তোমাতেই
পর্ব_১১,১২
Arobi_Akter_Poly
পর্ব_১১
পুতুল প্রিয়মের সাথে কথা বলছে! মাথার উপর দিয়ে আগুন বয়ে যাচ্ছে মুগ্ধের। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত কাটতে থাকে সে।রাগে অভিমানে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। চোখ দুটো গুলাবারুদ হয়ে আছে মুগ্ধের।
হাতে থাকা কফির গ্লাসটি ছুঁড়ে মারল সে।
পুতুল ভেসিনে এসে মুখে হালকা পানি দিচ্ছে।পেছন থেকে প্রিয়ম পুতুলের চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে। পুতুল আঁতকে উঠে। সব মেয়েরা একপ্রকার পালিয়ে যায় সেখান থেকে। পুতুলকে হালকা ধাঁক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয় প্রিয়ম। তারপর সে গভীর নেশায় হাত দিয়ে পুতুলের ঠোঁট স্পর্শ করতে থাকে।
-নামটা বলা যায় না?
-পু পু পুতুল, (ভীতু হয়ে)
করিডরে মুগ্ধ ও তার দল। পুতুল ও প্রিয়মকে এই অবস্থায় দেখে হৃদয় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে মুগ্ধের। প্রিয়ম এসে মুগ্ধকে উয়েভ করে।মুগ্ধের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই এক দৃষ্টিতে পুতুলের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। পুতুলও মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছে না।
-এই মুগ্ধ, চল!
ওরা মুগ্ধকে টেনে নিয়ে যায়।
মৃদ্ধা মুখে ফেস-প্যাক লাগিয়ে বসে আছে।
-তোর ওয়াশরুমে নাকি পানি অফ হয়ে গেছে?
-হুম মাম্মি,
-আমি প্লাম্বার ডেকেছি।
-ওকে
মিসেস দিলারা মৃদ্ধার ওয়াশরুমে ঢুকে রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রইলেন। দেয়ালের চারপাশে মুগ্ধের ছবি।
-মৃদ্ধা, এই ছেলে কে রে?
মৃদ্ধা চোখ থেকে একটুকরো শশা সরিয়ে ।
-কোন ছেলে মাম্মি?
-এইযে তোর দেয়ালে পোস্টার করে রেখেছিস । এসব কি? আর ছেলেটাকে খুব চেনা-চেনা লাগছে আমার।
প্রিয়ম মৃদ্ধার হাত থেকে শশার টুকরোটি নিয়ে খেতে শুরু করে।
-বউমনি চিনো নাই, এতো মৃদ্ধার বয়ফ্রেন্ড লাগে। কালই নাকি তোমাদের সাথে দেখা হয়েছিলো পার্টিতে মাল্টিন্যাশনাল ফ্যাশন কম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকারী মুগ্ধ।
-কি বলিস এই ছেলে আমার মেয়ের,,,,,,,
মৃদ্ধা প্রিয়মকে থামিয়ে,
-এই তুই চুপ করবি।না মাম্মি এরকম কিছুই না। প্রিয়ম বেশি বেশি করে।
দিলারা বেগম যেন কল্পনার জগৎ থেকে ফিরতেই চাচ্ছেন না,
-এই ছেলেকে আমার মেয়ে বিয়ে করলে,সব সম্পত্তি আমার মেয়ের! এত বড় বিজনেস ম্যানের ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হবে! যাই মৃদ্ধার বাপ্পিকে বলে আসি।
খুশিতে লাল টমেটোর মত হয়ে গেছে দিলারা সুলতানা। মৃদ্ধাকে কাচুমাচু করে কিচ্ছুক্ষন আদর করে লাফাতে লাফাতে চলে গেলেন।
মৃদ্ধা হা করে তার মায়ের সব কান্ড দেখছে।প্রিয়মের দিকে তাকাতেই প্রিয়ম একগাল হেসে দেয়।তারপর ভ্রু কোচকে বলে,
-কেমন দিলাম?
মৃদ্ধা বালিশ দিয়ে প্রিয়মের মুখ চেঁপে ধরে।
মুগ্ধ আর পুতুল গাড়িতে বসে আছে। আকবর চাচা গাড়ি ড্রাইভ করছে। কিছুটা অন্ধকার নেমে এসেছে প্রকৃতিতে।পুতুল চোখ দুটো বন্ধ করে সামান্য বিশ্রাম করছে। মুগ্ধ গম্ভীর হয়ে জানালার ওপাশে তাকিয়ে আছে।
-আকবর চাচা গাড়ি থামান,
আকবর চাচা পেছনের দিকে তাকায়,
-কেন ছোট সাহেব, কোনো সমস্যা?
-না কোনো সমস্যা নেই, আপনি একটা অটো ধরে বাসায় চলে যান। আমি আর পুতুল একটু পরে আসছি।
-কিন্তু ম্যাম সাহেব কিছু জিজ্ঞাসা করলে?
-সেটা আমি দেখব।
আকবর চাচা গাড়ি থামিয়ে একটা অটো ধরে বাসায় চলে যায়। মুগ্ধ গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। একটু পর পর মিররে চোখ পড়ছে মুগ্ধের। ঘুমন্ত পুতুলকে দেখতে বেশ লাগছে তার। কিন্তু এই মায়ায় সে আর আঁটকাতে চায় না।
গাড়ির ঝাঁকুনিতে চোখ খুলে পুতুল। একি, কোথায় সে? পাশে তো মুগ্ধ নেই। চারদিকে অন্ধকার। পুতুল গাড়ি থেকে নামে।
ওইতো মুগ্ধ! হাতগুলো পকেটে ঢুকিয়ে সুঠাম দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তারা এখানে কেন?
-মুগ্ধ।
মুগ্ধ পাশ ফিরে পুতুলের দিকে তাকায়। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে তার, পুতুল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
-আমরা এখানে,,,,
কথাটা শেষ না হতেই মুগ্ধ কষে পুতুলকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।পুতুল ছলছল চোখে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই প্রথম স্বেচ্ছায় মুগ্ধ পুতুলকে স্পর্শ করল। কিন্তু ভালোবেসে নয়। কষ্টে, ঘৃণায়।
পুতুল কিছুই বুঝতে পারছে না।
-খুব ভালো লাগছিল না প্রিয়মের সাথে লেগে থাকতে?
পুতুল ডেবডেব করে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-একটা দিয়ে হয়না না তোর? এই তুই না একটা মেয়ে। মেয়েদের সবকিছুই তো তার স্বামীর জন্য তাহলে একজন পরপুরুষের সাথে তোর কি?
পুতুল কিছুই বলছে না। ম্যাটার খুব সিরিয়াস হয়ে গেছে।
-আমাকে ভালো লাগে না? এই শোন, আমি মুগ্ধ। আমার পেছনে হাজারো মেয়ে ঘুরপাক খায় কিন্তু আমি শুধু তোকেই,,,,,,,,,কি আমাকে দিয়ে তোর হবে না? আমার সম্পদ, আমার প্রাপ্য কাকে বিলি করছিস তুই পুতুল?
পুতুল ডুকরে কেঁদে ফেলে,
-তুমি তো চাওনি কখনো।
ধমকের স্বরে,
-সেট আপ।আমার সামনে অন্যএকটা ছেলের সাথে দেয়ালে লেপ্টে থাকতে লঁজ্জা করেনি তোর?হোস্টেলের কার্ড দিয়েছে? আজকের রাতটা ওর সাথে কাটানোর।
পুতুল শুধু কাঁদছে,
-ওই ছেলেকে আমি চিনিও না।
মুগ্ধ আরও বেশি রেগে যায়। পুতুলকে কষে আরেকটা থাপ্পড় মারে সে।
-আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাচ্ছিস না । অন্যছেলেকে হায় বলা দেয়ালের সাথে লেপ্টে থাকা। ও গড! আমি কি করব এই মেয়েকে। আর ইউ প্রস্টিটিউড পুতুল?
হা করে তাকিয়ে তাকে পুতুল। মুগ্ধ এসব কি বলছে তাকে।
-ছ্বিঃ মুগ্ধ।এসব কি বলছ? পাগল হয়ে গেছো তুমি?
-ওকে ফাইন।
-আল্লাহর কসম তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে কল্প,,,,(কথা শেষ না হতেই)
-আজকে রাতে আসব তোর কাছে।দুবার যেন দরজা নক না করতে হয়।
মুগ্ধ, পুতুল একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ অতি ঘৃণা নিয়ে আর পুতুল খুব অসহায় হয়ে। কি বলছে মুগ্ধ।আজ রাতে আসবে মানে। পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে পুতুলের। হাত-পা কাঁপছে।
হঠাৎ সায়মা বেগমের কল,
-হ্যালো মুগ্ধ,কোথায় তোরা?
-আসছি মা।
-আচ্ছা ঠিক আছে। পুতুল,,,,
-টুট,টুট টুট
সায়মা বেগম কান থেকে ফোনটা সরিয়ে কিছুটা অবাক হয়। এভাবে কল কেটে দিল কেন?
মুগ্ধ টেনে হিঁচড়ে পুতুলকে গাড়িতে উঠিয়ে খুব স্প্রিডে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগে।
বাসায় এসে মুগ্ধ নিজের রুমে চলে যায়। মিনি ফ্রিজ থেকে ড্রিংকসের একটি বোতল হাতে নেয় সে। বারান্দার ফ্লোরে বসে ড্রিং করতে থাকে । বারবার চোখের সামনে প্রিয়ম আর পুতুলের লেপ্টে থাকা দৃশ্য তার চোখের সমনে ভেসে উঠছে ।
-আই জাস্ট হেট ইউ পুতুল।
পুতুল খুব কাঁন্না করছে । ঠিকই তো এই পরিবারে সে আছে শুধু একটাই পরিচয়ে। মুগ্ধের বউ! কিন্তু কখনো তো বউয়ের কর্তব্য পালন করেনি সে। মুগ্ধ কতটা ভুল বুঝল তাকে। সে শুধুই মুগ্ধের। মুগ্ধকে ছাড়া সে কিছুই ভাবতে পারে না।
গভীর রাত। মুগ্ধ অলমোস্ট ড্রাংক। ফ্লোরেই শুয়ে আছে সে। পুতুল সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। মুগ্ধ কি তাকে ভালোবাসে? নিজের স্ত্রী মানে? হঠাৎ করেই তার এত পরিবর্তন। নাকি আগে থেকেই ছিল পুতুল দেখতে পায়নি।
মুগ্ধের রুমে আসে পুতুল। নক করতেই দরজা খুলে গেল।ভেতরে ঢুকে কাউকে পেল না সে। বারান্দায় গিয়ে দেখল, মুগ্ধ ফ্লোরে পড়ে আছে।
পুতুল মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিচ্ছুক্ষণ মুগ্ধের দিকে নিথর হয়ে তাকিয়ে থাকে সে। কি করে বোঝাবে পুতুল এই পৃথিবীতে মুগ্ধ ছাড়া তার আর কেউ নেই। আর পুতুল,সে তো শুধুই মুগ্ধের।
দু-হাত দিয়ে মুগ্ধের মুখটা ধরে আসতে আসতে এগুতে থাকে পুতুল। ঘুমন্ত মুগ্ধের ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দেয় তার ঠোঁট জোড়া।
চলবে,
#তোমাতেই
#পর্ব_১২
#Arobi_Akter_Poly
দু-হাত দিয়ে মুগ্ধের মুখটা ধরে আসতে আসতে এগুতে থাকে পুতুল। ঘুমন্ত মুগ্ধের ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দেয় তার ঠোঁট জোড়া।
মুগ্ধের বাহুডোরেই ঘুমিয়ে পরল সে।
সূর্যের আলতো আলো মুগ্ধের চোখে এসে পড়ছে।সকালের সতেজ বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে চারপাশে। মুগ্ধের মাথা ঝিমঝিম করছে। কোনোরকমে চোখ দুটো খুলে পাশেই পুতুলকে খুঁজে পেল সে।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পুতুল। হাত দুটো মুঠোয় করে মুগ্ধের বাহুডোরে শুয়ে আছে।
মুগ্ধ আসতে আসতে তার হাতটা পুতুলের মাথা থেকে সরিয়ে নিল। পুতুলকে কুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল সে।তারপর ওয়াশরুমে চলে গেল।
দরজার খটখটে ঘুম ভাঙে পুতুলের।
উঠে, বসে পড়ে পুতুল। চোখগুলো বড়বড় করে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে সে।নকের আওয়াজ শুনে মুগ্ধ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।
মুখে ব্রাশ, খালি গায়ে সিক্স প্যাক সুস্পষ্ট পুতুলের নজরে ।নিচে জাস্ট একটা সাদা টাওয়াল পড়ে আছে সে।
মুগ্ধ একটু আড় হয়ে দরজা খুলে, যেন পুতুলকে দেখা না যায়।
-ম্যাম সাহেব ডাকছেন।
-হুম,,, (ইশারায় যেতে ইঙ্গিত করে রুবিকে)
মুগ্ধ পুতুলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
পুতুল নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে চলে যাচ্ছে ঠিক তখনই মুগ্ধ ওয়াশরুম থেকে আওয়াজ দিয়ে বলে,
-রাতে দেখা হবে।
পুতুল খুব বিরক্ত হয়। রাগে গজগজ করে রুমে চলে যায় সে।
মোবাইল অন করতেই প্রিয়নের মেসেজ দেখতে পায়,
“ভালোবাসি হয়নি বলা,তবুও ভালোবাসি। পাশাপাশি হয়নি চলা তবুও পাশাপাশি ”
একপাগলের ভাত নাই, নতুন পাগলের আমদানি। পুতুল বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বিছানায় ত্রিকোণ হয়ে শুয়ে আছে মৃদ্ধা। হাতের নাগালেই ল্যাপটপ তার পাশে কফির কাপ।
-এই মৃদ্ধা উঠ!
মৃদ্ধা কাচুমাচু করে ঘুম ঘুম চোখে বলতে লাগে,
-আর একটু মাম্মি।
-উউফ ঘরের কি হাল করেছে মেয়েটা।
প্রায় আধা ঘন্টা পড়ে, মৃদ্ধা খুব জলদি করে নাস্তা টেবিলে বসে,
-সরি সরি লেট হয়ে গেলাম।
আজিজুল হক চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বলেন,
-ইদানীং খুব বেশি লেট হয়ে যাচ্ছো তুমি।
মৃদ্ধা একহাতে ব্রেড অন্যহাতে জেলি নিয়ে এমন একটা ভাব করে সে যেনো কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝেনি।
-বিয়ের ব্যাপারে লেট না করাই ভালো।তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। আশা করছি তুমি আমার সম্মানটুকু রাখবে।
মৃদ্ধা কিছুই বুঝতে পারে না।
-আমার বন্ধুর ছেলে অয়নকে নিশ্চয় চিনো । সাব ইন্সপেক্টর।
-হ্যাঁ বাপ্পি
-গোড! আগামী ২৫ সে মার্চ তোমাদের এনগেজডম্যান্ট।
মৃদ্ধার মুখ থেকে ব্রেডের টুকরোটি ফ্লোরে পড়ে গেল। একদৃষ্টিতে তার বাপ্পির দিকে চেয়ে আছে সে।পুরো গ্যালাক্সি যেনো তার উপর ভেঙে পরছে।
-ছেলে তোমার সাথে রাতে মিট করতে আসবে। রেডি থেকো,,
নাক,মুখ লাল হয়ে গেছে মৃদ্ধার। রেগে অগ্নিগিরির মত বিস্ফোরিত হতে লাগল সে,
-অসম্ভব বাপ্পি। এই বিয়ে আমি কোনো মতেই করতে পারব না।
-পারবে না মানে। আমি ছেলের বাবাকে কথা দিয়েছি মৃদ্ধা।
-আর আমার কি বাপ্পি আমি যে মুগ্ধকে কথা দিয়েছি তার সাথে পথ চলবো, সারাটি জীবন তার পাশে থাকব।
-কি বলছো এসব? মুগ্ধ কে ? ,,, (ধমকের স্বরে খুব রেগে)
মৃদ্ধা কাঁন্না করছে। পাশ থেকে মৃদ্ধার মাম্মি বলতে লাগে,
-মাল্টিন্যাশনাল ফ্যাশন কোম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকারী, মুগ্ধ। অনেক আগে থেকেই নাকি ওদের পরিচয়। একে অপরকে খুব ভালোবাসে। তুমি আর অমত কর না, মেয়ে আমার যেখানে -সেখানে তো আর পা ফেলেনি।
কোম্পানির নাম শুনে রাগ যেন আপনা-আপনি ঠান্ডা হয়ে গেলো আজিজুল হকের।
-তোমার মাম্মি যা বলছে তা কি সত্যি মৃদ্ধা?
মৃদ্ধা নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।
-ঠিক আছে আমি করিম খানের সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলব। আমার মেয়ের ভালোবাসার মানুষের সাথেই তার বিয়ে দিব। (মৃদ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে)
– আই লাভ ইউ বাপ্পি।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ক্যান্টিনে বসে আছে পুতুল।তার পাশেই মুগ্ধ। এদিকে যত মেয়ের নজরের পড়েছে তারা সবাই হা করে তাকিয়েছে তাদের দিকে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন “মৃদ্ধা কোথায়? মুগ্ধ অন্য একটি মেয়ের সাথে বসে, আর মৃদ্ধা কিছুই করছে না? এতে খুব অবাক মেয়েরা।
পুতুল ইতস্ততবোধ করে। কানের নিচে চুল গুঁজতে গুঁজতে বলে,
-সবাই আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?
মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
-তোমাকে বরাবরের মতই এতটা বাজে লাগছে যে সবার নজরে পড়ে যাচ্ছো।
পুতুল রাগী লুক নিয়ে মুগ্ধের দিকে তাকায়। মুগ্ধ এক গাল হাসে।
ক্যানটিনের পাশ দিয়েই মৃদ্ধা, জেন্নী, নীর প্রিয়ম চাচ্ছিলো। হঠাৎ মুগ্ধকে পুতুলের সাথে দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো সবাই।
মৃদ্ধা এতটাই অবাক যে সে বাকরুদ্ধ প্রায়। কেবল হা প্রায় তাকিয়ে আছে মুগ্ধ ও পুতুলের দিকে।
পুতুলের হিঁচকি হয়েছে। পানির বোতলটা হাতে নিতেই মুগ্ধ এক নিশ্বাসে সবটা পানি খেয়ে নিল তারপর একটা চোখ টিপ মেরে সেখান থেকে চলে গেলো।।
পুতুল ডেবডেব করে মুগ্ধের চলে যাওয়া দেখছে। ডেভিল একটা।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
২ তলার বারান্দায় বই হাতে হেঁটে যাচ্ছে পুতুল।হঠাৎ কেউ একজন ধাঁক্কা দিয়ে তার বই গুলো ফ্লোরে ফেলে দেয়। একটু স্থির হতেই চিনতে পারলো জেন্নিকে।
পুতুল চুপ করে বই গুলো উঠাতে লাগলো। মৃদ্ধা পুতুলের চশমাটা হাতে নিয়ে মুছড়ে ভেঙে ফেলল।পুতুল মূর্তেই আবিষ্কার করল তার চারপাশে ৭-৮ জন মেয়ে জড়ো হয়েছে। কিছুটা ভয় পেল পুতুল।
চলেই যাচ্ছি হঠাৎ মৃদ্ধা পুতুলের চুল টেনে ধরে। খুব লাগছিলো পুতুলের,
-আপু কি করছো?
– অনেক সহ্য করেছি তোকে।
সেখানে থাকা সবাই তাকিয়ে দেখছিলো তাদের।পুতুল খুব অবাক হয়। সে বুঝতে পারছে না কেউ এসে কিচ্ছু জানতে চাচ্ছে না কেনো? শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে?
বাস্কেট বল খেলছে মুগ্ধ,
-প্রিয়ম, মৃদ্ধা কোথায় রে?
প্রিয়ম বল ড্রপ করতে করতে,
-কে জানে কোন মেয়ে তোকে প্রপোজ করবে ভেবেছিলো আর মৃদ্ধা সেটা টেড় পেয়ে তাকে ধুলাই দিচ্ছে।
বলেই হাসাহাসি শুরু করল প্রিয়ম।
মুগ্ধ বাস্কেট পয়েন্ট করে সবার সাথে হাই-ফাইভ করছে। খুব গরম লাগছে তাই হুডি টা খুলে ফেলল সে। মানুষের হৈচৈয়ের শব্দে উপরে তাকালো মুগ্ধ।
পরোক্ষনেই মৃদ্ধা পুতুলের উপর পানি ঢেলে দিল।ভিজে টইটম্বুর পুতুল।জেন্নি এসে পুতুলের মুখে কালি মাখা শুরু করলো। তারপর সবাই মিলে পুতুলের চারপাশে ঘুরপাক খেতে লাগলো মুখে একটাই ধ্বনি, “পোপাট”
মানুষের এত কোলাহল, তাকে অপদস্ত করা,মানুষের হাসাহাসি এসবের কিছুই নিতে পারছিলো না পুতুল। ছোটবেলার সেই দৃশ্য মনে পরে গেল পুতুলের। মাথাটা কেমন ব্যাথা শুরু হল তার।সবকিছু ঝাপসা লাগতে শুরু করল পুতুলের।
পুতুলকে এই অবস্থায় দেখে ডক্টরের কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে মুগ্ধের। ডক্টর চাচ্চু খুব স্ট্রেইট হয়েই বলেছিলেন এই রোগটি পুতুলের ভালো হবার নয়। যদি সে সেইরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে আবার খুঁজে পায় এই ঘটনা আবার ঘটতে পারে। পুতুল সেন্স ল্যাস হয়ে যেতে পারে।।
মুগ্ধ পাগলের মত দৌড়াতে লাগলো।পুতুল কিছুই বুঝতে পারছে না চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে আসছে তার। ফ্লোরে ঝুঁকে পড়ছে সে।
মূহুর্তেই অনুভব করল পেছন থেকে কেউ একজন আঁকড়ে ধরেছে তাকে।
মুগ্ধকে দেখে সবাই খুব অবাক। মৃদ্ধা যখনই কোনো মেয়েকে শায়েস্তা করে মুগ্ধ সেদিকে খেয়াল করে না। কিন্তু আজ এই মেয়ের জন্য…!
-ওয়াট দ্যা হ্যাল ইউ হ্যাভ ডান মৃদ্ধা?
-আমি কেউকে তোর পাশে নিতে পারি না মুগ্ধ আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।
-ভালোবাসা? তোর ফ**কিং ভালোবাসার গুষ্টি কিলাই,,,,,, পুতুল আমার বউ। ইউ ব্লাডি-ফুল।
কথাটা খুব মেজাজ নিয়েই বলল মুগ্ধ। পুতুলকে কুলে করে চলে যাচ্ছে সে।সবাই মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।
মৃদ্ধার হাত-পা কাঁপছে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার।
চলবে