তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি,পর্ব_৫১
লেখিকা_রিয়া_খান
-আমরা যে যাচ্ছি চান্স কি পাবো?
-৯৯.৯৯% শিউর দিতে পারি।
-খুব সম্ভবত জাফর প্রাইভেট আইল্যান্ড পুরোটাই বুক করে নেয়ার কথা। যেহেতু ওদের সময় খারাপ যাচ্ছে।
-তোমার যুক্তি ঠিক আছে বাট ব্যাপারটা সেরকম হবে না।জাফর ওখানে হাওয়া বদলের জন্য গিয়েছে, কোনো বিজনেস ডিলের জন্য না।যদি ও পুরোটা বুকিং করে নেয় তাহলে, ও যার জন্য গিয়েছে সেটা তো হবে না।
-মানে?
-নানান দেশের নানান রকম মেয়ে থাকবে তাদের শরীর দেখা মেয়ে পটানো এসবের উদ্দেশ্যেই মালদ্বীপ যাওয়া।ওখানে মনোরম পরিবেশে লুচ্চামি করার জন্যই গিয়েছে।
মিশান মুখ শুকনো করে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে কি আমারও ওর সামনে শরীর প্রদর্শন করতে হবে?
-আরে নাহ! তুমি শরীর দেখাতে যাবে কেনো?তোমার চেহারা কি কম? চেহারা দেখেই ও পিছু নেবে। বাকিটা প্ল্যান মতো।
-হুম।
-ও হ্যাঁ, দুটো বিষয় মাথায় রেখো।চোখের চাহনি থাকবে কোমল দৃষ্টি।আর ছেলেদের মতো হাঁটা যাবে না, মেয়েদের মতো করে চলাচল আচরণ দুটোই করতে হবে।মনে থাকে যেনো।
মিশান চোখের পলক ফেলে বললো,
-হুম।
মিশান একটু চিন্তিতো হয়ে মাথা হাল্কা নাড়িয়ে তীব্রর কাঁধে মাথা রাখলো।
লম্বা জার্নির পর ওরা মালদ্বীপের রাজধানী মালে এয়ারপোর্টে এসে ল্যান্ড করলো।
সেদিনের জন্য ওরা মালে থেকে হুলহুমালের একটা হোটেলে থাকে। মালদ্বীপের সাথে বাংলাদেশের সময়ের দিন রাত পার্থক্য নয়,মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধান।
হুলহুমালেতে এক রাত কাটানোর পর পরদিন ভোর বেলা ওরা মালদ্বীপের প্রাইভেট আইল্যান্ডের দিকে যায়।
দুজনের জন্য আগে থেকেই প্যারাডাইস আইল্যান্ড রিসোর্টের ওয়াটার ভিলা বুকিং করা ছিলো মিশানের নামে।জাফর এই রিসোর্টেই এসেছে।
প্যারাডাইস আয়ারল্যান্ড রিসোর্টে আসার কারণ এখানে সব থেকে সুন্দর মত মনোরম পরিবেশে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির সুন্দর্য।যেমন ওয়াটার ভিলা বিচের উপর ভাসমান কাঠের রেসোর্ট, সমুদ্রের বুকে থেকে সমুদ্রের গর্জন শোনার জন্য এর চেয়ে ভালো স্থান হতে পারে না।
ভোর বেলা মিশান একা একা আনমনে ভাব নিয়ে রিসোর্টের ভেতর ঘুরাফেরা করছিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর মিশান নজরে আসে জাফরের।
জাফর ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেছিলো প্রকৃতি দেখে মন জুড়াতে,কিন্তু প্রকৃতির সাথে যে অপ্সরী দেখতে পাবে সেটা জানা ছিলো না। মিশানকে আকর্ষীত লাগার বিশেষ কোনো কারণ ছিলো না, ড্রেস আপ যথেষ্ট ভালো ছিলো।তীব্রর প্ল্যান মতো জাফর মিশানের চেহারা দেখেই মুগ্ধ হয়ে যায়।
জাফর যেখানে থাকে সেখান থেকেই মিশানকে হাই দেয়,মিশান দেখেও না দেখার ভান করে আনমনে ভাব নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করে আবার জাফরের দিকে তাকায়,জাফর এখনো হাত উঁচু করে হাই দিচ্ছে। মিশান চোখের ইশারায় আঙুল দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলো।
“আমি?”
জাফর মাথা নাড়িয়ে মিশানকে কাছে ডাকলো।
মিশান কাছে গেলো।
-হাই!
মিশান ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে উত্তর দিলো,
-হ্যালো!
-আর ইউ কাশ্মেরী?
-নো স্যার!বেঙ্গলী।
জাফর উত্তেজিত হাসি দিয়ে বলে,
-হোয়াট! ইউ আর বেঙ্গলী! মি টু।
-ওহ, নাইস টু মিট ইউ।
-তোমাকে দেখে বুঝা যায় না তুমি বাঙালী। বাংলাদেশে এতো সুন্দর নারী আছে!মানে অবিশ্বাস্য! আমি তো জানি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমণী হলো কাশ্মেরী রা। তোমাকে সেই সুন্দরীদের একজন লাগছে,তোমাকে কাশ্মেরী বললেও কম হবে। নারী এতো সুন্দর হতে পারে,আচ্ছা তুমি মানুষ তো?
-শালা তেল মারার একটা লিমিট আছে(মনে মনে)
-কি হলো?
-হ্যাঁ স্যার, আমিও আপনার মতোই একজন মানুষ। শুধু পার্থক্য এইটুকুই আপনি ছেলে, আমি মেয়ে।
-আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, একটু চিমটি কাটবে আমার হাতে?সাত সকালে কোনো পরী দেখছি নাকি মানুষ!
মিশান মুচকি হাসি দেখিয়ে জাফরের হাতে সত্যি সত্যি চিমটি কাটে।
-কোথায় থাকো তুমি?
-বাংলাদেশেই।
জাফর নিজের মাথায় হাত দিয়ে আফসোস করে বললো,
-মাই গড! তুমি বাংলাদেশে থাকো, আর আমি কোনোদিন বাংলাদেশেই দেখিনি! এই মালদ্বীপে এসেই দেখতে হলো!
এতো ছোটো বাংলাদেশ, সেখান আমি তোমাকে দেখিনি!আচ্ছা তুমি কি আমাকে আগে কখনো দেখেছো?
-সরি স্যার, দেখিনি মেবি!
-ইট’স ওকে!না চেনাটাই স্বাভাবিক। আমি একজন বিজনেসম্যান,বিজনেস আইকন।বাংলাদেশে আমি এওয়ার্ডও পেয়েছি,টিভিতে দেখানো হয়েছে,খবরের কাগজে ছাপানো হয়েছে।তাই ভাবলাম দেখতে পারো বা চিনতে পারো।
-ওহ আচ্ছা, সরি আমি টিভি বা নিউজ পেপার কোনোটার ই ফ্যান না,তাই দেখা হয়নি। আমার নেশা শুধু ঘুরাঘুরি। আমি একজন টুরিস্ট। পুরো পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখতে চাই।
-ঘুরার জন্য তো টাকা লাগে অনেক,টাকা কোথায় পাও?বাবা কি করে?
-বাবা নেই, মা আছেন। সরকারী চাকরী করতো এখন পেনশনে আছেন।একটা বোন ছিলো রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আমিই আছি, আর নিজের আর্থিক চাহিদার জন্য ফ্রিল্যান্সিং করি, যা আয় হয় তাতে আমার ঘুরাঘুরি হয়ে যায়, মাকে নিয়েও ঘুরতে চাই কিন্তু মা রাজি হয় না।জানেন
আমার বাবার অনেক ইচ্ছে ছিলো ওয়ার্ল্ড ট্যুরের, প্রথমবার বাবা যখন ট্যুরে যায় তখন ফেরার সময় প্লেন ক্র্যাশ করে মারা যায়। এরপর থেকে মায়ের ভেতর ভয় জাগে দূরদূরান্তের যাতায়াত দেখে।আমাকে অনেক বাঁধা দেয় মা,কিন্তু আমি শুনি না । বাবার ইচ্ছে গুলো আমার উপর ভর করে,বাবার অপূর্ণ ইচ্ছে আমি পূরণ করছি একটু একটু করে।
-তোমার লাইফ জার্নিটা অনেক ট্রাজেডি দিয়ে ভরা কিন্তু তোমার টার্গেট টা কিন্তু খুবই স্ট্রং। অনেক শুভ কামনা তোমার জন্য,যেনো পুরো পৃথিবী তুমি ঘুরে দেখতে পারো।
-থ্যাংক ইউ স্যার।
-কিসে পড়ো?
-গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর আর লেখাপড়া করিনি।এইযে নেশাই পড়ে গেছি।
-বাহ! খুব ভালো, খুব ভালো।
ভালো লাগলো, চলো দুজন মিলে হাঁটাহাঁটি করি,সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করি।
এক কথায় দু কথায় মিশানের সাথে জাফরের বেশ ভাব হলো। ভাব এতোদূর গড়ালো যে দুজনে বিচের ধারে পা ভিজিয়ে বসে গল্প শুরু করে দিয়েছে। জাফর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মিশানকে পটানোর।মিশান ও এমন অভিনয় করে যেনো পুরো পটে গেছে।
আজকেরদিন ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে ডিনার অব্ধি মিশানের সাথেই সময় কাটায়।এমনকি শেষ বেলায় মিশানকে ইন্ডাইরেক্টলি রাতে জাফরের রেসোর্টে রুমে যেতে বলে, মিশানও ইন্ডাইরেক্টলি বুঝায় এখন না পরে।কথার মাঝে জাফর মিশানের হাত ধরে ফেললে মিশান হাসি মুখে যেনো জাফর কিছু না বুঝে, কৌশলে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় বার বার।
জাফরের সাথে পুরোদিন ঘুরে জাফরের চারপাশ টা পর্যবেক্ষণ করে মিশান।
জাফরের প্রতিটা গার্ড সাধারণ মানুষের সাথে মিশে থাকে, কৌশলে জাফরকে প্রোটেক্টের কাজ করছে।একটা পোকাও জাফরের কাছে ভীড়লেও ওরা টের পেয়ে যায়। সাধারণ ভাবে রেসোর্টে ঢুকে ওকে মেরে বের হওয়াটা সম্ভব না কোনো ভাবেই।
জাফরকে মারার ব্যাপারটা খুবই জটিল,তবে এটাও ঠিক জটিল সমস্যার সমাধান সহজ হয় সর্বদা।
-এভাবে সম্ভব না তীব্র,অনেক কড়া গার্ড। যেদিকেই তাকাই বাজপাখির মতো চোখ করে ওরা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।গান গুলো এমন এংগেলে লুকানো, প্রয়োজনে ন্যানোসেকেন্ডও লাগবে না বের করে শ্যুট করতে।
-ভয় পেও না, আমাদের সাথে মালদ্বীপের সৈন্য আছে। পাওয়ার আমাদেরও কম নেই।
ওকে মারার জন্য এরচেয়ে অনুকূল পরিবেশ বা সময় আর হবে না।
দেশে যদি ওর একলাখ গার্ড থাকে, এখানে সর্বোচ্চ এক হাজার এসেছে।
তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও মিশান।
-ওকে।
প্রায় দুদিন সময় যায় জাফরের সাথে ঘুরাঘুরি করে ভাব ক্ষীরসাগরে পরিণত হতে।
দুদিনের মাথায় ই জাফর মিশানকে কু প্রস্তাব দিয়ে ফেলে,মিশান বিব্রত ভাব না দেখিয়ে স্বাভাবিক ভাবে নেয় আর এমন অভিনয় করে যেনো ও নিজেও এমনটা চায়,কিন্তু এমন পরিবেশে ওর ভয় লাগে।চোখের মাঝে এমন এক্সপ্রেশন দেখায় যেনো বুড়ো জাফরের উপর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
জাফর মিশানকে বলে কোথায় যাবে ওর সাথে।
মিশান বলে গার্ডেন রিসোর্টে যেতে।
এরপর জাফর মিশানের জন্য পুরো গার্ডেন রিসোর্ট বুকিং করে।
বোকা জাফর মাঝে মাঝে এমন এমন বোকামি করে সেগুলো পাতে তোলার মতো না, গার্ডেন রিসোর্টের চারপাশে গার্ডরা পাহারা দিলেও ভেতরে পাহারা দেয়ার কোনো অনুমোদন দেয় না।যার কারণে পুরো গার্ডেন রিসোর্টে কেবলই মিশান আর জাফর।
বিছানার উপর মিশান বসে আছে,জাফর দুটো গ্লাসে ড্রিঙ্কস ঢেলে মিশানের সামনে দিয়ে ওর কাছে বসে, মিশান একটা গ্লাসের ড্রিঙ্কস অপর গ্লাসে ভরে কিছুটা চুমুক দিয়ে খেয়ে জাফরের দিকে এগিয়ে দেয়,জাফর হাসি মুখে ড্রিঙ্কস পুরোটা শেষ করে।এরপর মিশানের হাত ধরতে গেলে মিশান হাসতে হাসতে বিছানা থেকে উঠে রুমের দরজা খুলে দাঁড়াতেই জাফর তীব্রকে দেখতে পায়, তীব্র ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে জাফরের দিকে তাকিয়ে আছে।
জাফরের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় তীব্রকে দেখে। মিশান আলতো হাতে তীব্রর শার্টের কলার ধরে ভেতরে এনে দরজা আটকে দেয়।
-আরেকটু হলে তো আমার সর্বনাশ হয়েই যাচ্ছিলো। এতো দেরি কেনো হলো প্রিয়?
-কারণ বাইরে তোমার দাদারা বসে যোগ্য করছে যেনো কেউ ভেতরে ঢুকতে না পারে,আমিও সেই যোগ্যাসনে যোগ দিয়েছিলাম, তাই দেরি হলো।
এদিকে জাফর তীব্রকে দেখার পর জাফর কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। গলার ভেতর যেনো কি আটকে আছে এরকম মনে হচ্ছে। এমনটা হওয়ার কারণ মদটা মিশান খাওয়ার পর কৌশলে হাতের একটা নখ ডুবিয়ে দেয়,অই নখে লাগানো ছিলো একটা মেডিসিন যেটা খেলে গলার আওয়াজ কয়েকঘন্টার জন্য অফ থাকে।
সেটা খাওয়ার কারণেই জাফরের এই হাল।
তীব্র জাফরের দিকে এগুতে এগুতে বললো,
-কি হলো সাউন্ড বের হচ্ছে না? গলা মিউট হয়ে আছে? চ্চু চ্চু চ্চু! আহ্হারে!বেচারা!
জাফর তড়িঘড়ি করে কিছু ডিভাইস ক্লিক করতে লাগলো ওর গার্ডদেরকে ডাকার জন্য,কিন্তু কোনো ডিভাইস কাজে দিলো না।
মিশান ডেভিল স্মাইল দিয়ে বললো
-ইশশসসসস! কোনো কিছু কাজ করছে না! কি হবে এখন?দাও আমি ঠিক করে দিচ্ছি।আমাদের মাথায় ভাঙা গড়ার মতো দুটো শক্তিই আছে।
তীব্র সিগারেট ধরাতে ধরাতে জাফরকে বললো,
-দেখলে জাফর, মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে তখন চারপাশটা কেমন তুচ্ছ ব্যবহার করে?
তোমার কাছে টাকা আছে পাওয়ার আছে,কিন্তু এই মূহুর্তে সব কিছু তুচ্ছ।সব ভেনিশ হয়ে যাবে এক রাতেই,শুধু তোমার কয়েকটা টিপসই এর মাধ্যমে।
জাফর উল্টো ঘুরে বালিশের নিচ থেকে গান বের করে শ্যুট করতে থাকে কিন্তু আজব ব্যাপার হলো গানে বুলেট লোড করা থাকলেও বুলেট বের হচ্ছে না।এটাও মিশানের কাজ, গানের হ্যামারের গোড়ায় এমন কাজ করে রেখেছে যেনো গুলি করলে গুলি না বের হয়।
-চলো হ্যামার না টিপে,কাগজে টিপ সই গুলো দিয়ে দাও তারপর আমরা কথা বলছি বাকি ব্যাপার গুলো নিয়ে।
জাফর চোখ বড় বড় করে তাকায় তীব্রর দিকে।
-তুমি কি এখনো অনিশ্চিত আছো, আমি কে?
আমি তো বলেছিলাম এক তীব্র মরলে হাজার টা জন্ম নেবে। তীব্র মানেই তেজস্ক্রিয়! যার বিনাশ নেই!
সেদিন আমার সময় আমার সাথে ছিলো না, সময় কখনো এক গতিতে চলে না। আমি সেই সময়কে আয়ত্তে এনেছি,সময় বেগ পাল্টিয়েছে।এইযে দেখো আজ তোমার চারপাশে হাজার হাজার গার্ড থাকতেও তোমাকে কেউ রক্ষা করতে আসবে না, কারণ সময় তোমার সঙ্গী নেই, সময় আজ আমার!
দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি কোনোটাই কাজে দেবে না। আমার বস ফাইট করতে ভালো লাগে না!যা হবে আপসে। তোমাকে যতোই তরতাজা লাগুক, বয়স কিন্তু ঠিকি হয়েছে, আমার একটা থাপ্পড় ই যথেষ্ট তোমাকে কাত করে রাখার।
জাফর যেনো আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা না করতে পারে তার জন্য মিশান জাফরের গলার মধ্যে একটা কাঁটাময় গোল রিং ওর গলায় আটকে দেয়,রিংয়ের সাথে লাগানো লম্বা চেইন নিজের হাতে রাখে। জাফর পালানোর চেষ্টা করলে কাঁটাগুলো ওর গলায় বিঁধে পড়বে,এই মূহুর্তে যতো স্থির থাকবে ততোই ওর মঙ্গল।
-এইবার তো টিপসই টা দিয়ে দেবে?
জাফরের কেবলই চোখ ঘুরানো ছাড়া আর কোনো পন্থা পাচ্ছে না।
তীব্র নিজের হাতে হ্যান্ডগ্লাভস পড়ে জাফরের হাত ধরে আঙুলের মাঝে নীল কালি লাগিয়ে কয়েকটা পেপারসে টিপসই নেয়, ওর সিগনেচার নিলো না এই কারণে কারণ ও অনেক ধুরন্ধর সিগনেচার দিতে বললে, এমন ভাবে ভুল সিগনেচার দেবে কেউ বুঝবে না।
তাই ফিঙ্গারপ্রিন্টের চেয়ে শতভাগ কার্যকরী কোনো উপায় থাকতে পারে না।
দশমিনিট আগেও জানতো না জাফর, ওর ভাগ্যে এমন মাইনকা চিপা লিখা আছে।
ফাঁদ সেরকম করেই সাজানো ছিলো যেমনটা ঝলক তীব্রর সাথে হয়েছিলো।ওরাও যেমন বুঝতে পারেনি আগের মূহুর্তে, কিছুক্ষণ পর ওদের সাথে কি হতে যাচ্ছে।
মৃত্যুর সময় কেউ ছিলো না ওদের সাহায্যের জন্য।
আজ জাফরের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে, ওকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই।
যেসব গার্ড ছিলো বাইরে তীব্র ক্রমে ক্রমে সব কটাকে মেরে বালিচাপা দিয়ে রেখে এসেছে,পার্মানেন্টলি মারেনি,টেম্পোরারি মার মেরেছে, যেনো চিকিৎসা না পাওয়া অব্ধি এরা উঠে দাঁড়াতে না পারে।
টিপসই গুলো নেয়ার পর, তীব্র পকেট থেকে একটা সিরিঞ্জ আর শিশিবোতল বের করে।
-এটা কি তোর গায়ে পুশ করবো নাকি গিলে খাওয়াবো বুঝতে পারছি না।
আমার ভাইকেও তো পয়জন দিয়ে মেরেছিলিস, এমন ভাবে মেরেছিলি আমার ভাইকে ভাইয়ের শেষ ইচ্ছা ছিলো একটু পানি পান করা, ভাইকে পানি খাইয়েই আমি ভাইয়ের বুকে মৃত্যু চেপে দিলাম।তোরা আমার হাতে আমার ভাইকে খুন করিয়েছিস।
কথাগুলো বলতে বলতে তীব্রর চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো,
-চোখের সামনে পড়ে আছিস কত অসহায় লাগছে তোকে ।আমার ভাই তোদের কতোই না বুঝিয়েছে,আজকে কি বিশ্বাস হচ্ছে আমার ভাইয়ের বাণী গুলো?বিশ্বাস হচ্ছে জাফর? তোরা আমার ভাইটাকে বাঁচতে দিলি না!
মেরে দিলি আমার ভাইকে। এই দেখ আমার বুকে আমার ভাইয়ের হৃদপিন্ডটা বাস করছে, খুব করে সাড়া দিচ্ছে । চোখের সামনে তোকে দেখে খুব উত্তেজনা প্রকাশ করছে আমার ভাইয়ের অস্তিত্বটা! এই হৃদপিন্ড যতোগুলো রক্তকণিকা পাম করে ততোগুলো কণিকাই তেজস্ক্রিয় হয়, আমার শরীরে আমার ভাইয়ের তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি গুলো বইছে!
এইযে এই মেয়েটা, ওর দেহের রক্তকণিকাগুলোও তেজস্ক্রিয়, কেনো জানিস? আমার সংস্পর্শে!
একটা মৃত্যু দিয়ে আমাদের সবার জীবন বিকিয়ে দিয়েছিস তুই!
তীব্র উচ্চস্বরে বললো,
-তুই কি বাঁচতে চাস আরো? এই জাফর কথা বলছিস না কেনো?
কোথায় তোর গলার আওয়াজ? বের হচ্ছে না? বুঝতে পারছিস কি, কতোটা তুচ্ছ তোর প্রকৃতি? আজ আমাকে টাকা অফার কর, পাওয়ার অফার কর, প্রোপার্টি অফার কর। দেখ বাঁচতে পারিস কিনা আমার হাত থেকে।দেখি কে বাঁচায় তোকে!
জাফরের চোখে আজ কোনো হিংস্রতা নেই, কেবলই ভয় আর ভয়, যে ভয় থেকে অভিজিৎ ই বাঁচতে পারেনি, সেখানে কি করে ও নিজে বাঁচবে।বাঁচার আকুতি করারও সাহস পাচ্ছে না।
জাফর কেবলই নিজের হাত দুটো সামনে এগিয়ে তীব্রর দিকে হাতজোর করে ক্ষমা চাইছে।
তীব্র ওর ক্ষমা চাওয়া দেখে তুচ্ছ হাসি দিয়ে মিশানের মুখের দিকে তাকায়, মিশান চোখ দিয়ে ইশারা করতেই তীব্র সিরিঞ্জের ভেতর সবটুকু বিষ নিয়ে, জাফরের গায়ে ইনজেক্ট করতে যায়, জাফর মাথা নাড়িয়ে আকুতি করতে গেলে গলার মাঝে কাঁটা বিঁধে পড়ে।
এমন একটা অবস্থায় পড়েছে বাঁচার কোনো চেষ্টাই করতে পারছে না। ইনজেক্ট করা হয়ে গেলে মিশান গলা থেকে ধাতুর জিনিস টা খুলে নেয়।
জাফর শুধু কাতরাতে থাকে,শরীর অবশ হওয়ার সাথে সাথে প্রকন্ড যন্ত্রণা শুরু হয় ভেতরে।
-যে বিষটা তোর পার্টনারের শরীরে পুশ করেছিলাম ঠিক সেই বিষটাই তোকেও দিলাম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিষ!
তোকে তো তাইপেন ভর্তি ঘরে আবদ্ধ করে রাখা উচিৎ। একে একে ছোবল মারবে আর তুই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে করে যন্ত্রণা ভোগ করে মরবি।আমার ব্যর্থতা আমি তোদের একসাথে মারতে পারিনি, চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে একজন একজন মারতে হলো।
চলবে…………