তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_২১
Anika Fahmida
আদ্রের এসব কড়া কথা শুনে রেদোয়ান আহমেদ রেগে আগুন হয়ে গেলেন। অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন। পল্লব ছুটির দিনে নিজের রুমে বসে বই পড়ছিল। কিন্তু বাইরের এতো চিৎকারের শব্দে আর রুমে বসে থাকতে পারল না।পল্লব ড্রইং রুমে এসে দেখল আদ্র এসেছে। আর আদ্রের সাথেই তার বাবা চিৎকার করছেন। পল্লব আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–মিস্টার আদ্র আপনি আমার বাসায় কেন এসেছেন?
আদ্র পল্লবকে হেসে বলল,
–আমার বউকে আপনি বিয়ে করতে চাইছেন আর আমি জেনে শুনে আমার বাসায় বসে ললিপপ খাবো তা কি করে হয় পল্লব? আপনার বাসায় যে আসতেই হয়।
পল্লব আদ্রকে রাগী স্বরে বলল,
–এসব আপনি কি বলছেন?
আদ্র পল্লবের সামনে এগিয়ে এসে রেগে বলল,
–ঠিকই তো বলছি। আমার বউকে বিয়ে করতে কেন চাইছিস? লজ্জা করে না অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিতে? অবশ্য তোর লজ্জা থাকবে কি করে? পাগলা কুকুরের কি আর লজ্জা থাকে?
পল্লব রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র আপনি কিন্তু আপনার লিমিট ক্রশ করছেন। আমি কিছু বলছি না বলে ভাববেন আমি কথা বলতে জানি না। আর অনু আপনার বিয়ে করা বউ নয়। অনুর এখনও বিয়ে হয় নি। কিসব উল্টা পাল্টা বলছেন?
আদ্র রাগ কনট্রোল করে হাসার চেষ্টা করে বলল,
–অনুর সাথে আমার বিয়ে অনেক আগেই হয়েছে।
পল্লব গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,
–আপনার কথা আমি বিশ্বাস করি না।
রেদোয়ান আহমেদ পল্লবের দিকে ছবি এগিয়ে দিয়ে হতাশ গলায় বলল,
–দেখ পল্লব এই ছেলের সাথে অনুর কিসব বাজে ছবি!
পল্লব রেদোয়ান আহমেদের কাছ থেকে ছবিগুলো হাতে নিয়ে দেখে থমকে গেল। ছবিতে অনু আর আদ্রের এতো কাছাকাছি দৃশ্য দেখে বুকের ভিতরে কোথাও পুড়তে লাগল। রাগে পল্লবের শরীর জ্বলতে লাগল। অনু আদ্রকে ভালোবাসে তা জানত পল্লব। কিন্তু অনু যে আদ্রের সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে পল্লব ভাবতে পারে নি। তবুও পল্লব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রেদোয়ান আহমেদকে বলল,
–এগুলো এডিট করা ছবি বাবা। এই ছেলেটা এডিট করে এসব বানিয়েছে। তুমি বিশ্বাস করো নাতো এই ছেলের কথা। এসব করেছে আমাকে আর অনুকে আলাদা করার জন্য।
পল্লবের কথা শুনে আদ্র এবার শব্দ করে হাসতে লাগল। পল্লব বুঝতে পারল না আদ্র কেন এভাবে হাসছে। আদ্র হাসতে হাসতে পল্লবকে বলল,
–তাই বুঝি? এগুলো এডিট করা? ওকে আমি তাহলে লাইভ সো দেখাই আপনাকে।
পল্লব বুঝতে না পেরে আদ্রকে বলল,
–লাইভ সো মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?
আদ্র হেসে বলল,
–ওয়েট দেখাচ্ছি।
আদ্র মোবাইল ফোনটা পকেট থেকে বের করে কি যেন টাইপ করতে লাগল। দেখে মনে হলো কাউকে মেসেজ দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর অনু পল্লবের বাসার ভিতর ঢুকলো। অনুকে দেখে পল্লব অবাক হয়ে বলল,
–অনু তুমি এখানে?
অনু কিছু বলল না। অনু আদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। আদ্র অনুকেও সাথে করে এনেছিল। আগে আগে ভিতরে আনে নি। বাসার বাইরে আদ্র অনুকে অপেক্ষা করতে বলেছিল। এখন অনু ঘাবড়ে গেছে কারণ আদ্র কি কারণে পল্লবের বাসায় আসতে বলল কে জানে। অনু কিছু বুঝতে পারছে না। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রের মুখে দুষ্টু হাসি। অনুর ভয় লাগছে। পল্লব এবং রেদোয়ান আহমেদও অনু ও আদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র হেসে পল্লবকে বলল,
–লাইভ সো দেখাবো বলেছিলাম না? এবার দেখুন।
আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে একটান দিয়ে অনুকে নিজের কাছে নিয়ে এল। অনু ঘাবড়ে গেল। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারল না৷ ভয়ে অনুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। অনুর দৃষ্টি আদ্রের চোখে। কি করতে চাইছে আদ্র? আদ্র হঠাৎ করেই সবার সামনে অনুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। এসব দেখে রেদোয়ান আহমেদ লজ্জায় ড্রইং রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। পল্লব চোখ বন্ধ করে নিজের হাত শক্ত করে মুঠো করে রেখেছে। আদ্র অনেক্ষণ পর অনুর ঠোঁট ছেড়ে অনুর গলায় ঠোঁট ডুবাল। পল্লব এবার আর সহ্য করতে না পেরে রেগে গিয়ে বলল,
–এসব কি ধরনের নোংরামি হচ্ছে?
আদ্র অনুকে ছেড়ে দিয়ে পল্লবকে বলল,
–নিজের বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করছিলাম। আপনি তো ছবিগুলো এডিট ভেবেছিলেন। এখন সরাসরি লাইভ সো দেখে কেমন লাগল? এখানে কিন্তু কোনো এডিট নেই। অরিজিনাল দেখাচ্ছি। এবার বিশ্বাস হলো? অনুকে আপনি ভুলে যান। আমার ইউজ করা জিনিসটাকে তবুও কি আপনি বিয়ে করতে চাইবেন?
পল্লব রেগে আদ্রকে বলল,
–অনু আপনার ইউজ করা জিনিস নয়। চুপ করুন।
অনু পল্লবকে বলল,
–আদ্র তো ঠিকই বলছে পল্লব। আমি তো আদ্রের ইউজ করা জিনিস। কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছো?
পল্লব অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–অনু আদ্র তোমার সাথে জোর করে এসব অসভ্যতা করেছে তাই না?
অনু অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে পল্লবকে বলল,
–না, জোর করে নয়। আমার ইচ্ছেতেই আদ্র আমাকে ছুঁয়েছে। আর পল্লব তোমাকে কিছু কথা বলি। আমি আদ্রকে বিয়ে করেছি। তুমি আমাকে ভুলে যাও৷ আর এই বিয়েটাও ভেঙে দাও। আমি তোমাকে শুধু বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবি নি। আমি শুধু আদ্রকে ভালোবাসি। তোমাকে আমি আগেও বলেছি আমি আদ্রকে ভালোবাসি। তবুও তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছো? তোমার জোর করে আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে হ্যাংলামো ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।
অনুর সাথে আদ্রের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এটা যেন পল্লব কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। পল্লব অবাক হয়ে অনুকে বলল,
–তোমার কখন আদ্রের সাথে বিয়ে হলো অনু?
অনু পল্লবকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–অনেক আগেই আদ্রের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই বলছি তুমি আমাকে ভুলে যাও। আর এই বিয়েটা ভেঙে দাও।
পল্লব ব্যথিত স্বরে অনুকে বলল,
–তুমি ভালো না বাসলেও আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি অনু। ভালোবাসার মানুষটাকে মন থেকে চাওয়াটা কি অন্যায়?তুমি আদ্রকে ভালোবাসো জেনেও নিজের অজান্তে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি যে তোমাকে হারাতে চাই না। আমি কি করে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ছাড়া বেঁচে থাকি তুমি বলো অনু?
অনু নিজের দুই হাতজোড় করে পল্লবকে বলল,
–আমাকে ক্ষমা করে দাও পল্লব। কিন্তু আমি আদ্রকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারব না। আমার মনে সেই ছোটবেলা থেকেই আদ্রের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি আদ্রের জন্য আমার মনের মধ্যে রাখা ভালোবাসাটা আগে বুঝতাম না। কিন্তু আদ্র আমাকে শিখিয়েছে ভালোবাসা কি। আদ্র আমাকে বুঝিয়েছে ভালোবাসা কেমন হয়। আমি আদ্রকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। প্লিজ আমাদের জীবন থেকে তুমি চলে যাও।
পল্লব অনুকে কাঁপা গলায় বলল,
–কিন্তু আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি অনু। আমার ভালোবাসা তোমার কাছে কোনো মূল্য নেই?
আদ্র এবার রেগে পল্লবের শার্টের কলার ধরে বলল,
–অনু তোকে কি বলেছে শুনতে পাস নি? তবুও কেন অনুকে জোর করছিস? আর ভালোবাসার কথা বলছিস? তুই অনুকে কয়দিন ধরে ভালোবেসেছিস? দুই বছর ধরে তাই না? আর আমি অনুকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি। অনু যেমন আমাকে ছাড়া বাঁচবে না ঠিক তেমন আমিও অনুকে ছাড়া বাঁচব না। একমাত্র তুই পারিস অনুর বাবাকে বলে বিয়েটা আটকাতে। অনুর সুখের জন্য এইটুকু তুই করতে পারবি না? তাহলে তুই অনুকে আর কি ভালোবাসিস!
আদ্রের কথায় পল্লব চমকে উঠল। পল্লব নিজের শার্টের কলার থেকে আদ্রের হাত ছাড়িয়ে নিল। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। পল্লব একবার অনু্র মুখের দিকে তো একবার আদ্রের মুখের দিকে তাকাল। পল্লব হাসার চেষ্টা করে আদ্রকে বলল,
–আমি জানি আপনার আর অনুর এখনও বিয়ে হয় নি। আপনার বাবা অনুকে মন থেকে মানতে পারছেন না। তাই আপনাদের বিয়েতে বিরাট বাঁধা রয়েছে। আপনারা যেখানেই বিয়ে করতে যান আপনার বাবা আনোয়ার হোসেন সেখানেই এসে বিয়েটা আটকে দিচ্ছেন।
আদ্র অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,
–আপনি কি করে এতকিছু জানেন?
পল্লব হেসে আদ্রকে বলল,
–কারণ আমি আপনার বাবাকে বলেছিলাম অনুকে যদি আদ্র বিয়ে করে তাহলে আদ্রকে আমি মেরে ফেলবো। আপনার বাবা আপনার জীবন বাঁচাতেই আমার কথায় এতদিন অনুকে মানতে পারে নি। অনু মধ্যবিত্ত এই কারণটা আসল কারণ নয়। কারণটা ছিল আমার কথা। আমার হুমকি দেওয়া। আমি আপনার বাবাকে আপনার জীবন নিয়ে হুমকি দিয়েছিলাম। আমার কথাতেই আপনার বাবা ভয় পেয়ে বাধ্য হয়ে আপনার বিয়েটা ভেঙেছে। বিয়েটা হতে দেয় নি। তিনি নিজে খারাপ সেজেছেন শুধু আপনার জীবন বাঁচানোর কথা ভেবে।
আদ্র অবাক হয়ে সব শুনছিল। আদ্রের মনে তার বাবার প্রতি সব ঘৃণা তখন শেষ হয়ে গেল। এসব কথা শুনে অনুও ভীষণ অবাক হলো। তারমানে অনু আংকেলকে ভুল বুঝেছিল! অনু এসব জানতে পেরে আদ্রের বাবার জন্য খুব খারাপ লাগল৷ তিনি তো ছেলের ভালোর জন্য খারাপ সেজেছিলেন। নিজে থেকে তো নয়।
পল্লব গম্ভীর স্বরে আদ্রকে কাঁপা গলায় বলল,
–আমি হেরে গেলাম আদ্র। আপনার কাছে আমি হেরে গেলাম। নিজের ভালোবাসার কাছে আমি হেরে গেলাম। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি অনুকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসেন। আর অনু তো আমাকে ভালোই বাসে না। অনু আপনাকে ভালোবাসে। আমি আর আপনাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না। আমি অনুর সাথে আমার বিয়েটা ভেঙে দিবো। আর আপনার বাবাকেও বলে দিবো তিনি যাতে আর ভয় না পান। আমি আপনার বাবাকে আর কোনো ভয় দেখাবো না। কোনো বাঁধাও দিব না। আপনাদের বিয়েতে আর কোনো বাঁধা রইল না। আপনারা দুজনেই ভালো থাকবেন। সুখে থাকবেন।
পল্লব অনুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
–আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও অনু। তোমাকে আমি খুব বিরক্ত করেছি। আসলে জোর করে তো আর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আদ্র আমার চোখ খুলে দিয়েছে।
অনু পল্লবকে শান্ত স্বরে বলল,
–তুমি যে তোমার ভুলটা বুঝতে পেরেছ এই অনেক।
আদ্র হেসে পল্লবকে বলল,
–পল্লব আপনি আর মন খারাপ করবেন না। আপনার জীবনেও একদিন এমন কেউ আসবে যে আপনাকে মন থেকে খুব ভালোবাসবে।
পল্লব হাসার চেষ্টা করে আদ্রকে বলল,
–হয়তো পাবো আবার হয়তো না। মন থেকে ভালোবাসার মানুষ তো আর সহজে পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে কিনেও পাওয়া যায় না। জোর করেও পাওয়া যায় না। আদ্র আপনি খুব ভাগ্যবান যে অনুর মতো একটা মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছেন। অনু আপনাকে এতো ভালোবাসে যা বলার বাহিরে। আজকাল এমন ভালোবাসা সহজে দেখা যায় না৷ পাওয়াও যায় না।
আদ্র হেসে পল্লবকে বলল,
–হ্যা আমি আসলেই ভাগ্যমান অনুকে পেয়ে। আর অবশ্যই আপনিও এমন কাউকে পাবেন যে আপনাকে মন থেকে ভালোবাসবে। আমি আর অনু আপনার জন্য মন থেকে দোয়া করব। এখন তাহলে আমরা আসি।
পল্লব আদ্র আর অনুকে বলল,
–একি আপনারা চলে যাচ্ছেন? কিছু খেয়ে তো যান!
আদ্র অনুর হাত শক্ত করে মুঠোয় ধরে পল্লবকে বলল,
–আজ না। অন্য কোনোদিন আসবো।
আদ্র অনুকে নিয়ে পল্লবের বাসা থেকে চলে গেল। আর পল্লব অনেকক্ষণ দরজার বাইরে তাকিয়ে থেকে ধপ করে মাটিতে বসে কাঁদতে লাগল। টেবিলে রাখা ছবিগুলো আবারও হাতে নিল যেখানে আদ্র ও অনু কাছাকাছি। পল্লব কাঁদতে কাঁদতেই ছবিগুলো ছিঁড়ে ফেলল। রেদোয়ান আহমেদ পল্লবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
–কাঁদে না বাবা।
পল্লব কাঁদতে কাঁদতে রেদোয়ান আহমেদকে বলল,
–বাবা অনু আমার হলো না বাবা। অনু আমাকে কোনোদিনও ভালোবাসে নি। ভালোবাসবেও না। জোর করে তো আর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আমি তো তবুও জোর করে চেষ্টা করেছিলাম। পারলাম না বাবা। ওদের এতো সুন্দর ভালোবাসার সম্পর্কটা আমি নষ্ট করতে পারলাম না। আদ্র অনুকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে বাবা। আমি আদ্রের চোখে অনুর জন্য সেই ভালোবাসা দেখেছি। অনুকে আমি কোনোদিন পাবো না বাবা। কোনোদিন পাবো না।
পল্লবের কান্না দেখে রেদোয়ান আহমেদও কাঁদতে লাগলেন। পল্লবের মা সেলিনা আক্তার আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিল। বাসায় এসে পল্লবকে এভাবে মাটিতে বসে কাঁদতে দেখে সেলিনা আক্তার দৌড়ে ছুটে এলেন। সেলিনা আক্তার বিচলিত স্বরে রেদোয়ান আহমেদে বলল,
–কি হয়েছে আমার ছেলের? পল্লব এভাবে কাঁদছে কেন?
রেদোয়ান আহমেদ চোখের জল মুছে স্ত্রীকে বললেন,
–তোমার ছেলের বিয়েটা অনুর সাথে আর হবে না। অনু অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসে। আজ সেই ছেলে ও অনু এসে যা করেছে তা বলার মতো না।
রেদোয়ান আহমদের সেলিনা আক্তারকে তবুও সব খুলে বলল। সব শুনে সেলিনা আক্তার পল্লবের মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
–কাঁদিস না বাবা। আমি অনুর থেকেও তোর জন্য ভালো মেয়ে এনে দিবো। তুই কাঁদিস না। তোর কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।
তবুও পল্লব নিঃশব্দে কেঁদেই যাচ্ছে। অনুকে তো পল্লব কোনোদিন পাবে না। অনু যে কখনো তার ছিল না। সে যে অন্য কারোর। একথা ভাবতেই পল্লবের বুকের ভিতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। পল্লব মনে মনে বলল,
–তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি কি করে আমি শেষ করব আমার মনের ভিতর থেকে? তুমি বলেছো তোমাকে ভুলে যেতে। কিন্তু তোমাকে ভালোবেসেছি আমি। খুব বেশি মন থেকে ভালোবেসেছি। মনের এই অনুভূতি মন থেকে শেষ করা কি আসলেই সম্ভব? তোমাকে আমি কোনোদিন পাবো না কিন্তু তোমাকে মন থেকে ভালোবাসে যাবো আজীবন।
চলবে…