#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি,পর্ব_৪৪
#লেখিকা_রিয়া_খান
-তুমি নিজেও জানো না তীব্র তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে!
-সর্বোচ্চ মৃত্যু,এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
আর মৃত্যুকে তীব্র ভয় পায় না, বাড়ি থেকে রোজ বিদায় নিয়ে বের হই।বাবা মাকে বলে আসি, ” হতে পারে আমি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরবো না, হতে পারে আমার গাড়ি করেও ফিরবো না, হতে পারে আমার গাড়ির বদলে ফ্রিজিং ভ্যানে আমাকে আনা হচ্ছে লাশের খাটে শুইয়ে,তাই বলে হতাশ হইয়ো না তোমরা।মৃত্যু সত্য!”
আপনাকে একটা কথা বলে যাচ্ছি,কান পেতে শুনুন।আপনি চেষ্টায় থাকুন গোড়া পেতে থাকার।আমি চেষ্টাই থাকি গোড়া উপড়ে ফেলার।
একটা গেইমের মতো চলবে ব্যাপারটা। গেইমে যে কেউ মাঝপথে বিলীন হয়ে যেতে পারে,তবুও গেইম চলবে। এখানে একটা প্লাস পয়েন্ট হলো কেউ একজন চলে গেলে তাঁর জায়গায় অন্য কেউ এসে,তাঁর হয়ে খেলতে পারবে।
ধরুন আপনি ভেনিশ হলে আপনার জায়গায় আপনার ওয়াইফের এক্স হাজবেন্ডের ওহ সরি! আপনার ছেলে এসে খেললো,আমি ভেনিশ হলে আমার জায়গায় নতুন কোনো তীব্র এসে খেলবে।
মোট কথা হার জিত নির্ধারণ না হওয়া অব্ধি খেলা চলবে। প্রয়োজনে আমাদের খেলা অন্যকেউ খেলবে,কিন্তু খেলা হবে!
-অনেক বড় ভুল করছো,সাপের লেজে পা রাখলে ছোবল খাওয়া অত্যাবশ্যক।
-আপনিই তো বললেন,আমি সাপের লেজে পা রেখে বীণ বাজাচ্ছি।বীণ বাজানোর সময় সাপ ছোবল দেয় না,নাচে।
বাজাতে থাকি আমার হাতের বীণ, আপনিও নাচতে থাকুন।দেখি আপনি নেচে হাঁপিয়ে যান, নাকি আমি বীণ বাজিয়ে!
কথা গুলো বলে তীব্র জাফরের সামনে থেকে চলে গেলো, নিজের গাড়িতে উঠে বসে।
জাফর সেই একই স্থানে অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে,তীব্রর গাড়ীর সামনে জাফরের লোকের গাড়ি দিয়ে রাস্তা ব্লক করা,সেগুলোও সরাচ্ছে না।
তীব্র আব্দুর রহমানকে একটানা হর্ন বাজাতে বলে,রহমান তাই ই করে।
একটানা গাড়ির হর্নের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে জাফর চোখ দিয়ে ইশারা করে ওদের গাড়ি সরাতে।
জাফরের গাড়ি গুলো সরাতেই তীব্রর গাড়ি জায়গা পরিত্যাগ করে।
জাফর দাঁত কিড়িমিড়ি করতে করতে রক্ত চক্ষু নিয়ে চলে গেলো, তীব্র কথার মাঝে বার বার জাফরের পারসোনাল লাইফ নিয়ে টিজ করছিলো।
কিছুদূর যাওয়ার পর বাবলুকে তীব্র বললো,
-বাবলু, তোমার বাসার এরিয়াতে এসে গেছি, চলে যাও তুমি।
-কিন্তু স্যার আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে না দিয়েই?
-এতো বেশি বুঝো কেনো? যেতে বলেছি, চলে যাও।আমার দেহরক্ষী লাগবে না, নিজেকে নিজেই যথেষ্ট সেইফ করতে পারি। দুর্ঘটনা যদি ভাগ্যে লিখা থাকে তাহলে বুলেট প্রুভ কাঁচও আমায় রক্ষা করতে পারবে না। সরকার খামোখা বডিগার্ড দিয়ে টাকা নষ্ট করে।এর চেয়ে অই টাকা গুলো আমাকে দিলে বড্ড উপকৃত হোতাম।বাবলু মন খারাপ করো না,যেটা সত্যি সেটাই বলছি।একমাত্র তোমাকেই দেখলে আমার মনে হয় দুনিয়ার সব চেয়ে ইউজলেস বস্তু। কোনো কাজ নেই শুধু শুধু আমার পেছন পেছন ঘুরো। তুমি এক কাজ করতে পারো,একটা পার টাইম জব করো। আমার যখন তোমাকে প্রয়োজন হবে ডেকে নেবো।
সব সময় বিনা প্রয়োজনে আমার পেছন পেছন একটা লোক ঘুরছে, এটা ভেবেও বিরক্ত লাগে।
-সরি স্যার!
-বাড়ি ফেরার পথে আমাকে বিরক্তি থেকে একটু মুক্তি দাও।যাও নিজের বাড়ির রাস্তা খুঁজো।
তীব্র মেজাজ দেখিয়ে কথা বলার পর রহমান গাড়ি থামায়, বাবলু বেরিয়ে চলে যায়।তীব্র কিছু একটা কারণে বাবলুর উপর বিরক্ত।খুব সম্ভবত দুই একের মধ্যে বাবলুর চাকরী চলে যাবে।
একমাত্র রহমানের উপর তীব্র কখনো বিরক্ত হয় না।কারণ রহমান প্রতি সেকেন্ডে তীব্রর চোখের মুভমেন্ট দেখে বুঝে যায়, তীব্র কি বলছে বা বুঝাচ্ছে।রহমানকে যখন যে কাজ দেয়, সেটা খাপে খাপ করে আসে।
-স্যার জাফর আপনার উপর ভীষণ রকম রেগে আছে, একটু সাবধান হোন,ও কিন্তু স্বাভাবিক মানুষ না।
গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে দুই হাত ঘাড়ের পেছন দিয়ে তীব্র হামি তুলতে তুলতে উত্তর দিলো,
-না রহমান, সাবধান এখন হওয়া যাবে না।
অনেক বড় খেলা এটা,রিস্ক নিতেই হবে।
একটা বার ভেবে দেখো দেশটা কোন পর্যায় আছে।আজ থেকে দশ বছর পর দেশের অবস্থা কি হবে! কত সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে মাদক! যে ওষুধের দোকানে মানুষ যায়, ওষুধ কিনতে, যেটা কিনা রোগ নিরাময়ের।
সেই ওষুধের দোকানে মানুষ যাচ্ছে মাদক কিনতে,যাতে করে রোগ বাঁধে ভেতরে।
ছোটো ছোটো ছেলেগুলো এসে চোখের সামনে দিয়ে কত সহজে মাদক নিয়ে যাচ্ছে। দশ বছর পর কি হবে?
মানুষ সিগারেটের মতো ওপেনে মাদক কিনবে।এইযে আমরা সিগারেট খাচ্ছি এটা ক্ষতিকর জেনেও খাচ্ছি, ঠিক সেরকম ই মাদক গ্রহণের কাজ চলবে।
মানুষ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেবে, কোন মাসে কোন মাদক গ্রহণ করবে? পুলিশরা পাহারা দিয়ে দিয়ে মাদক দেশে প্রবেশ করাবে? সরকার থেকে যে স্কুলে টিফিন পাঠানো হয়,সেখানেও মাদক থাকবে। বাবা মা গুলো হাসি মুখে তাকিয়ে দেখবে সন্তানের বিপর্যয়!
সে দিন আসতে খুব দেরি নেই রহমান।
কিশোর রা যে বয়সে স্কুলে যাবে, সে বয়সে স্কুল পালিয়ে টিফিনের টাকা জমিয়ে বাবার পকেট মেরে ইয়াবা, ড্রাগস, কোকেন,হেরোইন, বারবিচুয়েট, এল এস ডি এসব কিনে বেড়াবে! তারপর এক পর্যায় মস্তিষ্ক বিগড়ে গিয়ে ওরা ছোটো ছোটো অপরাধ করতে থাকবে , সেখান থেকে বড় আকারে রূপ নিবে।একটা পর্যায় সেই ছেলে গুলোই অস্ত্র নিয়ে ঘুরবে, অপরাধ দিয়ে সমাজ ভরে যাবে। সুস্থ সুশীল স্বাভাবিক মানুষেরা অনিরাপত্তার ঝুঁকিতে চলাচল করবে।মার্ডার, চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই, রেপ এগুলো বাড়তে বাড়তে দেশটা এমন পর্যায় যাবে, তখন সব কিছু কনট্রোলের বাইরে চলে যাবে।
তাই প্রথমে ওর মাদকের সব রাস্তা কাট করতে হবে,তারপর অস্ত্রের।ধাপে ধাপে
এদেশ থেকে উচ্ছেদ করতে হবে জাফর আর ওর সঙ্গীদের।
কেবল তো মাদক নিয়ে ঘাঁটছি, জানিনা অবৈধ অস্ত্রর বিস্তার কতদূর গিয়েছে।
এটা সিঙ্গাপুর না যে, ঘরে ঘরে অস্ত্র থাকবে আত্মরক্ষার জন্য।
এটা বাংলাদেশ,এদেশে অস্ত্র ব্যবহার করতে দিলে আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করবে না, বরং অন্যকে আত্মসাৎ করার জন্য ব্যবহার করবে।
-কিন্তু স্যার, এখানে লাইফ রিস্ক অনেক।আমাদের ডিপার্টমেন্টও কিন্তু আমাদের সাথে থেকেও নেই, দিন শেষে ওরাও প্রভাবশালীর পূজারী।
তীব্র ঘাড় ঘুরিয়ে এদিকওদিক তাকাতাকি করে বললো,
-শুধু ডিপার্টমেন্ট কেনো সামনে পেছনে,আশেপাশের কাউকেই বিশ্বাস নেই।
-কথাটা বুঝলাম না স্যার।
-রহমান! তোমার কি মনে প্রশ্ন আসেনা, আমি তো কাজ গুলো সিক্রেট ভাবে করছিলাম,জাফর কি করে জানলো ওর পেছন লাগা মানুষ টা আমি?
রহমান তীব্রর দিকে আশ্চর্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-স্যার!
-হুম।
রহমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালানোতে মন দিলো।
-সিগারেট আছে রহমান?
রহমান নিজের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে তীব্রকে দিলো।
বাড়ি ফেরার পর নিজের ঘরে ঢুকবে এমন সময় দেখতে পায় ঝলকের ঘরে আলো জ্বলছে।তীব্র নিজের ঘরে না ঢুকে ঝলকের ঘরে ঢুকলো।ঝলক পড়ার টেবিলে বসে গালে হাত দিয়ে সামনে বই খুলে বসে আছে অন্যমনস্ক হয়ে।
পদোন্নতির পরিক্ষার জন্য পড়ালেখা চলছিলো।
তীব্র পেছন থেকে বলে উঠে,
-বিরহ উৎযাপন করতে হয় অন্ধকার ঘরে বসে, কিন্তু তুই লাইট জ্বালিয়ে কিভাবে কি করছিস, বুঝলাম না তো!
-বিরহ উৎযাপন করছিনা, পড়তে বসেছি দেখছো না?
-ও আচ্ছা, সারাজীবন পড়ালেখা করে এসেছি বইয়ের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু কখনো দেখিনি , বই থেকে ঠিক ৭৫ ডিগ্রি এংগেলে উপরের দিকে তাকিয়ে কেউ পড়ে।
ঝলক ক্লান্ত ভঙ্গীতে বইয়ের উপর মাথা ডুবিয়ে দিলো। তীব্র আরেকটা চেয়ার টেনে ঝলকের পাশে বসলো।
-বলো বৎস তোমার বিরহের কারণ?
ঝলক তীব্রর দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো,
-ভালো লাগছে না ভাইয়া,মিশানের কথা মনে পড়ছে খুব।
না জানি কেমন আছে মেয়েটা।কি করছে এখন!
-তাহলে ফোন করে জেনে নে, কি করছে কেমন আছে।
-নাহ ও অনলাইনে নেই। কাজে গেছে,মোবাইল হয়তো ইউনিটে রেখে গেছে।
-তাহলে তুইও চলে যা, কুয়েত।
-আমি চলে গেলে নিশান একা হয়ে পড়বে, ওকে সময় দেবে কে?
-তুই যা,নিশানকে আমি দেখবো।
ঝলক ফিক করে হেসে দিয়ে বলে উঠে,
-তুমি আর কেউ না? যে কিনা নিজের প্রেমিকাকেই সময় দেয় না,সে কিনা ভাইয়ের প্রেমিকার বোনকে সময় দিবে।
– তুই যেনো কেমনরে ঝলক,ভবিষ্যতে বউ পাগল খেতাব পাবি।
-মজা নিও না ভাইয়া।আমি মোটেও ওরকম না। মিশান অনেক দূরে, একটা ঝুঁকিপূর্ণ স্টেজে আছে, সেজন্য টেনশন হয় ওর জন্য।ও নিজের প্রতি একটুও কেয়ারিং না, পুরো দুনিয়াকে ও ভালোবাসলেও নিজেকে ভালোবাসে না, কেমন যেনো আনমনে ছন্নছাড়া স্বভাবের,টেনশনে থাকতে থাকতে ওর মস্তিষ্ক একদম ডুবে গেছে। ওর যদি আজ ক্ষতি হয় কোনো,তার জন্য ওর এই আনমনে ভীতু স্বভাব দায়ী থাকবে।মেয়েটা যেনো বিপদমুক্ত থাকে সেটা নিয়েই একটু চিন্তা হয়, এর বেশি কিছু না।
-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।আল্লাহ যদি আমার ভেতরে এইটুকু প্রেমও দিতো, অনেক শুকরিয়া আদায় করতাম।
-ধুর ভাইয়া তোমার কথা বাদ দাও!দীপ্তি কি করে যে সহ্য করে বুঝি না। দীপ্তির দিক থেকে ভাবলে আমার তো, তোমার প্রতি বিরক্ত এসে যায়। আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে না করলে, কিন্তু তুমি তো দীপ্তিকে ভালোবাসো তাহলে ওর সামনে স্বিকার করো না কেনো?
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-শোন ভাই, সব মেয়ে তোর প্রেমিকার মতো ছন্নছাড়া না। এইযে একটা মেয়েকে আমি ভালোবাসি , সে মেয়েটা আমার চেয়ে দ্বিগুণ ভালোবাসে আমাকে।যেখানে মেয়েটার পেছনে আমার ঘুরার কথা, সেখানে বছরের পর বছর মেয়েটা আমার পেছনে ঘুরছে।ব্যাপার টা ভাবতেই মজা লাগে! এখন যদি আমি ওর কাছে আত্মসমর্পণ করি,তাহলে সব রুটিন যাবে উল্টে!নিয়ম করে ফোনে কথা বলা,ডেটিং করা,তাঁর মন রক্ষা করা, তাঁর বান্ধুবীদের মন রক্ষা করা,তাঁর পরিবারকে মানানো,কত্ত ঝামেলা!
যেগুলো করার সময় আমার হাতে একদম ই নেই।এর চেয়ে আর কিছুদিন কষ্ট করি, তারপর তো ওকে আমি বিয়ে করছিই।
-ততোদিনে যদি দীপ্তি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়?
তীব্র তুচ্ছ ভাবে উত্তর দিলো,
-বেশি কিছু হবে না, সব ই ঠিক থাকবে, মাঝখান থেকে দীপ্তির জামাই টা বাঁঁচবে না।হতে পারে বিয়ের দিন ই মরলো, না হলেও বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে মরে যাবে।
-হি হি হি….তুমি দীপ্তিকে বিধবা বানানোর প্ল্যান বানাচ্ছো!
-আচ্ছা বাদ দে এই টপিক, তোর পড়ালেখা যদি হয়ে থাকে আধ ঘন্টা পর আমার রুমে আসিস।
পারলে এক কাপ কফি আনিস আমার জন্য।
-আমি শুরুতেই বুঝেছিলাম ভাইয়া, তুমি আমার রুমে কফির অর্ডার ই দিতে এসেছো।
-কি করবো বল? মেজর ঝলকের হাতের কফিটার স্বাদ যে অমায়িক! যেটা খেলে আমার সারাদিনের ক্লান্তির অবসান হয়। মনে হয় আজকের সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্তি হেরে যায় আমার ভাইয়ের হাতের এক কাপ কফির কাছে।
-হয়েছে তোমার কমপ্লিমেন্ট?
তীব্র বাচ্চা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।
-তুমি গিয়ে ফ্রেশ হও, আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।
-তোর জন্যও আনিস এক কাপ, তোর সামনে খাবো আর তুই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি,কেমন দেখায় ব্যাপার টা।
-তুমি না বললেও আমার জন্য নিয়ে আসবো। ডিনার করেছো তো?
-হুম,বাইরে খেয়ে এসেছি।
-আচ্ছা যাও তুমি,আসছি আমি।
-সময় নিয়ে আসিস, একটা ব্যাপারে আলোচনা করবো।
ঝলক মাথা নাড়ালো,তীব ঝলকের ঘর ছেড়ে নিজের ঘরে গেলো।
তীব্রর ঘরে কফি করে নিয়ে যাওয়ার পর তীব্র কফি খেতে খেতে, ঝলকের সামনে একটা নিউজ পেপার দিলো।
-ফ্রন্ট পেজের নিউজটা পড়।
ঝলক হাতের কফিটা টি টেবিলের এক প্রান্তে রেখে নিউজ পেপার ঘেঁটে দেখে বলে,
-এটা তো অনেক পুরোনো নিউজ পেপার ভাইয়া।
-পেপার টা পুরোনো, কিন্তু এই নিউজটা আজীবন টাটকা। ছবিটার লোকটাকে চিনিস?
ঝলক একমনে তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে,
-চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু..!
-সেজন্য বললাম নিউজটা পড়, মনে পড়ে যাবে।
ঝলক নিউজ পেপারের লিখাগুলো পড়লো, সেখানে লিখা জাফরের লাইফ স্টাইল। সেখানে লিখা অনেকটা এমন, “শুন্য থেকে শুরু করে এক সাফল্য যাত্রার গল্প!অতি দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া ছেলেটা, এক দিন মজুরের ঘরে জন্ম। খাবারের জন্য দিনে দু বেলা খাবার জুটতো না,
পড়ালেখার জন্য টাকা ছিলো না।ছিলো না পরিধানের জন্য ভালো একটা জামা।
সেই ছেলেটা চা স্টলের কাপ ধুয়ে, হোটেলের থালা বাসন ধুয়ে টাকা জোগাড় করতো পড়ালেখার জন্য।
সময় টা ছিলো দুর্ভিক্ষময়,কিন্তু দুঃসময় ছিলো না। অভাবের থালি হাতে নিয়ে জ্ঞান জগতে ছিলো সফলতা।পড়ালেখাতে সফলতা পেতে পেতে মাধ্যমিকের পর স্কলারশিপ পেয়ে যায়, আর সেখান থেকে তাঁর সাফল্য যাত্রা শুরু।বিদেশে গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে জীবন কাটায় নি।কিশোর বয়স থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি করেছে কঠিন পরিশ্রম, যার কারণে আজ সফল ব্যবসায়ী হয়েছে। শাহ্জাহানের তাজমহলের চেয়েও দামী প্রাসাদে বসবাস তাঁর,বিল গেটসও হয়তো এতো দামী গাড়িতে চলে না যতোটা দামী গাড়ি নিয়ে চলে উনি।সারাজীবন স্বর্ণের থালিতে বসে স্বর্ণ খেলেও তাঁর অর্থের কানাকড়িও কমবে না।
অভাব কি সেটা যেনো ভুলে গেছে এই সাফল্যের গল্পের কাছে।
আজ জাফর হাসানের গল্প আকাশ ছোঁয়া সাফল্য। দেশে বিদেশে গড়েছে তাঁর ব্যবসার শাখা প্রশাখা।”
লিখাটা পুরোটা না পড়ে ঝলক থেমে গিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
-ভাইয়া এই লোকটা তো বাংলাদেশের আর পাচঁটা সফল মানুষের একজন তাই না?
বছর তিনেক আগে অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে সরকার থেকে।সেদিন তো আমিও ছিলাম ওখানে প্রেসিডেন্টের সাথে।
-হুম্ম নিউজটা তিন বছর আগের ই, হিসেব করে দেখ।
– উনার মতো আরো কয়েকজন ছিলো যারা এরকম শুন্য থেকে শুরু করে সফল হয়েছে।তাদের নিউজ ছাপা হয় নি যে?
উনি তো চিনা মাটি না কিসের বিজনেস যেনো করে মনে পড়ছে না। লোক ভালো আছে অবশ্য, কথা বার্তার ধরণ খুবই মার্জিত, শুনেছি অনেক দানশীলও।
তীব্র তুচ্ছ হাসি দিয়ে বলে,
-তুইও আর পাঁচ জনের মতো একই ভাবে গিলে নিয়েছিস কথা!
-কেনো ভাইয়া কি হয়েছে?
তীব্র নিজের কফি মগটা ঝলকের কফি মগের পাশে রেখে, ঝলকের সামনে বসলো।
এরপর হাল্কা হলায় কাশি দিয়ে ঝলককে জাফরের আসল ক্যারেকটার টা খুলে বলে।
ঝলক পুরো অবাক হয়ে যায়, সামনে থাকা মানুষটার ছায়া এতো নিকৃষ্ট।তীব্রর কথা গুলো মন দিয়ে শুনেই যাচ্ছে। কথা শেষে ঝলক বললো,
-কাহিনী এতো গভীর, ধরা ছোঁয়ার বাইরে! শালার নিউজ পোর্টাল গুলোর কথা বাদ ই দিলাম।আমরা ডিফেন্সের লোকরাও এটা ভেবে দেখলাম না! এতোদিনে আসল রহস্য বের হয়েছে।
-এখানেই শেষ না ঝলক, আজ জাফরের কথার ভাবে বুঝলাম ওর সাথে আরো পার্টনার আছে, কিন্তু এদের খুঁজা টা আরেক মিশন। জাফরের ব্যাপারটা তো কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হয়।কিন্তু বাকিদের কিভাবে টেনে বের করবো ভাবছি,
ঝলক কিছুক্ষণ একটু নিরব থেকে বললো,
-ভাইয়া!
-বল,
-একজন ব্যবসায়ী, মুনায়েম হক না কি যেনো নাম, বিশাল গরুর ফার্ম।বাংলাদেশের সব থেকে বড় ফার্ম হয়তো উনার ই। উনার ফার্মের দুধ ই আমাদের সেনাবাহিনীতে দেয়া হতো, বছর খানেক আগে নাকি উনার দুধে ভেজাল পাওয়া যায় এরপর উনাকে নিরবে ওয়ার্নিং দিয়ে তাঁর ফার্মের দুধ আনা হয়না।
এরপর তো মিলিটারিদের জন্য আলাদা গরুর ফার্ম তৈরী করা হয়।
যাই হোক কথা সেটা না, কথা হলো। সেই অ্যাওয়ার্ডের দিন মুনায়েম হকও উপস্থিত ছিলো, সফল ব্যবসায়ী হিসেবে অই লোকটাও সম্মাননা পায় জাফরের মতো।
সেদিন জাফরের সাথে অই লোকটা প্লাস আরো দু তিনজন পলিটিশিয়ান ছিলো তাদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা দেখতে পাচ্ছিলাম। এখন মনে পড়ায়, ভাবছি জাফরের সাথে ওর চক্র না থাকলেও ইনফরমেশন কিছু একটা পাওয়া যাবে।
-এক্সাক্ট নাম কি?
-মুনায়েম হক হবে হয়তো,মুনায়েম এর সাথে কিছু একটা পদবী হবে।
একটু ঘেঁটে দেখতে পারো ভাইয়া। কথায় আছে না, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়িয়া দেখিবে তাই,পাইলেও পাইতে পারো..
ঝলকের কথার মাঝে তীব্র বলে উঠলো,
-ক্রিমিনালের গোড়া খবর!
-ভাইয়া একটা হিসেব মিললো না আমার,
-কি?
-তুমি তো বললে, তুমি সিক্রেট ভাবে কাজ করেছো,এরপরেও তোমার নাম জাফর অব্ধি কি করে গেলো?
-অইতো যেভাবে আমি জাফরের খোঁজ পেয়েছি।এগুলো খবর তো হাওয়াই ভাসে রে ভাই।
তবে এখানে আমাকে ছোবল মারা প্রাণী টা সর্বদা আমার সঙ্গেই থাকে,আমার একমাত্র বডিগার্ড বাবলু।শালা টাকা গিলে, নিউজ উপড়ে দিয়েছে।
-হাইরে টাকা রে টাকা!
জাফর বাড়ি ফেরার পর চিন্তা করছে, কিভাবে তীব্রকে থামানো যায়।তীব্রকে থামানোর জন্য যদি ওকে খুন করে তবে বিপদ আসতে পারে,তীব্র যদি কোনো থানা বা জেলায় থাকতো ওকে গুম করে দেয়া যেতো।এদিকে জাফরের সহজ ভাষা তীব্র মাথায় নেয়ারও ব্যক্তি না।
জাফরের পার্টনারদের সাথে তীব্রকে নিয়ে বেশ পর্যালোচনা চলছে।
চলবে…………