তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_০২,০৩
Anika Fahmida
পর্ব-০২
অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আমি তোমার দুই গালে চুমু দিতে পারবো না আদ্র
ভাইয়া৷ তুমি আমাকে অন্য কিছু করতে বলো।
আদ্র অনুর দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বলল,
–তাহলে একশো চল্লিশ বার কান ধরে ওঠবস কর।
আদ্রের কথায় অনুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কতটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে আদ্র অনুকে ফেলছে। অনু কি করে এটা করবে? আর না করেও তো উপায় নেই।কারণ অনুর পায়ে এখনো খুব ব্যথা করছে। পায়ের ব্যথায় উঠতে পারবে কিনা সন্দেহ।
অনু উপায় না পেয়ে আদ্রের কাছে গেল। আদ্র এখনো অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু এখন আদ্রের খুব বেশিই কাছে। আদ্রের থেকে অনুর দূরত্ব এক ইঞ্চি। অনুর ভীষণ ভয়, লজ্জা লাগছে। তাই অনু চোখ বন্ধ করে আদ্রের দুই কাঁধে নিজের দুই হাত রেখে আদ্রের গালে চুমু দিতে গেল কিন্তু ভুলবশত অনু আদ্রের গালে চুমু না দিয়ে ঠোঁটে চুমু দিয়ে ফেলল। অনু চোখ খুলে যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তখন অনেক জোরে চিৎকার দিল। এটা অনু কি করে ফেলল? ভুলবশত কিনা আদ্র ভাইয়ের ঠোঁটে চুমু দিয়ে ফেলল! এবার অনু বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করতে লাগল। কিন্তু আদ্র সেই একইভাবে বিছানার এক পাশে বসে আছে। আদ্র অনুর কান্না দেখছে। মনে মনে আদ্রের হাসি পেলেও মুখে অনুকে বলল,
–বাহ্ অনু তুই তো দেখি এক ধাপ এগিয়ে গেছিস রে। তোকে বললাম আমার দুই গালে চুমু দিলে তুই শাস্তি থেকে মুক্তি পাবি আর তুই কিনা সরাসরি আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলি? তুই ভীষণ দুষ্টু হয়ে গেছিস।
অনু একবার আদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর আবারও লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানার কাঁথা নিজের শরীর মুখে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। অনু আদ্রের বিপরীত দিকে ঘুরে শুয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তুমি তোমার বাসায় চলে যাও। প্লিজ আমাকে আর কিছু বলতে এসো না।
–বাইরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। আর তুই আমাকে এই ঝড় বৃষ্টির দিনে তোর বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস অনু? আমার যদি কিছু হয়ে যায় তখন তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি তো?
অনু তাড়াতাড়ি করে আদ্রের দিক করে শুয়ে পড়ল। তারপর আদ্রর দিকে তাকিয়ে অনু বলল,
–তোমাকে বাইরে যেত হবে না আদ্র ভাইয়া। তুমি এখানেই বসে থাকো।
আদ্র নিজের মোবাইল ফোন বের করে গেমস খেলতে লাগল৷ বেশ কিছুক্ষণ সবকিছু নিরব হয়ে রইল। অনু মুখের উপর এখনো কাঁথা দিয়ে রেখেছে। অনুর বুকের ভিতরটা ঢিপঢিপ করছে। ঐসময় কি করে বসল। আদ্র ভাইয়ার ঠোঁটে কিনা! অনু আর কিছু ভাবতে পারল না।
নিরবতার পর্যায় শেষ করে আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–অনু তুই বাসায় একা কেন?খালামনি কোথায় গেছে?
অনু কাঁথা থেকে মুখ তুলে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আম্মু বাজারে গেছে আদ্র ভাইয়া। আজ বাসায় আদা, রসুন, তেল, চিনি, লবণ কিছু নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। আম্মুর আব্বুকে বলতে খেয়াল ছিল না। ফোনেও টাকা নেই। তাই তো আম্মু বাজারে চলে গেল। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির জন্য হয়তো আম্মু কোথাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন বৃষ্টি থামবে।
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–খালামনি ছাতা নেয় নি?
–নেয় নি তো। এজন্যই তো আম্মুর আসতে দেরি হচ্ছে।
আদ্র উঠে দাঁড়াল। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–কি হলো আদ্র ভাইয়া উঠে পড়লে কেন?
আদ্র অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–বোকা মেয়ে আমাকে আগে বলবি না? ঝড় বৃষ্টি কখন থামবে কে জানে? আমি গিয়ে খালামনিকে নিয়ে আসি।
অনু মন খারাপ করে বলল,
–তুমিও তো আমার কাছ থেকে জানতে চাও নি।
আদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেল। অনু শুয়ে থাকা থেকে উঠে বসল৷ অনু এবার নিজে নিজেই রেগে বলল,
–পঁচা আদ্র ভাইয়া তুমি। আমাকে আগে শাস্তি দিতে। আর এখন লজ্জা দেও। আম্মুকে তো আদ্র ভাইয়ার এসব কাজের কথা বলতেও পারবো না। আম্মুকে বলে দিলে আদ্র ভাইয়া আমার বারোটা বাজিয়ে দিবে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় পর আদ্র অনুর মা আমেনা বেগমকে নিয়ে বাসায় পৌঁছাল। অনু পা ব্যথায় উঠে দাঁড়াতে পারবে না তাই বিছানায় শুয়ে রইল। আমেনা বেগম অনুর রুমে এসে হাসিমুখে অনুকে বলল,
–দেখেছিস অনু! আমার আদ্র বাবা কত ভালো। তুই তো কোনো কাজেরই না। আমি ঝড় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছি, কই আমাকে হাতে ছাঁতা নিয়ে নিতে আসবি তা না! উল্টো এখানে শুয়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস! আদ্রের কাছ থেকে তো কিছু শিখতে পারিস অনু।
অনু বিরক্তি দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। অনু আমেনা বেগমকে জিজ্ঞেস করল,
–আম্মু আদ্র ভাইয়া কোথায় গেছে?
আমেনা বেগম অনুকে বলল,
–আদ্র আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেছে। কত করে বললাম বৃষ্টি কমলে তারপর বাড়ি যা কিন্তু আমার কথা ছেলেটা শুনলই না।
অনু মন খারাপ করে বলল,
–ওহ্
আমেনা বেগম রেগে অনুকে বলল,
–আজকে ঠিকঠাক মতো আদ্রের কাছে পড়া বলতে পেরেছিস অনু?
অনু হাসার চেষ্টা করে বলল,
–হ্যা আম্মু পেরেছি।
–যাক পড়া পেরেছিস তাহলে।
আমেনা বেগম অনুর রুম থেকে চলে গেল।
–তোমার বোনের ছেলে যে কত ভালো তাতো তুমি জানো না আম্মু। ভালো না ছাঁই। রাগীর সাথে পুরো লুচ্চা আদ্র ভাইয়া। কিন্তু তোমাকে বললে তো উল্টো তুমি আমাকে বকবে। আমার কথা বিশ্বাসই করবে না। কপাল আমার।
অনু মনে মনে এসবই ভাবছিল তখন অনুর ফোনে আদ্রের কল আসল। অনু ফোনের স্ক্রিনে আদ্র ভাইয়ার নাম দেখে চমকে উঠলো। আদ্র ভাইয়া আবার কল দিলো কেন? কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে অনু বলল,
–হ্যালো আদ্র ভাইয়া?
আদ্র রাগী স্বরে বলল,
–আজকে তো পড়া দিতে পারলি না।গতকালকের পড়াটা আজকে শিখে রাখিস অনু। আগামীকাল পড়া না পাড়লে তোর কপালে দুঃখ আছে। তোর পা ব্যথা দেখে বাড়তি পড়া দিলাম না।পায়ে মলম লাগিয়ে নিস।ফোন রাখলাম। বাই।
আদ্র ফোন রেখে দিল। অনু মন খারাপ করে বলল,
–এই পায়ে ব্যথা নিয়ে এখন আমাকে পড়তে হবে? আদ্র ভাইয়া তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন? আর তোমাকেই কেন আমার টিউটর হতে হলো? দুনিয়ায় কি আর কোনো টিউটর আমার জন্য ছিল না? যেখানে অন্য টিউটর সপ্তাহে চারদিনের বেশি পড়াতেই চায় না সেদিকে তুমি আমাকে প্রতিদিন পড়াতে চলে আসো। সপ্তাহে সাত দিন! এটা আমার সাথে খুব অন্যায় করা হচ্ছে। আমি একটু ছুটির দিনও পাচ্ছি না। ভালো লাগে না কিছু।
নিজের রুমের সোফায় আদ্র বসে আছে। আদ্রের জ্বর সাথে ঠান্ডাও লেগে গেছে। কারণ নিজের ছাতাটা আদ্রের খালামনিকে দিয়ে দিতে হয়েছিল। ফলস্বরূপ আদ্রকে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। আমেনা বেগম বারণ করেছিল আদ্রকে বৃষ্টিতে না ভিজতে। আদ্র আমেনা বেগমকে উত্তরে বলেছিল তার বৃষ্টিতে কিছু হবে না। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলে আদ্রের জ্বর চলে আসে। ঠান্ডা লেগে যায়। এখনও তাই হয়েছে। আদ্র রুমাল দিয়ে নিজের মাথা মুছতে মুছতে বলল,
–জ্বর ঠান্ডা আসার আর টাইম পেল না। কিন্তু আমার যতই জ্বর ঠান্ডা লাগুক না কেন! কাল অনুকে আমি পড়াতে যাবোই। মেয়েটা একটুও পড়াশোনা করে না। এই অনুকে নিয়ে যে আমি কোথায় যাবো!
আদ্র নিজের ফোনের গ্যালারিতে সেট করে রাখা অনুর হাসি মুখের ছবিটি দেখতে লাগল। অনু যখন পড়া না পেরে নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য মুচকি হেসে আদ্রের সাথে কথা বলছিল তখনই আদ্র অনুর অজান্তে ছবিটি তুলে ফেলে। আদ্র অনুর ছবির দিকে তাকিয়ে আবারও বলতে লাগল,
–তুই খুব বোকা অনু। এতোটা বোকা না হলেও পারতি। কিন্তু তোর এই বোকামিতেই তোকে খুব মানায়।
পরেরদিন বিকালে কলিংবেল বাজলো। অনু দরজা খুলে দেখে আদ্র এসেছে। অনু মুখ গুমোট করে নিজের রুমে চলে গেল। অনু নিজের চেয়ারে বসে পড়ল। আদ্র অনুর পাশের চেয়ারে বসল। অনু আদ্রর দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল কিন্তু আবারও খেয়াল করে আদ্রের দিকে অনু তাকাল। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–অনু এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তোমার চোখ মুখ খুব লাল হয়ে আছে।
আদ্র বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতেই অনুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
–আমার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ভালো কথা। তাতে তোর কি অনু? তুই পড়ায় মনোযোগ দে।
–তোমার চোখ লাল দেখতে আমার ভালো লাগছে না আদ্র ভাইয়া।
অনু হঠাৎ করেই আদ্রের কপালে হাত ছুঁয়ে দিল। আদ্র নিজের কপালে রাখা অনুর হাতটা সাথে সাথে চেপে ধরে সরিয়ে ফেলল। অনু আর্তনাদ করে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তোমার তো খুব জ্বর!
–আই ডোন্ট কেয়ার।
–আদ্র ভাইয়া তুমি ঔষধ খাও নি?
আদ্র রেগে চিৎকার করে বলল,
–জাস্ট সাট আপ অনু। আমাকে নিয়ে বেশি কথা বলবি না।পড়া বের কর।
অনু আদ্রের ধমক খেয়ে কাঁদতে লাগল। আদ্র অনুর কান্না সহ্য করতে পারে না। তাই আদ্র অনুর চোখের জল মুছে দিতে লাগল। অনু এবার আদ্রের হাত চেপে ধরল।
চলবে…
তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?
পর্ব_০৩
Anika Fahmida
অনু আদ্রের হাত চেপে ধরায় আদ্র রেগে অনুকে বলল,
–আমার হাত ছাড় অনু।
আদ্র রেগে গেছে বুঝতে পেরে অনু হাত ছেড়ে দিল। পরমুহূর্তেই অনু আদ্রকে বলল,
–আমি আজকে পড়ব না আদ্র ভাইয়া। তুমি যতই আমাকে জোর করো না কেন, আমি পড়ব না।
আদ্র হাতে লাঠি নিয়ে বলল,
–কি বললি তুই?
আদ্রের হাতে লাঠি দেখে অনু ভয়ে ভয়ে বলল,
–তোমার শরীরে জ্বর আদ্র ভাইয়া। এতো কষ্ট করে তোমার আজকে আমাকে পড়াতে হবে না। তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
–আমি কিছুই খাবো না অনু। আর তোকে পড়তে হবে মানে পড়তে হবে।
–কিন্তু আমি তো পড়বো না।
আদ্র রেগে গিয়ে বলল,
–বুঝতে পেরেছি তুই আমার কথা শুনবি না। তোর পড়াশোনায় মনোযোগ নেই। বেশ ভালো তো। আমি আর তোকে কোনোদিন পড়াতে আসবো না। আজকেই আমি তোকে লাস্ট পড়ালাম। আমি চললাম।
আদ্র অনুর রুম থেকে চলে গেল। আদ্রের কথায় অনু অবাক হলো। সত্যি আদ্র ভাইয়া আর পড়াতে আসবে না? আদ্র ভাইয়া পড়াবে না এটা তো ভালো কথা। কিন্তু অনুর এতো মন খারাপ কেন হচ্ছে? কেন হচ্ছে অনুর জানা নেই। অনু টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগল।
আদ্র চলে যাচ্ছে দেখে আমেনা বেগম আদ্রকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–আদ্র বাবা তোমার অনুকে পড়ানো হয়ে গেছে?
আদ্র হতাশ হয়ে বলল,
–খালামনি অনুকে পড়ানো হয় নি। অনুর পড়াশোনায় একদম মনোযোগ নেই। তাই আমি ভাবছি আমি আর অনুকে পড়ানোর জন্য আসবো না। অনুর জন্য অন্য কোনো টিউটর রাখলে ভালো হবে।
আমেনা বেগম অনুর উপর রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–মেয়েটা এতো খারাপ হয়ে গেছে। আজকেই আমি অনুকে উচিত শিক্ষা দিব।
অনুর মা রেগে অনুর রুমে যাওয়ার জন্য রওনা দিতে গেলেই আদ্র বাধা দিয়ে বলল,
–না খালামনি অনুকে কিছু বলো না। অনু বাচ্চা মেয়ে। আমিই হয়তো অনুকে ঠিকঠাক পড়াতে পারছি না।
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–তুমি এতো মেধাবী ছাত্র হয়ে অনুকে ঠিকমতো পড়াতে পারছো না এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বাবা।
আদ্র অামেনা বেগমকে বলল,
–কিন্তু এটাই সত্যি খালামনি। আমি অনুর জন্য সঠিক শিক্ষক নই। আমি এখন আসি খালামনি।
–আদ্র বাবা দাঁড়াও। কিছু না খেয়ে চলে যাচ্ছো কেন?
–আমার খিদে নেই খালামনি। আমি আসি। আর এমনিতে তো মাঝে মাঝে এই বাড়িতে আসবোই।
আদ্র আর একমুহূর্তও দাঁড়াল না। অনুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল। অনুর মা মন খারাপ করে অনুর রুমে গিয়ে দেখে অনু টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।
–আদ্রকে তুই কেন তাড়িয়ে দিলি অনু?
অামেনা বেগমের কথায় অনু নিজের চোখের জল মুছে ভাঙা গলায় বলল,
–আমি আদ্র ভাইয়াকে তাড়িয়ে দেই নি আম্মু। আদ্র ভাইয়া নিজেই চলে গেছে।
আমেনা বেগম অবাক হয়ে অনুকে বলল,
–তুই কাঁদছিস কেন অনু?আদ্র তোকে আর পড়াতে আসবে না। তোর তো খুশি হওয়ার কথা।
অনু খেয়াল করে দেখল হ্যা অনু কাঁদছে। কিন্তু কেন কাঁদছে সেটাই বুঝতে পারছে না। অনু চুপ করে রইল।
আদ্র মাঠের এক বেঞ্চিতে বসে আছে। আদ্রের সাথে আছে আদ্রের বন্ধু রিফাত, নিলয়, প্রান্ত, রিনি, সুমি।
রিফাত আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–কিরে আদ্র এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? আমরাই বকবক করছি। তুই তো কিছুই বলছিস না। কি হয়েছে তোর? জ্বরের শরীর নিয়েও এখানে আড্ডা করতে চলে এলি।
আদ্র উত্তরে বলল,
–জানি না।
সুমি আদ্রকে বলল,
— তোর মতো সুদর্শন ছেলেকে মন খারাপে মানায় না আদ্র। তোকে রাগী লুকেই মানায়। তুই তো আমাদের বললি তোর শরীর খারাপ। তাহলে বাসায় গিয়ে রেস্ট নে। নাহলে আমাদের সাথে গল্প কর।
রিনি সুমির সাথে সাথে বলল,
–হ্যা ঠিক বলেছিস সুমি। এই আদ্র যে কেন মন খারাপ করে এখানে বসে আছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
নিলয় আদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল,
–ছ্যাঁকা খাইছিস নাকি মাম্মা?
আদ্র নিজের কাঁধ থেকে নিলয়ের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মন খারাপ করে বলল,
–সবসময় মজা ভালো লাগে না নিলয়।
প্রান্ত হেসে বলল,
–বুঝেছি পোলায় প্রেমে পড়ে দেবদাস হয়েছে।
বন্ধুদের কথাবার্তা আদ্রের কাছে ভালো লাগছে না। তাই আদ্র সেখান থেকে উঠে চলে গেল। সবাই পিছু ডাকল কিন্তু আদ্র শুনল না।
বাসায় গিয়ে বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে আদ্র অনেক্ষণ ভিজতে লাগল। আদ্র মনে মনে বলল,
–আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি অনুর প্রতি খুব বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। না আমার এতো দুর্বল হলে চলবে না। সামনে আমার অনার্স ফাইনাল এক্সাম। সারাদিন অনুর কথা ভাবা চলবে না। আর কখনো অনুকে পড়াতে যাবো না আমি। অনুর কাছে গেলে নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল মনে হয়। এটা হতে দেওয়া চলবে না।
আদ্র দুই ঘন্টা শাওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসল। নীল কালার টি শার্ট আর জিন্স পড়ে আদ্র বিছানায় শুয়ে পড়ল।
রাত আটটা বাজে৷ কিন্তু আদ্র এখনো শুয়ে আছে। আদ্রের মা রেহেনা পারভিন অনেকবার আদ্রকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিয়েছেন কিন্তু আদ্র তার মায়ের কথা শুনে নি। এই গরমেও আদ্র কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। রুমে এসি চলছে তবুও আদ্রের শরীর প্রচন্ড গরম। হঠাৎ গালে কারও শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে আদ্র চোখ খুলে তাকাল। সামনে অনুকে দেখে আদ্র অবাক হলেও তার চেয়ে বেশি অবাক কারণ অনুর চোখ মুখ ফুলে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ কেঁদেছে অনু। কিন্তু অনু কান্না করেছে কেন? আদ্র মনে মনে বলল,
–আমি চলে গিয়েছি তোর তো খুশি হওয়ার কথা। তাহলে তুই কেন কাঁদলি অনু? তোর মন কেন এতো খারাপ? আচ্ছা তাহলে আমার মনে যেই অনুভূতিগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়ায় সেই অনুভূতি কি তোকেও তাড়া করে বেড়ায়?আমার মতো তুইও কি আমাকে নিয়ে ভাবিস অনু?
আদ্রের ভাবার মাঝে অনু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তুমি খুব খারাপ।
আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটানে অনুকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। অনু ভয় পেয়ে আদ্রকে বলল,
–কি করছো আদ্র ভাইয়া? আমাকে ছাড়ো।
আদ্র অনুকে বলল,
–আমি খারাপ এটা কেন বললি?
অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
–আমি জানি না।
আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আদ্রের জ্বরের উষ্ণতা অনুর শরীরে অনুভব হচ্ছে। অনুর খুব গরম লাগছে কিন্তু তাও কিছু বলছে না। হুট করে আদ্র অনুকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বলল,
–রুম থেকে চলে যা অনু।
অনু বুঝতে পারছে না এই আদ্র ভাইয়ার হঠাৎ হঠাৎ কি হয়? এই টেনে জড়িয়ে ধরে আবার এই ছেড়ে দিয়ে বলে চলে যা। অনু মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল তখন আদ্র অনুকে বলল,
–আমার জন্য সুপ নিয়ে আয় অনু। আমি সারাদিন কিছু খাই নি। ক্ষুধা লেগেছে।
–আদ্র ভাইয়া তুমি সারাদিন না খেয়ে ছিলে কেন?
–এমনি।
–কি বলছো তুমি? খালামনি কিছু বলে নি তোমায়?
–আমাকে আম্মু অনেক জোর করেছিল কিন্তু আমিই আম্মুর কথা শুনি নি।
–খালামনির কথা শুনো নি কেন?
— মন ভালো ছিল না।
–মন ভালো ছিল না কেন?
–এতো কথা না বলে আমার জন্য সুপ নিয়ে আয়।
আদ্রের ধমক শুনে অনু রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রের জন্য সুপ আনতে। আদ্র একইভাবে শুয়ে রইল৷ অনু বেশ কিছুক্ষণ পর সুপ নিয়ে রুমে এলো। অনু্ আদ্রকে ডাক দিতে লাগল,
–আদ্র ভাইয়া? আদ্র ভাইয়া উঠো। তোমার জন্য সুপ নিয়ে এসেছি।
আদ্র উঠে বসল। অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–তুই নিজে সুপ বানিয়েছিস?
অনু আদ্রকে বলল,
–আমি কি সুপ বানাতে পারি নাকি? আমি তো রান্নাই করতে পারি না৷ খালামনিকে বলেছি খালামনি সুপ বানিয়ে দিয়েছে।
আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর অনুকে বলল,
— ওহ। আমাকে খাইয়ে দে।
অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর আদ্রের কথা মতো অনু আদ্রকে সুপ খাওয়াতে লাগল৷ আদ্র অনুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সুপ খেতে লাগল। আদ্রের এমনভাবে তাকানো দেখে অনুর কেমন যেন লাগছে কিন্তু কিছু না বলে অনু আদ্রকে চুপচাপ সুপ খাওয়াতে লাগল। সুপ খাওয়া শেষ করে আদ্রকে অনু পানি খাইয়ে দিল। আদ্র আবারও শুয়ে পড়ল। নিজের দু চোখ বন্ধ করে আদ্র অনু্কে শান্ত স্বরে বলল,
–এতো রাতে আমার বাসায় কেন এলি?
চলবে…