তোমাকে ঘিরে আমারবঅনুভূতি?,পর্ব_১১,১২
Anika Fahmida
পর্ব_১১
অনু নিজের বাসায় চলে গেল। বিকেল বেলা অনু নিজের রুমে বই নিয়ে পড়াশোনা করছিল কিন্তু অনুর মাথায় শুধু আদ্রের চিন্তা ঘুরঘুর করছে। এই যেন মনে হচ্ছে অনুর সামনে আদ্র দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলছে,
–এই অনু এটাও লেখতে পারিস না তুই! কি পড়লি তুই এতোদিন? কিছুই তো পারিস না।
অনু বই বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। আর কারও চিন্তা অনুর মাথায় আসে না। আসতে দিতে চাইলেও অনু অন্য কারও চিন্তা মাথায় আনতে পারে না। এই দুইটা বছর খেতে গেলেও অনুর আদ্রের কথা মনে পড়েছে। পড়তে গেলেও আদ্রের কথা মনে পড়েছে। গোসল করতে গেলেও আদ্রের কথা মনে পড়েছে। ঘুমাতে যাওয়ার আগেও আদ্রের কথা মনে পড়েছে। অনুর মনটা খুব টানত আদ্রের ফোনটা একবার ধরার জন্য কিন্তু পরমুহূর্তেই অভিমানে অনু চুপ করে বসে থাকত। অনু বইয়ের দিকে তাকিয়েই মনে মনে বলল,
–তোমার কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না আদ্র। কেন আমার মনে, মগজে তুমি সবসময় ঘুরঘুর করো বলতে পারো? তুমি বলবে কি করে? তুমি তো আর আমার কাছে নেই। অনেক দূরে আছো তুমি।
এমন সময় অনুর ফোনে কল আসল। অনু ভেবেছিল আদ্রের ফোন কিন্তু না। অনু মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল বাংলাদেশী অচেনা নাম্বার। অনুকে কে ফোন করেছে এটা জানার জন্য অনু ফোন রিসিভ করে বলল,
–হ্যালো কে বলছেন?
–হাই অনু!আমি পল্লব।
অনু অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,
–আপনি আমার ফোন নাম্বার পেলেন কি করে?
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
–নেহার কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বারটা পেয়েছি। কেমন আছো তুমি?
অনু বিরক্তি স্বরে বলল,
–নেহা আমাকে না জিজ্ঞেস করে আপনাকে আমার ফোন নাম্বার কেন দিল?আর আপনিই বা আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন?
–আরে অনু তুমি নেহার উপর রাগ করো না। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি তাই ফোন দিয়েছি।
অনু গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
–কি বলবেন? বলে ফেলুন।
–আগে বলো কেমন আছো?
–হ্যা ভালো আছি।
–কি করছো?
–কিছু না।
–অনু তুমি আমার বন্ধু হতে কেন চাইছো না বলো তো?
–এমনি।
–এমনি এমনি কেউ বন্ধু হতে চায় না? আমি তোমার কথাটা বিশ্বাস করতে পারলাম না।
–বিশ্বাস না করলে আপনার সমস্যা। আমার না।
অনু ফোনটা কেটে দিল। নেহার কাজে অনু প্রচুর বিরক্ত হয়েছে। না জিজ্ঞেস করে ফোন নাম্বারটা নেহা কি করে দিল! অনু পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর আদ্রের কল আসল কিন্তু অনু ধরল না। ধরতে ইচ্ছে করলেও ধরল না।
ভার্সিটিতে কিছু ছেলে অনুকে ভীষণ বিরক্ত করছে। অনুর একদম ভালো লাগছে না। ছেলেগুলো অনুকে বিরক্ত করার জন্য পিছু পিছু হেঁটে বলতে লাগল,
–ঐ উড়ু পাখি দাঁড়াও। এতো তাড়াতাড়ি কেন চলে যাচ্ছো? কথা বলো আমাদের সাথে।
একটা ছেলে অনুর হাত চেপে ধরল। অনু রাগী স্বরে ছেলেটিকে বলল,
–আরে সমস্যা কি আপনার? হাত ছাড়ুন। আমি কিন্তু স্যারের কাছে আপনাদের ব্যাপারে বিচার দিব।
শ্যামলা করে ছেলেটি বলল,
–তাই নাকি কিউটি? কিন্তু তুমি তো আমাদের চিনো না। আমরা কোনো কিছুতে ভয় পাই না৷ বিচার দিতে চাইলে বিচার দাও কোনো সমস্যা নেই।
অনুর খুব ভয় লাগছে। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। সবাই ক্লাসরুমে। অনুর ভার্সিটিতে আসতে লেট হয় আর ভার্সিটির মাঠেই এমন কিছু হবে অনু ভাবতে পারে নি।
অনু ছেলেটির কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। এবার বাধ্য হয়েই অনু ছেলেটির গালে জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ছেলেটি রক্তলাল চোখে তাকিয়ে অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে অনুকে বলল,
–ঐ ছেমরি তুই আমাকে থাপ্পড় দিলি?তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে থাপ্পড় দিলি?
ছেলেটি রেগে গিয়ে অনুকে পাল্টা থাপ্পড় দিতে যায়। অনু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু না অনুর গালে থাপ্পড় পড়ল না। অনু চোখ খুলে দেখল ছেলেটির হাত পল্লব মুচড়ে ধরে আছে। পল্লব রেগে ছেলেটিকে বলল,
–তোর এতো বড় সাহস তুই অনুকে থাপ্পড় দিতে চেয়েছিস? তোর হাত আমি…
পল্লব ছেলেটির হাত মুচড়ে পেছন দিকে নিয়ে ছেলেটির গালে অনেকগুলো থাপ্পড় দেয়। ছেলেটি ভয় পেয়ে পল্লবকে বলল,
–পল্লব ভাই আমরা আর এই মেয়েকে বিরক্ত করব না। আমাদের ক্ষমা করে দেন।
পল্লব ছেলেটিকে ছেড়ে দিল। ছেলেটি তার দলবল নিয়ে চলে গেল। পল্লব অনুর দিকে তাকাল। অনুর চোখে জল। পল্লব অনুকে বলল,
–কেঁদো না। তোমাকে কাঁদলে ভালো লাগে না অনু।
অনু পল্লবের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি এখন না এলে আমার কি যে হতো ভাবলেই ভয় করছে।
পল্লব মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–আমি তোমার ধন্যবাদ চাই না। অন্য কিছু চাই।
অনু বুঝতে না পেরে পল্লবকে বলল,
–মানে?
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
–মানে হলো আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
অনু হাসিমুখেই পল্লবকে বলল,
–হ্যা আমি আপনার বন্ধু হলাম।
পল্লব খুশির সাথে অবাক হয়ে বলল,
–সত্যি অনু তুমি এখন থেকে আমার বন্ধু হয়েছো?
–হ্যা এখন থেকে আমি আপনার বন্ধু।
–অনু তুমি খুব ভালো!
পল্লব খুশিতে অনুকে জড়িয়ে ধরতে গেলে অনু তাড়াতাড়ি পেছন সরে যায় যাতে পল্লব অনু্কে ছুঁতে না পারে। অনু ভয় পাওয়া স্বরে পল্লবে বলল,
–আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।
পল্লব অবাক হয়ে অনুকে বলল,
–কেন অনু? সমস্যা কি? আমরা তো বন্ধু! আর বন্ধু হিসেবে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলে সমস্যা কি?
অনু বিরক্তি স্বরে পল্লবকে বলল,
–আমি আপনার বন্ধু হই৷ আপনার প্রেমিকা নই।
পল্লব অনুর কথা বুঝতে পেরে মন খারাপ করে বলল,
–আই এম সরি অনু।
অনু গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
–ইট’স ওকে।
–অনু একটা কথা বলি?
–হ্যা বলুন।
–আমরা যেহেতু বন্ধু হই। তুমি আমাকে আপনি না বলে তুমি করে বলবে? তোমার মুখে আপনি বলে ডাকটা ভালো লাগে না। বন্ধু হিসেবে আমরা তো তুমি করে বলতেই পারি। তুমি করে বলবে তো?
–ওকে বলবো।
অনু চলে যাচ্ছিল তখন পল্লব আবারও বলল,
–এই অনু একটু দাঁড়াও।
অনু পেছন ফিরে পল্লবকে বলল,
–আর কিছু বলবে?
–আজকে ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমি তোমার সাথে একটু আশেপাশের কোনো কফিশপে বসে কথা বলতে চাই। তুমি কি একটু কথা বলতে পারবে অনু? প্লিজ না করো না।
অনু ভাবতে লাগল পল্লবকে হ্যা বলবে নাকি না বলবে। যেহেতু পল্লব অনুকে গুন্ডা ছেলেগুলোর থেকে বাঁচিয়েছে তাই অনু পল্লবকে না বললে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। তাই অনু পল্লবকে হাসিমুখে বলল,
–আচ্ছা ঠিক আছে।
কফিশপের একটা সিটের টেবিলের একপ্রান্তে বসে আছে পল্লব এবং টেবিলের অপর প্রান্তের সিটে বসে আছে অনু। পল্লব কফি অর্ডার করল কিন্তু অনু কফি খেল না। পল্লব অনুকে বলল,
–এই অনু কফিটা খাও। খাচ্ছো না কেন?
অনু মুখ গম্ভীর করে পল্লবকে বলল,
–পরে কফি খাওয়া যাবে। তুমি কি বলবে বলো?
পল্লব কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। তারপর অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–অনু তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
অনু অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,
–তুমি কেন আমার এসব ব্যাপারে জানতে চাইছো?
–বন্ধু হিসাবে এইটুকু তো জানতেই পারি।
–না, আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
অনুর কথা শুনে পল্লব খুশি হলো৷ কিন্তু অনু গভীরভাবে ভেবে পল্লবকে আবারও বলল,
–তবে…
পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–তবে কি?
–আমার একটা প্রিয় মানুষ আছে।
অনুর কথা শুনে এবার পল্লব খুব কষ্ট পেল। পল্লব নিজের অজান্তেই বুকের ভিতরে একটু বেশি কষ্ট অনুভব করল। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–তোমার প্রিয় মানুষের নাম কি?
অনুর এবার কান্না পাচ্ছে। পল্লব দেখল অনু কেঁদে ফেলেছে। অনুর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। পল্লব একটা ছোট রুমাল পকেট থেকে বের করে অনুর দিকে এগিয়ে দিল। অনু পল্লবের থেকে রুমালটা নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল,
–আমার প্রিয় মানুষটির নাম আদ্র। খুব বেশি ভালোবাসি আদ্রকে। কিন্তু কখনো আমি আদ্রকে মুখ ফুটে বলতে পারি নি যে আমি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। আসলে আমি আমার মনের কথা বুঝতাম না। যেদিন আদ্র আমাকে ছেড়ে দূরে গেল সেদিন বুঝতে পেরেছি যে আমি আসলে আদ্রকে কতটা ভালোবাসি।
পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–আদ্র দূরে চলে গিয়েছে মানে কোথায় গিয়েছে?
অনু পল্লবের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–আদ্র পড়াশোনার জন্য লন্ডন গিয়েছে। পাঁচ বছরের জন্য চলে গিয়েছিল। সবে মাত্র দুই বছর হলো আদ্র যে গেল। আরও তিনটা বছর রয়েছে।
–তোমাদের ফোনে কথা হয় না?
–আদ্র এই দুই বছরে প্রতিদিন আমাকে অনেকবার ফোন দেয় কিন্তু আমি ফোন রিসিভ করি না
–কেন?
–অন্য কোনোদিন বলবো। আর কিছু জানার জন্য জোর করবে না।
অনুর চোখে আবার জল টলমল করতে লাগল। অনু মাথা নিচু করে নিজের কান্না লুকানোর চেষ্টা করছে।
আদ্রের প্রতি অনুর গভীর ভালোবাসা দেখে পল্লবের জেলাস ফিল হতে লাগল। পল্লব মনে মনে বলল,
–এমন ভালোবাসা যদি অনু আমাকে বাসতো তাহলে হয়তো নিজেকে পৃথিবীর সেরা ভাগ্যবান মানুষ বলে মনে করতাম। আদ্র আসলেই অনেক লাকী যে অনুর মতো একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। আমার কপাল আসলেই খারাপ।
অনু নিজের চোখের জল মুছে পল্লবের দিকে তাকাল। পল্লবের মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। অনু পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,
–তোমার কি হয়েছে পল্লব?
পল্লব হাসির চেষ্টা করে অনুকে বলল,
–কিছু হয় নি।
অনু নিজের হাতের ঘড়িতে টাইম দেখে নিল। বিকেল গড়িয়ে রাত হতে চলেছে। অনু পল্লবকে বলল,
–অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি এখন বাসায় চলে যাই।
পল্লব অনুকে বলল,
–আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই।
অনু শান্ত স্বরে পল্লবকে বলল,
–না কোনো দরকার নেই।
পল্লব মন খারাপ করে অনুকে বলল,
–আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না অনু? আমাকে কি তুমি এতো খারাপ ছেলে ভাবো?
অনু তাড়াহুড়ো করে বলল,
–না, না। তোমাকে খারাপ ভাববো কেন? তুমি যথেষ্ট ভালো ছেলে পল্লব।
পল্লব মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–তাহলে চলো আমি তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দেই। না করবে না।
পল্লব নিজের গাড়ি দিয়ে অনুকে বাসায় পৌঁছে দিল। অনু গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাসায় চলে গেল। পল্লব অনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আরও বেশ কিছুদিন চলে গেল। এরই মাঝে পল্লব এবং অনু খুব ভালো বন্ধু হয়েছে। পল্লব তার হাসির কথা বলে অনুকে সবসময় হাসানোর চেষ্টা করে। অনুও মনে মনে পল্লবকে ভালো বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছে।
আজ অনু ভার্সিটিতে যায় নি। এখন বিকেল বেলা। ঘড়িতে ৪ঃ১১ বাজে। অনু নিজের বাসার বিছানায় গভীর ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ অনুর মনে হলো অনুর ঠোঁটে কেউ গভীরভাবে ঠোঁট বসিয়ে রেখে চুমু দিচ্ছে। অনুর দুই হাত কারও দুই হাতের সাথে শক্তভাবে আবদ্ধ। অনুর শ্বাস আটকে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে নিজের দুই চোখ খুলে অনু নিজের ঠোঁট কারও ঠোঁটের মধ্যে মেশানো দেখল। সামনের ব্যক্তিটি অনুকে গভীর চুমু দিচ্ছে। অনু চরম শকড খেল। তাড়াতাড়ি করে অনু সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থাকা সামনের ব্যক্তিটিকে সরিয়ে দিল। অনু দ্রুত গতিতে বিছানায় শুয়া থেকে উঠে বসে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগল। অনু বড়বড় চোখ মেলে খেয়াল করে সামনের ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে রইল। অনু ভয় পাওয়া গলায় সামনের ব্যক্তিটিকে অবাক হয়ে বলে উঠল,
–আ…আ…আদ্র তু…তুমি?
চলবে…
তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?
পর্ব_১২
Anika Fahmida
আদ্রকে নিজের চোখের সামনে দেখে অনুর বিশ্বাস হচ্ছে না যে আদ্র দেশে ফিরে এসে অনুর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। অনুর ঠোঁট ভীষণ জ্বলছে। নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে অনু ব্যথায় আঁতকে উঠল। একটু আগেই আদ্র অনুর ঠোঁটে গভীর চুমু দিয়ে অনুর অল্প ঠোঁট কেটে ফেলেছে। যার কারণে অনুর ঠোঁট জ্বলছে। হাতটাও ভীষণ জ্বলছে।অনু নিজের ঠোঁটে হাত রেখেই মনে মনে বলতে লাগল,
–না, এটা স্বপ্ন না। আদ্র সত্যিই ফিরে এসেছে।
আদ্র রাগী দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভীষণ রেগে আছে। অনু ভয়ে শুকনো ঢুক গিলল। তারপর আদ্রকে বলল,
–তুমি এতো তাড়াতাড়ি কি করে চলে এলে আদ্র?
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–কি অনু আমাকে দেখে চমকে গেলি? তোর বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোর কাছে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছি তাই না?
অনু এখনও চুপ করে গুটিয়ে বিছানায় বসে আছে।
আদ্র অনুর কাছে এসে অনুর গাল চেপে ধরে বলল,
–আমি নাহয় সময়ের অভাবে তোর সাথে দেখা করতে না পেরে লন্ডনে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুই কোন সাহসে এই দুই বছরে আমার ফোন ধরিস নি?
অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর গাল চেপে ধরেছে তাই অনুর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। আদ্র চিৎকার করে অনুকে বলে উঠল,
–কি হলো বলছিস না কেন?
আদ্রের চিৎকার শুনে অনু ভয়ে কেঁপে উঠল। কাঁপা কাঁপা গলায় অনু আদ্রকে বলল,
–তুমি আমার সাথে দেখা না করেই বিদেশ চলে গিয়েছিলে। তাই তোমার উপর রাগ করে ফোন ধরি নি। এতে সাহসের কিছু নেই।
আদ্র অনুর গাল ছেড়ে দিয়ে রেগে নিজের দাঁত চেপে গম্ভীর স্বরে বলল,
–এতো রাগ আমার উপর?এতোটা? ওকে ফাইন। তোর রাগ আমি ঠান্ডা করে দিব। সমস্যা নেই।
আদ্র অনুকে কোলে তুলে নিল। হঠাৎই আদ্র অনুকে কোলে তুলে নেওয়ায় অনু ভয়ে আদ্রের শার্ট খামচে ধরে ভয় পাওয়া গলায় আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–কি করছো আদ্র?
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়েই বাঁকা হেসে বলল,
–আমি তোকে উত্তর দিতে বাধ্য নই অনু।
অনু আদ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
–আমাকে ছাড়ো আদ্র। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
অনু চিল্লাতে লাগল। আদ্র অনুকে কোলে করে নিয়েই ড্রইং রুমে পৌঁছাল। আদ্র বিদেশ থেকে এতো তাড়াতাড়ি দেশে ফিরেছে দেখে আমেনা বেগম খুশি হন। কারণ আমেনা বেগম জানেন আদ্রের জন্যই তার মেয়ে অনু চুপচাপ গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল। কিন্তুু এখন অনু হাসিখুশি থাকবে। আমেনা বেগম মনে মনে ভাবছে এখন হয়তো অনুর রুমে গিয়ে আদ্র অনুর সাথে গল্প করছে। তাই আমেনা বেগম বেশ খুশি মনে আদ্রের জন্য রান্না করছিল। কিন্তু অনুর চিৎকার শুনে আমেনা বেগম চমকে উঠে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে যায়। আদ্র অনুকে নিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। আমেনা বেগম বাসার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসেও আদ্র বা অনু কাউকেই খুঁজে পেল না। আমেনা বেগম মনে মনে বলল,
–আদ্র আমার মেয়েকে নিয়ে কোথায় গেল?
আদ্র নিজের গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে অনুকে বসিয়ে গাড়ির ডোর লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে লাগে। এতো দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে যে অনুর ভীষণ ভয় লাগছে। আদ্র প্রচুর রেগে আছে। আদ্রের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। অনু কাঁদো কাঁদো স্বরে আদ্রকে অনুরোধ করে বলল,
–আমাকে বাসায় যেতে দাও আদ্র। আমি তোমার সাথে এমন রাগ আর কখনো দেখাবো না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমাকে মাফ করে দাও আদ্র। আদ্র তুমি কি আমার কথা শুনছো?
আদ্র ধমক দিয়ে অনুকে বলল,
–একদম চুপ অনু। কথা বলবি না।
অনু আদ্রের ধমকে চুপ হয়ে গেল। অনু মনে মনে বলল,
–আজ আমি শেষ। অনু আজ হয়তো তোর শেষ দিন। আদ্র আমার উপর এতো রেগে আছে তা আমি বুঝতে পারি নি। ইশ কেন আমি কিছু বুঝলাম না!
প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেছে এখনও আদ্র গাড়ি চালাচ্ছে। বিকেল পেড়িয়ে রাত ঘনিয়ে এসেছে। অনু কত আরামের ঘুমটাই না ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু আদ্র কি করল? সব এরকম তোলপাড় করে দিল? আদ্র একটা বিশাল বড় বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। বাড়িটা ভীষণ ভুতুড়ে। ভুতুড়ে বাড়ি আজ প্রথম নিজ চোখে দেখে অনুর শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। অনু থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আদ্রকে বলল,
–আদ্র তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে?
আদ্র অনুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। এই শান্ত চাহনি অনুকে ভয়ে কাঁপিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আদ্র অনুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
–এই ভুতুড়ে বাড়িটাতে তোকে থাকতে হবে অনু।
অনু আর্তনাদ করে আদ্রকে বলে উঠল,
–না! কখনোই না।
অনু গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে চাইলেও পারল না। গাড়ির দরজাটা কিছুতেই খুলছে না। আদ্র অনুর কান্ড দেখে শব্দ করেই হেসে ফেলল। অনুর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতেই বলল,
–তোর ভয় লাগছে তাই না রে অনু?
অনু মিনতির স্বরে আদ্রকে বলল,
–আমার সাথে এমন করো না আদ্র। আমি এই ভুতের বাড়িতে থাকতে পারবো না।
আদ্র অনুর কোনো কথা না শুনে গাড়ি থেকে নেমে অনুকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগল। অনু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অনু আদ্রের মাথার চুল টেনে ধরে বলল,
–আমাকে ছাড়ো নাহলে তোমার মাথার সব চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলব। ছাড়ো বলছি।
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–ছিঁড়ে ফেল। মানা করেছে কে?
অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয় রইল। আদ্রের চুল এতক্ষণ অনু টেনে ধরলেও এবার ছেড়ে দিল। অনু কখনো ভাবে নি আদ্রের চুল এতোটা নরম হবে। চুপ করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আদ্রের মাথার নরম চুলের কথা অনু ভাবতে লাগল। আদ্র বাড়িটার দরজা খুললেই সব কিছু অন্ধকার দেখা গেল। চারিপাশটা অন্ধকারের জন্য কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না ভালো মতো। সবুজ ড্রিম লাইট জ্বলছে। কিন্তু এতো নিরবতা দেখে অনু ভয়ে আদ্রের বুকের শার্ট চেপে ধরল। তারপর আদ্রের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখল। আদ্র অনুকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। অনু এখনও বুঝতে পারছে না তার সাথে কি কি হবে। আদ্র দুতলার রুমে অনুকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসাল। এই রুমটা আরও বেশি অন্ধকার। অনু আদ্রকে ভয় পাওয়া স্বরেই জিজ্ঞেস করল,
–এই রুমটা এতো অন্ধকার কেন? তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন? ঠিক কি করতে চাইছো আদ্র? তুমি কি বুঝতে পারছো না আমার খুব ভয় লাগছে?
আদ্র রুমের লাইট লাগিয়ে দিল। রুমের চারিপাশটা এবার অনু পরিস্কার দেখতে পেল। রুমটা কেমন যেন পুরনো। আদ্র অনুর কাছে এগিয়ে এসে শান্ত স্বরে বলল,
–তোর সাথে আমি কি করব সেটা পড়ে বুঝতে পারবি। আপাতত রুমে বসে থাক। আমি আসছি।
আদ্র রুম থেকে চলে যাচ্ছে দেখে অনু তাড়াতাড়ি আদ্রের হাত চেপে ধরল। আদ্র পেছন ফিরে নিজের হাতের দিকে অনুর আবদ্ধ করা হাত দেখে অনুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
–কি হলো? তোকে না বসতে বললাম। তাহলে আমার হাত ধরেছিস কেন? চুপচাপ ওখানে বসে থাক।
অনু ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
–আদ্র এই বাড়িটায় কেউ থাকে না?
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
–না, থাকে না। তো কি হয়েছে?
–তুমি আমাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছো কেন? যদি ভুত এসে আমাকে নিয়ে যায়? তখন আমার কি হবে?
আদ্র হেসে ফেলে অনুকে বলল,
–আরে বলদি এতো ভয় পেলে হয় নাকি? তোর মাথায় তো সামান্য বুদ্ধিটাও নেই। নো প্রবলেম। তোর মাথায় আমি বুদ্ধি ঢুকিয়ে দিব।
অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–আবারও তুমি আমাকে বলদি বলছো?
–বলদিকে বলদি না বলে কি বলা যায়?
অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–চলে যাও তুমি। আমাকে ভুত নিয়ে যাক।
অনু আবারও বিছানায় মুখ গম্ভীর করে বসে পড়ল। আদ্র অনুর কান্ড দেখে হেসে আবারও যেতে যাবে ঠিক তখনই অনু আবারও আদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–দাঁড়াও আদ্র।
আদ্র আবারও যেতে গিয়েও থেমে গিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
–আবার কি হলো?
–তুমি ভুতুড়ে বাড়ি থেকে এখন চলে গেলে আমাকে ভুত মেরে ফেলবে। হয়তো তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে না। কিন্তু আমি এই শেষবারের জন্য তোমাকে কিছু বলতে চাই।
আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–কি বলতে চাস?
অনু ধীরে ধীরে আদ্রের কাছে এগিয়ে এসে আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র বুঝতে পারছে না অনু কি বলতে চাইছে? অনু আদ্রের মুখের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে আছে। আদ্র আগের থেকেও খুব শুকিয়ে গেছে। হয়তো অনুর উপর রাগ করে ঠিকমতো খাবার খেতো না। আদ্রের চোখের নিচে কালি পড়েছে। হয়তো ঠিকমতো আদ্র ঘুমাতো না। অনু আদ্রকে ঝাপটিয়ে জড়িয়ে ধরল৷ আদ্র থমকে গেল৷ অনু আদ্রকে জড়িয়ে ধরেই বলল,
–তুমি হয়তো এখান থেকে চলে গেলে আর আমার কাছে ফিরবে না। তাই আমি তোমাকে এতোগুলো বছর ধরে যেই কথাটা বলতে পারি নি তা আজকে বলতে চাইছি। আসলে এতদিন বলতে ভয় পেতাম। কিন্তু আজকে বলতে চাই।
আদ্র এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। অনু আদ্রকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় এবার চোখ বন্ধ করে আদ্রকে জোর গলায় বলল,
–আমি তোমাকে ভালোবাসি আদ্র। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। হয়তো তুমি এখন বিশ্বাস করবে না। ভাববে আমি তো তোমার সাথে এতদিন কথাই বলতে চাই নি তাহলে ভালোবসি কি করে? কিন্তু আমি তোমার ফোন না ধরলে তুমি হয়তো আমার কাছে দ্রুত চলে আসবে। এটা আমার বিশ্বাস ছিল। আর এখন আমার বিশ্বাসটাই ঠিক হলো। আমাকে তুমি পারলে ক্ষমা করে দিও আদ্র।
অনু আদ্রকে জড়িয়ে ধরা থেকে ছেড়ে দিয়ে পিছাতে লাগল। কিন্তু আদ্র আবারও অনুর হাত চেপে ধরে টেনে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসল। অনু আদ্রের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আদ্র অনুর হাত চেপে ধরেই শক্ত গলায় অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করবো। বিদেশে ঘুরে বেড়াবো। কিন্তু যখন থেকে আমার মনে তোর জন্য ভালোবাসা জেগেছিল তখন থেকে আমি শুধু প্রতি মুহুর্তেই চাইতাম যাতে তুইও আমাকে ভালোবাসিস। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো তুইও আমাকে ভালোবাসিস আবার মাঝে মাঝে মনে হতো যদি আমার ধারণা সঠিক না হয়! কিন্তু তুই কখনও মুখ ফুটে আমাকে ভালোবাসি বলিস নি৷ তোর মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনার জন্য আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
অনু আদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারও অনুকে বলল,
–যখন আব্বু আমাকে লন্ডনে পড়তে যেতে বলল তখন আমি না করি নি। আমি চেয়েছিলাম হয়তো তোর থেকে আমি দূরে থাকলে তুই আমার জন্য তোর অনুভূতি বুঝতে পারবি। হ্যা তুই বুঝেছিস যে আমাকে তুই ভালোবাসিস। কিন্তু একটা কথা জানিস অনু? তুই যদি আমি লন্ডন যাওয়ার পরে কোনো একটা দিন আমার সাথে একটাবার ফোনে কথা বলতি? আমি ঠিক ঐদিনই তোর কাছে ছুটে চলে আসতাম। কিন্তু আমার ভাগ্যটাই এতোই খারাপ যে তুই আমার ফোন ধরতি না। আমার এই বুকের ভিতরটায় যে কত কষ্ট হতো তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। সব সময় আশা করে বসে থাকতাম তুই আমার ফোনটা ধরবি। কিন্তু তুই ফোন ধরিস নি। আমার তোর উপর ভীষণ রাগ হয়েছিল। তাই এই দুই বছর তোর থেকে দূরে থেকেছি। আর পারলাম না তোর উপর রেগে তোর থেকে দূরে থাকতে। তোকে দু চোখ ভরে ভীষণ দেখতে মন চাইলো। আমার তোকে ছাড়া থাকতে ভীষণ কষ্ট হতো অনু কিন্তু সেই কষ্ট নিয়েই আমি তোর কাছ থেকে দূরে থেকেছি। কতটা কষ্ট বুকে রেখে মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকে তা কি তুই কল্পনা করতে পারবি অনু? আমি তো আর পারলাম না তোর কাছ থেকে দূরে থাকতে। আর কিছুদিন তোর থেকে দূরে থাকলে হয়তো আমি মরে যেতাম।
অনু আদ্রের ঠোঁটে হাত রেখে আর্তনাদ করে বলল,
–ওমন কথা মুখে এনো না আদ্র। তোমার কিছু হলে আমি বাঁচব না।
আদ্র নিজের ঠোঁট থেকে অনুর হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
–আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ফেলেছিস?
অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,
–হ্যা তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো মুখে বলে বুঝাতে পারবো না।
আদ্র অনুর দুই গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
–আমি নিজেও যে তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি অনু। হয়তো তুই আমার ভালোবাসা বুঝতে পারিস না।
অনুর শরীর কাঁপতে লাগল। অনুর চোখ জলে টলমল করতে লাগল। অনু চোখ বন্ধ করলেই চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। আদ্র রেগে গিয়ে অনুকে বলল,
–এই অনু কাঁদছিস কেন?
অনু কান্না জড়িত কন্ঠেই আদ্রকে বলল,
–আমি আসলেই খুব বোকা আদ্র। তুমি ঠিকই বলো আমি একটা বলদি। আমার মাথায় আসলেই বুদ্ধি নেই।
আদ্র হেসে অনুর গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলল,
–তুই বোকা বলদি হলেও তুই আমার ভালোবাসা অনু। তোর দোষ গুণ মিলেই আমি তোকে ভালোবাসি। অবশ্য তোর দোষগুলো দেখলেও তোর একটা কোনো গুণও আমি আজ পর্যন্ত দেখলাম না।
অনু রাগী দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর রাগী দৃষ্টি দেখে শব্দ করেই হাসতে লাগল। আদ্রের হাসি দেখে কেন যেন অনুর রাগ চলে গেল। অনু মুগ্ধ হয়ে আদ্রের হাসি দেখতে লাগল৷ অনু মুখ ফসকে আদ্রকে বলেই ফেলল,
–আদ্র তুমি এতো সুন্দর করে কেন হাসো?তোমার হাসি দেখলে আমার কলিজায় ব্যথা লাগে।
অনুর কথা শুনে আদ্র হাসি থামিয়ে অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকাল। আদ্র মনে মনে কি ভাবছে অনু বুঝতে পারল না। কিন্তু অনু নিজেই যে এমন কথা বলবে তা অনু কল্পনা করে নি। নিজের কথায় নিজেই অনু লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়াল।
চলবে…