তোমাতেই পর্ব_১৫,১৬

0
2209

তোমাতেই
পর্ব_১৫,১৬
Arobi_Akter_Poly
পর্ব_১৫

এক মূহুর্তে জন্য যেন মুগ্ধের স্পন্দন থেমে গেল।ফ্রিজ হয়ে গেছে সে।কিছুই ভাবতে পারছে না সে। ডক্টর সাহেব তার কাঁধে হাত বুলিয়ে,

-গড ব্লেস ইউ মাই সান।

মুগ্ধ নিরবতা কাটিয়ে,

-চাচ্চু, রিকুয়েষ্ট করছি বাবা-মায়েকে কিছু জানাবেন না ।

ডক্টর সাহেব মাথা নাড়িয়ে,

-ঠিক আছে মাই বয়। যেমটা তুমি বলবে।

মুগ্ধ কেভিন থেকে বেরুতেই সায়মা বেগম দৌড়ে আসেন,

-কি বললেন উনি?

মুগ্ধ কি বলবে বুঝতে পারছে না। চুপ করে রইল সে।

-বলছিস না কেন?
-ওই তো পুতুলের খেয়াল রাখতে বলল।
-কিছু হয়নি তো ওঁর। আমার কেমন যেন লাগছে।
-টেনশন কর না। পুতুল সুস্থ হয়ে যাবে।
-ইনশাল্লাহ,ইনশাল্লাহ।

করিম সাহেবের অফিসিয়াল কাজে জরুরি কল আসছে তাকে যেতে হবে তবে তিনি সব ক্যান্সেল করে দিচ্ছেন শুনে মুগ্ধ তাদের দুজনকেই বাড়ি ফিরতে বলে। মুগ্ধ রাতটা এখানে থাকবে জানায়।

-কিন্তু তুই একা? না না আমি থেকে যাই তোর সাথে। যদি কিছু দরকার পড়ে।
-মা, তুমি বাবার সাথে যাও। আমি এদিকটায় আছি।টেনশন কর না সব ঠিক হয়ে যাবে।
-তুই সিউর?
-হুম
-কিন্তু…
-কিচ্ছু হবে, যাও।
-রাতে কিছু খেয়ে নিস। নিজের যত্ন নিস আর যাইহোক আমাকে সব ইনফর্ম করবি।
-ওকে।
-আচ্ছা আসি।
-ওকে বায়।
—————————-

রাত ২ঃ৪৬ চোখ দুটো বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে মুগ্ধ।একজন নার্স এসে মুগ্ধকে ডাকে,

-এক্সকিউজ মি?

মুগ্ধ গূঢ় চিন্তায় মগ্ন। নার্স আবার ডাকে,

-এক্সকিউজ মি?

এবার মুগ্ধ বাস্তবতায় ফিরে আসে।

-জ্বি বলুন।
-A51 কেভিনের পেসেন্ট কে হোন আপনার? উনার গার্ডিয়ান কোথায়?
-আমি ওঁর হ্যাজবেন্ড।
-পেসেন্টের সেন্স ফিরেছে। কমোনিক্যাশন করতে পারবে। ডক্টর সাহেব আপনাকে যেতে বলেছেন ।

মুগ্ধ এক দৌড়ে করিডর অতিক্রম করে কেভিনে ঢুকে পড়ে।মুগ্ধকে দেখে ডক্টর সাহেব একগাল হেসে বলতে লাগলেন,

-এসো মুগ্ধ,পুতুল এখন অনেকটাই সুস্থ। কথা বলা যাবে।তোমরা কথা বল, আমি একটু পর আসছি।

ডক্টর সাহেব মুগ্ধের কিছুটা কাছে এসে বিড়বিড় করে বলতে শুরু করলেন,

-পুতুলকে যত স্ট্রেস থেকে হালকা করা যায়।ইউ নো ওয়াট আই মিন?

মুগ্ধ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।

ডক্টর সাহেব কাঁধে হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।মুগ্ধ পুতুলের সিটের দিকে এগুতে থাকে।নিথর হয়ে শুয়ে আছে পুতুল। হাতে স্যালাইন। মাথায় ব্যান্ডেজ।

মুগ্ধ পুতুলের সিটের সাথে একটা চেয়ার এগিয়ে বসে পড়ল।পুতুলের হাতটা গালের সাথে লাগিয়ে একদৃষ্টিতে পুতুলের দিকে তাকিয়ে রইল সে।চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার।পুতুল আস্তে আস্তে চোখ খুলে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।

-তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো, ভেবে দেখেছো? টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো আমার।

পুতুল খুব আস্তে আস্তে বলতে লাগল,

-আমরা জন্য তোমার টেনশন হচ্ছিলো? বিশ্বাস হচ্ছে না।

মুগ্ধ বিরক্তির লোক নিয়ে অন্যদিকে তাকায়।

-আমি তো তোমাকে শুধু বিরক্ত করি, জ্বালাতন করি।

মুগ্ধ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলতে লাগে,

-তুমি কি জানো? আজকের দিনটায় আমি তোমার জ্বালাতনকে কতটা মিস করেছি, তোমার বিরক্ত করাটাকে কতটা মিস করেছি, ইনফ্যাক্ট তোমাকে, হ্যাঁ, তোমাকে কতটা মিস করেছি।

পুতুল কিছুই বলছে না। মুগ্ধ আবার বলা শুরু করে,

-পুতুল দেখ, আমরা একটা সম্পর্কে আছি।এই সম্পর্ক আমি তৈরি করিনি তুমিও করনি। করেছেন সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে এই সম্পর্কে থাকতে বাধ্য করছেন। যখন উনি আমাদের এক করেছেন, তাহলে আমরা কে? এই সম্পর্ক তাচ্ছিল্য করার। বুঝতে পেরেছ?
-হুম

পুতুলের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আসলেই কি মুগ্ধ তাকে এই কথাগুলো বলছে? এতটা ভাবে সে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে?

– সুস্থ হয়ে যাও প্লিজ।
-তুমি না থাকলে আমি আজকে হয়তো মরেই যেতাম।
-এতো সোজা নাকি, এত সোজা নাতো। মুগ্ধকে ছাড়া পুতুলের মৃত্যুও বারণ।

মুগ্ধ পুতুলের হাতের তালুতে চুমু দেয়। পুতুল মুচকি হাসে।নার্স পুতুলের মেডিসিন নিয়ে হাজির হোন।

-টাইম আপ, আপনি বাহিরে চলে যান। পেসেন্টের রেস্ট প্রয়োজন।
-কখন রিজাইন করতে পারব?
-আজকেই হয়ে যাবে। এখন আপনি যান পেসেন্টকে মেডিসিন দিতে হবে।
-ওকে।

মুগ্ধ উঠে দাঁড়ায়। পুতুলের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে সে।পুতুল মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুগ্ধ চলেই যাচ্ছিল পেছন থেকে পুতুল তাকে ডেকে উঠে,

-মুগ্ধ।

মুগ্ধ পুতুলের দিকে তাকায়।

-থ্যাংকস।
-স্টপ ইট পুতুল।

——————–

মুগ্ধ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে বিল প্যায় করছে। ক্রেডিট কার্ডটি পকেটে ঢুকাতেই কে যেন মুগ্ধের কাঁধে হাত রাখল।মুগ্ধ পেছন ফিরে তাকিয়ে ডক্টর সাহেবকে দেখতে পেল।

-চল, একসাথে এককাপ কফি খাই।
– আমি খাব না। আমার পুতুলের পাশে থাকা উচিত।
-ওহ! মাই বয় পুতুলকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছে, পুতুল ঘুমুচ্ছে।এখন সকাল ৪ টা বাজে, চল যাই।
-ওকে চাচ্চু।

মুগ্ধ আর ডক্টর সাহেব টেবিলে বসে আছেন।

-আমি জানি মুগ্ধ, তুমি খুব চিন্তিত।পুতুল মা কন্সিভ করতে পারবে না তা কিন্তু নয় তবে না করার চান্সেস অনেকটাই বেশি। এখন কোন মিরাক্যাল পারে সবকিছু ঠিক করতে।

দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মুগ্ধ খুব ভাবান্তর হয়ে বলল,

-বাবা-মায়েকে কি বলল সেটাই ভাবছি। চাচ্চু আপনার কাছে রিকুয়েষ্ট আপনি প্লিজ এই রিপোর্ট কেউকে জানাবেন না বাকিটা আমি দেখে নিব।
-ফাইন, ডোন্ট বি স্যাড। গডের উপর বিশ্বাস রাখো।

————————–

পুতুল, মুগ্ধ গাড়িতে বসে আছে।আকবর চাচা ড্রাইভ করতে করতে পুতুলের দিকে তাকালেন,

-কেমন আছো মা?

পুতুল মুখে মুচকি হাঁসি নিয়ে জবাব দিল,

-ভালো।

মুগ্ধ কিছু বলছে না পুতুলের দিকে তাকিয়ে শুধু জানতে চাচ্ছে তার অসুবিধা হচ্ছে কিনা।এর বাহিরে কোনো কথাই হচ্ছে না তাদের মধ্যে। পুতুল একটু পর পর আড়চোখে মুগ্ধের দিকে তাকাচ্ছে। যত প্রশ্ন ছিল সবপ্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে সে। এখন শুধু শোনার পালা “আই লাভ ইউ, পুতুল” ব্যাস আর কিচ্ছু চাই না তার।

হঠাৎ মুগ্ধের ফোন বেজে উঠে। পুলিশ স্টেশন থেকে কল এসেছে।

-হ্যালো।
-মুগ্ধ?
-হ্যাঁ বলছি।
-তোমাকে যে আসতে হবে।
-ওকে।

মুগ্ধ পুতুলকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বাইক নিয়ে পুলিশ স্টেশন চলে যায়।

মুগ্ধকে দেখে ইন্সপেক্টর শরাফত এগিয়ে আসেন।

-চলে এসেছো।আসামি তোমার সাথে সাক্ষাৎকার করবে।
-ওই বাস্টার্ডকে না আমি জানে মেরে ফেলি।
-ওঁ পারমিটেড। মাত্র ৫ মিনিট কথা বলবে।
-ঠিক আছে ইন্সপেক্টর।

মুগ্ধ রুমে ঢুকতেই প্রিয়ম চেয়ার থেকে উঠে ওঁকে জড়িয়ে ধরতে যায়। মুগ্ধ প্রিয়মকে দেখে রেগে, তার শার্টের কলার ধরতেই সাথের ইন্সপেক্টর মুগ্ধকে থামিয়ে দেন। তারপর দুজনকে বসিয়ে দরজা নক করে দেন। যাওয়ার আগে বলে যান মাত্র ৫ মিনিট কথা বলতে পারবে।

-তোর সাহস কিভাবে হয় আমাকে ডাকার?
-ভাই,তুই আগে শান্ত হো প্লিজ। আমাকে তুই ভুল বুঝেছিলিস, কাল। আমি তেমন কিছুই করিনি জানিস তো, পুতুল আমাকে ডেকেছিল ওই জায়গায়। ওঁ আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিল আমি তো তোর কথা ভেবে বাধা দিয়েছিলাম আর তুই কিনা আমাকেই?

মুগ্ধ প্রিয়মের মুখে পুতুলের নাম শুনে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। সেখানেই মারামারি শুরু করে দেয়।

-ভাই, ভাই আমার কথা শোন, আমার কাছে প্রমান আছে।

মুগ্ধ থেমে যায়। প্রিয়ম তড়িঘড়ি করে লুকায়িত মোবাইলটা বের করে পুতুলের নাম্বার থেকে একটা মেসেজ দেখায়,

“প্রিয়তম,কাল পুরোনো গ্রাউন্ড ফ্লোরে আমার সাথে দেখা করবে। নিজেকে আর সামলাতে পারছিনা। আমার এই মন দেহ শরীর সবকিছুই তোমার। আমার মনের যত সুখ তোমাকে বিলিয়ে দিতে চাই।আমি অপেক্ষা করব।ভালোবাসি,ভালোবাসি। তোমার পুতুল”

-ভাই দেখ ওই মেয়ে আমাকে ডেকেছে আমি কিছুই করিনি।

মুগ্ধ একগাল হাসে।

-পুতুল ভার্সিটির “ভ” চিনে না আর তোকে খুঁজতে খুঁজতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ডেকে নিল।

নিচের দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করছে প্রিয়ম৷ এই মুগ্ধ তাকে বিশ্বাস কেন করছে না?।

-কিন্তু আমার কাছে মেসেজ আছে,,,

মুগ্ধ রাগান্বিত হয়ে জড়োসড়ো কন্ঠে বলে উঠে,

-যান্ত্রিক এই অপারেটরের কথা মানবো? পৃথিবীর সব মানুষ যদি একত্র হয়ে বলে এই মেসেজ পুতুল তোকে দিয়েছে, আমি বিশ্বাস করব না। বুঝতে পেরেছিস।

প্রিয়ম হা করে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। ইন্সপেক্টর দরজা নক করে ঢুকে পড়েন।

-সময় শেষ। আপনি এখন যেতে পারেন।

মুগ্ধ চলে আসে পেছন থেকে প্রিয়ম চিৎকার করে বলতে থাকে,,,

-দু-একদিনে আমি বেরিয়ে যাবো মুগ্ধ। তারপর তোর এমন হাল করব না, যে নিজেকেই চিনতে পারবি না। আমি তোকে ছাড়বো না মুগ্ধ।

মুগ্ধ বাসায় এসে পুতুলের রুমে চলে যায়। পুতুল বালিশ হেলান দিয়ে একমনে কিছু ভাবছে। মুগ্ধ গিয়ে পুতুলের পাশে বসে পড়লো।

-এখন কেমন লাগছে?

পুতুলের গূঢ় কাটে। মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,

-ভালোই তবে খুব বোর লাগছে।
-ঔষধ খেয়েছিলে?
-ভুলে গেছি তো।

মুগ্ধ বেডসাইড মিনি ওয়ারড্রব উপর থেকে একহাতে ঔষধ অন্যহাতে পানির গ্লাস নিয়ে পুতুলকে খাইয়ে দেয়। পুতুলের ঠোঁটে লেগে থাকা পানিটুকু হাত দিয়ে মুছে ফেলে মুগ্ধ।

-বিকেলে রেডি থেকো।
-কেন?

-তোমার রিফ্রেশমেন্টের দরকার।

কথাটা বলে পুতুলের কপালে চুমু খায় সে। তারপর উঠে দাঁড়ায়।

-জরুরি কাজ আছে। কিছু দরকার পরলে কল কর।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-ওকে, সি ইউ।

পুতুল চিন্তায় পড়ে যায়।মুগ্ধ তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? অবশ্য যদি মুগ্ধ পাশে থাকে তাহলে সে জাহান্নামের চৌরাস্তায় যেতেও রাজি।

রুবি আড়চোখে দরজার কোণ থেকে পুতুলকে দেখছে। পুতুল বাড়ি ফিরার পর একবারও দেখা করার সাহস পায়নি সে। ভীতু ভীতু দুটি চোখ পুতুলের নজরে পড়ে যায়। পুতুল একগাল হেসে রুবিকে কাছে ডাকে,

-কি ব্যাপার, আমাকে দেখতে এলে না যে?
-ম্যাম সাহেব কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তো তাই।
-ওহ আচ্ছা।
-জানো? আজকে আমি আর মুগ্ধ কোথাও বেড়াতে যাব।

রুবি চিন্তায় পড়ে যায় খবরটা প্রিয়মকে দিবে কি না।

চলবে

#তোমাতেই
#পর্ব_১৬
#Arobi_Akter_Poly

রুবি চিন্তায় পড়ে যায় খবরটা প্রিয়মকে দিবে কি না।

বিকেলে মুগ্ধ তড়িঘড়ি করে পুতুলের রুমে এসে জিজ্ঞাসা করল।

‘তুমি রেডি?’

‘হুম’।

‘ওকে।’

মুগ্ধ গাড়ি ড্রাইভ করছে পুতুল তার পাশের সিটে। পুতুল এক্সাইটেড হয়ে মুগ্ধকে বলল,

‘এক্সাইটমেন্টে তো জানলামই না কোথায় যাচ্ছি’।

‘কেন, আমাকে সন্দেহ করছ?’

‘আরে না, তোমার সাথে তো অ্যাটলান্টিকও পাড়ি দিতে পারি’।

মুগ্ধ পুতুলের দিকে একনজর তাকিয়ে মুচকি হাঁসছে।

কিচ্ছুক্ষন পর পুতুল ঘুমিয়ে পরল। গাড়ির ঝাঁকুনিতে পুতুলের চোখ খুলে যায়। সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,

‘খুব চেনা রাস্তা, (মনে হচ্ছে এই রাস্তায় পুতুল আগেও এসেছিল।)’

‘হুম, পিচ্চি কালে হয়তো এসেছিলে।’

‘মানে? এটা নারায়ণগঞ্জ।’

‘হ্যাঁ।’

ঝাপসা কিছু স্মৃতিচারণ মনে পড়ে গেল পুতুলের।নারায়ণগঞ্জ তার নানুবাড়ি। মায়ের সাথে সাথে সেই বাড়ির সাথে যোগাযোগটাও হারিয়ে গেল পুতুলের জীবন থেকে। তার চিন্তা ভেদ করে মুগ্ধ তাকে ডাকল। বৈদের বাজার থেকে নৌকা করে মায়াদ্বীপ যেতে হয়।ঘাটে এসে পুতুল অবাক। সুন্দর একটি নৌকা ফুল দিয়ে সাঁজানো। খুশিতে পুতুলের নাঁচতে ইচ্ছে করছে। নৌকা ভ্রমণ খুব প্রিয় তার। নৌকার শেষ মাথায় একজন বৃদ্ধ মাঝি বসে আছেন। পুতুলের কান্ড দেখে তিনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে আছেন । পুতুল মুগ্ধ হয়ে মুগ্ধের দিকে তাকালো। মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘তোমার জন্য, আসলে তোমার পছন্দের তেমন কোনো আইডিয়া নেই আমার, ভাবলাম ইউনিক কিছু করি যদি তোমার ভালো লেগে যায় তো।’

পুতুল একলাফে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খায়।

‘ভালো লেগেছে মানে, তুমি তো একদম ফাটিয়ে দিয়েছ বস!’

পুতুলের এমন ডায়লগে মুগ্ধ হেঁসে ফেলে। আজ-পর্যন্ত পুতুলকে এভাবে কথা বলতে কখনো শুনেনি মুগ্ধ।বাহ! পুতুলের কত রুপ দেখার বাকি আছে এখনো তার।

খোলা প্রান্তর। নদীর ঢেউয়ের সমান্তরালে বয়ে চলছে বাতাস।পুতুল খোলা চুলে হা করে বয়ে চলা বাতাসের সাথে তাল মিলাচ্ছে। নৌকা ছুঁটে চলছে।পুতুল ফুলের পাপড়ি গুলো ছুঁড়ে মারল মুগ্ধের দিকে।

‘জান্নাতের ফিল হচ্ছে আমার, এই কোথায় নিয়ে এলে তুমি আমায়।’

মুগ্ধ পুতুলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তার পাশে গিয়ে বসে পরল।

‘উইল ইউ রি-ম্যারি মি পুতুল?’

পুতুল গোল আলুর মত মুখখানি করে উত্তর দিল,

‘না।’

মুগ্ধ যেন এটাই এক্সপেক্ট করেছিল পুতুলের কাছে।

‘তোমাকে কিছু কথা বলি শুনো।’

পুতুল সিরিয়াস হয়ে মুগ্ধের দিকে তাকালো।

‘হুম বল।’

‘তুমি কি আমাকে পেয়ে খুশি? মানে আমার সাথে, আমার পরিবারের সাথে থেকে।’

‘তোমাকে তো আমি পাইনি এখনো।’

মুগ্ধ পুতুলকে কনফার্ম করে বলল,

‘আমি তো তোমারই, যখন ইচ্ছে নিজের দখলে নিতে পারো।’

পুতুল একটু আবেগী হয়ে পরল।

‘জানো? আমার সবসময় মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করত, তুমি যদি অন্যকারো হয়ে যাও? কিন্তু আজকের পর এই ভয় আমার মধ্যে আর থাকবে না’

মুগ্ধ উৎফুল্ল হয়ে।

‘তাহলে আজ থেকে আমাদের সব ঝগড়াঝাটি ডিসমিস, ওকে?’

কথাটা বলে মুগ্ধ পুতুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। পুতুল হ্যান্ডশেক করে উত্তর দেয়।

‘ওকে মাই ডিয়ার হ্যাজবেন্ড।’

‘ইয়েস!’

‘এতো হ্যাপি কেন?’

‘এমনি,তুমি বুঝবে না।’

দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আস্তে আস্তে একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসে ওঁরা। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। বিকেলের উজ্জ্বল রোদ এসে পুতুলের চুলে পড়ে আছে। পুতুল চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে৷ মুগ্ধ পুতুলের ঠোঁট জোড়া তার অধীন করে নেয়।

ততক্ষণে মাঝি ডেকে উঠেন,

‘সন্ধ্যার আগে এখান থেকে চলে যেতে হবে, আমি নৌকা ঘুরিয়ে ফেলি।’

দুজন হকচকিয়ে উঠে। তারপর স্বাভাবিক হয়ে। মুগ্ধ বলতে লাগে,

‘ঠিক আছে।’

‘না আর একটু থাকি প্লিজ ।’

মুগ্ধ উঠে মাঝিকে এক্সট্রা ভাড়া দিয়ে ফির এসে পুতুলের হাত দুটো চেঁপে ধরে বসে পড়ে।

‘আমি এইদিনটা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি,জানো? স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

‘হুম,আমারও। ফাস্ট টাইম কোনো মেয়ে আমাকে রিজেক্ট করল।সত্যি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পুতুল সন্দেহকোণ দৃষ্টিতে মুগ্ধের দিকে তাকায়।

‘ওয়াট? সত্যি তো বললাম।’

পুতুল আনন্দের সাথে বলতে লাগে,

‘ব্যাস এখন আমাদের অনুষ্ঠান হয়ে যাক তারপর দেখবে আমি কত ভালো মা হই।’

‘মা?’

পুতুল একটু লঁজ্জা পেয়ে যায়।

‘ইয়ে মানে,আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা তো হবেই না?বল, তাই বললাম।’

বাচ্চার কথা শুনে মুগ্ধের চেহারাটা নিমিষেই ফেকাসে হয়ে যায়। হৃদয় মলিন হয়ে যায় তার।একদম চুপসে যায় সে। আর এক মূহুর্ত যেন পুতুলের পাশে থাকতে পারছে না মুগ্ধ। বেচারি কতই না আশা নিয়ে আছে!

‘হুম।’যাই হয়ে যাক আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে।’

‘এভাবে কেন বলছ? কে আলাদা করবে আমাদের?’

মুগ্ধ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে দূরে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালায়। পুতুল হাটু আঁকড়ে বসে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে।

————————–

পুতুল বাসায় ফিরতেই সায়মা বেগম পুতুলকে দেখিয়ে রুবিকে বলতে শুরু করে।

‘আজকাল ঘরটাকে নিজের বলে মনে হয় না।’

‘কেন ম্যাম সাহেব।’

‘কেন আবার, আমি তো যেন পর হয়ে গেছি কারো কাছে, এখন আর কিছু আমার সাথে শেয়ার করার সময় কই।’

পুতুল সায়মা বেগমের দিকে আড়চোখে তাকায়।

‘তুমি বাসায় ছিলে না তাই বলতে পারিনি।’

‘ ফোনে বলতে পারিসনি?’

‘মনে ছিল না।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা তো এখন মন থেকেই উঠে গেছি।যাক বাবা আমার কি। আমি তো শুধু নাতী-নাতনীর মুখ দেখে মরতে পারলেই শান্তি।’

পুতুল বিরক্ত হয়ে,

‘যা বলার বলো।’

রাতে কিছুতেই ঘুম আসছে না পুতুলের। মুগ্ধ সব বলল শুধু তাকে ভালোবাসে কিনা সেটাই বলতে ভুলে গেছে। এই মুগ্ধকে এত সহজে ছাড়া যাবে না। কিছু একটা তো করতেই হবে।

মুগ্ধের রুমের দরজায় নক করছে পুতুল। ভেতর থেকে মুগ্ধ আসতে বললে পুতুল জলদি রুমে ঢুকে পড়ে।

বাহ!কালো জিন্স, সাদা টি-শার্ট আর কালো ল্যাদার জ্যাকেট পড়ে রেডি মুগ্ধ। এত হ্যান্ডসাম!!!

‘কোথাও যাচ্ছো?’

‘হুম, নাইট ক্লাবে’

‘ওহ আচ্ছা, ভালো।’

‘তুমি যাবে?’

‘হ্যাঁ।’

‘ওকে,ড্রেস চেইঞ্জ করে এসো।’

‘কেন?’

‘তুমি করতে না চাইলে নো প্রব্লেম।’

‘ঠিক আছে,চল তাহলে।’

ক্লাবে পুতুল ছোটখাটো একটা লঁজ্জায় পড়ে গেল। সবাই কত ওয়েস্টার্ন। আর সে থ্রী-পিচ!!

ঢুকতেই কেউ একজন অফার করে বসল,

‘হাই সুইটহার্ট, হবে নাকি আমার সাথে কিছু মুভ?’

পেছন থেকে মুগ্ধ উত্তর দিল,

‘নো।’

লোকটি মুগ্ধকে দেখে ভীতু কন্ঠে বলে উঠল,

‘ভাই,আপনি।সরি’

মৃদ্ধা মাস্ক পড়ে মুগ্ধকে ফলো করছে। মুগ্ধ একটু এগুতেই মৃদ্ধা পুতুলকে ডাকে।পুতুল থেমে যায়।

‘আপনি এখানে?’

‘মুগ্ধ যেখানে মৃদ্ধা সেখানে।’

পুতুল চুপ করে থাকে।পুতুলকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করে মৃদ্ধা,

‘দেখবে, এখন হাজারটা মেয়ে মুগ্ধকে চুমু দিবে, জড়িয়ে ধরবে, আমরা তো এসব দেখতে দেখতে বোর হয়ে গেছি ভাই।’

পুতুল গম্ভীর হয়ে মৃদ্ধাকে বলে উঠে,

‘তাহলে দেখেন কেন?’

পুতুলকে না পেয়ে রীতিমতো তাকে খুঁজতে শুরু করে। এক পর্যায় মৃদ্ধার সাথে পুতুলকে তর্কে দেখে ফেলে সে।

‘ভেনিস হয়ে যেও না, আমার সাথে সাথে থেকো। ওকে?’

মৃদ্ধাকে দেখেও না দেখার ভান করল মুগ্ধ। সেটা মৃদ্ধা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে।
মুগ্ধের গলা জড়িয়ে অনেক মেয়ে চুমু খাচ্ছে । পুতুল মুগ্ধের পেছনেই। মুগ্ধের জ্যাকেট ধরে হাঁটচ্ছে আর এসব কান্ড দেখে বিস্ফুরিত হচ্ছে।

‘কি নেবে?’

‘তোমার জান।’

মুগ্ধ মুচকি হাঁসে।

‘তোমার জন্য একটা কুল-ড্রিংকস অর্ডের করি, ওয়েট।’

‘কিচ্ছু খাব না আমি।’

কথোপকথনের মধ্যেই একটা মেয়ে এসে মুগ্ধের গলা জড়িয়ে ধরে কানে চুমু দিল।

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে পুতুলের। না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে। পুতুল রাগী লুক নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর মেয়েটারও চোখ পড়ে যায়।মুগ্ধকে জিজ্ঞাসা করতে লাগে।

‘ওঁ কি তোমার সাথে এসেছে?’

মুগ্ধ পেছনে ফিরে পুতুলের অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘হ্যাঁ।’

‘ও মাই গড! তুমি তোমার বাসার কাজের লোকের কত খেয়াল রাখো মুগ্ধ।ক্লাবে পর্যন্ত নিয়ে আসছো। হাউ সুইট।’

পুতুলের রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারছে না সে। ব্যাস অনেক দেখে নিয়েছে নাটক আর সহ্য হচ্ছে না।

‘না আসলে ওঁ………..পুতুল কি করছ!’

ইতিমধ্যে পুতুল মেয়েটার পেছনে হাত ঘুরিয়ে চেঁপে ধরে আছে।

‘কাজের লোক হ্যাঁ? তুই কি তাহলে? যার তার গলায় দোলে পরিস কেন তোদের সমস্যা কি।আমি মুগ্ধের বউ বুঝেছিস?

মুগ্ধ পুতুলকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

‘কে এই খ্যাত? পাগল তো হয়ে যায়নি?’মুগ্ধ তো বিয়েই করেনি।পাগল।’

মুগ্ধ পুতুলকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে স্প্রিডে ড্রাইভ করা শুরু করে। পুতুল ওই মেয়েকে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে কোনোদিকে খেয়াল নেই তার।

বেস কিচ্ছুক্ষণ পর,

‘ঠিক আছো। এত হাইপার হওয়ার কিছু নেই ওঁরা আমার ফ্রেন্ডস।’

পুতুল চুপ করে আছে। খুব রেগে আছে সে। মুগ্ধ আর কথা বাড়ালো না।

বাসায় পৌঁছাতেই পুতুল দৌড়ে রুমে ঢুকে পড়ল৷ পেছনে একবারও মোড়ে তাকালো না।

মুগ্ধ পুতুলের রুমে ঢুকে দেখল পুতুল বিছানায় বসে কি যেন ভাবছে।

‘পুতুল আমি।’

পুতুলের ভাবনায় ছেদ পড়ে।

‘এসো। আমি তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।’

‘বল’

‘তুমি আমাকে বিয়ে করবে, মুগ্ধ?’

মুগ্ধ অবাক হল। তারপর একগাল এসে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।

‘আচ্ছা ঠিক আছে এই ব্যাপারে আগামীকাল বাবার সাথে কথা বল, কেমন।’

‘ওকে, ফাইন। থ্যাংকস।’

পুতুল চুপ করে আছে।

‘আসি। গোড নাইট।’

মুগ্ধ দরজা আঁটকিয়ে চলে যায়। পুতুল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কানের দোল খুলছে তখনই তার ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে । পুতুল কলটা রিসিভ করে।

‘হ্যালো’

‘ডার্লিং ‘

‘কে আপনি’

‘হা হা হা, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে আমায়?’

‘প্রিয়ম?’

হাত-পা কাঁপছে পুতুলের। প্রিয়ম জেম থেকে বেরিয়ে এসেছে? এখন কি হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here