তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_০৪

0
3189

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_০৪
Anika Fahmida

সত্যিই তো! এতো রাতে অনু আদ্রের বাসায় কেন এসেছে তা অনুর জানা নেই। এক অদ্ভুত টানে অনু দৌড়ে ছুটে এসেছে আদ্রের বাসায়। কিন্তু এখন আদ্রকে অনু কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না। আদ্র আবারও বিরক্তি স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–কি হলো অনু?আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। বলছিস না কেন?

অনু আমতা আমতা করে বলল,

–আসলে আদ্র ভাইয়া আমি…আসলে তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই তোমাকে দেখতে চলে এলাম।

আদ্র সন্দেহী গলায় বলল,

–শুধুমাত্র আমাকে দেখার জন্য তুই এতো রাতে নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে আমার বাসায় চলে এলি?

অনু আদ্রকে বলল,

–তো কি হয়েছে? আমি কি তোমাকে দেখার জন্য এখানে আসতে পারি না? তুমি তো আমার আদ্র ভাইয়া। আর আদ্র ভাইয়া অসুস্থ তা দেখে অনু কি চুপ করে ঘরে বসে থাকতে পারে?

আদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ করে আদ্রের দুই বান্ধবী রিনি ও সুমি আদ্রের রুমে এসে হাজির হয়। আদ্র অবাক হয়ে রিনি ও সুমিকে দেখে বলে উঠল,

–আরে রিনি, সুমি তোরা এই এতো রাতে আমার বাসায়?

সুমি হেসে সোফায় বসে বলল,

–সারপ্রাইজ আদ্র। তুই কেমন আছিস সেটাই দেখতে এলাম আমরা। এখন কেমন আছিস এটা বল?

আদ্র সুমিকে বলল,

–হ্যা আমি এখন ভালোই আছি।

রিনি অনুর পাশে বসে আদ্রকে বলল,

–এই আদ্র তুই তো আমাকে ফোনও দিলি না। জানিস কত চিন্তা করছিলাম আমি?

আদ্র বিরক্ত স্বরে রিনিকে বলল,

–তোকে ফোন দিবো কোন দুঃখে? আমার কি খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নেই? মন চায় নি তাই ফোন দেই নি সিম্পল।

রিনি আদ্রকে মন খারাপ করে বলল,

–এভাবে তুই বলতে পারলি!

সুমি অনুকে এবার খেয়াল করে দেখল। অনুকে দেখতে পেয়ে সুমি আদ্রকে বলল,

–এই মেয়েটা কে আদ্র?

আদ্র একবার অনুর দিকে তাকিয়ে তারপর সুমিকে বলল,

–ও হলো অনু। আমার কাজিন। তোদের মতোই আমি অসুস্থ জেনে আমাকে এতো রাতে একা একাই দেখতে চলে এসেছে। পাগলী মেয়ে একটা।

সুমি কিছু বলল না। রিনি বলে উঠল,

–বাহ্ এতো ছোট মেয়ে কিনা তার কাজিনকে দেখার জন্য একা এতো রাতে চলে এলো? এই অনু আদ্রকে ভালোবাসো নাকি? আমার তো তাই মনে হচ্ছে।

অনু কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। তবুও অনু রিনিকে বলল,

–আপু আদ্র ভাইয়া শুধু আমার কাজিন। তেমন কিছু না। তুমি একটু বেশি ভাবছো।

অনুর কথাটা আদ্রের কাছে ভালো লাগলো না। আদ্র বিছানার চাদর খামচে ধরে রাগী দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র মনে মনে বলল,

–আমি জাস্ট তোর কাজিন?আর কিছু হই না তোর? তুই এটা বলতে পারলি অনু!

সুমি সোফায় বসা থেকে উঠে এসে আদ্রের একদম কাছে চলে এসে আদ্রের কপালে হাত দিতে গেলে আদ্র রেগে সুমিকে বলল,

–একদম আমার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করবি না সুমি। দূরে গিয়ে দাঁড়া।

সুমি আদ্রের ব্যবহারে অবাক হলো। সুমি আদ্রকে মন খারাপ করে বলল,

–তোর জ্বর কমেছে কিনা একটু দেখতে চেয়েছিলাম। এমন করছিস কেন?

আদ্র বিরক্ত হয়ে সুমিকে বলল,

–তোর দেখার লাগবে না। আমি ঠিক আছি।

সুমি মন খারাপ করে আবারও সোফায় বসে পড়ল। অনু ওদের সাথে আদ্রের করা ব্যবহারে খারাপ লাগলেও কেন যেন আবার খুশিও হচ্ছে। অনু মনে মনে বলল,

–যাক আদ্র ভাইয়াকে আমি ছাড়া আর কেউ ছুঁতে পারে না। এইদিক দিয়ে আমার আদ্র ভাইয়াকে ভালো লেগেছে। তুমি খুব ভালো আদ্র ভাইয়া।

অনু রিনির পাশে বসে আছে তাই রিনির ভালো লাগছে না। আবার ওদের ধমক খেতে দেখে অনু মজা নিচ্ছে এটা রিনি বেশ ভালো বুঝতে পারছে। তাই রিনি অনুকে বলল,

–অনু তুমি এখন এই রুম থেকে চলে যাও। আমরা আদ্রের সাথে একটু কথা বলবো।

সুমিও রিনির সাথে সাথে বলল,

–হ্যা অনু তুমি এখন যাও।

রিনি ও সুমির কথা শুনে অনুর মন খারাপ হয়ে গেল।আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। রিনি ও সুমির দিকে তাকিয়ে অনু মন খারাপ করে বলল,

–আমাকে কেন চলে যেতে হবে? আমি এখানে বসি?

সুমি অনুকে বলল,

–তুমি এখানে থেকে আর কি করবে অনু? আমরা বন্ধুরা কথা বলবো। তুমি ছোট মানুষ তাই তো বললাম রুম থেকে চলে যেতে।

আদ্রের মেজাজ গরম হয়ে গেল। আদ্র রেগে সুমি ও রিনির দিকে তাকিয়ে বলল,

–অনু রুম থেকে কোথাও যাবে না। গেলে তোরা যাবি। বের হয়ে যা আমার রুম থেকে।

আদ্রের ব্যবহারে রিনি ও সুমি রেগে গেল। রিনি রেগে গিয়ে বলল,

–আদ্র তুই কিন্তু এবার আমাদের অপমান করছিস। আমরা তোর বন্ধু হই তুই কি ভুলে যাচ্ছিস?

সুমি আদ্রকে বলল,

–অনুর জন্য তুই আমাদের চলে যেতে বলতে পারলি আদ্র? এমন করছিস কেন তুই?

আদ্র রাগান্বিত দৃষ্টিতে শক্ত গলায় রেগে বলল,

–তোরা দুইজন আমার রুম থেকে এই মুহুর্তে বেরিয়ে যাবি। তোদের সাহস হয় কি করে অনুকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলার?এখনি রুম থেকে বের হবি তোরা।

রিনি ও সুমি কান্না করে দিবে অবস্থা। তারা আর একমুহূর্তেও আদ্রের রুমে না দাঁড়িয়ে চলে গেল। অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

–আপুরা খুব কষ্ট পেয়েছে আদ্র ভাইয়া।তুমি ওদের এতো না বকলেও পারতে।

আদ্র রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুকে রেগে বলল,

–ওদের জন্য তোর এতো দরদ না দেখালেও হবে অনু। ওরা তোকে অপমান করছিল।

অনু আদ্রকে বলল,

–কই আমাকে অপমান করছিল? আমি তো বুঝতে পারছি না। কি করে অপমান করল?

আদ্র রাগী ভাব নিয়ে বলল,

–বড্ড বেশি কথা বলিস তুই অনু। আমাকে কি তোর আজকাল ভয়ও লাগছে না? ভয় কি সব গিলে খেয়ে ফেললি? নাকি তুই আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়ার পর তোর এই অবস্থা হয়েছে?

আদ্রের কথা শুনে অনু লজ্জা পেয়ে গেল। আদ্র ভাইয়া কিসব বলছে। অনু যে লজ্জা পাচ্ছে আদ্র ভাইয়া কি বুঝতে পারছে না? নাকি লজ্জায় ফেলার জন্য ইচ্ছে করে এসব বলছে। অনু বুঝতে পারছে না। অনু তাড়াতাড়ি আদ্রকে বলল,

–আদ্র ভাইয়া তুমি কিসব বলছো! আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।

অনু বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাচ্ছিল। আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে বলল,

–একা একা আমি তোকে কোথাও যেতে দিব না। তোকে আমি বাসায় পৌঁছে দিব।

অনু আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমি একা যেতে পারবো আদ্র ভাইয়া। তোমার শরীরে জ্বর তারওপর আবার ঠান্ডা বাঁধিয়ে ফেলেছ। তোমার কষ্ট করে যেতে হবে না।

আদ্র রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–এখন কিন্তু তুই আমার হাতে মার খাবি অনু। মুখে মুখে বেশি তর্ক আমার ভালো লাগে না।

অনু মন খারাপ করে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে পৌঁছাল। আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। সাথে আদ্রের মা রেহেনা পারভিনও বসে আছে। আনোয়ার হোসেন আদ্রকে দেখে জিজ্ঞেস করল,

–আদ্র তুমি রুম থেকে বের হয়েছো কেন?

আদ্র আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–বাবা আমি অনুকে বাসায় পৌঁছে দিব।

আনোয়ার হোসেন আদ্রকে বলল,

–আমি অনু মাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি তুমি রুমে বিশ্রাম নাও আদ্র।

অনুও তাল মিলিয়ে বলল,

–হ্যা আমি খালুর সাথে বাসায় যাচ্ছি। আদ্র ভাইয়া তোমাকে যাওয়ার লাগবে না।

আদ্র অনুকে ধমক দিয়ে বলল,

–তুই চুপ থাক।

আদ্রের বাবা বলল,

–আদ্র অনুকে ধমকাচ্ছো কেন? অনু তো ঠিক কথাই বলেছে। আমি তো এতে রাগের কিছু দেখছি না।

আদ্র তার বাবাকে বলল,

–বাবা আমি অনুকে বাসায় দিয়ে আসবো মানে আমি দিয়ে আসবো। রাত এগোরাটা বাজে। রাস্তাঘাট বেশি ভালো না। তোমাকে যেতে হবে না। রাস্তায় গুন্ডার অভাব নেই। বিপদ হতে পারে।

আদ্রের বাবা ছেলের সাথে কথায় পেরে উঠবেন না। তাই তিনি বললেন,

–আচ্ছা ঠিক আছে যাও।

আদ্রের মা রেহেনা পারভিন অনুকে বলল,

–আবার এসো অনু।

অনু হেসে আদ্রের মাকে বলল,

–আচ্ছা খালামনি।

আদ্র বিরক্ত হয়ে অনুকে বলল,

–হয়েছে নাটক করা? এই অনু এবার চল।

অনু মন খারাপ করে আদ্রের সাথে বাসা থেকে বের হলো। হাঁটার মাঝখানে আদ্র অনুর হাত শক্ত করে চেপে ধরল৷ অনু প্রথমে ভয়ে কেঁপে উঠলেও আদ্র হাত ধরেছে দেখে আর কিছু বলল না। আদ্র অনুর হাত ধরে রেখেছে দেখে অনুর কেন যেন খুব ভালো লাগছে।অদ্ভুত অনুভূতি মনের মধ্যে কাজ করছে। অনু একবার আদ্রের দিকে তাকাল। রাগী রাগী দৃষ্টি নিয়ে অনুকে সাথে করে সামনে হেঁটে চলেছে আদ্র। অনু মুচকি হাসল। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে দেখল অনু হাসছে। আদ্র চোখ পাকিয়ে অনুকে বলল,

–ভেটকি মাছের মতো এতো ভেটকাচ্ছিস কেন অনু?

আদ্রের কথা শুনে অনুর হাসি উড়ে গেল। অনু আদ্রের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু আদ্র অনুর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

–হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তোর হাত আমি ভেঙে ফেলব অনু।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here