তোমাতেই,পর্ব_১

0
3906

তোমাতেই,পর্ব_১
Arobi_Akter_Poli

-তুই আমার শার্ট ছিড়বি না,,
-তুই আর আমার চুলে পানি দিবি না কুত্তা,,
-ঠিক আছে শাকচুন্নী,,

ঝগড়া মিটিয়ে মুগ্ধ আর পুতুল দুদিকে চলে গেলো। ৬-৮ বছরের ছেলেমেয়ে হলেও তাদের মধ্যে আজ পর্যন্ত কেউ কখনো মিল -মহাব্বত দেখেনি। সারাক্ষণ শুধু লড়াইয়ে ব্যাস্ত থাকে তারা আর ওদিকে তাদের মায়েরা একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড তাই প্রায়ই দুজন দুজনার সাথে দেখা হয়ে যায়। মিসেস সালমা আর নাছরিন বেগম সেই ছোটবেলা থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন ।।একসাথে প্রাইমারি, হাই স্কুল,কলেজ, ভার্সিটিও শেষ করলেন আবার দুজনের একই এলাকায় বিয়ে হলো।। তাই সেই বন্ধুত্বের টান টা তারা এখনো ছাড়তে পারেননি।। মুগ্ধ আর পুতুলের কান্ড দেখে দু পরিবারই হাসে,,,

-দেখ না দুজন যেন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝে না (সালমা বেগম)
-হুম ঠিক বলেছিস
-তোর মনে আছে বলেছিলাম, যে আমার ছেলে হলে আর তোর মেয়ে,, তাহলে তোর মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিব,,
-মনে থাকবে না কেনো,,,আমি তো তোর অপেক্ষায়উ ছিলাম মেয়ের মা তো কি করব বল (মৃদুহেসে)
-হুমম আমি কিন্তু ছেলের মা কন্যাদান ঠিকঠাক মতো না করলে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না,, হা হা হা
-যা চাস তাই হবে,,
-ধুর পুতুলের মতো এতো মিষ্টি মেয়েকে আমার ছেলের বউ করব এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু হয় নাকি ,

পাশ থেকে মিস্টার করিম খান আর নাঈম সাহেব বলে উঠেন,,

-কি, কার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে তোমাদের
-ভাবছি মুগ্ধ আর পুতুলের,,,
-তা বেশ তো আগামী শুক্রবারই বিয়েটা পড়িয়ে দিলে কেমন হয়,, কি নাঈম সাহেব আপনার কোনো আপত্তি নেই তো আপনার মেয়েকে আমার মেয়ে করে নিলে

নাঈম সাহেব কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললেন,,

-নাহ নাহ তা হবে কেনো কিন্তু দুজন তো এখনো অনেক ছোট,, না মানে,, কি গো তুমি কিছু বল,, ( নাছরিন বেগমকে ইংগিত করে)
-হ্যাঁ রে ওড়া তো এখনো অনেক ছোট
-প্লিজ তুই অমত করিস না শুভ কাজে দেরি করতে নেই,, আমাদের ছেলেমেয়ে আমাদের সিদ্ধান্তে খুব সুখি হবে দেখিস,, দুজন বড় হওয়া অব্ধি না হয় দু পরিবারের সাথেই থাকবে তারপর শুভক্ষণ দেখে আমরা না হয় পুতুলকে উঠিয়ে নেবো,,,,

-কিন্তু,,,,( মিসেস নাছরিন)
-তুই আর অমত করিস না প্লিজ এতে আমাদের বন্ধুত্বটাও স্ট্রং হবে

বিয়ের দিন রাতে পুতুলকে সাঁজানো হচ্ছে,,

-মা আমার ভালো লাগছে না আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব বর আসছে না কেনো বিয়ে কখন হবে ,
-হবে মা,,
-মা বিয়ের পর কি আমাকেই শুধু আদর করবে সামলা আন্টি, করিম চাচ্চু তুমি বাবা সবাই,,, মুগ্ধ কে কেউ আদর করবে না তো,,
-না কেউ ওকে আদর করবে না শুধু পুতুল কে করবে,, আর এখন থেকে ওনাদেরকে মা-বাবা বলবে কেমন,,
-কেনো,, বলব না উনাদের মা-বাবা,,?
-বিয়ের পর বলতে হয় তাই বলবে
-তাহলে আমি বিয়ে করব না,,
-কেনো
-মুগ্ধ কে কেউ চকলেট দিবে না তো?
-নাহ সব তুমি পাবা,,
-মা মুগ্ধ কে কি ডাস্টবিনে ফেলে দিবে?
-হুম,,
পুতুল কিছুক্ষণ ভেবে হাউমাউ করে কেদে
-না মা ওকে ফেলো না প্লিজ,,, ঘরের এক কোণে রেখে দিও
-আচ্ছা ঠিক আছে মা এবার চুপ কর

কিচ্ছুক্ষন পর বরযাত্রী এলো সবাই হাসিখুশি , মুগ্ধ বর বেসে তার মায়ের হাত ধরে নাক টানতে টানতে লাল নাক মুখ নিয়ে হাজির।। হাতে চকলেটও আছে,,।। এখানে আসার আগে সেই রকমের একটা মাইর খাইছে তা দেখলেই বুঝা যায় ,,

-কি রে ওর এই হাল কেনো,,
-আর বলিস না বরের পোশাক পড়বেই না ছেলেটা একদম মাথা নষ্ট করে ফেলল তাই ওর আব্বু,,,,,,
-কি দরকার ছিলো মারার,,
-আরে বাদ দে তো আমার বউমা কোথায়?

মুগ্ধ কে দেখে পুতুল দৌড়ে আসলো,,
-তোর হাতে চকলেট কেনো,, এটা আমার
-নাহ এটা আমার চকলেট
-না আমার
দুজনের টানাটানিতে মুগ্ধ ধপাস করে টয়লেটের দরজার সাথে ধাঁক্কা খেয়ে টয়লেটে লুটে পড়ে এই সুযোগে পুতুল টয়লেটের দরজাটা বাহির থেকে তালা দিয়ে দেয়,।।।

অন্ধকার টয়লেটে পড়ে মুগ্ধ হাউমাউ করে চিৎকার করতে থাকে,, ভয়ে রীতিমতো সে পায়জামা ভিজিয়ে ফেলে,,,

মুগ্ধ কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তারপর একজন এসে তাকে টয়লেট থেকে উদ্ধার করতেই মুগ্ধ দৌড়ে এসে পুতুলকে এলোপাতাড়ি থাপ্পড়,,, মারপিটের এক পর্যায় দুজন দুনজের চুল ধরে টানাটানি শুরুকরে,,, পরিবেশটা মাছ বাজার হয়ে গেলো,,,,

মুগ্ধ আর পুতুলের বিয়ের আজ ২ দিন,, দু পরিবার পিকনিকে গেছে।। মুগ্ধ আর পুতুল খুব খুশি,, নিজেদের মতো করে খেলছে মুগ্ধকে বলা হলো পুতুলের সাথে সাথে থাকতে,,, পাশেই কিছু বকাটে ছেলে হট্টগোল করছে।।। পুতুল মুগ্ধ কে ডেকে বলল সে ওয়াশরুমে যাবে কিছুটা পথ হাঁটলেই পাবলিক টয়লেট মুগ্ধ তাকে সেখানে নিয়ে গেলো এবং সে বাহিরে দাড়িয়ে রইলো।। হঠাৎ বকাটে ছেলে গুলো একে অপরকে মারধর শুরু করে এতে অনেক মানুষ সেখানে জরু হয়ে যায় মানুষের ছুটাছুটি আরম্ভ হলে দুই পরিবার নিজেদের গাড়িতে উঠে যায় এইদিকে মুগ্ধ রিভেঞ্জ নিতে টয়লেটের ছিটকিনি লাগিয়ে দেয় আর ওঁ সেখান থেকে দৌড়ে গাড়িতে উঠে যায়,,,, নাছরিন আর নাঈম সাহেব ভাবেন পুতুল মনে হয় মুগ্ধদের গাড়িতে আছে আর মুগ্ধদের ফ্যামিলি ভাবে ওদের মেয়ে ওদের কাছেই,,, অনেকটা পথ যেতেই মিসেস নাছরিন সালমাকে কল করেন, ,,,,

-পুতুলকে দেখে রাখিস আমি রাতে তোদের বাসায় এসে নিয়ে যাবো
-পুতুল? তোদের সাথে নেই ওঁ?
-মানে কি ওঁ তোদের সাথে নেই?
-নাতো
-কি বলিস এগুলো

সবার মুখে আতংকের চাপ গাড়ি গোড়ানো হলো।।

ওইদিকে পুতুল দরজা ধাঁক্কাছে আর মুগ্ধকে ডাকছে।। বাহিরে খুব কোলাহল চলছে রীতিমতো পুলিশ এসে গেছে ওইতো মাগরিবের আজান শুনা যাচ্ছে,, পুতুলের ডাক শুনে এক লোক দরজা খুলে দেয়,, বাহিরে এসে পুতুল কিছুই বুঝতে পারে না,, মানুষের ভীরে হারিয়ে যায় সে।।

দু পরিবার পাগলের মতো পুতুলকে খুঁজে।। মুগ্ধ ভয় পেয়ে যায় এবং চুপ থাকে,,,,মেয়েকে না পেয়ে পাগলের মতো ছুটে যায় পুলিশ স্টেশন সেখানে মিসিং ডাইরী লিখে।। নাছরিন বেগমের আধমরা অবস্থা।।

ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গেছে পুতুলের,, কত বড় বড় মানুষের মাঝে কেউ পুতুলকে লক্ষ্য করছে না পুতুল আলতো পায়ে হাঁটছে মা মা বলে হাক দিচ্ছে কিন্তু কেউ শুনছে না।। মানুষগুলো কেমন করে যেনো তার দিকে তাক্কাছে এখনি যেনো তাকে গিলে খাবে।।। পুতুল হুঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়, আবার উঠে।। এতো মানুষ কোলাহল, ভয় আর কিছুই যেন পুতুল নিতে পারছিলো না, তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় চোখ অন্ধকার ঝাপসা হতে থাকে সবকিছু ঘুরছে আর একসময় সে মাটিতে ঢলে পড়ে।।

ঘন্টা ২-৩ পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সাথে সাথে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেয়,,, ডাক্তার বলেন পুতুলের হার্ট নাকি অনেক দুর্বল,,সে যেই পরিস্থিতিতে ছিলো তা ওর ব্রেইনে এফ্যাক্ট করেছে তাই ক্যায়ারফুল থাকতে হবে কারণ এমনটা আবারও তার সাথে ঘটতে পারে,, সবাই কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে,, এই রোগটা পুতুলকে সারাজীবন বয়ে নিতে হবে।।

সিধান্ত নেয়া হয় যতদিন না পুতুল সুস্থ হচ্ছে সে মুগ্ধদের বাসায় থাকবে,,, সালমা বেগম নিজ হাতে তার বউমার ক্যায়ার নিতে চান,,

দুপুরে মুগ্ধদের টেলিফোনটা বাঁজছে,, পুতুলকে সুপ খেতে দিয়ে সালমা বেগম ফোনটা রিসিভ করেন,,,,

-হ্যালো,,
-জ্বি
-কিইইইইইই (আতংকের সাথে)
-আমরা এখোনি আসছি কোন হসপিটাল

সালমা বেগম কোনো রকমে ব্যাগটা নিয়ে কাঁন্না করতে করতে বেরিয়ে যান তার পিছুপিছু মুগ্ধ।।পুতুলের বাবা-মায়ের একসিটেন হয়ে গেছে আর দুজনেই পরলোক গমন করেছেন।।। পুতুল এই বিষয়ে কিছুই জানে না সে মন দিয়ে সুপ খাচ্ছে।।। আর বলছে,,

-খালা মা-বাবা আসবে না আজকে আমাকে দেখতে,,, আমার বড় টেডি বিয়ারটা আনতে যেনো বাবা না ভুলে তুমি একবার ফোন করে দিও তো,,, বাবা সবকিছু ভুলে যায়

পুতুলের মাথায় জড়িয়ে ধরে রুজি খালা কাঁন্নায় করতে থাকেন,

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here