলে চার কদম দূরে থেমে থাকা একটা বাইকের নাম্বারের ছবি তুললো, আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বাইক চালকের ছবি তুললো।
ওটা চলে যেতেই দ্বীপ মিশানকে কল দিলো।
-মিশান
-বল
-ম্যাসেঞ্জারে দুটো ছবি দিয়েছি দেখ, একটা বাইকের চালকের আরেকটা বাইকের নাম্বারের।
-তুই কোথায়?
-আমি অফিসের কাছাকাছি সৈয়দ টাওয়ারের এখানে, ওকে এখানেই পেয়েছি।
তুই দেখ এড্রেস আজকের মধ্যে বের করতে পারিস কিনা,
-সমস্যা নেই মেইন জিনিস ই পেয়ে গেছি বাকিটা দেখছি।তুই চিন্তা করিস না।
-ওকে রাখছি।আমি অফিস যাচ্ছি, প্রয়োজন হলে কল করিস।
-বাই
মিশান ফোনের ছবি দুটো দেখতে দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
চলবে…………