#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_রিয়া_খান
-জানিনা নিজেকে এই মুহুর্তে কোন শ্রেণীতে রাখবো,সদ্য বিবাহিতা? সদ্য ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাওয়া প্রেমিকা? নাকি সদ্য বিধবা?
চোখের সামনে অন্তুর মৃত লাশটা। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি, অন্তুর চলে যাওয়াটা ভেতরে কোনো আলাদা অনুভূতি আনতে পারে নি।এই তো দু ঘন্টা আগে দুজন দুজনের হাতে হাত রেখে কথা দিচ্ছিলাম সারাজীবন একসাথে চলবো,দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবো।আমাদের সংসারটাকে সুন্দর করে সাজাবো।
আর সেই সংসারটাকে একদিনের পূর্ণতা দিতে পারলাম না আমরা।
দু বছর প্রেমের সম্পর্কের পর অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে দুজনের সম্পর্কটা আমাদের পরিবারে জানাই।বিয়ের জন্য রাজি হতেই অন্তু দেরি না করে সব গুছগাছ করে ফেলে আমাদের বিয়ের জন্য।
বছর খানেক আগে অন্তু প্রমোশন পেয়ে এএস আই হয়েছে। তাই সবটা গুছিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো আমার বাড়িতে,বাবা প্রথমে রাজি না হলেও অনেক বলে কয়ে রাজি করানো হয়।আমার বাবা একজন পলিটিশিয়ান, নবীনগর থানার এমপি ।অনেক ভালো ভালো জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে বড় বড় বিজনেস ম্যানরা এসেছে, বাবার নজর সেদিকেই ছিলো।তাই বাবার সামনে অন্তুর মতো একটা ছেলেকে দাঁড় করানোটা খুব কষ্টসাধ্য হয়েছিলো।
আজ আমাদের বিয়ে ছিলো,আমার খুব ইচ্ছে ছিলো বিয়ের দিন শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় যে গাড়িতে যাবো,সে গাড়িটা অন্তু চালাবে,আর পাশে আমি বসে থাকবো।ঠিক তাই হলো আমার মন রক্ষার্থে ।অন্তু গাড়ি চালাচ্ছিলো আর আমি পাশে বসে ছিলাম।দুজনে কত শত গল্প করছিলাম।সারাটা পথ হেসে খেলে যাচ্ছিলাম।
সাভার থেকে মির্জাপুরের দিকে যাচ্ছিলাম।অন্তুদের বাড়ি মির্জাপুরে।
রাত ৯ টা বাজে। চৌরাস্তা অব্ধি আসার পর গাড়িটা হঠাৎ আপনা আপনিই থেমে গেলো।অনেক্ষণ ভরে স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করলো গাড়িটা,কিন্তু লাভ হলো না।গাড়িতে কি হলো সেটা দেখার জন্য বেরিয়ে গেলো অন্তু,আমি বসেই রইলাম।মোবাইলে ফ্লাশ লাইট অন করে গাড়ির সামনে গিয়ে অন্তু দাঁড়াতেই চোখের সামনে দেখতে পেলাম একটা কালো রঙের ছায়া অন্তুকে ক্রস করে গেলো।আর অন্তু সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো!
আর এখন মৃত লাশ হয়ে আমার সামনে শুয়ে আছে!
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ডান চোখ দিয়ে এক বিন্দু জলকণা গড়িয়ে পড়লো মধ্যমার, আঙুলের সাহায্যে জলের বিন্দুটা সরাতে যেয়েও কেনো জানি মায়ায় পড়ে গেলো এই এক ফোঁটা অশ্রুর।তাই এটা আর মুছলো না।গাল বেয়ে জলকণাটা পড়তে পড়তে গালেই শুকিয়ে গেলো।
অন্তুর পড়ে যাওয়ার পর মধ্যমা সাথে সাথে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে, রাস্তার মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়,কিছুক্ষণের মধ্যে বরযাত্রীর বাকি গাড়িগুলো এসে থামাতেই, অন্তুর এই হাল দেখে সাথে সাথে নিকটবর্তী হসপিটালে নেয়া হয়।কিন্তু হসপিটালে নিয়ে কোনো লাভ হয় না,অন্তুর স্পট ডেট হয়। গত দু ঘন্টা ধরে মধ্যমা কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে গেছে।যেনো ভেতরের সমস্ত চোখের জল শুকিয়ে গেছে গত দু ঘন্টা কেঁদে।
মধ্যমার বাবা জালাল শেখ আর তার ছেলে সীমান্ত শেখ খবর পেয়ে সাথে সাথে এসে পৌঁছায় হসপিটালে। থানার পুলিশ এসে হসপিটালে জড়ো হয়।থানার ওসি লাশটা দেখে ছিটকে যায়।
মনে হলো এরকম মৃত্যুর দৃশ্য সে আগেও দেখেছে। থানার ওসি খোরশেদ রহমান, সাথে সাথে রাজারবাগ স্পেশাল ব্রাঞ্চে খবর দিলো।
-বুঝলাম না আপনি নিজে ইনিভেস্টিগেশন না করে,এই কেস কোথায় পাঠাচ্ছেন?
-স্যার যা করছি ভালোর জন্য করছি।এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু না।
-দেখুন আমি কিন্তু আগেই বলে দিচ্ছি আমার মেয়ের বারণ আছে জামাইয়ের কোনো পোস্ট মর্টেম হবে না।মেয়ে চায় না জামাইয়ের মৃত শরীরটা কাটা ছেঁড়া হোক।
-স্যার আই থিংক তার কোনো প্রয়োজনও হবে না। আমি এ মাসেই রাজারবাগ থেকেই পোস্টিং নিয়ে এখানে এসেছি।ওখানে এরকম কেস পেয়েছিলাম বেশ কয়টা।
এরকম রহস্যময় মৃত্যু আপনার মেয়ের জামাইয়ের ই প্রথম না।এর আগেও আরো হয়েছে।এমনকি কাল সকালেও জানা যাবে আরো কিছু মারা গিয়েছে।
জালাল শেখ ধমকের স্বরে বললো,
-আপনারা পুলিশ রা কি করছেন তাহলে?কে এই রাস্কেল? এটা তো অনেক ভয়াবহ পরিস্থিতি। আজ আমার মেয়ের জামাইয়ের মার্ডার হলো হতে পারে কাল আমার মেয়ে বা আমার ছেলেকে মারলো।
-সবার ধারণা এটা সিরিয়াল কিলারের কাজ।যত দিন যাচ্ছে কেসটা সলভ করা খুব জটিল রূপ নিচ্ছে স্যার!এসবি ও সি আইডিতে এর তদন্ত চলছে।
-দেখুন অফিসার আমি অতো কিছু জানি না, আমি খুনিকে হাজির দেখতে চাই,এট এনি কস্ট! যত টাকা লাগে, পাওয়ার ফোর্স লাগে দেবো আমি।কিন্তু আমার অই ক্রিমিনালটাকে চাই।
খোরশেদ রহমান শান্ত গলায় বললো,
-স্যার আপনার মেয়ের সাথে কথা বলা যাবে একটু?
-কেনো?
-কিছু ইম্পোরট্যান্ট কুইচ্শেন ছিলো। জানতে পারলে আমাদের ইনিভেস্টিগেশনে সুবিধা হতো যেহেতু পোস্টমর্টেম করতে দেবেন না।
-ঠিক আছে আসুন।
জালাল শেখ খোরশেদ রহমানকে নিয়ে মেয়ের কাছে গেলো।খোরশেদ মধ্যমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করলো,
-মা তুমি কি আমায় কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?
-জ্বী বলুন।
-অন্তুর সাথে অমন টা হওয়ার আগে কোথায় ছিলে মা?
-গাড়িতে বসেছিলাম।
-তুমি কি কি দেখেছো মা বলবে একটু?
-চৌরাস্তা অব্ধি যাওয়ার পর হঠাৎ করে গাড়িটা থেমে যায়। অন্তুর গাড়িটা একদম নতুন ছিলো, এই তো গত সপ্তাহে কেনা গাড়ি।এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার কোনো ওয়েই নেই।গাড়িতে ডিজেলও ছিলো পর্যাপ্ত। তবুও গাড়িটা থেমে রইলো।গাড়ির কি হলো ভেবে অন্তু বাইরে বের হলো, আমাকে ভেতরে থাকতে বললো আমি বসে রইলাম,হাতের চুড়ি গুলো দেখছিলাম। অন্তু চাকা গুলো ঠিক আছে কিনা সেটা দেখছিলো,দেখলো ঠিক আছে তারপর গাড়ির সামনে দাঁড়াচ্ছিলো আমি তখনি ওর দিকে তাকাই।আর দেখতে পেলাম ওর পাশ দিয়ে নাকি ওর উপর দিয়ে একটা কালো রঙের ছায়া গেলো।আর ছায়াটা সরে যেতেই অন্তু কোনো কথা না বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
কথাগুলো মধ্যমা ঠোঁট কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে বলছিলো।ভেতরটা ফেঁটে আসছে অই দৃশ্য মনে করার সাথে সাথে।
খোরশেদ রহমান অলরেডি সেখানে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছে, রাস্তার ঠিক যেখানটাই ঘটনা ঘটেছে সেখানেই চলে গেছে পুরো ফোর্স এরিয়াটা ঘেরাও করে নিলো।
এবং বিভিন্ন ক্লু খুঁজতে লাগলো।কোথাও কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না।সবাই ফিরে যাবে এমন সময় খেয়াল হলো একটা জায়গায় দেখা হয় নি।সেটা হলো গাড়ীর ছাদে।
ওখানে লাইট ফোকাস করতেই কয়েক ফোঁটা রক্ত দেখা গেলো।মধ্যমার জবানবন্দী অনুযায়ী অন্তু গাড়ীর ছাদে আসে নি কোনো ভাবেই।
সাথে সাথে রক্ত সংরক্ষণ করে টেস্টিউবে করে ল্যাবে পাঠানো হলো।
-বাবা ওটা মানুষ ছিলো না।কারেন্টের শক দিয়েও মানুষ এতো তাড়াতাড়ি খুন করতে পারে না। ওটা কোনো কিছুর আত্মা ছিলো আমি শিউর।আমি নিজের চোখে দেখেছি বাবা ওটা একটা ছায়া ছিলো শুধু।অই ছায়াটার সাথে অন্তুর হয়তো কোনো শত্রুতা ছিলো তাই ওকে মেরে ফেলেছে বাবা!তাহলে আমায় কেনো জীবিত রেখেছে!
কথা গুলো বলে বলে মধ্যমা কেঁদে যাচ্ছে।কিন্তু যতটা কাঁদছে অন্তুর চলে যাওয়া নিয়ে তাঁর থেকে বেশি কাঁদছে অন্তুর অই মৃত্যুর দৃশ্য মনে করে।
-মধ্যমা! মা আমার কান্না করে না আর তুমি না সাহসী মেয়ে?সাহসী মেয়েরা কাঁদেনা।তুমি কাঁদলে অন্তুর আত্মা কষ্ট পাবে।
কিছুক্ষণের মধ্যে অন্তুর মাও এসে গেলো হসপিটালে, অন্তুর বাবা নেই। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে অন্তুর মা বেশ কয়েকবার রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।তাঁর উপর উনি হাই ব্ল্যাড প্রেশারের রোগী।
হসপিটালে এসে অন্তুর ডেডবডির সামনে যেতে না যেতেই
“ওরে অন্তুরে” উক্তিটা উচ্চারণ করতে না করতেই আবার সেন্সলেস হয়ে গেলো।আলাদা একটা কেবিনে নিয়ে উনাকে স্যালাইন করে রাখা হলো।
-স্যার আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, রাসেল এতো সকালে কি মনে করে?
-সরি স্যার ফর ডিস্টার্ব ইউ, বাট আই হ্যাভ নো ওয়ে স্যার।
-ইট’স ওকে।সরকারি চাকরিতে কখনো ডিস্টার্ব হতে নেই,বলো তুমি।
-ইয়েস স্যার।স্যার সাভারের নবীনগর থানা থেকে নিউ কেস এসেছে রাতে । নবীনগর থানার এমপি জালাল শেখের একমাত্র মেয়ের জামাই ASI অন্তু রহমানের মার্ডার হয়েছে আর তাঁর মৃত্যুর ছাপ গুলোতে সেই একই ক্লু দেয়া।গলায় কন্ঠস্বর বরাবর ছিদ্র,নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ ।গাড়ীর ছাদের উপর ব্ল্যাড পাওয়া গিয়েছে, ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে জানা গেছে যে ওটা শূকরের রক্ত। কিন্তু স্যার ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো ভিক্টিমের স্ত্রী নাকি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর দৃশ্য দেখেছে।জবানবন্দী থেকে জানা যায় যে, একটা ছায়া নাকি অন্তুর উপর দিয়ে যায় আর অন্তু সাথে সাথে মাটিতে নেতিয়ে পড়ে।
-রাসেল!
-ইয়েস স্যার।
-তোমার কি মনে হচ্ছে এখনো এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ?
-অবশ্যই স্যার এই কেস আমাদের কাছে আজকেই প্রথম না, সেম কেস সলভের উদ্দেশ্যে আমরা রাতের পর রাত বিনিদ্রায় কাটাচ্ছি।
-তুমি কি জানো গত রাতে আরো দুটো কেস এসেছে?প্রত্যেকটাই ভিন্ন জায়গার।
-স্যার প্রেদাত্মা বলতে কিছু নেই,এই গুলো কেবল ই আমাদের মস্তিষ্কতে ঘটা হ্যালুসিনেশন।এটা যদি কোনো প্রেদাত্মার কাজ হয় তাহলে সে দুজনকেই মেরে ফেলতো,একজনকে কেনো বাঁচিয়ে রাখবে?
মুতালেব হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-রাসেল তুমি বরং এক কাজ করো , কাল রাতে যারা যারা মারা গিয়েছে খোঁজ লাগাও তাদের কারো সাথে কোনো লিংক আছে কিনা।
-স্যার আমার বিশ্বাস বরাবরের মতো এবারও একরমই তথ্য বের হবে, “কারো সাথে কারো কোনো লিংক নেই”।স্যার ছোটো মুখে একটা বড় কথা বলি আমাদের দিয়ে এই কেসটা সলভ করা সম্ভব না, আপনারা উপর কর্মকর্তা রা যদি ব্যাপারটা মাথায় না নেন তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে দেরি নেই।
মুতালেব হোসেন শান্তস্বরে উত্তর দিলো,
-প্রশাসন জানে কখন কোন স্টেপ নিবে।তাড়াহুড়োর কাজ কখনো ভালো হয় না।তুমি বলার আগেই আমি হেড অফিসে জানিয়ে দিয়েছি।এবার কাজটা যার হাতে যাবে সে জানে কিভাবে কি করবে।
-কে সলভ করবে স্যার?আমাদের ব্রাঞ্চের?
-সেটা সময় হলেই বুঝবে।
রাত ১০ টা, স্থান রাজারবাগ ।
এসবির একটা ভবনের, প্রশাসন কক্ষে বিশাল আয়তাকারাকৃতির কাঁচের টেবিলের চারপাশে উপর পদস্থ কর্মকর্তাদের বিশেষ মিটিং সভা বসেছে।যেখানে উপস্থিত DIG, Add DIG, ও বেশ কয়েককজন SP,Add SP, ASP ,Add ASP, OC.
টেবিলের চারপাশে প্রতিটি চেয়ার পরিপূর্ণ শুধু মাত্র একটা চেয়ার খালি সেই চেয়ারটা DIG স্যারের বাম পাশে অবস্থিত। মিটিংয়ে সবাই উপস্থিত হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে।শুধু মাত্র একজনের অনুপস্থিতির কারণে থেমে আছে আজকের আলোচনা।এতে কেউ বিরক্তবোধ না করলেও একজন বেশ বিরক্তবোধ করছে।
সামনে থাকা পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে ডিআইজি মোশারফ হোসেন স্যারের উদ্দেশ্যে এডিশনাল এসপি ইফরান শেখ বললেন,
-স্যার ছোটো মুখে একটা বড় কথা বলি, মনে কিছু নেবেন না প্লিজ।কথাটা না বলে পারছি না। যার জন্য মিটিং থেমে আছে সেই ঘটনা আজ নতুন না, প্রতিবারই একই ঘটনার স্বীকার হচ্ছি আমরা। সময়ের মূল্য না দিলে হয়তো আমাদের ই লস।
-মিস্টার ইফরান আপনি সঠিক কি বলতে চাইছেন?সেটা স্পষ্ট ক্লিয়ার করুন।
-স্যার কি আর বলবো বলেও তো লাভ নেই।সে তো স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা না শুধু, আপনাদের ভেতরে স্পেশাল জায়গায় স্থান প্রাপ্ত এসপি।
একজন এসপি হয়ে উনি এমন ইনডিসিপ্লিন কেনো , সে হিসেব মিলে না। আজ অব্ধি দেখলাম না কোনো সময় উনি টাইমলি এলেন।
-মিস্টার ইফরান, ভুলে যাবেন না যার নামে বলছেন সে আপনার সিনিয়র। আর সময় দেখাচ্ছেন আপনি?এই যে আপনি যে সময়টা এসি রুমে বসে কাটাচ্ছেন। এই সময়টাই সে দেশের কাজে খাটাচ্ছে, তাই তাঁর এতো দেরি হচ্ছে। একজন এসপি বলেই যে তার সমস্ত দায়িত্ব তার গার্ডদের উপর ছেড়ে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে হুকুমদারী করে দিন কাটাবে সেরকম ছেলে তীব্র না।ওর র্যাংক যাই হোক নিজের পরিশ্রম আর বুদ্ধির জোরে তীব্র আমার উপরে চলে গেছে।
আমি ওর কাজের ফ্যান ওর রূপ দেখে না। যদি পারেন ওর পেছনে সমালোচনা না করে ওর মতো হওয়ার চেষ্টা করুন,সেটা সবার জন্যই মঙ্গলকর।
ইরফান শেখ মাথা নিচু করে উত্তর দিলো,
-ওকে স্যার,এন্ড সরি স্যার।
-ইট’স ওকে।
– ডিপার্টমেন্টের আইজি, এডিশনাল আইজি থেকে শুরু করে সকল সিনিয়ররা এই এসপিকে নিয়ে এতোটা মাতামাতি করে মনে হয় নিজের ছেলেকে নিয়েও এতোটা মাতামাতি করে না। আর শালা তীব্র একটু র্যাংক উপরে বলে উঠতে বসতে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সে আমার সিনিয়র অফিসার। সমস্যা নেই আর দুটো মাস আমিও আসছি আপনার র্যাংকে মিস্টার সাফওয়ান রেজা তীব্র, আমিও দেখবো তখন কি বলে আমায় চুপ করান!(মনে মনে)
Add DIG স্যার মোশারফ হোসেন স্যারের উদ্দেশ্যে বললো,
-স্যার তীব্র তো বান্দরবন গিয়েছে পরশু তাই না? ও কি ফিরেছে?
-বিকেল পাঁচটায় তীব্র ঢাকার মাটিতে পা ফেলেছে,এতোক্ষণে চলে আসার কথা। কল দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার রিসিভ করছে না। হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছে,নাহলে তীব্রর ভেতর এতোটা সাহস হয় নি বিনা কারণে আমার ফোন রিসিভ করবে না ।
-জ্বি স্যার আমারও এই ব্যাপারে এক মত।যদি আমরা প্রত্যেকেই তীব্রর মতো এক্টিভ হতে পারি তাহলে দেশে করাপশন অনেক হারে কমে আসতো। দুঃখ জনক হাতের পাঁচ আঙুলের মতো আমাদের ডিপার্টমেন্টেও অমিল। আর কিছু মানুষ তো তাদের পজিশনের জন্য মাটিতে পা ফেলে না। ওদিকে তীব্র বসে বসে হুকুমদারী করে, জুনিয়রদের ওপর ভরসা করে বসে না থেকে নিজেই কোমর বেঁধে ময়দানে নামে।
-আধুনিক যুগের ছেলে ওরা,চিন্তা ভাবনা আর কাজের গতি উভয় ই সমান হারে আধুনিকতায় ভরপুর।বরাবর ই ক্যাডেটের ফার্স্ট বয় থেকেছে ও।
ওর ট্যালেন্ট লা জবাব!
আমি আজ অব্ধি তীব্রর সাথে থেকে বুঝি নি ওর নেক্সট চাল কি হবে।
-একদম বাবার মতো সাহসী, যদিও একটু বেপরোয়া আছে তবে কাজ দিয়েই সন্তুষ্ট ডিপার্টমেন্ট।
তীব্রকে নিয়ে সিনিয়রদের আলোচনা শুনে, ইরফান শেখের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। তীব্রকে কেনো এতো হিংসে করে উনিই ভালো জানেন।
একটা নাইট ক্লাব যেখানে রাত হলেই তরুণ তরুণীরা হ্যাং আউটের জন্য ভীড় জমায়। প্রচুর গান বাজনা হচ্ছে, এক পাশে ডান্স স্টেজ, যেখানে নাচানাচি লাফালাফি হচ্ছে ।
গানের শব্দের কারণে আর কোনো আওয়াজ কানে আসছে না। নাইট ক্লাবের ভেতরটা সুবিন্যস্ত ভাবে সাজানো এটাকে অবশ্য ক্যাসিনো বলাও চলে,বিভিন্ন ডিলার, বিজিনেস ম্যানরা ড্রিঙ্কস আর জুয়া খেলা নিয়ে ব্যস্ত, আরেক পাশে ড্রিঙ্কস বার যেখানে বসে বসে অনেকেই একাকীত্ব যাপন করছে। আবার আরেক পাশে ডিস্কের উপর নাচানাচি হচ্ছে।
আর আরেক পাশে রেস্টুরেন্ট স্টাইলে চেয়ার টেবিল বসানো, যেখানে অনেকে বসে গল্প করছে।
এক নামে জায়গাটাকে ফাইভ স্টার নাইট ক্লাব বা ফাইভ স্টার ক্যাসিনো বললে মানাবে।
একটা চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পায়ে পা তুলে, মাথা উপরের দিক করে
সিগারেট টানছে তীব্র হাতে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস এর বোতল,কোনো নেশা দ্রব্য নয়।তীব্রর নেশা করার অভ্যেস নেই,তবে এখানে বসে বসে মানুষকে রং তামাশা আর নেশা করতে দেখতে খুব আনন্দ পায়।
-স্যার দশটার বেশি বাজে দশটায় আপনার মিটিং ছিলো।
তীব্র ঠোঁটের ভাঁজে থেকে সিগারেট সরিয়ে ওর বডি গার্ড
রিফাতের দিকে ফিরে তাকালো,শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো,
-মিটিং ছিলো তাই না?
-হ্যাঁ স্যার।
-কল এসেছে কয়বার?
-স্যার, মোশারফ স্যার তিনবার কল করেছিলো,
-যেতে হবে তো তাহলে, ইমারজেন্সি দরকার মেবি।এই এসবির সিনিয়র গুলোও না, কেমন যেনো বেবুঝ ধরনের লোক! কতবার বলি রাত করে মিটিং না দিতে, রাতের মিটিংয়ে আমার এলার্জি আছে । তুমি বলো রিফাত,রাত করে মিটিং দেয়ার পর আজ অব্ধি আমি টাইমলি যেতে পেরেছি?
-না স্যার!
-পারবোও না কোনো দিন। রাত হলো বিনোদন নেয়ার সময়,রাত মানে ব্রেইন বডি বিশ্রামের সময়।
-স্যার যাওয়া যাক তাহলে?
-ও হ্যাঁ চলো উঠি।
হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, একরাশ বিরক্তি নিয়ে এসবির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
-মে আই কাম ইন স্যার?
কনফারেন্স রুমের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তীব্র, DIG স্যার তীব্রকে আসতে বললো,
-তীব্র আসো।
ভেতরে আসতে আসতে তীব্র সবাইকে সালাম দিলো,
-আসসালামু আলাইকুম।
উপস্থিত সবাই উত্তর নিলো,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
ভেতরে আসতেই তীব্র সোজা DIG স্যারের পাশের খালি চেয়ারটাতে বসে পড়লো,হাতে একটা ফাইল ছিলো, ফাইল থেকে কয়েকটা পেপার বের করতে নিলো,
মোশারফ হোসেন তীব্রকে জিজ্ঞেস করলো,
-এতো লেট হলো কেনো তীব্র?
পেপারস গুলো ঘাটতে ঘাটতেই উত্তর দিলো,
-বউ নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম স্যার, হঠাৎ করেই দেখি মোবাইল নেই, চোর পকেট কেটে নিয়ে গেছে , সেটা খুঁজতে গিয়েই এতো লেট হলো।
ইরফান শেখ তুচ্ছার্থক হাসি দিয়ে তীব্রকে বললো
-আপনার মোবাইল চুরি!এটাও বিশ্বাস করতে হবে?কোনো প্রেদাত্মার কলিজায়ও সাহস হবে বলে আমার মনে হয় না।
-আরে আমি কি একটা বারও বলছি আমার ফোন চুরি হয়েছে?
-তাহলে কার?
-আমার বউয়ের ফোন ছিলো,অনেক সোজা শান্ত মেয়েটা। তাই চোর সহজেই নিতে পেরেছে।
-তাহলে স্যার আপনাকে এতোবার কল করেছে একটা বার রিসিভ করেন নি কেনো?
-কি করে করবো?বউ আমার ফোনটা নিয়ে নেয়, আর বলে “যাও আগে আমার ফোন উদ্ধার করে আনো তারপর তোমার ফোন ফেরত পাবে”আমি কত করে বললাম নতুন আরেকটা কিনে দেই, বউ আমার শুনলোই না, সে আছে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার অই ফোনটাই লাগবে।
-স্যার মাঝে মাঝে আপনার ফালতু জোকস শুনতেও বেশ ভালোই লাগে।খুব মশলা মাখিয়ে বলতে পারেন।
তীব্র হেসে উত্তর দিলো,
-আমারো গরম তেলে পানি ছিটকে দিতে বেশ ভালো লাগে। আলদা মশলার দরকার হয় না।
তীব্রর পাশে থেকে DIG স্যার বলে উঠলো,
-তর্কাতর্কি বন্ধ করে আমরা কাজের কথায় আসি।
-তীব্র উনার দিকে ফিরে বললো,
-কেনো স্যার এগুলো কি কাজের কথা না?
-তীব্র সিরিয়াস মুডে আসো, তোমার জন্যই অপেক্ষা চলছিলো এতোক্ষণ।
-চার্লি চ্যাপলিনের অভিনয় গুলো হয়তো দেখেন নি স্যার ও কিন্তু কখনো হাসে না কিন্তু ওর অভিনয় দেখে সবাই হাসে।
মোশারফ রহমান গম্ভীর্য ভাবে আবার বললো
-তীব্রওও
– জ্বী স্যার বলুন আমি রেডি।
-ওদিকটার কি খবর?
-সাংবাদিকরা এখনো পৌঁছায় নি স্যার,পৌঁছালেই খবর শুরু হয়ে যাবে।
মোশারফ রহমান এ ব্যাপারে আর প্রশ্ন করলো না,কারণ তীব্র এখন রাগী মুডে আছে,ওর রাগ বুঝার উপায় হলো হাসির ছলেই হোক আর যেভাবেই হোক প্রচন্ড তাতলামো করে,ছোটো বড় কাউকেই মানে না।
-ওকে।এখন তোমাকে নতুন একটা ইস্যুতে জড়াতে হবে তীব্র।আই থিংক এই কেসটা একমাত্র তুমিই হ্যান্ডেল করতে পারবে, টিমে যাকে নেয়ার ইচ্ছে তাকে নাও,ওসি মুতালেব তোমাকে সাহায্য করবে সকল ধরনের,সি আইডি অফিসেও বলা আছে,তুমি যেকোনো সময় সাহায্য নিতে পারো। আমার এই কেস সলভ করা চাই। শুধু ঢাকা শহর হলে কথা ছিলো,ব্যাপারটা ভয়ানক ভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে। প্রথম প্রথম তোমার ঘাড়ে এটা চাপাই নি কারণ এটাকে সাধারণ একটা কেস ভেবেছিলাম। গত রাতে নবীনগর থানার এমপির একমাত্র কন্যার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।পলিটিশিয়ানদের বেশ চাপ আসছে এসবির দিকে।
বিকেলের দিকে ইস্যুটা নিয়ে বসেছিলাম, যতগুলো কেস দেখলাম প্রতিটি কেস একটাই কমপ্লেইন,যতগুলো ছবি দেখলাম প্রত্যেকের মৃত্যু একই নিশানার ইংগিত দিচ্ছে। কেসটার চক্র অনেক গভীর।বেশ কয়েকজন পুলিশ, সি আইডি এমনকি আমাদের এসবির কিছু কর্মকর্তা এটার ইনিভেস্টিগেশন করেছে, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন হলে তুমি তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিও,মুতালেব হোসেন তোমাকে সাহায্য করবে।
আপাততো এই ফাইলটা পর্যবেক্ষণ করো।
-ওকে স্যার, তবে আমি দুই একের মধ্যে এই কেসটাতে হাত লাগাতে পারবো না।
-কাজটা তুমি কখন শুরু করবে সেটা একান্তই তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।যদি বছরও লেগে যায়, এর সমাপ্তি তোমার হাতেই হবে আমি সেই আশায় থাকবো।
-ওকে স্যার থ্যাংক ইউ।আই উইল ট্রাই টু মাই বেস্ট।
তীব্রর দিকে একটা ফাইল বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-এখানে তোমার প্রয়োজনীয় সমস্ত পেপারস ডিটেইলস আছে,কাজে লাগতে পারে।
-ওকে।
-যেভাবে মৃত্যুর হার বেড়ে চলছে না জানি আজ রাতে এ ভয়ানক মৃত্যু লিখা আছে কার কপালে।
তীব্র পেপারসে চোখ বুলাতে বুলাতে উত্তর দিলো,
-চিন্তা করবেন না স্যার আজ রাতে এই টাইপ মার্ডার হবে না। আপনি বরং অন্য কোনো চিন্তা করুন।
সবাই নিরব থাকলেও ইরফান শেখ তীব্রর দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-স্যার আপনি কি করে জানলেন আজ রাতে এরকম মার্ডার হবে না?
তীব্র রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
-সব সময় সাধু সন্ন্যাসীরাই ভবিষ্যৎ বলতে পারবে তা তো না, আমরা সাধারণ মানুষরাও পারি কিছু ভবিষ্যৎ বলতে বা আন্দাজ করতে।
-কিন্তু কি যুক্তি আছে এই কথার?
-আজ বৃহস্প্রতিবার কিলার আজ সারা সপ্তাহে যা ইনকাম করেছে আজ রাতে সব টাকা উড়াবে, আর রাত ভর মাস্তি করে কাল সারাদিন ঘুমাবে। কাল শুক্রবার কাল রাত বারোটার আগে মার্ডার হবে না, কারণ কিলাররা আর যাই হোক শুক্রবারকে পবিত্র দিন বলে বিশ্বাস ও মর্যাদা করে।
-যে কি না এতো মানুষ মারছে প্রতিরাতে সে মানবে শুক্রবার?
-শুধু কিলার না ব্যাপারটা সবার মধ্যেই ঘটে, আমাদের পুলিশের মধ্যেই কি আর না আছে! ঘুষ খায় সেও জুম্মার নামাজ পড়তে যায় যে সৎ সেও জুম্মার নামাজে যায়। এখন কি বলবেন ইরফান শেখ?
– স্যার আপনার ভবিষ্যৎ বাণী কতোটা যুক্তিসংগত আছে এটা বুঝবো কিভাবে?
-বুঝার উপায় হলো ধরুন আজ আপনার ওয়াইফের বার্থডে, কিন্তু আপনার মনে নেই, এখন বাড়ি ফিরে দেখবেন আপনার ওয়াইফ আপনার জন্য করলার ভর্তা, করলা ভাজি,করলার তরকারি করে রেখেছে।আশা করি বুঝতে পেরেছেন?
তীব্রর মুখে কথা শুনে ইরফান শেখের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো,আজ উনার স্ত্রীর বার্থডে তীব্র জানলো কি করে!আর উনি তো সত্যিই ভুলে গেছেন ব্যাপারটা। তবে তিন নাম্বারটাও মিলে নাকি দেখা যাক।
-এতো কিছু না ভেবে বেরিয়ে পড়ুন ইফরান সাহেব, ১২ টা ওভার হয়ে গেলে বউ কিন্তু বাপের বাড়ি চলে যাবে এই রাতেই।
-আপনি কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছেন স্যার?
তীব্র বাঁকা হাসির সাথে উত্তর দিলো,
-অবশ্যই আপনার সাথে আমার ইয়ার্কির সম্পর্ক নয়।
ইরফান শেখ চুপ করে আছে, বাকি সবাই ব্যাপার টা নিয়ে হাসলেও, ইরফান শেখ ব্যাপারটা নিয়ে গভীর চিন্তাই পড়ে গেলো।
-এই তীব্রর মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার আছে!
মিনিট দশেক কিছু কেস নিয়ে আলোচনা করার পর মিটিং শেষ হলো।
ইরফান শেখ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো, একে একে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সবাই শুধু বাদ রইলো ডিআইজি মোশারফ রহমান আর তীব্র।
-স্যার আপনাকে যে পেপারস দিলাম ওগুলো পাটোয়ারি স্যারের থেকে সাইন করে এনে দেবেন ।
-তুমিই যাও।
-আমার কাজ আছে,আপনি কষ্ট করে কাজটা এগিয়ে দিবেন।
-কিসের পেপারস এগুলো?
-আগামী ৩৬ ঘন্টায় ৩৮ টা মার্ডার হতে পারে, তার ই নোটিশ ,আর অনিশ্চিত কাল র্যাবে পোস্টিংয়ের জন্য এপ্লিকেশন।
-হঠাৎ এতো গুলো একসাথে মার্ডার ?
-কারণ ওরা দেশ ধ্বংস করে দিলেও এদেশে ওদের বিচার নেই।
-তীব্র তোমার রক্তের তেজস্ক্রিয়তা একটু কমাও। সবার জন্য মঙ্গল।
তীব্র কথাটার কোনো তোয়াক্কা না করে তুচ্ছ হাসি দিলো।
-পাটোয়ারী স্যার তোমাকে দেখা করতে বলেছিলো,
তীব্র স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
-দিনের বেলা করে নেবো, রাতে মুড থাকে না কাজ কর্মের । বললে তো বুঝেন না রাতের বেলা মিটিং আমার খুবই অপছন্দ।
মোশারফ রহমান তীব্রর কথা শুনে হেসে দিলো।
-তীব্র তুমি কি এখনো রেগে আছো?
তুচ্ছার্থক হাসি দিয়ে তীব্র উত্তর দিলো,
-আপনারা সিনিয়ররা চাবুক ও মারবেন আবার জিজ্ঞেস করবেন ব্যাথা পেলে?আমার কথা তেঁতো লাগলেও ভেবে দেখবেন আপনারা, ডিপার্টমেন্ট সিনিয়ররা ব্যাবহার করছেন ছিপ বড়শীর মতো। ছিপটা এসবি থেকে ধরে রেখেছেন আর বড়শী একেক সময় একেক জায়গায় কখনো র্যাব ব্রাঞ্চে,কখনো সিভিল,আবার কখনো একটা জেলা হাতে দিয়ে বলেন সামলে রেখো, আবার এমনও করছেন দুদিন পর পর দেশের বাইরে পাঠাচ্ছেন এটা করো ওটা করো, কবে যেনো ইরাক ফিলিস্তিনের যুদ্ধেও পাঠিয়ে দেন!আবার ঘুরে ফিরে বড়শী তুলে এসবিতে আনেন।হাতের পুতুল বানিয়ে নাচাচ্ছেন আবার বলছেন রক্তের তেজস্ক্রিয়তা কমাতে!
লম্বা গরম নিশ্বাস ছেড়ে মোশারফ রহমানের দিকে হাল্কা ঝুঁকে দাঁত চেপে বললো,
-যা হয়েছে আমার সাথে তাতে তেজস্ক্রিয়তা যে আরো বাড়ানো উচিৎ আপনারা সেটা ভালো করেই জানেন
স্যার!
তীব্রর কথা গুলো মাথার ভেতর এখনো ঘুরছে, ঘড়িতে এগারোটা পঁঞ্চান্ন মিনিট।বাড়ির সামনে কলিং বেল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরফান শেখ।
তীব্র আর ওর গার্ড রিফাত এসবি থেকে বেরিয়ে পড়ে , রাজারবাগ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর গাড়ি বাড়ির পথে যেতে নিলে তীব্র বারণ করে বসে, গাড়িটা অন্য দিকে ঘুরাতে বলে,
-স্যার কোথায় যাচ্ছি আমরা এখন?
খানিকটা কড়া স্বরে তীব্র উত্তর দিলো।
-পাত্রী খুঁজতে।
রিফাত প্রশ্ন না করে চুপ করে রইলো।
তীব্রর মন মেজাজ অটো সিস্টেম , এই ভাল এই খারাপ।তবে ওর রাগ গুলো তখনি বুঝা যায় যখন ভালো কথার বাঁকা উত্তর দেয়।
জীবনের কিছু ধাপ কঠিন রূপ নিয়ে সামনে এসে, জীবন নামক শব্দের উপর বিস্ফোরিত হয় আর দিয়ে যায় এক রাশ তেজস্ক্রিয়তা। যার রেশ মিশে সৃষ্টি হয় তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি!
চলবে……