তোকে_চাই
পার্ট_৩
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)
শুভ গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা এইটা সেই গ্যাং না যেটা ARN এর কথায় চলে?”
মিরা ওর জ্যাকেটের পকেটে গোপন ছোট্ট ক্যামেরাটা ভালোভাবে সেট করে নিয়ে বললো,
“ওহ মাই গড?ARN?মাফিয়া গ্যাংস্টার?”
শান্ত রিভলবারে বুলেট ঢুকিয়ে বললো,
“হুম,এই সেই ARN যাকে ধরার জন্য পুরো বাংলাদেশের সকল পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে।”
“যার কিনা মিনিটের মধ্যেই মানুষ খুন করতে একবারো হাত কাপে না।যে নিজেকে মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর বাদশা মনে করে”
রোজের কথায় সবাই অবাক হয়ে গেলো।রুমকি অবাক স্বরেই জিজ্ঞেস করলো,
“রোজ তুমি এতো কিছু কি করে জানো ওর সম্পর্কে?”
রোজ হেসে জবাব দিলো,
“আমি অনেকের সম্পর্কেই অনেক কিছু জানি।এই যেমন এখানে একজন Mr. Arrogant আছে যার কিনা অহংকারে মাটিতে পা-ই পড়ে না”
বলেই আড় চোখে তাকালো রিক্তর দিকে।
রিক্ত ফোনে কাজ করছিল।মূলত ট্র্যাকিং ডিভাইসের সাহায্যে এক্সাক্ট লোকেশন ট্র্যাক করার চেষ্টা করছিল।কিন্তু রোজের কথা শুনে রাগী চোখে তাকালো রোজের দিকে।আর তখনই রোজ হেসে উঠলো।বাকিরা রোজ আর রিক্তর এই চোখে চোখে কথা বলাটা না দেখায় জেরিন রোজকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“এভাবে হাসছো কেন?”
রোজ কিছু না চুপ করে রইলো।তখনই রিক্ত বললো,
“সবাই চুপ করো।ভুলে যেও না যে আমরা একটা কাজে যাচ্ছি।সো,স্টপ!
সবাই রিক্তর কথা শুনে চুপ করে রইলো।কেউ আর কিছু বললো না।
~ময়মনসিংহ মধুটিলা~
এই সেই মধুটিলা যা নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে প্রায় ১৪কিলোমিটার উত্তরে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেন্টের বনভিটার আওতায় প্রায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারীভাবে বিগত ২০০০সালে নির্মিত হয় মধুটিলা ইকো পার্ক।
গুপ্তচরের খবর অনুযায়ী পাচারকারী গ্যাংটা এখন এর আশেপাশেই রয়েছে।
রিক্ত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে যাও এবং কড়া নজর রাখো যেন কেউ এখান থেকে পালাতে না পারে।আর হ্যা,এটা যেহেতু পাহাড়ি এলাকা তাই নেটওয়ার্ক পাওয়া খুব কঠিন।তাই সবাই VPN কানেক্ট করে রেখেছো তো?”
সবাই একসাথে বললো,
“ইয়েস স্যার”
রিক্ত আবারো বলতে শুরু করলো,
“সবাই সাবধানে থাকবে।প্রয়োজনে শ্যুট করবে।কিন্তু দেখবে যেন কেউ মারা না যায়।তাহলে আমরা অনেক প্রমাণ হারিয়ে ফেলব।”
“ওকে স্যার”
“নাও চলো সবাই কাজে লেগে পড়ো।সাইফ ওও বাকি সবার সাথে যাও।আর রোজ তুমি আমার সাথে এসো।”
এরপর সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।আর নজর রাখতে লাগলো যেন কোথায় কি হচ্ছে তা কারো চক্ষুগোচর না হয়।
রিক্ত আর রোজ পাচারকারীদের ডেরায় গিয়ে দেখলো সেখান প্রচুর বন্দুকধারী গার্ডরা চারিদিকে পাহারা দিচ্ছে।
“রোজ কোনো যেন ভুল না হয়।ভুল হলে তোমাকে একদম ফায়ার করে দিবো।”
“হুহ,আমি আমার কাজ ঠিক মতোই করবো।রোজ কখনো নিজের কাজে গাফিলতি করে না।”
“ভালো।এখন চলো।”
এই বলেই রোজ আর রিক্ত সবার চোখের আড়ালে ভেতরে ঢুকতে নেয়।তখনি একজন গার্ডের চোখ পড়ে ওদের উপরে।রিক্ত পেছন থেকে ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে ধরতেই গার্ডটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
“বাহ স্যার বাহ!আপনার গুণ আছে বলতে হবে।”
রিক্ত বিরক্তিকর স্বরে বললো,
“তোমার এই ননসেন্স কথা রেখে সামনে চলো।আর হ্যা তুমি ক্যারাটে পারো?”
রোজ ভাব নিয়ে বললো।
“অবশ্যই পারি।সবই শিখেছি আমি।”
“হয়েছে হয়েছে।এতো ভাব নিতে হবে না।শোনো আমাদের এখনই এদের সবাইকে অজ্ঞান করতে হবে।অজ্ঞান কিভাবে করে জানো তো?”
রোজ ওর জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা স্প্রে বের করে বললো,
“আমি সাথে করে ক্লোরোফম নিয়ে এসেছি”
রিক্ত অবাক হয়ে বললো,
“এটা তো আমি আনতেই বলিনি কাউকে”
“আমি জানতাম এটার প্রয়োজন হবে।তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি।আর আমি তো এর আগেও অনেকবার সিআইডি টিমকে হেল্প করেছি।তাই এসব বিষয়ে আমার একটু হলেও অভিজ্ঞতা আছে”
রিক্ত আর কিছু না বলে রোজকে নিয়ে চলে এলো ডেরার পিছনের সাইটে।এরপর দুজনে মিলে এক এক করে কৌশলে সবাইকে অজ্ঞান করে মাটিতে ফেলে রাখলো।আর কেউ যাতে পালাতে না পারে তাই সবার হাত-পা বেঁধে দিলো।
রিক্ত আর রোজ সামনের দিকে আসতেই দুজন গার্ডের হাতে ধরা পড়লো।আর তখনি রোজ ওর জিন্সের পকেট থেকে একটা পেপার স্প্রে বের করে দুজনের চোখে স্প্রে করলো।তারপর ক্লোরোফম স্প্রে করতেই দুজনেই লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।কিন্তু বিপদ আসতে সময় লাগে না।বাকিরা যারা গার্ড দিছিলো সেখানে প্রায় ৮/৯ জন ছিলো।সবাই দেখে নিলো রোজ আর রিক্তকে।
এ অবস্থায় ওদের দুজনের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।তাই রিক্ত আর রোজ দুজনেই বাকি সবাইকে আসতে বললো ডেরার সামনে।
শুরু হয়ে গেলো ফাইট।রিক্ত একা নয় বরং রোজও সমান তালে সবাইকে মেরে একদম আধমরা করে ফেলছে।হঠাৎই পেছন থেকে একজন রোজের পিঠে বারি দেওয়ায় রোজ চিৎকার করে উঠে।রিক্ত তাকিয়ে দেখে রোজের চোখ থেকে পানি পড়ছে।কিন্তু রিক্ত কিছু করতে পারছে না।কারণ ওকে এখন ফাইট করতে হবে।তাই নিরুপায় হয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো রোজের দিকে।রোজ রিক্তর চোখের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো যে,
“আমি ঠিক আছি”
এর মধ্যেই বাকি সবাই এসে হাজির হলো।সাইফ,শুভ,শান্ত,সাহাফ সবাই গার্ডদের মেরে একদম আধমরা করে ফেলেছে।সবাই মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে।বাইরে এতো শোরগোলের আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসলো আর ৫/৬জন।এসেই এই অবস্থা দেখে বাকি গার্ডরা গুলি চালাতে লাগলো।
সাইফরা সবাই গাছের আরালে গিয়ে ওরাও গুলি চালাতে লাগলো।একে একে সবাইকে গুলি করা পর ওরা ডেরার ভেতরে গেলো।ডেরার ভেতরে গিয়ে যা দেখলো তার জন্য মোটেও কেউ প্রস্তুত ছিলোনা।রিক্ত আর সাইফের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো।কারণ ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা আর কিশোরী মেয়েদের আটকে রাখা হয়েছে।আর এক পাশে একটা মেয়ের সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভ হওয়ার চেষ্টা করছে একজন ছেলে।কথা হচ্ছে মেয়েটা আর কেউ নাহ,মেয়েটা রাইতা।রাইতার জামার হাত ছিড়ে গেছে।হাত আর মুখের অনেক অংশে আচরের দাগ।চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে ওর।চিৎকার করে বলছে ওকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু মানুষরুপি সেই জানোয়ারটা রাইতাকে ছাড়ছে না।যা দেখে রিক্ত আর নিজেকে আটকাতে পারলো না।সোজা গিয়ে ছেলেটাকে তুলে ওর বুক বরাবর লাত্থি দিলো।
বাকি সবাই ঘাবড়ে গেলো এখানে রিক্তদেরকে দেখে।সবার মুখেই আতঙ্কের ছাপ।কি করবে ভেবে না পেয়ে গুলি চালাতে লাগলো সবাই।গুলির আওয়াজে বাচ্চারা সবাই ভয়ে কেপে উঠলো।
সাইফ গিয়ে যে ছেলেটা রাইতার সাথে জোর-জবরদস্তি করছিলো তাকে মারতে লাগলো।রিক্ত আর সাইফ দুই ভাই-ই যেন মুহূর্তের মধ্যেই হিংস্র হয়ে উঠলো।দুই ভাই একসাথে ছেলেটাকে মারতে থাকায় ছেলেটার নাক,মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো।
রাইসা দৌড়ে গিয়ে রাইতাকে ধরলো।কাঁদতে কাঁদতে রাইতার চোখ লাল হয়ে গেছে।মুখ ফুলে গেছে।রাইতা রাইসাকে জড়িয়ে ধরে আবারো ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।মেরিনও রাইতার কাছে এসে ওর চোখের পানি মুছে দিলো।রোজ কোনো কিছু না ভেবেই ওর জ্যাকেট খুলে পড়িয়ে দিলো রাইতাকে।তারপর লেগে পরলো ফায়ারিং করতে।এতো এতো গুলি বর্ষণের ফলে বাচ্চারা আর মেয়েরা সবাই ভয়ে কুকরে গেলো।
সাহাফ,মিরা,জেরিন,শুভ,শান্ত,রাকিব,রোজ সবাই ফায়ারিং এ ব্যস্ত
রুমকি গিয়ে বাচ্চাদেরকে বললো,
“তোমরা ভয় পেয়ো না।আমরা তেমাদেরকে বাঁচাতে এসেছি।তোমরা সবাই আবার তোমাদের বাসায় ফিরে যেতে পারবে।এখন কান্নাকাটি না করে চুপ করে বসে থাকো এখানে।আর মেয়েরা তোমরা তো সাহসী তাইনা?তাহলে একদম কাঁদবে না।চোখের পানি মুছে নাও।আর বাচ্চাদেরকে একটু দেখে রাখো যাতে ওরা কোথাও না যায়।”
এই বলেই রুমকি ও সবার সাথে একত্রিত হয়ে শ্যুট করতে লাগলো।
সব কিছু ঠিকই ছিলো।কিন্তু হঠাৎই একটা ছেলের উপর চোখ যায় রোজের।যে কিনা গান তাক করে আছে রিক্তর উপরে।এই দেখেই রোজ এক দৌড়ে রিক্তর কাছে গিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।আর তখনি গুলির আওয়াজ আর রোজের চিৎকারে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।
রিক্ত ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
মিরা চিৎকার করে ডেকে উঠলো রোজকে।
“রোজজজজজজজজজ”
কিন্তু রোজ জবাব দিতে পারলো না।তার আগেই ঢলে পড়লো মাটিতে।
চলবে???
বিঃদ্রঃ আমি কিছু কথা বলতে চাই।গল্পের কেবল শুরু হয়েছে।মাত্র দুই পার্ট পরেই বেশ কয়েকজন বাজে মন্তব্য করেছেন।যা দেখে আমি কি বলবো বুজতেছিনা।আরে ভাই গল্পের শুরুতেই যদি আপনারা গল্পের থিম বুঝেই যেতেন তাহলে আমার আর লিখতে হতো না।সবার যে সবকিছু ভালো লাগবেই তা তো নাহ।তাই যাদের আমার গল্পটা ভালো লাগবেনা।তারা ইগনোর করুন।কিন্তু বাজে বিহ্যাভ করে নিজের বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয় দিবেন না প্লিজ।
আর গল্প নিয়ে আমি কিছু প্রশ্ন পেয়েছি তা হলো মাত্র ২১ বছর বয়সে সিআইডি টিমের মেম্বার কেউ কি করে হতে পারে?আমি কিন্তু গল্পটা মাত্র শুরু করেছি।তাই কেউ বিভ্রান্ত হবেন নাহ।গল্পের মাঝেই প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আপনারা।
আর একটা প্রশ্ন হলো,বিডিতে নাকি সিআইডি টিম নেই।আমি কোনো রকম যাচাই-বাছাই না করেই গল্প লিখছি।তো আমার কথা একটায়,বিডিতে সিআইডি টিম নেই তা আপনি কি করে জানলেন?আর বিডিতে যদি সিআইডি টিম নাও থাকে তাতে করে কি আমি সিআইডি নিয়ে লিখতে পারিনা?অবশ্যই পারি।কারণ গল্পটা কাল্পনিক।তার থেকেও বড় কথা সিআইডি টিম যদি এখন বিডি নাই থাকে তবে ভবিষ্যতে হবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নাই।
আর শেষ কথা,আপনাদের গল্পটা ভালো না লাগলে বলতো পারেন।আমি গল্পটা তাহলে আর লিখবো না।লিখবো,তবে তা নোটবুকে।
ধন্যবাদ।